তুমি কেন আগে আসোনি? পর্ব-২১

0
699

“তুমি কেন আগে আসোনি?”

২১.
সবে মাত্র আলো ফুটতে শুরু করেছে। এখনো চারিদিকে হালকা অন্ধকার। ভোরের দিকে বৃষ্টি হয়েছিলো আজ। তাই এখন কিছুটা ঠান্ডা লাগছে। বৃষ্টি থামার পরে প্রকৃতিকে আরো বেশি স্নিগ্ধ লাগছে৷

এমনিতেই বৃষ্টি হলে প্রকৃতি সজীব হয়ে উঠে। স্নিগ্ধ লাগে। ভোরের পরিবেশ তো আরো মনোমুগ্ধকর হয়ে উঠে। যদি সেটা সাজেকের মতো জায়গায় হয় তাহলে তো প্রকৃতির সৌন্দর্য বর্ণনাতীত। সিনথিয়ার কাছে এখন তেমনই লাগছে সবকিছু। এই স্নিগ্ধ পরিবেশের সৌন্দর্য্যকে কিভাবে ব্যাখ্যা করবে বুঝে উঠতে পারছে না। তাইতো পলকহীন তাকিয়ে আছে ড্যাবড্যাব করে।

দূরে একটা গাছে একজোড়া পাখি বসে আছে একে অপরকে লেপ্টে। ভোরের দিকে বৃষ্টি হওয়ায় ভিজে গেছে। তাই পুরুষ পাখিটা মেয়ে পাখিকে বুকে জড়িয়ে রেখেছে। একটু পরপর ঠোঁটে এবং মাথায় নিজের ঠোঁট বুলিয়ে দিচ্ছে পুরুষ পাখিটা। মেয়ে পাখিটা আরো গুটিশুটি মেরে মিশে গেছে পুরুষ পাখিটার বুকে। পুরুষ পাখিটা সামনে তাকাতেই দেখলো তাদের মতো অনুরূপ করছে কটেজের বারান্দায় দাঁড়িয়ে থাকা একজোড়া দম্পতি। মেয়ে পাখিটা চোখ রাঙাতেই পুরুষ পাখিটা সেদিক থেকে নজর সরিয়ে নিজের কাজে মন দিলো।

ফজরের আযানের আগে থেকেই মুষলধারে বৃষ্টি নেমেছিলো। ফজরের সালাত শেষ করে সিনথিয়া বেশ কয়েকবার ভিজতে চেয়েছে বৃষ্টিতে। কিন্তু জাভেদের জন্য পারেনি। বলতে গেলেই চোখ রাঙিয়ে চুপ করিয়ে দিয়েছে সিনথিয়াকে। তাই পরেরবার কিছু না বলেই ফুড়ুৎ করে এসে উপস্থিত হয়েছে বারান্দায়। জাভেদের ধমকানিতেও কাজ হয়নি।

সিনথিয়া খুশিতে লাফিয়ে লাফিয়ে উপভোগ করেছে বৃষ্টিতে ভেজা। সিনথিয়ার খুশি দেখে জাভেদ আর কিছু বলেনি। নিজেও ভিজেছে সিনথিয়ার সাথে। বৃষ্টির বেগ কমতেই আকাশের দিকে তাকিয়ে ছিলো সিনথিয়া। আকাশ দেখে মনে হচ্ছিলো এই বুঝি সব মেঘেরা তাদের বারান্দায় নেমে আসবে। সিনথিয়া সেদিকে তাকিয়ে বললো,

