তুমিময় নেশায় আসক্ত পর্ব-১০+১১

0
792

#তুমিময় নেশায় আসক্ত 🖤
#পর্ব- ১০
#Jannatul_ferdosi_rimi (লেখিকা)
‘যেই মেয়েটি কয়েকদিন পর তোমার প্রাক্তন স্ত্রী হবে তার জন্যে তোমার এতো দরদ উতলে উঠছে পড়ছে কেন অয়ন? তুমি কী ভুলে গেলে? কয়েকদিন পর আমাদের বিয়ে। ‘

ফুপিয়ে ফুপিয়ে কথাটি বললো পায়েল। অয়ন ল্যাপটপে বসে অফিসের কিছু কাজ করছিলো। কালকে তার হসপিটালে তেমন কোন জরুরী অপারেশন নেই, তাই অয়ন ঠিক করেছিলো কালকে রুহানা চৌধুরীর সাথে মিটিং এ যাবে,কিন্তু তখনি অয়নের অনুমতি ব্যতিত পায়েল অয়নের রুমে ঢুকেই ফুপাতে ফুপাতে কথাগুলো অয়নকে উদ্দেশ্য করে বলে। অয়ন পায়েলের কথা শুনে কপালে আঙ্গুল দিয়ে ঘষে ল্যাপটপ টা বন্ধ করে দিয়ে, হঠাৎ পায়েলের খুব কাছে এসে,পায়েলের গলা চেপে ধরে
দাঁতে দাঁত চেপে বলে,

‘ কতবার বলবো? ওই মেয়ে ওই মেয়ে করবে না। ও আমার রিমিপরী। মিসেস অয়ন চৌধুরী। সেইটা কি তোমার ডাফার মাথায় ঢুকেনা পায়েল? নাকি আমি ঢুকিয়ে দিবো? ‘

অয়নের হঠাৎ এমন আক্রমনে বিস্মিত হয়ে যায় পায়েল। হাত দিয়ে বার বার অয়নের হাতকে নিজের গলা থেকে সরানোর চেস্টা করছে কিন্তু সে ব্যর্থ।
পায়েলের মতো রোগা মেয়ে কী আর অয়নের মতো
সুঠোমদেহী যুবকের পেশিবহুল হাতকে সরাতে সক্ষম হবে? অয়ন পায়েলের গলা আরো চেপে ধরে। পায়েলের চোখ লাল হয়ে গিয়েছে। চোখ দিয়ে নোনাজল গড়াচ্ছে। অয়ন যদি আরেকটু তার গলাটা চেপে ধরে তাহলে সে হয়তো মরেই যাবে। অয়ন কপাট রাগ দেখিয়ে বলে,

‘ নিশ্চই সকালের ঘটনা ভুলেনি তুমি? আবার কোন সাহসে তুমি আমার সামনে আসো? আমার রিমিপরীকে ব্যাথা দিয়ে আবার তুমি আমার সামনে এসেছ। ওহ আই সি তোমার শাস্তিটা তো বাকি ছিলো। ভালোই হয়েছে। আমাকে তোমার কাছে যেতে হলো না বরং তুমি চলে এলে আমার কাছে। ‘

কথাটি বলেই অয়ন ভয়ংকরভাবে বাঁকা হাসলো। পায়েলের এইবার সত্যি ভয় ঝেঁকে বসেছে মনে। অয়নের পাগলামো সমন্ধে তার যথেষ্ট ধারণা আছে।যেই ছেলে সকলের সামনে গরম কফি ঢেলে দিতে পারে সে তো যা ইচ্ছে তাই করতে পারবে। পায়েল কথাটি ভেবে চলে যেতে চাইলে অয়ন পায়েলের হাত ধরে ফেলে। অতঃপর পায়েলের অতি নিকটে গিয়ে মুচকি হেসে অতি ঠান্ডা গলায় বলে উঠে,

‘ জানো তো পায়েল? একজন ডক্টর হওয়ার জন্যে রোজ অপারেশন করার সময়ে ছুড়ি দিয়ে কাটাছেডা করতে করতে, ছুড়ি দিয়ে খেলাটা এখন একটা বদ অভ্যাসে পরিনত হয়েছে। ‘

