#তুমি_নামক_প্রাপ্তি
#part:22
#Suraiya_Aayat
কিঞ্চিৎ হকচকিয়ে আরিশের মেকআপ রুমে ঢুকলেন আফসানা বেগম ৷
হঠাৎ করে কেউ দরজা ধাক্কা দিতেই আচমকাই আরিশ ও খানিকটা অপ্রসতুত হয়ে পড়লো, এতোটাই জোরে দরজাটা ধাক্কা মেরেছেন যাতে করে মনে হচ্ছে সব রাগ ক্ষোভ দরজার ওপর কেউ মেটাচ্ছে ৷
আরিশ খানিকটা অপ্রস্তুত হয়ে পড়েছিল, নিজেকে একটু সামলে নিয়ে উনাকে দেখে সাথে সাথে উঠে দাঁড়াল , নিজের হাব ভাব এর মাধ্যমে এমন ভাব ভঙ্গি ও প্রকাশ করতে চায় না যাতে সহজে ওর আসল পরিচয়টা বুঝতে পারে আফসানা বেগম ৷ এখনো তার সঠিক সময় হয়নি ৷ হয়তো আর খুব বেশিদিন নেই ৷
আফসানা বেগম আরিসের রুমের ভীতর ঢুকে চারিদিকে খানিকটা চোখ বুলিয়ে নিলেন এবং খানিকটা বোঝার চেষ্টা করছেন হয়তো যে এই ঘরটা আসলে কিসের জন্য ব্যাবহার করা যেতে পারে ৷ খানিকক্ষন ধরে এদিক ওদিক তাকানো পর তার আর বুঝতে খুব একটা অসুবিধা হলো না যে এটা একটা মেকআপ রুম ৷ রুমটাকে ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করে নিয়ে এবার সামনের দিকে তাকালেন ৷ আরিশের হাতে ডায়লগের স্ক্রিপ্ট আর একটা হাত পকেটে ঢুকিয়ে রেখেছে ৷ সাদা রঙের ঘরটায় আর আরিশের ফর্সা চামড়ার ওপর কালো রঙের শার্ট টা যেন নজর কেড়ে নিচ্ছে , চুলগুলো আগোছালো আর ঠোঁটের নীচের তিলটা আকর্ষণীয় ৷
আরিশকে সামনে দেখি উনি যেন প্রাণ খুঁজে পেলেন ৷ অনেকটা হন্তদন্তভাবে আরিশের সামনে গিয়ে বলল “আরিশ বাবা কেমন আছো তুমি ? তুমি এতদিন কোথায় ছিলে ? জানো তোমাকে ছাড়া আমার মেয়ে কতটা কষ্টে দিন পার করেছে ৷”
উনার চোখের কোনে জল নোনা জল গুলো জমে আসতে লাগল ৷ মেয়ের কষ্টে কষ্ট পেয়েছেন খুব, এমনটাই বোঝাচ্ছে ৷
আরিশ খানিকটা ভ্রু কুঁচকে উনার দিকে তাকাতেই উনি বলে উঠলো
” আরিশ বাবা তুমি আমাকে চিনতে পারছ না! আমি তোমার আফসানা আন্টি , আরুর মা , তোমার শাশুড়ি ৷”
আরিশ এবার খানিকটা অবাক চোখে তাকিয়ে বলল “এই আরুটা আবর কে?”
আরিশের কথা শুনে আফসানা বেগম অবাক হয়ে বললেন
” তুমি আরুকে চিনতে পারছে না আরিশ ! ও তোমার ওয়াইফ বিনতে আরূশি খান ৷”
আরিশ এবার কুচকানো ভ্রু জোড়া প্রসারিত করে বলল
” ওহহ আপনি ঐ মহিলার কথা বলছেন ! বুঝলাম ৷ আমার মনে হয় ওই মহিলার মাথায় সমস্যা আছে , নাহলে কোন মহিলা একটা পরপুরুষকে নিজের স্বামী বলে দাবি করে বুঝিনা !”
