তুমি আমার প্রেয়সী পর্ব-২৫

0
1805

#তুমি_আমার_প্রেয়সী
#পর্ব_২৫
#তাসনিম_জাহান_রিয়া

ইতিমধ্যে ভিসি জানিয়ে দিয়েছে আদিয়াত আয়মান কিছুক্ষণের মাঝে চলে আসবে। ফুলের ডালা নিয়ে এভাবে দাঁড়িয়ে আছি। নিজেকে দেখে কামলা কামলা ফিলিংস আসছে। ভার্সিটির গেইটের সামনে তিন তিনটা কালো গাড়ি থামে। সামনের এবং পিছনের গাড়ি থেকে কালো পোশার দাড়ি কিছু বডিগার্ড বের হয়ে মাঝখানের গাড়িটির ডোর খোলে দেয়। গাড়ির ভিতর থেকে বের হয়ে আসে একজন সুদর্শন পুরুষ। সম্ভবত উনিই আদিয়াত আয়মান।

পুরা কালা চান সেজে আসছে। কালো রঙের শার্ট তার উপর কালো রঙের ব্লেজার। কালো রঙের প্যান্ট, পায়ে কালো রঙের সু। বাম হাতে কালো রঙের ঘড়ি। ফর্সা হাতে কালো রঙের ঘড়িটা ধারুন মানিয়েছে। চোখে কালো রঙের সানগ্লাস। চুলগুলো জেল দিয়ে সেট করা।

আদিয়াত আয়মান গাড়ি থেকে নামতেই ভিসি স্যার গিয়ে ওয়েলকাম করলেন।

স্যার আপনাকে কী বলে যে ধন্যবাদ দেব বুঝতে পারছি না। আপনি এত ব্যস্ত মানুষ। তার পরেও যে আমাদের ভার্সিটির অনুষ্ঠানে আসতে রাজি হবেন সেটা আমরা কল্পনাও ভাবতে পারিনি। আপনি যে আমাদের ভার্সিটি এসেছেন সেটা আমাদের চরম সৌভাগ্য। ওয়েলকাম টু আওয়ার ভার্সিটি।

থ্যাংক ইউ।

স্যারকে ধন্যবাদ বলে এক হাতে ফোন টিপতে টিপতে এগিয়ে আসছে আদিয়াত আয়মান । কোন দিকে তাকাচ্ছে না। ফোনের ভিতরে এতটাই ডুবে আছে যে দিন দুনিয়ার কোনো খেয়ালই নাই। এদিকে মেয়েরা উনার এমন লুক দেখে হার্ট এ্যাটাক ফ্যাটাক করে ফেলছে তার দিকে কোনো খেয়ালই নাই। হু যত্তসব ভাব।

আমাদের সামনে আসতেই আমরাও ফুল ছিটিয়ে দেই। কিন্তু ব্যাটা একবার ফিরেও তাকালো না। এই ব্যাটার মনে হয় সত্যিই মেয়েদের থেকে এলার্জি আছে। চলে যাচ্ছিলো হঠাৎ ঘাড় ঘুরিয়ে আমাদের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসি দিল। এটা দেখে মেয়েরা বুকে হাত দিয়ে পড়ে যাওয়ার অভিনয় করছে।
অহি আর বন্যা ঢং করে আমার ওপর ঢলে পড়ে। আমি মাঝখান থেকে সরে যায়। ওরা দুজন পড়তে পড়তে নিজেকে সামলে নেয়।

আদিয়াত আয়মান সোজা গিয়ে চিপ গেস্টের আসনে বসে পড়ে। প্রোগ্রাম দেখতে অনেকেই গেস্ট হিসেবে এসেছেন। উফ এই লোকটার হাসি এত কিউট কেনো? হাসলে গালে টুল পড়ে। কথা বলার সময় এক গালে টুল পড়ে। ছেলেদের হাসিও যে এত সুন্দর হয় সেটা আদিয়াত আয়মানকে না দেখলে জানতে পারতাম নাম। কণা তুই এসব কী ভাবছিস? তোর এত দিনের রেকর্ড ভেঙে তুই ক্রাশ খেতে পারিস না।

আমি, অহি আর বন্যা সামনের সিটে বসে পড়লাম। বিভিন্ন ভার্সিটি থেকে স্টুডেন্ট আসছে। তবে আমাদের ভার্সিটির স্টুডেন্টদের দেখেই চেনা যায়। কারণ আমাদের ভার্সিটির সকল স্টুডেন্ট নীল রঙের ড্রেস পড়ছে। ছেলেরা নীল রঙের পাঞ্জাবি আর মেয়েরা নীল রঙের শাড়ি। একেক জন একেবারে বিয়ের সাজ দিয়ে আসছে আদিয়াত আয়মানকে দেখানোর জন্য। সব মেয়েরা চোখ দিয়ে গিলে খাচ্ছে সেদিকে ব্যাটার কোনো হোস নাই ব্যাটা তো মোবাইলের ভিতর হান্দায়া গেছে।

