তুমি আমার অধিকার পর্ব-০৪

0
284

#তুমি_আমার_অধিকার. 🍂
#লেখকঃসাব্বির আহাম্মেদ
#পার্টঃ4

অন্তী আর নিলয় পাশাপাশি বসে আছে রেস্টুরেন্টে । অন্তী নিলয়ের পছন্দের খাবার অর্ডার দিছে ।

নিলয় অবাক হয়ে বললো ক্ষিধা লাগছে তুমার,তুমার পছন্দের খাবার অর্ডার না দিয়ে আমার পছন্দের খাবার অর্ডার দিছো কেনো…

অন্তীঃ কিছু হবে না । তুমার পছন্দের খাবার তো আমি খেতে পারি সমস্যা নেই ।
নিলয়ঃ হুম..

খাবার এসে গেলো দুজন খাওয়া শুরু করলো । খাবারের একফাকে অন্তীর ফোনে কল আসে । অন্তী বিরক্ত হয়ে কলটা কেটে দেয় । নিলয় বলে উঠলো কলটা না ধরে কেটে দিলা কেনো..

-অন্তীঃ আরে তেমন কিছু না । বাদ দেও.
খাওয়া শেষ নিলয় উঠে বিল দিতে গেলে অন্তী নিলয়কে থামিয়ে দেয়, আমি দিবো ।

নিলয় তো অবাকের ওপর অবাক হচ্ছে কি হচ্ছে এইসব অন্তীর এত টাকা কোথার থেকে এলো আর ওই ফোন কলটা কার.. সব কিছু তার মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে.
রেস্টুরেন্টে থেকে বের হয়ে নিলয় বললো চলো তুমায় এগিয়ে দিয়ে আসি অধিকার অন্তীঃ তার কেনো দরকার নেই আমি চলে যেতে পারবো ।

নিলয় আর জোর করলো না সে সোজা বাসায় চলে আসলো

– অনেকক্ষণ ধরে কলিংবেল চাপছে নিরার কেনো খোজ নেই আসলে নিরার সেইদিকে কেনো খেয়াল নেই সে ফোনে হদয়ের সাথে কথা বলে যাচ্ছে ।

_ অনেকক্ষণ পর দরজা খুলে দিয়ে নিরা উচ্চস্বরে বলে উঠলো কি হয়েছে এতোবার বাজাচ্ছেন কেনো ??

-নিলয়ঃ তুমি দরজা খুলতে দেরি করছো কেনো‌.
-নিরাঃ আমি বিজি ছিলাম তাই দেরি হয়েছে ।
-নিলয়ঃ কি কাজ করছিলা যে বিজি ছিলা
-নিরাঃ সেটা আপনাকে জানাবো কেনো??
-নিলয়ঃ আমাকেই তো জানাবে কারণ তুমি আমার বিবাহিত বউ তুমার ওপর আমার সেই অধিকার আছে ?

নিরাঃ ও আচ্ছা তাই না, এটার জন্য আপনি আমার ওপর অধিকার দেখাচ্ছেন!! এই আপনারা ছেলেরা কি মনে করেন হুম বিয়ে করে ফেললে তার ওপর অধিকার দেখাতে হবে নাকি হুম.

– হুম দেখাতে হবে কারণ শরীয়ত অনুযায়ী স্বামীর বউয়ের ওপর অধিকার আছে. কোথাও যেতে হলে তার অনুমতি লাগে । তুমি নেও হুম হুটহাট করে চলে যাও কেনো??

-নিরাঃ আমি এত কথা শুনতে চাই না । আমি আপনার কাছ থেকে মুক্তি চাই ।
-নিলয়ঃ কি বলো তুমি মাথা ঠিক আছে তুমার মুক্তি চাও মানে কি??

