তুমি কেন আগে আসোনি? পর্ব-২০

0
652

“তুমি কেন আগে আসোনি?”

২০.
জেনিফার নিচে নামতেই আরশি খোঁচা মেরে বললো,

— “সারাদিন বেডরুমে পরে থাকলে হবে? কাজকর্ম কিছু করতে হবে না? নাকি বিলাসিতা পেয়ে ভুলে গেছো বান্দীর হাল থেকে এসেছো।”

জেনিফার হেসে বললো,
— “কাজগুলো আপনি করে নিলেই তো পারেন, মা।”
— “তুমি জানো তুমি কাকে কি বলছো?” রেগে বললো আরশি।
— “হ্যাঁ জানি তো। আপনি হচ্ছেন আমার শ্বাশুড়ি মা। দেখুন তো বসে থেকে থেকে কেমন ভূড়ি বেড়ে গেছে আপনার। একটু কাজ করে নিলেই তো পারেন। তাইনা?”
— “তুমি কিন্তু বেয়াদবি করছো?”
— “আমি?” বিষ্মিত হয়ে বললো জেনিফার। “মা আপনি আমায় ভুল বুঝচ্ছেন। আমি কোনো বেয়াদবি করছি না। আপনার ভালোর জন্যই বলছি।”
— “আমি এক্ষুনি সব সায়ানকে বলছি। সায়ান! সায়ান!”

আরশির ডাকে সায়ান নিচে নেমে এলো। আরশি ইনিয়ে বিনিয়ে বললো,

— “সায়ান দেখনা তোর বউ এসেছে দুইদিন হয়নি। আর আজকেই আমাকে বলছে আমি নাকি তোর অন্ন ধ্বংস করছি। তোর টাকা অপচয় করছি। আমাকে বলছে এখানে থাকতে হলে কাজ করে খেতে হবে। তুই…!”

আরশির কথার মাঝখানেই জেনিফার কেঁদে উঠলো। আরশি থেমে গিয়ে জেনিফার দিকে তাকালো। সায়ানও এগিয়ে আসলো জেনিফার দিকে।

— “জেনি কি হয়েছে?”

সায়ান কথাটা বলা মাত্রই লাফ দিয়ে উঠে সায়ানকে আলিঙ্গন করে নিয়ে বললো,

— “সায়ান আমি..আম।”
— “জেনি রিল্যাক্স। কান্না থামাও।”

জেনিফার দিকে পানির গ্লাস এগিয়ে দিলো সায়ান। পানি খেয়ে জেনিফার একটু শান্ত হলো। সায়ান এবার মোলায়েম কণ্ঠে জিজ্ঞেস করলো,

— “কি হয়েছে জেনি? তুমি কাদছো কেনো?”
— “সায়ান আমি থাকবো না এখানে। আমি অনাথ বলে আমাকে কেউ কোনোদিন এভাবে বলেনি।”
— “মানে? তোমাকে কে কি বলেছে?” আরশি হতভম্ব হয়ে জিজ্ঞেস করলো।

এই কথাটার অপেক্ষাতেই ছিলো যেনো জেনিফার। অশ্রুসিক্ত চোখে সায়ানের দিকে একবার তাকিয়ে আবার আরশির দিকে তাকিয়ে বললো,

— “এতো দ্রুত আপনি কিভাবে নিজেকে বদলে নিয়েছেন মা? একটু আগেই তো আপনি আমাকে ওসব..।”

জেনিফার আবারো কাদতে লাগলো। হিচকি তুলে ফেলেছে। একটু থেমে বললো,

— “সায়ান তুমি তোমার স্ট্যান্ডার্ডের কাউ-কে বিয়ে করে নিলেই পারতে। আমাদের মতো মধ্যবিত্তকে বিয়ে করেছো যাতে সারাদিন অপমান করতে পারো এইজন্য?”
— “জেনি কি যা তা বলছো? কে তোমাকে অপমান করেছে?”
— “তুমি তো জানো আমি একটু অসুস্থ। তাই আজকে রাধতে চাইনি। এইজন্য মা আমাকে আমার বংশ নিয়ে কথা শুনিয়েছে।”
— “মা বলেছে?” সায়ান বিষ্মিত হয়ে বললো।
— “আরে আমি এসব কখন বললাম?” আরশি চেচিয়ে বললো।

