#তুমি_আসবে_বলে
#হুমাইরা_হাসান
পর্বঃ ১৭-১৮
-পালক,পালক ওঠ, ৮ টা বাজতে গেলো আরাশি ফোন দিয়ে দিয়ে মাথা ন’ষ্ট করে দিচ্ছে
-উফ,সর তো পারবো না উঠতে।
-ওঠ না ভাই,নাইলে ওই আপদ এখানেও এসে হাজির হবে
শিমুর ডাকেও কোনো হেলদোল হলো নাহ আমার, সটান হয়ে শুয়ে আছি। গতো এক ঘন্টা যাবৎ ডেকে চলেছে আমায়, কোনো নড়চড় না দেখে হাত ধরে টেনে তুললো,তাও গাট হয়ে বসে রইলাম বিছানায়। আমাকে ঠেলে বাথরুমে দিয়ে টাওয়াল টা দিয়ে বললো
-দশ মিনিটের মধ্যে গোসল শেষ কর।
ঢুলতে ঢুলতে বেসিনের সামনে এসে কয়েক বার পানির ঝাপটা দিলাম মুখে। কাল সারা রাত ধরে অ্যাসাইনমেন্ট করে ভোরেই ঘুমিয়েছি। এখন আবার জ্বালা।
এখন আমি পুরোপুরি সুস্থ, যাকে বলে একদম ফার্স্ট ক্লাস। শিমু এসেছে আজ দুদিন, মামনীর বাড়ি থেকেও এসেছি দুদিন হলো।
সেদিন রাতের পর আর ওই চৌধুরী নামক লোকটার সামনেও যায়নি,হাসফাস করছিলাম কখন নিজের স্থানে ফিরতে পারবো। আল্লাহ আমার দু’আ কবুল করে বিকেলেই শিমুকে পাঠিয়েছে। আর আমি হাফ ছেড়ে বেচেছি, সেদিন সন্ধ্যায় ই নিজের পুটলি বেধে হাটা ধরেছি। ও বাড়িতে আর এক মুহূর্ত নয়। ওই লোকটার সামনে পরলেই আমার চোখে সেদিনের অপ্রিতিকর অবস্থার কথা টা জ্বলজ্বল করে ওঠে, লজ্জা লজ্জা! লোকটা ভীষণ ব’জ্জাত, উপর উপর গোমড়ামুখো হয়ে থাকে আর ভেতর ভেতরে বদের হা’ড়। লোকটার গাটে গাটে শয়তানি।
সেদিন ওখান থেকে পালালে কি হবে সকালে নাস্তার টেবিলে বসে আমায় দেখে যেমন মিটমিটিয়ে হাসি দিচ্ছিলো পারিনি মাটি ফাঁক করে ঢুকে পরতে। আন্টির সামনে শুনিয়ে শুনিয়ে আমায় বলেছিলো
“পালক তোমার বাড়িতে একা বিরক্ত লাগলে বই পড়তে পারো,আমার বইয়ের কালেকশন অনেক”
বলেই বাকা বাকা হাসি দিচ্ছিলো ব’জ্জাত লোকটা। সেদিন আমার মন চাচ্ছিলো নিজের ঘাড় থেকে মাথা টা কে’টে ফেলি। কেনো যে বইটা পড়ার জন্য জিদ করেছিলাম।
-পালক ফাস্ট
বাইরে থেকে শিমুর ডাকে ভাবনা বাদ দিয়ে ফ্রেস হয়ে শাওয়ার নিয়ে পাক্কা ২০ মিনিট পরে বেরোলাম। আজকে ভার্সিটির নবীন বরন অনুষ্ঠান। অনুষ্ঠানে ৯ঃ৩০ টার পর শুরু হলেও যেহেতু অনুষ্ঠানের সকল দ্বায়িত্ব আমাদের গ্রুপের উপর ধার্য করা হয়েছে তাই আমাদের ৮ঃ৩০ টার আগেই উপস্থিত হওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ছেলেদের সবকিছু পরিচালনা আর মেয়েদের সকলকে বরণ করার দ্বায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
কিন্তু ঘাপলা তো আমি অলরেডি করে ফেলেছি ৮ঃ২০ বেজেই গেছে। এখন রেডি হয়ে বেরোতে আরও আধ ঘন্টা নিশ্চিত লাগাবো।
-আফু? কি ব্যাপার তুই মাত্র ওয়াসরুম থেকে বেরোচ্ছিস? আমরা বেরোবো কখন?
