তুমি আসবে বলে পর্ব-১৫+১৬

0
331

#তুমি_আসবে_বলে
#হুমাইরা_হাসান
পর্ব- ১৫

সময় স্রোতের মতোই বহমান, এটা ঠিক যেমনি সব ঠেলে জীবন টাকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যায়,ঠিক তেমনি সকল আঘাত ঘটনা কে সময়ের নিচেই চাপা দিয়ে দেয়।
সেই রাতের ঘটনার দুদিন পার হয়েছে, এখন আমি পুরোপুরি সুস্থ। শিমুও আজ কালের মধ্যেই চলে আসবে। মামনী এখনো যেতে দেন নি, সেদিনের ঘটনায় মামনী আমায় বুকে জড়িয়ে কেদেছিলো। সত্যিই মমতা কতটা মূল্যবান জিনিস! মমতার জন্য শুধু পেটে ধরা লাগে নাহ, এর জন্য মা শব্দটাই যথেষ্ট, মা তো মা ই হয়। সে যার ই হোক। মামনী আমায় কখনও বুঝতেই দেয়না যে আমি উনার নিজের মেয়ে নাহ। মায়েরা যা কতোটা নিঃস্বার্থভাবে ভালোবাসে তা উনাকে দেখেই বুঝা যায়। এখানে এসে যতোবার নিজের মায়ের জন্য মন খারাপ হয়েছে ততবারই উনাকে পেয়েছি। মনেই হয়না যে পরিচয়টা মাত্র কয়েক বছরের সংখ্যা

-আফু,এখানে কি করছিস টা কি,চল তো সবাই নিচে।তোকেও ডাকছে

এই ঘরের বারান্দা টা আমার ভীষণ পছন্দ হয়েছে, ইয়ার্ড এর বাগান,পাশের পুল আর পরন্ত বিকেল টাই অবলোকন করছিলাম বারান্দায় দাড়িয়ে, পেছন থেকে রাফাতের ডাকে পিছু ফিরে বললাম

-এইতো আসছি।

রাফাতের সাথে সিড়ি বেয়ে নামছি। নিচে চৌধুরী পরিবারের প্রায় সকলেই উপস্থিত, তাদের আলোচনার বিষয়টা হলো পার্টি, যেটা আরও কিছুদিন আগেই হওয়ার কথা ছিলো। মূলত আমার অসুস্থতার কারণেই পিছিয়েছে, ভাবা যায় আমিতো পর একটা মেয়ে, তথাকথিত ভাড়া থাকি তাদের আলিসান বাড়িটায়,আর তারা কিনা আমার জন্য তাদের কার্যক্রম থামিয়ে রাখে।

নিচে আসতেই মামনী বললো

-আফু,আই বস।কি একা ঘরের কোণে পরে আছিস,

মামনীর কথায় হালকা হেসে গিয়ে বসলাম পাশে
সবাই একসাথে বসেছে আলোচনা নিয়ে। মামনী, আংকেল, আঞ্জু আন্টি,রুচি আপু,রাফাত,তার বাবা ইবনাত আর একদম আমার সামনাসামনি বসা মেঘালয় চৌধুরী।
সেদিনের পর থেকে তার সামনে খুব একটা যায়নি। শুধু দু এক বার চোখাচোখি আরকি। কি করে যাবো, সেদিন তো আবেগের বসে জড়িয়ে ধরে বাচ্চাদের মতো কেদেছিলাম। বেচারা আমার জন্য সারা রাত বসে ছিলো। কাদতে কাদতে কখন উনার বুকেই ঘুমিয়ে পরেছি খেয়াল নেই, সকালে ঘুম ভাঙতেই দেখি আমি দু’হাতের বন্ধনে আবদ্ধ।
রাতে তাকে ঝাপটেই ঘুমিয়ে পরেছিলাম,তাই হয়তো ডাকেনি। ঘুম নিজের অবস্থান বুঝে মুখ তুলে তাকাতে দেখি লোকটা বেডেই হেলান দিয়ে আধশোয়া হয়ে আছেন
আমি হুরমুরিয়ে উঠতেই বললেন

“তুমি ঘুমিয়ে পরেছিলে বলে আর ডাকিনি”

আমি কোনো রকম কাচুমাচু করে বলেছিলাম “সরি”
উনি মুচকি হেসে, আমায় বলেছিলেন “গেট ওয়েল সুন নূর”
আমি হ্যাবলার মতো তাকিয়ে থাকা অবস্থায় ই সে চলে গেলো। কি লজ্জা!! তারপর থেকে তার সামনেও পরতে চাইনা আমি

-এখন কেমন আছো পালক

কারো ডাকে ভাবনা থেকে বেরোলাম, হালকা মিষ্টি রঙের ফতুয়া আর সাদা প্যান্ট পরিহিত মাঝবয়সী গোলগাল চেহারার লোকটা আমার দিকেই তাকিয়ে, চোখের চশমা টা ঠিক করে আবারও বললেন

-আসলে ইদানীং ব্যাস্ততা বেড়েছে, তার কারণে বাড়ি থাকার সময় পায়না। তোমার খোজ নিতে আসতে পারিনি বেশি,তুমি কি রাগ করেছো মা?

