তুমি যে আমার পর্ব-২৫+২৬

0
785

#তুমি_যে_আমার🥀
#Writer_Nondini_Nila
#Part_25

নিদ্রার জ্বরের জন্য বাসা থেকে বের হতে পারে নি। সেদিন চলে যেতে চাইলেও যেতে পারেনি। এই জ্বরের মধ্যে ওকে ছাড়ে নি অভ্র এবং বাসার কেউ ই। অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা থেকে গা কাঁপিয়ে জ্বর এসেছিলো নিদ্রার। চোখ মেলে তাকাতে পারে নি। অভ্র হাসপাতালে থেকে ছুটি নিয়ে ওর পাশে থেকে নিজে চিকিৎসা করেছে।
অজ্ঞানের মতো পড়ে ছিলো আর আবোলতাবোল অনেক কথাই বলেছে। সাথে অনেক কিছু ঘটে গেছে দুই দিনে। দুইদিনে পর নিদ্রার জ্বর একটু কমলো। দুইদিন মরার মতো বিছানায় পড়ে ছিল। দুদিন পর ও যেন ও সজ্ঞানে উঠে বসলো। দুদিন ওর সাথে কি ঘটেছে ও কিছুই জানে না। জ্বরে ও এতটাই কাতর হয়েছিল সেটাও বুঝতে পারছে। কিন্তু আবছা আবছা অনেক কিছুই মনে পড়ছে আস্তে আস্তে। যতই সবকিছু মনে পড়ছে ততই নিদ্রা চিন্তার মাত্রা বেড়ে যাচ্ছে। ওযে জ্বরের ঘোরে অনেক বড় আকাম কাজ করে ফেলেছে সেটা কিছুক্ষণের মাঝেই পরিষ্কার হয়ে গেলো।
নিজের এতদিনের সমস্ত অনুভূতি জ্বরের ঘোরে প্রকাশ করে ফেলেছে। তারপর কি হয়েছে? কিছু মনে করতে পারছে না! তখন বোধহয় বেশি কাতর ছিল। এই মুখ অভ্র কে কিভাবে দেখাবো। ও আমাকে কি ভাবছে!
এবার নিশ্চয় ও আমার সাথে বন্ধুত্ব নষ্ট করে দেবে। আমাকে ঘৃণা করবে। ওর সাথে আমি প্রতারণা করেছি। ওভাববে বিয়েটা আমি নিজের স্বার্থে করেছি।
তখন অভ্রের মা হাসি মুখে খাবার নিয়ে এলো।
এসে নিদ্রার পাশে বসে পরলো,

‘ তুমি উঠে গেছো। দেখি জ্বর আছে কিনা? সবাইকে তো খুব ভয় পাইয়ে দিয়েছিলে!’

‘মা অভ্র কোথায়?’

‘ও তো নিচে খাচ্ছে।তোমার জ্বর একটু কমেছে তাই খেতে গিয়েছে না হলে তো তোমার হাত ছেড়ে উঠতোই না। কতো কেয়ার করলো তোমার ইশ আমার মনে হয় ও তোমাকে ভালো বেসে ফেলেছে। তোমাকে একা রেখে ও বর্ষাকে ও দেখতে গেলো না। মেয়েটা বাসায় এসেছে দুইদিন হয়ে গেলো আর ও কিনা গেলো না। আমার ছেলের বুদ্ধি হয়েছে। ওই মেয়ের ভূত মাথা থেকে নেমেছে।’

আমি বিস্মিত হয়ে শ্বাশুড়ি আমার দিকে তাকিয়ে আছি। আমার জন্য অভ্র বর্ষার সাথে দেখা করতে যায়নি। আমার এতো কেয়ারিং করেছে। আর বর্ষা ফিরে এসেছে কিভাবে?
শাশুড়ি মাকে জিজ্ঞেস করলাম। তিনি বললেন এতো কিছু জানে না।
আমি আর ঘাটলাম না। কিন্তু বর্ষাকে পাওয়া গেছে শুনে ভালো লাগছে। অভ্র ওসব জানার পর কেমন রিয়েক্ট ভাবছি। আমি কিভাবে সামাল দিবো। শাশুড়ি মা আমাকে খাইয়ে দিয়ে চলে গেলো। কিছু ক্ষণ বাদে অভ্র এলো রুমে আর নিদ্রার কাছে এসে বললো,

‘ এখন কেমন লাগছে?’