অয়ন কথাটি বলেই পকেট থেকেই একটা চিকন সুক্ষ্ম ছুড়ি বের করে। পায়েল তা ভয়ে কান্নাই করে দেয়। পায়েল জোড়ে জোড়ে চিৎকার করতে করতে বলে,

‘ কেউ আছেন? প্লিয হেল্প! কেউ কি নেই? ‘

অয়ন বাঁকা হেসে পায়েলের গালে হাত রেখে মধুর কন্ঠে কিছুটা ঠাট্টার ছলে বলে,

‘ কেন বেইবি? তুমিই তো সবসময় আমার কাছে আসতে চাইছিলে তাহলে আজ কেন এতো দুরুত্ব বলো তো? আমাদের মাঝখানে তুমি অন্য কাউকে কেন ঢুকাচ্ছো? ইটস নট ফেয়ার। আমি আমাদের মাঝে কাউকে ঢুকতে দিবো না। তাছাড়াও আমার রুম সাউন্ড প্রুফ তাই তুমি যতো ইচ্ছে চিৎকার করো কেউ শুনবে না। সো লেটস স্টার্ট দ্যা গেইম। ‘

কথাটি বলার সাথে সাথে অয়ন আর এক মুহূর্তও দেরী করেনা। পায়েলের হাত বরাবর ছুড়ি বসিয়ে দেয়। পায়েল নিজের রক্তাক্ত হাতের দিকে তাকিয়ে অয়নের দিকে তাকিয়ে কাঁদতে কাঁদতে বলে,

‘ অয়ন তুমি এইটা কী করলে? কালকে আমার ক্যানাডায় শ্যাুট আছে। আমি কালকে কি করে শ্যাুট করবো? ‘

অয়ন দায়সাড়া ভাবে উত্তর দিয়ে বলে,

‘ আমি কীভাবে জানবো? আমার রিমিপরীর নামে বাজে কমেন্টস করার আগে তোমার ভাবা উচিৎ ছিলো। ‘

পায়েল ব্যাথায় চিৎকার করে কান্না করতে থাকে কিন্তু তার আর্তনাদ শুধু অয়নের রুমের দেয়ালের মাঝেই সীমাবদ্ধ থাকে।

[লেখিকাঃ জান্নাতুল ফেরদৌসি রিমি]
_________________________

ফারহানকে নিজের দিকে এগিয়ে আসতে দেখে রিমি পিছাতে থাকে। ভয়ে হাত-পা কাঁপছে তার। পালানোর সুযোগটুকুও এখনো নেই তার।

ফারহানকে এগিয়ে আসতে দেখে মেঘ হাঁসিমুখে রিমির হাত ধরেই, রিমিকে নিয়ে ফারহানের সামনে দাঁড়িয়ে বলে,
‘ ভাইয়া তুমি আমাকে ডাকছিলে? ‘

ফারহানের চোখ যায় হঠাৎ রিমির পানে। কেমন বিস্মিত হতভম্ব নয়নে চেয়ে আছে রিমির দিকে। রিমি
ফারহানের সেই দৃষ্টি উপেক্ষা করে মাথা নিচু করে থাকে। রিমি প্রচন্ড ভয় পাচ্ছে। গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে। এই মুহুর্তে বড্ড পানি খেতে ইচ্ছে হলো তার। শীতের মধ্যেও তরতর করে প্রতিনিয়ত ঘেমে চলেছে রিমি। মনে হচ্ছে সে বোধহয় কোন ভুতকে
দেখে ফেলেছে। রিমির দৃষ্টিতে ফারহান এখন তার কাছে ভুতের থেকে কোন অংশে কম নয়। যাকে বলে ভয়ংকর ভুত। বলিষ্ট দেহী বিশিষ্ট ফারহান নামক যুবকটি রিমিকে খানিক্ষন পর্যবেক্ষন করলো। অতঃপর আনমনে বলে উঠলো,

‘ জান্নাত তুমি? ‘

‘ জান্নাত ‘ নামটি শুনে রিমির হাত-পা দ্বিগুনভাবে কাপছে। ফারহানকে কী এতোবছর পরেও তাকে চিনে ফেললো। মেঘ এক পলক রিমির দিকে তাকিয়ে হেসে ফারহানকে উদ্দেশ্য করে বলে,