ইবনাত আংকেলের কথায় মিষ্টি হেসে বললাম

-আরে না না আংকেল রাগ করবো কেনো।আমি জানিতো আপনি ব্যস্ত থাকেন,আর বাকি সবাই তো আমার কতো খেয়াল রাখে।

আংকেল ও প্রতিউত্তরে হেসে বললেন

-আমিও খোজ রেখেছি তো,আমার এই গুণধর ছেলের কাছ থেকে তোমার খোঁজ সবসময়ই নিয়েছি আমি

-বাবা! তুমি সবসময় আমাকে ইনসাল্ট করো

গুণধর বলার কারণে মুখটা পেচার মতো করে বললো রাফাত, ওর কথা শুনে সবাই হাসে,হাসবে নাহ কেনো। ওর শুধু একটা ছুতো চাই ঝগড়া করার,সে যার সাথেই হোক

-সেকি,আমিতো তোর গুণগান করলাম রাফাত,তুই যে গুণধর সেটা সবাইকে জানাতে হবে তো

-হ্যাঁ জানি তো,আমাকে তো অপমান করবাই,আমি আর কে,সবাই আমাকে অপদস্ত করে সবসময়

-হ্যাঁ রে সেটা তুই আজ জানতে পারলি

রুচি আপুর কথায় আগুনে ঘি ঢালার মতো রাফাতের মেজাজ চড়ে যায়,মুখটা আমাবস্যার মতো করে ফোনে ঢুকে থাকে।

কিন্তু আমার নজর তো অন্যদিকে, না চাইতেও বারবার চলে যাচ্ছে সামনে সবুজ রঙের টি-শার্ট পরা লোকটার দিকে, আনমমে ল্যাপটপ নিয়ে বুদ হয়ে আছে। বলি সবসময়ই ই কি এমন গোমড়া মুখে থাকা লাগে, সবাই কতো সুন্দর হাসাহাসি আর গল্প করছেন, আর উনি আইছেন কাজ নিয়ে ব্যাটা সিরিয়াস চৌধুরী। মন টা চাচ্ছে ধুপধাপ দুটো কি’ল দেই। কিন্ত কেনো দেবো? ধুর জানি নাহ,দেবই বা না কেনো। এই লোকটাকে এতো হ্যান্ডসাম হতে কে বলেছিলো? এতটা হ্যান্ডসাম হলে তো চোখ ফেরানো দায়। এই যে এক হাতের আঙুল মুখের কাছে রেখে আরেক হাত ল্যাপটপে চালিয়ে যাচ্ছে,ল্যাপটপের আলোতে ইন্দনীলের চোখ জোড়া জ্বলজ্বল করছে। উফফ চোখ ফেরানো দায়। উনি কি বুঝছেন নাহ আস্ত জলজ্যান্ত একটা মেয়ে উনার দিকে হা করে চেয়ে আছে। মানছি একটু খাটো তা বলে তো এতোই ছোট না যে চোখে বাধবে নাহ

-আফু,নুডলস রান্না কর শিগগির, কতোদিন তোর রান্না করা নুডলস খাইনা

রাফাতের কথায় ও কোনো হেলদোল হলো নাহ আমার, স্থীর তাকিয়ে আছি,সামনে বসা গোমড়া মুখো হ্যান্ডসাম লোকটার দিকে।

-হ্যাঁ রে,তোর কি খাইখাই স্বভাব যাবে নাহ? মাত্র মেয়েটা সুস্থ হলো,আর তোর বায়না শুরু হয়ে গেছে

-তুই তো চুপ ই থাক আপু,তুই আমার বোন নাহ,শ’ত্রু শ’ত্রু, কোনো দিন ও ভাইয়ের পক্ষ নিস নাহ

রাফাতের কথায় মুখ ভেংচিয়ে বলে রুচি আপু

-হুহ,বয়েই গেছে আমার

-তোর বয়ে যাক,আর তুই নিজেই বয়ে যা আমার কি,আফু?? তাড়াতাড়ি!

এবার রাফাতের চিল্লানি তে ধ্যান ভাংলো আমার,তড়িঘড়ি করে বললাম
-হ্যাঁ? কিছু বললি?

-জেগে জেগে শ্বশুর বাড়ি চলে গেলি নাকি তুই,কখন থেকে ডাকছি। এক্ষুনি নুডলস রান্না কর,আমার খিদে পেয়েছে

রাফাতের কথা শুনে আঞ্জু আন্টি বললো

-এই একদম নাহ, তোর নুডলস খেতে হলে নিজে রান্না করে খা,একদম ওকে জ্বালাবি না বলে দিলাম,না তো খুন্তি পে’টা করবো তোকে এখন

-উফ,আম্মু, সবসময়ই এমন খুন্তি পে’টা খুন্তি পে’টা করিও নাহ তো,আমি এখনি নুডলস খাবো,আর আফুর হাতের ই

-রাফাত..

আন্টিকে বলতে না দিয়ে আমিই বললাম

-আচ্ছা ঠিক আছে আমি এক্ষুনি করে দিচ্ছি, আমি ঠিক আছি আন্টি, আপনি চিন্তা করবেন নাহ আমি পারবো,
বলে উঠে দাড়ালাম

-আফু তুই বস তোহ ওর কথা শুনিস নাহ

রুচি আপু আর আন্টি সবাই নিষেধ করা সত্ত্বেও এক প্রকার জোর করেই আসলাম। বসে থেকে থেকে বিরক্ত হয়ে গেছি। একটু রান্নাবান্না করলেও ভাল্লাগবে।

ওখান থেকে উঠে রান্নাঘরে আসলাম। এই বাড়ির রান্নাঘর টা একটা ঘরের সমান, উপরে দুই সারি ক্যাবিনেট, নানান রকম জিনিস দিয়ে সাজানো, এক কথায় দেখার মতো, মামনী সব জিনিস খুব পরিপাটি রাখতে পছন্দ করে।
সবাই যখন আছে তাই নুডলস, পাকোড়া আর কফি বানাবো বলে ঠিক করলাম। রুচি আপু খুব করে জোর করলো আমার সাথে সাহায্য করার জন্য, কিন্তু আমিই আসতে দেইনি। আমি একাই সামলাতে পারবো। রান্নাটা একাই করতে ভাল্লাগে আমার