— “মেঘগুলো এখানে নেমে আসবে মনে হচ্ছে। আমি মেঘ ধরবো।”
জাভেদ হেসে বললো,
— “পাগলি। মেঘ এখানে নামবে না৷”
— “কিন্তু আমি মেঘ ধরতে চাই। চাই মানে চাই।” অবুঝের মতো আবদার করলো।
— “ঠিকাছে। আগামীকাল আমরা হ্যালিপ্যাড যাবো। তখন তোমার ইচ্ছে পূরণ করে নিও। এখন এসো ভেতরে। ভেজা কাপড় বদলে নাও। নয়তো ঠান্ডা লাগবে।”
— “না৷ আমি সূর্যোদয় দেখবো। দেখুন মেঘ সরে গেছে।”
— “আচ্ছা দেখবে। আগে কাপড় বদলে নাও। কথা না শুনলে এবার কিন্তু খুব রেগে যাবো।”

জাভেদ কড়া কণ্ঠে কথাটা বলতেই সিনথিয়া বিড়ালছানার মতো চুপসে গেলো। গাল ফুলিয়ে ভেতরে চলে এসেছে। খুব দ্রুত লাগেজ থেকে কাপড় নিয়ে ওয়াশরুমে দৌড় দিয়েছে৷ যাইহোক, সূর্যোদয় সে দেখবেই দেখবে।

হালকা নীল রঙের পাতলা ফিনফিনে একটা শাড়ি গায়ে জড়িয়ে সিনথিয়া দৌড়ে এলো বারান্দায়। চুলগুলো-ও ঠিকঠাক মতো মুছে নি। সিনথিয়ার কান্ড দেখে জাভেদ হেসে ফেললো। বউটার গাল টেনে দিয়ে ওয়াশরুমে এলো। জাভেদ কাপড় বদলে তাওয়াল নিয়ে বারান্দায় এসে সিনথিয়ার পিছনে দাড়ালো। সিনথিয়ার চুল ভালো করে মুছে দিয়ে ভেতরে গেলো। ক্যামেরাটা তাদের পেছন বরাবর সেট করে আবার এসে দাঁড়িয়েছে সিনথিয়ার পাশে।

দৃষ্টির শেষ সীমানায় তাকিয়ে সিনথিয়ার মনে হলো সূর্যটা পাহাড়ের পেছন থেকে বেরিয়ে আসছে। নিজের আগমন সবাইকে জানানোর জন্য সূর্য তার সোনালি আভা চারিদিকে ছড়িয়ে দিয়েছে। সোনালি রৌদ্দুর আকাশে ঘুড়ে বেড়ানো মেঘের ভেলাদের-ও নিজের রঙে রাঙিয়ে দিয়েছে। প্রকৃতি যেনো নতুন সাজে সজ্জিত হয়েছে উঠেছে। মনে হচ্ছে অলংকার পরেছে প্রকৃতি।

ধীরে ধীরে সূর্যটা পাহাড়ের পেছন থেকে বেরিয়ে এসে গোল থালার মতো আকার ধারণ করেছে। প্রকৃতি ধীরে ধীরে আলোকিত হয়ে পরেছে। সূর্যের সোনালী কিরণে ঝলমলিয়ে গেলো চারিপাশ। সেই সাথে সিনথিয়ার মুখশ্রীতে আলো পরতেই জাভেদের দিকে ফিরে হাত চেপে ধরে বললো,

— “ইশ! এতো সুন্দর কেনো? আমার এখান থেকে যেতেই ইচ্ছে করছে না। সারাজীবন এখানে থেকে যেতে পারবো আমি।”

সিনথিয়া দুই হাত দুইদিকে মেলে এদিক থেকে সেদিকে ছুটাছুটি করছে আর বলছে,

— “সূর্যোদয় এতো সুন্দর। এই মেঘ, মেঘমালা, পাহাড়পর্বত এতো সুন্দর। না জানি জান্নাত কত সুন্দর হবে। জান্নাতের নিচে প্রবাহিত নহরসমূহ কত সুন্দর হবে।”

জাভেদ এক জায়গায় দাঁড়িয়ে মুচকি হাসছে সিনথিয়ার কান্ড দেখে। সিনথিয়া চোখ বন্ধ করে আকাশের দিকে মুখ করে রেখেছে। কিছু একটা মনে হতেই দৌড়ে জাভেদের কাছে এসে হাত ধরে বললো,

— “শুনুন আমি আপনার আদর্শ স্ত্রী হতে চাই। জাতে আমি জান্নাতে যেতে পারি। জান্নাতের মতো চিরস্থায়ী জায়গায় ভ্রমণ করতে চাই। আপনি আমাকে সাহায্য করবেন প্লিজ? প্লিজ..!”