রাফাতের ডাকে চুল মুছতে মুছতে তাকালাম। ফর্সা গায়ে বেগুনি রঙের পাঞ্জাবী আর সাদা প্যান্ট টা বেশ মানিয়েছে। পাঞ্জাবীর হাতা গুটাতে গুটাতে আমার দিকে এসে আবারও বললো
-তৌফিক ভাই অলরেডি ছয়বার ফোন করে ফেলেছে আফু, তুই এখানো রেডি হসনি। আজ নির্ঘাত মা’র খাওয়াবি তুই আমাদের
রাফাতের কথায় হাতের তোয়ালে টা রেখে, বললাম
-তোরা না হয় চলে যা রাফাত। অসুস্থ থাকার দরুন আমি তো এমনিতেও কোনো কাজে অংশগ্রহণ করতে পারিনি। আর এখন আমার রেডি হওয়ার অপেক্ষা করতে গেলে তোদের আরও দেরি হবে, তোরা যা আমি পরে আসছি
-বলছিস?
-ইয়েস
-একা আসতে পারবি তুই?
-আরে এটা কেমন কথা হলো, আমিকি আজ নতুন যাচ্ছি?
আমার কথায় যেনো ভরসা পেলোনা রাফাত। তাও অপেক্ষা করতে চাইলো। কিন্তু আমিই জোর করে পাঠিয়ে দিলাম। বেচারা রা প্রায় এক সপ্তাহ ধরে খেটে চলেছে, আজ আমার জন্যে দেরি করিয়ে ওদের খামোখা কারো বকা শুনাতে চাইনা আমি। তাই জোর করেই পাঠিয়ে দিলাম। আদ্রিশ নিবিড় আর আরশি আগেই চলে গেছে ক্যাম্পাসে। রাফাত আর শিমু আমার জন্যেই অপেক্ষা করছিলো, ওদের ও আমি পাঠিয়ে দিলাম।
খাটের উপর সব কিছু রেডি করেই রেখে গেছে শিমু। এগিয়ে গিয়ে হাতে তুলে নিলাম হাল্ফ সিল্কের চুমকি দেওয়া গাঢ় বেগুনি রঙের শাড়িটা।
আজকের থিম টাই পার্পল কালার। ছেলেরা পার্পল কালার পাঞ্জাবী আর মেয়েরা শাড়ি। সবাই ঠিক তাই পরেছে। এই শাড়ি আমার আরেক শত্রু, ঠিক মেঘালয় চৌধুরীর মতোই।
যতোবার এর সাথে ডিল করতে হয়,একটা না একটা বিপত্তি ঠিকই সৃষ্টি হবে। এইতো বছর খানেক আগেই,আমাদের নবীন বরনের দিন না চাইতেও আমায় জোর করে শাড়ি পরিয়ে নিয়েছিলো আরশি। আর ফলস্বরূপ সিড়িতে উস্টা খেয়ে চিত হয়ে পরেছিলাম।সেদিন কান ধরেছি আর জীবনে শাড়ি ধরবো নাহ। কিন্তু আমার কথা টা মনে হয় শাড়ির একদম পছন্দ হয়নি,তাই নিজেই সুরসুর করে চলে এসেছে আমার কাছে।
হাতের শাড়িটা নিয়ে কিছুক্ষণ উল্টে পালটে দেখলাম। শাড়ি তো আমায় জোর করে কিনে দিলো বলদের দল। এখন পরাবে কে? এই ঝামেলা আমি পেচাতে পারিনাহ। নিজেকে কেমন পেয়াজ পেয়াজ লাগে।
কিছুক্ষণ এপাশ ওপাশ করেও কিভাবে পরতে হয় বুঝলাম নাহ, গালে হাত দিয়ে বসে আছি,এখন কি করবো?