নিদ্রা বললো, ‘ ভালো।’

নিদ্রা লজ্জায় মাথা নিচু করে আছে ওর আরেকটু মনে পরেছে। জ্বরের ঘোরে শুধু ভালোবাসি বলে থামেনি নিদ্রা অনেক আজেবাজে কথা ও বলছে।

অভ্র বললো, ‘ এমন লজ্জায় লাল নীল হচ্ছিস কেন?’

চমকে উঠলো নিদ্রা ও মুখ নিচু করে বললো, ‘ জ্বরের ঘোরে আমি অনেক আজেবাজে বকেছি তোকে সরি। আর….

অভ্র বললো, ‘ আর?

‘ তুই প্লিজ আমাকে ভুল বুঝিস না।ওসব সত্যি না।

‘ কোন সব সত্যি না? তুই যে আমাকে ভালোবাসিস এটা নাকি তুই আমাকে মন থেকে স্বামী মানিস এটা? কোনটা মিথ্যা?’

নিদ্রা অভ্রের দিকে তাকিয়ে দেখলো অভ্র ওর দিকে তাকিয়ে আছে এক দৃষ্টিতে ও তারাতাড়ি চোখ নামিয়ে বললো, ‘ সব মিথ্যা ওসব আমার মনের কথা না।’

‘ থাক আর মিথ্যা বলতে হবে না। বন্ধু হয়ে প্রতিনিয়ত এইভাবে আমাকে ঠকালি। এতো বড় কথা তুই আমার থেকে লুকালি। এইটুকু বিশ্বাস নেই যে এটা আমাকে বলতি পারলি না।”

নিদ্রা অভ্রের কথায় খুব কষ্ট পেলো। ও অভ্রের এক হাত ধরে বললো,’ আমাকে ভুল বুঝিস না প্লিজ। আমি ভয়ের কারণে এসব বলতে পারিনি তোকে। আমি ভেবেছিলাম এসব জানলে যদি তুই আমার সাথে বন্ধুত্ব নষ্ট করে দিস। তাই আমি কিছু বলতে পারিনি সাহস করে উঠতে পারিনি।’

অভ্র ঝামটা দিয়ে নিজের হাতে থেকে নিদ্রার হাত ছাড়িয়ে উঠে দাঁড়ালো।

‘আমার মন মেজাজ খুব খারাপ! দয়া করে আমার সাথে কথা বলিস না!’

‘ আমি জানতাম তুই এমন করবি এজন্য কিছু জানায়নি নি। তুই এসব জানতে পারলে আমার থেকে দূরে সরে যাবি। বন্ধুত্বের জন্য যতটুকু ভালবাসিস সেটাও আর থাকবে না। তুই আমাকে বন্ধু থেকে বেশি আপন করে ভালোবাসবি না কখনো। এজন্য আমি তাকে কিছুই জানায়নি। বিশ্বাস কর তোকে আমি হারাতে চাইনি। এজন্য আমার বুকের ভেতর যে ভালোবাসা আছে সব আমি আড়াল করে রেখেছিলাম।’

অভ্র আর একটা কথা বলল না শার্ট প্যান্ট পড়ে হাতে ঘড়ি পরতে পরতে রুম ছেড়ে বেরিয়ে গেলো। পেছন থেকে নিদ্রা ওকে ডাকতে লাগল ও আর শুনলো না।
নিদ্রা ওখানে হাঁটু ভেঙ্গে বসে কাঁদতে লাগবো।

.
‘আমাদের সব কাজ শেষ আমরা নিবিড় চৌধুরীকে সবার সামনে মাথা নিচু করে ছাড়িয়েছি। এখন সবাই তাকে অবিশ্বাস করে, সন্দেহ করে জেরা করেন।তার এই গর্বের পেশা এবার তার থেকেই হাতছাড়া হয়ে গেছে। আইন এখন তাকেই সন্দেহের তালিকায় রেখেছে। এবার এই ফাইলে তথ্য দিয়ে আরিয়ানকে জব্দ করতে পারব।’

শাওন তো খুশিতে পারে না লাফিয়ে ওঠে তূর্যের গায়ের উপরে পরে।
তূর্য ধাক্কা দিয়ে শাওনকে বিছানার নিচে ফেলে দিয়ে দিলো। শাওন এক চিৎকার দিয়ে উঠল।

‘এটা কি হলো তুই আমাকে এই ভাবে নিচে ফেললি কেন? কত খুশিতে আমি নাচানাচি করছিলাম আর তুই আমাকে ফেলে দিয়ে আমার সমস্ত আনন্দ মাটি করে দিলি!’

