তুমি নামক অনুভূতি পর্ব-০২

0
1002

#তুমি_নামক_অনুভূতি
#পর্ব:২
#Lutful_Mehijabin (লেখা)

জারার ঘুমমাখা রক্তিম লালাভ মুখের দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করতেই ইয়াদের চোয়াল শক্ত হয়ে এলো। বিরক্তে ঠোঁট যুগল ‘চ’ উচ্চারিত করতে গিয়ে থেমে গেল। তৎক্ষণাৎ ইয়াদের পকেট থাকা মোবাইলটা মৃদু আওয়াজে বেজে উঠলো। রাগ মিশ্রিত পরাপর দুটো নিশ্বাস ত্যাগ করে সে ওঠে দাঁড়ালো। ঠোঁট যুগল জিহ্বা দ্বারা ভিজিয়ে নিয়ে কপালে দু আঙ্গুল রেখে কর্কশ গলায় বলল,

–ইডিয়েট গার্ল!

বলে এক সেকেন্ড ও ব্যায় করেনা ইয়াদ। সঙ্গে সঙ্গে ঘর থেকে বেরিয়ে যায়। তার এখন বিরক্ত সাথে চরম ভাবে রাগ লাগছে! তাই শব্দ করে দরজা চাপিয়ে চলে যায়।

জারা রক্তিম বর্ন ধারণকৃত মুখটা নিমিষেই আকাশের কালো মেঘের ন্যায় হয়ে ওঠে। ইয়াদের ভয়ঙ্কর কন্ঠস্বর তার শরীরে কাঁপুনি সৃষ্টি করে। চোখ যুগলে আবির্ভাব ঘটে আসীম ভয়। সীমাহীন অস্থিরতার কাজ করতে তার মধ্যে। বক্ষ পিঞ্জরের হৃদ স্পন্দনের আওয়াজ যেনো বাহির থেকে নিজেই শুনতে পাচ্ছে জারা। সে তো কখনো ভয় পাই না। তাহলে, আজ কী এমন হলো যে ভয় নামক অনুভূতি তাকে গ্রাস করে নিয়েছে। কী আছে ওই কন্ঠস্বরে যা তার শরীরের কাঁপুনি সৃষ্টি করলো? বিষন্ন মন নিয়ে ট্রলির সামনে বসে পড়লো সে। টলিতে থাকা বইগুলোর গায়ে ভালোবাসার পরশ এঁকে দিল। সে একদমই বুঝতে পারছে না কেন ইয়াদ অকস্মাৎ রেগে গেল? যার পরিপ্রেক্ষিতে জারার মন গহীনে ইয়াদের প্রতি বিন্দু পরিমাণ ঘৃণা সৃষ্টি হলো।
টলি জারার গল্পের বই দিয়ে টুইটুম্বুর। শুধু মাএ একটা শাড়ি বিদ্যমান যা সে বাসায় থেকে এনেছে।বইগুলো দেখেই ইয়াদ হতভম্ব হয়েছে। হয়তো তার রাগ হাওয়া স্বাভাবিক। টলিতে অবস্থিত শাড়িটা নিয়ে জারা ওয়াশরুমের দিকে পা বাড়াল।

___
দরজায় মৃদু ঠকঠক আওয়াজ কর্নপাত হতেই আমার শান্তির ঘুম ভেঙে গেল। আর শুয়ে থাকতে পারলাম না। ওঠে বসে পাশে থেকে চশমা নিয়ে পড়ে নিলাম। তৎক্ষণাৎ মনোযোগ দিলাম বাইরে থাকে ভেসে আসা মেয়েলি কন্ঠস্বরে।

–ভাবি ভেতরে আসব?

হঠাৎ ‘ভাবি’ ডাক শুনে হৃদয় গহীন আশান্ত হয়ে উঠলো। ডাকটা আমি মেনে নিতে পারলাম না। প্রচন্ড অস্বস্তি হতে লাগলো। নেএপল্লব হতে টপটপ করে অশ্রু বিসর্জন হতে আরম্ব করলো। মনে পড়ে গেল আমি বিবাহিত। আর কোনও আম্মুর কাছে যেতে পারব না। আম্মুর হাতে খাবার খেতে পারব না। নিজেকে বড্ড একা মনে হচ্ছে। আম্মুর কথা মনে পড়ছে। আম্মুকে খুব দেখতে ইচ্ছে করছে। পরক্ষণে দরজার বাইরে থাকা মেয়েটা ভিতরে প্রবেশ করলো। সঙ্গে সঙ্গে আমি চোখের পানি মুছতে আরম্ভ করলাম।

