তুমি যে আমার পর্ব-২৩+২৪

0
813

#তুমি_যে_আমার🥀
#Writer_Nondini_Nila
#Part_23

একদিন
রাত বারোটা বাজে তখন কলিং বেল বাজতে লাগলো। যেন ডাকাত পরেছে। এমন শব্দের নিবিড় চৌধুরী তরিগড়ি করে ঘুম থেকে উঠে পরলো। এমন বেল বাজাচ্ছে কে? উঠে গিয়ে রুমের লাইট জ্বালালো। সারা রুমে আলোকিত হয়ে উঠলো। আর সাথে সাথে কলিং বেল বাজানো বন্ধ হয়ে গেলো। শব্দের আওয়াজ না পেয়ে উনি কপাল কুঁচকে র‌ইলো। বর্ষার মাও দপ করে উঠে গেছে বিছানায় থেকে জেগে উঠে।
উঠেই বলে উঠলো,

-‘ আমার বর্ষা এসেছে..!!’

নিবিড় চৌধুরী চমকে স্ত্রীর দিকে তাকালো। তিনি ঘরির দিকে তাকিয়ে ভাবছে এতো রাতে কে এলো? আর কেই বা এমন অসভ্যের মতো বেল বাজাতে লাগলো? উনি স্ত্রীর কথার উত্তর না দিয়ে বারান্দার গিয়ে উঁকি মারলো। কি ভেবে বের হতে যাবে। তার আগেই বর্ষার মা ছুটে গেলো নিচে। তাকে এমন ছুটতে দেখে বর্ষার বাবা ও পেছনে যাচ্ছে। অসুস্থ মানুষ আবার পরে টড়ে ব্যাথা না খায় দেখার জন্য।

বর্ষার মা দরজা খুলতে যাবে পেছনে থেকে বর্ষার বাবা চেঁচিয়ে বললো, – ‘ দরজা খুলো না। কে না কে এমন বেয়াদবের মতো কলিং বেল বাজালো‌। রিক্সি ব্যাপারটা।’

বর্ষার মা তার কানে ও নিলো না কথা গুলো। উনি দরজা খুলে দিলেন।বর্ষার বাবা চিৎকার করে দরজা লাগাতে এসে থমকে গেলো। বর্ষার মা কাকে যেন জরিয়ে ধরে কাঁদছে। তিনি হালকা করে তাকে দেখলো। এ তো তার একমাত্র মেয়ে। তার প্রিন্সেস।
বর্ষার শরীরে কালো গেঞ্জি ও হলুদ প্লাজো। আগের থেকে অনেকটা শুকিয়ে গেছে। চোখের নিচে কালি পরে গেছে। হাতে ও পায়ে ব্যান্ডেজ। দাঁড়িয়ে থাকতে পারছে না। বর্ষার মা মেয়েকে ধরে কান্না করছে বর্ষার বাবা ছুটে গিয়ে বর্ষার মাকে বর্ষার থেকে সরিয়ে দিলো। আর বর্ষার শুকনো মুখটার দিকে তাকালো কি অবস্থা হয়েছে মেয়ের। তবু ও মেয়েকে ফিরে পেয়ে শান্তি পাচ্ছেন। বর্ষা দাঁড়িয়ে থাকতে পারছে না তারাতাড়ি ওকে রুমে নিয়ে আসে। আর ডাক্তার কে কল করে।সাথে পুলিশ কেও।ক্ষমতা শীল লোকরা যখন তখন ডাক্তার পায়। বর্ষা রুমে এসেই জ্ঞান হারিয়েছে। ডাক্তার এসে ওকে দেখছে। বর্ষার মা মেয়ের হাত ধরে বসে আছে। পুলিশ এসে হাজির। অফিসার আদিল নিবিড় চৌধুরী এর সামনে এসে দাড়ালো।

‘ আপনার হারানো মেয়ে পেলেন কোথায়? এতো দিন পাগলা কুকুরের মতো দৌড় পারলাম তাও পেলান না। আর আজ একটু রেস্টে ছিলাম মেয়ে একদম বাসায় চলে এলো How is that possible?’

