#তুমি_হাতটা_শুধু_ধরো
২৭+২৮
#পর্বঃ২৭
#Jhorna_Islam
লিফট অন্ধকার হয়ে যাওয়ায় সোহা আরো ঘা’বড়ে যায়।অনবরত কাঁদতে থাকে।
দায়ান ফোন নিয়ে ফোনের ফ্ল্যা’শ জ্বা’লা’বে এমন সময় আবার আলো জ্বলে উঠে লিফট চলতে শুরু করে।
সোহা চোখ বন্ধ থাকায় বুঝতেই পারেনি।সেতো অনবরত কেঁপে চলেছে।
দায়ান হয়তো বুঝতে পারছে সোহা ভ’য় পাচ্ছে। তাই বলে উঠে,,, হেই লিসেন সোহা,,,চোখ খোলো দেখো সব ঠিকঠাক। কোনো কিছু হয়নি। স্বাভাবিক হও আমার সাথে কথা বলো।সোহা তাও দায়ানের কথা শুনছে না।দায়ান এইবার সোহা কে নিজের থেকে ছাড়িয়ে নেয়।
দায়ান সোহার কান্নারত মুখের দিকে একবার তাকিয়ে,,, সোহাকে উপর থেকে নিচ পর্যন্ত পর্যবেক্ষন করে। নিজের শরীর থেকে ব্ল্যা’জার টা খুলে পরিয়ে দেয়।
সোহা কান্না থামিয়ে দায়ানের দিকে তাকিয়ে আবার নিজের দিকে তাকায়। এতোক্ষনে ওর হুঁশ হয়।তারাতাড়ি করে নিজেকে দায়ানের দেওয়া ব্ল্যা’জার দিয়ে ভালো করে ঢেকে নেয়।
মাথার হিজাবটা নিচে পরে আছে।শাড়ীর সাথে হিজাব সেফটিপিন দিয়ে আটকানো ছিলো বলে,,,হিজাবটাও খুলে গিয়েছে।
দায়ান হিজাব টা তুলে সোহার হাতে দেয়।
সোহা হাত বাড়িয়ে হিজাবটা নিয়ে মাথায় দিতে থাকে।
ভালো ভাবে দাও। যেনো মাথার চুল একটাও না দেখা যায়।
সোহা দায়ানের কথায় মাথা নাড়িয়ে হিজাবটা সুন্দর করে মাথার মধ্যে পেচিয়ে নেয়।
লিফট অনেক আগেই থেমে গেছে।
দায়ান সোহাকে জিজ্ঞেস ,,এভাবে যেতে পারবা? আইমিন পেটি’কো’ট পরে?
সোহা ধীর গলায় বলে,,,সমস্যা নাই।এটা পেটি’কোট না।প্লাজু পরেছিলাম শাড়ীর নিচে।
ওহ আচ্ছা চলো।বলেই সোহার এক হাত নিজের হাতের মধ্যে নিয়ে লিফট থেকে বের হয়।
লিফটের সামনে দুইজন দাঁড়িয়ে ছিলো। লিফটে উঠার জন্য। দায়ানরা লিফট থেকে বেরিয়ে হতেই ঐ দু’জন লিফটে ওঠে চলে যায়। এই দিকে তেমন আর কোনো মানুষ নেই।
দায়ান নিজেদের জন্য রাখা ব’রা’দ্দ’কৃ’ত রুমের সামনে এসে দাঁড়ায়। চাবি দিয়ে দরজা খুলে ভিতরে প্রবেশ করে।
এসেই বিছানার উপর বসে পরে। সোহাকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে নিজের কাছে ইশারা করে বসার জন্য।
সোহা গুটি গুটি পায়ে এগিয়ে এসে দায়ানের পাশে বসে।
হিজাব, ব্ল্যা’জারটা খুলো। খুলে দেখো কোথায় কোথায় কেটেছে।
দায়ান বসা থেকে উঠে এদিক ওদিক তাকিয়ে ফাস্ট-এইড বক্স খোঁজার চেষ্টা করে। এসব বড় বড় হোটেলে প্রয়োজনীয় সব কিছুর সুবিধাই পাওয়া যায়।
সোহা দায়ানের কথা মতো ব্ল্যাজারটা খুলে ফেলে।মাথা থেকে হিজাব টা খুলে শাড়ীর মতো করে শরীরে জড়িয়ে নেয় যতোটুকু পারে।
দায়ান ততোসময়ে ফাস্ট -এইড বক্স পেয়ে গেছে।ফাস্ট -এইড বক্স টা নিয়ে এসে সোহার পাশে বসে। দেখি কোথায় কোথায় লেগেছে বলে,,, নিজেই সোহার দুই হাত সামনে এনে চে’ক করতে থাকে।হাতের কুনুইর পাশে অনেক টাই কেটে গেছে। সেখানে ঔষধ লাগিয়ে দেয়। তারপর গলায় চোখ যায়,,গলার কাছটায় অনেকখানি কেটেছে। ফোটায় ফোটায় র/ক্ত ও পরেছে।দায়ান প্রথমে তুলো দিয়ে জায়গাটা পরিষ্কার করে নেয়।তারপর ঔষধ লাগাতে থাকে।ঔষধ লাগানোর সাথে সাথে সোহা আহ করে উঠে।
