তুমি আমার প্রেয়সী পর্ব-১১+১২

0
1377

#তুমি_আমার_প্রেয়সী
#পর্ব_১১
#তাসনিম_জাহান_রিয়া

ভীড় ঠেলে ভিতরে প্রবেশ করতেই আমাদের চোখ বড় বড় হয়ে যায়। আমি আর অহি অবাকের শেষ সীমানায় পৌছে যায়। ভার্সিটির ক্যাম্পাসের সবচেয়ে বড় সিসি টিভির স্কিনে একটা ভিডিও চলছে। যেখানে একটা ছেলে একটা মেয়েকে জড়িয়ে ধরে আছে, ঠোঁটে কিস করছে। ছেলেটার মুখ স্পষ্ট নাহলেও মেয়েটার মুখ স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছে। মেয়েটা আর কেউ নয় মেয়েটি হচ্ছে ছোঁয়া। ভিডিওটা দেখে অনেকে মজা নিচ্ছে আবার কেউ চোখ নামিয়ে চলে যাচ্ছে। আবার কেউ কেউ ছোঁয়ার দিকে কামনার দৃষ্টিতে তাকাচ্ছে।

সবাই ফুসুর ফুসুর করছে যে ছেলেটি আভিয়ান ভাইয়া। কিন্তু সবাইকে অবাক করে দিয়ে আভিয়ান ভাইয়া ছোঁয়ার গালে ঠাস করে দুইটা থাপ্পড় বসিয়ে দেয়। সবার দৃষ্টি এখন আভিয়ান ভাইয়া আর ছোঁয়ার ওপর।

আমার নিজের ওপর ঘৃণা হচ্ছে যে তোর মতো একটা চরিত্রহীন মেয়ের সাথে আমি সম্পর্কে জড়িয়েছিলাম। তোর মতো মেয়েরা কারো ভালোবাসা পাওয়ার যোগ্য না। আজ থেকে তোর সাথে আমার সব সম্পর্ক শেষ। তোকে যেনো আমার আশেপাশে না দেখি। তোর ছায়াও যদি আমার আশেপাশে দেখি তাহলে তোকে খুন করে ফেলবো।

ছোঁয়া এসে আভিয়ান ভাইয়ার হাত মুঠো নেয়।

বিশ্বাস করো আভিয়ান এটা আমি না। আমি শুধু তোমাকে ভালোবাসি আর কাউকে না। এই ভিডিওটা কেউ এডিট করে আমার মুখ বসিয়ে দিয়েছে।

বিশ্বাস তাও তোমার মতো একটা মেয়েকে ইম্পসিবল। তোমার সাথে কার এতো শত্রুতা আছে যে এমন একটা নোংরা ভিডিও এডিট করে তোমার মুখ বসাবে।

সব কিছু এই কণা করছে। ও আমার কাছ থেকে প্রতিশোধ নিচ্ছে। ওকে এতোদিন যে অপমান করছি তার বদলা নিচ্ছে আমার কাছ থেকে।

যাস্ট স্টপিড ছোঁয়া। কণার নামে মিথ্যা অপবাদ দেওয়া বন্ধ করো। এটা কোনো এডিট করা ভিডিও না। এখানের মেয়েটা যে ড্রেস পড়ছে আজকে তুমিও সেই ড্রেস পড়ছো। মেয়েটার মুখ না শরীরের গঠনও তোমার সাথে মিলে। এই মেয়েটা যে তুমি তাতে আমার কোনো সন্দেহ নেই। তোমার কথা বিশ্বাস করে কণাকে অনেক অপমান করেছি এতোদিন। কণা তোর সাথে অনেক অন্যায় করছি পারলে আমাকে ক্ষমা করে দিস।

কথাগুলো বলে আভিয়ান ভাইয় ভার্সিটি থেকে চলে যায়। ছোঁয়াকে এভাবে অপমানিত হতে দেখে আমার অনেক খুশি লাগছে। আমি আগের কণা হলে হয়তো কষ্ট পেতাম। এরা প্রত্যেকে আমাকে এতো আঘাত করেছে যে এখন আর অন্যের কষ্টে আমার মন কাঁদে না। ছোঁয়ার কান্না দেখে অহি দম ফাটা হাসিতে মেতে ওঠেছে। ছোঁয়ার কান্না দেখে আমার ন্যাকামো ছাড়া অন্য কিছু মনে হচ্ছে না। আমার পেট ফেটে হাসি আসছে কোনো রকমে হাসি চেপে আছি। হাসি আটকে রাখতে না পেরে আমি ফিক করে হেসে দিলাম।

