তুমি আমার প্রেয়সী পর্ব-২৬

0
1306

#তুমি_আমার_প্রেয়সী
#পর্ব_২৬
#তাসনিম_জাহান_রিয়া

আমি আর কিছু বলতে যাব তার আগেই লোকটি তার আঙ্গুল আমার ঠোঁটের ওপর রেখে দিয়ে বলে, হুসস নো মোর টক। আমার গলার কাছের চুল গুলো সরিয়ে। গলায় পর পর তিনটা চুমু খেলেন। গলায় উনার অধর জোড়ার স্পর্শ পেয়ে আমি কেঁপে ওঠি। মনে হচ্ছে শরীর অবস হয়ে যাচ্ছে।

আমি সরে যেতে নিলেই উনি আমার দুই পাশে উনার দুই হাত রেখে আমাকে উনার হাতের মাঝে বন্দি করে ফেলেন। আমার মুখের সামনে মুখ নিয়ে আসেন। উনার নিশ্বাস আমার চোখে মুখে আছড়ে পড়ছে। তর্জনী আঙ্গুল দিয়ে ঠোঁটে স্লাইড করতে করতে স্লো ভয়েসে বলেন,

তোমাকে এত সুন্দর হতে কে বলেছিল? সবাই তোমার দিকে সবাই ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে থাকে যেটা আমার একদমই ভালো লাগে না। আমার ধুলিকণার দিকে শুধু আমি তাকাব। অন্য কেউ কেনো তাকাবে? হোয়াই? ইচ্ছে করে চোখগুলো তুলে ফেলি।

লাস্টের কথাটা অনেকটা রাগ নিয়ে বলেন। উনার রাগী কন্ঠ শুনে আমি ভয়ে কেঁপে ওঠি। উনাকে আগে কখন এমন ভাবে কথা বলতে শুনিনি। উনি বুঝতে পারেন আমি ভয় পাচ্ছি। তাই উনি একটা লম্বা শ্বাস নিয়ে নিজেকে স্বাভাবিক করেন। আমার কানের লতিতে একটা বাইট করে কানে মুখ লাগিয়ে নেশাক্ত কন্ঠে ফিসফিসিয়ে বলেন,

তোমাকে আজকে কতটা সুন্দর লাগছে সেটা তুমি নিজেও জানো না। আমি তো তোমার থেকে চোখই সরাতে পারছি না। তোমাকে দেখে আমার হার্ট বিট থমকে গিয়েছিল। মনে হচ্ছিল আমার দুনিয়ে থমকে গিয়েছে। তোমার ঐ চোখের দৃষ্টি আমাকে মাতাল করে দিচ্ছিল। তোমার খোলা কালো চুলগুলো আমাকে পাগল করে দিচ্ছিল। শুধু একটা জিনিসই মিসিং।

কী?

চোখে কাজল নাই। তুমি কি জানো? তোমার ঐ কাজল রাঙানো চোখের নেশাক্ত দৃষ্টি আমার ভিতরে তোলপাড় সৃষ্টি করে দেয়।

বন্যাকে তাড়া দিতে গিয়ে আমি নিজেই কাজল দিতে ভুলে গেছি।

এমন ভুল যেনো আর না হয়।
”আমি মারা গেলে
তুমি লাশ দেখার তাড়াহুড়ায়
চোখে কাজল দিতে ভূলোনা।”

হঠাৎ করে উনার মুখে লাশ শব্দটা শুনে আমার বুকের ভিতরে ধক করে ওঠে। আমার কী হলো আমি নিজেও জানি না। আমি উনাকে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরলাম।

৬০

বিছানার ওপর বসে কোলের ওপর কোশন নিয়ে গালে হাত দিয়ে ভাবছি। বুঝতে পারছি না হুট করে প্রোগ্রামের মাঝে ভার্সিটিতে ঝামেলা কেনো শুরু হয়ে গেলো। সবাই ব্যাপারটা স্বাভাবিক ভাবে নিলেও আমার কাছে ব্যাপারটা স্বাভাবিক লাগছে না।

ফ্ল্যাশব্যাক

আমি আর ফাহিম ভাইয়া ডান্স স্টেপগুলো প্র্যাকটিস করছিলাম। আমাদের নাম এনাউন্স করায় আমরা দুজন স্টেইজের দিকে অগ্রসর হই। আমরা দুজন আর স্টেইজে পৌছাতে পারলাম নাহ তার আগেই ভার্সিটির স্টুডেন্টদের মাঝে ঝগড়া শুরু হয়ে যায়। সিনিয়র সিনিয়রা গণ্ডগোল করছে। বাইরে থেকে কিছু গুন্ডা টাইপের লোক আসে। বাইরে থেকে যারা আসে তাদের সবার হাতেই হকিস্টিক ছিল। ঝগড়াটা পরে মারামারির রূপ নেই। মারামারি শুরু হয়ে যাওয়ার ফলে প্রোগ্রাম বন্ধ করে দেওয়া হয়।