আফসানা বেগম আরিশের কথা শুনে অবাক হয়ে গেলেন ৷
” নিজের স্ত্রীকে কেউ পাগল মহিলা বলেনা বাবা ৷ তুমি হয়তো জানো না যে ও তোমাকে ঠিক কতটা ভালবাসে, তুমি ছাড়া এই পাঁচ পাঁচটা বছর আরশিয়ানকে নিয়ে কতটা সমস্যার মধ্যে দিয়ে কাটিয়েছে ৷ ও যে তোমাকে ছাড়া বাঁচবে না ৷”
আরিশ এবার খানিকটা রাগী মুডে বলল
” একটা কথা বলি আপনাকে , এই যে আপনাদের এই সংসারের ক্যাচালের মধ্যে আমাকে জড়াবেন না ৷ এমনিতেই উনার পাগলামিতে আমি অনেক প্যারার মধ্যে আছি , আর তাছাড়া ওনাকে আমি দেখিনি আগে আর চিনিও না ৷”
আর তাছাড়া আমার নাম আরিস না, আমার নাম নিহান আবরার প্রফেশনের দিক থেকে একজন সিনেমার আর্টিস্ট ৷”
আফসানা বেগম আরিসের ঠোটের খানিকটা নীচে যে তিলটা ছিল সেটা তিনি লক্ষ্য করে বললেন,,,
” আমি জানি তুমি মিথ্যা বলছো, তোমার মুখে এমন মিথ্যা মানায় না বাবা ৷ আরিশের মুখেও এখানে তিল ছিল , তুমি কেন মিথ্যা বলছো,তোমাকে যে মিথ্যা বললে মানায় না বাবা ৷”
” আমাকে না হয় মিথ্যা বললে মানায় না, আপনাদের মিথ্যা বললে খুব মানাই তাইনা !”
আরিসের কথা শুনে উনি একটু ভড়কে গেলেন, কাঁচুমাচু মুখে বললেন
” আচ্ছা, তোমার আমাকে বিশ্বাস করতে হবে না কিন্তু আমি তোমাকে এখন আরিশের ছবি দেখাচ্ছি তাহলে নিশ্চয়ই তুমি আর আমাকে অবিশ্বাস করবে না ৷”
এটা বলে উনি কাঁপা কাঁপা হাতে ব্যাগ থেকে ফোনটা বার করে আরিশের একটা ছবি নিয়ে আরিশের সামনে ধরলো ৷
“এই দেখো বাবা , এটা আরিশের ছবি ৷ হুবহু তুমি ৷ ”
ছবির দিকে তাকিয়ে একবার দৃষ্টিপাত করে ফোন এর থেকে চোখ সরিয়ে নিয়ে আরিশ বলল
“হতেই পারে একই রকম দেখতে দুটো মানুষ এই পৃথিবীতে হয় ৷”
আফসানা বেগম অত্যান্ত দাবির সাথে বললেন
” না এমনটা হয় না, এটা কখনো সম্ভব নয় ৷ তাদের মধ্যে হাজার ও মিল থাকলেও একটামাত্র পার্থক্য বা ব্যবধান থাকবেই , কিন্তু তোমার আর আরিসের মধ্যে ব্যবধান আমি খুঁজে পেলাম না ৷ এখন বলো কেন এই লুকোচুরি খেলছ বাবা ৷”
” দেখুন আন্টি আমার যনে হয় আপনার কোথাও ভুল হচ্ছে, আর তাছাড়া আমি এখন একটু ব্যস্ত আছি তাই আপনার কথা বলা শেষ হয়ে থাকলে আপনি এখন আসতে পারেন, আমার এখনো মেকআপ বাকি ৷”
আফসানা বেগম ফোনটা ব্যাগে ঢুকিয়ে বললেন
” আমি জানি তুমিই আরিশ ,তাই তুমি যা করছো ভালো করছো না বাবা, এর জন্য যদি খারাপ কিছু হয় বা আমার মেয়ের কোন ক্ষতি হয় তাহলে আমি কিন্তু তোমাকে ছাড়বো না ৷”
কথাটা বলে আফসানা বেগম রুম থেকে বেরিয়ে গেলেন ৷
উনি বেরিয়ে যেতেই আরিশ উচ্চস্বরে হেসে বললো