ছোঁয়া আমার আর অহির দিকে অগ্নি দৃষ্টিতে তাকায়। তাতে আমাদের দুজনের কোনো ভাবান্তর হলো না। অহির ছোঁয়ার কাছে যায়। ছোঁয়ার চারপাশে ঘুরতে ঘুরতে বলে,

তোমাকে একটা কথা বলেছিলাম তোমার মনে আছে নাকি জানি না । আবার রিপিট করছি। অতি বাড় বেড়ো না ঝরে পড়ে যাবে। কথাটা কে বলেছিল এখন ঠিক মনে পড়ছে না। সে যাই হোক কথাটা তোমার জীবনের সাথে মিলে গেলো। ভাইয়ার সাথে রিলেশনে গিয়ে নিজেকে রানী ভিক্টরিয়া ভাবতে শুরু করেছিল। ভাইয়া যেমন তোমাকে মাথায় তুলেছিল তেমনি এক আছাড় দিয়ে মাটিতে ফেলে দিলো। কেমন লাগছে মাটিতে গড়াগড়ি খেতে? ছোঁয়ার দিন শেষ কণার বাংলাদেশ।

কথাগুলো বলেই অহি একটা ভুবন ভুলানো হাসি দেয়। ছোঁয়া কঠিন দৃষ্টিতে অহির দিকে তাকায়।

আমাকে অপমান করা এর শাস্তি তোমাদের পেতেই হবে। এই অপমানের প্রতিশোধ আমি নিবোই।

মেয়েটা কতো বেহায়া এতো কিছু হওয়ার পরও আরেকজনকে থ্রেট করছে। আমি তো লজ্জায় সুসাইড করে ফেলতাম।

ঠিকই বলেছিস এসব মেয়েদের লজ্জা সরম বলতে কিছু নেই। শুধু পারে ছেলেদের কাছে নিজেকে বিলিয়ে দিতে।

দুটো ছেলে মেয়ের কথোপকথন শুনে রাগে ফেটে পড়ে ছোঁয়া। রাগে চিৎকার করে বলে,

সবাই চুপ। আরেকটা কথা যদি কেউ বলে তার কি হাল করবো তোমরা কল্পনাও করতে পারছো না।

এতোদিন আভিয়ান ভাইয়ার গার্লফ্রেন্ড ছিলে বলে তোমাকে কিছু বলি নাই। আজকে আভিয়ান নিজে তোমার সাথে সব সম্পর্ক ভেঙে দিয়ে চলে গেছে। এখন কিছু বলে দেখ শুধু থাপড়ায়া তোর গাল ফাটাইয়া দিবু।

এই মেয়েটার সাথে আরেকটা মেয়ে তাল মিলিয়ে বলে,

এতো কিছুর পর জোড় গলায় কথা বলে কীভাবে সেটাই ভেবে পাচ্ছি না। এসব নষ্টা মেয়ে ভার্সিটিতে এসে শুধু শুধু ভার্সিটির পরিবেশ নষ্ট করে।

অনেকে অনেক কথা বলছে অপমান করছে কেউ কেউ আবার বাজে প্রস্তাব দিচ্ছে। অহি আমার হাত ধরে সেখান থেকে নিয়ে চলে আসে। ছোঁয়া সবার করা অপমান সহ্য করতে না পেরে ভার্সিটি থেকে চলে যায়।

২৬

আমি আর অহি ক্যান্টিনে বসে আছি।বন্যা আসে। বন্যার মুখ দেখে বোঝা যাচ্ছে সে খুব খুশি। অতিরিক্ত খুশি হয়ে এসে আমাকে জড়িয়ে ধরে। একটু পরে সাফাত ভাইয়া আর নোমান ভাইয়া আসে ।

জানেমান আমি কতোটা খুশি তোকে বলে বোঝাতে পারবো না। কিন্তু আফসোস ছোঁয়াকে নিজের চোখে অপমানিত হতে দেখতে পারলাম না। আজকেই লেইট করে আসতে হলো ধুর।

আসল কাহিনীটা কি হয়ছে কেউ সেটা আমাকে খুলে বলবা। আমি কিছুই বুঝতে পারছি না। রাস্তায় দেখলাম আভিয়ান চলে যাচ্ছে।

( আমি সাফাত ভাইয়া আর নোমান ভাইয়াকে সবটা খোলে বললাম।)