সূর্যের কিরণ সিনথিয়ার চোখে-মুখে পরায় দারুণ লাগছে এই মুহুর্তে। চোখ দুটো চকচক করছে। হাস্যার কারণে দাঁত দুটোও ঝিকঝিক করে উঠছে। জাভেদের হাত ধরে সে কি অস্থিরতা প্রকাশ করছে সিনথিয়া। এখনই উত্তর চাই তার। জাভেদ হেসে বললো,

— “হু। সবসময় সাহায্য করবো। প্রমিস।”

সিনথিয়া খুশিতে আপ্লুত হয়ে আবারও এদিক সেদিক ছুটাছুটি করছে। হালকা রঙের পাতলা ফিনফিনে শাড়ির আঁচল বাতাসের সমান তালে তাল মিলিয়ে উড়ে বেড়াচ্ছে। এই মুহুর্তে সিনথিয়াকে একটা প্রজাপতির মতো লাগছে। যে খাঁচা থেকে মুক্তি পেয়ে মুক্ত আকাশে উড়ে বেড়াচ্ছে।

_____________________________
দুপুরের খাবার সেড়ে সবাই মিলে বেড়িয়ে পরলো আজ আবার। সিনথিয়া জাভেদের মুখের সামনে মুখ এনে বললো,

— “আমরা এখন কোথায় যাচ্ছি?”

অনেকক্ষণ হাটার ফলে পুরো মুখ ঘেমে গেছে সিনথিয়ার। গালদুটো লাল হয়ে গেছে। নাকটা ঘেমে গেছে। এই মুহুর্তে আরো মায়াবী লাগে সিনথিয়াকে জাভেদের কাছে। নাকটা টেনে দিয়ে বললো,

— “কংলাক ঝর্ণা দেখতে যাবো।”
— “ঝর্ণা? মানে ওই যে, পাহাড়ের উপর থেকে নিচে পানি নেমে আসে সেটা না?”
— “হ্যাঁ।”
— “সত্যি? আমি ঝর্ণা দেখবো? ইয়েস!”

সিনথয়ার ইয়েস বলা দেখে জাভেদ হো হো করে হেসে উঠলো। জাভেদের হাসি দেখে সিনথিয়া হঠাৎ করেই লজ্জা পেয়ে গেলো যেনো। তাড়াতাড়ি নিকাব নামিয়ে মুখ ঢেকে ফেললো।

কংলাক ঝর্ণা পর্যন্ত যেতে হলে একজন দক্ষ গাইডের দরকার তাদের। কারণ বন-জঙ্গল পেরিয়ে তারপর ঝর্ণায় যেতে হয়। সবাই হাতে মাঝারি সাইজের বাঁশ নিয়ে রওনা দিয়েছে তাদের কাংখিত গন্তব্যের উদ্দেশে। জাভেদ, সিনথিয়া সবার পেছনে হাটছে। সিনথিয়া কয়েকবার সবার আগে যেতে চেয়েছিলো জাভেদই হাত ধরে থামিয়ে দিয়েছে।

জঙ্গলের ভেতরে সরু রাস্তা দিয়ে সকলে সিরিয়ালি হাটছে। যারা সামনে আছে তারা গাইডের সাথে হালকা পাতলা কথা বলছে এলাকাটা নিয়ে। সিনথিয়া নাক-মুখ কুচকে জাভেদকে বললো,