‘আরেকটা কথা বললে তো এক ঘুসি দিয়ে আমি নাক ফাটিয়ে দেবো। যা এখান থেকে।’

‘কিরে ভাই এত আনন্দ মধ্যেও তুই এমন মুখটাও গম্ভীর করে রেখেছিস কেন?’

‘আমার ইচ্ছে হয়েছে তাই!’

‘তোর এমন অদ্ভুত ইচ্ছে হলো কেনো তুই কি কোন কিছু নিয়ে চিন্তিত?’

‘তোর বর্ষার ফ্রেন্ড তিশার সাথে রিলেশন করতি?’

তূর্যের কথায় শাওন হকচকিয়ে বিছানা থেকে নেমে গেলো।

‘কি সব বলিস ওইসব তো নাটক ছিল!’

‘আই হেট লাইং’

শাওন ঢোক গিলে আমতা আমতা করে বললো,’ তুই এসব কিভাবে জানলি?’

‘আমার জানাটা কি খুব কঠিন তোর মনে হয়?’

‘না মানে তা না আসলে ওই কিভাবে যেন হয়ে গেছে
নাটক করতে করতে কখন যেন আমি সত্যি ওকে ভালোবেসে ফেলেছি। কিন্তু তুই শুনলে তো রাগ করবি। এজন্য আমি তোকে লুকিয়ে ওর সাথে কথা বলেছি। সরি ভাই প্লিজ রাগ করিস না।’

‘রাগ করবো না বলছিস এই বিষয়টা আমাকে জানালে হতো না! আমি কি তোর প্রেমে বাধা দিতাম।’

‘আমি বুঝতে পারি নাই সরি মাফ করে দিও প্লিজ!

শাওন কানে হাত দিয়ে বললো। তূর্য এগিয়ে এসে ওকে কয়টা মেরে থামলো।

.
বর্ষাদের ফ্যামিলির উপর দিয়ে ঝড় এর উপর ঝড় বয়ে যাচ্ছেই। মেয়েকে হারিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছিল। কিন্তু মেয়েকে ফিরে পেয়ে সবাই খুশী হলেও। তারপরই পরিবারের আরেক ঝড় এসে নিজের চাকরি হারালো নিবিড় চৌধুরী।
এখন বাসা থেকে বের হতে তিনি পারেন না। সবাই তার দিকে কেমন করে যেন তাকিয়ে থাকে। তার ওপর মেয়েকে নিয়ে বাজে কথা রাস্তায় চায়ের দোকানে মহিলাদের আড্ডাখানায় সব জায়গায় শোনা যায়। মেয়ের চরিত্র নষ্ট হয়ে গেছ। চরিত্রহীন মেয়েকে এখন তারা সমাজে রাখবেনা। সাথে একজন বিশ্বাসঘাতকে রাখবে না। বাবা মেয়েকে তারানোর জন্য সবাই উঠে পড়ে লেগেছে যেন। মেয়ে তো তার পালিয়ে যায়নি। তাকে কিডন্যাপ করে নিয়ে গেছিলো। এখানে মেয়ের কি দোষ? তার মেয়ে যে এসবের জন্য দরজা আটকে কান্না করছে সব সময় কি করে তার মন ভালো করবে।

অনেক ভেবে তিনি বর্ষার ফ্রেন্ডদের কল করে আসতে বললো বাসায়। আর বলে বর্ষাকে যেন কোথায় বেড়াতে নিয়ে যায়। তাহলে মেয়েটার মন ভালো হতে পারে।