” সেদিন সবটা সামনে আসবে সেদিনের জন্য অপেক্ষা করুন আন্টি ৷ আর আমার আরুপাখির কোন ক্ষতি আমি থাকতে অন্তত হতে দেব না৷”
মিনহাজ সাহেব রুমে ঢোকার পর আরু বেশ খানিকক্ষণ সময় নিলো আর মিনহাজ সাহেবকেও আরো খানিকটা সময় দিয়েছে নিজেকে সামলে নেওয়ার জন্য ৷ প্রায় 45 মিনিট হয়ে গেছে ৷ আর্শিয়ান চুপচাপ কার্টুন দেখছে , লারার কাছেই বসে আছে ৷ আর্শিয়ান দুষ্টামি খুব কম করে, হয়তো আরু যেভাবে বলে সেভাবে চলার চেষ্টা করে ৷ ছেলের থেকে চোখ সরিয়ে নিয়ে মিনহাজ সাহেবের রুমের দরজার দিকে তাকাল আরূ ৷
আর কোন কিছু না ভেবে উনার রুমের দিকে গেলে,ওনার রুমের দরজায় নক করতেই উনি ভেতর থেকে বলে উঠলেন
” কামিং ৷”
ওনার কথা শুনে আরু ভিতরে ঢুকলো , গিয়ে দেখলো ওনার চোখমুখ জুড়ে বিষন্নতা, হয়তো কোন কিছু ব্যাপার নিয়ে নিজের মাঝেই গুমড়ে গুমড়ে মরছেন আর সেটা কাউকে শেয়ার করলে হয়তো স্বস্তি পেত ৷ কিন্তু উনি আরুর সাথে তার মনের দুঃখটা শেয়ার করবে কি আরু সেটা জানে না ৷
আরুকে দেখে উনি আরুকে চেয়ারে বসতে বলে বললেন
” এই যে আমার আরু মা যে তা কেমন আছো তুমি !”
” এই তো আঙ্কেল ভালো আছি ৷আপনি কেমন আছেন ?”
” আমিও ভালো আছি ৷”
আরু ওনার মুখের অবস্থা দেখে বলল
” আপনার চোখমুখ কিন্ত বলছে না যে আপনি ভালো আছেন ৷”
উনি একটু হকচকিয়ে গেলেন, বিব্রত হয়ে বললেন
” নাহ, তোমার ধারনা ভুল, আমি ভালো আছি ৷ আর এসব বাদ রাখো বলে যে কেমন ঘুরলে তোমরা ওখানে”
” ভালোই sir ৷”
আরু ওদের ঘটে যাওয়া বিপদের কথা ওনাকে বললো না, বললে হয়তো উনি নিজের চিন্তারমাঝে আরুকে নিয়ে আরো একরাশ চিন্তা করবেন তাই ৷
উনি চুপ রইলেন, ওনার মন মানসিকতা একদমভালো নেই ৷
আরু একটু থেমে বলল
” আই থিংক আপনি কোন কিছু নিয়ে চিন্তিত ,তাই আপনার চিন্তার কারনটা যদি বলতেন sir ৷”
উনি মুখ থেকে হাত নামিয়ে নরম গলায় বললেন
” নাহ, আই এম ওকে, তুমি এটা কাজ করো তো এই ফাইলটা একটু চেক করে দাও ৷”
( আরুর দিকে ফাইল এগিয়ে দিয়ে )
আরু ওনার এমন কাজে বুঝলো যে উনি হয়তো কিছু বলতে চাইছেন না, তাই ফাইলটার কথা বললো, আচ্ছা বেশ উনি যখন বলতে চাইছেন না তখন ওনাকে আর জোর করা ঠিক হবে না ৷ কতটা ভেবে আরু ফাইলটা হতে নিয়ে বেরিয়ে যেতে গেলেই বলল
” sir আমার ছেলে এসেছে আজকে, আপনি যদি একবার ওর সাথে কথা বলতেন ৷”
আর্শিয়ানের কথা শুনে মিনহাজ সাহেবের মুখ চকচক করে উঠলো ৷ খুশি হয়ে বললেন
” এটা এতখন বললে না যে, আচ্ছা তোমার ছেলেকে আমার কাছে নিয়ে এসো ৷’
আরু মাথা নিড়িয়ে বেরিয়ে গেল ৷
💞
“স্যার এখন তো লাঞ্চ টাইম আপনি কফি খাচ্ছেন যে ,লাঞ্চ করবেন না ?”