-কিরে আফু হলো তোর
আহ,এতোক্ষণে ভালো কিছু হলো।
-আপুউউ,শিগগির এসো, এই ঝামেলা আমি পরতে পারছিনা
রুচি আপুকে দেখে যেনো হাফ ছেড়ে বাচলাম,আপু আমায় দেখে বললো
-সে কি রে, তুই এখানো শাড়ি পরিস নি। দেখেছিস,বাদর টা ঠিক ই বলেছে। রাফাত মাত্রই ফোন করেছিলো আমায় বললো তুই নাকি একা শাড়ি পরতে পারবি নাহ আমাকে আসতে বললো। এসে দেখি ঠিক তাই
-ঠিক ই তো,আমিতো পরতেই চাইনি এসব ঝামেলা, দেখোনা শুধু পেচিয়েই তো যাচ্ছি,কুচি তো হচ্ছে নাহ।
-কই দে আমি পরিয়ে দেই
রুচি আপু শাড়িটা নিয়ে পাচ মিনিটের মধ্যেই চটপট পরিয়ে দিলো। আমাই হাজার বারণ করা সত্ত্বেও সাজিয়ে দিলো।আমার সাজতে খুব একটা ভাল্লাগে নাহ,যদিও বেশি সাজায় নি। একটু মেক-আপ হালকা কাজল আর ঠোঁটে লিপস্টিক এই আরকি। হাতে চিকচিক করা রেশমি চুড়ি পরিয়ে দিলো, চুল গুলো খুলেই রেখেছি
-মাশাল্লাহ!! নজর না লাগুক আফু।তোরে দেখতে একদম পরী লাগছে।
আপুর কথায় বেশ লজ্জা পেয়ে বললাম
-ধ্যাত,কি যে বলো
গাল ছড়িয়ে হেসে আপু আমার দু গাল টেনে বললো
-সত্যিই বলছি।
বলে আমার কানের পেছনে ছোট্ট একটা কাজলের ফোটা দিলো
আমার বেশ লজ্জা লাগলো আপু এহেন কাজে
-থাক আমার সামনে আর লজ্জা পেতে হবে নাহ ওগুলো তোর জামাইয়ের জন্য তুলে রাখ।
এখন চল তো শিগগির নয়টা বাজতে চললো অনেক দেরি হয়ে যাবে তোহ।
আপুর তারা দেওয়ায় আমিও ফটাফট বেরিয়ে পরলাম, সিড়ি বেয়ে নেমে বাড়ির গেইটের সামনে দাড়িয়ে আছি মিনিট পাচেক।তবুও কোনো রিকশা পাচ্ছি নাহ। এই সময় টাতে এই এক জ্বালা কোনো অটো রিকশাই পাওয়া যায় না ঠিক করে। আপুও এসে দাড়িয়ে আছে আমার সাথে বেশ কিছুক্ষণ দাড়িয়ে থেকে বললো
-একটা রিকশা ও তো পাচ্ছি নাহ রে, এভাবে তো তোর অনেক লেট হয়ে যাবে, রাফাত তো ফোন দিয়ে মাথা খারাপ করে দিচ্ছে,কাজে আটকে যাওয়ায় ওউ তো আসতে পারছে নাহ।
-এখানে দাড়িয়ে কেনো আছিস আপু
সচ্ছ গম্ভীর কণ্ঠস্বরে পেছনে ঘুরে তাকালাম।
কালো রঙের প্যান্ট আর ব্লেজারের সাথে ভেতরের শুভ্র শার্ট টা বেশ পরিপাটি করে পরা,এলোমেলো উড়া চুলগুলো জেল দিয়ে সেট করা। দামি জুতা জোড়া যেনো পোশাকে সোভা নিখুত ভাবে বর্ধন করেছে। দু হাত পকেটে গুজে কপালে ভাজ ফেলে তাকিয়ে আছে মেঘালয় চৌধুরী।
মানুষ কি এতোটাও পার্ফেক্ট হয়? নাকি শুধু উনিই এতোটা পার্ফেক্ট, নাকি আমারই দেখার ভুল। জিম করা সুগঠিত শরীরের ভাজে ভাজে এটে থাকা শার্টেও যেনো অত্যাধিক আকর্ষণ। লোকটা যেনো পুরো আইসক্রিম।
-আসলে রিকশার জন্য দাঁড়িয়ে আছি অনেকক্ষণ, রাফাত শিমু সবাই তো চলে গেছে আফুর দেরি হয়েছে এখন কোনো গাড়িও পাচ্ছে নাহ।
বলে একটু দম নিয়ে আবারও আপু বলে
-মেঘ তুই ও তো ওদের ভার্সিটিতেই যাচ্ছিস আফুকে সাথে নিয়ে গেলেই তো হয় রে, বেচারি সুস্থ হলোই কিছুদিন, এর মাঝে যানযট ঠেলে আবারো কি কিভাবে যাবে,তার চেয়ে বরং তুই নিয়ে যা
মেঘের কানে কোনো কথা যাচ্ছেই নাহ, অপলক চেয়ে আছে সামনে মাথা নুইয়ে আঙুলের সাথে শাড়ির আঁচল পেচাতে থাকা মেয়েটির দিকে।
যেনো রূপের ডালি সযত্নে বিলিয়ে দিয়েছে সৃষ্টিকর্তা। ফর্সা গায়ে গাঢ় বেগুনি রঙ টা একটু বেশিই মানিয়েছে, গলায় আর কানে চিকচিক করা সোনালী রঙের অলংকার গুলো যেনো মোহ মায়া ছড়িয়ে দিচ্ছে, শিউলির পাপড়ির ন্যায় হালকা বাকানো পাতলা ওষ্ঠযুগোলে গোলাপি রঙের প্রলেপ টা যেনো রঙের পরিপূর্ণতা দিয়েছে সাজে। মেয়েটা কি আগে থেকেই এতো সুন্দর নাকি মেঘ দেখার পর এতো সুন্দর হয়েছে?
