#তুমি_আমারই
#পর্ব_২৩
#Sumaia_Jahan
—- দিয়া রাজিব তোমাদের বাসায় আমি সব জানিয়ে দিয়েছি।সবাই সব কিছুতে রাজি।আর তোমাদের লাগেজ পাঠিয়ে দিবে আজ থেকে বিয়ে পর্যন্ত তোমরা এখানেই থাকবে।সবাই এক সাথে থাকলেই তো বিয়ে বাড়ি বিয়ে বাড়ি লাগবে।বাড়িটা নাহলে মরা বাড়ির মতো লাগবে।এতে তোমাদের কোনো সমস্যা নেই তো?
দিয়া আর রাজিব দুজনেই শ্বাশুড়ি মায়ের মিষ্টি হাসি দিয়ে সায় জানালো। আর দিয়া মুখে বললো,
—- আরে আন্টি কি যে বলেন?আমি তো এক পায়ে খাঁড়া। আর সেখানে প্রবলেমের কথা তো এই দুনিয়াতেও আসবে না।
শ্বাশুড়ি মা দিয়ার উত্তরে বেশ খুশি হলেন।দিয়ার মুখে এক হাত রেখে ওর দিকে তাকিয়ে একটা মিষ্টি হাসি দিয়ে বললেন,
—- আমার একটা লক্ষী মা!সারাজীবন এমন লক্ষী হয়েই থাকবে।
পাশ থেকে আমি দিয়ার পিট চাপরে খুব গর্ব নিয়ে বললাম,
—- দেখতে হবে না কার বেষ্টু।আমার মতো লক্ষীর সাথে থাকতে থাকতে অলক্ষীও লক্ষী হতে বাধ্য। আর ও তো শুধু পেত্নী থেকে লক্ষী হয়েছে।তুমি চিন্তা করো না মা সারাজীবন ওরে এমন লক্ষী বানিয়ে রাখবো পেত্নী হতে আর দিবো না।
দিয়া আমার কথা শুনে রাগি লুকে আমার দিকে তাকলো আর ইশারায় বুঝিয়ে দিলো এর তোলা রইলো।কিন্তু আমি ওকে পাত্তা না দিয়ে ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বসে রইলাম।আর ও দাঁতে দাঁত চেপে মুখে জোরপূর্বক হাসি আনার চেষ্টা করে বললো,
—- জি আন্টি আপনার এই মহা লক্ষী বউমার সাথে থাকতে থাকতেই আজ আমার এই অবস্থা। সব ক্রেডিট কিন্তু আপনার এই মহা লক্ষী বউমার!
শ্বাশুড়ি মা আমাদের কথা শুনে নিঃশব্দে হাসলেন। তারপর সবার উদ্দেশ্য বললেন,
—- শুনো সবাই আজ বিকেলেই আমরা সবাই নিহাদের বাড়ি যাবো বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে।তাই বিকেলে সবাই রেডি হয়ে থাকবে।যেহেতু সামনেই বিয়ে তাই বর কনেরা এখন আর একসাথে থাকতে পারবা না।দিয়া আর আশপিয়া তোমরা দুইজন আজ থেকে রুহির রুমে রুহির সাথে থাকবা।আর আকাশ,রাজিব, রাহাত আর রোদ্দুর তোমরা চারজন চাইলে দুজন দুজন করে আলাদা আলাদা রুমে থাকতে পারো আবার চাইলে একসাথেও থাকতে পারো।তবে বিয়ের আগে কোনো বর কনে একে অপরের সাথে দেখা করতে পারবা না।
আমরা মেয়েরা বেশ খুশি কয়টাদিন সবাই এক সাথে থাকতে পারবো।খুশিতে সবাই একসাথে “ইয়ে” বলে চিৎকার দিয়ে উঠলাম।কিন্তু ছেলেরা কেউ এক বিন্দু কি এক চিটে ফোটাও খুশি তো দুরের কথা মুখ টাকে একদম আমবর্স্যার চাঁদের থেকেও কালো বানিয়ে ফেলেছে। রোদ্দুর এবার মুখ খুললো।কালো মুখ করেই গম্ভীর গলায় বললো,
—- মা আমি কারো সাথে রুম শেয়ার করতে পারবো না।কেউ আমার রুমে থাকলে আমার অস্বস্তি হয়।তার থেকে ভালো যে যেমন ছিলো তেমনভাবেই থাক।
এ্যাহ টঙ দেখলে আর বাঁচি না।কেউ উনার রুমে থাকলে অস্বস্তি হয় তাইলে আমার সাথে এতোদিন থাকলো কিভাবে? চান্দু মনে করছো আমি তোমার ধান্দা বুঝি না!আমাকে এতোদিন অনেক জ্বালাইচছো।এতোদিন শুধু একটা সুযোগের অপেক্ষায় ছিলাম। আজকে পাইয়া গেছি।সুযোগটাকে কাজে লাগাইতে হবেই।এটা ভেবেই মুখে একটা বাঁকা হাসি দিয়ে বললাম,
—- মা তাহলে ওকে ওর রুমেই থাকতে দিন।আর বাকিরা নাহয় অন্য রুমে থাকুক।তাহলে তো আর কোনো প্রবলেম নেই।
আমার কথাটা শ্বাশুড়ি মায়ের খুব পছন্দ পছন্দ হলো।তাই উনার মুখে হাসি ফুটে উঠলো।
