তুমি আসবে বলেছে হৃদয় পর্ব-০২

0
293

#তুমি_আসবে_বলেছে_হৃদয়
#পর্ব-০২
#মেঘলা_আহমেদ
(❌কার্টেসি ব্যতিত কপি নিষিদ্ধ ❌)

চোখ কোটর থেকে বের হয়ে যাওয়ার মতো অবস্থা রিদিশার। এখানে তো সে চোরের কাছেই বিচার চাইতে এসেছে। মুখ থেকে কোন আওয়াজ ই বের হচ্ছে না। ভুল জায়গায় ভুল কথা বলে ফেলেছে সে। এখন যদি স্যারের সাথে খারাপ ব্যবহার করায় আমার চাকরিটা খেয়ে দেয়। রিদি প্রতিবার গড়বড় করিস তুই। এবারের মতো বাঁচিয়ে দাও আল্লাহ, ভুলেও করাও সাথে লাগবো না। একদম ভালো হয়ে যাবো। এরিক রিদিশার পা থেকে মাথা পর্যন্ত পর্যবেক্ষন করলো। মেয়েটা হালকা কাঁ|পছে। হয়তো ভুলেও ভাবেনি আমিই ওর স্যার। এরিক বাঁকা হাসলো। এবার মজা বুঝাবো তোমায়। চেয়ার ঘুরিয়ে বলল-

-” হ্যা বলুন বলুন।

রিদিশা আমতা আমতা করছে। অতিকষ্টে তোতলাতে তোতলাতে জিজ্ঞেস করলো-

-” ইয়ে মানে আপনি এখানে কেন? স্যার কোথায়?

এরিকের মুখের হাসি প্রসারিত হলো। প্রফুল্ল চিত্তে জবাব দিলো-

-” আমি কম্পানির মালিকের ছেলে। কম্পানিটা আমাদের। আজ থেকে আমি জয়েন করেছি। আর ফেলিক্স ছিলো। সে আমেরিকা চলে গেছে‌। তো আপনি কে? আপনার নাম কি?

রিদিশা চোখ রসগোল্লার মত করে এরিকের দিয়ে তাকিয়ে আছে। আজ কম্পানির মালিকের ছেলেকে গালাগালি করায়, তার কপালে কি আছে আল্লাহ জানে! রিদিশা কুল কুল ভয় পেলে চলবেনা। এই অসভ্য ছেলেকে দেখিয়ে দে তুই কি জিনিস। রিদিশা চেহারাটা স্বাভাবিক করে বলল-

-” আমার নাম রিদিশা। সবাই রিদি বলেই ডাকে

এরিক মুখটা কুঁচকে অতিকষ্টে উচ্চারণ করলো –

-” রেইদেইশ্যা।

রিদিশা উজবুকের মতো এরিকের দিকে তাকালো। তার এতো সুন্দর নামটাকে কি বলছে এই ছেলে। বাংলাদেশে থাকতে সবাই রিদি, রিদ, দিশা যাই বলতো মানা যেত। এ তো নামটা কে একদম করলার জুস বানিয়ে ছেড়ে দিয়েছে। রিদিশা চেঁচিয়ে বলল-

-” হোয়াট রেইদেইশ্যা? রেইদেইশ্যা না রিদিশা, রি দি শা, রিদিশা হবে। আপনি আমার নামটাকে কি উল্টাপাল্টা করে ফেলছেন। একদম আরশোলার চেহারার মতো বানিয়ে ফেলেছেন। ছিঃ।

এরিক বিরক্ত হলো। বিরক্তিতে চ শব্দ করে বলল-

-” তুমি নিশ্চয়ই বাংলাদেশী আমি সিউর। বাংলাদেশী মানুষদেরই এমন আজব নাম থাকে। আমার গ্র্যান্ডমায়ের নামটাও এমন আজব‌। কত অদ্ভুত নাম রেইদেইশ্যা।

রিদিশা সবকিছু ভুলে রেগে তেড়ে গেলো। ঘুষির মতো দেখিয়ে বলল-

-” আরেকবার নাম বিকৃত করলে একটা ঘুষি দিয়ে বৃন্দাবন পাঠাবো। আবার বাংলাদেশ কে অপমান করছেন‌। আপনি তো আচ্ছা পাগল লোক। বলুন রিদিশা, রি দি শা।