‘ তুমিও না ভাইয়া? কাকে কি নামে ডাকছো তুমি?
ওহ তুমি তো রিমিপুর সাথে আগে দেখা করো নি। ওকে আমি পরিচয় করিয়ে দিচ্ছি মিট মাই ভাবি মিসেস রিমি চৌধুরী। অয়ন ভাইয়া সবাইকে বলে দিয়েছে যে যতক্ষন পর্যন্ত রিমিপুর সাথে ভাইয়ার ডিভোর্স না হচ্ছে ততদিন রিমিপুর পরিচয় হবে সে ডক্টর এয়ারসির ওয়াইফ। বুঝলে ভাইয়া? ‘

মেঘের কথায় ফারহানের রিমিকে নিয়ে যা ধারণা ছিলো তার সমাপ্তি ঘটলো। রিমি স্বস্হির নিঃশ্বাস ফেলে। যাক ফারহান তাকে চিনতে পারেনি। ফারহান এইবার পকেট থেকে একটা বড় চকলেটের প্যাকেটটা বের করে মেঘের হাতে গুজে দিয়ে বলে,

‘ আজকে অফিসে যাওয়ার সময় তোর ফেভারিট চকলেটটা চোখে পড়লো। তাই কিনে রেখেছিলাম। ‘

ফারহান কথাটি বলে আর দাঁড়ায় না। ধীর পায়ে স্হান ত্যাগ করে। মেঘ চকলেটটার দিকে তাকিয়ে প্রাপ্তির হাসি হেসে বলে,

‘ জানো রিমিপু? আমার ফারহান ভাইয়া না চেঞ্জ হয়ে যায়নি। এখনো আগের মতো আছে। শুধু ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ হয়তো আগের মতো করেনা কিন্তু এখনো তার বোনের জন্যে ভালোবাসা বিন্দুমাত্র কমেনি। কেন যে সবকিছু চেঞ্জ হয়ে গেলো। একটা ঝড় সবকিছু শেষ করে ফেললো। ‘

কথাটি বলতে বলতে মেঘের চোখ দিয়ে নোনাজল গড়িয়ে পড়লো। রিমি তা সযত্নের সাথে মুছিয়ে দিয়ে বলে,

‘ কেঁদো না মেঘ। আবারোও সব ঠিক হয়ে যাবে। শুধু একটু সময়ের অপেক্ষা। ‘

মেঘকে সান্তনা দেওয়ার জন্যে রিমি কথাটি বললেও,
রিমি খুব ভালো করেই জানে কিছুই ঠিক হবেনা।

______

রিমি বাগানের দোলনায় বসে ভাবছে তাকে যা করার খুব তাড়াতাড়িই করতে হবে। আজ ভাগ্যক্রমে সে বেঁচে গেছে কিন্তু ফারহান যদি তাকে চিনে ফেলে? তখন কি হবে? তখন তো সে যা করতে এসেছিলো তা করতেই পারবে না। রিমি আনমনে কিছু ভাবছিলো তখনি অয়নের উপস্হিতি রিমি নিজের পাশে টের পায়। অয়নকে এই মুহুর্তে দেখে কিছুটা ঘাবড়ে যায় রিমি। রিমির এমন ঘাবড়ে যাওয়া দেখে অয়ন রিমির দিকে ঝুঁকে ভ্রু কুচকে বলে,

‘ রিমিপরী আমার দিকে তাকাও! কি ভাবছো তুমি? ‘

রিমি তাকায় না বরং নীচের দিকে তাকিয়ে থাকে। অয়ন খানিকটা গম্ভীর সুরে বলে,

‘ জানো রিমিপরী? মানুষ তখনি তার বিপরীতের মানুষের চোখে চোখ রেখে কথা বলতে পারেনা যখন সে কিছু লুকায় কিংবা কোন অপরাধ করে। তুমি কী কিছু লুকাচ্ছো রিমিপরী? ‘

অয়নের কথার প্রতিউত্তরে রিমি ঠিক কি বলবে বুঝতে পারছে না। রিমিকে ভয় পেতে দেখে অয়ন স্মিত হাসে। ফিসফিস কন্ঠে বলে উঠে,