সব কিছু গুছিয়ে, গরম তেলে পাকোড়া গুলো ভাজতে দিয়ে কফির জন্য পানি নিয়ে চুলার উপর রাখতে গেলেই হাত ফসকে পরে যেতে নিলে দুটো হাতে আমার দুপাশ দিয়ে হাত সহ পাত্রটি ধরে নেয়। আকস্মিক ভাবে বেশ চমকে গেছি আমি,হাত দুটোর দিকে তাকিয়ে ঘাড় ঘুরালেই নিজের খুব কাছেই আবিষ্কার করলাম সুদর্শন চেহারা টা।
পেছন থেকে দু’হাতে জড়িয়ে রাখায় লোকটা আমার খুব কাছে, আমার পিঠ একদম উনার বুক বরাবর, আমিতো খাটো আমি জানি,কিন্তু উনি একটু বেশিই লম্বা। আমার মাথাটা একদম তার থুতনি বরাবর ঠেকছে, পেছন ফিরে ঘাড় উচিয়ে তাকিয়ে আছি লোকটার দিকে। আর উনার নীলাভ চোখ জোড়া আমার দিকেই স্থির। মুখের উপর উষ্ণ শ্বাস আছড়ে পরার অনুভূতি হচ্ছে। পুরুষালি কড়া সুগন্ধ টা নাকের খুব কাছে ঠেকছে,সারা শরীর কেমন অবশ হয়ে আসছে, আমার অস্থিরতা টা আরও বাড়িয়ে দিয়ে উষ্ণ বাতাসে মুখ ছরিয়ে বললেন

-পালিয়ে বেরাও কেনো আমার থেকে?

উনার কথায় সম্ভিত ফিরে পেলাম,নিজেকে ছাড়িয়ে সরে গেলাম। পানির পাত্র টা চুলার উপর রেখে আস্তে জবাব দিলাম

-কই

উনি আমার পাশে এসে দাড়ালেন

-দুদিন ধরেই তো দেখছি,আমায় দেখলেই পালাই পালাই করো,কি সমস্যা,আমি কি বস্তা’য় ভ’রে ফে’লে দেবো নাকি?

উনার এহেন কথায় ভ্রু কুচকে তাকালাম। লোকটা কি ভালো কথা বলতে পারে নাহ, যত্তসব গোমড়ামুখো।
সবগুলো কথা মনে মনে বললেও শেষের কথা বেশ জোরেই বলে ফেলেছি হয়তো

-আমার কান কিন্তু বেশ সার্প,ফিসফিসিয়ে বললেও স্পষ্ট শুনতে পাই আমি

উনার কথায়,ঢক গিলে আবারও মনে মনে বললাম,ইসস শুনে ফেললো। এখন যদি আমায় ব’স্তায় ভ’রে সত্যিই ফেলে দেয়, অসহায় মুখ করে ওদিক তাকাতে দেখি নাই। মানে লোকটা নাই। ঘাড় ঘুরিয়ে পেছনে দেখি ফ্রিজ খুলে পানির বোতল বের করছে,আমার দিকে নজর পরতে চোখ ছোট করে তাকালো
আমি আবারও ঘাড় ঘুরিয়ে নিজের কাজে মনোযোগ দিলাম।

কিছুক্ষণ কোনো সাড়া শব্দ না পেয়ে ঘুরে দেখি উনি নেই,চলে গেলো?
যাক বেচে গেছি। আস্ত গোমড়ামুখো লোকটা, শুধু কি তাই একেবারে ব’জ্জাত, ক্রি’মিনাল একটা, কথায় কথায় শুধু বস্তায় ভ’রে ফে’লে দেবার হুমকি,বলি আমিতো মানুষ না কি, আমাকে কেনো ব’স্তায় ভরে ফেলবে।
কতো সুইট কিউট ইনোসেন্ট একটা মেয়ে আমি,আর উনি কি না বস্তায় ভরার কথা বলে উনাকে ভরা উচিত ব’স্তায়, কিন্তু উনাকে কিভাবে বস্তায় ঢুকাবো, লোকটা আস্ত তালগাছ, উনাকে এতো লম্বা হতে কে বলেছিলো আজব। এই উনার জন্য আমাকে বেশি খাটো লাগে। মাঝে মধ্যে মন চাই ধরে নিয়ে বুড়িগঙ্গায় ফে’লে আসি সিরিয়াস বেটাকে৷ কিন্তু পরে দেখা যাবে নদীর মাছ গুলোও বিরক্ত হয়ে উনাকে ফেরত দিয়ে যাবে,ব্যাটা ওখানে গিয়েও বস্তায় ভরার হুমকি দিবে। হনুমান

একা একাই বিড়বিড় করে যাচ্ছি। কোনো কারণ ছাড়াই। হাত খোপা করা চুল গুলো আলগা হয়ে ভীষণ বিরক্ত করছে,দু হাতে আটা মাখানো থাকায় সরাতেও পারছি নাহ,এদিক ওদিক ঘাড় ঘুরিয়ে চুল সরাতেই আবারও মুখে ছড়িয়ে পরছে,বিরক্তিতে মুখ থেকে চ জাতীয় শব্দ করলাম

তখনি দুটো আঙুল খুব যত্নের সাথে আমার চুল গুলো কানের পেছনে গুজে দিয়ে ফিসফিস করে বললো

-এইতো এসেছি,বুড়িগঙ্গায় ফেলবে নাহ

কথার সাথে গরম নিঃশ্বাস ঘাড়ে পরতেই সারা শরীর মিইয়ে এলো। তৎক্ষনাৎ ঘাড় ঘুরিয়ে দেখি আমার একদম পেছনে দাড়িয়ে।দুজনের মাঝে দূরত্ব একদম কম। এদিক ফিরে ভয় ভয় চোখে তাকালাম। উনি আমার দিকে ঝুকে বললেন

-কি যেনো বলছিলে? আমি ব’জ্জাত? গোমড়া মুখো,আর কি কি আমি?

মুখে যেনো কেও সুপার গ্লু লাগিয়ে দিয়েছে,কিছুতেই খুলছে নাহ। আমতা আমতা করে বললাম

-কই,কে বলেছে?

আমার কথায় এক ভ্রু উচিয়ে, টিপটিপ করে পলক ফেলে এক ঠোঁট কামড়ে বললো

-তাই তো? কে যেনো বললো আমায় বস্তায় ভরে ফেলবে,আমি নাকি তালগাছ, আর কি যেনো? ও হ্যাঁ ক্রি’মিনাল,, আমাকে তো ক্রি’মিনাল বললো। তা ক্রি’মিনাল যখন হয়েছি একটু ক্রা’ইম করাই যাই,কি বলো?

