তুমি যে আমার পর্ব-২৯+৩০

0
763

#তুমি_যে_আমার🥀
#Writer_Nondini_Nila
#Part_29

‘ডাঃ নিদ্রার সম্পর্কে অনেক কিছু জানতে পেরেছি। মনে হয় এতেই তোর প্রশ্নের উত্তর পেয়ে যাবি।’

‘ শাওন এসব পরে শুনবো। এখন সামনের ওই গাড়িটাকে ফলো কর। ফার্স্ট!!’

শাওন ড্রাইভ করতে করতেই তূর্য এর দিকে তাকালো। আর কপাল কুঁচকে বললো,,,

‘ ওই গাড়ি ফলো করবো কেন? কি হয়েছে বল তো!’

‘ এতো কথা বলিস না। যা বলছি কর। আরিয়ানের সাথে ডাঃ নিদ্রার কি সম্পর্ক জানতেই হবে।’

বলেই তূর্য গাড়ির দিকে তাকালো। শাওন আর প্রশ্ন করলো না কোন। লাল গাড়িটাকে ফলো করতে লাগলো। গাড়ি আধা ঘন্টার মতো চললো। তূর্য বিরক্ত করে বসে আছে। আর কতো যাবে এই গাড়ি রাগ লাগছে ওর। একটা দুতালা বাড়ির সামনে এসে গাড়ি থামলো।
তূর্য জানালা দিয়ে দেখলো আরিয়ান নিদ্রার হাত ধরে টেনে বাসার ভেতর নিয়ে যাচ্ছে। নিদ্রা হাত ছাড়ানোর নিয়ে যুদ্ধ করে যাচ্ছে। শাওন গাড়ি থামিয়ে বললো,
‘ এটাতো ডাঃ নিদ্রার বাসা।’

তূর্য শাওন এর দিকে তাকিয়ে বললো, ‘ হোয়াট? তাহলে আরিয়ান কি উনার ভাই?’

‘ হুম চাচাতো। ডাঃ নিদ্রার পালিত বাবা মা মারা গেছেন। এখন চাচা চাচি এই বাসা থাকে। আর নিদ্রা ভাড়া বাসায় থেকে জব করতো। বর্তমানে শশুর বাড়ি….

‘ শাট আপ। তোকে কি আমি এখন সম্পূর্ণ কাহিনী শুনাতে বলেছি। চুপ থাক এসব পরে শুনবো‌।’

‘ ওকে।’

তূর্য বাসাটা ভালো করে স্ক্যান করে বললো, ‘লেটস গো হেয়ার।’

‘এবার তো বল। এমন দৌড় পাড়ালি কেন?’

‘ আরিয়ান ডাঃ নিদ্রা কে জোর করে বাসায় নিয়ে এলো কেন?’

‘ আমি খোঁজ নিয়ে জানতে পেরেছি। আরিয়ান ডাঃ নিদ্রা কে পছন্দ করে, বিয়ে করতে চায়।’

‘ ওহ্ এই ব্যাপার।’

তূর্য কে নিয়ে বাসায় চলে এলো। শাওন গাড়ি থেকে নেমে পরলো কিন্তু তূর্য নামেনি। উল্টা ড্রাইভিং সিটে বসে পরেছি। শাওন তা দেখে জানালার গ্লাসে ভাড়ি দিয়ে বলে,

‘ তুই আবার কোথায় যাচ্ছিস?’

‘ তুই বাসায় যা আমি আসছি।’

শাওন হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো।

.
আজকে বাপিকে বাসায় আনা হয়েছে। মাম্মা বাপির পাশে বসে আছে। আমি দরজার কাছে দাঁড়িয়ে চোখ ভর্তি জল নিয়ে তাকিয়ে আছি বাপির দিকে। এসব কিছু আমার জন্য হলো আমি বাপিকে নিঃশ্ব করে দিলাম। বর্ষার বাপি বর্ষাকে দরজার কাছে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে ডেকে উঠে। বর্ষা ধীর পায়ে বিছানায় একপাশে বসে। নিজের কান্না থামাতে পারে না। হু হু করে কেঁদে ওঠে।
নিবিড় চৌধুরী মেয়ের মাথায় হাত দিচে থাকে।

বর্ষা মাথা নিচু করে বাপিকে জরিয়ে ধরে কাঁদে। এক থেকেই উঠে চলে আসে।

‘ মেয়েটা একদম ভেঙে পরেছে। মুখের দিকে তাকানো যায় না।’ বলে উঠে বর্ষার মা।

‘ একটা ব্যবস্থা করতে হবে।’

‘ কি করবে?’

