তুমি আমার প্রেয়সী ৩ পর্ব-৯+১০

0
446

#তুমি_আমার_প্রেয়সী
#সিজন ৩
#তাসনিম_জাহান_রিয়া
#পর্ব_৯

আমি ছিলাম শান্ত শিষ্ট আর ও ছিল উড়নচন্ডী, অভদ্র। তাই বাবা আমাকে একটু বেশিই ভালোবাসতো। যার কারণে আমি ওর চোখের বিষ হয়ে যায়। মেহের বড় হতে থাকে আর তার অভদ্রতামো বাড়তে থাকে। পার্টি করা ড্রিংকস করা ওর রোজকার রুটিন হয়ে যায়। রাত করে বাড়ি ফেরা। কখনো কখনো তো বাড়ি ফিরতোও না। অনেক ছেলের সাথে সম্পর্কে জড়ায় তার সাথে বিভিন্ন ধরনের খারাপ কাজে লিপ্ত হয়। তাই তো বাবা ওকে বাসা থেকে বের করে দিয়েছিল। মেহের ভেবেছিল বাবা আমার জন্যই ওকে বাসা থেকে বের করে দিয়েছে। আমার প্রতি ওর আরো ক্ষোভ জন্মে।

এরপর কেটে গিয়েছিল বহু বছর ওর সাথে আমাদের কারো যোগাযোগ ছিল না। এমন নয় যে আমরা ওর সাথে যোগাযোগ বন্ধ করে দিয়েছিলাম। আমি ওকে খোঁজার অনেক চেষ্টা করেছি। কিন্তু ও নিজে থেকেই আমাদের সাথে যোগাযোগ বন্ধ করে দিয়েছিল। এর মাঝে আমি বিয়েও করি ফেলি। মেহের ফিরে আসে বাবা মারা যাওয়ার তিন বছর পর। তখন তোর বয়স ছিল ৪ বছর। মেহের আমার হাতে পায়ে ধরে ক্ষমা চায় এবং এটাও বলে সে পাল্টে গেছে। সে আর আগের মেহের নেই। আমিও ওকে বাড়িতে থাকতে দেই। বাবার সম্পত্তির ওপর তো মেহেরেরও অধিকার আছে। বেশ ভালোই চলছিল আমাদের দিন। আমরাও বুঝতে পারি মেহের সত্যিই পাল্টে গেছে। কিন্তু আমাদের ধারণা সম্পূর্ণ ভুল ছিল। মেহের আমাদের সামনে শুধু ভালো মানুষের মুখোশ পড়ে ছিল। আমাদের আড়ালে তার কাজ ঠিকই চালিয়ে যাচ্ছিল। যেটা আমরা টেরও পায়নি। মেহেরের সাথে অমিতের একটা ভালো সম্পর্ক হয়ে যায়। অমিত মেহের আসার পর থেকেই মেহেরকে ছাড়া আর কিছুই বুঝতো না। সবকিছু বেশ ভালোই কাটছিল। বিপত্তি ঘটল তাহসিনকে নিয়ে। তাহসিন আর আমি একই ভার্সিটিতে পড়াশোনা করতাম। আমি তাহসিনের সিনিয়র ছিলাম। তবুও আমাদের মাঝে একটা বেশ ভালো সম্পর্ক ছিল। আমি ভার্সিটি থেকে চলে আসি আর ব্যবসা নিয়ে ব্যস্ত হয়ে যায়। তাহসিনও নিজের পড়াশোনা নিয়ে ব্যস্ত হয়ে যায়। আমাদের যোগাযোগ প্রায় বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। হঠাৎই একদিন তাহসিনের সাথে দেখা হয়ে যায় আর আমি জোড় করে তাহসিনকে বাসায় নিয়ে আসি। তাহসিনকে বাসায় নিয়ে আসায় হয়তো আমার জীবনের সবচেয়ে বড় ভুল ছিল। তাহসিনকে দেখেই মেহেরের ভালো লেগে যায়। কিন্তু তাহসিন ছিল বিবাহিত এবং ওর স্ত্রী তখন ৭ মাসের অন্তঃসত্ত্বা ছিল। আমি মেহেরকে বলি। কিন্তু মেহের মানতে নারাজ। আমি মেহেরকে এটাও বলি যে, তাহসিন তার স্ত্রীকে পাগলের মতো ভালোবাসে। মেহেরের এক কথা একটা ছেলে চারটা বিয়ে করতে পারে। আর তাহসিন যদি তাকে একবার দেখে তাহলে তাহসিন তাকেই বিয়ে করবে। আমি ওকে অনেক বোঝানোর চেষ্টা করি কিন্তু বোঝার চেষ্টায় করেনি। মেহের আমার কাছে তাহসিনের নাম্বার চায়, ঠিকানা চায়। কিন্তু আমি দেয়নি। মেহের দিন উগ্র আচারণ করতে শুরু করে।