উনার কথায় আমার বুকের ভেতর সাইক্লোন শুরু হয়েছে,ইয়া খোদা,কি ক্রাইম করবেন উনি। ছু’ড়ি দিয়ে কুচি’কুচি করবেন? নাকি গরম তে’লে ভাজ’বেন।
ঘাড় উচু করে মুখটার দিকে তাকাতেই দেখি এক ঠোঁট কামড়ে শয়তানি একটা হাসি দিয়ে চেয়ে আছে।
এবার আমার অ্যাটা’ক হবে, এই লোকটা কে দিয়ে একটুও বিশ্বাস নেই। সত্যিই যদি তেঃলে ভেজে খেয়ে ফেলে!! এখন আমার পালানো উচিত, এদিক ওদিক তাকিয়ে এক পাশ দিয়ে যেতে নিলেই থপ করে এক হাত রাখলো আরেক পাশে যেতে নিলে আবারও আরেক হাত রাখলো।
এখম আমি পুরোপুরি উনার দুই হাতের মাঝখানে আবদ্ধ। উনি দুহাত দিকে আমায় আটকে ঝুকে এসে বললেন

-কোথায় পালাবে? সব দিকেই তো আমি

উষ্ণ শ্বাসের সাথে বলা কথায় আমার সারা শরীর শিহরিত হয়ে গেলো, এতো কাছে কখনো কোনো পুরুষের যায়নি। এতো কাছে কেও আসেনি কখনো, কেউ নাহ।
সারা শরীরে কম্পন ধরেছে, দু হাতে জামা খামচে আছি, কাপা কাপা চোখে উপরে তাকাতেই নীলাভ চোখ জোড়ার দূরত্ব আরও ঘুচে এলো। গরম নিঃশ্বাসের উষ্ণতা আরও বেড়ে গেলো।
হাটুর সমানতালে কাপাকাপিতে দাড়াতে পারছিনা। সারা শরীর গরম হয়ে আসছে যেনো পাঁজরে পাঁজরে কম্পন ধরেছে।

মেঘ অপলক তাকিয়ে আছে লজ্জায় আর ভয়ে কুকড়ে যাওয়া মেয়েটার দিকে, মেয়েটার এমন লাল টসটসে গাল দু’টো দেখতে যেনো বেশ লাগছে, মুখটা কানের কাছে এনে ফিসফিসিয়ে বললো

-ভয় পাচ্ছো,নূর?

খোপার চুলগুলো আরও অবাধ্য হয়ে ছড়িয়ে গেলো,গাল দুটো যেনো রক্তজবার রঙ ধারন করলো।ফোস করে নিঃশ্বাস ছাড়লো পালক।
মেঘের বুকটা চরম ভাবে ধক করে উঠলো, যেনো গরম নিঃশ্বাস টা তার বুক এফোড় ওফোড় করে দিলো, কারো নিঃশ্বাস এতোটাও লাগে?মেঘ হুট করেই অনুভব করে তার ভেতর অদ্ভুত, উষ্ণ, মাতাল করা পেলব অনুভূতির সৃষ্টি হচ্ছে, সামনের মেয়েটির রূপে তার ঘোর লেগে আসছে৷ মনটা ভীষণ অবাধ্যতা করছে ভীষণ বুকের ঝির ঝির কাপন টা যেনো অসহনীয় ঠেকছে মুখটা এগিয়ে আরও সামনে আনলো।
পালকের শরীরে যেনো কারেন্ট লেগে গেছে, জমে গেছে,কোনো অভিব্যক্তির অবকাশ হচ্ছে নাহ। অপলক চেয়ে আছে সামনে লম্বা চওড়া শরীরের লোকটার মোহনীয় চোখ দু’টোয়
দুজনের উষ্ণ শ্বাসের ছড়াছড়ি যেনো মিলে যাচ্ছে,দূরত্ব ঘুচে যাচ্ছে এক হওয়ার ভীষণ জরজর অনুভূতি আনছে
তখনি পেছন থেকে ভেসে আসে

“তোমরা দুজন কি করছো?”
.
.
.
চলবে ইনশাআল্লাহ

#তুমি_আসবে_বলে
#হুমাইরা_হাসান
পর্ব- ১৬

পেছন হতে আসা শব্দে মেঘ ঘাড় ঘুরিয়ে তাকাতেই দ্রুত সরে যায়, পালক বেশ অপ্রস্তুত ভাবে ঘুরে দাঁড়ায়, হাত পা রীতিমতো কাপঁছে এখানে, বুকের ভেতরের ঢিপঢিপ শব্দ স্পষ্ট কানে বাজছে

-তোমরা দুজন কি করছিলে

ভাঙা ভাঙা কণ্ঠস্বর শুনে মেঘ অপ্রস্তুত হেসে এগিয়ে যায়, কোলে নিয়ে বলে

-কিছু নাহ তো, আমি তো তোমার আফুকে সাহায্য করছিলাম এঞ্জেল
বলেই মিষ্টির গালে একটা হামি দেয় মেঘ

-তুমিও কি রান্না করছিলে মেঘ?

-নাহ তো,আমিতো দেখছিলাম তোমার আফু ঠিক ঠাক কাজ করছে নাকি, খুব ফাকিবাজ তোহ

মেঘের কথায় ভ্রু কুচকে তাকায় পালক, কত্তো বড়ো খ’বিশ লোক ভাবা যায়। নিজেই এতোক্ষণ তালগাছের মতো দাঁড়িয়ে থেকে আমার কাজের অষ্টরম্ভা করছিলো,আবার এখন সব আমার দোষ দিচ্ছে আমি কি না ফাকিবাজ!

পালকের চোখ মুখ কুচকানো দেখে মেঘ বেশ মজা পায়, পালক কে আরও রাগিয়ে দিয়ে বলে

-এঞ্জেল? কেমন একটা পোড়া পোড়া গন্ধ পাচ্ছি কেনো বলো তো? কেও কি জ্ব’লছে?