নিবিড় চৌধুরী কিছু বলে না। বর্ষার মা ও আর কিছু জিজ্ঞেস করে না। নিচে যায়। কাজের লোকের সাথে রাতের খাবার রেডি করে।
বর্ষা দরজা বন্ধ করে বেলকনিতে বসে মুখ চেপে ধরে কাঁদছে।
দরজা ধাক্কায় উঠে চোখ মুছে রুম থেকে বেরিয়ে আসে।

‘ কি করছিলি?’

‘ মাম্মা কিছু না।’

‘ আমার থেকে লুকাতি পারবি না। তোর চোখ মুখ‌ই বলে দিচ্ছে কাদছিলি।

বর্ষা মাথা নিচু করে ফেলে।
বর্ষার মা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে চলে আসে।

রাত একটা বাজে। বর্ষা ঘুমের ঘোরে অনুভব করছে কেউ ওর কপাল স্পর্শ করছে। ও ঘুমের মধ্যে ও কেঁপে উঠলো। সাথে সাথেও ঘুম ছুটে গেলো। ও ধরফরিয়ে উঠে বসলো।সারা শরীর থরথর করে কাঁপছে। কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমে গেছে‌। ভয়ে এদিক ওদিক তাকিয়ে লাইট জ্বালায়। বুকে হাত দিয়ে জোরে জোরে শ্বাস ফেলে। এসব কি ছিলো। মনে হলো কেউ আমাকে স্পর্শ করছে কে? নাকি সব আমার স্বপ্ন ছিলো। আকাশ পাতাল ভাবতে থাকে বিছানায় বসে। তারপর সব স্বপ্ন বলে লাইট অফ করে শুয়ে পরে ধরফর বুক নিয়েই।

এদিকে তূর্য বর্ষার বেলকনিতে বসে সিগারেট খাচ্ছে। বর্ষা শুয়ে পরতেই ও আড়ালে থেকে বেরিয়ে এসেছে। বর্ষা ঘুমিয়ে যেতেই শব্দ হীন পায়ে অন্ধকারে বর্ষার মুখের দিকে ঝুঁকে তাকিয়ে থাকে। বর্ষার ঘন শ্বাস ওর চোখে মুখে পরছে। এবার আর স্পর্শ করেনা। আরো একঘন্টার মতো থেকে চলে আসে।

বাসায় যেতেই শাওন ওকে চেপে ধরে,

‘ কোথায় গিয়েছিলি?’

‘ বর্ষার বাসায়!’

শাওন লাফিয়ে উঠে বলে, ‘ কিহহহ

‘ চেঁচাচ্ছিল কেন?’

‘ তোর মাথা খারাপ হয়েছে? এতো রাতে তুই সেখানে কেন গিয়েছিলি আর্জেন্ট কিছু কি?’

‘ জানি না। আমার বর্ষাকে কাছ থেকে দেখতে ইচ্ছে হয়েছে তাই গিয়ে ছিলাম।’

‘ ও মাই গড কি বলিস এসব। ‘

শাওন অবাকের চরম সীমায় পৌঁছে গেছে।

‘ ঘুম পাচ্ছে আমার পেছাল বাদ দিয়ে লাইট অফ কর!”

বলেই তূর্য শুয়ে পরলো। শাওন লাইট অফ করে তূর্য এর পাশে লাফিয়ে পরে আর বলে,

‘ ভাই তুই প্রেমে পরেছিস?’