কিন্তু আমি একটা জিনিস বুঝতে পারছি না। এতোকিছু করলো কে? এসব করেই তার কী লাভ? আমাদের ভার্সিটির কারো সাহায্য ছাড়া এটা করা পসিবল না।

যেই করুক না কেন অনেক ভালো একটা কাজ করছে। আমার তো ইচ্ছে করছে লোকটাকে টাইট করে জড়িয়ে ধরে একটা কিসি দেই।

নোমান ভাইয়া কটমট দৃষ্টিতে বন্যার দিকে তাকায়। বন্যা ভয়ে চুপসে যায়। হ্যাবলা কান্তের মতো করে একটা হাসি দিয়ে বলে,

অতিরিক্ত এক্সাইটাইট হয়ে মুখ ফসকে কী বলে দিয়েছি বুঝতে পারি নাই? কণা এতো গোয়েন্দাগিরি না করে লোকটাকে একটা ধন্যবাদ দে। তোর চির শত্রু অপমানিত হলো আর তুই সেটা দেখার সুযোগ পেলি।

এসব কথা বাদ দে। এখন ক্লাসে চল।

আড়াল থেকে কেউ কণার হাসি মুখ দেখে নিজেও তৃপ্তির হাসি হাসে।

২৭

বিকেলে আমি আর অহি বাসায় ফিরি। বাসার পরিবেশ খুব শান্ত। মনে হচ্ছে কেউ মারা গেছে আর তার শোক সভা পালন করা হচ্ছে। আমি মিতুকে ডেকে জিঙ্গেস করলাম,

কীরে মিতি সবাই কোথায় গেছে?

আফা কই যাইবো সবাই বাড়িতে আছে?

সবাই এতো চুপচাপ কেনো?

বড় স্যার ( আভিয়ান ভাইয়ার আব্বু) তো এহনো আয়ে নাই। ছোড স্যার ( আভিয়ান ভাইয়া ) দুহুরে আয়া সেই যে ঘরে হান্দাইছে আর বাইর অয় নাই। আমি একবার খাওয়ার লাইগা ডাকছিলাম। আমারে ধমকায়া তাড়াই দিছে। বড় ম্যাডাম (আভিয়ান ভাইয়ার আম্মু) ঘুমের বড়ি খাইয়া ঘুমায়তাছে। আর আইনহের আম্মা ঘরে গাল হুলাইয়া বয়া রইছে।

কথাগুলো বলে মিতু চলে যায়। মিতুকে বড় আম্মু গ্রাম থেকে নিয়ে আসছে তাই এমন করে কথা বলে।

কণা বুঝতে পারছিস ছোট মা কেনো গাল ফুলিয়ে রুমে বসে আছে?

আমি মাথা নাড়ালাম যার অর্থ বুঝতে পারি নাই।

তুই এতো বোকা কেনো? ছোট মা ভার্সিটিতে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলো জেনে গেছে। নিজের আদরের ভাতিজীর অপমান মেনে নিতে পারছে না।

মনটা আমার ভীষণ ভালো এসব ভাবতে চাইছি না। রুমে যেয়ে ফ্রেশ হ । আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি একসাথে খাবো।

ওকে ডিয়ার।

তারপর আমরা দুজন দুজনের রুমে চলে গেলাম। ফ্রেশ হয়ে একসাথে দুজন খাবার খেয়ে নিলাম। তার পর দুজন মিলে ছাদে চলে গেলাম। ছাদে দুজন একসাথে অনেকক্ষণ আড্ডা দিলাম। সন্ধ্যার দিকে দুজনেই ছাদ থেকে চলে এলাম। দুজন দুজনের রুমে গিয়ে পড়তে বসলাম।

২৮

আমার ছেলেটার বুঝি মন খারাপ।

ছেলের মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে কথাটা বলল।

হুম।

কেনো?

ছেলেটা তার মায়ের কোলে মুখ গুঁজে দিয়ে বলে,

আজকে আমার প্রেয়সীর মন ভালো তাই আমার মন খারাপ।

এটা আবার কেমন কথা। তোমার প্রেয়সীর মন ভালো তোমার তো খুশি হওয়ার কথা।

মাম্মা আমি খুশি হতে পারছি না। কারণ আমি ছাড়া আমার প্রেয়সীর হাসি মাখা মুখ অন্য কেউ দেখছে সেটা আমি মানতে পারছি না।

তুমি দিন দিন হিংসুটে হয়ে যাচ্ছো।

মাম্মা ঐ মেয়ের প্রেমে পড়ে আমি ভয়ংকর রোগে আক্রান্ত হয়ে গেছি। ওর পাশে আমি ওর ছায়াকেও সহ্য করতে পারি না।

