তুমি আমারই পর্ব-১৮

0
2486

#তুমি_আমারই
#পর্ব_১৮
#Sumaia_Jahan

আজ ছয় ছয় টা মাস হয়ে গেলো আমি এই বাড়িতে আছি।বাড়িতে আছি মানে বাড়িতেই আছি বাড়ির বাহিরে এক পাও দিতে পারিনি। আমি অনেক বার চেষ্টাও করেছি এখান থেকে পালাতে কিন্তু প্রতিবারই ফলাফল এসেছে শূন। কারণ প্রতিবারই রোদ্দুরের হাতে ধরা পরেছি।আমি কিছুতেই বুঝতে পারি না আমি পালাতে গেলেই উনি কোথাথেকে যেন আমাকে ধরে ফেলেন।অথচ উনি বাড়িতে না থাকাকালীন সময়ই আমি পালানোর চেষ্টা করি!আর প্রত্যেকবার ধরা পরার পর আমাকে উনি নানা রকম শাস্তি দেন।তবে শাস্তি গুলো উনার স্টাইলের কখনো গায়ে তেলাপোকা ছেড়ে দিতেন এরকম আরো কতো কি! তবে যাই করেন না কেন কখনো আমার কোনো ক্ষতি করেন।সবসময় আমাকে আগলে রেখেছেন।উনাকে এটুকু বিশ্বাস করতে পারি উনার থেকে আমার কোনো বিপদ নেই। সব খারাপ গুনের ভিতর এই একটা কারনে হলেও উনাকে এখন একটু ভালো লাগে।

এ কমাসে দিয়া আর আমার বাপি-মা আমার সাথে অনেকবার যোগাযোগ করতে চেয়েছিলো কিন্তু আমি ওদের সাথে যোগাযোগ রাখিনি।ফোন দিলে ধরিনি বা কেটে দিয়েছি।এ বাড়িতেও অনেকবার এসেছে আমার সাথে দেখা করার জন্য কিন্তু আমি ওদের সাথে কোনো কথা বলিনি।কেনইবা বলবো কথা ওরা তো আদির ব্যবপারে সবই জানতো তারপরও আমার সাথে কি করে এমন টা করলো?ওদের কথা ভাবতেও আমার এখন ইচ্ছা করছে না এতোটাই ঘৃণা জমে আসে ওদের জন্য আমার মনে।

আজ সারাদিনে একবারের জন্যও রোদ্দুর এর দেখা পেলাম না।সারাদিনে রোদ্দুর কে বাড়িতে দেখিনি। শুধু রোদ্দুর কেন আজ আমার সাথে কারোই দেখা হয়নি।কি আশ্চর্যের বিষয়! এতো মাস হয়ে গেলো আমি এ বাড়িতে আছি কখনো এমনটা হয়নি।সবসময় কেউ না কেউ আমার সাথে থাকতো। কখনো আমাকে একা একা থাকতে হয়নি।কিন্তু আজ সেই সকাল থেকে এখন বিকেল গড়িয়ে গেলো অথচ কেউ আমার খোঁজ নিতেও আসেনি।শুধু খাওয়ার টেবিলে সবার সাথে একবার দেখা হয়ে ছিলো। সবাই একদম চুপ চাপ খেয়ে যে যার কাজে চলে যায়।কিন্তু সেখানেও রোদ্দুর ছিলো না।বুঝতে পারছি না এই বজ্জাৎ ব্যাটা গেল কই!সারাক্ষণ তো আমাকে কোনো না কোনো ভাবে জ্বালাতে থাকে। মনে হয় আমাকে না জ্বালালে এই ব্যাটার পেটের ভাত হজম হয় না।কিন্তু আজ গেলো কই?এখন তো আমারই মনে হচ্ছে এই ব্যাটার জ্বালানো গুলো খুব মিস করছি।কিন্তু আমি ওই ব্যাটাকে মিস করছি কেন? সব সময় তো উনার থেকে পালাতেই চেয়েছি!তবে এখন কেন উনাকে মিস করছি?আমি আবার উনাক…. না না আমি শুধু আদিকেই ভালোবেসেছি আর আদি কেই ভালোবাসবো।আর কেউ আমার মনে জায়গা পাবে না।আমি কি করে এই কথাটা মনে আনতে পারলাম?আমার নিজের উপরই নিজের এখন ঘৃণা হচ্ছে। আমি কি করে এতো টা নিচে নেমে গেলাম?খারাপ আশপিয়া আমার কানে বলছে,