— “আমরা সবার আগে হাটলে সবার আগে ঝর্ণার কাছে যেতে পারতাম। আপনি আমাকে থামিয়ে দিলেন কেনো? আমরা কেনো সবার পেছনে? বলুন।”

সিনথিয়া অসাবধানতা বশত পা ফেলতেই বনলতার সাথে পা পেচিয়ে পরে যেতে নিচ্ছিলো। জাভেদ কোমড় জড়িয়ে ধরে সোজা করে দাড় করিয়ে দিলো। হালকা চোখ রাঙিয়ে তাকাতেই সিনথিয়া আরো গাল ফুলিয়ে চুপ করে গেছে। কিছুটা সময় পর জাভেদ সিনথিয়াকে বললো,

— “তুমি হাটার সময় এদিক সেদিকে হেলে পরছো। তোমার হেলে পরার কারণে কোমড়ে ভাজ দৃশ্যমান হয়ে উঠছে সিয়া। যা দেখে আমার মনেই উত্তেজনা জেগে উঠছে। সেই আমিই কি করে অন্য পুরুষদের মনে উত্তেজনা জাগতে দেই নিজের স্ত্রীর কোমড়ের ভাজ দেখতে দিয়ে? তুমি জানো না সিয়া, একজন পুরুষ কোন নজরে একজন নারীর দিকে তাকায়। যদি নারীরা বুঝতো তবে কখনোই নিজেকে খোলামেলা ভাবে সবার সামনে প্রকাশ করতো না। আমি বরাবরই খুব বেশি ঈর্সাবোধ করি তোমাকে নিয়ে। কেউ তোমাকে দেখুক, তোমার কোমড়ের ভাজে নজর পড়ুক, তোমার ঘনপল্লব বিশিষ্ট আঁখির দিকে মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে থাকুক এটা আমি কখনোই সহ্য করবো না। নেভার এভার। বুঝেছো?”

জাভেদের কথা শুনে সিনথিয়া দাঁড়িয়ে পরেছিলো। কথা শেষ হতেই হালকা করে মাথা নাড়লো সিনথিয়া। জাভেদ মুচকি হেসে বললো,

— “এমনো কিছু হাদিস আছে যেটা শুনলে খুব আশ্চর্য হবে। মক্কার সম্ভ্রান্ত বংশের নারীরা যখন কোনো প্রয়োজন রাস্তায় বের হতো, যদি দেখতো কোনো পুরুষ সামনে দিয়ে আসছে তারা তৎক্ষনাৎ বসে যেতো। যাতে করে সেই পুরুষ তাদের হাটার স্টাইল কেমন সেটা বুঝতে না পারে।”

সিনথিয়া ধীরে ধীরে নজর নামিয়ে ফেললো। এতোক্ষণ জাভেদের মুখের দিকেই তাকিয়ে ছিলো। দাঁড়িয়ে আছে একেবারে জড়সড় হয়ে। জাভেদ সিনথিয়ার ভ্রুযুগল নিকাব দিয়ে ঢেকে দিয়ে বললো,

— “মনে আছে মুসা আলাইহিস সালামের সাথে যেই নারীর বিয়ে হয়েছিলো সেই নারীর হাটার স্টাইল পর্যন্ত আল্লাহ কুরআনুল কারীমে তুলে ধরেছেন। বুঝতে পারছো কতটা লাজুক ছিলেন তিনি। কতটা সম্ভ্রান্ত ছিলেন। যার কারণে স্বয়ং আল্লাহ সেই মহিয়সী নারীর চলার ধরণ পর্যন্ত কুরআনে বর্ণনা করেছেন। ‘তাদের দুজন নারীর মধ্যে একজন নারী লজ্জা-জড়িত পদক্ষেপে তার(মূসার) নিকট এলো।’ [সূরা কাসাস: ২৫] অন্য আয়াতে আল্লাহ সমস্ত নারীদের উদ্দেশ্যে বলেছেন, ‘তারা যেন এমন সজোরে পদক্ষেপ না করে যাতে তাদের গোপন আভরণ প্রকাশ পেয়ে যায়।’ [সূরা নূর: ৩১] এবার বুঝেছো আমাদের পেছনে হাটার কারণ?”