‘সেসব তো আমিও জানি না অফিসার!হঠাৎ আমার ঘুম ভেঙে যায় কলিংবেলের শব্দে আর আমি এক নাগাড়ে কলিংবেলের শব্দ পাই। রুমের লাইট জ্বালাতে শব্দ টা বন্ধ হয়ে যায়। আর তারপর আমার স্ত্রী নিজে এসে দরজা খুলে দেখে আমাদের মেয়ে বাইরে দাঁড়িয়ে আছে। বিষয়টা দেখে আমিও স্তব্ধ হয়ে গেছি।যাকে এত দিন ধরে খুঁজে পাচ্ছিলাম না। সে নিজেই দরজার সামনে এসে দাঁড়িয়ে আছে।’

‘আপনি কি বলতে চান আপনার মেয়ে একাই ফিরে এসেছে?’

‘না ওর যে অবস্থা ও এক কদমও একা চলতে পারবেনা।’

‘ তাহলে? আপনি আরও কাও কে কি দেখেছেন ওর সাথে?”

‘তা দেখি নি। কিন্তু বারান্দা থেকে আমি একটা গাড়ির আওয়াজ পেয়েছি। কিন্তু গাড়িটা দেখতে পাইনি। আমার মনে হয় গাড়ি টাই বর্ষাকে এখানে পৌঁছে দিয়েছি।’

‘গাড়িটা কি রংয়ের নাম্বার কি কিছু কি একটু হলেও দেখেছিলেন?’

‘বললাম তো গাড়িটা আমি দেখিনি শুধু আওয়াজ শুনেছি।’

‘আপনার বাসার দারোয়ান তো জ্ঞান হারিয়ে পড়ে আছে।’

‘এটা ওই লোকটার ই কাজ।’

‘কিডন্যাপ করে মুক্তিপণ চাইল না আবার আপনার মেয়েকে নিজে থেকে ফিরিয়ে দিয়ে গেল তাদের উদ্দেশ্য কি হতে পারে?’

‘সেটাইতো আমি বুঝতে পারতাছি না কিন্তু আমার মেয়ের উপর যে খুব অত্যাচার করেছে। সেটা আমি নিশ্চিত আমার কলিজা আমার বর্ষার কি অবস্থা করেছে? দেখেছেন তো আপনি। মেয়ে আমি ফেরত পেয়েছি। কিন্তু অদের কে আপনি ছাড়বেন না। যেভাবেই হোক ওদের খোজ লাগান। বাসার বাইরে সিসি ক্যামেরা আছে আপনি একবার চেক করে নিন অফিসার।’

‘ওকে ডোন্ট ওয়ারি কিডনাপার টাকে তো আমরা খুঁজে বের করবই। আপনি চিন্তা করবেন না মেয়ের যত্ন নিয়ে খুব তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে যাবে ডাক্তার তো বলল দুর্বলতা জন্য এমন হয়েছে।’

‘হ্যা।’

নিবিড় চৌধুরী চলে গেল ডাক্তারের সাথে কথা বলতে। আদিল ও পিছন পিছন আসলো। আর ডাক্তার কি বলছে শুনলো সাথে একজন বর্ষাকে দেখে নিলো। তারপর নিঃশব্দে বেরিয়ে এলো। বর্ষাকে স্যালাইন দেওয়া হয়েছে। ঠিকমতো খাওয়া-দাওয়া করা হয়নি। আর হাতে ও পায়ে আঘাত দেখে বুঝতে পেরেছে শক্ত কিছু দিয়ে বেঁধে রাখা হয়েছিল এজন্য ক্ষত হয়েছে। আর কোন গভীর আঘাত নেই শরীরে। দুদিনের মধ্যেই সেরে উঠবে ইনশাআল্লাহ।

নিবিড় চৌধুরী স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে মেয়ের পাশে বসে মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগল। বাইরের ক্যামেরা চেক করে আদিল ও নিবিড় চৌধুরী কিন্তু ব্যাডলাক যে সময়টাতে বর্ষাকে গেটের বাইরে দাঁড় করিয়ে রেখেছে সেই সময়টার ফুটেজ নাই‌। নিবিড় চৌধুরীও আদিল দুজনে অবাক হয়ে দুজনের দিকে তাকালো।এটা কি করে সম্ভব? তাহলে কেউ তাদের সাহায্য করেছে নাহলে এটা পসিবল হতো না।
কপালে চিন্তার ভাঁজ ফেলে বেরিয়ে এলো দুজনে‌। তাদের ভরষা এখন বর্ষা।ও সুস্থ হলে সব বলতে পারবে। সেই মোতাবেক কাজ করতে হবে। আদিল বিদায় নিয়ে চলে গেলো।