-নিরাঃ হুম যা শুনছেন তা ঠিক.আমার আপনার প্রতি ইন্টারেস্ট নেই আর আমাদের তো তেমন কিছু হয় নাই । আর আমি আপনাকে কখনো ভালোবাসতে পারবো না, সো একসাথে থাকার তো কেনো প্রশ্ন আসে না, আমি ভেবে নিয়েছি আমি হদয়ের কাছে চলে যাবো ।

-নিলয়ের চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়ছে । এতক্ষণ নিরার কথা তাকে হিট করে নাই । কিন্তু তার এই কথাগুলো তাকে হিট করছে । চোখের সামনে সব ঝপসা দেখছে সে হয়তো এখন ঘুরে পড়ে যাবে কোনোমতে সে সোফায় গিয়ে বসলো ঢক ঢক করে পানি খেতে শুরু করলো ।

– আর এইদিকে নিরার কেনো পাওা নেই সে রান্না ঘরে গিয়ে নিজের জন্য রান্না করে এনে খেতে শুরু করলো. নিলয় খেয়েছে কিনা তা জিজ্ঞাসা করতে প্রয়োজন মনে করলো না ।
. খাবার খেয়ে নিরা ঘুমিয়ে গেলো আর ঘুমানের আগে নিরা নিলয়কে বললো ভুলেও একসাথে ঘুমানের চেষ্টা করবেন না। না হলে এর ফল ভালো হবে না । কথাটা যেনো মনে থাকে?

_ নিলয়ের নিরার কথার প্রতি কেনো মনযোগ নেই ।

সে একটা সিগারেট নিয়ে ছাদে চলে আসলো । ছাদের ওই কোণে দুইটা চেয়ার রয়েছে একটা তার প্রিয়তমার জন্য আরেকটা তার জন্য.

_কিন্তু হায় আজকে তার বিয়ে করার বউ তার ওপর সে কেনো অধিকার রাখতে পারছে না……

নিলয় ফোনটা হাতে নিয়ে তার প্রিয় গায়ক হাবিব ওয়াহিদের গান শুনতে লাগলো ‌‌‌.. ( আমার ও প্রিয় গায়ক )

” তুমি হীনা
নিশি রাত একা চাদ এক পলক ছেয়ে রয় না ”
“তুমি হীনা
দূরের ওই আকাশ ছুয়ে যায় না ”
“” মন শুধু খোজে বেরায় “”
“” তুমাতে ঘুরে বেড়ায় একাকী “”ওওও
* এই ভুল শহরে স্মৃতির সব প্রহরে, অবুজ এই আমি কেনো তুমাকে খুজি,
“” জানি না আমি, জানো কি তুমি ??

_সকালে নিলয়ের আগে আগে ঘুম ভেঙ্গে গেলো, চোখ দুটো লাল বর্ণ হয়ে আছে । সম্ভবত এই চোখ দিয়ে অনেক ঝড় গেছে তাই লাল ।

_ উঠে ওয়াসরুমে যেতে দেখে নিরা নেই । সারাবাড়ি তন্ন তন্ন করে খুজে নিরাকে পাওয়া গেলো না । কোথাও গেলো বাড়ির কাজের লোককে জিজ্ঞাসা করতে সে বললো..

– কাজের বুুয়াঃ স্যার আফা অন্নের উঠার আগে চলে গেলো, আমাকে বললো দরজা খুলতে আমি খুলে দিয়েছে । আফা একটু ওয়েট করছে তারপর বাইকে করে একজন স্যার এসে আফাকে নিয়ে গেলো….. আমি এইটুকু জানি স্যার. এই বলে কাজের লোক চলে গেলো

নিলয় আর বুজতে বাকি রইলো না । নিরা কোথায় গেছে, আর ওই লোকটা কে?? নিলয় আর কিছু না ভেবে ওয়াস রুমে চলে চলে গেলো –

অফিসে যাওয়া হয় নি এই কয়েকদিন ভাবছিলো বিয়ে করে হানিমুন বা কোথাও ঘুরতে যাবে । তা আর কোথায় হলো অধিকারটুকু খাটানো যাচ্ছে না আর সেই খানে এইগুলো ভাবা নিছক বোকামি ছাড়া আর কিছু না.

_আর অফিস তো তাদের তাই যতদিন ইচ্ছা নিলয় ছুটি কাটাতে পারে ম্যানাজারকে সব বুজিয়ে দিয়ে আসছে…

ওয়াসরুম থেকে এসে নিলয় তার অফিসের ম্যানেজারকে কল দিলো
“হ্যালো মামুন সাহেব..