–সরি ভাবি, তোমার ঘুমে বিরক্ত করার জন্য। আম্মু তোমাকে ডাকছে। খেতে চলো।

মেয়েটার কথার প্রেক্ষিতে আমি নির্বাক হয়ে রইলাম।

মেহেরের নিরবতা আর জলে ভরপুর চোখ দেখেই ইতি আন্দাজ করতে পারছে যে মেহেরের মন খারাপ। তাই সে মেহেরকে হাসাতে ব্যাস্ত হয়ে উঠলো। মেহেরের দিকে দৃষ্টি আবদ্ধ করে বলল,

–ভাবি তুমি বোধহয় আমাকে চিনতে পারনি। আমি ইতি। সমুদ্র ভাইয়ার বড়ো ফুপুর বড়ো মেয়ে। তোমার নাম কী গো পিন্সেস ভাবি?

ইতি আপুর কথাই আমি কিছুক্ষণ চুপ থেকে অস্ফুটস্বরে বললাম,

–মেহের।

–ওয়াও ভাবি তোমার নাম তো অনেক সুন্দর একদম তোমার মতোন। আচ্ছা ভাবি তুমি কিন্ত
অনেক ছোট। কোন ক্লাসে পড়ো?

–ক্লাস টেন এ।

–সত্যিই ভাবি তুমি অনেক ছোটো। আচ্ছা বাদ দেও। যাও ফ্রেশ হয়ে এসো। খিদে পেয়েছে তো?

–হুম।
___
ফ্রেশ হয়ে ইতি আপুর সাথে খাবার ঘরে চলে এলাম। এসে দেখলাম বাসার প্রায় সবাই খাবার খাচ্ছে। জিজু বাদে অন্য কাউকেই চিন্তাতে পারলাম না। একটা ব্যাপার আমার মস্তিষ্ক বুঝতে পারল না। কাল এতো মানুষ দেখলাম কিন্তু আজ কেউ নেই। বিষয়টা আমার কাছে রহস্যময় মনে হচ্ছে। নেএপল্লব মেলে আপুকে খুঁজতে শুরু করলাম। আপুর কে তন্যতন্য করে খুঁজেও কোথাও পেলাম না। ইতি আপু আমাকে ছোফার উপর বসালেন। এরপরই আমার শাশুড়ি আম্মুর সঙ্গে এটা অর্ধ বয়স্ক মহিলার আগমন ঘটলো। শাশুড়ি আম্মু মুচকি হেসে হুইল চেয়ার টেনে আমার পাশে এলেন। আমি তার দিকে একপলক দৃষ্টি নিক্ষেপ নতজানু হয়ে রইলাম। খেয়াল করলাম তার হাতে একটা খাতা একটা আর কলম। সে আমার নিকটবর্তী এসে খাতাটা আমার দিকে এগিয়ে দিলান। আমি কিছু বুঝে ওঠার আগে ইতি আপু বলল,

–ভাবি খাতাটা হাতে নেও।

সাথে সাথে আমি আম্মুর কাছে থেকে খাতাটা নিলাম। দেখলাম আম্মু লিখেছেন,

–মেহের মা তোমাকে বড্ড মিষ্টি লাগছে। তুমি কী খাওয়া দাওয়া ঠিক মতো করো না? এত চিকন কেন, হুম? এখন থেকে ঠিক মতো খাবে। জান মা তোমারা দুই বোনই আমার কাছে হীরে-মুক্তার মতো দামি। তোমাদের দেখার পর মন প্রচন্ড ইচ্ছে জাগছে তোমাদের কাছে গল্প করতে।

লেখাটা পড়ে আমি স্তব্ধ হয়ে গেছি। তারমানে শাশুড়ি আম্মু বধির। কথা বলতে পারেন না। ভেবেই অনেক খারাপ লাগতে শুরু করলো। তাই তো বলি এত মিষ্টি হাসি যার। হাসি দিয়েই আমার মন জয় করে ফেলেছে। সে কেন কাল রাতে আমার সাথে একটা কথাও বললো না। বিষয়টা নিয়ে কালকে চিন্তা করেও উত্তর পাই নি। কিন্তু এখন বুঝতে পারছি। আমার গভীর চিন্তার মাঝে আম্মু খাতাটা নিয়ে আবার কিছু লিখে আমাকে দিলেন।

