#তুমি_আমারই
#পর্ব_১৬
#Sumaia_Jahan
স্মৃতির পাতায় থেকে বেরিয়ে এলাম এতো কিছুর মধ্যেও আদির সাথে কাটানো দিন গুলোর কথা মনে পরতেই মুখে হাসি ফুটে উঠলো।আদি তো আমাকে বলেছিলো দশ বছর পর ফিরবে তবে এখনো কেন ফিরলো না?ফিরলেও কেন আমার সামনে আসছে না?কি দোষ করেছি আমি?কথা গুলো ভেবেই আবারও কান্না করতে শুরু করলাম।আর আমার গলায় থাকা আদির দেওয়া লকেট টা স্পর্শ করে বলতে লাগলাম,
—- কেন ফিরছো না তোমার আয়সুর কাছে? তোমার আয়সু যে বড্ড কষ্টে আছে।দেখ তোমার আয়সু খুব কন্না করছে!তুমি তোমার আয়সুর চোখের পানি মুছিয়ে দিয়ে বলবে না? ” কাঁদছিস কেন আয়সু এই দেখ আমি ফিরে এসছি তোর কাছে “।কেন বলছো এগুলো কেন? কেন?
কথা গুলো বলে কান্নায় ভেঙ্গে পরলাম।কান্না করতে করতেই ঘুমের দেশে কখন যে তলিয়ে গেলাম বুঝতেই পারলাম না।
অন্য দিকে আদিও বেজা চোখে আশপিয়ার ছবির দিকে তাকিয়ে চোখের পানি মুছতে মুছতে বললো,
—- আয়সু তুই মিথ্যুক বড়ো মিথ্যুক।তুই কখনো আমাকে ভালোবাসিস নি।তুই যদি আমাকে সত্যিই ভালোবাসতিস তাহলে তুই আমার সাথে এমন টা করতে পারতিস না।তোকে এর জন্য শাস্তি পেতে হবে।কঠিন শাস্তি! তুই আমাকে যতোটা পুরিয়েসিস আমিও তোকে ঠিক ততোটাই পুরিয়ে ছাড়বো হুম!
সকাল বেলা আমার ঘুম ভাঙ্গতেই প্রচন্ড মাথা ব্যাথা করছে আমি মাথায় দুই হাত চেপে ধরে বসলাম।আমি বসে চারিদিকটা ভালো ভাবে তাকিয়ে পুরো অবাক।কারন আমি বিছানায়!আমার স্পষ্ট মনে আছে আমি কালকে রাতে ফ্লোরে বসে কান্না করতে করতে ওখানেই ঘুমিয়ে পরেছিলাম।কিন্তু বিছানায় কি করে আসলাম।এসব ভাবতে ভাবতেই সোফার দিকে তাকিয়ে দেখি রোদ্দুর সোফায় ঘুমিয়ে আছে। সবসময় তো আমিই সোফায় আর উনি খাটে ঘুমান।আজ হঠাৎ উনি সোফায় কেন ঘুমাচ্ছেন? মনে হয় রাতে আমাকে ফ্লোরে পরে থাকতে দেখে করুনা হয়েছে তাই হয়তো আমাকে এখানে খাটে রেখে উনি সোফায় ঘুমিয়েছেন।এখন উনার এই ঘুমন্ত মুখ টা দেখে কতোটা নিষ্পাপ লাগছে।কে বলবে এই নিষ্পাপ মুখটার আরালে কতোটা খারাপ মানুষ লিকয়ে আছে।
মাঝে মাঝে কয়েকটা জিনিস আমি লক্ষ করেছি আদির মতো।আচ্ছা উনার সাথে কি আমার আদির কোনো সম্পর্ক আছে? কিন্তু রোদ্দুর তো একটা সম্পুর্ন আলাদা মানুষ না না উনার সাথে আদির কোনো সম্পর্ক নেই সবই আমার মনের ভুল। যাকগে এসব আমি এখন ভাবতে পারছি। আমার এখন খুব মাথা ব্যথা করছে আগে মাথা ব্যাথা ঠিক করি তারপর এই ব্যাটাকে শায়েস্তা করা যাবে।
তারপর আমি উঠে নিচে নেমে কিচেনের দিকে যাওয়ার আগেই শ্বাশুড়ি মা কফি হাতে নিয়ে বোরোলেন। উনি বেরিয়ে আমাকে দেখে একটা মিষ্টি হাসি দিয়ে বললো,
—- উঠে গেছিস আশপিয়া!আমি তো তোর কাছেই যাচ্ছিলাম। যাক ভালোই হয়েছে তোকে পেয়ে গেছি।
আমি বুঝিয়ে উনি সবসময় এতো হাসি মুখে থাকেন কি করে? কি সবসময় কথা বলার আগে একটা মিষ্টি হাসি দিবেনই দিবেন!আর উনার হাসিটাও মারাত্মক সুন্দর। যাইহোক উনি আমাকে কেন খোঁজছিলেন?আমি প্রশ্নাত্মক দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললাম,
—- মা তুমি আমাকে কেন খুঁজছো? কোনো কি প্রয়োজন?
