তুমি আমার অধিকার পর্ব-০৬

0
244

#তুমি_আমার_অধিকার🍂
#লেখক_সাব্বির আহাম্মেদ
#পার্টঃ6

নিলয় এক এক করে আবিরকে সব কিছু খুলে বললে, আবির আর অথৈ নিলয়ের মুখ সব শুনে থেকে থম মেরে আছে । একটু আগে নিলয়ের মুখ থেকে কি শুনলো তারা ।

এত কিছু ঘটে গেলো নিলয়ের ওপর দিয়ে, তারা কিছুই জানতে পারলো না তারা । আবির তো রেগে বললো আজ ওই সালির একদিন কি আমার একদিন?? সে এমন সাহস কোথার থেকে পায় । যে নিলয় কখনো রিলোশন যাই নি সব ভালোবাসা রেখে দিয়েছে বউয়ের জন্য অথচ আজ সে তার অধিকার থেকে বনছিত।

_আবির আর অথৈ নিলয়কে তার বাসায় দিয়ে আসলো ।
নিরা তখনও বাসায় আসে নি, আবির আর অথৈ কিছুক্ষণ থেকে চলে গেলো ।

আজ প্রায় এক মাস পর,.

এই একমাসে অনেক কিছু ঘটে গেলো, অনেক কিছু চাপা পড়ে থাকলো, নিলয়ের আস্তে আস্তে সব অনুভৃতিগুলো নিরার থেকে সরে যেতে লাগলো । চলে তো যাবেই নিরার ব্যবহার দিনে দিনে অনেক খারাপ হয়ে গেছে ।
সে যতই চাচ্ছে নিরার ওপর ফোকাস করতে । অজানা টানে তা হয়ে উঠছে না ।

ওপর দিকে….

_অন্তী বসে আছে তার বাবার কবরের পাশে, সেই ছোট বেলা থেকে বাবা তাকে কোলে পিঠে করে মানুষ করছে কখনো ভালবাসার কমতি বুজতে দেই নি তাকে ।

_ মা কি জিনিস কখনো বুজে উঠতে পারিনি সে, অন্যদের মতো সেও বাবাকে কখনো কখনো মা বলে ডাকতো আর তার বাবা তখন হে হে করে হেসে উঠতো.

ছোটবেলা থেকে বাবা যে কতটা পরিমাণ কষ্ট করে তাকে‌ মানুষ করেছে, এই কথা গুলো ভাবছে আর তার চোখ থেকে পানি পড়ছে
তাদের অনেক জায়গা সম্পওি ছিলো একসময়ে তার রাজ্য জুড়ে শুধু বাবা ছিলো । সারাদিন ব্যস্ত থাকতো তার বাবা কিন্তু রাতে তার জন্য সময় বরাদ্দ থাকতো । তখন বাবাকে পেয়ে অন্তী সেই ছোটবাবুদের মতো অচারণ করতো, নিয়ম করে প্রত্যেকদিন চকলেট আনা সপ্তাহে একদিন তাকে নিয়ে ঘুরে বেড়ানো । সব কিছু মিলিয়ে অন্তীর সেইদিন গুলো সুখের রাজ্য ছিলো..

বাবা মারা যাওয়ার পর থেকে তার জীবনে অন্ধকার নেমে এলো চাচা কৌশলে তাদের সব জমি হাতিয়ে নিলো। আর তাকে তার নিজ বাসায় চাকরাণীর মতে আচরণ করতে শুরু করলো । মানসিক নির্যাতন, দিন দিন বেড়ে চলছিলো তার ওপর পড়ালেখা তো দূরের কথা ।