দারোয়ান কে পানির ছিটা দিয়ে জ্ঞান ফেরানো হয়েছে তিনিও কিছুই বলতে পারেনি। দুইদিন পর বর্ষা অনেকটা সুস্থ হয় কথা বলে না চুপচাপ থাকে সবসময়। দু-একটা কথা ছাড়া ওকে দিয়ে কেউ কথা বলাতে পারে না। মাথা নিচু করে পাথর হয়ে বসে থাকে বর্ষা।কি যেন চিন্তা ভাবনা করে সবসময় ওর মা বোন আত্মীয়স্বজন সবাই এসে পরেছে ওর খবর শোনা মাত্র।সবাই অনেক কথা বলছে, ও কোথায় ছিল? কে ওকে ধরে নিয়ে গিয়েছিল? এতদিন কিভাবে কাটলো? নানা কথা জিজ্ঞেস করে কিন্তু ও কিছু বলে না উল্টা চেচামেচি করে এসব জিজ্ঞেস করলে। তাই এখন আর কেউ কিছু বলে না। এসবের জন্য পুলিশ আর বাড়িতে আসেনি নিবিড় চৌধুরী মেয়ের ক্ষতি হওয়ার ভয়ে তাদের কেউ আসতে বারণ করে দিয়েছে।
আজ তিন বর্ষা বাড়ি এসেছে।ও বিছানায় গড়াগড়ি খাচ্ছে ঘুম আসছে না। মা ওর সাথে শুয়েছে। ওকে একা রাখেনা। ও ডিম লাইটের আলোতে মায়ের দিকে ছলছল চোখে তাকিয়ে আছে। তারপর আস্তে আস্তে বিছানা থেকে উঠে পা টিপে টিপে রুমের বাইরে বেরিয়ে এলো। দরজার বাইরে এক পা রাখতেই কিসের যেন শব্দ পেয়ে মুখ চেপে ধরে আবার পেছনে চলে গেলো।বাবা জেগে আছে। আবার রুমে গিয়ে শুয়ে পড়ল ঘুম চলে আসছে। ও জোর করে নিজের ঘুম ছুটিয়ে তাকিয়ে আছে। 10 মিনিট পর আবার পা টিপে টিপে বেরিয়ে এল খুব সাবধানে। সোজা চলে গেল বাবার লাইব্রেরীতে। যেখানে বইয়ের ছড়াছড়ি। সব বই ঘটে গুটে একটা হলুদ কালারের ফাইল হাতে নিলো। তারপর আবার পা টিপে টিপে মেইন ডোর এর কাছে চলে এলো।
হাত-পা কাঁপছে বর্ষার। এখনো শরীর অনেকটাই দুর্বল। তবু ও অনেক কষ্টে দরজা খুলে বেরিয়ে এলো। দারোয়ান চাচা গেটের কাছে নাই। কে সরিয়ে ও জানে‌। দীর্ঘশ্বাস ফেলে ফাইলটা বুকে চেপে ধরে গেটের বাইরে চলে এলো।

দক্ষিণ দিকে হাটতে লাগলো। পাঁচ মিনিট হাঁটার পর একটা লাল রঙের গাড়ি দেখতে পেল। যেখানে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে কালো পোশাক ও মাক্স পরিহিত একজন লোক। সে আর কেউ না তূর্য। তূর্য বর্ষার গুটি গুটি পায়ে হেঁটে আসা দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। এখানে ল্যাম্পপোস্টের আলো নাই অন্ধকার কিন্তু আকাশে চাঁদের আলো আছে। যাতে বর্ষার পরনে সাদা স্কার্ট ও খয়েরি টপস মৃদু মৃদু দেখা যাচ্ছে। বর্ষার সামনে এসেই ওর হাতের ফাইলটা ওর দিকে বাড়িয়ে দিলো। তূর্য ফাইল না ধরে বর্ষার নরম হাত ধরলো। বর্ষা চমকে তাকালো। আর হাত ছাড়াতে চেষ্টা করলো‌। তূর্য না ছেড়ে আরো শক্ত করে ধরে হেচকা টানে নিজের সাথে মিশিয়ে কোমড় জড়িয়ে নিলো। বর্ষার সারা শরীর ঝাকুনি দিয়ে উঠলো ভয়ে আঁতকে উঠলো। ঢোক গিলেএ দিকে ওদিক তাকাচ্ছে। তূর্য কখন যে নিজের মুখের মাক্স খুলেছে বর্ষা জানে না। কপালে চুমু দিতেই বর্ষার ছটফটানি চলে গেল। ও চোখ বন্ধ করে তূর্য এর স্পর্শ অনুভব করতে লাগলো। এই স্পর্শ ওর খারাপ লাগে না। কিন্তু মানুষ টাকে খারাপ লাগে ঘৃণা লাগে।