উনি একটা মিষ্টি হাসি দিয়ে আমার দিকে কফির মগ টা এগিয়ে দিয়ে বললো,
—- তোর এখন নিশ্চয়ই মাথা ব্যাথা করছে! তাই তোকে কফি দেওয়ার জন্য খুঁজতেছিলাম।এই নে ধর মগটা।
উনাকে দেখে মনে হয় না আমি উনার ছেলের বউ।আমাকে কখনো বুঝতেই দেয়না আমি আমার মা-বাপি থেকে দূরে আছি।সবসময় আমাকে আগলে রাখে নিজের মেয়ের থেকেও মনে হয় আমাকে বেশি ভালোবাসে।আমারও এখন উনাকে নিজের মায়ের মতোই লাগে।আমার কখন কি লাগবে তা আমার আগেই উনি জেনে যান।পৃথিবীর সব বউ-শ্বাশুরীর সম্পর্ক টা যদি এমন তো তাহলে পৃথিবীতে কোনো অশান্তিই থাকতো না।কিন্তু আফসোস পৃথিবীতে সব বউ-শ্বাশুরীর সম্পর্ক গুলো এমন হয় না।একজন ভালো হলে তো আরেকজন খারাপ হয়।খুব অল্প মানুষের ভাগ্যেই এমন সুখ লেখা থাকে। আমি তাদের মধ্যে একজন কিন্তু উনি যদি রোদ্দুর এর মা না হয়ে আমার আদির মা হতেন তাহলে কতোই না ভালো হতো।কিন্তু সেটা তো আর সম্ভব নয়।তাই সেটা ভেবেও লাভ নেই। জানি না এমন মা আমার কপালে কদিন থাকবে।আমি শ্বাশুড়ি মায়ের হাত থেকে কফিটা নিয়ে বললাম,
—- মা তুমি কি করে বুঝে যাও আমার কখন কি লাগবে? তোমার কাছে কি যাদু আছে?
উনি একটা মিষ্টি হাসি দিয়ে আমার মুখে হাত রেখে বললো,
—- দূর পাগলি!মায়েরা মেয়েদের কখন কি লাগে সব জানে।তাছাড়া কাল রোদ্দুর বললো তুই নাকি রাতে অনেক কান্না করেছিস।এতো কান্না করলে তো মাথা ব্যাথা করবেই তাই তো এই সকাল সকাল তোর জন্য কফি বানালাম।এখন যা ঘরে গিয়ে কফিটা খেয়ে ফ্রেশ হয়ে নে তাহলে ব্যাথা অনেক টা সেরে যাবে।
আমি উনার কথায় সাই দিয়ে মাথা নেয়ে একটা মিষ্টি হাসি দিয়ে রুমে চলে এলাম।রুমে এসে দেখি রোদ্দুর এখনো বেগুরে ঘুমোচ্ছে। আমি একটা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে রুমের বারান্দায় গিয়ে দাড়িয়ে কফি খাওয়াতে মনোযোগ দিলাম।তারপর কফি খাওয়া শেষ করে ফ্রেশ হয়ে নিলাম এখন অনেক টা মাথা ব্যাথা সেরে গেছে।শরীরের ক্লান্ত ভাবটাও আর নেই বেশ ফুরফুরে লাগছে এখন।
রোদ্দুর এর দিকে তাকিয়ে দেখি উনি এখনো এই ভাবে ঘুমিয়ে আছেন।মাথায় একটা দুষ্ট বুদ্ধি এসেছে।ব্যাটা আমাকে ঠকিয়ে বিয়ে করেছিস না? আবার আমকে বলেসিস আমাকে আমার আদির থেকে সারাজীবন আলাদা রেখে আমাকে তোর স্টাইলে শাস্তি দিবি তাই না দাড়া এবার তোর কি অবস্থা করি আমি। এই আশপিয়া কে তো চিনিস না! তারপর আমি আমার সব সাজার সিনিস নি এসে রোদ্দুরের পাশে আরাম করে বসে পরলাম।এবার একে একে সাজাতে লাগলাম ঠোঁটের একপাশে লাল আর অন্য পাশে গোলাপি লিপস্টিক। চোখের দুই পাশে কাজল, আইলেনার,মেকাপ দিয়ে দুই রকম ভাবে সাজিয়েছি।কপালে ইয়া বড়ো করে একটা লিপস্টিক দিয়ে টিপ।আর পুরো মুখে মেকাপ দিয়ে ভরিয়ে দিলাম মুখের দুই সাইডে দুই রঙের মেকাপ লগালম।মুখের দুই সাইড দুই রকম জোকারের মতো লাগছে।পুরো সাজ কমপ্লিট করে একটা পিক তুলে রাখলাম পরে কাজে লাগানো যাবে।এই সাজ দেখে আমার পেট ফেটে হাসি পাচ্ছে। কিন্তু এখানে তো হাসা যাবে না হাসলেই তো ধরা পরে যাবো।কিন্তু এই হাসি কিছুতেই কন্ট্রোল করতে পারছি না।তাই তারাতাড়ি দৌড়ে ছাদে চলে গেলাম।