এরিক আবারো কষ্ট করে ভাঙা উচ্চারণ করে বলল-

-” রেইদিশা

রিদিশা বিরক্তিতে কপাল চাপড়ালো‌। এই ছেলে তার নামে মসল্লা লাগাচ্ছে। তবুও হাল না ছেড়ে আরেকবার বলল-

-” আরেকটু ভালোভাবে বলুন রিদিশা।

এরিক এবার হাসি দিয়ে বলল-

-” রেদিশা

রিদিশা হাফ ছেড়ে দাঁড়ালো। যাইহোক একটু তো উন্নতি হয়েছে। এবার এরিক বাঁকা হেসে বলল-

-” তো মিস রেদিশা আমি আপনাকে রেদি বলে ডাকবো। সো এখন আপনাকে কি করা উচিত। কম্পানির ভবিষ্যত মালিকের সাথে খারাপ ব্যবহার করা ও তার ফোন ভাঙার অপরাধে? কি শাস্তি দেয়া উচিত?

রিদিশা এই ভয়টাই পাচ্ছিলো। তবুও অপরাধীর সুরে বলল-

-” আমি কি জানতাম আপনি এখন ফেলিক্স স্যারের জায়গায় জয়েন করেছেন?

এরিক ভ্রু নাচিয়ে বলল-

-” ওহ আচ্ছা জানলে কি করতেন?

রিদিশা কোন কথা না বলে উল্টা দৌড়ে পালায়। এই ছেলে একটার পর একটা প্রশ্ন করেই যাচ্ছে। এরিক উজবুকের মতো তাকিয়ে আছে। মেয়েটা পালিয়ে গেলো কেন? রিদিশা তার স্যারের কেবিনে গিয়ে হাঁপাতে লাগলো। ইথান রিদিশাকে এভাবে হাঁপাতে দেখে বলল-

-” হেই রিদি আর ইউ ওকে? তুমি লেট করে এসেছো। এখন হাঁপাচ্ছো কেন?

রিদিশা ঠিকমত নিজের জায়গায় বসে দম নিয়ে বলল-

-” স্যার আই এম ওকে। আসলে ফেলিক্স স্যারের কাছে গিয়েছিলাম একটা ডকুমেন্ট নিয়ে।

ইথান ভেবে বলল-

-” কিন্তু ফেলিক্স তো চলে গেছে। এখন এরিক কম্পানির সব দায়িত্বে আছে।

ওহ এ বেটার নাম এরিক। নিজের নামের কি শ্রী। সে আসছে আমার নাম বিকৃত করতে। রিদিশা ঢোক গিলে বলল-

-” হ্যা স্যার ওনাকে দেখেই এসে পড়েছি।

ইথান রিদিশার দিকে অদ্ভুত চোখে তাকালো। তারপর নিজের কাজে মনযোগ দিয়ে বলল-

-” যাইহোক ফাইলগুলো তাড়াতাড়ি কম্পিলিট করো। বিকালে একটা গেট টুগেদার পার্টি আছে।

রিদিশা আচ্ছা বলে কাজে লেগে পড়লো। ইথান স্যার খুব ভালো মানুষ। দুই বছর ধরে ইথান স্যারের পার্সোনাল এসিস্ট্যান্ট রিদিশা।

__

বিকেলে পার্টিতে প্রায় সব কর্মকর্তারাই উপস্থিত ছিলো। পার্টিটা ছিল এরিকের জন্য। এরিকের বাবা তার ছেলেকে পরিচয় করিয়ে দেয় সবার সাথে। এরিক খেয়াল করলো, রিদিশা কালো একটা লং কুর্তি পড়েছে। দেখতে অপরুপ লাগছে। এরিক রিদিশার দিকে তাকিয়ে চোখ ফিরিয়ে নেয়। তার বাবাকে গিয়ে কি যেন বলে। তখন এরিকের বাবা রিদিশার কাছে গিয়ে বলে-

-” আজ থেকে এরিকের পার্সোনাল এসিস্ট্যান্ট তুমি!