.
অবশেষে সবাই মিলে কাঙ্ক্ষিত স্থানে এসে পৌছালো। জাভেদ শক্ত করে সিনথিয়ার হাত ধরে পানিতে নামল। হাটু সমান পানি। দুজনে ঝর্ণার কাছাকাছি গিয়ে দাড়ালো। সিনথিয়া জাভেদের পেছনে নিজের অর্ধেক দেহ আড়াল করে দাঁড়িয়ে ঝর্ণা দেখছে। পাহাড় থেকে নেমে আসা পানির স্রোত দেখে সিনথিয়া আপ্লুত হয়ে বললো,

— “আমি ভিজবো।”
— “এখন না। এখানে অনেক মানুষ।”

পানির ছলাৎছলাৎ শব্দে নিজেকে দমিয়ে রাখা কঠিন। জাভেদ নিজেও বুঝলো। সে নিজেও চাইছে ঝর্নার পানিতে ভিজতে। সেখানে সিনথিয়াকেই বা কি মানা করবে। কিন্তু ঝর্ণার কাছাকাছি যাচ্ছে না তারা কারণ সবাই মিলে হুলুস্থুল কান্ড বাধিয়ে রেখেছে ঝর্ণার কাছে। নারী-পুরুষ সবাই সমানে ভিজে যাচ্ছে। যেসব নারী থ্রিপিস বা টপস বা জিন্স এবং গেঞ্জি পরে এসেছে তাদের অবস্থা একেবারেই করুন। যদিও সেটা তারা আমলে নিচ্ছে না। সিনথিয়া তাদের দিক থেকে নজর সরিয়ে জাভেদের পেছনে আরেকটু আড়াল হয়ে দাঁড়িয়ে গেলো। এই মুহুর্তে গিয়েই সিনথিয়া উপলব্ধি করলো জাভেদের বলা প্রতিটা কথা। ইশ! কি বিচ্ছিরি লাগছে মহিলাগুলোকে। অথচ তাদের সেদিকে হুশ নেই। একজন আরেকজনের গায়ে যেনো হুমরি খেয়ে পরছে।

— “কি ভাই ভাবিকে কি এখানে দাড় করিয়ে রাখবেন নাকি?”

ট্রিপে তাদের সাথে আসা একজোড়া দম্পতির মধ্যে একজন প্রশ্ন করলো। সিনথিয়া এবার পুরোপুরি জাভেদের পেছনে লুকিয়ে শার্ট খামছে ধরে রেখেছে। জাভেদ লোকটার দিকে তাকিয়ে হেসে জবাব দিলো,

— “সবাই নিজেদের ইচ্ছা পূরণ করে নিক। তারপর আমরা যাবো।”
— “তাহলে এক কাজ করতে পারেন আপনি। যেই গাইড আমরা এনেছি তার সাথে আরো একজন আছে। আপনি তাকে হায়ার করুন। সবাই চলে গেলে নিজেদের মতো সময় কাটিয়ে তারপর ফিরতে পারবেন। আর এদিকে ঘন্টা পর পর পর্যটক আসে। ততক্ষণে আপনাদের অসুবিধে হবে না। তবে একটু এক্সট্রা টাকা দিতে হবে আরকি।”