‘ছারুন আমাকে? আপনার যেটা দরকার সেটা তো দিলাম এটা রেখে এবার আমাকে মুক্তি দিন।’

তূর্য বর্ষার কথার উত্তর দিল না। মাথা ঝুঁকিয়ে বর্ষার কোমড় থেকে একহাত উঠিয়ে ওর মাথায় পেছনে চুল শক্ত করে ধরে ঠোঁটে চুমু খেলো। তারপর ঝট করেই বর্ষাকে ছেড়ে সরে দাঁড়ালো। বর্ষা দাঁড়িয়ে হাপাচ্ছে। তূর্য ওর ঠোট মুছে বর্ষার হাত থেকে ফাইল টা টান দিয়ে নিজের হাতে নিয়ে নেয়। আর বলে,

‘গেট আউট।’

বর্ষা আর তাকালো না পেছন ঘুরে চলে গেলো। রুমে যেতেই মা জেগে গেলো আর বলল কোথায় গিয়েছিলি তুই? অবাক হয়ে।
বর্ষা ঢোক গিলে বলে, ‘ পানি খেতে।

#চলবে…….

(আজ রিচেক করা হয়নি। তাই বানান ভুল হতে পারে।)

#তুমি_যে_আমার🥀
#Writer_Nondini_Nila
#Part_24

নিবিড় চৌধুরী মাথা নিচু করে ইজি চেয়ারে বসে আছে। তার বাসায় গমগমে পরিস্থিতি। পুলিশ এসে সারা বাসা চেক করছে। লজ্জায় তিনি মাথা তুলতে পারছে না। পুলিশ যেখানে তার প্রটেক্ট করতে ব্যস্ত থাকে। তারা এখন জেরা করছে তাকে। খবরে পেপারে ছাপা হয়েছে। বড় বড় অক্ষরে তার নাম। তিনি তার অসাবধানতায় দরকারি ফাইল হারিয়েছে। অনেক কষ্টে অনেক তথ্য জোগাড় করেছিলো পুলিশরা। যার ভিত্তিতে একজন বড় মাপের মাফিয়াকে শাস্তি দেওয়ার প্রমাণ ছিলো। সাথে আরো অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য ছিলো সব এক রাতে মিসিং। সিসি ক্যামেরা চেক করেও সেই সময়ের কিছু পায়নি।এবার এই নিয়ে সবাই নিবিড় চৌধুরী কে সন্দেহ করছে। সবাই আশংকা করছে তার মেয়েকে কোন মাফিয়া কিডন্যাপ করেছিলো।আর মুক্তি পণ হিসেবে সিউর ওই তথ্য গুলো হাতিয়ে নিয়েছে।
নিবিড় চৌধুরি নিজের মেয়ের জন্য আইনের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে। সবার ধারণা এখনই একটাই।সব বড় বড় পুলিশ অফিসারা ও তন্ন তন্ন করে খুঁজেও তার মেয়ের সন্ধান এক ফোটা ও বের করতে পারে নি।আর এখন হুট করেই তার মেয়ে কোন ঝামেলা ছাড়াই বাসায় ফিরে এসেছে কাকতালীয়ভাবে।এর পেছনে হয়তো নিবিড় চৌধুরীর গোপন কোনো হাত আছে। তিনি হয়তো কিডন্যাপার দেয় সাথে গোপনে কোন
চুক্তি করে ছিল যা সবার থেকে আড়াল করে রেখেছে।এভাবে ফাইলটা তো হারিয়ে যেতে পারে না তার বাসায় এত পাহারাদার থাকতেও এসব নাটকীয় ঘটনা কীভাবে ঘটছে?
সম্মানিত একজন মানুষ নিবিড় চৌধুরী সবসময় সৎ ও নিষ্ঠা ভাবে তিনি তার দায়িত্ব পালন করেছেন।কিন্তু এবার তার দুর্বলতায় আঘাত করেছে বলেই হয়তো তিনি তার সত্যের পথ থেকে সরে দাঁড়িয়েছে। এটা আশঙ্কা করছে সবাই।