-কিরে মেঘ,বল। ওকে নিয়ে যা না তোর সাথে করে
রুচিতার ডাকে ধ্যান ভাংলো মেঘের,অপ্রস্তুত হয়ে বললো
-হ্যাঁ? কি, কাকে নেবো,কোথায়?
-যা বাবা,এতোক্ষণ কি বলছি তোকে,আফুকে তোর সাথে করেই নিয়ে যা এখানে রিকশা পাওয়া যাচ্ছে নাহ।
এবার কথাটা বেশ জোর দিয়েই বললো রুচি। মেঘ ও অমত করেনি।
-ওকে।
বলেই বড়ো বড়ো পা ফেলে গ্যারেজের দিকে গেলো।
অনতিবিলম্বেই কালো রঙের মার্সিডিজ গাড়িটা জোর হাওয়া উড়িয়ে এসে থামলো পালকের পাশে। ভেতর থেকে গাড়ির দরজা টা খুলে দিলেও চোখ জোড়া সামনে রাস্তার দিকেই নিবন্ধ।
রুচির আপুর কথায়,চুপচাপ উঠে বসলাম, আপুকে বাই বলতেই সে হাতটা স্টিয়ারিং এ রেখে স্কেলেটরে চাপ দিয়ে হাত ঘুরিয়ে ছুটিয়ে নিলো গাড়িটি। আমি কোনো রূপ বাক্য হীনা বসে আছি। গাড়িটা দাপটের সাথে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে মেঘ।
উফ লোকটা এতো ফাস্ট মেনো ড্রাইভ করছে,ফ্লাইট মিস হবে নাকি আজব।
আমার বিড়বিড়ানির মাঝে শব্দ করে গাড়িটা ব্রেক লাগিয়ে থামালো। কিন্তু ভার্সিটি তো এখনো আসিনি,মাত্র কিছুটা পথ এসেছি। কলেজ মাঠের পাশে, লোকটা এখানে কেনো থামালো, আমায় খু’ন করবে নাহ তো? ইয়া মাবুদ,কেনো এলাম আমি ইনার সাথে।
আমার ভাবনার মাঝেই মাত্রাতিরিক্ত সুদর্শন ব্যাক্তিটি তার নীল চোখ জোড়া ঘুরিয়ে আমার দিকে তাকালো। আমি টিপটিপ করে তাকিয়ে আছি। আর মনে মনে ভাবছি উনি এভাবে কেনো তাকিয়ে আছে?