২৯

ঘুমের মাঝে মনে হলো কেউ আমার দিকে গভীর দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। আমার সারা মুখে হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। হঠাৎ মনে হলো কেউ আমার ঠোঁটের দিকে এগিয়ে আসছে। আমি ধপ করে চোখ খুলে ফেললাম।

কিন্তু কাউকে দেখতে পেলাম না। ফোনটা হাতে নিয়ে দেখি ১:৪৫ বাজে। আমার চোখের ঘুম উড়ে গেছে এখন আর ঘুম আসবে না। তাই বেলকনিতে চলে গেলাম। বেলকনিতে গিয়ে আমি সারপ্রাইজড।

চলবে…….

#তুমি_আমার_প্রেয়সী
#পর্ব_১২
#তাসনিম_জাহান_রিয়া

কিন্তু কাউকে দেখতে পেলাম না। এটা আমার মনের ভুল ছিল না সত্যিই কেউ এসেছিল। ফোনটা হাতে নিয়ে দেখি ১:৪৫ বাজে। আমার চোখের ঘুম উড়ে গেছে এখন আর ঘুম আসবে না। এটা আমার একটা বদ অভ্যাস রাতে কোনো ভাবে যদি একবার আমার ঘুম একবার ভেঙে যায় । তাহলে আর ঘুম আসে না। তাই বেলকনিতে চলে গেলাম। বেলকনিতে গিয়ে আমি সারপ্রাইজড।

আমি অবাকের চরম পর্যায় চলে গেছি। মুখে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছি। চোখ থেকে টপ টপ করে পানি পড়ছে। এটা কষ্টের কান্না না আনন্দের কান্না। আমার সামনে খাঁচায় একটা পাখি। পাখিটা অবিকল আমার বন্ধুর দেওয়া পাখিটার মতো। এক রকম দেখতে। আমি পাখিটার পাশে বসে পড়ি। আমি খাঁচাটা দুই হাতে জড়িয়ে ধরি।

বালিকণা,, বালিকণা ,, বালিকণা।

হঠাৎ এই নামটা শুনে আমি চমকে যাই। ধুলোকণা আর বালিকণা তো ঐ চিঠি প্রেরকে আমাকে ডাকতো। হঠাৎ খেয়াল করলাম পাখিটার পায়ের কাছে একটা কাগজ বাধাঁ। আমি খাঁচাটা খুলে খাঁচার ভিতরে হাত ঢুকিয়ে পাখির পায়ের বাধন খুলে কাগজটা হাতে নিলাম। খাঁচাটা বন্ধ করে বেলকনিতে সুন্দর করে একটা জায়গায় রেখে দিলাম। কাগজটা খুলে পড়তে শুরু করলাম,,

ধুলোকণা তুমি এমন কেনো? তোমাকে বলছিনা কোনো জিনিস নিয়ে মন খারাপ করবে না। যেটার জন্য তোমার মন খারাপ করবে সেটা শুধু মনে মনে একবার উইস করবে। চোখ খুলে দেখবে তোমার সামনে হাজির। আমার ধুলোকণার কী তার হিদুকে পছন্দ হয়েছে?

আমার ধারণা একদম সঠিক। ঐ চিঠি প্রেরকেই আমাকে হিদু গিফট করছে। আচ্ছা ঐ লোকটা কী মাইন্ড রিডার? আমার যেই জিনিসটার জন্য মন খারাপ হয় ঐ লোকটা ঐ জিনিসটাই পাঠিয়ে দেয়। আমার ও বন্যার মতো ঐ লোকটাকে টাইট করে জড়িয়ে ধরে একটা কিসি দিতে ইচ্ছে করছে। হঠাৎ করে ফোনের মেসেজ টোন বেজে ওঠলো। মেসেজটা আননোন নাম্বার থেকে এসেছে। মেসেজ ওপেন করে আমার চোখ চড়কগাছ ঐ লোকটা মেসেজ পাঠিয়েছে।

ধুলোকণা তোমার কোনো ইচ্ছাই আমি অপূর্ণ রাখি না। যদি সম্ভব হতো তোমার টাইট করে জড়িয়ে ধরে কিস করার ইচ্ছাটাও পুরণ করে দিতাম। সেই দিন আর বেশি দূরে নয় যেদিন তোমার এই ইচ্ছাটাও আমি পুরণ করে দিবো।

আমি দ্রুত রিপ্লে দিলাম,

আপনি কে? আপনি এসব কিছু কেনো করছেন? আজকে ভার্সিটিতে যা হয়েছে সব আপনিই করেছেন? আমি মনে মনে কিছু চাইলে আপনি বুঝে যান কি করে? আমি মাত্র যেই কথাটা বললাম সেই কথাটা আপনি কি করে শুনলেন? আর আমার নাম্বারই বা কোথায় পেলেন?