বাসায় আত্নীয় ও আছে। তারা বর্ষাকে এতো দিন পর বাড়ি আসার খবর শুনে দেখতে এসেছে। দুঃখী দুঃখী মুখ করে দেখতে আসলেও তাদের মধ্যে আছে খোটা দেয়ার ভাব আর তাচ্ছিল্য করা কথা। বর্ষার পাশে বসে একজন মহিলা বলে উঠলো,

‘আহারে কি অবস্থা হয়েছে মেয়েটার? কি অত্যাচারী না করেছে! তোমার বাপ মার কি অবস্থা হয়েছিল পাগলের মত হয়ে গেছিল তোমার জন্য! আল্লার রহমতে ফিরে আসছো ভালই হইছে।তোমার ফিরে আসায় তো খুশি হয়েছি। কিন্তু একটা মেয়ে এভাবে দশ বারো দিন অজানা অচেনা পুরুষের সাথে ছিল। এটা তো খারাপ কথা লোকে কত কিছু বলতাছে খারাপ খারাপ কথা। কিন্তু আমরা কিছু বলি না‌। কিন্তু সত্যি তোমারে বিয়া দিব কেমনে আর সমাজে তোমার বাপ মায় মুখ দেখাইবো কেমনে। সেটাই ভাবতাছি তোমার জন্য খারাপ লাগতাছে।’

বর্ষার পাশে ওর ফ্রেন্ডরা বসে ছিল।ওরাও দুপুরের পরে এসেছে। ওদের সামনে এই কথাটা বলে উঠলো। এই মহিলাটা বর্ষাদের বাড়ির পাশের বাসার। দুঃখী দুঃখী মুখ করে কথা বললেও উনি যে ওদের অপমান করলো সেটা স্পষ্ট।বর্ষা চুপচাপ থাকার মেয়ে না। অন্য সময় হলে এই অপমানের মোক্ষম জবাব দিয়ে দিতো। কিন্তু আজকে কিছুই বলছে না মাথা নিচু করে চুপ করে বসে আছে। ও অবশ্যই এই মহিলাটির কথা কানেই নেয় নি ও তো চিন্তায় বিভোর নিজের বাপিকে নিয়ে। সমস্ত কাজ করেছে ও কিন্তু তার শাস্তি পেতে হচ্ছে বাপিকে। কষ্টে ওর বুকটা ফেটে যাচ্ছে।

বর্ষা কিছু না বললেও ওর ফ্রেন্ডরা এসব মানতে পারলো না। তিশা বলে উঠলো,

‘ আপনার যদি বর্ষা দের নিয়ে এত চিন্তা আর খারাপ লাগা থেকে থাকে। তাহলে এটা বুঝেন না এসব বললে ওদের খারাপ লাগা কমবে না বরং বাড়বে। কথার তালে তো মানুষকে ভালোই কথা শোনাতে পারেন। সান্তনা বাণী না দিয়ে এখানে থেকে জানতো যতসব।’

মহিলাটা দাত কটমট করে তাকিয়ে চলে গেলো।
তিশা বর্ষার হাত ধরে বললো,

‘ তুই তো এমন নিরবে সব সহ্য করার মতো মেয়ে ছিলি না। আজ কি হলো ওই মহিলার কথাগুলো সহ্য করলি কেন?’

বর্ষার বললো, ‘ বাপির জন্য কষ্ট লাগছে রে। ‘

‘ সবাই আঙ্কেল কে ভুল বুঝছে। কষ্ট পাস না সব ঠিক হয়ে যাবে। ‘

‘হুম।’

‘ কতোদিন পর আমরা সব ফ্রেন্ডরা একসাথে আছি। তোর জন্য তো আমাদের আড্ডা জমতোই না। সবাই মন খারাপ করে থাকতো।’

বর্ষা তিশার দিকে তাকিয়ে শাওনকে মনে করলো।

‘ শাওন এর কি খবর?’

‘ জানিনা কেন? অবাক হয় তিশা শাওন এর কথা জিজ্ঞেস করায়।

‘ জানিস না মানে তোরা না প্রেম করতি!’

‘ করতাম কিন্তু তার তো খবর নাই‌।’

‘ মানে??