সোহার ব্যাথাতুর শব্দ শুনে দায়ানের হাত টা একটু থেমে যায়। তারপর আস্তে করে গলার কাছটায় ফু দিতে থাকে। ও ঔষধ লাগাতে থাকে। দায়ান সোহার গলায় ফু দিতে দিতে অনেকটাই কাছে চলে এসেছে।
দায়ানের গরম নিশ্বাসে সোহার ভিতরটা নাড়িয়ে দিচ্ছে। বিছানার চাদর দুই হাতে খামচে ধরে চোখ খিচে বন্ধ করে নেয়।
দায়ানের চোখ যায় সোহার গলার কাছটার তি’লটায়।কিছুটা যেমন ঘোরে চলে যায়।আরেকটু এগিয়ে যায় দায়ান সোহার দিকে। সোহা দায়ানের উপস্থিতি নিজের আরো কাছে টের পেয়ে।জোরে জোরে নিশ্বাস নিতে থাকে।
দায়ান আস্তে করে হাত বাড়িয়ে সোহার গলার নিচের তিলটা হালকা করে ছুয়ে দেয়।দায়ানের স্পর্শে সোহার শরীর ঝাঁকুনি দিয়ে উঠে। দায়ান মুখটা সোহার গলার কাছে নামিয়ে তিলটায় চুমু খেতে যাবে।এমন সময় কলিং বেল বেজে উঠে। দুইজনেই ঘোর থেকে বেরিয়ে আসে।
দায়ান সোহার কাছ থেকে ছিটকে দূরে সরে যায়।কি করতে যাচ্ছিলো সে? ভাবতেই মাথা এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে।
সোহা লজ্জায় এখনো চোখ বন্ধ করে বসে আছে।
দায়ান নিজেকে স্বাভাবিক করে বলে,,, তুমি ওয়াশরুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে আসো। যাও লাগেজ মনে হয় নিয়ে এসেছে।আমি তোমার ড্রেস দিচ্ছি।
সোহা মাথা নাড়িয়ে তারাতাড়ি করে ওয়াশরুমে ঢুকে যায়।
দায়ান নিজেই মনে মনে গা’লি দিতে থাকে। কি করতে যাচ্ছিলি দায়ান? কি হয়েছে তর? মনে মনে দরজার ঐ পাশে দাড়িয়ে থাকা লোকটাকে দায়ান ধন্যবাদ জানায়।তার মধ্যে আবার কলিং বেল বেজে উঠে।
দায়ান গিয়ে দরজা খুলে দেয়। দরজার ঐ পাশে একটা লোক এক হাতে লাগেজ নিয়ে ও অন্য হাতে ড্রিংকস এর বোতল নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
দায়ান হাত বাড়িয়ে লাগেজ টা নেয়।ড্রিংকস এর বোতল টা দেখে বলে,,এসবের দরকার নেই আমি খাইনা।তুমি নিয়ে যাও এটা।
লোকটা বলে উঠে স্যার না খেলেও রেখে দিন।আমাদের অর্ডার দেওয়া হয়েছে প্রত্যেক গেস্টদের দেওয়ার জন্য। দায়ান আর কথা বাড়ায় না চুপচাপ বোতল টা নিয়ে দরজা লাগিয়ে দেয়।
বোতলটা বিছানার পাশে টেবিলটাতে রেখে দেয়।
লাগেজ খুলে সোহার একসে’ট জামা নিয়ে বাথরুমের দরজায় ন’ক করে।
সোহা তোমার ড্রেস নাও।
সোহা দরজাটা খুলে হাতটা বাড়িয়ে দেয়।
দায়ান ড্রেস গুলো সোহার হাতে দিয়ে বারান্দায় চলে আসে।
সোহা ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে আসার শব্দ শুনে,,দায়ান রুমে আসে।লাগেজ খুলে নিজের ড্রেস বের করে নিয়ে ওয়াশরুমের দিকে চলে যায়। একবারও সোহার দিকে তাকায় নি এর মধ্যে।
দায়ান ওয়াশরুমে ঢুকে গেলে,,সোহা ও টাওয়াল দিয়ে মাথাটা মুছতে মুছতে বারান্দায় চলে যায়।চার পাশের পরিবেশ টা খুবই মনোমুগ্ধকর। উপর থেকে দেখতে যেমন আরো সুন্দর লাগছে সব কিছু। তারউপর বৃষ্টি হচ্ছে। সব কিছু ভিজিয়ে দিয়ে যাচ্ছে। সোহার ইচ্ছে করছে বৃষ্টির পানি গায়ে মাখাতে।তাতো সম্ভব নয়।কারণ এই অসুস্থতা সব শখ শেষ করে দিয়েছে।তাই কিছুই করার নেই।দূর থেকেই দেখতে হবে।কাছে যাওয়ার অনুমতি নেই।