—- এই নাহলে আমার বউমা!একদম ঠিক বলেছিস। এটা করলে তো আর কোনো প্রবলেমই হবে না।তাহলে এটাই ফাইনাল হয়ে গোলো।
তারপর শ্বাশুড়ি মা চলে গেলেন আর যাওয়ার আগেে বলে গেলেন তারাতাড়ি সবাই যেন সবার রুমে চলে যাই।তাই আমি দিয়া আর রুহিকে পাঠিয়ে দিলাম রুহির রুমে আর আমি গেলাম রোদ্দুরের রুমে।আমার কিছু জিনিস আনা লাগবে ওই ঘর থেকে।কিন্তু রোদ্দুরের সামনে যাওয়া যাবে না ওই সময় যা করলাম তাতে আমাকে সহজে ছাড়বে বলে মনে হয় না।তখন তো দেখলাম ও কোথায় যেন বেরিয়ে গেলো।তাই এখন রুম ফাঁকা এটাই সুযোগ। তাই তাড়াতাড়ি রোদ্দুরের রুমের দিকে এগিয়ে গেলাম।রুমে ঢুকে চারিদিকটা একবার দেখে নিলাম না কেউ নেই। একটা স্বস্তির শ্বাস ফেলে আলমারির কাছে গিয়ে আমার কিছু জিনিস নিতে লাগলাম।হঠাৎ একটা আওয়াজ হলো।আমি খুব ভয় পেয়ে গেলাম।তারপর আস্তে আস্তে পিছনে ঘুরে তাকাতেই ভয়ে আমার আত্মা শুকিয়ে গেলো।কারন দরজা লক করে আমার দিকে তাকিয়ে বাঁকা হাসি দিয়ে দাড়িয়ে আছে। কথায় আছে না যেখানে বাঘের ভয় সেখানেই সন্ধা হয় আমার অবস্থা ঠিক সেই রকম।যার থেকে পালানোর জন্য এতো সাবধানে এলাম আর সেই কিনা আমার সামনে।কিন্তু ও এখানে এলো কোথা থেকে? আমি তো ভালো করে দেখে নিয়েছিলাম কেউ তো ছিলো না।তাহলে ও কিভাবে এলো?ম্যাজিক জানে নাকি?জানতেও পারে এতোদিন তো বিদেশে ছিলো হয়তো ওখান থেকেই শিখে এসেছে।নিজের কৌতূহল মেটানোর জন্য জিজ্ঞেস করেই বসলাম,
—- তুমি কি বিদেশ থেকে ম্যাজিক শিখে এসেছো?
রোদ্দুর চুলে হাত বোলাতে বোলাতে বললো,
—- হায় আল্লাহ!মানুষ অন্ধ হইলে যাহয় আরকি সব কিছুই ম্যাজিক মনে করে।শেষে কিনা এই আন্ধা বউরে দুইবার বিয়ে করতে হবে!হয়রে কি কপাল আমার!
আমার মাথা রাগে ফেটে যাচ্ছে আমারে আন্ধা কইলো?এতোটা ইনসাল্ট! দশবছর ধরে অপেক্ষা করে এই অপমান সইতে হইলো।আমারে আন্ধা কইলি?করমু না তোরে আমি বিয়া।রাগ৷ কন্ট্রোল করে দাঁতে দাঁত চেপে বললাম,
—- কি দরকার অন্ধ বউ বিয়ে করার! তুমি বরং ভালো বউ খুইজা নিও আমি আমার বাড়ি চলে যাই।
বলতে দেরি কিন্তু রোদ্দুর ঝড়ের গতিতে এসে আমাকে আলমারির সাথে চেপে ধরতে দেরি হলো না।আর জোরে চিৎকার দিয়ে বললো,
—- আমার থেকে দুরে যাওয়ার খুব শখ তাই না! বাড়ির বাইরে এক পা দিয়ে দেখো পা ভেঙ্গে সারাজীবন হুইল চেয়ারে বসিয়ে রেখে দেবো।তুমি আমারই ছিলে আছো আর আমারই থাকবে।
কথাগুলো এক নাগারে চিৎকার দিয়ে বলে আমাকে ছেড়ে দিয়ে সোফায় গিয়ে বসে চোখ বন্ধ করে শ্বাস নিচ্ছে রোদ্দুর।ঘটনাটা এতো তারাতাড়ি ঘটলো যে সবকিছু আমার মাথার উপর দিয়ে গেলো।কিছুক্ষণ ওখানেই বেকুব মতো দাড়িয়ে থেকে হিসাব মিলাতে লাগলাম।আমি কি এমন বললাম যে এভাবে রিয়েক্ট করলো।কিছুই বুঝতে পারলাম না। বেশি মাথা খাটানোর দরকার নেই আমি যা নিতে এসেছি তা নিয়েই চলে যাই।সব জিনিস নিয়ে পা টিপে টিপে বেরিয়ে যাচ্ছিলাম।রোদ্দুর এখনো চোখ বন্ধ করেই আছে।কিন্তু করে যেন বুঝে গেলো আমি যাচ্ছিলাম চোখ বন্ধ করে বললো,
—- আর কখনো চলে যাওয়ার কথা বলবে না।চলে যাওয়ার কথা শুলেই আমি নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারি না।তাই আর কখনো বলবে না।
আমি ঠক আছে বলেই এক দৌড়ে রুহির রুমে চলে আসলাম।এসে দেখি ওরা দুজন গল্পে মেতে উঠেছে।আমাকে দেখেই দিয়া বললো,
—- এই কয়টা জিনিস আনতে কয় ঘন্টা লাগে?আর তুই এমন গরুর মতো জোরে জোরে শ্বাস ফালাইতাছোস কেন?