‘ শাট আপ। আমি ঘুমাবো এখন।’

‘ আরে শোন না। তুই বর্ষাকে মিস করছিলি তাই না।’

তূর্য আর কিছু বললো না। শাওন ওর আর উওর না পেয়ে ঘুমিয়ে পরলো।

.
নিদ্রা বাসায় আসেনি সারা রাত। চিন্তা কেউ ঘুমাতে পারেনি রাতে। অভ্র নিদ্রার সমস্ত পরিচিতদের ফোন করে খোঁজ নিয়েছে কোথাও যায়নি। চিন্তায় সারারাত এক দন্ড শান্ত হয়ে বসতে পারেনি।
বারান্দায় বসে নিদ্রাকে নিয়ে দুশ্চিন্তা করতে করতে কখন ঘুমিয়ে পরেছে জানেনা। ঘুম ভাঙে সূর্য এর আলো চোখ পরায়। নিদ্রার কথা মাথায় আসতেই ছুটে বাইরে আসে। আজকে নিদ্রার বাসায় যাবে। একবার অফিসার আদিল এর সাথে কথা বলতে হবে।কাল জানতে পেরেছে অফিসার আদিল কাল নিদ্রার সাথে হাসপাতালে ছিলো।

আদিল এর নাম্বার সংগ্রহ করে ফোন করে অভ্র।
শাওন আর তূর্য গভীর ঘুমে মগ্ন। তখন ফোনের রিংটোন এ শাওন এর ঘুম আগে ভেঙে যায়। ওর ফোন ভেবেছিলো কিন্তু না ওর ফোনে না। ও তূর্য এর পাশে থেকে ফোন নিয়ে দেখে তূর্য এর কল এসেছে। সেভ নাই নাম্বার। শাওন তূর্য কে ধাক্কা দিয়ে বলে,

‘ ওই উঠ তোকে কে জানি সাত সকালে কল দিয়েছে দেখ তো।’

‘ ফোন কিন্তু ভেঙে ফেলবো। আর একটা শব্দ কানে আসলে।আর একবার ডাক দিলে তোর অবস্থা খারাপ করে দেবো শালা ঘুমাতে দে।’

বলেই তূর্য আবার ঘুমিয়ে পরলো।শাওন ওর ধমক শুনে আর ডাকলো না। কিন্তু ফোনের ব্যক্তি পণ করেছে বোধহয় না ধরা পর্যন্ত থামবে না। ও সাইলেন্ট করে তিশাকে কল করে ফিসফিস করে কথা বলছিলো। কিন্তু তূর্য এর কল আসা বন্ধ না হ‌ওয়ায় তিশাকে বলে কল কেটে তূর্য এর ফোন রিসিভ করে।

‘হ্যালো কে?

‘ হ্যালো আমি ডাঃ অভ্র নিদ্রার হাজবেন্ড।

নিদ্রার হাজবেন্ড শুনেই দৌড়ে তূর্য এর হাতে ফোন দিয়ে বলে সব। তূর্য বিরক্ত হলেও অভ্রর কল রিসিভ করে।

অভ্রর সাথে কথা বলেই তূর্য উঠে বসে আর দ্রুত ফ্রেশ হয়ে ইউনিফর্ম পরে নেয়। শাওন বিছানায় বসে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তূর্য এর দিকে।
তূর্য রেডি হয়ে বলে, ‘ কি হয়েছে এমন করে তাকিয়ে আছিস কেন?’

‘ এই মাত্র ডাকার জন্য বকলি। আর এখন অভ্রর সাথে কথা বলেই রেডি হয়ে বেরিয়ে যাচ্ছিস ব্যাপার কি বলতো? কি বলেছে ডাঃ অভ্র যে এতো ছুটছিস।’

তূর্য বলে, ‘ ডাঃ নিদ্রা কে কাল থেকে খোঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।’

‘ হোয়াট?

‘ আসছি এদিকটা সামলে নিস।’

‘ডোন্ট ওয়ারি।’

তূর্য নিদ্রা দের বাসায় সামনে এসে দাঁড়ায়। অভ্র দাঁড়িয়ে আছে আগে থেকেই কিন্তু তাকে ভেতরে ঢুকতে দিচ্ছে না। পুলিশ দেখে এবার আর বাঁধা দিতে পারলো না দাড়োয়ান।
অভ্র কে নিয়ে ভেতরে ঢুকলো তূর্য।

‘ অফিসার আদিল কাল আপনার সামনে নিদ্রাকে নিয়ে এসেছে আরিয়ান তাই না‌!’