‘ রিমিপরী শুনছো? এইভাবে প্রতিদিন ভয় পেতে থেকো। আমি রোজ রোজ তোমার ভয়ার্থ মুখশ্রীতে মুগ্ধ হবো। ‘

__________

হসপিটালে দুইটা ওটি শেষ করে ক্লান্ত শরীরে নিজের কেবিনে বসে ছিলো অয়ন। তখনি তার নজর যায়
বাড়ির সিসিটিভির ক্যামেরার দিকে। সঙ্গে সঙ্গে মাথায় রক্তচড়ে তার।

____________
রাতে সিড়িতে বসে ছিলো রিমি। চৌধুরী বাড়ির বিশাল ড্রইংরুমে একটি বড় দরজার সমতল্য জানালা রয়েছে। সেই জানালা থেকে রিমি দূর আকাশের চাঁদটাকে দেখছে। চাঁদ মেঘের মাঝে নিজেকে কেমন লুকিয়ে রেখেছে। যেন চাঁদটি শুধুই মেঘের। চাঁদকে অন্য কেউ কেন দেখবে? কথাটি ভেবে ফিক করে হেসে দেয় রিমি। তখনি সেখানে হুট করে অয়ন এসে রিমির পাশে বসে হঠাৎ রিমির কোলে নিজের মাথা রেখে দিয়ে চোখ বন্ধ করে দেয়।
অয়নের এমন আক্রমনে থম মেরে বসে থাকে রিমি।
অয়নের নিঃশ্বাস রিমি তার শরীরে খুব ভালোভাবে টের পাচ্ছে। রিমি অয়নকে সরাতে চাইলে, অয়ন চোখ বন্ধ করেই বিরক্তির সুরেই বলে,

‘ রিমিপরী কিছুক্ষন তোমার কোলে মাথা রেখে আমাকে ঘুমাতে দাও। আমার শান্তির ঘুম খুব প্রয়োজন। মারপিট করে আমি ক্লান্ত। ‘

চলবে……..কী?
#তুমিময়_নেশায়_আসক্ত
#পর্ব- ১১
#Jannatul_ferdosi_rimi (লেখিকা)
অয়নের তপ্ত উষ্ম নিঃশ্বাসের অস্তিত্ব নিজের শরীরে
খুব ভালোভাবেই টের পাচ্ছে রিমি। অয়ন রিমির কোমড় জড়িয়ে ঘুমাচ্ছে। রিমি চাইলেও অয়নকে সরাতে পারছে না। অনেক্ষন চেষ্টা করার পরে যখন রিমি অয়নকে নিজের থেকে একচুলও সরাতে পারলো না তখন ব্যর্থ হয়ে হাল ছেড়ে দেয়। রাতের গভীরতা বাড়ছে তার সাথে নিরবতাও প্রখরভাবেও
বেড়ে চলেছে সময়ের সাথে সাথে। বড় জানালা দিয়ে
শীতের বাতাস এসে রিমির শরীরটাকে নাড়িয়ে তুলছে। রিমির গাঁয়ে পাতলা একটা চাঁদর মাত্র। রিমি একবার ভাবলো উঠে গিয়ে জানালাটা বন্ধ করে দিবে কিন্তু অয়ন এমনভাবে তাকে জড়িয়ে আছে সে চাইলেও যেতে পারবে না। অয়ন ঘুমের মাঝেই নিজের অধরজোড়া দিয়ে ছুইয়ে দেয় রিমির নরম হাতখানা। রিমি কেঁপে উঠে। রিমি একপলক তাকায় ঘুমন্ত অয়নের দিকে। ঘুমের মাঝে কি সুন্দর লাগছে লোকটা। ফর্সা মুখটায় কোনপ্রকার হিংস্রতা নেই। নেই কোন রাগ। আছে শুধু একরাশ মায়া। ঘুমন্ত অয়নের দিকে তাকিয়ে আদোও কেউ বলবে? এই লোকটা জেগে থাকলে সাইকো হয়ে উঠে। কিন্তু কেন তার এমন আচরণ? কেন অয়ন রিমির প্রতি এতোটা
পসিসিভ হয়ে উঠছে দিনের পর দিন? কথাগুলো
বড্ড ভাবায় রিমিকে। রিমির কি হলো কে জানে রিমি হাত বাড়িয়ে অয়নের মুখশ্রীতে খোচা খোচা চাপদাড়িতে হাত বুলায়। সঙ্গে সঙ্গে তার বুকটা কেঁপে ভালোলাগার কম্পনে। সে হাত সরিয়ে ফেলে।
ঘুমালে একটা মানুষকে এতো ভালো লাগে? রিমি শুধু শুনেছিলে মেয়েরা ঘুমালে নাকি তাদের খুব সুন্দর লাগে। তাদের প্রতি আলাদাই একটা মায়া কাজ করে তখন কিন্তু সেসব কথাতে মিথ্যে প্রমাণ করে দিলো অয়ন। ঘুমন্ত মেয়েদের মুখেই শুধু আলাদা মায়া থাকেনা বরং ছেলেরা ঘুমালেও তাদের মুখে আলাদা এক মায়া কাজ করে। সেই মায়ায় যেকোণ রমনী মন হারিয়ে বসবে। রিমিও কি তবে মন হারিয়ে বসছে ধীরে ধীরে? কথাটি রিমির মস্তিষ্কে কথাটি নাড়া দিতেই রিমি চটজলদি অয়নের থেকে সরে আসে। এতে অয়নের কাঁচা ঘুমটা ভেঙ্গে যায়।
বিরক্তিতের কপালের বলিরেখায় ভাজ পরে। অয়ন রিমিকে নিজের কাছে টেনে, শক্ত গলায় প্রশ্ন ছুড়ে বলে,