#চলবে……

#তুমি_যে_আমার🥀
#Writer_Nondini_Nila
#Part_26

বর্ষাকে জোর করে বেড়াতে নিয়ে এসেছে ওর ফ্রেন্ডরা। সবাই হাতিরঝিল এসেছে বেড়াতে। আগেও অনেকবার এসেছে এখানে। সব সময় এসে সবাই আড্ডা মাস্তি করছে। বর্ষা তো সব চেয়ে বেশি ও বেড়াতে খুব পছন্দ করে। ওর যতই মন খারাপ হোক না কেন বেড়াতে গেলে ওর মন ভালো হয়ে যায়। হৈ-হল্লা করা, কথা বলা, লাফালাফি সবচেয়ে বেশি ওই করে। কিন্তু এবার বেড়াতে এসে বর্ষা চুপচাপ। প্রথমে ওর মনটা কিছুটা আনন্দিত হলেও। বেড়াতে আসার পর থেকে বর্ষা চুপচাপ হাঁটছে আর চারিদিক তাকিয়ে কাউকে খোঁজ ছে ওর মনে হচ্ছে কেউ ওকে ফলো করছে।
পলকহীন ভাবে কেউ ওর দিকে তাকিয়ে আছে। সেই আশঙ্কা পর থেকে আর বেড়ানোর মজাটা অনুভব করতে পারলো না।
ওর ফ্রেন্ডরা জিজ্ঞেস করছে, ‘ কী হয়েছে এমন আতঙ্কিত মুখ করে আছিস কেন?’

ও কিছু বলেনি শুধু বলেছে, ‘ চল এখন থেকে আমার বেড়াতে ভালো লাগছে না!’

সবাই নিরাশ হয়ে গেলো। বর্ষার মন ভালো করতে বেড়াতে নিয়ে এসেছিলো কিন্তু তার কিছুই হলো না। বর্ষাকে নিয়ে রেস্টুরেন্টে এলো সবাই। এসেই একটা কেবিনে ফিলাপ করে বসে পরলো। বর্ষার আইসক্রিম পছন্দ তাই ওরা আইসক্রিম অর্ডার দিল।

‘প্রথমে তো তোর মুখটা খুশি লাগছিল। কিন্তু হঠাৎ করেই কেমন যেন তোকে চিন্তিত লাগছে। আর কাউকে যেন খুজছিলি আশেপাশে তুই কি কাউকে দেখেছিস?’

বর্ষা চুপ করে আছে। সত্যি তো ও কাউকে দেখেছ। ওর মনে হলো তূর্য কে দেখেছে এক নজর। এটা কিভাবে সম্ভব লোকটা এখনো ওর পিছু ছাড়ে নি। এখনো ওকে ফলো করে যাচ্ছে। লোকটার উদ্দেশ্য কি? একবার আবসা দেখছিল আর তো দেখেনি।এটা কি ওর মনের ভুল নাকি সত্যি ওকে ফলো করছে তূর্য।
তূর্য নামটা উচ্চারণ করতে ওর বুকের ভেতর ধক করে উঠলো। লোকটার জন্য বাসা থেকে বের হতে পারেনা আত্মীয়-স্বজন, পাড়া-প্রতিবেশী সবাই ওকে নিয়ে বাজে কথা বলে। কেমন যেন করে তাকিয়ে থাকে। সবকিছুই লোকটার জন্য হয়েছে। সমাজের চোখে খারাপ হয়ে গেছে। এইখানে তো ওর কোন দোষ নেই। তবুও সবার চোখে ওই অপরাধী হয়ে গেছে।সব শেষ করে এখনো ওর পেছনে পরে আছে আর কি চায় লোকটা। আমাদের কি মেরে ফেলতে চায় নাকি একদম।

চকলেট ফেভারের আইসক্রিম সামনে নিয়ে বসে আছে বর্ষা। সবাই খাচ্ছে কথা বলছে ও বিভোর আছে ওর চিন্তা নিয়ে। কারো ধাক্কা খেয়ে চমকে উঠলো।

” কিরে এমন করে বসে আছিস কেন? খাচ্ছিস না কেন? আমাদের খাওয়া শেষ হয়ে গেলো আর তুই হাত ও লাগালি না! আগে তো এমন হতো না সবার আগে তোর আইসক্রিম খাওয়া শেষ হতো আর আজ…

‘ আমার ভালো লাগছে না‌। আমি খাবো না।’

