তুমি হাতটা শুধু ধরো পর্ব-৪১+৪২

0
441

#তুমি_হাতটা_শুধু_ধরো
#পর্বঃ৪১
#Jhorna_Islam

শহরে এসে দায়ানের আবার যান্ত্রিক জীবন শুরু।ব্যস্তময় মুহূর্ত কাটছে।এতোদিনের ফেলে রাখা কাজ সব এখন করতে হচ্ছে। খাবার সময়টা ও পাচ্ছে না। সেই সকাল আটটায় বের হয়।আসতে আসতে রাত এগারোটা বারোটা বেজে যায়।

সোহা আর নোহার দিন ভালোই কাটছে।সারাদিন দুই বোন গল্প করতে থাকে। এটা ওটা নিয়ে আলোচনায় মেতে থাকে।সোহার সব দুষ্টুমি এখন বোনের সাথে। যেহেতু দায়ান কে এখন খুব একটা কাছে পায় না,তাই সব দুষ্টুমি বোনের সাথেই করে।সারাদিন কাজ করে ক্লান্ত হয়ে যখন বেচারা বাসায় ফিরে। তখন মুখ দেখেই সোহার খুব মায়া হয়।তাই আর নিজ থেকেই জ্বালায় না।

বিকেল হলে দুই বোন বাগানে চলে যায়। সোহার বাগানে এখন ফুলে ফুলে ভরে গেছে।কি সুন্দর লাগে দেখতে।বিকেলের সময়টা দুই বোন বাগানের গাছে পানি দিয়ে গল্প করতে থাকে। সে কতো শতো গল্প,, ছোটে বেলা কি করেছে না করেছে সব।রাতে বসে এক সাথে টিভি দেখা। সব মিলিয়ে দিন চলে যাচ্ছে।

নোহার মাঝে মাঝে নিজের অতীতের স্মৃতি চোখের সামনে ভাসে।যতোই হোক এতোদিন থেকেছে।একটা টানতো থাকবেই।তাও নোহা নিজের মন কে বোঝ দেয়।পাত্তা দেয় না বেশি।এড়িয়ে যায়।হয়তো একদিন এসব কালো অতীত থেকে বের হতে পারবে।

আজ শুক্রবার বিধায় অফিস বন্ধ। দায়ানের ও আজ কাজের চাপ নেই তাই বাড়িতেই আছে।
সকাল দশটা বাজে,দায়ান এখনো ঘুমুচ্ছে।কালও দেরি করে বাসায় আসছে।তাই সোহা আর ডাকেনি।ঘুমুচেছ যখন ঘুমুক।কয়দিন অনেক ধকল গেছে বেচারার উপর দিয়ে।

সোহা আর নোহা রান্না ঘরে রান্নায় ব্যস্ত। আজ অনেক কিছু রান্না করছে।অবশ্য সব নোহাই করছে।সোহা কে কিছু করতে দিচ্ছে না। বলে দিয়েছে তুই পাশে দাড়িয়ে থাক আমি করে দিচ্ছি। তাই সোহা চুপচাপ বসে বসে বোনের রান্না দেখছে।

রুশকে আজ বাসায় দাওয়াত দিয়েছে।সেই যে বাড়িতে দেখা হয়েছিলো আর হয়নি।তাই সোহাই ফোন করে বলে দিয়েছে আসার জন্য। সবাই এক সাথে খেয়ে গল্প করা যাবে।অবশ্য সোহার আরেকটা প্লেন আছে।দায়ান ও যখন বাড়িতে আছে,তাই ভেবে রেখেছে বিকেলে একটু ঘুরতে যাবে সবাই মিলে।তাহলে বোনের ও মনটা ভালো হয়ে যাবে।

সোহার ও শহরে এসে তেমন কোথাও ঘোরা হয়নি।নোহা ও আসার পর থেকে বাড়িতেই আছে।সো সবাই মিলে বাইরে একটু ঘুরাঘুরি করবে।আর বিকেলে খাওয়া দাওয়া করবে।

নোহা মনোযোগ দিয়ে রান্না করছে।সকলের জন্যই সকলের প্রিয় খাবার এক আইটেম করে তৈরি করছে। দায়ানের জন্য দায়ানের প্রিয় তরকারি রান্না করছে প্রথমে নোহা। তরকারি তে যখন মরিচ গুঁড়ো দিতে যাবে তখন সোহা লাফ দিয়ে বলে উঠে,, আপুওওও বেশি দিও না। নোহা ব্রু কোচকে বলে কেনো? তুইনা ঝাল খেতে ওস্তাদ তাহলে বেশি দিতে মানা করছিস কেনো? নোহা অবশ্য জানে না কার প্রিয় খাবার কোনটা।সোহা বলেনি,,সোহা শুধু খাবারের আইটেম গুলোর নাম জানিয়েছে,,এই খাবার গুলো রান্না হবে।