মেসেজটা সেন্ড করে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি ফোনের দিকে। লোকটা কখন রিপ্লে দিবে সেই আশায়। আমার অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে ফোনের মেসেজ টোন বেজে ওঠলো। মেসেজ ওপেন করে আমি মুখটা কালো হয়ে গেলো। কারণ মেসেজটা সিম কোম্পানি থেকে আসছে। আবার মেসেজ টোন বেজে ওঠলো। এবার আমার মন খুশিতে নেচে ওঠলো। এবার হয়তো আমার সব প্রশ্নের উত্তর পেয়ে যাবো। দ্রুত মেসেজ ওপেন করি এবার আর আমাকে নিরাস করেনি লোকটা।

কুল সুইটহার্ট। এতো হাইপার হওয়ার কিছু হয়নি। আজকে আমি তোমার সব প্রশ্নের উত্তর দিবো। আমি কে তা তুমি সময় হলেই জানতে পারবে। তাই অযথা আমি কে তা ভেবে মাথায় প্রেসার দিয়ো না। আমি তোমার জন্য সবকিছু করতে পারি। কারণ #তুমি_আমার_প্রেয়সী। আজকে ভার্সিটি যা হয়েছে সব কিছু আমিই করেছি। যারা তোমার ওপর অন্যায় ভাবে অত্যাচার করেছে। তাদের প্রত্যেককে শাস্তি পেতে হবে। তুমি মনে মনে কিছু চাইলে সেটা কী করে বুঝে যায়? হার্ট কানেকশন বেইব। তোমার মন যা চায় আমার মনও তাই চায়। তোমার নাম্বার পাওয়া আমার জন্য কোনো ব্যাপারই না। তুমি যা বলো সব আমি শুনতে পাই। কীভাবে শুনতে পাই সেটা সিক্রেট।

আমি আবার দ্রুত রিপ্লে দিলাম।

আমি চোখ বন্ধ করে কিছু চাইলে। চোখ খোলার সাথে সাথে পেয়ে যাবো। কী বলেন এখন কিছু চাইবো?

প্রায় সাথে সাথেই রিপ্লে দিলো।

চাইতেই পারো আমার কোনো সমস্যা নাই। কিন্তু চোখ খোলার সাথে সাথে পাবে না। কারণ ঐটা আমি আমার ধুলোকণাকে পাম দিছি। ইউ নো না সুন্দর মেয়েদের সাথে একটু আধটু ফাল্ট না করলে চলে না। তুমি তো সুন্দরী প্লাস হট। বাই বেইব ঘুমিয়ে পড়ো।

হট শব্দটা দেখে আমি তেলে বেগুনে চেতে ওঠলাম।

আপনি তো ভীষণ অসভ্য। আপনাকে তো আমি ভালো ভাবছিলাম। একটা অপরিচিত মেয়েকে আপনি হট বলে দিলেন।

উপস জানেমান তুমি এতো রেগে যাচ্ছো কেনো? আমি কী অন্য কাউকে বলছি? তুমি তো আমারি আমি তোমাকে যা ইচ্ছে তাই বলতে পারি। আচ্ছা যাও তোমাকে হট বলতে হলে যদি তোমার সাথে পরিচিত হতে হয়। চলো পরিচিত হয়ে নেই। পরিচিত হওয়ার পর তোমাকে হট বললে তো আর কোনো সমস্যা নাই। তুমি তো বলছো অপরিচিত মেয়েকে হট বলতে নেই তাই তোমাকে পরিচিত বানিয়ে নেই কী বলো?