মিষ্টি মেঘের কথা শুনে নাক টেনে বোঝার চেষ্টা করে বললো

-কই আমিতো পাচ্ছি নাহ

-থাক পেতে হবে নাহ, এখন এখান থেকে চলো না তো কেও যখন তখন ব্লা’স্ট করতে পারে।

পালক রাগী রাগী চোখে মেঘের দিকে তাকাতেই মেঘ বাকা হেসে মিষ্টিকে নিয়ে বেরিয়ে গেলো।
বাকিটা সময় পালক সব কাজ একা হাতেই শেষ করে, নিয়ে আসে।

ড্রয়িং রুমে এখনো সকলেই উপস্থিত, সকলের মতামত নিয়ে ঠিক করা হলো আর তিন দিন পরেই পার্টি আরেঞ্জ করা হবে, রুচিতা আপুর স্বামী কালই দেশে ফিরে আসবেন।
সকলের কথা বার্তার মাঝে আমি গিয়ে নাস্তা গুলো রাখলাম। একে একে সবার হাতেই কফি আর পাকোড়ার প্লেট ধরিয়ে দিয়ে বসলাম।
রমজান আংকেল কফিতে চুমুক দিয়ে তৃপ্তির সহিত বললেন

-আহ্,আফু মা রে তোর বানানো কফির স্বাদ ই আলাদা। মিস করছিলাম খুব।যাক রাফাতের জন্য একটা ভালো কাজ হলো।

বলেই গা দুলিয়ে হাসলেন, রাফাতের সেদিকে খেয়াল নেই। নুডলস পেয়েই গপাগপ গিলা শুরু করেছে ইতর টা। এর মাঝে রুচি আপু বললো

-হ্যাঁ রে আফু, তোদের ভার্সিটিতে নাকি ফার্স্ট ইয়ার দের নবীন বরন হবে

-হ্যাঁ আপু এইতো পরশুই হবে

-তা জানিস তো এবার তোদের চিফ গেস্ট হিসেবে কে যাবে

আপুর কথায় মনে পরলো, গতো দুবছর যাবৎ, ভার্সিটিতে কোনো অনুষ্ঠানে চিফ গেস্ট হিসেবে, রমজান আংকেল ই যান। তার ব্যাবসায়ীক খ্যাতি অনেক দূর পর্যন্ত, চৌধুরী গ্রুপ অফ ইন্ডাস্ট্রি দেশের নামি দামি একটা ব্র‍্যান্ড। আর ভার্সিটিতে চৌধুরী গ্রুপ থেকে তৈরি বিভিন্ন ফান্ড আর সংস্থার মাথায় আংকেল, তার দরুন ভিসির সাথে তার সম্পর্ক বেশিই ভালো। প্রত্যেক বার অনুষ্ঠানে বা ভ্যাকেশন টাইমে বিভিন্ন কলেজ ভার্সিটির স্টুডেন্টস দের মাঝে স্পোর্টস অর্গানাইজ করা হয়, যার প্রাইজ মানি, আর ডোনেশন আসে চৌধুরী গ্রুপ অফ ইন্ডাস্ট্রি থেকেই।
কিছুক্ষণ ভেবে বললাম

-এবারও নিশ্চয়ই আংকেল যাবে।

আপু স্মিত হেসে বললো
-নাহ এবার আংকেল নাহ আংকেলের ছেলে যাবে

আপু কথায় প্রথমে ওহ বললেও কথাটার মানে বুঝেই আবারও তাকালাম বেশ অবাক হয়ে বললাম

-হোয়াট!

আমি আর রাফাত দুজন একসাথে বলেছি কথাটা, আপু কথায় রাফাত ও এতোক্ষণে খাওয়া থামিয়ে তাকালো। দুজনেই বেশ অবাক হয়েছি
রুচি আপু গাল প্রসারিত করে বললেন

-কেনো রে,তোরা জানিস নাহ মেঘ ও তো জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ই ছাত্র ছিলো।এবং ওই সময়ে ওর বেশ নাম ও ছিলো। সে বছর স্কলারশিপ পাওয়া সাতজনের মধ্যে মেঘ টপ থ্রি তে ছিলো। ওরা তিন বন্ধু ই সুইজারল্যান্ড পড়ার সুযোগ পেয়েছে, আর বাকি চারজনের মার্ক অনুযায়ী তারা লন্ডনের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে।

এ পর্যায়ে রাফাত বেশ ভাবুক হয়ে বললো

-এই জন্যেই স্যারেরা বলছিলো এবার চিফ গেস্ট স্পেশাল কেও, ভাই তুমি তো আগে বলোনি

রান্নাঘর থেকে ফিরে আবারও ল্যাপটপ নিয়ে বসেছে লোকটা,এদিকের কথায় কোনো কান ই নেই। রাফাতের প্রশ্নে স্ক্রিন থেকে চোখ না তুলেই উত্তর দিলো

-ইনভিটেশন মেইল টা আজ সকালেই পেয়েছি

-ওহহ বলে আবারও গিলাতে মনোযোগ দিলো হাদারাম টাহ, আমি এখনো থ হয়ে আছি। উনি যাবেন? তাও আমাদের ভার্সিটিতে? অ্যাজ এ চিফ গেস্ট?