আসলে হয়েছে কি আপু,,,এটাতো আমার জন্য না।না মানে আসলে উনার জন্য। উনি ঝাল খেতে পারে না।তারপর আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে বলে,,এই খাবার গুলোতে ঝাল দিও না।এগুলো রুশ ভাইয়া আর উনার প্রিয় খাবার। আর দুইটার একটা ও ঝাল খেতে পারে না।বলেই মুচকি হাসে।

আহারে ঝাল খেতে পারে না তোমার উনিইই? কিছুটা টেনেই বলে নোহা।

এরই মাঝে দায়ানের ডাক পরে,,সোহাকে চিল্লিয়ে চিল্লিয়ে ডাকছে।
নোহা মুচকি হেসে সোহার গাল টেনে বলে,,যাও তোমার উনিইইই ডাকছে।যাও যাও।

সোহা রুমে যেতে যেতে বলে,, লোকটাও আর সময় পেলোনা আমাকে ডাকার? সব সময় আমায় লজ্জায় ফেলে দেয়। কে বলেছিলো এভাবে ডাকতে।

সোহা রুমে ঢুকতে ঢুকতে বলে,,কি হয়েছে কি এমন ষাঁড়ের মতো চিৎকার করছেন কেনো?

— দায়ান শোয়া থেকে উঠে বসতে বসতে বলে,,হোয়াট! আমি ষাঁড়ের মতো চিৎকার করছি?

— তা নয়তো কি? আশ্চর্য আমার সম্মানের দফা রফা করে দেন।

— আমি আবার কি করলাম?

— কি করেন নি তাই বলেন।এমন ভাবে ডাক দেওয়ার কি আছে? আপুর সামনে আমায় লজ্জায় ফেলে দিলেন।কি ভাবছে আপু বলুনতো?

— কিছুই ভাবছে না তোমার আপু।তোমার মতো গা’ধী না নোহা।

— সোহা এবার কোমড়ে হাত দিয়ে বলে,,এই আপনি কি বললেন আমি গা’ধী? আপনি গা’ধী।থুড়ি গা’ধা।আপনার বউ গা’ধী।বলেই জিহবায় কামড় বসায়।ধুর আপনার বউ তো আমি।গা’ল’তিছে মিসটেক হয়ে গেছে। আপনার বউ গা’ধী এই কথাটা আমি উঠিয়ে নিলাম।।

দায়ান হাসতে হাসতে বলে,,না না উঠাতে হবে না।তুমি একদম ঠিক ধরেছো।আমার বউ আসলেই একটা আস্ত গা’ধী।তানাহলে নিজের বর ডাকলে কেউ লজ্জা পায়।

এই চুপ করেন আপনার সাথে এখন ঝগড়া করার একদম মুড নেই।কি জন্য ডেকেছেন বলুন।নয়তো গেলাম আমি।

আরে কই যাও আমার কফি নিয়ে আসো।
সোহা মুখ ভেংচি দিয়ে চলে যেতে যেতে বলে আনছি।

দায়ান ও মুচকি হেসে ওয়াশরুমের দিকে পা বাড়ায়।আর মনে মনে বলে পা’গলি আমার।

——————————————
নোহার রান্না বান্না শেষ। সব কিছু গুছিয়ে রাখার পালা এবার। সোহা দায়ানের জন্য কফি বানাচ্ছে। নোহাই দিয়েছে বানানোর জন্য। নোহা চায় দায়ানের সম্পর্কটা সোহার সাথে সব সময় সুন্দর গভীর ও ভালো থাকুক।

এমন সময় কলিং বেল বেজে উঠে,,, সোহা কফি বানাতে বানাতে বোনের দিকে একবার আবার দরজার দিকে একবার তাকায়।

আপু তুমি একটু দেখোনা।দরজাটা একটু খোল প্লিজ। হয়তো রুশ ভাইয়া এসেছে।আমিতো কফি বানাচ্ছি।

আ-আমি?
তুই ই যা বোন।

কিছু হবে না।যাও উনার কফি দিতে দেরি হলে আবার রেগে যাবে।তুমি একটু দরজাটা খুলে দাও।আমি রুশ ভাইয়ার জন্য ও কফি নিয়ে নিচ্ছি।