আমি আর কিছু না ভেবে প্রোগ্রাম দেখায় মনোযোগ দিলাম। কিন্তু কিছুতেই মনোযোগ দিতে পারছি না। মনে হচ্ছে কেউ আমার দিকে ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে আছে। আমি আশেপাশে চোখ বুলিয়ে নিলাম। কিন্তু তেমন কাউকে দেখতে পেলাম নাহ। সবাই প্রোগ্রাম দেখায় ব্যস্ত। হুট করে আমার নাম এনাউন্স করায় চমকে যায়। সব ভাবনাকে দুরে ঠেলে দিয়ে অগ্রসর হলাম স্টেইজের দিকে। স্টেইজে ওঠতেই বুকের ভিতর কেমন জানি করতে থাকে। প্রচণ্ড ভয় না না নার্ভাস লাগছে। মাইক্রোফোনটা হাতে নিয়ে চোখ বন্ধ করে গান গাইতে শুরু করলাম।

“প্রাণ দিতে চাই
মন দিতে চাই,
সবটুকু ধ্যান
সারাক্ষণ দিতে চাই
তোমাকে,
ওওও তোমাকে।
স্বপ্ন সাজাই
নিজেকে হারাই
দুটি নয়নে রোজ নিয়ে শুতে যাই
তোমাকে,
ওওও তোমাকে।
জেনেও তোমার আঁখি চুপ করে থাকে,
রোজ দুইফোঁটা যেন আরো ভালো লাগে।
কানে, অভিসারে
চাই শুধু বাড়ে বাড়ে,
তোমাকে
ওওও তোমাকে।

যেদিন কানে কানে সব বলব তোমাকে
বুকের মাঝে জাপটে জড়িয়ে ধরব তোমাকে,
পথ চেয়ে রই,
দেরি করো না যতই
আর ভোলা যাবে না
জীবনে কখনোই
তোমাকে,
ওওও তোমাকে।

তুমি হাসলে
আমার ঠোঁটে হাসি,
তুমি আসলে
জোনাকি রাশি রাশি,
রাখি আগলে
তোমায় অনুরাগে
বলো কীভাবে
বোঝাই ভালোবাসি।
সব চিঠি সব কল্পনাজুড়ে
রঙ মিশে যায় রুক্ষ দুপুরে
সেই রঙ দিয়েই
তোমাকে আঁকি
আর কীভাবে
বোঝাই ভালোবাসি।”

গান গাইতে গাইতে আমি একটা ঘোরের মাঝে চলে গিয়েছিলাম। চোখের সামনে অজানার সাথে ফোনে কথা বলার মুহুর্তগুলো ভাসছিলো। সবার হাত তালির শব্দে স্বপ্ন থেকে বাস্তবে ফিরে আসি। স্টেইজে থেকে নামার সময় একটা কথা কানে আসতেই ফট করে আমি দাঁড়িয়ে যায়।

তোমার গানের গলাটা ধারুন। এমনিতেও তোমার কন্ঠটাও ভীষণ ভালো লাগে ইচ্ছে করে খেয়ে ফেলি।

আমি পিছনে ঘুরে তাকাই। কিন্তু সবাই সবার মত কাজে ব্যস্ত। তাহলে আমাকে এই কথাটা কে বললো? এসব ভাবতে ভাবতে গিয়ে আমার জায়গায় বসি।

কী ভয়নক কথা বার্তা? এমনিতেও তোমার কন্ঠটাও ভীষণ ভালো লাগে ইচ্ছে করে খেয়ে ফেলি। আমার কন্ঠ খেয়ে ফেলতে চায়। কারো কন্ঠ খাওয়া যায় নাকি। লোকটা মনে হয় মেন্টালি সিক।

আমার এসব ভাবনার মাঝেই আমার সামনে একটা ছেলে দাঁড়ায়।

কিছু বলবেন ভাইয়া?

জ্বী।

কী?

আপনাকে ভিসি স্যার ডাকছে।

আমি অবাক হয়ে জিঙ্গেস করি, কেনো?

তা তো জানি না। শুধু বলছে, আপনাকে জেনো এসো বলি, ভিসি স্যার আপনাকে উনার রুমে যেতে বলছে।

আচ্ছা, থ্যাংক ইউ ভাইয়া। আপনি যান আমি আসছি।

হঠাৎ করে স্যার কেনো আমাকে ডাকছে? স্যারের কী দরকার থাকতে পারে আমার সাথে? আচ্ছা আমি কী কোনো ভুল করেছি যার শাস্তি দেওয়ার জন্য স্যার আমাকে ডেকে পাঠিয়েছে? আমার জানা মতে তো আমি কোনো ভুল করিনি তাহলে। এসব ভাবতেই স্যারের কেবিনের সামনে চলে এলাম। দরজায় নক করে বললাম,

মে আই কাম ইন স্যার?