____________________

আমার সব থেকে বেশী আশ্চর্যজনক লেগেছিল প্রোগ্রাম বন্ধ করে দেওয়ার কিছুক্ষণ পরেই মারামারি থেমে যায়। ভার্সিটির পরিবেশ শান্ত হয়ে যায়। সবার ধারণা যে লোকগুলো আদিয়াত আয়মানের ওপর আক্রমণ করতে এসেছিল। তাই উনি চলে যাওয়াতে মারামারি থেমে যায়।

আমি এত ভাবছি কেনো? প্রোগ্রাম বন্ধ হয়ে আমার জন্য ভালোই হয়েছে। নাহলে ঐ ফাহিম কাহিমের সাথে কাপল ডান্স করতে হত। আল্লাহ যা করেন ভালোর জন্যই করেন।

আমি বিছানা থেকে নেমে বেলকনিতে চলে গেলাম। মিদুকে খাবার দিলাম। তারপর মিদুর সাথে কথা বলতে শুরু করলাম। আজকে ভার্সিটিতে যা যা হয়েছে সব খোলে বললাম। মিদুকে পেয়ে আমি একজন কথা বলার সঙ্গী পেয়ে গেলাম। কথা না বললেও আমার কথাগুলো মনোযোগ দিয়ে শুনে। আমার কথা শুনে যেনো সে একটুও বিরক্তবোধ করে না। বরং তার অনেক ভালো লাগে। এই কিছুদিনে আমি মিদুকে অনেকগুলো শব্দ শিখিয়ে ফেলছি।

৬১

জিয়ান এখন তাদের বাসায় থাকে। রেশমি রহমান কান্না-কাটি করে ছেলেকে বাড়ি নিয়ে আসছেন। জিয়ান অবশ্য আসতে চায়নি। কিন্তু তার মায়ের কান্না-কাটিতে আসতে বাধ্য হয়েছে। জিয়ান নিজের রুমে বসে কারো সাথে ফোনে কথা বলছিল। তখন রেশমি রহমান আর হেলাল রহমান জিয়ানের রুমে আসে। জিয়ান তার বাবা-মাকে দেখে একটু অপ্রস্তুত হয়ে পড়ে। নিজেকে সামলে নিয়ে ফোনের অপর প্রান্তের লোকটিকে উদ্দেশ্য করে বলে,

বাই। আমি আপনাকে পরে ফোন করব।

জিয়ান কলটা কেটে ফোনটা নিজের পাশে রেখে দেয়। হেলাল রহমান গিয়ে জিয়ানের রুমের সোফায় বসে আর রেশমি রহমান বিছানায় জিয়ানের পাশে বসে। জিয়ান তার বাবা-মাকে উদ্দেশ্য করে বলে,

কিছু বলবে?

হেলাল রহমান বেশ গম্ভীর গলায় বলে, হুম। তুমি কী ঠিক করেছে বিয়ে সাদি করবে না?

কেনো করব না? অবশ্যই করব। বিয়ে করা ফরজ। ফরজ কাজ তো আর বাধ দেওয়া যায় না। বিবাহ যোগ্য মনের মতো ভালো মেয়ে পেলেই বিয়ে করে ফেলবো।

তোর কোনো পছন্দ আছে? মানে বলতে চাইছি তোর কোনো প্রেমিকা আছে?

জিয়ান স্বাভাবিক ভাবে বলে, না। আমার তেমন কেউ নেই।

জিয়ানের এমন উত্তর শুনে রেশমি রহমান বেশ সন্তুষ্ট হলেন।

ভালো মেয়ে পেলেই বিয়ে করবি?

হ্যাঁ করব। মেয়েটাকে অবশ্যই বাঙালি হতে হবে।

মেয়েটাকে বাঙালি হতে হবে শুনে রেশমি রহমান এবং হেলাল রহমান দুজনেই খুব খুশি হয়ে গেলেন। রেশমি রহমান খুশিতে গদ গদ হয়ে বলেন,

আমরাও তোর জন্য এমন একটা মেয়ে দেখেছি। একেবারে তোর মনের মতো। মেয়েটা চোখ লেগে থাকার মত সৌন্দর্যের অধিকারী। অনেক ভালো মেয়েটা। আর মেয়েটাকে তুই চিনিসও।

আমি চিনি। কে সে?

কণা।

কণা নামটা শুনে জিয়ান বসা থেকে ফট করে দাঁড়িয়ে যায়।

বিয়ে করবি কণাকে?