‘ জ্বি।’

‘ ওরা খুব খারাপ। নিদ্রা কে মানসিক ভাবে টর্চার করে। প্লিজ হেল্প মি।’

তূর্য অভ্রের কাধে হাত রেখে ভেতরে ঢুকে।

#চলবে……..

#তুমি_যে_আমার🥀
#Writer_Nondini_Nila
#Part_30

আরিয়ান অনেক সিনক্টে করেছে নিদ্রার সাথে। ওকে কাল জোর করে বাসা নিয়ে গেছে। তারপর অভ্র কে ডির্ভোস দেওয়ার কথা বলেছে। নিদ্রা তাতে অস্বীকার করেছে এজন্য অনেক চিৎকার চেঁচামেচি করেছে। রাগে আরিয়ানের কপালের রগ ফুলে উঠেছে ও রাগে পাশের ফুলদানি হাতে নিয়ে তা ছুড়ে ফেলে দিয়েছে ফ্লোরে। তা দেখে আরিয়ানের মা চোখ বড় করে ফেললো। কারণ এই ফুলদানি টা তার প্রিয় ছিলো কিছুদিন আগেই এটা তিনি কিনে এনেছিলো। ইশ এই অলক্ষী মেয়েটার জন্য তার স্বাদের ফুলদানি গেলো। আফসোস করতে লাগলো। কটমট করে তিনি একবার ছেলের দিকে তো একবার নিদ্রার দিকে তাকাচ্ছে।
নিদ্রা কে তিনি একটু ও সহ্য করতে পারে না। তাকে নিজের পুত্র বধু করার একটু ও ইচ্ছে নাই। কিন্তু এই যে তার ছেলে তিনি এই অনাথ মেয়ের প্রেমে মশগুল হয়ে আছে। সম্পত্তি না থাকলে এই মেয়েকে নিজের ছেলের মাথা থেকে বের করতোই কিন্তু ওই কারণে তা করে না। কিন্তু ছেলে তার সত্যি ভালোবাসে এই মেয়েকে এজন্য একটু অত্যাচার ও করতে পারেনা।আগে এমন ছিলোনা। আরিয়ান ও নিদ্রাকে পছন্দ করতো না। সব সময় ওকে মারতো ধমকাতো। কিন্তু বয়স বাড়ার সাথে সাথে নিদ্রার রুপ যৌবন দেখে আরিয়ানের নেশা ধরে যায়।
তারপর থেকে আর খারাপ ব্যবহার করে না নিদ্রার সাথে। মনে মনে আরিয়ান নিদ্রাকে বিয়ের করার স্বপ্ন দেখে। আরিয়ান এমন কোন খারাপ কাজ নেই যা ও করে না। আর মেয়েরা তো ওর প্রতি রাতে সঙ্গি। মেয়েদের মাঝেই ডুবে থাকে। আর নারী পাচার, শিশু পাচার নানা ধরনের খারাপ কাজে লিপ্ত আছে আরিয়ান। এজন্য ওর টাকাও কম নাই।আরিয়ান কাউকে ভয় পায় না উল্টা ওকে সবাই ভয় পায় শুধু একজন বাদে। যাকে ও নিজেও ভয় পায়। সে হলো তূর্য। এখনো তূর্য কে দেখার সৌভাগ্য হয়নি আরিয়ান এর। ওর যত লোক তূর্য কে দেখেছিলো সবাইকে ওই তূর্য মেরে ফেলেছে। তাই ওর এক মাত্র শত্রু তূর্য। যার চোখ দেখেছে শুধু। আরিয়ান হাজার মেয়েকে বেড পার্টনার করলেও ব‌উ শুধু নিদ্রাকেই করবে। কিন্তু সেই নিদ্রা কিনা অন্য কাউকে বিয়ে করে বসে আছে। আবার এখন ডির্ভোস ও দেবে না।
আরিয়ান নিদ্রাকে ধমকিয়ে একটা রুমে বন্দি করে বাইরে থেকে তালা দিয়ে চাবি নিয়ে বাসা থেকে বেরিয়ে গেলো। এখন যাবে ওর আস্তানায় মেয়ের কাছে মেয়ে ছাড়া ওর কোন রাতেই যায় না।