হেলাল রহমান একটা লম্বা শ্বাস নেয়। একটা চেয়ার টেনে বসে পড়ে। আবার বলতে শুরু করে।

ও আমি একটা ভুল করেছি। তাহসিন মেহেরকে দেখেছিল একবার কিন্তু চিনতো না। আসলে বয়স হয়েছে তো সব কথা মনে থাকে না। অনাকাঙ্ক্ষিত ভাবেই তাহসিনের সাথে আমার একদিন হসপিটালে দেখা হয়ে যায়। সেদিন আমার সাথে মেহেরও ছিল। অমিত অসুস্থ থাকায় আমি আর মেহের অমিতকে নিয়ে হসপিটালে গিয়েছিলাম। তাহসিনও তার স্ত্রীকে নিয়ে হসপিটালে আসছিল চেকআপ করানোর জন্য। হসপিটালেই মেহের তাহসিনকে বিয়ের প্রস্তাব দিয়ে দেয়। তাহসিন সাথে সাথেই প্রত্যাখান করে দেয়। মেহের তাহসিনের প্রত্যাখান সহ্য করতে পারেনি। পাগলের মতো আচারণ শুরু করে। তাহসিনের স্ত্রীর ওপর এ্যাটাক করতে যায়। এতে তাহসিন বেশ রেগে যায়। জনসম্মুখে তাহসিনকে থাপ্পড় মেরে চলে যায়। এর কিছুদিন পরে হঠাৎই খবর পাই মেহেরের এক্সিডেন্ট হয়েছে এবং মারা গেছে। অবৈধ কার্যকলাপ করতে গিয়ে ধরা খায় আর পুলিশের তাড়া খেয়ে ট্রাকের নিচে পড়ে। মারা যাওয়ার আগে নিজের বিশ ঠিকই ছড়িয়ে গেছে। আমার ছোট ছেলের মাথা বিগড়ে দিয়ে গেলো।

অমিত মাথা নিচু করে ফেলে। মিন মিন করে বলে, ফুফি আমাকে স্বার্থের জন্য ইউজ করলো।

ঐশি অমিতকে উদ্দেশ্য করে বলে, আপনার ফুফি যখন মারা গিয়েছিলেন তখন আপনার বয়স ছিল ৪ বছর। নিতান্তই আপনি। এতোদিন আগের কথা আপনার কী করে মনে রইল।

আমার তো মনে ছিল না। ৭-৮ বছর আগে ফুফির লেখা চিঠি পাই সেখানেই এসব লেখা ছিল।

হেলাল রহমান একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে, তাহসিনের পরিবারের ক্ষতি করতে চাওয়ার কারণটা বুঝতে পারলাম। কিন্তু তোমার এই বিপথে যাওয়ার কারণটা তো বুঝতে পারলাম না? আর তুমি চিঠির বিষয়টা আমাকে জানালে না কেনো? তুমি যদি আগে বলতে তাহলে আজকে এই দিন দেখতে হতো না।

তোমাদের কারণেই আজকে আমার এই অবস্থা। নিঃসঙ্গতা আমাকে বিপথে নিয়ে আসতে বাধ্য করছে। তোমাকে আমি কীভাবে জানাতাম? তোমার কী সময় ছিল আমার কথা শোনার?

আমাদের কারণে কীভাবে! আমি আর তোমার মা তোমার পাশে কী ছিলাম না?