—- ওই পাগল এতে খারাপ কি হে?রোদ্দুর ব্যাটা তোর বিয়ে করা বরই!ওই আদি ব্যাটা এতো বছর হলো তোর কোনো খোঁজ নিছে?তুই এবার ওই আদিকে লাথি মাইরা তোর মন থেইকা বাইর করতো।আর ওইখানে এই রোদ্দুর রে ডুকা।এতে কিন্তু তোর ভালাই হইবো কইলাম।

আর ভালো আশপিয়া আরেক কানে বললো,

—- না আশপিয়া এমনটা করো না তুমি কিন্তু আদিকে কথা দিয়েছো তুমি ওর জন্য অপেক্ষা করবা।তাই তুমি অন্য কাউকে তোমার মনে জায়গা দিও না।এতে কিন্তু আদি কষ্ট পাবে।

আমি খারাপ আশপিয়া কে ঝাড়ু দিয়ে বিদায় করে ভালো আশপিয়ার সাথে একমত হয়ে ওর সাথে হাত মিলালাম।ভালো আশপিয়া তো খুশিতে গদগদ হয়ে গেছে ওর কথা শুনার জন্য। আর ওইদিকে খারাপ আশপিয়া তো রেগে মেগে আগুন। ও রেগে বললো,

—- ওই রোদ্দুর ব্যাটা তোর লগে যা করছে এক্কারে ভালাই করছে।তুই এইডারই যোগ্য।দেখবি তোর কপালে ওই রোদ্দুর ব্যাটাই জুটবো।আমার কথা তো এহন শুনলি না তোর কপালেই দুঃখ আছে দুঃখ বুজলি!

বিকেল প্রায় শেষ শেষ এমন সময় রোদ্দুর কোথা থেকে যেন খুব ক্লান্ত হয়ে ঘরে ডুকলো।ঘরে ডুকেই কাপড় নিয়ে ওয়াস রুমে ডুকে গেলো।ঘটনা টা এতো তারাতাড়ি ঘটলো যে আমি কিছু বলার সুযোগই পেলাম না।শুধু নিরব দর্শকের মতো তাকিয়ে থাকলাম।এ ঘরে যে আমি নামক কোনো প্রাণী আছে তা বোধহয় উনার মনেই নেই।মেজাজ টা পুরো গরম হয়ে গেলো।

ওদিকে রোদ্দুর ওয়াস রুমের দরজা বন্ধ করে আস্তে আস্তে বললো,

—- আমাকে ক্ষমা করে দিও তোমার সাথে এমন ব্যবহার করার জন্য।আজকের পর তোমাকে আর রোদ্দুর খানের কোনো জ্বালা সহ্য করতে হবে না।সে আসছে!আর মাত্র কয়েক ঘন্টার অপেক্ষা!

কথাগুলো বলে রোদ্দুর একটা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে শাওয়ার নিতে গেলো।আর এদিকে আশপিয়া রোদ্দুর এর জন্য ওয়াস রুমের দরজার সামনে থেকে লক করে দরজার সামনেই পায়চারি করছে যাতে এবার আর রোদ্দুর পালাতে না পারে।

আমাকে উত্তর না দিয়ে আজকে এখান থেকে যেতে পারবেন না।সেই সকাল থেকে আমার সবাই এমন আজব ব্যবহার কেন করছে?আর উনি এতোক্ষণ কোথায় ছিলো?সব কেমন রহস্য ময় আমার কাছে সব কিছু কেমন ঘোলাটে লাগছে।আমি সব কিছুর উত্তর চাই তাও আবার এখুনি!
রোদ্দুর শাওয়ার নিয়ে দরজা খুলতে গিয়ে দেখে দরজা বাইরে থেকে দরজা লক করা।ও বুঝতে পরছে আশপিয়াই লক করে রেখেছে আর কেন করেছে তাও ও জানে।কিন্তু এখন সব উত্তর তো দিতে পারবে না।এখন যে তাকে আনতে যেতে হবে।

—- আশপিয়া দরজা টা খোলো আমার দেরি হয়ে যাচ্ছে!