বর্ষার কথা শুনে সবাই অবাক চোখে তাকালো বর্ষার দিকে।এটা বর্ষা বললো কেউ বিশ্বাস করতে পারছে না।যে মেয়ে আইসক্রিম পাগল সে কিনা বলছে আইসক্রিম খাবে না বলছে। অন্যদিন হলে দুইটা ওর খাওয়া হয়ে যেতো আর আজ কি বলছে?
এতোটা চেঞ্জ হয়ে গেলো কি করে?
সবার খুব খারাপ লাগতে শুরু করলো ওর জন্য। বর্ষা সব সময় সবার মন ভালো করতো কথা বলায় বাঁচাল ছিলো ও। আর একটু পাগলি টাইপের চঞ্চল মেয়ে সব সময় হেসে খেলো চলতো। আর ওর এই অবস্থা কেউ মেনে নিতে পারছে না।

‘ এটা তোর ফেবারিট চকলেট আইসক্রিম তুই খাবি না!’

‘ না আমার ভালো লাগছে না।বাসায় যাব আমি।’

বলেই বর্ষা উঠে দাঁড়ালো। গলায় ঝুলিয়ে রাখা নীল ওরনা কাধের একপাশে ফেলে হাঁটা ধরলো।
সবাই দৌড়ে ওর পাশে দিয়ে হাঁটতে লাগলো। একজন বিল দিতে গেছে।

এদিকে তূর্য গাড়ির বসে বর্ষার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছে। একজন লোককে রাখা আছে যে সারাক্ষণ বর্ষার উপর নজর রাখে তার থেকে জানতে পেরেছে বর্ষা বাসা থেকে বেরিয়েছে । সেটা
শুনেই সব কাজ ফেলে এখানে চলে এসেছে তূর্য। অনেক দিন পর বর্ষাকে এক নজর দেখার ইচ্ছা দমাতে পারেনি। বর্ষাকে সেদিন ফিরিয়ে দেওয়ার পর থেকে তূর্য নিজের মধ্যে একটা অদ্ভুত অনুভুতির জন্ম দেয়। না চাইতেও ও বর্ষাকে মিস করা শুরু করে। ওর মস্তিষ্কে সব সময় বর্ষার চিন্তা ঘুরতে থাকে। এই যে চোখ বন্ধ করলেই ফ্যাচ ফ্যাচ করে কাদছে চোখের সামনে ভেসে ওঠে। বাসার আনাচে কানাচে বর্ষাকে দেখতে পায় ওর দিকে রাগী চোখে তাকিয়ে আছে। সাথে ঘুমের মধ্যে ও দেখে বর্ষা ওকে বলছে ‘ আপনি খুব পাষাণ একটা লোক দয়া মায়া বলতে কিছু না। আপনার কোন দিন ভালো হবে না। আপনি আমাকে খুব কষ্ট দিয়েছেন।’

মিস করা শুরু করে অসম্ভব ভাবে। খুব মায়া ওই মুখটায় আর সেই মায়া আটকে গেছে তূর্য। বর্ষা ওকে পাগল করে দিয়েছে। এইভাবে ওর স্বপ্ন এসে ওকে কথা শুনানো।
কোন কাজ ঠিকমতো করতে পারেনা। ঘুমিয়ে জেগে থেকে সবসময় বর্ষাকে মিস করে। শত চেষ্টা করেও বর্ষাকে মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলতে পারছে না। আজ যখন বর্ষাকে দেখার সুযোগ পেলো ছুটে চলে এলো।
আর অদ্ভুতভাবে তূর্য কিনা একটা মেয়েকে ফলো করছে ওর সব কাজ ফেলে রেখে। বর্ষাকে রেস্টুরেন্টে থেকে বেরোতে দেখে ও সব চিন্তা এক পাশে ফেলে রেখে মুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে আছে। ওরা চলে যেতে তূর্য অবাক হলো নিজের কাজে। ও যে বর্ষার মায়া জালে ভালো ফেসে গেছে বুঝতে পারছে। নিজের এমন কাজে নিজে লজ্জিত হয়ে গাড়ি ঘুরিয়ে বাসা দিকে রওনা দিলো।এসব শাওন জানতে পারলে ওকে কি ভাববে? ছিঃ শেষে কিনা নিজের শত্রুদের কে নিয়ে আমি মাতামাতি শুরু করছি‌।
.
বিকেলে একটা আননোন নাম্বার থেকে নিবিড় চৌধুরির ফোনে কল আসে। কলটা তূর্য করেছিলো। কল করে নিবিড় চৌধুরীকে খুব সুন্দর ভাবে অপমান করেছে। এতদিনে নিবিড় চৌধুরী এর অহংকার এর চাকরিটা চলে গিয়েছে। এই চাকরির জন্য খুব অহংকার করতেন তিনি। এখন সেই চাকরিটায় আর তার নেই। তার নামের পাশে থেকে ব্যারিস্টার ডিলিট হয়ে গেছে। এইটাই তো করতে চেয়েছিল সবার সামনে নিবিড় চৌধুরীকে অপমানিত, লাঞ্চিত হতে দেখতে চেয়েছিল। সেটা দেখা হয়ে গেছে।