আমার ভাবনার মাঝে রুচি আপু আবারও বললেন
-ভার্সিটির সাবেক সিনিয়র আর কোম্পানির বর্তমান সি ই ও হওয়ার খাতিরে এবার মেঘকেই ইনভাইট করা হয়েছে অথোরিটি থেকে।

-ওহ আচ্ছা
ছোট্ট করে উত্তর দিয়ে আবারও ভাবনায় বুদ হলাম
এদিকে আমি যে কতো বড়ো একটা কৃতকার্য সাধন করবো বলে ব্যবস্থা করেছি সে তো ভুলতেই বসেছিলাম, হঠাৎ কারো ভীষণ কাশির শব্দে ভাবনা ভঙ্গুর হলো। ধপ করে মনে পরে গেলো আমার শয়’তানি কারসাজির কথা

-মেঘ? কি হলো, ঠিক আছিস তুই? কাশছিস কেনো এতো

-মেঘালয় কোনো রূপ উত্তর করতে পারছে নাহ কাশির দাপটে।

সবাই কে কফি দিয়ে উনার টা আলাদা রেখেছিলাম। যেহেতু উনি ব্লাক কফি খান, তাই স্বাভাবিকভাবেই উনার টা আলাদা করা ছিলো। রুচি আপু উনার হাতে কফি তুলে দিলেও ল্যাপটপে বুদ হয়ে থাকায় উনি তখনি মুখে দেননি। কাজ করতে করতেই এক চুমুক মুখে দিয়েই উনার কাশি শুরু হয়েছে, অতিরিক্ত ফর্সা মুখ টা টকটকে লাল হয়ে গেছে। নীলাভ চোখ জোড়া দিয়ে ভয়ংকর দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আমার দিকে

আমি চুপচাপ তাকিয়ে আছি কোনো রিয়েক্ট ছাড়াই৷ মনে মনে ভাবছি
-বেশি হয়ে গেলো নাকি? পরে নিজেই ভাবলাম নাহ কিসের বেশি,বেশ করেছি। এক তো আমায় আটকে রাখার জন্য পাকোড়া গুলো পুড়েছে, তার উপর মিষ্টিকে বলার নামে আমায় যা তা বলেছে,
এবাক খাও লবন দেওয়া কফি মি. সিরিয়াস চৌধুরী

এসব ভেবেই শয়তানি একটা হাসি দিলাম। আমার দিকে তাকিয়েই ধপ করে উঠে দাড়ালো উনি।
এহহ,এখন সবার সামনে এসে আমায় থা’প্পড় দিবে না তোহ।। উনার দৃষ্টি দেখে বেশ ভয় লাগা কাজ করছে, আমি যে ইচ্ছে করে এত্তোগুলা লবণ ঢেলে দিয়েছি উনার কফিতে তা নিশ্চয় উনি বুঝে গেছেন। এখন কি হবে।
ভয়ে ভয়ে আপনা আপনি দু হালে হাত চলে গেলো।
উনি উঠে দাড়ালেও আমার ভাবনাকে ভুল প্রমাণিত করে গটগট করে সিড়ি বেয়ে উপরে উঠে গেলো।
আমি এখনো গালে হাত দিয়ে স্থির দাড়িয়ে। যাকক,বড়ো বাচা বেচে গেছি। এখনই তো আবারও একটা তামাশা পরতো গালে।

-মেঘের কি হলো,হুট করেই এতো কাশি উঠলো কেনো

আন্টির কথায় রুচি আপু চিন্তিত হয়ে বললো

-আমিও তো বুঝলাম নাহ, ভালোই তো ছিলো কফিতে এক চুমুক দিয়েছিলো মাত্র
বলেই উনার কফির কাপ টা হাতে তুলে নিলো
আমি ছুটে গিয়ে আপুর হাত থেকে কাপ টা নিয়ে বললাম

-অনেকক্ষণ রাখা ছিলো তোহ,হয়তো ঠান্ডা হয়ে গেছে, বেখেয়ালি ভাবে মুখে দিতেই হয়তো কাশি উঠেছে।

আমার কথা শুনে আপু বললো
-তাই হবে হয়তো।

আমি জোর পূর্বক হেসে বললাম
-তুমি যাও না,গিয়ে দেখে আসো ঠিক আছে কি নাহ।আমি এগুলো রেখে আসি

বলেই টেবিলের উপর রাখা কাপগুলো নিয়ে রান্নাঘরে হাটা ধরলাম।
যাক বাবা বড্ড বাচা বেচেছি, যেভাবে তাকিয়েছিলো মনে হচ্ছিলো চোখ দিয়েই ভ’স্ম করে দিবে লোকটা।
ফোস করে একটা নিঃশ্বাস ছেড়ে জিনিস গুলো গুছিয়ে রেখে বেরিয়ে আসলাম।

~

ঘড়ির কাটায় একটা বেজেছে অনেক আগেই,বিছানায় শুয়ে এপাশ ওপাশ করতে করতে চোখ টা কখন লেগে এসেছে বুঝতেই পারিনি। এমন সময় বিকট শব্দে ঝংকার তুলে ফোনটা বেজে উঠায় ধরফরিয়ে উঠলাম। বালিশের পাশ থেকে ফোনটা হাতে নিতেই দেখি স্ক্রিনে জ্বলজ্বল করছে ‘আপদ’ নামটা। রাত বিরেতে এমন অ মানুষের মতো ফোন করার কাজ এর দ্বারাই সম্ভব। গাধারাম আবার কোন ট্রপিক নিয়ে বকবক করবে আল্লাহ মালুম।। কিন্তু আমার ওর পেচাল শোনার বিন্দু মাত্র ইচ্ছে নেই। ঠাস করে ফোনটা কেটে দিয়ে আবারও শুয়ে পরলাম। কাল বিলম্ব না করে মুহূর্তেই আবারও বেজে উঠলো ফোনটা। পরপর তিনবার কেটে দেওয়ার পর ও অনবরত কল করেই যাচ্ছে,আমি জানি এ আপদ এতো সহজে দমবে নাহ। তাই বাধ্য হয়েই প্রচন্ড বিরক্তির সাথে ফোনটা রিসিভ করে কানে ধরলাম।
তৎক্ষনাৎ অপর পাশ থেকে ষাঁড়ের মতো চিৎকার করে বলে উঠলো

-ওই ছেমরি ওই, কখন থেইকা ফোন দিতাছি তোরে হ্যাঁ, ফোন কাটস ক্যান ছেমরি

-তো ফোন কাটবো না তো কি নাচবো। তুই যে এতো রাতে কোনো আজাইরা পেচাল পারার জন্যেই ফোন দিয়েছিস তা আমি খুব ভালো করেই জানি।