আর ইউ মেড? আমি বিয়ে করব কণাকে ইমপসিবল।

অসম্ভব কেনো? কণা কী দেখতে খারাপ? গায়ের রঙ কালো? অশিক্ষিত, আনসাম্মার্ট নাকি অভদ্র?

এর মাঝে কোনটাই না। কণা দেখতে যথেষ্ট সুন্দরী। বলতে গেলে যেকোনো ছেলের কল্পনার রাজকন্যার মতো। কণা অশিক্ষিতও না আনসাম্মর্ট না। আর যথেষ্ট ভদ্র মেয়ে। জীবন সাথী হিসেবে একদম পারফেক্ট। কণাকে যে নিজের স্ত্রী হিসেবে সে অনেক ভাগ্যবান। তবু আমি বিয়ে করতে পারব না।

কেনো পারবি না?

কারণ আমি ছোটবেলার থেকে কণাকে নিজের বোনের মত ভালোবেসে এসেছি। তাই কণাকে নিজের স্ত্রী হিসেবে গ্রহণ করা সম্ভব না। আমরা দুজন ভালো বন্ধু হয়ে আছি। সারাজীবন ভালো বন্ধু হয়েই থাকতে চায়। তোমরা দুজন যদি আমাকে এই বিয়ে করা নিয়ে জুর করো তাহলে আমি আর এ বাসায় পা রাখব না। সারাজীবনের মত এ বাসা ছেড়ে চলে যাব।

কথাগুলো বলে জিয়ান গাড়ি চাবি নিয়ে হন হনিয়ে চলে যায়। রেশমি রহমান আর হেলাল রহমান মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়েন। তাদের দুই ছেলেই তাদের প্লেনে জল ঢেলে দিল। তীরে এসে তরি ডুবে গেলো।

৬২

কেটে গেছে দুই দুইটা মাস পাল্টে গেছে অনেক কিছু। বদলে গেছে অনেক সম্পর্ক। ফাটল ধরেছে অনেক সম্পর্কে। বদলে গেছে কণা। কারো অবহেলায় এখন আর তার কিছু আসে যায় না। যারা তাকে অবহেলা করে তাদরকে সে ইগনোর করে।

ছোঁয়া, কণা, বন্যা আর অহি চারজনই অনেক ভালো ফ্রেন্ড হয়ে গেছে। ছোঁয়া আগের থেকে অনেক পাল্টে গেছে। অহি, সাফাত আর বন্যা, নোমানের সম্পর্ক অনেক গভীর হয়ে গেছে। আভিয়ানের সাথে কণার সম্পর্ক আগের মতই আছে। মহুয়া জাহান কণার সাথে কথা বলে না। তার ধারণা কণার জন্য অমিত মারা গেছে। এমন কিছু মানুষ আছে যাদের হাজার বোঝালেও তাদের মনোভাব চেইন্জ হয় না। মহুয়া জাহান যে কণার সাথে কথা বলে না এতে কণার কিছু আসে যায় না।

যখন মানুষের খুব প্রিয় কেউ তাকে অপছন্দ,অবহেলা কিংবা ঘৃণা করে তখন প্রথম প্রথম মানুষ খুব কষ্ট পায় এবং চায় যে সব ঠিক হয়ে যাক । কিছুদিন পর সে সেই প্রিয় ব্যক্তিকে ছাড়া থাকতে শিখে যায়।আর অনেকদিন পরে সে আগের চেয়েও অনেকবেশী খুশি থাকে যখন সে বুঝতে পারে যে কারো ভালবাসায় জীবনে অনেক কিছুই আসে যায় কিন্তু কারো অবহেলায় সত্যিই কিছু আসে যায় না।

( হুমায়ুন আহম্মেদ)

কণা তার পৃথিবী সাজিয়ে নিয়েছে তার প্রেমিক পুরুষকে নিয়ে। তার প্রেমিক পুরুষের
ভালোবাসা এতোটা যে তার এখন আর কারো অবহেলায় মন খারাপ হয় না।

কণা বেলকনিতে দাঁড়িয়ে আকাশ পানে তাকিয়ে ভাবছে। একটা লোক তার জীবন এসে, অদ্ভুত ভাবে তার জীবনটা পাল্টে দিল। রঙহীন জীবনটা ভালোবাসা দিয়ে রঙিন করে দিল। কণা অনেক খুশি কারণ তার অদেখা ভালোবাসাকে কিছুদিন পরে দেখতে পাবে। কণার হাতে থাকা ফোনটা বেঁজে ওঠল। ফোনের স্কিনে বন্যা নামটা জ্বল জ্বল করছে। ফোনটা রিসিভ করে।

কণা আমি সুইসাইড করব।

চলবে……