অন্তী এইগুলো সহ্য করতে না পেরে, নিজ বাড়ি নিজ গ্রাম থেকে রাতে পালিয়ে এলো, অন্ধকারে অবছা আলো যতদূর চোখ যায় অন্ধাকারে ছেয়ে গাছে, গ্রাম থেকে অনেকদূর চলে আসলো সে, এই পথটা পাড়ি দিতে সে খুব ক্লান্ত হয়ে গেলো । চাদের আলো তখনও পৃথিবীতে পড়া শুরু করেনি
রাস্তার‌ ওইদিক থেকে কুকুরের ডাক শুনা গেলো, এই কুকুর গুলো ও না রাতবিরাতে চিৎকার করে মানুষদের ঘুমের ব্যাঘাত ঘটায় ।

_অন্তী সাথে করে কিছু খাবার নিয়ে এসেছিলো বিধায় ক্ষুধা লাগার পর সে গুলো খেলো । গুটিসুটি মেরে বসে রইলো সে,
শরীরের ক্লান্তিতে ঘুম ঘুম ভাব আসতে শুরু করলো, এলাকাটা তেমন নিরাপদ মনে হচ্ছে না তার কাছে । উঠে দাড়ালো আবার এই সরু পথ ধরে হাট শুরু করলো সেও জানেনা কোথায় যাবে, কোথায় তার ঠিকানা হবে আশে পাশের বিল্ডিং গুলো দেখতে চাক্যচিক্যময় গ্রামে থাকতে থাকতে কখনো দেখা হয় নি তার, আর রাতের নির্জন শহরে সঙ্গি হলে তো কথাই নেই ।

অন্তী বিড় বিড় করে কথা গুলো বললো ‌, আর নিজেই হো হো করে হেসে উঠলো ।

কিছুদূর যেতেই গাড়ির হেডলাইটের আলো তার চোখে এসে পড়লো । মনে মনে একবার ভাবলো হেল্প চাইবে, অজানা ভয়ে সে‌ কুলিয়ে উঠতে পারছে না । চাইবে কি না??..

_গাড়িটা এসে তার সামনে দাড়ালো গাড়ির কালো গ্লাসটা সরিয়ে কালো চশমাওয়ালা একজন লোক,
আপনার কেনো হেল্প দরকার..??
এমন বাজগাইয়ে কন্ঠে বললো কথাটা অন্তী ভয় পেয়ে গেলো,
সে আমতা আমতা করে বললো না কেনো হেল্প লাগবে না ।
থ্যাংকস..

তারপর ওই ব্যাক্তিটা জিজ্ঞাসা করলো তাকে এতো রাতে আপনি কোথায় যাচ্ছেন, আর কোথায় থেকে এসেছেন জানতে পারি??

অন্তী এইবারও চুপ করে রইলো, অন্তীর এই চুপ দেখে স্যার মেয়েটি কিছুই তো বলছে না ।

তারপর গাড়ি থেকে সুর্দশন এক যুবক নামলো, সাদা শার্টের উপর কালো ব্লেজার বেশ মানিয়েছে তার ওপর চুলগুলো একপাশে হেলে আছে উফফ অন্তী তো এক দেখাতে পাগল হয়ে যাচ্ছে মনে হয়…

ছেলেটি কাসে অন্তীকে বললো আপনি কে আর এতোই কোথার থেকে এসেছেন আর কোথায় যাবেন..??

অন্তী:- সে কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললো আমার নাম অন্তী, আমি গ্রাম থেকে এসেছি আর কোথায় যাবো সেটাও জানি না । ( আর ছেলেটির নাম হলো নিলয় আপনাদেরকে অন্তীর আর নিলয়ের ফার্ষ্ট কিভাবে পরিচয় হলো সেটা তুলে ধরা হলো..)

নিলয়ঃ- আপনি যদি আমাকে ভয় না পান তাহলে আপনার কেনো হেল্প লাগলে বলতে পারেন. ‌!
অন্তীঃ- না কেনো হেল্প লাগবে না আপনারা যেতে পারেন ।
নিলয়ঃ- দেখুন এতো রাতে কোথায় যাবেন আপনি নিজেও জানেন না ।
অন্তীঃ- বললাম তো লাগবে না । আপনারা যান.
নিলয়ঃ- ওকে ঠিক আছে ??