সারা রাত নিদ্রা বিছানায় কোণায় বসে কাঁদে তারপর ওইভাবেই ঘুমিয়ে পরে। ওর ফোনটাও নিয়ে গেছে তাই অভ্রকে কল করতে ও পারছে না।এখানে পরে থাকা ছাড়া কিছু করার নাই। আরিয়ান ও তার বাবা মাকে নিদ্রা পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি ঘৃণা করে। ও অভ্রকে ছাড়লেও এই নরপশুকে বিয়ে করবে না। কখনো না।
সকালে উঠে ও প্লান করেছে বারান্দায় দিয়ে কাপড় দিয়ে নিচে নেমে পালাবে।রাতে ইচ্ছে করেই কিছু করেনি। কারণ রাতে রাস্তায় বিপদ আপদ এর কথা ভেবেছে।
উঠে ওয়াশরুম থেকে চোখে মুখে পানি দিয়ে আলমারি খুলে ওর শাড়ি বের করলো। ওর রুমেই ওকে বন্দি করে রেখেছে। নিজের একটা শাড়ি এটা আম্মুর সেটাই নিয়ে সাথে দুইটা ওড়না গিট্টু দিয়ে বারান্দার চলে আসে।
তখন ওর চোখ যায় নিচে অফিসার আদিল ও অভ্র এগিয়ে আসছে বাসার দিকে। ও তাদের দেখেই চেঁচিয়ে উঠে। আর সাথে সাথে দুজনে মাথা উঁচু করে নিদ্রা দেখতে পায়।

অভ্র নিদ্রাকে দেখে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। নিদ্রার এলোমেলো হয়ে ফর্সা লাল মুখটার দিকে। সারা রাত ওর নিদ্রার চিন্তার পাগল প্রায় হয়ে গেছিলো। নিদ্রা কে দেখে একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে নিদ্রা ঠিক আছে তা দেখেই ওর চিন্তা কমতে লাগে।
আদিল আর অভ্র তারাতাড়ি বাসায় ঢুকে যায়। দরজা খুলতেই অভ্র কোন দিকে না তাকিয়ে দৌড়ে উপরে চলে যায়।নিদ্রা কে ছুঁয়ে দেখা না পর্যন্ত ওর শান্তি লাগছে না। দরজার কাছে এসে থমকে যায় দরজা লক করা। নিদ্রা কে বন্দি করেছে এবার ক্লিয়ার হয় সব ওর। ও দরজায় লাথি দিয়ে খুলার চেষ্টা করেও কিছু করতে পারেনা। দরজা খুলে দিয়েছে কাজের মহিলা।

এদিকে তূর্য বাসায় ঢুকে সোফায় বসে আছে। পায়ের উপর পা তুলে চারপাশে তাকাচ্ছে। তখন ছুটে এলো আরিয়ানের মা পুলিশকে বসে থাকতে দেখে তিন ঘাবড়ে গেলো। আরিয়ানের বাবা ও এক‌ই অবস্থা। তারা ঢোক গিলে তূর্য এর সামনে এসে বললো,

‘ অফিসার আপনি এখানে কি করছেন?’

তূর্য রাগী চোখে তাকালো আরিয়ানের বাবা মায়ের দিকে তা দেখে তারা ভয় পেয়ে গেলো। তখন কিছুর শব্দ কানে এলো দুজনেই দুতালার দিকে তাকিয়ে বলে উঠে,

‘ উপরে কে শব্দ করছে?’ বলে উঠলো আরিয়ান এর মা‌।

মনে মনে ভাবছে আরিয়ানের বাবা নিদ্রাকে উপরের রুমে আরিয়ান বন্দি করে গেছে। পুলিশ কি নিদ্রার জন্য এসেছে নাকি। লেখিকা নন্দিনী নীলা।
উনি ঘামতে শুরু করে দিলেন। তূর্য দুতালায় দিকে শব্দ পেয়ে সেদিকে ছুটলো কথা না বলেই। তা দেখে আরিয়ানের বাবা মায়ের অবস্থা নাজেহাল। পুলিশ যদি দেখে নিদ্রাকে আটকে রেখেছে তাহলে কি হবে।

পেছন পেছন নিজেরাও গেলো।
নিদ্রা দরজা ধাক্কা শুনে দরজার কাছে এসে ডাকছে। তূর্য তা দেখে রাগী দৃষ্টি নিক্ষেপ করে আরিয়ান এর বাবা মায়ের দিকে আর বলে উঠে,

‘এসব কি?’