আমার ভাবনার মাঝে উনি সিট থেকে সরে এগিয়ে আসলেন আমার দিকে, ধীরে ধীরে আমার দিকে এগিয়ে আসছে লোকটা, বুকের ধুকপুকানির দৌড়ানি আবার শুরু হলো,এতো অপ্রিতিকর পরিস্থিতি শুধু উনার সামনে আসলেই কেনো হয়। দু হাতে শাড়ির আচল খামচে আছি। উনি আমার দিকে এগোচ্ছেন আর আমি পিছাচ্ছি। এক সময় পিঠ ঠেকলো দরজার সাথে, এখন, এখন কি হবে। প্রচন্ড আতংকে চোখ চেপে বন্ধ করে ফেললাম।লোকটার শরীরের কড়া ঘ্রাণ টা ভীষণ কাছ থেকে পাচ্ছি।
কিছুক্ষণ পর অনুভব করলাম গাড়িটা আবারও চলতে শুরু করেছে,চোখ খুলেই দেখি লোকটা আবারও স্টিয়ারিং ঘুরিয়ে গাড়িটা ছুটানো শুরু করেছে। নিজের দিকে তাকিয়ে দেখে বেশ লজ্জিত বোধ করলাম
আমার সিট বেল্ট টা বাধতে ভুলে গেছিলাম,উনি সেটা বাধতেই এসেছিলো আর আমি কি না কি ভেবে বসলাম,ধ্যাতত।
লজ্জায় আমার মাথা নুইয়ে আসছে, তৎক্ষনাৎ কর্ণগোচর হলো
-উল্টা পালটা বই পরলে, চিন্তাভাবনা তো ওমন ই হবে
ইয়া খোদা তুমি এক্ষুণি মাটি ফাক করো,আমি ঢু’কে যায়। এই কথাটা শোনার আগে আমি উবে গেলাম না কেনো। লজ্জায় আমার কান দিয়ে ধোঁয়া বেরোচ্ছে। চোখ বাকিয়ে তাকিয়ে দেখি উনি গাল টিপে হাসছেন। আমাকে এভাবে অপদস্ত করে উনি হাসছেন? লোকটাকে যতটা খারাপ ভেবেছিলাম ততোটা নাহ তার চেয়েও দুই কাঠি উপরে। এবার বেশ রাগ হলো,কিন্তু কোনো উত্তর করলাম নাহ,চুপচাপ মুখ ফুলিয়ে বসে আছি। কিছুক্ষণ পর আবারও বললো
-তা মিস পার্পল কুইন আজকে কি প্ল্যান আছে
উনার মুখে এমন ডাক শুনে বুকের ভেতর কেমন অদ্ভুত দোলা লেগে গেলো, আস্তে করে বললাম
-কিসের প্ল্যান
-ভার্সিটির অনুষ্ঠানে তো অনেকরই অনেক প্ল্যান থাকে, যেমন কারো নাচার,কারো গান করার আবার কারো সুন্দর করে সাজুগুজু করে বয়ফ্রেন্ড এর সাথে ছবি তুলার
শেষের কথাটা বলার সময় কেমন আড় চোখে আমার দিকে তাকালো,আজব আমাকে এভাবে মিন করার কি আছে,আমি কি তাই করে বেরাবো,লোকটাকে ইচ্ছে করছে ধা’ক্কা দিয়ে ফে’লে দেই, তাও বেশ ভাব নিয়ে বললাম
-হ্যাঁ আমারো প্ল্যান আছে,ওই যে লাস্টের টাহ।
বলেই ভাব নিয়ে সামনে থেকে চুল গুলো সরিয়ে পেছনে দিলাম। আমার কথাটা যেনো উনার পছন্দ হলো নাহ,মুহূর্তেই মুখটা জুড়ে আধার নামলো। বেশ রাগী রাগী কণ্ঠে বললেন
-এইটুকু মানুষ আবার বয়ফ্রেন্ড থাকে তাই নাহ,পড়াশোনার তো প টাও ঠিকঠাক করো নাহ,আবার বয়ফ্রেন্ড রাখো,বলতে লজ্জা লাগে নাহ
উনার এভাবে হুট করে রেগে যাওয়ায় বেশ অবাক হলাম
-ওমাহ,আপনি কেনো রেগে যাচ্ছেন। আজকাল স্কুলে পড়া মেয়েদের ও বয়ফ্রেন্ড থাকে,সেখানে আমিতো এতোটাও ছোট নই,আর আমার যা ইচ্ছে আমি করবো তাতে লজ্জা লাগার প্রয়োজন মনে করি নাহ