‘ কি করছো কী তুমি? বললাম না? কিছুক্ষব ঘুমাবো জাস্ট। সেই সময়টুকুও দিতে পারলে না তুমি? ওকে ফাইন! আজকে সারারাত তুমি আমার সাথেই ঘুমাবে। ‘

রিমি অয়নের কথায় হতভম্ব হয়ে বলে, ‘ কি বলছেন কি? আমি আপনার সাথে ঘুমাবো মানে? কয়েকদিন পর আমাদের ডিভোর্স ভুলে গেলেন? সবাই কি ভাব্বে? আমি কিছুতেই আপনার সাথে ঘুমাবো না। ‘

রিমির কথাকে গুরুত্ব দিলো না অয়ন। পাজকোলে তুলে নিলো তার রিমিপরীকে। ঢুলুঢুলু পায়ে এগিয়ে যেতে নিলো তার ঘরের দিকে। রিমি হাতপা ছড়াছড়ি করতে করতে অয়নের দিকে অগ্নিদৃষ্টি নিক্ষেপ করে বলতে থাকে,

‘ ছাড়ুন আমাকে। আপনি কিন্তু এইভাবে আমার উপর অধিকার ফলাতে পারেন না। আমি এতোদিন চুপ করে আছি বলে। এখনোও চুপ করে থাকবো তা আপনি মোটেও ভাব্বেন না কিন্তু। এইবার আমি রুহানা চৌধুরীর সাথে ডাইরেক্ট কথা বলবো। ‘

অয়ন রিমিকে নিজের ঘরে এনে, রিমিকে তার বিছানায় বসিয়ে, খট করে নিজের দরজা বন্ধ করে দেয়। অতঃপর নিজের ব্লেজার টা খুলে বিছানায় ফেল্ব দেয়। অয়নের এমন কাজে ভরকে যায় রিমি। জোড়ে জোড়ে নিঃশ্বাস ফেলে কাঁপা কাঁপা কন্ঠে আওড়াতে থাকে,

‘ আপনি কিন্তু আমার কাছে আসবেন না। একদম না। আপনি যদি ভেবে থাকেন আপনি আমাকে একা পেয়ে আমার সুযোগ নিবেন তাহলে আপনি কিন্তু ভুল ভাবছেন। ‘

রিমির এমন কথায় অয়ন হঠাৎ রিমির অনেক কাছে এসে,রিমির গাল চেপে ধরে রাগান্বিত সুরে বলে,

‘ সিনেমার ডায়লগ দেওয়া শেষ? আর সবথেকে বড় কথা আমরা এখনো হাজবেন্ড ওয়াইফ। আমি যদি
তোমার উপর অধিকার খাটাতেও চাই তখন তুমি আমাকে চাইলেও আমাকে আটকাতে পারবে না।
তাই এইসব ইডিয়েট কথাবার্তা নেক্সট টাইম থেকে বলবে না। ‘