জেনিফার চোখ মুছে বললো,
— “মা আপনি আমার গুরুজন। আমাকে বলতেই পারেন। আমি কিছু মনে করিনি। আমি সত্যিই অসুস্থ ছিলাম তাই..।” সায়ানের দিকে তাকিয়ে বললো, “সায়ান তুমি কিন্তু মাকে কিছু বলবে না ঠিকাছে? উনিতো আমাদের মা-ই তাইনা? আমি বংশ পরিচয়হীন হয়েছি তো কি হয়েছে।”

জেনিফার নিরবে কাদতে লাগলো। সায়ান আবারও আলিঙ্গন করে নিয়েছে। আরশির দিকে তাকিয়ে বললো,

— “মা জেনি অসুস্থ তাই আজকে কাজের লোক ডাকিয়ে নাও।”
— “সায়ান থাক না। কাজের লোকের কি দরকার। আমরা বাহির থেকে খেয়ে নেবো। তুমি তো জানো আমি ঘরের মানুষের রান্না ছাড়া বাহিরের কারো রান্না খেতে পারিনা।”
— “রেস্টুরেন্টের খাবার খেলে তুমি আবার অসুস্থ হয়ে যাবে। তাই তোমাকে রেস্টুরেন্টের খাবার খাওয়াচ্ছি না আমি।”
— “মা আপনি তো জানেন আমি বাহিরের খাবার খেতে পারিনা। তাহলে আজকের রান্নাটা আপনিই করে নিন প্লিজ। আজকে আমি মায়ের হাতের রান্না খাবো। প্লিজ মা।”

জেনিফার মুচকি হেসে বললো। আরশি সায়ানের দিকে তাকিয়ে আছে এই আশায় যে সায়ান হয়ত নিষেধ করবে। কিন্তু না। সায়ান বরাবরের মতোই চুপ করে রয়েছে। যেমনটা থাকতো সিনথিয়া এবং অপ্সরার বেলায়। আরশি যা আদেশ করতো সেটা অন্যায় হলেও মেনে নিতে হতো তাদের দুজনকে। সেদিনও সায়ান কিছু বলেনি। আজও সায়ান চুপ করে আছে। জেনিফার সায়ানের বুকে মাথা রেখে আরশির দিকে তাকিয়ে শয়তানি হাসি হাসলো। যার অর্থ ‘মাত্রই তো শুরু।’ আরশি কিছু না বলে রান্নাঘরে চলে গেলো।

সায়ান জেনিফারকে নিয়ে উপরে রুমে চলে এসেছে। জেনিফার সিড়ি দিয়ে উঠার সময় রান্নাঘরের দিকে তাকিয়ে মনে মনে বললো,

— “আজ তো সায়ানকে আমার কব্জায় করেছি। ধীরেধীরে এই রাজ্য এবং রাজত্ব আমার নামে করিয়ে নেবো। হাহা।”

অপ্সরার সাথে ডিভোর্সের পরই সায়ান অফিসের কলিগ জেনিফারকে বিয়ে করে নিয়েছে। আসলে সায়ান বিয়ে করতে চায়নি। জেনিফার-ই চক্রান্ত করে সায়ানকে নিজের মোহে ফেলে বাধ্য করেছে বিয়ে করতে।

_____________________________
সময়টা শীতের শুরু। চারিদিকে হিমেল বাতাস। সিনথিয়া কটেজের বারান্দায় দাঁড়িয়ে এতোক্ষণ অপরুপ সাজে সজ্জিত প্রকৃতি দেখছিলো। কটেজের বারান্দা থেকে অনেক দূর পর্যন্ত বিস্তৃত পাহাড় দেখা যায়। এখনো সূর্য উদয় হয়নি। হালকা আলো ফুটেছে মাত্র। চারিদিকে পাখির কিচিরমিচির ডাক। আকাশে অসংখ্য মেঘের ভেলা। দেখে মনে হচ্ছে সবুজ শ্যামল প্রকৃতি নীল-সাদা মেঘের বুকে মিশে গেছে। সিনথিয়া বিষ্ময়ে অভিভূত হয়ে তাকিয়ে দেখছে প্রকৃতির অপরুপ সৌন্দর্য্য।

— “সিয়া রেডি হয়ে নাও তাড়াতাড়ি। আমরা এখনই বের হবো।”