আমার কথা শেষ না হতেই চরম জোরে ব্রেক কষলেন। অপ্রস্তুত থাকায় বেশ জোরেই ধাক্কা লেগেছে,বেল্ট বাধা না থাকলে হয়তো সিউর মাথা ফাটা’ইতাম। এভাবে কেও ব্রেক করে আজব,উনাকে কিছু বলতে নিলেই আশপাশ দেখি ‘নাহ ঠিক আছে,এবার ঠিক জাগায় ই ব্রেক করেছেন’ কিন্তু তা বলে এমন হুপহাপের মতো করার কি আছে আজব। এই লোকটা কি আমায় মেরে ফেলতে চাই নাকি।
আঙুল উচিয়ে দুটো কড়া কথা বলতে যাবো তখনি আমার আঙুল টা বেশ জোরে চেপে ধরে আমাকে টেনে নিয়ে হিসহিসিয়ে বললেন
-বয়ফ্রেন্ডের সাথে ছবি তুলা তো দূর, কোনো ছেলের আশেপাশে ঘুরতে দেখলেও গু’লি করে দেবো,মাইন্ড ইট
উনার এমন হুট করে কাছে টেনে নেওয়াই আর এহেন কথায় বেশ ঘাবড়ে গেছি আমি,লোকটাকে দেখে মোটেও মনে হচ্ছে না সে ইয়ার্কি করছে,চোখ মুখে ভীষণ কাঠিন্য ছড়িয়ে রেখেছে,ঘন ঘন প্রশ্বাস আমার মুখে ছড়িয়ে পরছে। এই লোক কে দিয়ে একদম বিশ্বাস নেই এখানে আর কিছুক্ষণ থাকলে এবার ব’ম মেরে দেওয়ার হুম’কি দিবেন নির্ঘাত।
উনার হাতটা সামান্য আলগা হতেই এক ধাক্কায় নিজেকে ছাড়িয়ে বেল্ট খুলে এক দৌড়।
কোনো থামাথামি নেই, এই লোকের ব’স্তায় ভ’রার, বুড়িগঙ্গায় ফে’লার গু’লি করার সবরকম থ্রে’ট দেওয়া হয়ে গেছে,উনার সামনে কিছুক্ষণ থাকলে বাস্তবায়ন ও করে ফেলবেন, শুনেছি আংকেল এর নাকি একটা লাইসেন্স করা পি’স্তল ও আছে৷ সেই কথা মনে পরতেই আরও জোরে ছুট লাগালাম।
হঠাৎ কোনো কিছুর সাথে ধাক্কা লেগে পরতে নিলেই কেও দুহাতে ধরে ফেললো।
-একি দৌড়াচ্ছো কেনো? ঠিক আছো?
আকস্মিক ভয়ে চোখ বন্ধ হয়ে গেছিলো। আগন্তুক এর করা প্রশ্নে তাকাতেই একটা সুদর্শন চেহারা সামনে পেলাম। নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়েই আমতা আমতা করে বললাম
-না মানে হ্যাঁ ঠিক আছি, সরি ধাক্কা লাগার জন্য
বেশ হাসি হাসি মুখ করে বললো
-আরে ইটস ওকে,তুমি এভাবে দৌড়াচ্ছিলে কেনো
আরাব ভাইয়ের প্রশ্নে বেশ কনফিউজড হয়ে গেলাম,এখন উনাকে কি করে বলবো একটা আস্ত ভদ্রলোকের বেশ ধরা গু’ন্ডা আমায় রাত দিন নানা ভাবে থ্রে’ট করেই যাচ্ছে।
-না মানে আসলে দেরি হয়ে গেছে তো তাই,আমি এখন আসি ভাইয়া, সরি এ্যন্ড থ্যাংকস
বলেই আবার দৌড় দিলাম। এখানে কিছুক্ষণ থাকলেই যদি গু’ন্ডা টা চলে আসে, ক্যাম্পাসে এসে,কিছুক্ষণ এদিক ওদিক খুজেই পেয়ে গেলাম কাঙ্খিত চেহারা গুলো। গাল প্রসারিত করে হেসে এগিয়ে গেলাম। আরশি আর শিমু ফুলের মালা গুলো সাজাচ্ছে,আর পাশেই নিবিড় আর আদ্রিশ চেয়ার সরিয়ে রাখছে। আমি যেতেই আরশি দৌড়ে আমার কাছে আসলো
-আফু,এতোক্ষণে তোর আসার সময় হলো,কখন থেকে ওয়েট করছি বলতো