কথাটি বলেই পুনরায় রিমির কোলে মাথা রেখে শুয়ে পড়লো। রিমি কিছু বলতে চাইলে অয়ন ঘুম ঘুম কন্ঠে একপ্রকার শাসিয়ে বলে উঠলো,

‘ এইবার যদি আমাকে ডিস্টার্ব করেছো তাহলে আমি তোমার সাথে রোমান্টিকতার ক্লাস নিবো। ইউ নো সাচ আ হটিনটি রোমান্টিক ক্লাস। বুঝতে পারছো তো রিমিপরী? ওয়াট আই মিন? ‘

অয়ন দুষ্টুহেসে কথাটি বলেই ঘুমিয়ে পড়লো পুনরায়।

(লেখিকাঃ জান্নাতুল ফেরদৌসি রিমি)

অয়নের দুষ্টুহাসির কারণটি বুঝতে তেমন বেগ পেতো হলো রিমির। রিমি শুকনো ঢুগ গিলে চুপ থাকলো।
এই লোকটাকে দিয়ে তার কোণ বিশ্বাস নেই। যা বলে তাই করে। রিমি আরেকটু ভালো করে অয়নকে পর্যবেক্ষন করে দেখতে পেলো অয়নের ঠোটের কোণে রক্তের দাগ। কিসের সাথে লেগে যেন কেটে গেছে। সঙ্গে সঙ্গে রিমির অয়নের বলা কিছুক্ষন আগের কথা মনে পড়লো। অয়ন কিসব মারপিটের কথা বলেছিলো। রিমির বুক থেকে সুদীর্ঘশ্বাস বের হয়ে আসলো। অয়নের ঘুমন্ত মুখের দিকে তাকিয়ে
বিড়বিড় করতে বলতে লাগলো,

‘ না জানি কার বারোটা বাজিয়েছেন উনি। আল্লাহ এই লোকটা কি সত্যিই একটা সাইকো? উফফ! ‘

রিমি অয়নের নামে এইটা সেইটা বলতে বলতে অয়নের বিছানাতে পিঠ ঠেকিয়ে ঘুমিয়ে গেলো একসময়।

__________

পাখির কিচিরমিচির শব্দে রক্তাভ আকাশে সূর্য যখন উঁকি দিচ্ছে; তখনই শিশির ছড়াচ্ছে সবুজ দূর্বাঘাসে।
শীষের ডগায় জমা শিশিরগুলো যেন মুক্ত দানার মত দ্যুতি ছড়াচ্ছে। হিম হয়ে উঠেছে শীতের ভোরের সকাল।

অয়নের ঘুম প্রতিদিন ভোর পাঁচটায় ভাঙ্গে।
অয়ন যত দেরী করেই ঘুমাক সে তার সঠিক সময় অনুযায়ী ঘুম থেকে উঠে। ঘুম থেকেই উঠেই অয়নের চোখ গেলো তার রিমিপরীর দিকে। সঙ্গে সঙ্গে মনটা তার প্রশান্তিতে ভরে গেলো। ঘুমন্ত রিমিপরীকে বড্ড স্নিগ্ধ লাগছে তার কাছে। যেন কোন ফুটন্ত গোলাপ। অয়ন আলতো হাঁসলো। রিমিকে বড্ড ছুইয়ে দিতে ইচ্ছে হলো তার। অয়ন নিজের ইচ্ছেকে সংযত করলো না বরং রিমির গালে আলতো করে চুমু খেলো। রিমি এতে খানিকটা নড়ে পুনরায় ঘুমিয়ে গেলো। অয়ন হেসে রিমির গায়ে কম্বলটা জড়িয়ে আনমনে বলে উঠলো,

‘ ভালোবাসি কিনা জানিনা তবে তোমার মায়ায় জড়িয়ে যাচ্ছি প্রতিনিয়ত রিমিপরী। ‘

অয়ন উঠে দাঁড়িয়ে নামায পড়তে চলে যায়। আজকে কেন যেন তার নামায পড়তে ইচ্ছে হলো। হয়তো মহান আল্লাহ তাকে মহামূল্যবান কিছু দিয়েছে সেইটারই শুকরিয়া আদায় করবে সে।