জাভেদের ডাকে হুস ফিরলো সিনথিয়ার। আরেকবার মনোমুগ্ধকর নয়নে আশেপাশে তাকিয়ে কটেজের ভেতরে এলো। তারা মূলত মেঘমাচাং কটেজে উঠেছে। কটেজটা বাশের তৈরি। একটা সাদা বাল্ব লাইট এবং ছোট্ট একটা ফ্যান আছে। তাও রাতে বিদ্যুৎ থাকে না। একটা মাঝারি সাইজের বেড আর মাঝারি সাইজের ওয়াশরুম। সাথে লাগোয়া একটা বারান্দা। কটেজটা মূলত পাহাড়ের গাঁ ঘেঁষে বাশের মাচা দিয়ে তৈরি। বারান্দায় বেতের একটা দোলনা আর ছোট্ট একটা টুল। বারান্দা থেকেই সূর্যোদয় দেখা যায়।

রেডি হয়ে দুজনে বেরিয়ে গেলো। প্রথমে একটা রেস্টুরেন্ট থেকে নাস্তা খেয়ে নিলো। তারপর জিপে চড়ে বসলো। জাভেদ-সিনথিয়া এবং কয়েকজন পরিবার মিলে সাজেক এসেছে। সবাই মিলেই দুইটা জিপ ভাড়া করেছে। সিনথিয়া জানালার পাশে বসলো পাশে জাভেদ। জাভেদের পাশে অন্য একজোড়া দম্পতি। গাড়ি চলা শুরু হতেই সিনথিয়া জাভেদের হাত চেপে ধরে বললো,

— “আমরা এখন কোথায় যাচ্ছি?”
— “কংলাক পাহাড়।”

সিনথিয়া খুশি হয়ে বাচ্চাদের মতো হেসে উঠলো। জাভেদের বাহুতে হেলান দিয়ে বসে বাহিরের প্রকৃতি দেখতে ব্যস্ত হয়ে পরলো। জাভেদ সিনথিয়ার চোখের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলো। সাজেক আসার পর থেকেই সিনথিয়ার আচরণ বাচ্চাদের মতো হয়ে গেছে। মেয়েটার ভেতরে যে একটা বাচ্চা সুলভ আচরণ আছে সেটা এখানে না এলে বুঝাই যেতো না।

গাড়ি আঁকাবাঁকা রাস্তা দিয়ে চলতে শুরু করেছে। চিকন একটা পথ। চারপাশে গাছপালা। বলতে গেলে অসাধারণ একটা পরিবেশ। বাতাসের ঝাপটায় সিনথিয়া বারবার চোখ বন্ধ করে নিচ্ছে। শীতল হাওয়ায় মন-প্রাণ জুড়িয়ে যাচ্ছে। চল্লিশ মিনিটের মতো রাস্তা পাড়ি দিয়ে গাড়ি থামলো। সবাই জিপ থেকে নেমে নাঠি নিলো। পাহাড়ে উঠতে এই লাঠি সাহায্য করবে। সিনথিয়া লাঠি হাতে নিয়ে জাভেদের দিকে তাকিয়ে বললো,

— “এটা দিয়ে কি করবো?”
— “এটা দিয়ে আমরা এখন পাহাড়ে উঠবো। চলো।”

সিনথিয়া আগে আগে হাটতে লাগলো। জাভেদ মুচকি হাসছে। কারণ সে জানে সিনথিয়া কতটা আনন্দিত হয়ে আছে। হালকা ঢালু পাহাড়ের উপরে উঠে অনেকটা হাপিয়ে গেছে সিনথিয়া। কেউ কেউ হাটতে শুরু করেছে। কারণ তারা এখনো কাঙ্ক্ষিত জায়গায় পৌছেনি। সেখানে পৌছুতে আর পাঁচ মিনিটের মতো পথ বাকি। সিনথিয়া পাথরে বাধানো উঁচু নিচু জায়গায় বসে পরলো। জাভেদ সিনথিয়ার সামনে বরাবর দাঁড়িয়ে আছে। জাভেদ আশেপাশে তাকিয়ে কাধের ব্যাগ থেকে পানির বোতল বের করে দিয়ে বললো,

— “এই নাও পানি খেয়ে নাও।”

সিনথিয়া নিকাব খুলে ঢকঢক করে অর্ধেক পানি শেষ করে বড় একটা নিশ্বাস নিলো। জাভেদের দিকে তাকিয়ে হাসলো। পানির বোতল জাভেদের দিকে বাড়িয়ে দিয়ে আবার নিকাব পরে নিলো। এখানে এখন তেমন মানুষ নেই। সবাই কংলাক পাহাড়ের উদ্দেশ্যে চলে গেছে। কয়েকজন মানুষ রয়েছে শুধু। তাই জাভেদ সিনথিয়াকে আড়াল করেই দাঁড়িয়েছে। যাতে দেখা না যায় বউটাকে।