ছিলে বুঝি? কিন্তু আমি তো দেখতে পাইনি। আমার ভালো সময় বা দুঃসময় কখনোই তোমাদের পাশে পায়নি। আগের কথা না হয় বাধ দিলাম। আজকের দিনটার কথা ভাবো। আজকে আমার জীবনের একটা বিশেষ দিন ছিল। আমার বিয়ে ছিল। কিন্তু আমার মা কোথায়? কোথাও দেখতে পাচ্ছি না তো। এখানে উপস্থিত থাকলে তো আমি উনাকে দেখতে পাব। উনি তো উনার বিজন্যাস মিটিং নিয়ে ব্যস্ত। আমার থেকেও উনার কাছে উনার বিজন্যাস মিটিং বেশি জরুরি। এটাই হচ্ছে তোমাদের আমার পাশে থাকে। টাকা দিয়েই সন্তানের সব চাহিদা পুরণ করা যায় না। সন্তানরা তাদের মা-বাবার ভালোবাসা চায়। যেটা আমি বা ছোঁয়া কেউই পায়নি। আমরা দুজন আমাদের আনন্দের দিন অথবা মন খারাপ দিন কখনোই তোমাদের পাশে পায়নি।
তোমরা তো তখন টাকার পিছনে ছুটতে ব্যস্ত। নিজেদের বিজন্যাস মিটিং, পার্টি এসবে মত্ত্ব ছিলে। আমাদের খোঁজ নেওয়ার সময় কী ছিল তোমাদের? হাতে শুধু টাকা দিয়ে দিতে কখনো ভালোবাসা দাওনি। কখনো কী খোঁজ নিয়ে দেখেছিলে আমরা সেই টাকা দিয়ে কী করেছি? দেখনি। কলেজে ওঠে বন্ধু নির্বাচনে একটা বড় ভুল করি। তাই আজকে আমার এই অবস্থা। আমি রাত করে বাড়ি ফিরলেও তোমরা কখনো জানতে চাওনি আমি কোথায় ছিলাম বা তোমরা নিজে থেকেও খোঁজ নেওয়ার চেষ্টা করনি আমি এত রাত পর্যন্ত বাসার বাহিরে কী করতাম? থাক পুরোনো কথা। আমার আজাইরা কথা শুনিয়ে তোমার মুল্যবান সময় নষ্ট করবো না। যা চলে গেছে তা নিয়ে ভেবে লাভ নেই। সাফাত, কণা তোমাদের কাছে ক্ষমা চাওয়ার মুখ নেই। যদি পারো তাহলে এই পাপিকে ক্ষমা করে দিয়ো। অফিসার আমাকে নিয়ে চলুন।

অমিত যেতে যেতে বলে, মি. হেলাল রহমান আপনি আপনার মিটিংয়ে চলে যান। আমার জন্য আর আপনার মুল্যবান সময় নষ্ট করতে হবে না। আপনাদের দুজনের আর কোনো পিছুটান নেই। যত ইচ্ছা টাকা ইনকাম করেন। আজকে আপনাদের কাজে আর কেউ ডিস্টার্ভ করবে না। এক মুঠো ভালোবাসার জন্য আর কেউ আপনাদের পিছু পিছু ঘুরবে না। আজকে থেকে আপনারা মুক্ত। আমি আর আমার বোন জেলেই ভালো থাকব।

পুলিশের সাথে অমিত চলে যায়। এতক্ষণ যাদের চোখে অমিতের জন্য ঘৃণা দেখা যাচ্ছিল। এখন তাদের চোখেই অমিতের জন্য সহানুভূতি দেখা যাচ্ছে। বাবা-মার জন্যই অনেক সন্তান বিপথে যায়। অমিতের বাবা-মা যদি টাকার পিছনে না ছুটে অমিত আর ছোঁযাকে একটু সময় দিতো। তাহলে আজকে তাদের এই দিনটি দেখতে হতো না। সন্তানের সাথে বন্ধুর মতো সম্পর্কে গড়ে তুললে অবশ্যই তাদের সবকিছু বলতো।

চলবে……….