কথাটা শোনামাত্রই রিদিশার মুখ বাংলার পাঁচের মত হয়ে গেলো। এই সয়তান ছেলে তাকে ছাড়বেনা। এখন রিভেঞ্জ নেয়ার জন্য তার পিএ বানিয়েছে। এরিক মিটিমিটি হাসছে। রিদিশা ইথানের কাছে গিয়ে কাঁদো কাঁদো হয়ে বলে-

-” স্যার আমি তো আপনার পিএ। কিন্তু এখন উনি কি বলল।

ইথান হাসিমুখেই বলল-

-“‌সমস্যা‌ কি রিদিশা? এরিক অনেক হেল্পফুল মানুষ। আর মানুষের সাথে মিশতে ও পারে ভালো‌।

রিদিশার এখন হাত পা ছু|ড়ে কাঁদতে কাঁদতে বে|হুঁশ হতে ইচ্ছে করছে। কি করে বোঝাবে এই খ•বিস এরিক তাকে শাস্তি দেয়ার জন্য পিএ বানিয়েছে! এরিকের খুব আনন্দ লাগছে রিদিশার মুখ দেখে। এবার বুঝাবো এরিক কি জিনিস‌। আমাকে অপমান করেছো তাই না। রিদিশা চোখ পাকিয়ে এরিকের দিকে তাকায়। এরিক আশপাশে তাকিয়ে দেখলো কেউ দেখছে কি না। তারপর রিদিশার পাশ দিয়ে যেতে যেতে বলল –

-” সো রেদি বি রেডি!

রিদিশা রিদিশা এবার তুই শেষ। এই ছেলে তোকে এবার শায়েস্তা করার জন্যই প্ল্যান করেছে। গেলি তুই গেলি। আরো লাগতে যাবি।

___

ক্লান্ত শরীর টা বিছানায় এলিয়ে দিলো রিদিশা। কিছুই ভালো লাগছে না‌। কাল থেকে কপালে যে শনি আছে তা হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে। তবুও করার কিছুই নেই। ফ্রেশ হয়ে আয়নার সামনে গিয়ে দাঁড়ালো সে মুখের যাচ্ছে তাই অবস্থা হয়ে গেছে। হালকা ক্রীম লাগিয়ে জ্যাকেট চাপিয়ে নিলো গায়ে। বাড়ির সামনে গিয়ে ইজি চেয়ারে বসলো রিদিশা। তখন বাড়ির মালিক এসে দাঁড়ালো। মহিলার বয়স হয়েছে তবুও চেহারায় একটা জোয়ান জোয়ান ভাব। রিদিশা ভদ্রভাবে হেসে বলল-

-” বসুন গ্র্যান্ডমা।

মহিলা বসলেন কিন্তু তার মুখ টা খুবই মলিন। অন্যদিন হাসিখুশি থাকে। কিন্তু আজকে কোন কথাই বলছেনা। এই ভদ্র মহিলাও বাংলাদেশী‌। আর রিদিশার নানির বেষ্ট ফ্রেন্ড‌। উনি পড়াশোনা করতে কানাডা এসেছিল। কিন্তু এক কানাডিয়ান ছেলের সাথে বিয়ে করে থেকে গেছেন এখানে‌। সে আর তার হাসবেন্ড মিলে এই বাড়িতে থাকে। আর তিনবছর ধরে রিদিশা তাঁদের সাথেই থাকছে। রিদিশা আহ্লাদী কন্ঠে জিজ্ঞেস করলো-

-” কি হয়েছে গ্র্যান্ডমা?‌ তোমার কি মন খারাপ?

মহিলা রিদিশার দিকে তাকালেন। মেয়েটাকে তার বেশ লাগে। তিনি ঠোঁটে কিঞ্চিত হাসি ফুটিয়ে বললেন –

-” অনেকদিন হলো ছোট নাতি টাকে দেখতেই যাইনি। এখন শরীরে আর কুলোয় না। অথচ দেখ তাঁরাও আমার খোঁজ নিলো না রে। নাতিটা সামনে গেলেই গ্র্যান্ডমা গ্র্যান্ডমা করে, অথচ একবারো এসে দেখলো না গ্র্যান্ডমা থাকে কোথায়। সবাই নিজের জীবন নিয়ে‌ ব্যাস্ত। আমি এই বুড়ি মরে গেলে বুড়োর কপালে দুঃখ আছে দেখিস‌।

রিদিশা বুঝলো মানুষটার মন খারাপ। বয়স হয়েছে তারও তো ইচ্ছে করে কারো সাথে গল্প করতে। অথচ পরিবার ছেড়ে এতদূরে একা একা থাকছেন। রিদিশা হাসি দিয়ে বলল-

-” চিন্তা করোনা বুড়ি। তুমি এত তাড়াতাড়ি কোথাও যাচ্ছোনা। আর বুড়োর জন্য আমি আছিনা‌।

মহিলা ফোকলা দাঁতে হেঁসে উঠল। কি মায়াময় সে হাঁসি। রিদিশা অপলক চেয়ে রইলো, সে হাসির দিকে।

#চলবে