পাঁচ মিনিট পথ হাটার পর অবশেষে তারা উপস্থিত হলো কাঙ্ক্ষিত সেই জায়গায়। জাভেদ ব্যাগ থেকে নিজের ক্যামেরা বের করে ভিডিও করতে শুরু করেছে। সিনথিয়া আগে আগেই এগিয়ে গেলো পশ্চিম দিকে। এইদিকে ভিউটা অত্যাধিক সুন্দর। জাভেদ ভিডিও করতে করতে সিনথিয়ার পেছনে গিয়ে দাঁড়িয়েছে৷ বাতাসে কাপড় চোপড় উড়িয়ে নিয়ে যাবে অবস্থা। সিনথিয়ার বোরকা উড়ছে যার কারণে শরীরের গঠন স্পষ্ট হয়ে উঠছে। জাভেদ সুঠাম দেহের এবং লম্বা হওয়ায় সিনথিয়ার পুরো শরীরকে কভার করে নিয়েছে। যার কারণে পেছন থেকে বুঝা যাচ্ছে না এখানে দুজন দাঁড়িয়ে আছে।

এই মনোমুগ্ধকর দৃশ্য দেখে সিনথিয়া বাকরুদ্ধ হয়ে গেলো। কথা বলার খেই হারিয়ে ফেলেছে। মেঘেরা যেনো পাহাড়ের বুকে নেমে এসেছে। সিনথিয়ার চোখ বেয়ে পানি গড়িয়ে পরলো। অত্যাধিক মুগ্ধতায় একেবারে অনুভূতি শূন্য হয়ে পরেছে। জাভেদ ঘাড় বাকিয়ে সিনথিয়ার দিকে তাকিয়ে হাসলো। সিনথিয়াকে নিজের মতো করে উপভোগ করতে দিয়েছে প্রকৃতিকে।

মেঘেদের ভেসে বেড়ানো দেখে সিনথিয়া সেদিকে তাকিয়ে আছে। অনেক দূরে চক্ষু নিবদ্ধ করতেই মনে হলো সবুজ পাহাড় এবং নীল আকাশা ভাই-ভাই। একেবারে মিশে গেছে। বোঝার উপায় নেই কোনটা আকাশ এবং কোনটা পাহাড়। মনে হচ্ছে সাদা মেঘে ছড়াছড়ি আকাশটা পাহাড়ের-ই অংশ। আবার মনে হচ্ছে সবুজ পাহাড়গুলো আকাশের-ই অংশ।

কংলাক পাহাড়ে বসার জন্য কাঠের কিছু বেঞ্চ আছে। একটা টঙ দোকান আছে। সেখান থেকে দু-কাপ চা ওর্ডার দিয়ে জাভেদ সিনথিয়ার পাশে বসলো। এদিকে মানুষজন কম। জাভেদ সিনথিয়ার দিকে তাকিয়ে বললো,

— “কেমন লাগছে?”
— “ভা..ভালো।”

জাভেদ মুচকি হাসলো। এরমধ্যে চা চলে এসেছে৷ জাভেদ চায়ের কাপ নিয়ে একটা কাপ সিনথিয়ার দিকে বাড়িয়ে দিলো। দুজনেই চা খেতে খেতে প্রকৃতি উপভোগ করতে লাগলো। পেছন থেকে জাভেদের পরিচিত একজন এসে বললো,

— “কি জাভেদ ভাই দেখছি বউকে ছাড়ছেন-ই না। ভাবি কি ভয় পায় নাকি?”