#তুমি_আমার_প্রেয়সী
#সিজন ৩
#তাসনিম_জাহান_রিয়া
#পর্ব_১০

পুলিশের সাথে অমিত চলে যায়। এতক্ষণ যাদের চোখে অমিতের জন্য ঘৃণা দেখা যাচ্ছিল। এখন তাদের চোখেই অমিতের জন্য সহানুভূতি দেখা যাচ্ছে। বাবা-মার জন্যই অনেক সন্তান বিপথে যায়। অমিতের বাবা-মা যদি টাকার পিছনে না ছুটে অমিত আর ছোঁযাকে একটু সময় দিতো। তাহলে আজকে তাদের এই দিনটি দেখতে হতো না। সন্তানের সাথে বন্ধুর মতো সম্পর্কে গড়ে তুললে অবশ্যই তাদের সবকিছু বলতো।

হেলাল রহমান মাথা নিচু করে সেই জায়গা থেকে প্রস্থান করে। অহির মা আহাজারি করছে অহির বিয়ে ভেঙে যাওয়ায়। অহির বাবা চেয়ারে বসে অনিমেষ তাকিয়ে আছে সামনের দিকে। কণা গিয়ে সাফাতের সামনে দাঁড়ায়। কণা সাফাতের হাত ধরে বলে,

ভাইয়া মানুষ সারাজীবন একা বাঁচতে পারে না। জীবনে চলতে হলে অবশ্যই কাউকে না কাউকে পাশে প্রয়োজন হয়। এখন তো তুমি জানতে পেরেছো তুমি একদম সুস্থ। তোমার মাঝে কোনো ধরনের রোগ নেই। এখন তো তোমার অহিকে বিয়ে করতে কোনো আপত্তি থাকার কথা না। প্লিজ ভাইয়া তুমি অহিকে বিয়ে করে ফেলো। অহি তোমাকে অনেক ভালোবাসে।

কণা প্লিজ জেদ করিস না। এটা সম্ভব না।

তখনি বন্যা এগিয়ে আসে। সাফাত বন্যার দিকে এক পলক তাকিয়ে চোখ নামিয়ে ফেলে।

সাফাত তুমি যাকে ভালোবাসো তাকে পাওনি বলে অন্য কারো ভালোবাসা কেনো অপ্রাপ্তি থাকবে। তুমি তো জানো ভালোবাসার মানুষকে নিজের না করে পাওয়ার যন্ত্রণা কতোটা। তাহলে তুমি সেই একই কষ্ট কেনো অন্য একজনকে দিতে চাইছো? প্লিজ তুমি অহিকে বিয়ে করে নাও। তুমি যদি ঐ দিন তোমার দেওয়া আমাকে প্রমিসের কথা ভাবো। তাহলে বলবো তুমি সব ভুলে যাও। তুমি নতুন করে সবকিছু শুরু করে। পুরোনোকে আঁকড়ে ধরে বাঁচা যায় না। অতীতকে পিছনে ফেলে বর্তমানকে আঁকড়ে ধরো। আমি জানি তুমি অহিকে ভালোবাসো। তোমার চোখে আমি অহির জন্য মুগ্ধতা দেখেছি, ভালোবাসা দেখেছি। হয়তো তোমার প্রথম ভালোবাসা অহিই ছিল। কোনো কারণে হয়তো তোমার সেই ভালোবাসা প্রকাশ করোনি। নিজের ভালোবাসাকে নিজের করে নাও সাফাত। বিয়ে করে ফেলো অহিকে।

ভাইয়া তোমার আর কোনো পিছুটান নেই। অহি এদিকে আয়।

কণার ডাকে অহি সাড়া দেয় না। সবাই সামনে তাকিয়ে দেখে অহি নেই।

অহি কোথায় গেলো?