–জলদি মা তাড়াতাড়ি খাও। অনেক বেলা হয়ে গেছে। সমুদ্র সেই সকালে বেড়িয়ে গেছে। আর হ্যাঁ, তুমি আর ইয়াদ বাদে আমার সবাই খেয়েছে। তোমার জারা আপুর ও খাওয়া শেষ।

লেখাগুলো পড়ে আমি আস্তে করে আম্মুকে বললাম,

–ঠিক আছে আম্মু এখুনি খাচ্ছি।

___

খাওয়া শেষ করে ইয়াদ ঘরে চলে এসেছে। জারার সাথে কোনকথা না বলেই ওয়াশরুমে গেছে।

বিছানার উপর বসে গভীর প্রেমে লিপ্ত ছিল জারা। এই প্রেম যেই সেই প্রেম না। এই প্রেম হলো নিঃস্বার্থ প্রেম। যেই প্রেমে প্রেমিক বা প্রেমিকার কারোই হারিয়ে যাওয়ার ভয় নেই। যা এই বিশাল ধরনীর বুকে কাঁচের ন্যায় স্বচ্ছ প্রেম। যাকে বলা হয় বই প্রেম। জারা গভীর ভাবে বইয়ের পাতায় ডুবে ছিল। ফলে ইয়াদের উপস্থিতি সে টের পাইনি।

ইয়াদ ফ্রেশ হয়ে বাতরুম থেকে বেরিয়েই জারার দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো। পূর্বের ন্যায় জারাকে বইয়ের পাতায় ডুবে থাকতে দেখে তার বিরক্তি চরম পর্যায়ে পৌঁছে গেল। রেগে গিয়ে ট্রি টেবিলের উপর অবস্থিত পানি ভর্তি গ্লাসটা ইচ্ছে করে ফেলে দিল।

মূহুর্তে কাঁচের গ্লাসটা ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে গেল। সাথে সাথে জারা বই থেকে দৃষ্টিপাত সরিয়ে ফ্যালফ্যাল করে ইয়াদের মুখের দিকে তাকাল। জারা কিছু বুঝে উঠার আগেই ইয়াদ বলল,

–এই মেয়ে সারাদিন বইয়ের পাতায় ডুবে থাক কেন? আর ইউ মেট?

এত ঝাঁজালো কন্ঠস্বর শুনে জারা নিশ্চুপ হয়ে রইলো। জারার উওরের অপেক্ষা না করে ইয়াদ শান্ত সুরে বলল,

— আজকে আমারা চট্টগ্রামে যাচ্ছি।ছো পাঁচ মিনিটের মধ্যে রেডে হবে। গড ইট?

কথাগুলো শেষ করেই ইয়াদের টেবিলের ড্রয়ার থেকে রিভলবার বের করে পিঠের পিছনের দিকটাই গুঁজে নিল। জারার দিকে কঠোর দৃষ্টি নিক্ষেপ করে ঘর থেকে বেরিয়ে গেল।

বিভালবার দেখে মৃগী রোগীদের ন্যায় কাঁপতে আরম্ভ করলো জারা। ভীষণ ভীত দৃষ্টি! তার মনে হতে লাগলো ইয়াদ খারাপ লোক। তাহলে কী ইয়াদ গুন্ডা, মাস্তান? ভেবেই জারা শিউরে উঠলো। সে ঠোঁট যুগল চেপে কান্না আটকাতে মরিয়া হয়ে উঠলো।
____
এদিকে খাওয়া শেষ করে এলোমেলো করে শাড়ি পেঁচিয়ে দু হাতর মুঠো ভর্তি চুরি পড়ে বসে আছি। চিন্তা করছি উনার কথা। আমার চিন্তার মধ্যেই উনি ভেতরে প্রবেশ করলেন। ভয় পেয়ে আমি এলোমেলো শাড়ি নিয়ে দাঁড়িয়ে পড়লাম। সাথে সাথেই আমার অন্যমনস্ক থাকার জন্য অঘটন ঘটে গেল। আমার,,
(#চলবে)