ছাদে এসে পেটে চেপে রাখা হাসিটা কে পেট থেকে উপড়ে ফেলে গগন ফাটানো হাসিতে ফেটে পরলাম। অনেকক্ষণ পর্যন্ত হাসতেই আছি কিন্তু এই হাসি কিছুতেই থামছে না।যতবার হাসি থামানোর চেষ্টা করছি ঠিক ততো বারই রোদ্দুরের ওই জোকার মুখ টা মনে পরে যাচ্ছে যার দরুন আবারও দ্বিগুণ হাসিতে ফেটে পরছি।আমার হাসির শব্দে রুহি আর রাহাত দুজনেই ছাদে চলে এলো।আমাকে এভাবে হাসতে দেখে রাহাত বললো,
—- কি ভাবিমনি তুমি একা একাই হাসছো! আমাদেরকেও একটু বলো আমরাও একটু হাসি।
আমি হাসতে হাসতে ওদেরকে ইশারায় আমার কাছে ডাকলাম। ওরা আমার কাছে আসতেই আমি রোদ্দুরের জোকার মুখের পিক দেখালাম।
পিকটা দেখে রুহি মাথা চুলকে বললো,
—- এটাতো একা জোকারের পিক। কিন্তু কেমন যেন একটা চেনা চেনা লাগছে জোকারটাকে!
আমি খুব কষ্টে হাসি কন্ট্রোল করে বললাম,
—- এটা আর কেউ না এটা তোমাদের প্রানপ্রিয় বড়ো ভাইয়ের।
আমার কথা শুনে রুহি আর রাহাত একবার দুজনেই একে অপরের দিকে তাকিয়ে আমার দিকে জোরে চিৎকার দিয়ে বললো,
—- কি কি কি……..
আমি ওদের চিৎকারে কান চেপে ধরে বললাম,
—- আরে তোমরা কি এখন আমার কান নষ্ট করে ফেলবে নাকি?হ্যা টা রোদ্দুরই!আর ওকে এভাবে আমি একটু আগে সাজিয়ে এসেছি।এবার বলো কেমন হয়েছে সাজটা।
কথাটা বলতে দেরি কিন্তু আমাদের তিন জনের গগন ফাটানো হাসতে দেরি নেই। আমরা হেসেই চলেছি।
আর ওদিকে রোদ্দুর ঘুম থেকে উঠে তোয়ালে হাতে নিয়ে ওয়াস রুমের ডুকলো।ডুকেই ব্রাশ করতে করতে আয়নার দিকে তাকিয়ে নিজে কে নিজে দেখেই একা জোর চিৎকার দিলো।আর ভয়ে ভয়ে বলতে লাগলো,
—- কে আছো এখানে? কে? এখনি বেরিয়ে আসো বলছি নাহলে কিন্তু ভালো হবে না!
কথাগুলো বলতে বলতে চারিদিকে একবার ভালো করে দেখে নিলো।না এখানে তো সে ছাড়া আর কেউ নে।তাহলে একটু আগে কাকে দেখলো ভুত নয় তো!আবার একটু ভয়ে ভয়ে আয়নার দিকে তাকালো।এবার বুঝতে পারলো কোনো ভুত টুত কিছুই না ওর নিজের মুখটাকে কেউ জোকারের মতো করে সাজিয়ে দিয়েছে ওর আর বুঝতে বাকি নেই কে ওকে এইভাবে সাজিয়েছে।রাগে ওর মাথা গরম হয়ে গেছে এখন এইভাবে আশপিয়ার সামনে যাওয়া যাবে না তাই এখন নিজের রাগটাকে কন্ট্রোল করে শাওয়ার নিচ্ছে।
রুহি কিছুক্ষণ হাসার পর বললো,
—- ভাইয়া কিন্তু তোমাকে ছেড়ে দেবে না!
আমি ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বললাম,
—- বয়েই গেছে! তোমার ভাইয়াকে আমি ভয় পাই নাকি!
তখনি নিচ থেকে একটা চিৎকারের শব্দ এলো।মুখ যতোই সাহস দেখাই না কেন এখন আমারও একটু একটু ভয় লাগছে যা বজ্জাত লোক। একটা চড়ের কারনে এমন অবস্থা করেছে এখনতো পুরো জোকার বানিয়ে দিয়েছে না জানি কি হয়।কিন্তু ওদের সামনে তা বুঝতে দেওয়া যাবে না।তাই মুখে হাসি ধরে রাখলাম।……
চলবে,,,,,
[ভুল ত্রুটিগুলো ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।]