লোকটার কথায় আমি থতমত খেয়ে যাই। লোকটা আমার কথার জালে আমাকে ফাসাচ্ছে। হঠাৎ দরজায় খট খট করে শব্দ হলো। হঠাৎ এমন শব্দ হওয়ায় আমি চমকে যাই। এতো রাতে কে আমার রুমের দরজায় নক করছে। অহি আসলে তো নক করে আসতো না। অহির কাছে তো আমার রুমের এক্সট্রা চাবি আছে। অহি তো এক্সট্রা চাবি দিয়েই দরজা খুলে আসে।

তাহলে এতো রাতে কে আমার রুমের দরজায় নক করছে। এতো রাতে অহি ছাড়া অন্য কোনো মানুষ আমার রুমে আসার কথা নয়তো। আমার রুমের দরজায় ভূত নক করছে না তো। আমি চোখ বন্ধ করে আয়তুল কুরসি পড়া শুরু করলাম।

এক মনে আয়তুল কুরসি পড়ে যাচ্ছি। আর ঐদিকে এতো জুড়ে জুড়ে দরজায় নক করছে যেনো দরজা ভেঙে ফেলবো। একটা কথা মাথাই আসতেই ধপ করে চোখ খুলে ফেললাম। আমার মতো বোকা মনে হয় এই পৃথিবীতে আর দুইটা নাই। ভূতের আমার রুমের দরজা খোলার জন্য অপেক্ষা করার দরকার আছে নাকি। তারা তো দরজার নিচ দিয়ে, বেলকনি দিয়ে, যেকোনো জায়গা দিয়েই চলে আসতে পারে।

আমি পা টিপে টিপে গিয়ে দরজার সামনে দাঁড়ালাম। আল্লাহর নাম নিয়ে দরজা খোলার জন্য হাত বাড়ালাম। মনে মনে দোয়া করছি ভূত যেনো না হয়। দরজা খুলতেই আমি হতবাক। আমি স্বপ্ন দেখছি না তো। নিজের হাতেই নিজেই চিমটি কাটলাম। ব্যথা পেলাম তো তার মানে এটা স্বপ্ন না সত্যি।

আভিয়ান ভাইয়া আমার রুমের দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। এক হাত দিয়ে শক্ত করে দরজা ধরে আছে। চুলগুলো এলোমেলো, চোখ লাল টক টকে হয়ে আছে, উপরের দিকে শার্টের বাটন কয়েকটা খোলা। ভাইয়াকে পুরো বিধস্ত লাগছে। ভাইয়া কি যেনো বিড় বিড় করছে। ভাইয়াকে দেখে কেনো জানি আমার অদ্ভুত লাগছে। ভাইয়াকে দেখে কেমন জানি ভয় করছে। বুকের ভিতর সাহস সঞ্চয় করে বললাম,

ভাইয়া আপনি এতো রাতে এখানে? কোনো কিছু দরকার?

ভাইয়া আমার প্রশ্নের কোনো উত্তর দিলো না। ভাইয়া কেমন জানি ঢুলছে। আমি আবার কিছু ভাইয়াকে বলতে যাবো তার আগেই ভাইয়া আমার ওপর ঢলে পড়ে। আমি ভয়ে বরফের মতো জমে গেছি। ভাইয়ার মুখ থেকে কেমন একটা বিশ্রী গন্ধ আসছে। ভাইয়া ড্রিংক করছে। এতক্ষণ দূরে থাকায় আমি ভাইয়ার কথাগুলো শুনতে পাইনি। কিন্তু এখন আমি ভাইয়ার কথাগুলো স্পষ্ট শুনতে পাচ্ছি।

কণা আমাকে তুই ক্ষমা করে দে। না বুঝে তোর সাথে অনেক অন্যায় করেছি। ছোঁয়ার কথায় তোকে ভার্সিটির সবার সামনে অপমান করেছি। প্লিজ আমাকে তুই ক্ষমা করে দে। আমার ভিতরে একটা অপরাধবোধ কাজ করছে। কোনো কিছুতেই মন বসাতে পারছি না। সবকিছু এলোমেলো লাগছে। তুই আমাকে ক্ষমা না করলে…..

ভাইয়ার আর কোনো কথা আমার কানে আসছে না। ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে দেখি ভাইয়া ঘুমিয়ে গেছে। ভাইয়া তো ঘুমিয়ে গেলো এখন আমি ভাইয়াকে নিয়ে কী করবো?

২২

ছিঃ তুই এতো নিচ আমার ভাবতেই ঘৃণা হচ্ছে। আগে তো শুধু তোকে অপয়া, অলক্ষ্মী ভাবতাম। এখন দেখি তুই চরিত্রহীনা। কোন কুক্ষনে যে তোকে জন্ম দিতে গিয়েছিলাম। জন্মের সময় তোকে লবণ খাইয়ে কেনো যে মেরে ফেললাম না। জন্মের সময় মেরে ফেললে আজকে এই দিন আমাকে দেখতে হতো না।

চলবে…..