নিলয়ের গাড়ি চলা শুরু করলো, আর এইদিকে অন্তীর মনে হাসপাস শুরু হয়ে গেলো তার তো হেল্প লাগবে তাহলে কেনো সে না করে দিলো ধ্যাত এখন তার নিজের ওপর খুব বিরক্ত হচ্ছে ।
হঠৎা ঝোপের থেকে কিসের আওয়াজে সে ভয় পেয়ে গেলো সে খুব দৌড়াতে থাকলো আর সামনে দেখলো ওই গাড়িটা দাড়ানো । সে এক দৌড়ে গাড়ির কাছে এসে হাপাতে লাগলো নিলয় গাড়ি থেকে নেমে পানির বোতলটা অন্তীর হাতে দিলো অন্তী এক ঝাটকায় সে বোতলটা হাতে নিয়ে পুরো পানি খেয়ে ফেললো.. নিলয় হাসতে হাসতে বললো আস্তে আস্তে খান ।

অন্তীঃ- লজ্জার চুপ হয়ে থাকলো ।
নিলয়ঃ- তো মেডাম যাওয়া যাক ।
অন্তীঃ- কোথায় যাবেন,
নিলয়:- কোথায় আর‌ আমাদের বাসায় আর কোথায়..
গাড়িতে উঠুন..
অন্তী:- না আপনাদের বাসায় যাবো না আর গাড়িতে উঠবো কেনো হেটে হেটে যাবো..
নিলয়ঃ- এহ আসছে তার জন্য আমি হেটে হেটে যাবো আর বাসায় না গেলে কোথায় যাবেন আপনি হুম..
অন্তীঃ-এইখানে কোনো মহিলা হোস্টেল নেই আপনি আমায় সেখানে দিয়ে‌ আসেন ।
নিলয় আর কি করবো বেচারি এমনিতে ভয় পেয়ে আছে তার ওপর আর কেনো চাপ দেওয়া ঠিক হবে না ।
অগ্যত সে হাটা শুরু করলো, কিছুদূর যাওয়ার পর দেখলো অন্তী এখনো আসছে না ।
নিলয়:- কি হলো আসুন না হলে কিন্তু চলে যাবো ।
অন্তী:- এক দৌড়ে এসে নিলয়ের পিছন পিছন হাটা শুরু করলো।
বলছি কি আমি আপনার পাশাপাশি হাটতে পারি অন্তীর মুখ থেকে এমন কথা শুনে নিলয় অবাক হয়ে গেলো সে না করে দিলো ।
অন্তী মুখ কালো করে বিড় বিড় করে নিলয়কে বকলো ।

কিছুদূর যাওয়ার পর নিলয় পিছনে এসে অন্তীর পাশাপাশি হাটতে শুর করলো । অন্তী মুখ ভেংচিয়ে অন্য দিকে চেয়ে হাটতে শুরু করলো । অন্যদিকে হাটার ফলে অন্তী ইটের সাথে বাড়ি খেয়ে বসে পড়লো ।

আর নিলয়ের দিকে চেয়ে বললো সব আপনার জন্য হয়েছে ।
নিলয় অবাক হয়ে বললো আমি কি করলাম??
দেখি‌ কি হয়েছে । অন্তী প্রথমে দেখাতে চাইলো না নিলয়ের জোড়াজোড়িতে দেখালো । খানিকটা বেশ ফুলে গেছে এই পা নিয়ে আর বেশিদূর যাওয়া যাবে না ।

নিলয়ঃ- এই পা নিয়ে বেশি দূর যেতে পারবেন না আর এখান থেকে হোস্টেল বেশি দূরে?? তো আপনাকে আমি আমার এক বান্ধবির কাছে নিয়ে যাই তার বাসায় এখানেই..