___________________

রুহানা চৌধুরী তার কেবিনে বসে রাগে ফুশছেন। মাথা কাজ করছে না তার। কিছুক্ষন এর মাঝেই অয়নের উপস্হিতি টের পান তিনি। ক্রোধ নিয়ে অয়নের পানে চেয়ে থাকেন। অতঃপর ক্ষিপ্ত গলায় বলে,

‘ অয়ন তুমি জানো তুমি কী করেছো? ‘

‘ জানি আমি। ‘

অয়নের সহজ উত্তর ।

‘ মিঃ শেখ হসপিটালে ভর্তি। উনার যদি কিছু হয়ে যায় তখন উনি আমাদের উপর স্টেপ নিবেন। আমাদের কম্পানির একটা বিশাল ক্ষতি তো তুমি করেই ফেলেছো । পায়েল অসুস্হ হয়ে পড়েছে তাই ক্যানাডা যেতে পারেনি। তার মধ্যে তুমি মিঃ শেখের সাথে যা করেছো এতে উনি আমাদের সাথ শত্রুতা করবেন। যার ফল মোটেও ভালো হবেনা। তুমি শুনছো কিছু অয়ন? ‘

অয়ন শান্তভঙ্গিতেই চেয়ারে বসে পড়ে। তার মনে পড়ে যায় কালকের ঘটনা। সে যখন হসপিটালে বসে ছিলো তখন তার চোখ যায় সিসিটিভির দিকে। ড্রইং রুমে তখন রুহানা চৌধুরী এবং মিঃ শেখ ছিলেন।
মিঃ শেখকে রুহানা চৌধুরী বিশেষ নিমন্ত্রন করেছিলেন এবং কিছু কম্পানির ব্যাপারে মিটিং করবে বলে। তখনি ড্রইং রুমের সদর দরজা দিয়ে রিমি হসপিটালে উদ্দেশ্য বের হয়ে যাচ্ছিলো। মধ্যবয়স্ক মিঃ শেখ রিমিকে দেখেই মন্তব্য করে বসেন,

‘ মিসেস চৌধুরী মেয়েটা কে বলুন তো? ‘

‘ আপ্নাকে তো বলেছিলাম অয়নের ব্যাপারটা। নামের কয়েকদিনের বউ। ‘

‘ তা ডিভোর্স এর পরে এই মেয়েটা কী করবে?
রক্ষিতার কাজ করবে? আমার ছেলের আবার রক্ষিতার খুব দরকার। ‘

কথাটি বলেই হেসেটে ফেটে পড়েছিলেন মিঃ শেখ।

অয়নের কানে সেই কথাটি যায়। অয়ন সোজা বাড়িতে চলে যায়। মিঃ শেখকে তার মাথা ঠিক থাকেনা। সামনে থাকা রড দিয়ে ইচ্ছেমতো মারতে শুরু করে দিয়েছিলো। মিঃ শেখ রক্তাক্ত হয়ে পড়ে থাকে মাটিতে। কেউ চাইলেও আটকাতে পারেনা অয়নকে। অয়ন পাগলের মতো আচরণ করছিলো। হিংস্রভাবে মারছিলো মিঃ শেখকে।অয়ন রাগে গর্জে উঠে বলে,

‘ ইউ ব্লাডি এতো সাহস কী করে হয় আমার রিমিপরীকে রক্ষিতা বলার? তোকে তো আমি মেরেই ফেলবো। ‘

কথাটি বলে অয়ন তার মেশিং গান বের করলে রুহানা চৌধুরী কোনরকম অয়নকে ধরে ভিতরে নিয়ে গিয়ে ওষুধ খায়িয়ে শান্ত করে। মিঃ শেখকে হসপিটালে ভর্তি করান।

‘ কি হলো অয়ন? আমার প্রশ্নের জবাব দিচ্ছো না কেন তুমি? তুমি ওই সামান্য মেয়েটার জন্যে আমাদের কম্পানির এতো বড় ক্ষতি কেন করলে? ‘

রুহানা চৌধুরীর প্রশ্নে অয়ন…..

চলবে কী?