#তুমি_আমার_প্রেয়সী
#পর্ব_৩৯
#তাসনিম_জাহান_রিয়া
আভিয়ান একটা সার্ভেন্টকে ডেকে বলে কণার ব্যবহৃত সমস্ত জিনিস গাড়িতে তুলতে। সার্ভেন্টরা সবকিছু গাড়িতে তুলে দেয়। আভিয়ান চলে যায় কণার সমস্ত জিনিস নিয়ে।
৮৩
সবাই অনেক কষ্টে আদিয়াতকে রাজি করায় এই বাসায় থাকার জন্য। আদিয়াত এমনে এমনে রাজি হয়নি শর্তে দিয়েছে। তার শর্ত মানার পর রাজি হয়েছে থাকতে। সে শর্তে দিয়েছে আরুহিকে দুই দিনের ভিতরে এই বাসা ছেড়ে চলে যেতে হবে। যদি না যায় তাহলে আদিয়াত কণাকে নিয়ে এখান থেকে চলে যাবে।
কণা বিছানায় বসে পা দুলাচ্ছে। আদিয়াত ওয়াশরুমে গেছে ফ্রেশ হতে। কণা বিরক্ত হয়ে গেছে। আদিয়াত ৩০ মিনিট হয়ে গেছে ওয়াশরুমে গেছে ফ্রেশ হতে। কণা একবার ওয়াশরুমের দরজার দিকে তাকাচ্ছে তো আরেকবার ঘড়ির দিকে। কণাকে আরও ১০ মিনিট অপেক্ষা করিয়ে আদিয়াত ওয়াশরুম থেকে শাওয়ার নিয়ে বের হয়। কণা রেগে কিছু বলতে যাব তার আগে আদিয়াতকে দেখে চোখ ডেকে ফেলে।
ছিঃ আপনার লজ্জা শরম বলতে কিছু নাই। এভাবে একটা মেয়ের সামনে টাওয়াল পড়ে ঘুর ঘুর করছেন।
এখানে মেয়ে কোথা থেকে এলো?
কণা কোমড়ে হাত দিয়ে বলে, আমাকে দেখে কী আপনার ছেলে মনে হচ্ছে?
কণা আদিয়াতের দিকে তাকিয়ে আবার হাত দিয়ে চোখ ডেকে ফেলে। আদিয়াত কণার কাছে গিয়ে কণার কোমড় জড়িয়ে ধরে নিজের সাথে মিশিয়ে নেয়। এক হাত দিয়ে কণার চোখের ওপর থেকে হাত সরিয়ে দেয়।আদিয়াত কণার দিকে একটু ঝুঁকতেই কণা এদিক ওদিক তাকাতে তাকাতে বিব্রত হয়ে বলে,
কী করছেন? ছাড়ুন।
না ছাড়ব না।
দেখুন দরজা খোলা। যে কেউ যে কোনো সময় চলে আসতে পারে।
কেউ এতো নির্বোধ না যে নিউ মেরিড কাপলদের রুমে নক না করে চলে আসবে। আর মাম্মা পাপা জানে এখন তাদের ছেলে নিজের বউয়ের সাথে রোমান্স করতে ব্যস্ত। তাই উনারা এখন আসবেন নাহ। বুঝতে পেরেছ। তুমি একদম আনরোমান্টিক। এমন হট জামাই সামনে থাকলে কেউ এমন করে।
বন্ধ করুন লাগামহীন কথা বার্তা।
ওকে নো কথা তুমিও চুপ আমিও চুপ।
আজ কথা হবে ঠোঁটের ভাঁজে। ভালোবাসার উষ্ণ ছোঁয়ায়। ( নেশাক্ত কন্ঠে )
আদিয়াতের এমন নেশাক্ত কন্ঠ শুনে কেঁপে ওঠে কণা। আদিয়াত কণাকে আরেকটু কাছে টেনে নেয়। দুইজনের নিশ্বাস ভারী হয়ে আসছে। দুজনের ঠোঁটের মাঝে দূরত্ব কমে আসছে। হঠাৎ খট করে দরজা খুলে যাওয়ার আওয়াজে দুজনেই অপ্রস্তুত হয়ে যায়। দরজার সামনে আরুহিকে দেখে কণা আদিয়াতের কাছ থেকে ছাড়া পাবার জন্য ছটফট করতে থাকে। আদিয়াত ছাড়ার বদলে আরও শক্ত করে জড়িয়ে ধরে। আদিয়াত আরুহির দিকে অগ্নি দৃষ্টি নিক্ষেপ করে রাগী কন্ঠ বলে,
মানুষ যে এতোটা আত্নসম্মানহীন হতে পারে সেটা তোমাকে না দেখলে বুঝতেই পারতাম না। এতো অপমান করার পরও আমার রুমে আসতে তোমার লজ্জা করে না। কারো রুমে আসলে যে নক করে আসতে হয় সেই ম্যানার্সটুকু জানো না।
আমি……..