—- জি না এখন দরজা খোলা যাবে না।আগে আমার কিছু প্রশ্নের উত্তর দিন তারপর খুলবো তখন যেখানে খুশি সেখানে যাবেন।আগে আমার প্রশ্নের উত্তর দিন।

—- আমি জানি তোমার কি প্রশ্ন কিন্তু তার উত্তর আমি এখন দিতে পারবো না। তার জন্য তোমাকে কয়েক ঘন্টা অপেক্ষা করতে হবে।এখন দরজা খোলো আমাকে যেতে হবে।

আমি অবাক কি বলছে এসব উনি?উনি আমার সাথে এইভাবে কেন কথা বলছে।আর আমার প্রশ্নের উত্তর পেতে হলে অপেক্ষা করতে হবে কেন?যাইহোক যখন অপেক্ষা করতে বলেছে না-হয় কয়েক ঘন্টা অপেক্ষা করি।আমি বললাম,

—- ঠিক আছে তা না হয় অপেক্ষা করবো কিন্তু এখন আমাকে বলতে হবে আপনি কোথায় যাবেন?

রোদ্দুর একটা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে গম্ভীর গলায় বললো,

—- একজন বিশেষ মানুষ কে আনতে এয়ারপোর্টে যেতে হবে।দেরি হয়ে যাচ্ছে এখন প্লিজ তারাতারি দরজাটা খোলা না হলে অনেক দেরি হয়ে যাবে।

আমি আর কথা বাড়ালাম না দরজাটা খুলে দিলাম।উনি বেরিয়ে তারাতাড়ি রেডি হয়ে চলে গেলেন।উনাকে দেখে মনে হচ্ছে উনার প্রিয় কোনো জিনিস হারিয়ে ফেলার কষ্টে আছেন।উনাকে দেখে আজকে কেন যেন ভিষণ মায়া হচ্ছে। খুব ইচ্ছে করছে উনার কষ্ট টা ভাগ করে নেওয়ার।কিন্তু আফসোস তা কখনো সম্ভব নয়।কথাগুলো ভেবেই একটা দীর্ঘ শ্বাস ফেললাম।

ওদিকে রোদ্দুর ফুল স্পিডে গাড়ী চালাচ্ছে। আজ তার মনে অনেক বড়ো ঝড় উঠছে।আজ যে তার সবথেকে প্রিয় মানুষ কে হারিয়ে ফেলার ভয়। প্রিয় মানুষ টার কথা ভাবতে ভাবতে এয়ারপোর্টে চলে এসে পরেছে।একটা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে গাড়ি থেকে নেমে এয়ারপোর্টে ভিতরে চলে যায়।এখানে এসেই সেই ব্যক্তি দেখা পেয়ে গেলো।সেই ব্যক্তিকে দেখে রোদ্দুর একটা মিষ্টি হাসি দিয়ে এক কানে হাত রেখে বললো,

—- সরি সরি বিশ্বাস কর আমি ইচ্ছে করে দেরি করিনি!

—- আমি এতো বছর পর ফিরলাম কোথায় আমার জন্য এক ঘন্টা আগে এসে বসে থাকবি তা না বিশ মিনিট লেট করে এসেছিস আর এখন আমার কাছে ক্ষমা চাইবি আর আমি তোকে ক্ষমা করে দেবো?

—- ঠিক আছে তুই যা শাস্তি দিবি আমি মাথা পেতে নিবো তাও আমাকে এবারের মতো ক্ষমা করে দে!

—- ওকে এবারের মতো ক্ষমা করলাম কিন্তু এটাই লাস্ট বলে দিলাম।

—- ওক্কে!

কথাগুলো বলেই দুজন হেঁসে দিলো।এবার ওই লোকটা হাসি থামিয়ে রোদ্দুর কে বললো,

—- সব কিছু প্লান মাফিক আছে তো?আর ও কিছু বুঝতে পারেনি তো?

রোদ্দুরও হাসি থামিয়ে বললো,

—- হুম একদম সব কিছু প্লান মাফিক হয়েছে আরও কিছু বুঝতে পারেনি। রোদ্দুর খান কোনো কাজে হাত দিয়েছে আর সে কাজ সাকসেসফুলি হয়নি এমন কোনো দিন হয়েছে!

ওই লোকটা একটা মুচকি হাসি দিয়ে রোদ্দুর কে নিয়ে সেখান থেকে বেরিয়ে গেলো।

চলবে,,,,,