নিবিড় চৌধুরী ক্রোধান্বিত গলায় বলল, ‘ কে তুমি? আমার সাথে এসব কেন করছো? আমার সাথে তোমার কি শত্রুতা?’

‘কে আমি বললে ও আপনি আমাকে চিনবেন না।’

‘চিনব না! তাহলে তুমি আমার পরিচিত না অপরিচিত কেউ। তোমার সাথে তো তাহলে আমার বন্ধুত্ব বা শত্রুতা কোনটাই নাই‌। তাহলে তুমি আমার সাথে এইসব কেন করছো? এসব করে তুমি কি লাভ পাচ্ছো?’

‘এইটা ঠিক আপনার কাছে আমি পরিচিত না অপরিচিত একজন। কিন্তু আপনার সাথে বন্ধুত্ব না থাকলেও শত্রুতা আছে!’

‘অপরিচিত একজন আমার শত্রু কিভাবে হলো?আমি তোমার কি ক্ষতি করেছি দয়াকরে বলবে! যার জন্য তুমি আমার সাথে এত খারাপ করছো?’

‘অবশ্যই, কেন বলবো না! আপনি আমার একমাত্র আদরের ছোট ভাইকে জেলে পাঠিয়েছিলেন মনে আছে। ছেলেটার নাম ছিলো আহান। আজ থেকে 2 বছর আগে একটা মেয়ের মিথ্যা কথার উপর ভিত্তি করে আপনি তাকে শাস্তি দিয়েছিলেন। যার জন্য তাকে মেডিকেল থেকে বের করে দেওয়া হয়।পুরোপুরি নষ্ট হয়ে যায় আমার ভাইয়ের জীবন। আমি তখন বাংলাদেশের বাইরে ছিলাম। সবটা শুনে আমি আপনাকে ফোন করেছিলাম। বলেছিলাম এসব মিথ্যা আমি সব প্রমাণ করব এসে। আমার ভাইকে আমি নির্দোষ প্রমাণ করব। আপনি তাকে ছেড়ে দিন সবকিছু ধামাচাপা দিয়ে দিন কিছুদিনের জন্য। কিন্তু আপনি শোনেন নি আমার ওপর চিৎকার চেচামেচি করে ফোন রেখে দেওয়ার আগে বলেছিলেন,
‘তুই একটা লম্পট তোর ভাই ও একটা লম্পট। মেয়েদের সাথে অসভ্যতামি করে। এখানে একটা মেয়ের সম্মান নিয়ে ছিনিমিনি খেলেছে তোর ভাই। আর তুই সেগুলো ধামাচাপা দিতে বলছিস। তোর ভাইকে উচিত শাস্তি দেবোই আমি। একটা মেয়ের সাথে অসভ্যতামির শাস্তি ওকে পেতেই হবে। যেমন ছোট ভাই তেমনি তুই। কোথায় ভাইকে এর জন্য কঠিন কথা বলবি শাস্তি দিবি তা না তুই আমাকে সবকিছু ধামাচাপা দিতে এসেছিস। কোন চরিত্রহীন বাবা মায়ের সন্তান তোরা তোদের তো মনে হয় জাতের ঠিক নেই। রক্তের ঠিক নেই দেখছি।’
বাবা-মাকে চরিত্রহীন লম্পট বলেছিলেন। শুধু আমাদের খারাপ কথা বলে আপনি ছাড়েন নি। আমাদের বাবা-মা কে আপনি ইন্সাট করেছিলেন। আমাকে আজেবাজে কথা বলে আমার ভাইকে ঠিক জেলে পাঠিয়ে ছিলেন। সেদিন আমার ভাই ছিল একা। একা এই সব সহ্য করতে না পেরে আমার ভাই সুসাইড করে মারা গিয়েছিল। আমি আমার একমাত্র ভাইকে শেষবারের মতো দেখতে পাইনি।আমার ভাইয়ের মৃত্যুর পর কিন্তু সেই মেয়েটা সব সত্যি বলে দিয়েছিল। তিনি সব মিথ্যা অভিযোগ করেছিলো। আমার ভাইয়ের নামে মিথ্যা বলেছিল।তার সাথে আমার ভাই কোন অসভতামি করেছিলো না। সেদিন যদি আপনি আমার কথা শুনতেন তাহলে আমার ভাইকে মরতে হতো না।
সেই দিন আমি প্রতিজ্ঞা করেছিলাম আপনাকে আমি ধ্বংস করে দেবো। এজন্য আমি আপনার একটা ছেলের খোঁজে ছিলাম কিন্তু পেলাম মেয়ে কি করবো তাকেই আমি টার্গেট করলাম। মেয়ে তো আপনার কলিজার টুকরা। তাইতো মেয়েকে ফাস্ট কিডন্যাপ করলাম।’