মিনহাজ সাহেব মাথা নিচু করে বললেন
” আমি খুব কষ্টের মধ্যে আছি আরিশ ৷”
উনার এমন বিধ্বস্ত অবস্থা দেখে আরিশ বলে উঠলো ” কি হয়েছে কোন সমস্যা ! আইমিন মনে হচ্ছে ব্যক্তিগত কিছু ৷ সমস্যাটা বলুন আমি যদি কোনভাবে সমাধান করতে পারি ৷”
মিনহাজ সাহেব চোখমুখ কুঁচকে মাথা নাড়িয়ে বলল “আল্লাহও যেন চান না যে এই সমস্যার সমাধান হোক সেই জন্যই হয়তো বারবার সে আমাকে হাতছানি দিয়ে চলে যায় ৷”
ওনার কথা শুনে মনে হচ্ছে নিশ্চয়ই ওনার ব্যক্তিগত জীবনে খুবই বড় একটা সমস্যার কথা উনি বলছেন,
আরিশ ওনার হাতে হাত রেখে বললেন
“আপনি আমাকে বিশ্বাস করে বলতে পারেন ৷”
মিনহাজ সাহেব আরিশের হাতে হাত রেখে বলল “আজকে আমার স্ত্রীর সাথে দেখা হয়েছিল আরিস , আমার ছেলে মেয়ের খোঁজে নিতে চেয়েছিলাম তার কাছে, সে বলল যে সে বলতে পারবে না , আর তার সাথে যোগাযোগ করার জন্য কোন চেষ্টা না করি, তার সংসার নিয়ে সে ভালো আছে, এত বছর পর সে চাই না তার সংসারটা আর নষ্ট হোক ৷ জানো তো ওর চোখে জল আর আভিমানের ছাপ স্পষ্ট ছিলো, হয়তো আমার মতো সে ও বড্ড বেশি কষ্ট পাই ৷”
আরিশ অবাক হয়ে বলল
” আপনার সেই স্ত্রী যে আপনাকে ছেড়ে চলে গেছিল আপনার সন্তানদেরকে নিয়ে ৷”
” হমম, সেই স্ত্রী ৷ আজ দীর্ঘ 7 বছর পর তার মুখোমুখি হলাম ৷এর আগে একবর তাকে তন্ন তন্ন করে খুঁজে পেয়েছিলাম প্রায় 16 বছর আগে, তখন সে সবে তার নতুন সংসারে ঢুকেছে ৷ আমি আজোও তাকে ফিরে পেতে চাই কিন্ত সে চাই না ৷”
আরিশ মনে মনে যা সন্দেহ করছে তাই কি ঠিক ?
যদি তেমনটা হয় তাহলে খুবই খারাপ হবে ৷
#চলবে,,,,