দৌড়ানোর কারনে ক্লান্ত ক্লান্ত হয়ে গেছি। তাই অনবরত শ্বাস নিতেছি আর ফেলতেছি।একটু ভালো করে দম নিয়ে বললাম,
—- আরে কইস না দোস্ত অনেক লম্বা কাহিনি পরে এক সময় শুনাবো নে।এখন এক গ্লাস পানি খাওয়াতো।
বিকেলে…..
আমরা রওনা দিয়েছি নিহাদের বাড়ির উদ্দেশ্যে।এখান থেকে পাঁচ কিলোমিটার দুরেই ওদের বাড়ি।আমরা দুইটা গাড়ি নিয়েছি। একটাতে আমি,রোদ্দুর দিয়া,রুহি আর রাহাত উঠেছি।বেচারা আকাশ ভাইয়া আর রাজিব ভাইয়ার জায়গা হয়নি এ গাড়িতে তাই ওরা শ্বাশুড়ি মা আর শ্বশুর মশাই এর সাথে পিছনের গাড়িতে উঠেছে।রাহাতের মুখে লজ্জা লজ্জা ভাব প্রথমবার হবু শ্বশুরবাড়ি যাচ্ছে বলে কথা।ওকে নিয়ে আমরা দারুণ মজা করছি।এভাবেই আমরা কিছুক্ষণের মধ্যে নিহাদের বাড়ি এসে পৌছালাম।
বাড়িটা খুব সুন্দর চারিপাশে অনেক ফুলের বাগানও দেখতে পেলাম।রাহাত অবশ্য বলেছিলো নিহা ফুল খুব পছন্দ করে।তাই হয়তো এতো ফুলের বাগান লাগিয়ে রেখেছে।যাইহোক আমরা আস্তে আস্তে বাড়ির ভিতরে ঢুকলাম।বাড়ির সামনে দাড়িয়ে একবার বেল বাজাতে না বাজাতেই দরজাটা হুট করে খুলে দিলো।আচমকা এমন হওয়াতে সবাই একটু ঘাবড়ে গেলো।আস্তে আস্তে সবাই নিজেকে সামলিয়ে নিলো।আমরা সবাই সামনে তাকিয়ে দেখি একটা লাল রঙয়ের কিছু একটা আমাদের দিকে এগিয়ে আসছে।রাহাত তো ভয়ে চিৎকার দিয়ে বলে ওঠলো,
—- ভুত ভুত ভুত……….
আর রোদ্দুরের পিছনে লুকিয়ে পরলো।আমরা ভালো করে তাকিয়ে দেখি একটা মেয়ে লাল বেনারসী পরে প্রায় হাটু পর্যন্ত ঘোমটা দিয়ে আমাদের কাছে এলো।রাহাতের এমন কান্ড দেখে ঘোমটা খুলে বিরক্তি ভাব নিয়ে বললো,
—- কি কপাল আমার হবু বর দেখতে এসে আমাকে ভুত বলে ভাইয়ের পিছনে লুকিয়ে পরলো।
আমাদের এবার বুঝতে বাকি রইলো না এটাই আসলে নিহা।পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার জন্য শ্বাশুড়ি মা মিষ্টি হেসে বললেন,
—- ওমা আমার বউমা তো দেখি খুব সুন্দর। নিহা মা তোমার মা বাবা বাবা কোথায় উনাদের ডাকো।
তারপর নিহা শ্বাশুড়ি মাকে সালাম দিয়ে ভিতরে নিয়ে ওর মা বাবার সাথে আলাপ করিয়ে দিলো।
চলবে,,,,,
[ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। আর ভুলগুলো ধরিয়ে দিবেন। ]