প্রায় অনেকসময় ধরে এক দৃষ্টিতে বৃষ্টির দিকে তাকিয়ে আছে সোহা।
দায়ান এই দিক দিয়ে ফ্রেশ হয়ে এসে রেডি হয়ে গেছে মিটিং এটেনড করার জন্য।
যাওয়ার আগে সোহাকে ডাক দেয়।
দায়ানের ডাকে সোহা দৌড়ে রুমে আসে।
আমি মিটিং এ যাচ্ছি। জানিনা কতো সময় লাগবে।কিছুসময় পর এসে খাবার দিয়ে যাবে।তুমি খেয়ে নিও আমার জন্য অপেক্ষা করতে হবে না। আর শুয়ে রেস্ট নাও।বাই।
সোহা মাথা নাড়ায় ।
দায়ান সোহার দিকে তাকিয়ে বেরিয়ে যায়।
—————————————–
চারিদিকে জমকালো আয়োজন। সব কিছু হাই ফাই কোয়ালিটি তে করা হয়েছে।আয়োজন দেখলে যে কেউ মুগ্ধ হবে। হবেই না কেনো বড় বড় ব্যবসায়িদের মিলন মেলা বলে কথা।
এর মধ্যে সকলেই প্রায় উপস্থিত হয়ে গেছে। কিছুসময়ের মাঝেই পার্টির মূল আয়োজন শুরু হবে।
সকলে সবার সাথে কথা বার্তা হাই,হ্যালো করতে ব্যস্ত।সবাই তাদের ফ্যামিলি কে সাথে করে নিয়ে এসেছে।
সোহা আর দায়ান ও এই মাত্র উপস্থিত হয়েছে।
সোহা দায়ানের পিছন পিছনে যাচ্ছে। দায়ান যেখানেই যায়।
দায়ানকে কেউ একজন ডাক দেয়।তাকিয়ে দেখে চার-পাঁচ জন দাঁড়িয়ে কথা বলছে।ঐখানে যাওয়ার জন্যই ডাক দেয়।দায়ান ওদের ভালো করেই চিনে।ওদের সাথে বিজনেস ডি’ল করেছে অনেক।না গেলে কেমন দেখায়।তাই কিছুটা কোলাহলহীন ফাঁকা টেবিল দেখে সোহাকে নিয়ে গিয়ে বসায়।
তুমি একটু বসো এখানে।আমি ওদের সাথে একটু কথা বলে আসছি।
ঐখানে তোমায় নিয়ে যাওয়াটা ঠিক হবে না। একদম ভয় পাবেনা।আমি আশেপাশেই আছি।আর কোনো দরকার হলে ফোন তো আছেই আমাকে ফোন দিবা। তুমি এখানেই থাকবে। আবার অন্য কোথাও চলে যেও না ওকে?
সোহা মাথা নাড়ায়।
দায়ান সোহার মাথায় হিজাবের উপর দিয়েই হাত বুলিয়ে মুচকি হেসে চলে গেলো।
দায়ান সবার সাথে কথা বলতে ব্যস্ত হয়ে পরে।
সোহা বসে বসে অরেঞ্জ জুস খাচ্ছে আর আশে পাশের লোকজন দেখছে।কতো রকম কতো মানুষ এসেছে।কেউ খেতে তো কেউ গল্প করতে বিজি।
দায়ান কথা শেষ করে সোহার কাছেই এগিয়ে আসতেছিলো।হঠাৎ করে কেউ সামনে এসে দাঁড়ায়। তাতে দায়ান কিছুটা ভরকে যায়।দুই কদম পিছিয়ে গিয়ে নিজেকে সামলে নেয়।কপাল কোচকে সামনের দিকে তাকায় ।
সামনের মানুষটাকে দেখে।নিজের অজান্তেই অস্পষ্ট স্বরে একটা নাম বেরিয়ে আসে তিশা।
মূহুর্তের মধ্যেই দায়ানের কানে অতীতের কিছু বি/ষা’ক্ত কথা বাজতে থাকে।
আমি তোমার সাথে সারাজীবনের জন্য থাকাতো দূর কোনো সম্পর্কই রাখতে পারবো না দায়ান।তুমি আমায় ভুলে যাও।
— কি বলতেছো তুমি তিশা?
— ঠিকই বলছি। আমি কেনো কেউই তোমার সাথে এখন থাকতে চাইবে না।কি আছে তোমার? ফ্যামিলির সাথে তো বিজনেস টাও রসা’তলে যাচ্ছে। তাছাড়া তোমারতো আর কেউ নেই তুমি একা।ফ্যামিলির মানে তুমি কি বুঝবে? কিছু আছে তোমার সব তো শে/ষ। কেউতো আর নিজে জেনে বুঝে পায়ে কু’ড়ো’ল মারবে না।আমার এতো সুন্দর লাইফটা তোমার একার জীবনের সাথে জড়িয়ে শে’ষ করে দিতে পারবো না। আর তোমাকে একটা কথা বলি? আমিতো তোমার সাথে থাকবো না সিউর।কিন্তু তোমার এই একাকিত্ব জীবনের সাথে আর কাউকে জড়িয়ে তার জীবন টা নষ্ট করো না।