ঠিক তখনি ঐশি হাঁপাতে হাঁপাতে এসে বলে, অহিকে দেখলাম বাসা থেকে বের হয়ে গেছে। আমি ওর পিছু নিয়েছিলাম। কিন্তু কিছু দূর যাওয়ার পর আমি ওকে হারিয়ে ফেলি।

সাফাত ব্যতিব্যস্ত হয়ে বলে, অহি কোনদিকে গেছে।

বাসা থেকে বের হয়ে সোজা গিয়ে ডান দিকে।

সাফাত দৌড় দেয়। পিছন থেকে কণা সাফাতকে চিৎকার করে বলে।

বিয়ে করে একেবারে বাসায় আসবা। বউ ছাড়া বাসায় আসলে বাসার ভিতরে ঢুকতে দিবো না।

সাফাত পিছনে কণার দিকে তাকিয়ে মৃদু হাসে। সবার চোখ মুখেই খুশির ঝলক দেখা যাচ্ছে। আভিয়ান সাফাতের সাথে যেতে চাইলে কণা বাধা দেয়। কণা চায় সাফাত অহির অভিমান ভাঙিয়ে নিয়ে আসুক। সেখানে অন্য কেউ হস্তক্ষেপ না করায় ভালো। নিজেদেরটা নিজেরাই বুঝে নিক।

৮২

সাফাত দৌড়ে অনেকটা আসে। কিন্তু অহিকে পায়নি। এতক্ষণ ধরে দৌড়ানোর ফলে এখন কষ্ট হচ্ছে। সাফাত একটা গাছের সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে জুড়ে জুড়ে শ্বাস নিচ্ছে। তখনি সাফাতের চোখ যায় সামনের দিকে। লাল রঙের বেনারসি পড়া একটা মেয়ে ব্রিজের রেলিংয়ের ওপর ওঠছে। রাত হওয়া এদিকটায় মানুষ জন নেই। হাই স্পিডে কয়েকটা গাড়ি চলছে। অজানা ভয়ে সাফাতের বুক কেঁপে ওঠে।

সাফাত দৌড়ে যায় মেয়েটার কাছ। কাছাকাছি যেতেই সাফাত মেয়েটার মুখ স্পষ্ট দেখতে পায়। ল্যাম্পপোষ্টের আলোয় অহির মুখটা ঝলঝল করছে। সাফাত টান দিয়ে অহিকে রেলিং থেকে নামিয়ে নিয়ে আসে শক্ত করে অহিকে জড়িয়ে ধরে। সাফাত হার্ট এখনো জুড়ে জুড়ে বিট করছে। ভয়ে হাত-পা কাঁপছে। আরেকটু দেরি করলেই হয়তো অহিকে চিরজীবনের জন্য হারিয়ে ফেলতো।

অহি সাফাতের মুখ দেখেনি। বর্তামানে সাফাত অহির কাছে একজন অপরিচিত ছাড়া আর কিছু না। অহি ছাড়ার পাবার জন্য ছটফট করছে। সাফাত অহিকে নিজের থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে বলে,

কী করতে চাইছিলে? হ্যাঁ? আমি আরেকটু দেরি করলে কী হতো ভাবতে পারছো? এরকম পাগলামো কেউ করে? তোমার কিছু হয়ে গেলে আমি কী নিয়ে বাঁচতাম।

অহি একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে সাফাতের দিকে। সাফাতের মুখে সে স্পষ্ট ভয়ের ছাপ দেখছে।

চুপ করে আছো কেনো? কথা বলছো না কেনো?

আপনি আমাকে কেনো বাঁচালেন?

মানে?

মানে এটাই আমি আর বাঁচতে চাই না। চাই না আর বাঁচতে নিজের জীবনের ওপর বিরক্ত হয়ে গেছি। আর আজকের পর তো আমার বেঁচে থাকাটা আরো কঠিন হয়ে যাবে। বিয়ে ভেঙে যাওয়ার কলঙ্ক নিয়ে আমি কী করে বেঁচে থাকবো? সবাই আমার দিকে বাঁকা চোখে তাকাবে। এটা আমি মানতে পারবো না। প্লিজ আমাকে ছেড়ে দিন। আমি আর বাঁচতে চাই না।

অহি সাফাতের থেকে নিজেকে ছাড়ানোর জন্য ছটফট করতে থাকে। হাত-পা ছুড়া ছুড়ি করতে থাকে। নিজের চুলে ধরে নিজেই টানছে। সাফাত কোনো ভাবেই অহিকে শান্ত করতে পারছে না। সাফাত অহির গালে ঠাস করে থাপ্পড় মারে। অহি স্তব্ধ হয়ে সাফাতের দিকে তাকায় পরে সাফাতকে জড়িয়ে ধরেই কেঁদে দেয়। সাফাত অহিকে জড়িয়ে ধরে মাথায় চুমু খায়।