নোহা ধীরে ধীরে হেটে দরজার কাছে যেতে থাকে।।খুবই অস্বস্তি হচ্ছে তার। লোকটার সাথে শুধু একবার দেখা হয়েছিলো।কথাও হয়নি।।এসব ভাবনা ভাবতে ভাবতেই দরজার পাশে এসে আস্তে আস্তে দরজা খুলে দিলো।দরজার ঐ পাশে রুশ দাঁড়িয়ে আছে।

নোহা রুশের দিকে একবার তাকিয়ে চোখ নামিয়ে নেয়। রুশ ভেবে ছিলো সোহা এসে দরজা খুলবে।কিন্তু নোহাকে দরজা খুলতে দেখে মনে মনে বেশ অবাক হয়ে যায়। নোহার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে।রুশের এমন করে তাকাতে দেখে নোহার অস্বস্তির পরিমান বারতে থাকে।দরজার পাশ থেকে সরে দাঁড়িয়ে ভিতরে আসুন বলেই তারাতাড়ি চলে যায়। রুশ নোহার যাওয়ার পানে তাকিয়ে রয় কিছু সময়।তারপর নিজেও ভিতরে ঢুকে পরে।

সোহা কফি বানিয়ে রান্না ঘর থেকে বের হয়ে দেখে রুশ সোফায় বসছে।সোহা হাসি মুখে জিজ্ঞেস করে কেমন আছো রুশ ভাইয়া?

এইতো বোন ভালো আছি তুই কেমন আছিস?

আমিও খুব ভালো আছি।

সোহার কফি নিয়ে যেতে লে’ট হচ্ছে বলে, দায়ান রুম থেকে বেরিয়ে আসে। এসে দেখে তার বউ রুশের সাথে কথায় বিজি।তা ম্যাডাম কফি কি ঠান্ডা করে শরবত বানিয়ে খাওয়াবেন ভাবছেন?

সোহার এতক্ষনে মনে হয় কফির কথা।তাই তারাতাড়ি দায়ান আর রুশের হাতে কফি এগিয়ে দেয়।

রুশ একটা প্যাকেট হাত থেকে সোহার দিকে এগিয়ে দেয়।সোহা প্যাকেট টা হাতে নিতে নিতে বলে,, কি আছে এতে রুশ ভাইয়া?

খুলে দেখ।

সোহা প্যাকেট টা খুলে দেখে,,,,,পুরি- সিঙারা আছে অনেক গুলো।ওয়াও এতোগুলা পুরি-সিঙারা? এগুলাতো আপুর অনেক ফেভারিট। তুমি কি করে জানলে আমার আপু এগুলো খেতে ভালোবাসে?

সবাই ভূত দেখার মতো সোহার দিকে তাকায়। নোহার তো বোনের কথায় স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। রুশের খালি মুখে বিষম খাওয়ার জোগার।অনেক কষ্টে নিজেকে স্বাভাবিক করে বলে,, বোন আমিতো আসার টাইমে দোকান টা সামনে পেলাম,তাই ভাবলাম নিয়ে যাই।অন্য কিছু ভেবে আনিনি,মিনমিনিয়ে বলে।

সোহা নিজের মাথায় নিজেই থাপ্পড় দিয়ে বলে,, উফফ আমি যে কি বলিনা।তুমি কি করে জানবে আপুর পছন্দ। আসলে এসবতো আপু খেতে অনেক লাইক করে।তাই দেখে কি বলতে কি বলে ফেলেছি।তুমি কিছু মনে করো না।

তারপর সোহা ঐগুলা নিয়ে রান্না ঘরের দিকে চলে যায়। দুই বোন মিলে খাবার সাজাতে থাকে টেবিলে। রুশ ও দায়ান টুকটাক কথা বলতে থাকে।

খাবার টেবিলে সাজানো শেষ হলে,, সোহা রুশ আর দায়ানকে ডাকে।রুশ ও দায়ান দু জন এসে টেবিলে বসে।দায়ান নোহাকে আর সোহাকে বলে তোমরা ও বসো।সবাই এক সাথে খাই। আমরা আমাদেরটা নিয়ে খেতে পারবো।সোহা মাথা নাড়িয়ে দায়ানের পাশে বসে পরে।বোনকেও ইশারা করে বসার জন্য। আর দুইটা চেয়ারই বসার জন্য বাকি আছে।একটা রুশের পাশে আরেকটা সামনে।নোহা কি করবে বুঝে পায়না।ইতস্তত করতে থাকে। সোহা ও এদিক দিয়ে জোর করতে থাকে বসার জন্য। তাই কোনো উপায় না পেয়ে সামনের চেয়ারে বসে পরে।