— দায়ান তিশার কথাগুলো শুনে নিজেকে সামলে বলে উঠে,,, কিন্তু আমার এই পরিণতির জন্য কে দায়ী তিশা? সব কিছুতো তোমার জন্যই হয়েছে।
— ওহ প্লিজ দায়ান।এসব ড্রামা তোমায় মানায় না অফ যাও।তোমার মতো এ’তিম ছেলে কে কেউই পছন্দ করবে না।সে যতো সুন্দরই হও না কেনো।সেই তো এ’তি’ম ই এরা সংসার করা,,,ফ্যামিলি এসবের মর্ম বুঝে না।সো প্লিজ আমার আশা ছেড়ে দাও।বাকি জীবন টা তোমার একাই কাটাতে হবে। সো একাই বাঁচতে শিখো।
— জাস্ট শাট-আপ তিশা।আর একটা কথাও বলবে না তুমি।আমার জীবনটা ধ্বং’স করে দিয়েছো তুমি। তোমার জন্য শুধু মাত্র তোমার কারণে আজ আমার বাবা মা আমার সাথে নেই।না তুমি ঐদিন আমায় জোর করতে।আর না ঐ বুদ্ধি টা দিতে। তাহলে সব ঠিক থাকতো।আজ থেকে দায়ানের ঘৃ’ণা দেখবে। ভাবতেও আমার নিজের উপর ঘৃ’ণা হচ্ছে তোর মতো মেয়েকে আমি ভালোবেসে ছিলাম।আজকের পর থেকে আমার সামনে তুই কোনোদিন ও আসিস না।সেই দিন আমি কি করবো নিজেও জানিনা।
দায়ানননন। বলেই তিশা ডেকে উঠে।
তিশার ডাকে দায়ান অতীত থেকে বের হয়ে আসে।
দায়ানের চোখ গুলো টকটকে লাল হয়ে গেছে।রাগে কপালের র’গ ফুলে উঠেছে।
তিশা আরেকটু এগিয়ে এসে দায়ানকে কিছু বলতে নিবে,,,তার আগেই দায়ান অন্য পাশে তাকিয়ে নিজের ঠোঁটের মধ্যে আঙুল দিয়ে তিশাকে বুঝিয়ে দেয়।একটা কথা ও যেনো না বলে।
তবুও তিশা বলার চেষ্টা করে,, দায়ান প্লিজ,,,,,,,,,, আর কিছু বলতে পারে না।তার আগেই দায়ান উল্টো ঘুরে চলে যায়।
তিশার চ’ক্ক’রে দায়ান ভুলেই যায় তার জন্য যে কেউ একজন অপেক্ষা করে আছে।
দায়ান সোজা পার্টি থেকেই বেরিয়ে যায়।সোহা যে একা বসে আছে সে দিকে তার খেয়াল কই।তার ভিতর তো অতীতের ভয়াবহ স্মৃতি এসে ভ’র করেছে।
সোহা প্রায় দুই ঘন্টা সময় ধরে একই জায়গায় বসে আছে।কোমড়টা ব্যাথা হয়ে গেছে। তার উপর দায়ান কে আশে পাশে কোথাও দেখতে পাচ্ছে না।
নাহ এখানে আর এভাবে বসে থাকা সম্ভব না। এক জায়গায় এতে সময় নিয়ে বসে থাকায়।আশেপাশের লোক জন সোহার দিকে তাকিয়ে আছে। তাই কিছু না ভেবেই উঠে দাঁড়ায় সোহা।
দায়ানকে আশে পাশে খুজতে থাকে। কোথাও নেই ওয়াশরুম ও বাদ রাখেনি খোঁজার। কোথাও দায়ানের চিহ্ন টুকুও নেই।হাওয়া হয়ে গেলো নাকি লোকটা? তারপর ফোনের কথা মাথায় আসে। দায়ান বলেছিলো দরকার হলে ফোন দিতে।সোহা কল দিতে থাকে দায়ানকে।কল রিং হয়ে বাজতে বাজতে কেটে যায়। ঐ পাশ থেকে রিসিভ হয় না।অনেকবার কল দেওয়ার পর ও যখন রিসিভ হয় না কল টা তখন সোহা চিন্তায় পরে যায়।উনি ঠিক আছেন তো।ভেবেই রুমের দিকে এগোয়। হয়তো রুমে আছে এটা ভেবে।
রুমে এসে দরজার ন’ব টা ঘুরিয়ে দরজাটা খুলে ভিতরে প্রবেশ করে সোহা। ভিতরে অন্ধকার। সোহা ফোনের ফ্লাশ জালিয়ে রুমের লাইট জালায়।৷
পিছনে ঘুরে দেখতে পায় দায়ান মাথার চুল খামচে ধরে বসে আছে।লাইটের আলো পেয়ে চোখ মুখ কুঁচকে সোহার দিকে একবার তাকায়।
দায়ানের চোখ দেখে সোহা শিউরে ওঠে। একি অবস্থা উনার।
আপনাকে এমন দেখাচ্ছে কেন? ঠিক আছেন আপনি?