লোকটা হাসতে শুরু করেছে। জাভেদ দ্রুত উঠে দাঁড়িয়ে পরেছে সিনথিয়াকে আড়াল করে। সিনথিয়া নিকাব লাগিয়ে জাভেদের দিকে একবার তাকালো। আকাশের দিকে তাকিয়ে শুকরিয়া জানালো রবকে। এমন একজন চমৎকার মানুষের জীবনসঙ্গী করে দেয়ার জন্য।

যেখানে সায়ান সবার সামনে সিনথিয়াকে উপস্থাপন করতে চাইতো। আর এইদিকে এই মানুষটা সবার থেকে আড়াল করে রাখতে চায় সিনথিয়াকে। দুজনের মাঝেই আকাশ পাতাল তফাৎ। এসব ভাবনার মাঝে জাভেদ সিনথিয়ার পাশে বসে বললো,

— “কোথায় হারিয়ে গেলে?”
সিনথিয়া জাভের হাত জড়িয়ে ধরে কাধে মাথা রেখে বললো,
— “আপনি অনেক ভালো।”
— “হঠাৎ প্রসংশা? কি মতলবে?”
— “কোনো মতলবে নয়। যেটা সত্যি সেটাই বলেছি।”

জাভেদ হাসলো। আরো কিছুক্ষণ প্রকৃতি উপভোগ করে সবাই রওনা দিলো কটেজের উদ্দেশ্যে। জিপে উঠে সিনথিয়া নিজের শরীরের ভাড় জাভেদের উপর ছেড়ে দিলো। অনেক ক্লান্ত হয়ে গেছে। জাভেদের কাধে মাথা রেখেই ঘুমিয়ে গেছে।

.
আকাশে বিশাল আকারের চাঁদ উঠেছে। সেই চাঁদকে কিছুক্ষণ পরপর মেঘেরা ডেকে দিচ্ছে। মেঘ সরে যেতেই আবারও জোছনা ছড়িয়ে দিচ্ছে বিশাল আকারের চাঁদটা। চাদের আলোয় কটেজের ভেতরটা আলোকিত হয়ে আছে। সিনথিয়া কটেজের বারান্দায় শুয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে মুগ্ধ নয়নে। এখানে না এলে এভাবে চাঁদের আলো উপভোগ করা হতো না। হিমেল বাতাসে শরীর জুড়িয়ে যাচ্ছে।

জাভেদ একটু আগেই বাহিরে গেছে কি একটা কাজে। বাহির থেকে দরজা লক করে গেছে। সিনথিয়াকে বলেছে দশ মিনিটের মধ্যেই আসছে। ভয় যেনো না পায়।

দরজা খোলার শব্দে ঘাড় বাকিয়ে সেদিকে তাকালো সিনথিয়া। জাভেদ এসেছে দেখে আবার আকাশ দেখায় ব্যস্ত হয়ে পরলো। বাশের কটেজের ফাঁকে ফাঁকে রজনীগন্ধা ফুলগুলো গুজে দিলো জাভেদ। বাতাসের ঝাপটায় ফুলের সুভাস ছড়িয়ে পরেছে পুরো ঘরময়। পরিবেশটা আরো মনোমুগ্ধকর হয়ে উঠেছে।

জাভেদ নিজের কাজ শেষ করে এগিয়ে গেলো বারান্দার দিকে। সিনথিয়ার দিকে তাকাতেই চক্ষু শীতল হয়ে গেলো। মন-প্রাণ জুড়িয়ে গেলো পাতলা শাড়ি পরিহিতা রমণীকে দেখে। হৃদয়ে ভালোলাগার শিহরণ বয়ে গেলো। জাভেদ মুচকি হেসে সিনথিয়ার পাশে শুয়ে পরলো। বেশ কিছুক্ষণ দুজন জোছনা বিলাশ করার পর সিনথিয়া বললো,

— “ফুলগুলো কিভাবে পেয়েছেন?”
— “পাহাড়ি এলাকার এক ছেলেকে টাকা দিয়ে আনিয়েছি।”
— “কেনো?”

জাভেদ জবাব দিলো না। সিনথিয়াও আর কিছু জিজ্ঞেস করলো না। চাঁদটাকে মেঘে ডেকে দিয়েছে। জাভেদ হেসে বললো,

— “চাঁদটাও নিজেকে আড়াল করে নিয়েছে মেঘেদের বুকে লুকিয়ে।”

সিনথিয়া লাজুক হাসলো। জাভেদের হাসি দেখে গুটিয়ে গেলো একেবারে। পাহাড়ি এলাকার শীতল বাতাসে পুরো ঘরময় ফুলের সুবাসে ছড়িয়ে গেলো। চাঁদটা যেমন মেঘেদের বুকে নিজেকে লুকিয়ে নিয়েছে সেভাবেই সিনথিয়াও নিজেকে লুকিয়ে নিয়েছে জাভেদ নামক প্রেমময় স্বামীর কাছে।

চলবে,,,
® “নুরুন নাহার”