রুশ খাবার খেতে খেতে বলে ওয়াও আমার পছন্দের খাবার? উফফ বোন তুই দিন দিন আরো ভালো রান্না করছিস।খাবার এতো সুস্বাদু হয়েছে না কি বলবো।আমিতো এমন খাবার হলে সারাজীবন বসে বসে খাইতাম।দায়ান ভাই বউ পেয়েছিস একটা।আমার বউ এমন ভালো রান্না করলে,,সারাদিন বসে বসে তার হাতে চুমু খেতাম।
রুশ খাবারের স্বাদ পেয়ে কি বলছে নিজেই জানে না। সবাই অবাক হয়ে রুশের দিকে তাকিয়ে আছে।

সোহা এবার বলে,,কিন্তু এগুলোতো আমি রান্না করিনি। আপু করেছে।

রুশ সোহার কথা শুনে বিষম খায়।কাশতে থাকে অনবরত।নোহা পানির গ্লাসটা এগিয়ে দেয়।রুশ নোহার দিকে তাকিয়ে একটু হাসার চেষ্টা করে তারাতাড়ি পানি ঢক ঢক করে গিলতে থাকে।
তারপর আর কথা বাড়ায় নি।চুপ চাপ খাবার শেষ করে।

————————————————-
খাওয়া শেষ করে সকলেই কিছু সময় বিশ্রাম নিতে চলে যায়। নোহা এখন সোহা আগে যেই রুমে থাকতো সেখানে থাকে।তাই ঐরুমে ঢুকে যায় বিশ্রাম নেওয়ার জন্য।
রুশ গেস্ট রুমে চলে যায় রেস্ট নিতে।

সোহা দায়ানের মাথায় বসে বসে হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। আর দায়ান সোহার কোলে মাথা রেখে চোখ বন্ধ করে আছে।

শুনো সোহা,তুমি কিন্তু আমার পাশে বসবে গাড়িতে। বুঝতে পেরেছো?

কিন্ত?

কোনো কিন্তু না।আমি যা বলছি তাই হবে।নয়তো আমার কথা না শুনলে ম’জা রাতে বুঝাবো। ঐ দিনের শাস্তির কথা মনে আছে নিশ্চয়ই। বলেই,,সোহার পেটে আস্তে করে জামার উপর দিয়েই কাম’ড় মেরে উঠে দাঁড়ায়। তারাতাড়ি তৈরি হও।

উফফ বা’জে লোক একটা।সব সময় জ্বালায় দূর।
বলেই তৈরি হতে যায়।

—————————————–
গাড়ির কাছে এসে দায়ান ড্রাইভিং সিটে বসে পরে।রুশ এখনো গাড়ির পাশে আসে নাই। সোহা দায়ানের পাশে বসতে যাবে,,এমন সময় নোহা সোহার হাত ধরে বলে,,তুই আমার সাথে পিছনে বস।সোহা পরেছে এবার মা’ই’ন’কা চি’পা’য়।দায়ানের দিকে তাকিয়ে দেখে দায়ান সোহার দিকেই তাকিয়ে আছে।
আপু বলছি কি তুই পিছনে বস না।আমি সামনে বসি? না মানে উনার সাথে কথা ছিলো কিছু।

নোহা বোনের দিকে তাকিয়ে ভাবলো থাক,তার বোনটা হয়তো দায়ানের সাথে সময় কাটাতে চায়।বসুক নোহার জন্য না আবার ওদের মধ্যে দূরত্ব সৃষ্টি হয়। তাই বলল,,ঠিক আছে সমস্যা নাই বস।তারপর নোহা পিছনের সিটে বসে পরলো।
কিছুসময় পর রুশ ও আসে গাড়িতে উঠতে। সামনে তাকিয়ে দেখে সোহা দায়ানের পাশে বসেছে।তাই কথা না বাড়িয়ে পিছনের ডোর খোলে বসতে বসতে নোহার দিকে তাকায়। নোহা রুশের দিকে তাকিয়ে জানালার পাশ ঘেঁষে বসে। রুশ ও চুপচাপ বসে পরে।

দায়ান গাড়ি চালাতে চালাতে সোহার একটা হাত টেনে নিয়ে চুমু বসায়।সোহা অবাক হয়ে দায়ানের দিকে একবার পিছনের দিকে একবার তাকায়। পিছনে তাকিয়ে দেখে নোহা বাইরে তাকিয়ে আছে। রুশ ফোন টিপছে।এবার দায়ানের দিকে তাকিয়ে বলে,, আপনিতো বে’শ লু/চু।এই জন্যই আমায় সামনে বসতে বলেছেন তাই না?