বলেই দায়ানের দিকে এগুতে নিবে,,,তার আগেই দায়ানের মুখের বাক্য শুনে থেমে যায়।
একদম আমার কাছে আগানোর চেষ্টা করবিনা।তুই কি ভেবেছিস আমি একা থাকতে পারবো না।দেখ আমি কতো ভালো আছি।চলে যা আমার সামনে থেকে। বে’হা’য়া মেয়ে মানুষ।তর লজ্জা করে না এতো কিছুর পরও আমার কাছে আসার চেষ্টা করিস।টাকা লাগবে তর? বল আমায় কত টাকা লাগবে কতো টাকা হলে মুক্তি দিবি আমায়? আমি তোকে জাস্ট ঘৃ’ণা করি। তুই আমায় আর জালাইস না।মুক্তি দে আমায়।
সোহা দায়ানের কথায় স্ত’ব্ধ হয়ে রয়েছে।উনি আমায় ঘৃ’ণা করে? মুক্তি চায় আমার থেকে। আমিকি উনার টাকার জন্য উনার সাথে আছি।এসব ভেবেই কেদে দেয়।
কাঁপা কাঁপা গলায় বলে উঠে,,, আ-আপনি এগুলা কি বলছেন দায়ান? কি হয়েছে বলেন আমায়? আমি কি কিছু ভুল করেছি? আপনি এগুলো মন থেকে বলছেন না তাইনা দায়ান আমি জানি।
শুধু মন থেকে না অন্তর থেকে বলতেছি এসব বুঝলি? আর ভুল তুই কি ভুল করবি? ভুলতো করেছি আমি তোকে আমার লাইফে জায়গা দিয়ে। কিন্তু আর না তোর ছায়া ও দেখতে চাইনা।বেরিয়ে যা এখান থেকে সাথে আমার জীবন থেকেও।তর মুখ ও আমি দেখতে চাইনা।বলেই অন্য পাশে মুখ ঘুরিয়ে নেয় দায়ান।
সোহা আর দায়ানের কথা গুলো নিতে পারে না।দৌড়ে রুম থেকে বেরিয়ে আসে। বাইরে প্রচন্ড বেগে বৃষ্টি হচ্ছে সেই দিকে সোহার খেয়াল নেই। এক দৌড়ে হোটেল থেকে বের হয়ে মাঝ রাস্তা দিয়েই দৌড়াতে থাকে।হঠাৎ করেই কোথা থেকে একটা গাড়ি দ্রুত বেগে ছুটে আসে।গাড়ির আলোর ঝলকানি চোখে মুখে লাগতেই সোহা চোখ খিচে বন্ধ করে নেয়।এই বুঝি সব শে/ষ।দায়ান ও এবার মু’ক্তি পেয়ে যাবে।
দায়ান সোহার চলে যাওয়ার পর উঠে দাঁড়ায়। বিছানায় ভালো করে শুয়ার জন্য এগিয়ে যায়। হাঁটতে গিয়ে কিছু একটার সাথে হোঁচট খায়। । চোখ কচলে তাকিয়ে দেখে বোতল।আর কিছু না ভেবেই বিছানায় গিয়ে শুয়ে পরে।
আর বির বির করে বলে,,,,,আই হেইট ইউ।আই জাস্ট হেইট ইউ।আমি তোমায় কখনো ক্ষমা করবোনা। কখনো না।স্বা’র্থ’পর। কখনো আমার চোখের সামনে আর আসবানা। আসলে তোমায় খু/ ন করে ফেলবো তিশা।
বলেই ঘুমিয়ে যায়।
#চলবে,,,,,,
বিঃদ্রঃ দায়ানের পুরো অতীত খুব শি’ঘ্র’ই সামনে নিয়ে আসবো।
#তুমি_হাতটা_শুধু_ধরো
#পর্বঃ২৮
#Jhorna_Islam
রোদের তাপ দাহ বেড়েই চলেছে। কাল যেমন বৃষ্টি ছিলো,সব কিছু ভিজিয়ে ধুয়ে মুছে দিয়ে গেছে। আজ তেমনই রোদের উত্তাপ। সময় বাড়ার সাথে সাথে রোদের প্রখরতা ও বেড়ে চলেছে।
প্রচন্ড রোদের তাপমাত্রা জানালার ফাঁক গলিয়ে ভিতরে ঢুকছে। রোদের আলো দায়ানের মুখে পরায়,, ঘুম ভেঙে যায়। দায়ান চোখ মুখ কোচকে পিট পিট করে চোখ খুলে।ঘুম যেনো এখনো পরিপূর্ণ হয়নি।আরেকটু ঘুমুতে পারলে খুব ভালো হতো।চোখ কচলাতে কচলাতে বিছানার উপর বসে পরে। মাথাটা ভা’র হয়ে আছে।চোখ বন্ধ করে কতো সময় মাথার চুল টেনে বসে থাকে দায়ান।
আশে পাশে কোনো কিছুতেই যেনো খেয়াল নেই তার।কই আছে গতকাল কি হয়েছিল সব কিছু মুহূর্তের জন্য মাথা থেকে বেরিয়ে গেছে।
এখনই ক’ড়া করে এক কাপ কফি খেতে হবে।নয়তো মাথার এই ভা’র ভাব সারবে না।
সোহা,,,,,এক কাপ কফি দাও না!!