৮৩

সবাই ড্রয়িংরুমে বসে আছে। তাহসিন আহম্মেদ পায়চারী করছেন। উনার আর তর সইছে না ছেলের বউ দেখার জন্য। ঐশি সোফায় অলস ভঙ্গিতে বসে আছে। আভিয়ান আসেনি। হঠাৎ তার বাবা অসুস্থ হয়ে যাওয়ায় আসতে পারেনি। আদিয়াত সোফায় বসে ফোন স্ক্রল করছে। কণা দরজার কাছে যাচ্ছে তো আরেকবার এসে সোফায় বসছে। কণা গালে হাত দিয়ে সোফায় বসে আছে। কণা আদিয়াতকে উদ্দেশ্য করে বলে,

এখন কয়টা বাজে?

আদিয়াত বিরক্তিতে চোখ মুখ কুঁচকে ফেলে। কণা এখন পর্যন্ত বিশ বার জিঙ্গেস করে ফেলেছে কয়টা বাজে। কণা আর আদিয়াতের অবস্থা দেখে ঐশি হু হু করে হেসে দেয়। আদিয়াত কণাকে ধমক দিয়ে বলে,

তুমি এক জায়গায় স্থির হয়ে বসতে পারো না। চুপচাপ আমার পাশে বসে থাক। এখান থেকে আরেক পা নড়লে আমি তোমার পা ভেঙে ফেলবো।

কণা গাল ফুলিয়ে সোফার ওপর পা তুলে বসে। হঠাৎই কলিংবেল বেজে ওঠায় কণা হুড়মুড় করে সোফা থেকে নেমে পড়ে। এভাবে নেমে পড়ায় আদিয়াত কণার দিকে চোখ রাঙিয়ে তাকায়। কণা আদিয়াতের দৃষ্টিকে তোয়াক্কা না করে দৌড়ে দরজার কাছে চলে যায়। কণার পিছু পিছু ঐশিও যায়। কণা তাড়াহুড়া করে দরজা খুলে দেয়। দরজা খুলে দিতেই এক জোড়া হাস্যোজ্জ্বল মুখ দেখতে পায়। যাদের চোখ মুখে খুশি উপচে পড়ছে। সাফাত এক হাতে অহিকে জড়িয়ে ধরে আছে।

ভাইয়া বিয়ে করে এসেছ তো। বিয়ে না করে আসলে কিন্তু বাসায় ঢুকতে দিব না।

ঐশি বাঁকা হেসে বলে, আমার তো মনে হয় শুধু বিয়ে না বাসরও করে এসেছে।

অহি ঐশির দিকে চোখ পাকিয়ে তাকায়। ঐশি কিছু বলতে গিয়েও থেমে যায় আদিয়াত আর তাহসিন আহম্মেদকে দেখে। তাহসিন আহম্মেদ এগিয়ে আসতেই সাফাত আর অহি দুজনেই তাহসিন আহম্মেদ সালাম করে। পরে তাহসিন আহম্মেদ বরণ করে অহিকে ঘরে তুলে। ঐশি আর কণা মিলে অহিকে সাফাতের রুমে রেখে আসে। ঐশিকে একটা রুমে রেখে কণা নিজের রুমে ঢুকতেই আদিয়াত দরজা বন্ধ করে দেয়। আদিয়াত শাসনের সুরে বলে,

সারাদিন অনেক লাফালাফি করেছ। এখন চুপচাপ ঘুমাবে। উল্টা পাল্টা আবদার করলে খবর আছে।

আদিয়াত কণাকে জড়িয়ে ধরে শুয়ে পড়ে। কিছুক্ষণ পরেই কণা আদিয়াতের হাত সরিয়ে দৌড়ে ওয়াশরুমে চলে যায়। ওয়াশরুমে গিয়েই হড়হড় করে বমি করে দেয়।

চলবে……..