-জি স্যার কেমন আছেন ‌.

“হুম ভালো আছি তুমি কেমন আছো..
-এইতো স্যার আপনাদের দোয়ায় ভালো‌ আছি..
সব কিছু কেমন চলছে ঠিকঠাক..????
– জি স্যার সব ঠিকঠাক আপনি কেনো চিন্তা করার কিছু নেই!!

নিলয় একটু হাসি দিয়ে বলে হু আমি জানি । আমার অফিসে একমাএ তুমায় ছাড়া আর কাউকে ভরসা করা যায় না । তুমার হাতে সব কাজ দিয়ে আমি চিন্তা মুক্ত হই ।

– আচ্ছা ঠিক আছে রাখি ভালো থেকো..

– ওকে স্যার । আসসলামু ওয়ালাইকুম..

নিলয়ের ফোনে রিং বেজে উঠলো, আননোন নাম্বার থেকে..
তার ফোনে তো সবার নাম সেভ করা থাকে । তো এটা কে..
সাত পাচ ভেবে কলটা রিসিভ করলো সে..
ওপর পাশ থেকে..
” হ্যালো স্যার ঘুম ভাঙ্গে নি এখনো হুম…
– হুম কে আপনি‌.
“” ওমা আমাকে চিনতে পারেন নি এখনো আয় আল্লাহ‌‌. ( অপর পাশ থেকে)
– না
” একটু চিন্তা করুন চিন্তে পারবেন…( অপর পাশ থেকে.)
– এত পারবো না আপনি বলুন ( নিলয়)

” ওই 30 মিনিটের ভিতর নদীর ধারে আসবা.

এইবার আর নিলয় তাকে চিন্তে ভুল হলো না । এটা অন্তী!!

-নিলয়ঃ কেনো আসবো আমি পারবো না বাবা ঘুমাবো..

অন্তীঃ আসতে বলছি আসবা, বেশি জোর করবো না । আমি বসে থাকবো ইচ্ছা হলে আসবা না হলে নেই.. কারণ বেশি জোর করার অধিকার তুমি আমাকে দেও নাই..? এই বলে অন্তী কলটা কেটে দিলো…

-নিলয় কি করবো বুজতে পারছে না । একে তো অন্তী অনেক আগের বন্ধু তারওপর কখনো এমনভাবে বলে নাই আজকে বললো তাই সে ঠিক করলে যাবে অন্তত বন্ধুর খাতিরে ।

সই 30 মিনিট পর নিলয় অন্তীর কাছে গিয়ে বলে উঠলো কেউ আমায় আসতে বললো তাই আসলাম । এটা সে যেনো অন্য কিছু না ভাবে হুম..

-অন্তীঃ চুপ কেনো কথা বলে না..
-নিলয়ঃ ওকে ফাইন, আমার এখানে আসাতে কেউ মনে হয় বিরক্ত তো চলে যাচ্ছি, এই বলে পা বাড়াতেই..

-অন্তীঃ ওই বান্দর আরেক পা এগিয়ে দেখো, তোমাকে ঘুষিয়ে দিয়ে নাক ফাটামু.. চুপচাপ এইখানে এসে বসো..

-নিলয়ঃ হুম বসলাম, আচ্ছা ওইদিন বলছিলা তুমি এই কয়েকবছর কোথায় ছিলা কি করছো সব বলবা তো আজ তো বলতে পারো হুম..

-অন্তীঃ হুম আজ বলা যায় ।

অন্তী বলা শুরু করলো ওইদিন ভার্সিটির ক্লাস শেষ করে তুমায় খুজছিলাম । তারপর তুমায় কোথায় না পেয়ে একা একা হোস্টলে ফিরছিলাম, তারপর রাস্তায় কিছু বখাটে ছেলে পেলে আমার পিছু নিলো, আমি তা বুজতে পেরে সোজা ভৌ দৌড় দিলাম..
নিলয় অবাক হয়ে বললো তারপর..

তারপর শুনো ..
চলবে.