কোনো কথা নয়। এখনি আমার রুম থেকে বেরিয়ে যাও। যে দুইদিন এই বাসায় আছো। সেই দুইদিন যেনো তোমাকে আমার রুমের আশেপাশে না দেখি। একে তো আসছ প্রাইভেট টাইমে তার উপর নক না করে। যত্তসব ইরিটেড পারসোন।
আদিয়াত কণার কপালে পড়ে থাকা ছোট ছোট চুলগুলো কানের পিছনে গুঁজে দেয়। আদিয়াত তাকিয়ে দেখে আরুহি এখনো স্টেচুর মতো দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। যেটা দেখে আদিয়াতের রাগ দ্বিগুণ হয়ে যায়।
কী হলো? এখনো এখানে দাঁড়িয়ে আছো কেনো? দেখছ আমরা নিজেদের প্রাইভেট টাইম স্পেন্ড করছি। যাস্ট গেট আউট।
আমাকে করা এই অপমানের প্রতিশোধ তো আমি কণার ওপর দিয়ে তুলবো। আদিয়াত তোমাকে আমি ভালোবাসি। তাই তোমাকে তো কিছু করতে পারব না। কণার ক্ষতি তো আমি করতেই পারি। এমন বদলা নিব যে তুমি কল্পনাতেও চিন্তা কর না। আরুহি মনে মনে কথাগুলো বলে চলে যায়।
আদিয়াত জুড়ে জুড়ে শ্বাস নিচ্ছে। সে রাগ উঠলে নিজেকে কনট্রোল করতে পারে না। আরুহি আর কিছুক্ষন এখানে থাকলে হয়তো আদিয়াত থাপ্পড়ই বসিয়ে দিত। যখন থেকে বুঝতে শিখেছে তখন থেকেই আদিয়াত আরুহিকে সহ্য করতে পারে না। আরুহি বরাবরই গায়ে পড়া টাইপ মেয়ে। কণা এক গ্লাস পানি এনে আদিয়াতকে দেয়। আদিয়াত এক চুমুকে গ্লাসের সমস্ত পানি খেয়ে ফেলে।
মাথা ঠান্ডা হয়েছে? নাকি মাথা ঠান্ডা করার জন্য মাথায় এক বালতি পানি টালতে হবে?
ধুলিকণা তুমি আমার সাথে মজা করছ?
আপনি আমার বেয়াই হন নাকি যে আপনার সাথে মজা করব? আমি যা সত্যি তাই বললাম আপনার মাথা তো গরমই হয়ে গেছে। মাথায় পানি ঢেলে মাথা ঠান্ডা করার দরকার। আচ্ছা আপনি আরুহি আপুর সাথে সব সময় এমন রুড বিহেভ কেনো করেন? হয়তো উনার নক করার কথা মনে ছিল না। তাই নক করেনি।
তোমার ভালো মানুষি আর যেখানেই দেখাও ওর বেলা দেখাবে না।
দেখ কণা ওকে তুমি চিন না। তাই ওর ব্যাপারে তুমি কোনো কথা বলবে না। ওর মতো জেদি, অহংকারী আর ফাজিল মেয়ে দুনিয়াতে হয়তো খুব কম আছে। নিজের স্বার্থ ছাড়া আর কিছু বুঝে না। তুমি আগ বাড়িয়ে ওর সাথে কোনো বলতে যাবে না আর যতটা সম্ভব ওর থেকে দুরত্ব বজায়া চলবে। বুঝতে পারছ?
কণা মাথা নেড়ে সম্মতি জানায়।
_______________
কণা ফ্রেশ বেলকনিতে গিয়ে চমকে যায়। কারণ বেলকনিতে তার প্রাণ প্রিয় পাখি মিদু। খুশি কণার চোখে পানি চলে আসে। কতদিন পর দেখছে মিদুকে। তখনি আদিয়াত কণাকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে কণার কানে ফিস ফিস করে বলে,
আমার ধূলিকণা কী তার মিদুকে দেখে খুশি হয়নি?
কে বলল খুশি হয়নি। আমি কতটা খুশি হয়েছি আপনাকে বলে বুঝাতে পারব না। কিন্তু মিদু এখানে আসলো কী করে?
আমি নিয়ে আসছি। তোমার খুশির জন্য আমি সব করতে পারি।
আপনাকে একটা প্রশ্ন করার আছে?
কী?
আপনি এই পাখিটার নাম মিদু কেনো দিলেন?