আরিয়ান এর বাবা মা মুখ নিচু করে আছে কি বলবে বুঝতে পারছে না। ছেলে তাদের কি ঝামেলা ফাঁসিয়ে গেলো। আরিয়ানের বাবা আরিয়ান কে কল করতে গেলো কিন্তু নাম্বার বন্ধ পেয়ে উনি হতাশ হয়ে দাঁড়িয়ে র‌ইলো।

‘ রুমে চাবি দিন।’

‘ আমাদের কাছে চাবি নাই। আরিয়ান এর মা বললো।

‘ কিহহ, মিথ্যা বলার জায়গা পাস না। চাবি দে এইভাবে মিসেস অভ্রকে আটকে রাখার জন্য তোদের জেলে নিতে পারি জানিস।

‘আমরা সত্যি বলছি অফিসার। চাবি আমাদের ছেলের কাছে। আমাদের কাছে নাই‌। আর নিদ্রা কে আরিয়ান তুলে এনেছে আমরা না‌। আমাদের কোন দোষ নাই আমাদের জেলে নিবেন না দয়া করে।’

রাগে তূর্য দুই লাথি মারতেই দরজা খুলে গেলো। নিদ্রা দৌড়ে এসে অভ্রকে জরিয়ে ধরলো। অভ্র ও ধরলো। খুব ভয় পেয়ে গেছিলো ও। স্ত্রী না মানলেও ও নিদ্রাকে খুব ভালোবাসে ও এক মাত্র বেস্ট ফ্রেন্ড ওর।
আরিয়ান এর বাবা মাকে শাসিয়ে তূর্য নিদ্রা ও অভ্রকে নিয়ে বেরিয়ে এলো।
বাইরে এসে তূর্য নিদ্রার দিকে তাকিয়ে বললো,

‘ আর ইউ ওকে?’

নিদ্রা বললো, ‘ আমি ঠিক আছি। ধন্যবাদ হেল্প করার জন্য।’

‘ আমরা তো আপনাদের সাহায্য করার জন্য ই আছি।’ বলেই ঠোঁট বাঁকিয়ে হাসলো।
তূর্য গাড়ি উঠে গেলো আর বাই বলে চলে গেলো।

এদিকে আরিয়ান বাসায় এসে এসব শুনে রাগে গজগজ করতে লাগলো।

.
পরিক্ষার ফিশ দিতে আজ প্রায় এক মাস পর কলেজ এ যাচ্ছে বর্ষা। বাপি সুস্থ এখন আল্লাহর রহমতে। আজ সবাই একসাথে বসে ব্রেকফাস্ট করলো। বাপির মুখের দিকে তাকানো যায় না। কিন্তু বর্ষার দিকে তাকিয়ে ঠিক হাসি দেয় বাপি। যেন কোন চিন্তা নাই তার। কিন্তু বর্ষা জানে এই হাসির আড়ালে কতো কষ্ট লুকিয়ে আছে। ওর জীবন ওর বাপি। তাকে কষ্ট দিয়েছে ওই তূর্য। কোন দিন যদি সুযোগ পায় তাহলে নিজের হাতে শাস্তি দেবে ওই নির্দয়, পাষাণ লোকটাকে।

আনমনে রুটি হাতে এসব ভাবছিলো বাপির ডাকে ভাবনা থেকে ফিরে আসে,

‘ কি ভাবছো বর্ষা মা?’