এইইই সোহা কফি বানিয়ে নিয়ে আসো প্লিজ। মাথাটা প্রচন্ড ভা’র হয়ে আছে। কফি না খেলে শান্তি পাবো না।
আজ এতো লে’ট করতেছো কেনো কফি দিতে? বলেই ঘড়ির দিকে তাকায় দায়ান,,,,,,ঘড়ির দিকে তাকিয়ে ঠোঁট কা’মড়ে চোখ কচলিয়ে আবার তাকায়।
কি আজব ঘটনা ঘড়ি কি ন’ষ্ট হয়ে গেলো নাকি? এতো বেলা হলো কি করে সারে বারোটা বাজে? হাও? বলেই নিজের ফোনটা এদিক ওদিক হাত বাড়িয়ে খোজতে থাকে।
বালিশের পাশেই ফোনটা পায় দায়ান।তারাতাড়ি ফোনটা হাতে তুলে নেয় । ফোন হাতে নিয়ে দেখে ফোনটা বন্ধ হয়ে গেছে। তাই ফোনটা আগে চালু করে।ফোনেও একই সময় দেখে মাথায় হাত। এতো বেলা পর্যন্ত কবে ঘুমিয়েছে দায়ানের মনে পরে না। তার থেকেও বেশি অবাক করা বিষয় হলো,,ফোনের স্ক্রিনে ভেসে থাকা সোহার তেইশ টা মিসড কল।
এসব কি হচ্ছে? বলেই দায়ান নিজের মাথার চুল গুলো টেনে ধরে চোখ বন্ধ করে ফেলে।কালকের ঘটনা গুলো ভাবার চেষ্টা করে। মাথায় একটু চা’প দেওয়া তে সব মনে ও পরে যায়।
কাল রাতের পার্টি।তিশার সাথে দেখা। পার্টি থেকে বেরিয়ে আসা।রুমে এসেই দায়ান খুব অস্থির হয়ে পরেছিলো।কিছুতেই তিশার সাথে দেখা হওয়া তার সাথে কথা বলতে চাওয়া সহ্য হচ্ছিল না।ভিতরটা খুব অস্থির হয়ে গিয়েছিলো।তিশাকে নিজ হাতে মে/রে দিতে পারলে হয়তো শান্তি পেতো।
নিজেকে যখন কিছুতেই শান্ত করতে পারছিলো না তখনই চোখ যায়,, বিছানার পাশে টেবিলের উপর রাখা বোতলের উপর।নিজের ভিতরের অস্থিরতা কমাতে কিছু না ভেবেই বোতল নিয়ে এক নিমিষেই শেষ করে দিয়েছিলো।
তারপর কি হয়েছিলো? তারপর কি হয়েছিলো? নিজেই নিজেকে প্রশ্ন করতে থাকে বারংবার। মাথায় আরেকটু চা’প দিতেই সব মনে হতে থাকে। সোহার কাল রুমে আসা।দায়ান কে দেখে অস্থির হয়ে কাছে আসতে নেওয়া। দায়ান সোহাকে উদ্দেশ্য করে বলা সব কথা। নিজের কানেই বারি খাচ্ছে বারংবার।
দায়ান আঁতকে উঠে। ইয়া আল্লাহ এটা আমি কি করলাম।নে’শা’র ঘোরে সোহা কে তিশা ভেবে আমি কি করে বসলাম।
সোহা,,,সোহা,,,,কই তুমি? গলাটা যেমন আটকে যাচ্ছে দায়ানের।বুক টা কাঁপছে কই গেলো মেয়েটা।বিছানা থেকে তারাতাড়ি নেমে বারান্দা ওয়াশরুম সব চে’ক করতে লাগলো।নাহ কোথাও নেই।সোহা কোথাও নেই।
তারাতাড়ি রুমে থেকে বের হয়ে হোটেলের সব জায়গায় খুঁজে। কোথাও বাদ রাখে না। রিসেপশনিস্টের কাছে গিয়ে ও জিজ্ঞেস করে কেউ কিছু বলতে পারে না।তারপর দারোয়ানের কাছে জানতে চায় দায়ান সোহার একটা ছবি দেখিয়ে। দারোয়ানের কথায় দায়ানের মাথায় আকাশ ভেঙে পরে। রাতের বেলা নাকি দৌড়ে বেরিয়ে গিয়েছিলো। দারোয়ান অনেক ডেকেছে শুনেনি। প্রচন্ড বৃষ্টির কারণে ওনার কথা হয়তো শুনতে পায়নি।
দায়ান আর এক মুহূর্ত ও হোটেলে থাকেনি।গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে পরে।আশেপাশে চোখ বোলাতে থাকে যদি দেখতে পায়। সোহার ফোনে একেরপর এক কল দিতে থাকে। নাহ বার বার বলছে ফোন বন্ধ।
দায়ানের মাথা কাজ করছে না।কই চলে গেলো মেয়েটা।একেতো রাস্তা ঘা’ট কিছুই চিনেনা।এই দিকের।তার উপর প্রচন্ড বৃষ্টি ছিলো এই দিকে।
সোহার কিছু হয়ে গেলো না তো? ভাবতেই বুক টা অজানা ভয়ে কেঁপে ওঠে। না না না দায়ান এসব তুই কি ভাবছিস।কিছু হবে না ওর।কিছু হতেই পারে না।
রাস্তায় অনেক খুঁজেছে। গাড়ি থেকে নেমে ছবি ও দেখিয়েছে লোকজন কে।কেউ কিছু বলতে পারছে না। ক্লান্ত হয়ে রাস্তার পাশেই বসে পরে দায়ান। কই খুজবে এখন মেয়েটাকে। মোবাইল হাতে নিয়ে আবার কল লাগায়।বার বার একই কথা ভেসে আসে।
সন্ধ্যা নেমে এসেছে চারিদিকে। দায়ান এখনো সোহাকেই খোঁজে চলেছে সেই দুপুর থেকে। কোথাও নেই মেয়েটা।
তখনি মনে হলো বাসায় চলে যায়নি তো? ভেবেই তরিঘরি করে উঠে দাঁড়ায়। গাড়ি ঘুরিয়ে নিজের বাসার দিকে ছুট লাগায়।