‘ মানে হলো তোর হারানোর পর থেকে আমিও শাওন এর খোঁজ হারিয়ে ফেলি। এর মাঝে আমার ফোন হাত থেকে পরে গেছিলো জগে। আর নষ্ট হয়ে গেলো। ওর সাথে পরে ফোন ঠিক করার পর কথা হয়েছিলো একটু কিন্তু বেশি না। ‘

‘ ওহ্।’

বর্ষা মনে মনে ভাবছে। থাকবে কি করে সে তো তোকে ব্যবহার করেছে স্বার্থে। এখন আর এতো ভালোবাসার অ্যাক্টিং করা প্রয়োজন নাই তাই করে না।
আমাদের আশেপাশের মানুষ গুলোই আমাদের প্রতিনিয়ত ঠকিয়েছে। আর আমরা তাদের সাথে চলাফেরা করেছি। তাদের মুখোশ এর আড়ালের চেহারা টা না চিনেই।

বর্ষা সবার সাথে কথা বলেই বিদায় দিলো। ওরা চলে যেতেই বাপির সাথে কথা বলতে বেরিয়ে এলো।
বাহরে এখন কেউ নাই। কিছুক্ষণ আগেও পুলিশের ছড়াছড়ি ছিলো সবাই চলে গেছে। বাপি তার ইজি চেয়ারে বসে আছে। বর্ষা চুপচাপ তার পাশে গিয়ে দাঁড়ালো। এটা করা ছাড়া ওর আর কিছু করা ছিলো না। তূর্য এর শর্ত ও এটাই ছিলো। তাকে এই ইনফেকশন গুলো আমায় দিতে হবে। না হলে তিনি বাপিকে মেরে দিতো।
আমি কি করে সেটা মানতে পারতাম। বাপি কে এই অসম্মানিত আমি করলাম। এটা না করলে তাকে যে বাঁচাতে পারতাম না।

নিবিড় চৌধুরী মেয়ের উপস্থিতি টের পেয়ে মেয়ের দিকে তাকায়। এতো কষ্টের মধ্যেও মেয়ে মুখটা দেখে তার শান্তি লাগছে।
তিনি বর্ষার মাথায় হাত বুলিয়ে বললো,
‘ কি হয়েছে আমার প্রিন্সেস এর? মলিন মুখে দাঁড়িয়ে কেন?’

বর্ষা ছলছল চোখে তাকিয়ে আছে। বাপি ভেতরে ভেতরে ক্ষতবিক্ষত হয়েছে কিন্তু আমাকে বুঝাতে চাচ্ছে না। তাকে আমি কতো কষ্ট দিলাম ওই পাষাণ লোকটার জন্য।

‘ সবাই তোমাকে ভুল বুঝছে বাপি।আমার ভালো লাগছে না।’

‘ মন খারাপ করো না। সত্যি সামনে আসবেই। সত্য চাপা রাখা যায় না। এই সব কষ্টের মাঝেও আমি খুশি কেন জানো?’

‘ কেনো বাপি? ফুপাতে ফুপাতে।

‘ আমার প্রিন্সেস আমার কাছে চলে এসেছে। এটা আমার জন্য সব চেয়ে আনন্দের।’

বর্ষা ওর বাপিকে জরিয়ে ধরলো। নিবিড় চৌধুরী মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে।

এদিকে

‘অফিসার আদিল আপনার কি মনে হয়? ব্যারিস্টার নিবিড় চৌধুরী মেয়ের জন্য আইনের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করলো?’

‘ করতেই পারে। উনার মেয়ে উনার জীবন শুনেছি। তাকে ফিরে পাওয়ার জন্য এমনটা করতেই পারে।’

‘ কিন্তু উনি একজন ন্যায়পরায়ণ লোক। এমনটা উনি করবেন বিশ্বাস হচ্ছে না।’

আদিল আয়েশ করে কফিতে চুমুক দিচ্ছে আর ফোন টিপছে। ওর মাথায় থেকে এই চিন্তা দূর হয়েছে এতেই শান্তি ও।

‘ তুমি এতোটা শান্ত আছো কি করে?’

‘ আছি কারণ আমার আর ওনার মেয়েকে হন্নে হয়ে খুঁজতে হবে না। একটা শান্তিতে ঘুমাতে পারবো।’

‘ কিন্তু আমার তো শান্তি নাই‌‌। এই কাজটা তো আমাকে দিয়েছে। ফাইলটা আমাকে সন্ধান করতে হবে।’

‘ কাজে লেগে পরেন। বেস্ট অফ লাক।’

আদিল চিন্তামুক্ত হয়ে কফি খাচ্ছে। আর হাবিব মুখ কালো করে চলে গেলো।

#চলবে…….