তোমার আর আমার নামে এই পাখির নাম।
মানে?
মিহিকার মি আর আদিয়াতের দ এই দুইটা মিলিয়ে আমি নাম দিয়েছি মিদু।
আপনি আমাকে আপনার সম্পর্কে কিছুই বলেননি। আমাকে ধোয়াসার মাঝে রেখেছেন। আপনি আমাকে ছেড়ে হুট করে কেনো হারিয়ে গিয়েছিলেন? সেই প্রশ্নের উত্তর কিন্তু এখনো আমার অজানা।
আমি হারিয়ে যেতে চায়নি। পরিস্থিতির চাপে বাধ্য হয়েছিলাম তোমাকে ছেড়ে যেতে। হুট করে পাপার ব্যবসায় লস হতে থাকে। চারদিকে প্রচুর ধার দেনা হয়ে গিয়েছিল। পাওনাদাররা রোজ বাসায় এসে জামেলা করত। একদিন রাতে পাপা এসে বলে এখান থেকে চলে যাবে অনেক দুরে। আর আস্তে আস্তে সবার সব টাকা পরিশোধ করে দিবে। এখানে থাকলে পাওনাদাররা আমাদের শান্তিতে থাকতে দিবে না। আমি চেয়েও তোমাকে জানাতে পারি না যে আমি এখান থেকে চলে যাচ্ছি। পাপা আমাদের নিয়ে এ দেশ ছেড়ে চলে যায়। পাপা বলেছিল আমাদের নিয়ে দূরে চলে যাবে। কিন্তু এতোটা দূরে চলে যাবে সেটা বুঝতে পারিনি।
৮৪
একটা কফিশপে বসে আছে নোমান আর বন্যা। তারা ক্লাস ফাঁকি দিয়ে এখানে আসছে পারসোনাল টাইম স্পেন্ড করতে। কফিশপে এখন বেশি মানুষ নেই। হাতে গুনা দুয়েক জন। যারা আছে বেশির ভাগই কাপল। সবাই নিজের মতো ব্যস্ত। কারো দিকে কারো তাকানোর সময় নেই।
ক্লাস ফাঁকি দিয়ে এখানে আসা কী ঠিক হলো? কত ইম্পর্টেন্ট একটা ক্লাস ছিল। তোমার ছেলে মানুষির জন্য মিস দিয়ে আসতে হলো।
নোমানের কথা শুনে বন্যা তেলে বেগুনে জ্বলে ওঠে। তেজি গলায় বলে,
তোমাকে কে আসতে বলেছিল? আমি কী তোমাকে আসার জন্য জোড় করেছিলাম? তুমি নিজের ইচ্ছায় আসছ। এখন আমাকে কথা শোনাচ্ছ। আমি তো তোমাকে ধরে রাখিনি তুমি চলে যাও। তুমি তো ভদ্র ছেলে যাও ইম্পর্টেন্ট ক্লাস এটেন্ট কর। আমি কফি খাওয়ার জন্য একটা সুইট গুলুমুলু বয়ফ্রেন্ড বানিয়ে নিব।
নোমান রেগে বলে, তোমার সাহস হয় কী করে অন্য ছেলেকে বয়ফ্রেন্ড বানানোর কথা বলার? আরেকদিন যদি তোমার মুখে আমি এমন কথা শুনি তাহলে আমি কী করবো নিজেও জানি না?
বলব না তো কী করব? তুমি আমাকে একটু সময় দাও নাহ। সারাদিন শুধু পড়াশোনা আর পড়াশোনা কর। তোমার একটা ফোনের আসায় যে কেউ অধির আগ্রহে অপেক্ষা করে থাকে সেটা কী তুমি বুঝতে পার না?
নোমান বন্যার হাত দুটো মুঠোয় নিয়ে বলে, তুমি তো অবুঝ নও বল। আমি যদি ভালো করে পড়াশোনা না করি। তাহলে ভালো একটা চাকরি পাব না। ভালো চাকরি না পেলে তোমার হিটলার বাপ তোমাকে আমার সাথে বিয়ে দিবে না। তোমার হিটলার বাপ যদি জানে তুমি ক্লাস মিস দিয়ে আমার সাথে কফি খেতে আসছো। তাহলে কুরুক্ষেত্র বাধিয়ে দেবে। বুঝিনা পৃথিবীতে এত শ্বশুর থাকতে আমার শ্বশুরট এমন হি…….
নোমান আর কিছু বলতে পারল না সামনে তাকিয়ে। হঠাৎ করে নোমানের এমন চুপ করে সামনে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকায়। বন্যাও গাড় ঘুরিয়ে পিছনে তাকাই। বন্যার পিছনে জামান সাহেব দাঁড়িয়ে আছে।
চলবে…..