অন্তীঃ- সে আর কি বলবে, মাথা নাড়িয়ে হা বললো..
নিলয় অথৈকে কল দিলো অথৈ ঘুমাচ্ছিলো নিলয়ের কল পেয়ে উঠে বসলো
অথৈঃ- কিরে‌ এতো রাতে কল দিয়েছিস কেনো কি দরকার বাথরুমে যেতে ভয় পাচ্ছিস নাকি এই‌ বলে অথৈ হে হে করে হেসে উঠলো ।
নিলয় রাগিস্বরে বললো এই বাল তর ফাইজলামি‌ বাদ দে বিপদে পড়ে কল দিয়েছি ।
অন্তীঃ- কিসের বিপদ??
নিলয় তারপর সব খুলে বললো অথৈকে.
অথৈঃ- ওকে নিয়ে আয় আমার বাসার সামনে এসে একটা কল দিস আমি নিচে নামবো ।

নিলয়ঃ- এই যে মেম চলুন একটু খানি হাটলে তার বাসায় ।
পা চালান
অন্তী বহু কষ্টে উঠে দাড়ালো একটু পর অথৈয়ে বাসার সামনে এসে তাকে কল দিলো
_কিরে তুই কই..
এক‌মিনিট নামছি,
অথৈ নিচে নেমে বাসার মেইনগেট খুলে নিলয় আর অথৈকে ভিতরে নিয়ে গেলো । বাসাটা একদম ফাকা
কিরে আংকেল আন্টি কোথায়..?
তারা বেড়াতে গেছে কিছুদিনের জন্য!!
আপনি ফ্রেশ হয়ে আসুন এই অথৈ অন্তীকে ওয়ারুমটা দেখিুে দেয় ??
অন্তী ফ্রেশ হয়ে নতুন একটা জামা পড়ে আসলো । নিলয় চেয়ার থেকে উঠে দাড়ালো, আচ্ছা আমি যা তাহলে..

অন্তী চোখ চোখ বড় করে তাকিয়ে আছে নিলয়ের দিকে,
অন্তীঃ- আপনি চলে যাবেন?? থেকে যান
নিলয়:- আরে কেনো সমস্যা নেই । যেকোনো সমস্যা হলে অথৈকে বলবে আর আমি তো আছি । কাল সকালে আমি আবার আসবো ।

অথৈ তাকে দেখে রাখিস ওকে, গুড নাইট
সে থেকে অথৈ আর অন্তীর বন্ধুত্ব ।.
পরেরদিন সকালে
নিলয় এসে অন্তীকে নিয়ে গেলো কলেজে ভর্তি করে দিলো আর থাকার জন্য হোস্টেল বুকিং করলো অথৈয়ের আপওির জন্য অথৈয়ের বাসায় থেকে গেলো ।
অন্তী ভাবতে পারিনি অচেনা একজন লোক এত সাহায্য করবে তাকে সেও পড়ালেখার পাশাপাশি কয়েকটা টিউশনি করে নিজের খরচ চালাতো .

এইবার আসি বর্তমানে এতোক্ষণ অন্তী তার অতীত পূর্ণাবৃওি করলো । সেই থেকে নিলয়ের জন্য আস্তে আস্তে তার মনে জায়গা করে নিলো ।

এখন তার কেনো কিছুর অভাব নেই, বাবা মা পেয়েছে । টাকা পয়সা সব আছে শুধু প্রিয় মানুষটার ভালোবাসার পাওয়ার অধিকারটুকু পাচ্ছে না ।

আজকে আর গাড়িতে উঠলো না রাস্তার এক পাশ দিয়ে হাটা শুরু করলো । কিছুদূর যেতেই মানুষদের ভিড় দেখা গেলো মনে হলো কিছু একটা হয়েছে নয়তো এমন ভীড় তো হওয়ার কথা নয়।ভীড় ঠেলে এগিয়ে গিয়ে দেখলো একজনের নিথর দেহে পড়ে রয়েছে । মুখটা তার চেনা এমনটি মনে হচ্ছে অন্তী একটু কাছেই যেতেই সে থমকে গেলো।তার হ্দয়টা ধুমড়ে মুচড়ে গেলো, সে চিৎকার করে ডেকে উঠলো।

চলবে..