মনে মনে একটাই দোয়া করতে থাকে। সোহাকে যেনো বাসায়ই দেখতে পায়।
আধা ঘণ্টার রাস্তা দশ মিনিটে ড্রাইভ করে বাসায় আসে দায়ান। দৌড়ে বাড়ির ভিতর ঢুকতে লাগে দায়ান।টেনশনে মাথা থেকেই বেরিয়ে গেছে যে দারোয়ান চাচা কে জিজ্ঞেস করলেই জানতে পারতো সোহা বাড়িতে এসেছে কিনা।
ভিতরে খুব অস্থিরতা কাজ করছে।হাত পা যেমন মৃদু কাপছে। দরজার পাশে এসে অস্থিরতা টা আরো বেশি বেড়ে যায়। তার চেয়েও বেশি অবাক হয়।দরজা লক হওয়ার পরিবর্তে ভিড়ানো দেখে। মনে মনে খুশি ও হয়।তারাতাড়ি করে ভিতরে প্রবেশ করে চারিদিকে চোখ বোলায়।
রান্না ঘর থেকে টুংটাং আওয়াজ আসছে। দায়ান ঐ দিকে এগিয়ে যায়। আস্তে আস্তে করে পা ফেলে।পা জোড়া যেনো চলছেই না।
রান্না ঘরের দিকে এগিয়ে গিয়ে দরজার পাশে দাঁড়ায়। ভিতরের দিকে তাকিয়ে চোখ জোরা কতোক্ষন স্থির হয়ে যায়।
রান্না ঘরের ব্যক্তি টা কারো উপস্থিতি টের পেয়ে পিছনের দিকে তাকায়। দায়ানকে দেখে মুচকি হেসে বলে উঠে,,,,,,,
আরে দায়ান বাবা? তুমি আসছো। তোমরা নাকি কোথাও গিয়েছিলা? আমি আজ সকালেই এসেছি।তোমরা যখন নাই ভাবলাম কাজ গুলো এগিয়ে রাখি। মাত্রই মনে হয় এসেছো? তোমার কি কিছু লাগবে? লাগলে আমায় বলো আমি করে দিচ্ছি। তুমি ফ্রেশ হয়ে আসো।তোমায় খুব ক্লান্ত লাগছে।আমি শরবত করে দিচ্ছি। খেলে ভালো লাগবে।
দায়ান যেমন এখানে স্থির হয়ে গেছে। কতো আশা ছিলো।হয়তো সোহাকে এখানে দেখতে পাবে।। সব আশা ভেঙে গেছে। খা-খালা সোহা,,,,,
বৌমা? চিন্তা করো না বাবা। বৌমার জন্য ও শরবত দিবো।বৌমা ফ্রেশ হতে গেছে তাই না? তুমিও যাও।দায়ান বুঝে গেছে সোহা এখানে আসেনি।
দায়ান আর ঐখানে না দাঁড়িয়ে রুমে চলে আসে। রুমে এসে খাটে হেলান দিয়ে মেঝেতেই হাত পা ছড়িয়ে বসে পরে।
গ্রামে চলে যায় নিতো সোহা? বাই এনি চান্স যদি গিয়ে থাকে। কিন্ত খোঁজ নিবে কি করে সোহার বাড়ির নাম্বার ও তো নেই দায়ানের কাছে।কখনো নেওয়ার প্রয়োজন ও মনে করেনি।আজ আফসোস হচ্ছে কেন করে নি?
পরোক্ষনেই মনে হয় চাচার কাছে তো নাম্বার আছে। ভেবেই চাচাকে কল লাগায়।চাচা হয়তো মোবাইলের পাশেই ছিলো তাই তারাতাড়ি ই রিসিভ করে।
— হ্যা-হ্যালো চাচা।
— হ্যা দায়ান বাবা বলো। কি অবস্থা তোমার কেমন আছো? চাচারেতো ভুইলাই গেছো।কোনো খুঁজ খবর নাই।
— বিজি ছিলাম চাচা।তাই কল করে উঠা হয়ে উঠেনি।
— বুঝি বাবা।আমিতো এমনিই মজা করছিলাম।
— দায়ানের কথা বাড়াতে ইচ্ছে করতেছে না আজ।তাই কোনো ভ’নিতা ছাড়াই বলে উঠে,,, চাচা একটা দরকারে ফোন দিয়েছিলাম তোমাকে।
— কি দরকার বাবা? বলো।
— আসলে চাচা সোহার বাড়ির নাম্বার টা একটু লাগতো।
— এটাতো তুমি সোহার থেকেই নিতে পারো বাবা।
— এতোদিন হয়ে গেছে ওর বাড়ির নাম্বার আমার কাছে নাই। ভাবতেই কেমন দেখায় না? তাই তোমার কাছ থেকে খুজছি চাচা।প্লিজ দাও।
— ঠিক আছে বাবা।বুঝতে পারছি আমি।মেসেজে পাঠাচ্ছি।
— হুম বলেই দায়ান ফোন কেটে দেয়।ভিতরটা কেমন করছে।
মিনিটের মধ্যেই মেসেজের নোটিফিকেশন আসে। তরিঘরি করে দায়ান নাম্বার টা নিয়ে কল লাগায়,, সোহার বাড়িতে।
রাতের খাওয়া দাওয়ার পর্ব শেষ করে সোহার বাবা মা মাত্রই শুয়েছে।গ্রামে নয়টা বাজা মানেই অনেক রাত। ঘুমে চোখটা মাত্র লেগেছে।তখনই ফোনটা বেজে উঠে। সোহার বাবা শোয়া থেকে উঠে বসে ফোনটা হাতে নেয়। অপরিচিত নাম্বার থেকে কল আসায় কপাল কুঁচকে ফেলে।এতো রাতে কে কল দিলো আবার? এসব ই ভাবতে থাকে।
অপর দিক থেকে দায়ান কল রিসিভ হচ্ছে না দেখে অস্থির হয়ে ওঠে।
তারপর সোহার বাবা দরকারি কল ভেবেই রিসিভ করে।
— অপর পাশ থেকে রিসিভ হতেই দায়ান কাঁপা কাঁপা গলায় সালাম দেয়।কি আশ্চর্য দায়ানের স্বর কাপছে।
— সোহার বাবা সালামের জবাব দিয়ে জানতে চায় কে?