-চুপ কর, আজাইরা হোক আর অন্যকিছু শুনতেই হবে, আদ্রিইশ্যা রে ফোন দিছিলাম সা’লা ধইরা কই যে গেইমে আছি এখন ফোন দিলে আমারে নাকি বোম পার্সেল করে পাঠাবো, নিবিড় কে দিলাম ওই সালায় বলে পড়তে বইছে, ওর পড়ার কথা শুনেই মেজাজ টা খারাপ হয়ে গেছে, আর রাফাইত্তা তো কুমোরের মতো ঘুম দিতাসে। ফোন উডাইয়া কই ও নাকি ভালো স্বপ্ন দেখে,ওরে জ্বালাইলে নাকি আমারে পচা পানিতে চুবা’ইবো।
সব শেষে ওই শিমুরে ফোন দিলাম। ওই বলদ রানীর পেচাল শুনে আমিই ডিপ্রেশনে যাইতাছিলাম তাই তোরে ফোন দিসি,এখন তুই যদি না শুনিস তাইলে আমি তগো বাসায় আইয়া পরুম

দীর্ঘ এক ঘন্টা ধরে আজাইরা সব পেচাল ননস্টপ বকবক করলো আরাশি, আর আমি বলদের মতো শুনলাম। অবশ্য আমি নিজেও সব কুকীর্তি গুলো ওরে শুনাইলাম। দুজনের পকপক শেষ হতে প্রায় দুটো বেজে গেলো
এখন ঘটলো আরেক বিপত্তি। এখন আর কিছুতেই ঘুম আসছে নাহ
হুট করে কিছু একটা মনে পরতেই উঠে বসলাম। বই টাহ? হ্যাঁ সেদিন যেই বইটা নিতে গিয়ে ঠ্যা’ঙ এর আচার বানিয়েছিলাম সেটা পড়লেই তো হয়, উঠে বুকসেল্ফের কাছে এসে দেখি,,ওমাহ। একটা বই ও নেই,পুরো ফাকা।
মামনী বলেছিলো তার নামকরা ছেলেটি বই পড়তে ভীষণ ভালোবাসে,আর তার চেয়েও বেশি ভালোবাসে বইগুলোকে। দেশে ফেরার সময় নাকি এক ব্যাগ ভরে বই ই এনেছে। সেগুলো মামনী গুছানোর সময় না পেয়ে এ ঘরে রেখেছিলো কিছু।
তার মানে ওই লোকটাই নিয়েছে বইগুলো, ব্যাটা খ’বিশ বইগুলো নিয়েও কিপটামি। আমি সিউর বইগুলো পাশের ঘর আইমিন তথাকথিত উনার লাইব্রেরি তেই আছে, আচ্ছা? উনি নিশ্চয় এতোক্ষণে ঘুম, ও ঘরটাতে গিয়ে নিয়ে আসলে একটুও টের পাবে না লোকটা
ব্যাস যা ভাবা তাই কাজ। ওড়না টা কোমড়ে পেচিয়ে ঘরের আলো নিভিয়ে গুটিগুটি পায়ে গেলাম ঘটার সামনে। আলতো ভাবে নব মুচড়ে পা টিপে টিপে ঢুকলাম। দরজা টা আলতো ভিরিয়ে দিয়েই ভেতরে এসে লাইট দিতেই আশে পাশে হাজারো বই আর ছোটো খাটো নানান সোপিচ এর সমাহার, সবকিছুই ভীষণ পরিপাটি ভাবে সাজানো। এগিয়ে গিয়ে সেল্ফে কিছুক্ষণ খোজার পর ই পেয়ে গেলাম কাঙ্খিত বইটা। বইটার মলাট দেখেই পড়ার ভীষণ ইচ্ছে জাগলো।
কভার খুলে বইটা খুলতেই পেছন থেকে গা হিম করা কণ্ঠস্বরে ভেসে আসলো

-তুমি এখানে কি করছো?

ধপ করে ঘাড় ঘুরিয়ে তাকাতেই আমার চোখ ছানাবড়া। এই রেহ৷ লোকটা এখানেও হাজির,বুঝলো কি করে৷ আর এতোরাত হয়েছে তাও ঘুমাইনি। ধরা পরে গেলাম তো এখন কি করবো। সাত পাচ ভাবতে ভাবতে উনি দু হাত বুকে গুজে এক ভ্রু উচিয়ে আমার দিকে চেয়ে আছেন

-আ’ম আস্কিং ইউ সামথিং, এখানে কি করছো তুমি?

উনার ধমকে খানিক কেপে উঠলাম। এখন যদি উনি বুঝতে পারেন যে রাত বিরেতে চুরি করে উনার লাইব্রেরিতে এসেছি বই নিতে,তাহলে মান সম্মান কিছু থাকবে নাহ,ফট করে হাতের বইটা পেছনে লুকিয়ে বললাম

-কই,না তোহ,কিছুই নাহ।

-কিছু না তাহলে এখানে কি করছো তুমি,ঘুমাওনি কেনো

-ম মানে,ঘুমিয়েই তো ছিলাম এখানে কারো হাটার শব্দে উঠে এসেছি ভাবলাম চোর এসেছে কি না

আমার কথা শুনে ভ্রু জোড়া সোজা করে বললেন।

-ওহ তাই তুমি কোমড়ে ওড়না বেধে চোরের সাথে মারা’মারি করতে চলে এসেছো তাই তোহ

উনার কথা শুনে কিছুক্ষণ বোকার মতো তাকিয়ে থাকলাম। এখন আমি কি করবো, ধরা পরে গেছি তোহ। এখন তো আমাকে বস্তায় ভরে ফেলে দিবে। ভাবতেই বুক টা কেপে উঠলো। কাদো কাদো মুখ করে বললাম

-আসলে আমি এই বইটা নিতে এসেছি,সেদিন আমার ঘরে দেখে পড়তে ইচ্ছে করেছিলো, আজ বইটা ঘরে নেই দেখে এখানে নিতে এসেছি।