‘ কিছুনা বাপি।’

বলেই পানি খেয়ে উঠে পরলো বর্ষা।

‘ উঠছিস কেন? খাবার তো শেষ হয়নি।’

বর্ষা মাম্মার কথা শুনলো না বাসা থেকে বেরিয়ে এলো ব্যাগ কাঁধে নিয়ে। ওর জন্য এসব হয়েছে মনে পরলেই নিজেকে শেষ করে দিতে ইচ্ছে করে।

পেছনে বর্ষার বাবা নিবিড় চৌধুরী মেয়ের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে বললো,

‘ মেয়েটার কি অবস্থা হয়েছে দেখেছো? তাকানো যায় না। চিন্তা করতে করতে চোখ নিচে কালো করে ফেলছে। ঠিক মতো ঘুমায় না।কতো শুকিয়ে গেছে।বাসায় আসার পর আর ওর মুখে আমি হাসি দেখিনা। আমাদের বর্ষা কতো প্রাণবন্ত দিলো, সব সময় লাফালাফি ছুটাছুটি করতো, মুখে থেকে ওর হাসি সরতো না। কি সুন্দর সেজেগুজে থাকতো আর কলেজে যাওয়ার আগেই টাকার জন্য আমার কাছে বসে পরতো। তার বন্ধু দের সাথে এখানে যাবে, ওখানে যাবে, রেস্টুরেন্টে খাবে। সপ্তাহে দুই তিন বার বেড়াতে না গেলে পাগল হয়ে যেতো। আর সে পনেরো দিন ধরে এক ঘরে বসে আছে‌। বললেও কোথাও যায় না। আমাদের সেই আগের চঞ্চল মেয়ে কোথায় হারিয়ে গেলো। এই বয়সে কতো ঝড় বয়ে গেলো মেয়েটার জীবন এ।’

বর্ষার বাপিও বেশি খেতে পারলো না।তিনি সোফায় বসে একজন কে কল করলো। এই মানুষটাকে তিনি একমাত্র বিশ্বাস করে। বর্ষাকে রাত দিন এক করে খুঁজেছিল।

তূর্য আরিয়ানের আস্তানায় এসেছিলো। সাথে ছিলো ওর সাঙ্গপাঙ্গ। আরিয়ানের সাথে বসে ডিল করেছে যে শিশুদের আরিয়ান পাচার করতে আটকে রেখেছে তাদের ছেড়ে দিতে। নাহলে ওর বিরুদ্ধে যে প্রমাণ ওর কাছে আছে সব মিডিয়ার কাছে প্রকাশ করে দিবে। এই প্রমাণ গুলা বর্ষার দেওয়া সেই ফাইল এ ছিল। তূর্য এগুলো আরিয়ান কে দেবে না।এটা জাস্ট মন গড়া কথা। কারণ ও অনেক চেষ্টা করেও শিশুদের নাগাল পাচ্ছে না আরিয়ান যে ওদেরর কোথায় বন্দি করে রেখেছে। আর তিন দিন বাদে ওদের বিদেশে পাঠিয়ে দেওয়া হবে। তাই এই ডিল।

আরিয়ান বললো, ‘ তোর কাছে আমার কোন প্রমাণ নাই আমি জানি তুই মিথ্যে বলে আমাকে ভয় দেখাচ্ছিস কিন্তু আমি আরিয়ান কাউকে ভয় পাইনা। সবাই আমাকে ভয় পায় আর তুইও পাস তাই তো মুখে মাস্ক দিয়ে লুকিয়ে আমার কাছে আসিস। ভীতু একটা।’

আরিয়ান তূর্য কে রাগিয়ে ওর মুখ দেখতে চায়‌। তাই এসব বলছে। কিন্তু তূর্য ওর কথার ঝালে ফাসবে না ও একটা ভিডিও দেখালো যা দেখে আরিয়ানের হাত পা কাঁপতে শুরু করলো। কপালে ঘাম ঝড়তে লাগলো।রুমাল দিয়ে ঘাম মুছল আর বললো,

‘ ওটা আমাকে দিয়ে দে তূর্য। ‘

‘ দেবো তো। আমাকে আমার জিনিস দে আমিও তোর প্রমাণ দিয়ে দেবো। ডোন্ট ওয়ারি।’

#চলবে…….