জাভেদের কাছে ব্যাপারটা ভালো লাগলো। সে কিছুক্ষণ চিন্তা করেই লোকটার বলা অনুযায়ী কাজ করলো। সবাই নিজেদের মতো সময় কাটিয়ে ফেরার প্রস্তুতি নিচ্ছে। তখনই একদল মেয়েরা এসে উপস্থিত হয়েছে এই স্থানে। এদের সবার গায়ে একই গেঞ্জি। হয়ত কোনো কোম্পানি বা কোনো সংস্থা থেকে একসাথে ট্রিপে এসেছে। জাভেদ স্বস্তি পেলো। কারণ সবাই চলে গেলে তারা শুধু দুজন মানুষ থাকে। আর বলা যায়না কখন কি বিপদ ঘটে। জাভেদদের ট্রিপে আসা সবাই চলে যেতেই জাভেদ কাধের ব্যাগ একপাশে রাখলো। সিনথিয়ার হাত ধরে এগিয়ে গেলো ঝর্ণার কাছাকাছি।

সিনথিয়া তো আর নিজের মধ্যে নেই। ঝর্ণার নিচে দাঁড়িয়েই লাফালাফি শুরু করে দিয়েছে। জাভেদ বেশ কয়েকবার থামতে বলেও থামাতে পারেনি। এতো বেশি উল্লাসিত হয়ে পরেছে মেয়েটা। শেষে উপায় না পেয়ে সিনথিয়া কোমড় চেপে ধরে থামিয়ে দিলো। ঠান্ডা পানি মাথার উপর পরতেই যেনো শরীরে হিম ধরে যাবে অবস্থা। সিনথিয়া ঢলে পরলো জাভেদের বুকে। মিনমিন করে বললো,

— “আমি এরকম আরো অনেক অনেক ট্রিপে যেতে চাই আপনার সাথে।”

দুজনে বেশ কিছু ছবি তুলে, ভিডিও করে, নিজেদের মতো সময় কাটিয়ে তারপর এখন পাথরের উপর বসে আছে। সিনথিয়ার বিশ্বাস হচ্ছে না সে ঝর্ণার নিচে দাঁড়িয়ে ভিজেছে। এখনো স্বপ্ন স্বপ্ন লাগছে। ব্যাগ থেকে শুকনো একটা বোরকা বের করে সিনথিয়ার দিকে বাড়িয়ে দিলো জাভেদ। সিনথিয়া সেটা হাতে নিয়ে অবাক হয়ে বললো,

— “এসব কবে এনেছেন?”
— “যখন আপনি প্রজাপতির মতো উড়াউড়িতে ব্যস্ত ছিলেন কটেজের বারান্দায়। এখন এটা পরে নাও ভিজাটা খুলে। জলদি করো।”

সিনথিয়া দ্রুত হাতে জিলবাব চেঞ্জ করে নিলো। ভিজা জিলবাবটা জাভেদ পলিথিনে ভরে ব্যাগে ভরে ফেললো। নিজেও শুকনো একটা গেঞ্জি পরে নিলো। আরো কিচ্ছুক্ষণ সেখানে বসে থেকে রওনা দিলো কটেজের উদ্দেশ্যে।

আসার পথে বাঁশটা কোনো কাজে না লাগলেও ফেরার পথে বেশ কাজে দিয়েছে। এটা না থাকলে ঢালু পাহাড় বেয়ে উপরে উঠা বেশ মুসকিল হতো। ফেরার পথে দুজনে চান্দের গাড়িতে করে কটেজে ফিরেছে। বোরকার ভেতরের ভেজা কাপড়-চোপড় বদলে সিনথিয়া শুয়ে পরেছে। শীতল ঠান্ডা পানিতে ভিজায় দেহ-মন শীতল হয়ে আছে এখনো। গাড়িতে বসতেই চোখ ভেঙে ঘুম আসছিলো যেনো। কোনোরকমে খোলা রেখেছিলো চোখ দুটো।

কটেজে ফিরার পর নিজেকে আর ধরে রাখতে পারলো না দুজনের একজনও। দুজনেই ঘুমের দেশে পাড়ি দিয়েছে।

চলবে,,
® ‘নুরুন নাহার’