‘বর্ষাকে তুমি কিডন্যাপ করেছিল?’ রেগে বললো নিবিড় চৌধুরী।

‘হ্যা আমি করেছিলাম। যে অপরাধের দায়ে আপনি আমার ভাইকে শাস্তি দিয়েছিলেন সে অপরাধ আমি আপনার মেয়ের সাথে করার জন্য তাকে কিডন্যাপ করেছিলাম। আপনার তো নিজের ও নিজের পরিবারের সবাইকে নিয়ে খুব গর্ব। তারা খুব চরিত্রবান। আর আমি আমার ভাইয়ের তো চরিত্রের ঠিক নাই। তাই আপনার পরিবারের মেয়ের আমি ক্ষতি করতে এসব….

‘ কি তুমি আমার আমার মেয়ের সাথে এসব করতে কিডন্যাপ করেছিলে?তুমি আমার মেয়ের এত বড় সর্বনাশ করেছ এইজন্য তো আমার মেয়েটা গুমরিয়ে থাকে। তোমার সাহস কি করে হলো আমার মেয়ের সাথে এসব করার তোমাকে আমি পুলিশে দেবো।’

তূর্য কথা শেষ করতে না পেরে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললো। তারপর বাঁকা হেঁসে বললো,

‘আমাকে পুলিশে দিবেন। আচ্ছা কেস করে আসেন। আচ্ছা কার নামে কেস করবেন? আপনি কি আমার নাম জানেন? আই মিন আমাকে কখনো দেখেছেন? কি বলে কেস লিখবেন?’

নিবিড় চৌধুরী ঘাবড়ে গেলো আসলেই তো এই ছেলেটাকে তো উনি চেনেন না নাম ও জানেন না।

‘আচ্ছা এসব কিছু ভাবতে থাকেন।এখন তো আপনাকে এমনিতেই কেউ দেখতে পারেনা পাড়া- প্রতিবেশীর কেউই। আরেকটা কথা দুদিনের মাথায় আপনাকে বাসা থেকে হয়তো তাড়িয়ে দেওয়া হবে।কারণ আপনার ব্যাংকে থেকে অনেক লোন নেওয়া আছে। যেটা পরিশোধ করার টাকাপয়সা আপনার হাতে কিছুই নেই। সে সবের জন্য আপনাকে বাড়িটা ছেড়ে দিতেই হবে। আপনার জন্য আরেকটা সুন্দর ড্রামা কালকে দেখতে পাবেন। রাখি আল্লাহ হাফেজ।’

ফোনটা কেটে গেলো। নিবিড় চৌধুরী চিৎকার করে উঠলো বর্ষা বলে। ওনার বুকে ব্যাথা করছে। বর্ষা দৌড়ে এসে দেখে বাবা সোফায় বসে আছে বুকে হাত দিয়ে। ও বলল,

‘ বাপি কি হয়েছে তোমার?’

#চলবে…….