ইয়েস, কাম ইন।

আমি কেবিনের ভিতরে ঢুকে পড়লাম।

আমি এতক্ষণ তোমার জন্যই ওয়েট করছিলাম।

সরি স্যার। আপনাকে এতক্ষণ অপেক্ষা করিয়ে রাখার জন্য।

ইট’স ওকে। প্লিজ সিট ডাউন।

থ্যাংক ইউ স্যার।

আমি একটা চেয়ার টেনে বসে পড়লাম।

আমি একটা বিপদে পড়ে তোমাকে ডেকেছি। এই বিপদ থেকে একমাত্র তুমিই আমাকে উদ্ধার করতে পারো। তুমি কী আমাকে সাহায্য করবে না।

কী বিপদ স্যার? আর আমিই বা কীভাবে সাহায্য করতে পারি? যদি আমি আপনাকে কোনো ভাবে হেল্প করতে পারি। তাহলে আমি নিশ্চয়ই করব।

তুমি তো জানো এই প্রোগ্রামটাতে শুধু আমাদের ভার্সিটির অংশগ্রহণ করছে না। অনেক ভার্সিটির স্টুডেন্ট অংশগ্রহণ করছে। অনেকটা প্রতিযোগিতার মত। এখন আমাদের এখান থেকে একজন কম প্রতিযোগী গেলে আমরা হেরে যাব। এই প্রোগ্রামটাতে প্রত্যেক বার আমাদের ভার্সিটি জয়ী হয়। এবার যদি হেরে যায় তাহলে আমাদের ভার্সিটির মান-সম্মান থাকবে না। আদিয়ান আয়মানের মত একজন নামকরা বিজন্যাসম্যানের সামনে আমাদের কলেজের নাম ডুবাতে চাইছি না।

স্যার আপনারা কথার কিছুই বুঝতে পারছি না। আপনার কথা শুনে আমার মাথা হ্যাং মারছে। আপনি যদি খোলে সব কিছু বলতেন তাহলে ভালো হত।

তোমাদের সিনিয়র ফাহিম। এবার মাস্টার্স পড়ে। তুমি চিন তো?

জ্বী স্যার।

ফাহিমের সাথে যে মেয়েটার ডান্স করার কথা ছিল সেই মেয়েটি হঠাৎই অসুস্থ হয়ে পড়েছে। এখন তুমিই পার একমাত্র আমার এবং আমাদের ভার্সিটির মান-সম্মান বাঁচাতে।

কীভাবে স্যার?

ঐ মেয়েটির পরিবর্তে যদি তুমি ডান্স কর।

স্যার এটা কীভাবে সম্ভব? আমার তো প্র্যাকটিস নেই। হুট করে তো আমি নাচতে পারব না। স্যার আপনি অন্য কাউকে বলুন।

অন্য কেউ পারবে না। আমি জানি শুধু মাত্র তুমিই পারবে। আমি তোমার কলেজের প্রোগ্রাম দেখেছিলাম। তুমি অনেক ভালো নৃত্য জানো। আমি তোমাকে অনেক আশা নিয়ে ডেকেছি। তুমি আমাকে আশাহত কর না। আমি তোমার স্যার হয়ে তোমার কাছে অনুরোধ করছি।

ছিঃ ছিঃ স্যার এসব কী বলছেন? ভার্সিটির একজন স্টুডেন্ট হিসেবে আমার কর্তব্য ভার্সিটির সম্মান রক্ষা করা।

ফাহিম মেকআপ রুমে আছে। সেখানে গিয়ে ওর সাথে তুমি নাচের স্টেপগুলো মিলিয়ে নাও ।

ওকে স্যার।

৫৯

স্যার কেবিন থেকে অন্যমনস্ক হয়ে হেঁটে যাচ্ছিলাম। হুট করে কেউ আমার হাত ধরে টান দিয়ে একটা ফাঁকা ক্লাস রুমে নিয়ে আসে। রুমটা অন্ধকার কারণ সব দরজা, জানালা বন্ধ। এক ফোটা আলো আসার ক্ষমতা নেই। আমি জানি আমাকে কে এখানে নিয়ে আসছে। লোকটার পারফিউমের স্মেল দিয়ে আমি লোকটাকে চিনতে পারি। লোকটার পারফিউমের স্মেলটা একদমই আলাদা।

আপনি অন্ধকার রুম ছাড়া আর কোনো রুম পান নাহ?

পাই তো। কিন্তু আমি তো তোমার সামনে ধরা দিতে চাই নাহ। আমি চাই তুমি নিজে আমাকে খোঁজে বের কর।

আমি আপনাকে কী করে খোঁজে বের করবে? আমি তো আপনাকে চিনি নাহ। ইনফেক্ট আমি আপনার নামটাও জানি না। এভাবে কী কেউ কাউকে খোঁজে বের করতে পারে?

পারে। তুমি মন দিয়ে খোঁজ ঠিক আমাকে পেয়ে যাবে।

আমি আর কিছু বলতে যাব তার আগেই লোকটি তার আঙ্গুল আমার ঠোঁটের ওপর রেখে দিয়ে বলে, হোসস নো মোর টক। আমার গলার কাছের চুল গুলো সরিয়ে। গলায় পর পর তিনটা চুমু খেলেন।

চলবে……