মেয়েটা আজ খুব সেজেছে, বেগুনি রঙের শাড়ির সাথে হাত ভরে কাচের চুড়ি, কানের দুল,কপালে ছোট টিপ আর ঠোঁটের টকটকে লিপস্টিকে দারুণ লাগছে। ফর্সা লম্বা চিকন শরীরে শাড়িটা অত্যাধিক মানিয়েছে
-আরে রিকশা পাচ্ছিলাম নাহ,তার উপর দিয়েছিস এই বারো হাতের কাপড়, এগুলো সামলে আসতে সময় লাগে তো
এবার আমায় আগা গোড়া পরখ করে আরশি বললো।
-বাহহ,আফুরে তোরে তো আজ নাইকা লাগতাছে কইডারে যে হ্যার্ট এ্যা’টাক দিবি তুই
-আমি নিজেই হ্যার্ট এ্যা’টাক করবো কখন,
-কেনো রে তুই আবার কারে দেইখা টাসকি খাইলি
-আরে ধুরর,বাদ দে তোহ,চল ওদিকে যায়
সবাই মিলে কিছুক্ষণ এদিক ওদিক ঘুরাঘুরি করেই,আসনে এসে বসলাম,সকল প্রফেসর, সহকারী স্যার, ভিসি আর আমাদের মাননীয় মানে আমাকে প্রতিনিয়ত থ্রে’ট দিয়ে অতি’ষ্ঠ করে রাখা লোকটা আসন গ্রহণ করলো। বিভিন্ন শুভেচ্ছা বাণী, সম্মাননা, আর বক্তৃতা দিয়ে অনুষ্ঠানের কার্যক্রম এগোচ্ছে। এ পর্যায়ে আমার বেশ বিরক্ত লাগছে,পানি পিপাসা ও পেয়েছে। এদিক ওদিক ঘুরে দেখি রাফাত নিবিড় আর আদ্রিশ মাঠের বাম পাশের আমগাছের নিচে দাড়িয়ে আড্ডা দিচ্ছে আর কোক গিলছে, আরশিকে পাশ থেকে কয়েক বার ডাকলাম যাওয়ার জন্য, গাধা টা হা করে আরাব ভাইয়ের দিকে চেয়ে আছে,যাকে বলে চোখ দিয়ে গে’লা। শিমু অনেক আগেই পেছনের দিকটাই গেছে, ওর নাকি এতো ভীড় ভালো লাগছে নাহ। ওই আপদ টারে না উঠাতে পেরে অগত্যা আমিই উঠে ভীড় ঠেলে বেরিয়ে যাচ্ছি।
হঠাৎ ভীড়ের মাঝেই আমার নাম উচ্চারিত হলো কয়েক বার, প্রথমে শোনার ভুল ভাবলেও পরে,কিছু বাক্য কানে আসলে পা থমকে যায়।
“এই লম্বা চুলের মেয়েটা নাহ?”
“হ্যাঁ এটাই”
“আদনান ভাইয়ে তো এরেই লাইন মারতো তাই নাহ”
“হ্যাঁ, কিন্তু গত তিনদিন ধরে ভাইয়ের কোনো খবর পাচ্ছিলাম নাহ, খোঁজ নিয়ে জানতে পারলাম,আদনান ভাই তিনদিন ধরে হসপিটালাইজড, কেও নাকি মা’র দিয়ে আইসিইউ তে ভর্তি করাই দিয়ে গেছে”
“কি বলিস, আদনান ভাইয়ে মা’রছে কে?”
“জানি নাহ,পাবেলের হাত ভা”ঙলেও ওর অবস্থা তুলনামূলক ভালো, ও শুধু বললো পালক নামের মেয়েটাকে নাকি হ্যারা”সমেন্ট করেছিলো,তার পরের দিন ই এক ছেলে এসে ক্যালা’নি দিয়ে হাসপাতালের টিকিট কাটাইছে”
এরপরে আর কিছু শুনতে পেলাম নাহ, ভীড়ের মধ্য আমার দিকে ইঙ্গিত করে কয়েকটা ছেলে ফিসফাস করছিলো, ওদের দিকে লক্ষ্য করতেই এই কথপোকথন গুলো কানে আসলো। তবে তার চেয়েও বেশি অবাহ হয়েছি আদনানের অবস্থার কথা শুনে। ওকে এভাবে কে মারতে পারে? রাফাত নিবিড় আদ্রিশ হলে তো আমি জানতাম,তাহলে কে?
হঠাৎ ই ভীষণ অস্থির হয়ে গেলাম,আমি যা ভাবছি তাই না তো? তা যদি হয় তো ভীষণ ঝামেলা হবে ভীষণ, আদনান মার খেয়ে দমে যাওয়া লোক নাহ
.
.
.
.
চলবে ইনশাআল্লাহ