— আ- আঙ্কেল আমি বলছিলাম।মানে দায়ান।সোহার হাসবেন্ড। এই কথাটা বলতে পেরে কেনো জানি দায়ানের খুব শান্তি লাগছে।
— সোহার বাবা।নড়েচড়ে বসে।সোহার মাকে আস্তে করে ডাক দিয়ে বলে,,,এই শুনছো দেখো কে ফোন করেছে।আমাদের ছোটে জামাই।আমার ছোটো আব্বা ফোন দিয়েছে রমিলা।।
আস্তে করে বললেও পুরো কথাটাই কানে আসে দায়ানের।কতোটা প্রফুল্ল হয়েছে ওনারা দায়ানের কল পেয়ে।আর সেকি না এক দিন ও তাদের খোঁজ নিলো না।খুব অপরাধ বোধ কাজ করছে।
—- ছোটো আব্বা তুমি কেমন আছো?
— জ্বি আঙ্কেল আলহামদুলিল্লাহ ভালো। আপনারা ভালো আছেন?
— হ ছোটো আব্বা আমরাও ভালো আছি। তা হঠাৎ ফোন দিলা যে আব্বা? সব ঠিক আছে? সোহা কিছু করে নাই তো ছোটো আব্বা? মেয়েটা আমার অনেক অবুঝ,,ছেলে মানুষি করে ফেলে। তুমি কিছু মনে করো না বাপ।একটু বুঝিয়ে শুনিয়ে নিও।বোঝায় বললে ঠিক বুঝবে।
— নানা আংকেল সোহা কিছু করেনি।আমি জানি ও একটু অবুঝ।বাট এরকমই ঠিক আছে।
— সোহা কি পাশে আছে? না মানে ওর সাথে কথা বলতাম আরকি।দুই দিন হলো কথা হয় নাতো তাই।
দায়ান বোঝে গেলো সোহা ঐখানে ও নেই।
— আসলে আঙ্কেল আমিতো এখন অফিসে।সোহা বাড়িতে পরে কথা বলে নিয়েন ওর সাথে।আমি এমনিতেই আপনাদের খবরাখবর নিতে ফোন দিয়েছিলাম আর কি। এখন রাখি? পরে কথা হবে। এক নিশ্বাসে কথা গুলো বলে দ’ম নেয় দায়ান।জীবনে এক সাথে এতোগুলা মিথ্যা কথা কবে বলেছে জানা নাই দায়ানের।
আচ্ছা বাবা ঠিক আছে।আল্লাহ হাফেজ।
——————————————–
বাড়ির চারিদিক টা যেনো হাহাকার করছে। শূন্যতা নেমে এসেছে। সব কিছু নিরব হয়ে আছে।
কই দায়ান তো আগে একাই থাকতো এমন তো হয়নি।আজ কেনো এই শূন্যতা পুরাচেছ। ভিতরটা কেনো এতো হাহাকার করছে।
কেউ রিনিকঝিনিক নূপুরের শব্দ তুলে এগিয়ে এসে বলছেনা,,, শুনছেন খাবেন চলুন।নয়তে অসুস্থ হয়ে যাবেন তো।বুক ব্যাথা করবে।
আপনার কি শরীর খারাপ লাগছে? মাথা ব্যাথা করতেছে? আসুন আমি এখনই মাসাজ করে সব ভেনিশ করে দিচ্ছি। কেউ বকবক করে মাথা ধরাচ্ছে না। আশ্চর্য এতো দিন এগুলা বিরক্ত লাগতো।এখন এসব মিস করছে।মেয়েটার জন্য বুকটা হাহাকার করছে।
কোথায় তুমি সোহা? প্লিজ কাম না।একবার ফিরে আসো।আর কষ্ট দিবো না।
ঐ কথা গুলো তোমায় বলি নি।বলিনি আমি তোমায় ।। কেনো আমি এতোটা অস্থির হতে গেলাম? কেনো আমি ঐসব ছাই-পাশ খেতে গেলাম।কেনো আমি তোমাকে তিশা ভেবে ঐসব কথা গুলো বলতে গেলাম কেনো? কেনো? কেনো? বলেই হাত দিয়ে টেবিল ল্যাম্প টা তে সজোরে আ’ঘাত করে।ল্যাম্পটা সঙ্গে সঙ্গে ভেঙে যায়। হাতে লেগে কাটা হাত দিয়ে আবার র/ক্ত পরা শুরু হয়।ঘা টা এখনো শুকোয় নি।আবার আ’ঘাত পরায়।র/ক্ত পরতে শুরু করেছে টপটপ করে। সেই দিকে দায়ানের বিন্দু মাত্র খেয়াল নেই।
খাটে মাথাটা হেলিয়ে দিয়ে একই কথা বার বার বলছে।ঐ কথা গুলো আমি তোমায় বলিনি সোহা।ভুল হয়ে গেছে আমার।আর হবে না।প্লিজ কাম ব্যাক।তুমি ছাড়া সব শূন্য পরে আছে।এমন শূন্যতা আমার ভালো লাগছে না।
প্লিজ ফিরে আসো।
আই ব্যা’ড’লি নিড ইউ সোহা।তুমি ছাড়া একটা মূহুর্ত ও
বি/ষের মতো যন্ত্রনা দিচ্ছে।
#চলবে,,,,,