বলেই পেছন থেকে বইটা সামনে এনে ধরলাম
মেঘ পালকের হাতের বইটা দেখেই খপ করে কেড়ে নিলো। এই বইটা তো ওই এনেছে পালকের ঘর থেকে। ওই চাইনি এটা কেও পড়ুক, এডাল্ট দের জন্য এই উপন্যাস, এটা পড়া মোটেও ঠিক হবে নাহ, সে নিজেও চাইনি আসার সময় ওখানকার একজন তাকে এটা উপহার দিয়েছিলো বলে ফিরিয়ে দিতে পারেনি।

পালকের হাত থেকে ওভাবে বইটা কেড়ে নেওয়ায় বেশ খারাপ লাগলো ওর৷ একটা বই ই তো নিয়েছি তার জন্য এভাবে কেড়ে নিলো, লজ্জা আর খারাপ লাগায় এবার সত্যিই চোখে পানি এসে গেলো।
পালকের এমন মুখটা দেখে মেঘের ভীষণ খারাপ লাগলো। ওর কাছে এসে নরম গলায় বললো
-দেখো, এই বইটা তোমার পড়া ঠিক হবে নাহ,এটা বড়োদের বই। তুমি চাইলে অন্য যেকোনো বই নিতে পারো এখান থেকে।

কথায় আছে না,নিষিদ্ধ জিনিসের প্রতি মানুষের আগ্রহ বেশি, ঠিক তেমনটাই হলো। মেঘের এই কথাটা শুনে,খারাপ লাগা সরে গিয়ে একরাশ কৌতূহল জাগলো মনে। কি এমন আছে যে পড়া যাবে নাহ

-কেনো পড়া যাবে নাহ? আর আমি তো ছোট নই। আই অ্যাম আন অ্যাডাল্ট

-নাহ তবুও পড়া যাবে নাহ।

-বললেই হয় আপনি দিতে চান নাহ, এধরণের মিথ্যা নিষেধাজ্ঞা বানানোর কি প্রয়োজন

-আমি কোনো মিথ্যা বানাচ্ছি নাহ, এটা তুমি পড়তে পারবে নাহ,এটা বড়োদের

-কি বড়োদের বড়োদের করছেন বলুনতো। আমি কি ছোট, দিবেন নাহ সেটা বললেই তো হয়। হাড়কিপটে কোথাকার

পালকের এহেন জিদ করা দেখে মেঘের ও রাগ হলো। বেশ তবে পড়ুক,মেঘ চাইনি ও লজ্জায় পরুক তাই দিতে চাইনি, কিন্তু এতো যখন জিদ তবে পড়ুক
-বেশ তবে,পড়ো। কিন্তু একটা শর্তে
-আমি রাজি
-আগে শর্তটা শোনো তারপর বলো
-বলুন।
-বইটা তোমার আমার সামনে বসেই পড়তে হবে

এটা আবার কেমন শর্ত, উনার সামনে বসে পড়ার কি আছে, তাও আগ পাছ না ভেবে পালক রাজি হয়ে গেলো। দুজন গিয়ে বসলো পাশাপাশি রাখা চেয়ারটাতে পালকের হাতে বইটা দিতেই এপাশ ওপাশ নেড়ে চেরে দেখলো মোটা কালো বইটাতে বড়ো বড়ো সাদা অক্ষরে লিখা “Fifty Shades of Grey”। এটা আবার কেমন নাম, মুখ তুলে সামনে তাকাতেই দেখে নেভি ব্লু রঙের টি-শার্ট পরা ব্যাক্তিটি তার গভীর নীলাভ চোখ জোড়ায় নিমগ্ন চেয়ে আছে হাতের শেক্সপীয়ার এর ” The Tragedies” বইটার দিকে।
আমি ভাবনা বন্ধ করে,পৃষ্ঠা উলটে পড়া শুরু করলাম।

কিছুক্ষণ পড়েই গাল দু’টো যেনো গরম হয়ে গেলো, কান দিয়ে যেনো ধোঁয়া বের হচ্ছে, চোখ তুলে তাকানো সাহস পাচ্ছি নাহ। ইসস লোকটা হয়তো এই জন্যই পড়তে না করছিলো। কেনো যে পড়তে গেলাম। বইটাতে দুটো ছেলে মেয়ের চরিত্রে সব কিছু খোলামেলা ভাবেই উপস্থাপন করা,বিদেশি বই হওয়ায় কোনো অপ্রি’তিকর অবস্থা বাদ রাখেনি বইয়ে।এখন কি করবো, লজ্জায় কানের লতিটাও গরম হয়ে আসছে,যেনো সারা শরীর অবশ হয়ে গেলো। লোকটা সামনে না থাকলে হয়তো এতো লজ্জা পেতোনা। আচ্ছা ব’জ্জাত লোক ইচ্ছে করেই আমাকে সামনে বসালো যাতে এমন বিশ্রি ঘটনায় পরি।
ধাপ করে বইটা বন্ধ করে দিলাম

মেঘালয় শুরু থেকেই খেয়াল করেছে পালকের লজ্জায় লাল হওয়া গাল দু’টো, বেশ হয়েছে এই জন্যেই নিষেধ করেছিলো,কিন্তু জিদ ধরলো যখন তখন পড়ুক এবার৷ মেঘের মাথায় হুট করেই দুষ্ট বুদ্ধি চাপলো। পালকের লজ্জা এক ধাপ বাড়িয়ে দিয়ে বললো
-কি হলো বন্ধ করলে কেনো, পড়ো,থার্ড পেইজে দেখো আরও এক্সাইটিং একটা সিন আছে, তুমি তো অ্যাডাল্ট বেশ ভাল্লাগবে

এবার তো পালক হ্যার্ট এ্যাটাক করবে। মাথাটা ঝিমঝিম করা শুরু হয়েছে লজ্জায়। ধপ করে বইটা রেখে উঠে বললো।

-আসলে আমার ঘুম পাচ্ছে,আমি যাই
বলেই এক মুহূর্ত অপেক্ষা না করে ছুটে বেড়িয়ে গেলো।
পালকের এমন কান্ডে মেঘালয় সশব্দে হেসে উঠে বললো
-আরও পড়ো ফিফটি সেইড!!
.
.
.
চলবে ইনশাআল্লাহ