দায়ান সোহার দিকে তাকিয়ে চোখ টিপ মেরে বলে,,সেটা তোমার মোটা মাথায় এতোক্ষনে ঢুকলো?
সোহা দায়ানের দিকে চোখ কটমট করে তাকায় কিছু বলে না।
———–
প্রায় আধা ঘণ্টা পর দায়ান একটা পার্কের কাছে এসে গাড়ি থামায়।তারপর গাড়ি থেকে নেমে সবাই মিলে এদিক ওদিক ঘুরতে থাকে।সোহা তো প্রায় লাফালাফি শুরু করে দিয়েছে।

হঠাৎ করেই সোহা হাওয়াই মিঠাই দেখে।খুশিতে চকচক করে উঠে চোখ জোরা। দায়ানের হাত ধরে টানতে টানতে নিয়ে যায় কিনে দেওয়ার জন্য।

নোহা আর ওদের সাথে আগায় নি।ঐখানেই দাড়িয়ে রয়।
ঠিক তখনই পাশে এসে রুশ দাঁড়ায়। নোহা একবার রুশের দিকে তাকিয়ে চোখ সরিয়ে নেয়।

রুশ গলা খেঁকারি দিয়ে বলে,,কেমন আছেন?

–নোহা ইতস্তত করে বলে জ্বি আলহামদুলিল্লাহ ভালো। আপনি?
— এইতো চলে যাচ্ছে কোনো রকম।
‘,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,নোহা আর কিছু বলছেনা দেখে রুশই বলে,,

আমার জীবনে কাউকে এতোটা প্রতিবাদী হতে দেখিনি।আপনিই প্রথম। সত্যি বলতে প্রতিটা নারীরই উচিত সব মুখ বুঁজে সহ্য না করে,অন্যায়ের প্রতিবাদ করা।সবাই কিন্তু এতোটা সাহস করে না।ব’দ’না’ম নিজের ক্ষতির ভয়ে।আপনি সত্যিই সবার থেকে আলাদা।দেরিতে হলেও আপনি যে একটা খুব ভালো সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তার জন্য আপনার প্রতি আলাদা একটা শ্রদ্ধাবোধ কাজ করছে।

“ধন্যবাদ আপনাকে।”

এরপর ভবিষ্যতে কি করবেন ভাবছেন?

এখনো কিছুই ভাবিনি দেখি ভাগ্য কোথায় নিয়ে যায়।

সোহা একেরপর এক হাওয়াই মিঠাই নিয়ে চলেছে।দায়ান ও কম না বলে দিয়েছে কিনো ঠিক আছে। কিন্তু তুমি একটার বেশি খেতে পারবে না।পার্কে থাকা বাচ্চাদের দিয়ে দিবে।সোহা বলেছে ঠিক আছে আমি দুইটা রাখবো।

রুশ দায়ান আর সোহার দিকে তাকিয়ে বলে,, ওদের খুব সুন্দর মানিয়েছে তাই না।কি সুন্দর লাগছে এক সাথে দেখতে।

নোহা ও রুশের কথা মতো সামনে তাকিয়ে বলে,, হ্যা খুব সুন্দর লাগছে।

গম্ভীর, রা’গী ছেলে ভার্সেস চঞ্চল, দুষ্টু মেয়ে।বলেই রুশ নোহার দিকে তাকায়।

রুশের কথা শুনে নোহা মুচকি হাসে

#চলবে,,,,,,,,,,,

#তুমি_হাতটা_শুধু_ধরো
#পর্বঃ৪২
#Jhorna_Islam

সোহার এক্সাম শুরু হয়ে গেছে ইয়ার চেঞ্জ। সে এখন পড়া নিয়ে প্রচুর বিজি। পড়তে একটুও ভালো লাগে না।এতোদিন শুধু দায়ান পড়ার জন্য চা’প দিতো।এখন নোহা ও যুক্ত হয়েছে। দুইটায় সারাক্ষণ মিলে কানের কাছে এক তবলাই বাজিয়ে চলে পড়ো পড়ো আর পড়ো।

একটু শান্তি নাই।পড়ার টেবিলে বসে,বইয়ে মুখ গোজে বসে থাকতে হয়।কোনো কাজ ও করতে দেয়না নোহা।সব কাজ নিজে করে।নয়তো জমেলা খালাকে সাহায্য করে।

আজ সোহার এক্সাম আছে।তাই দায়ানের সাথেই বেরিয়ে গেছে।দায়ান সোহাকে ভার্সিটিতে দিয়ে তারপর অফিসে যাবে।নোহার বাড়িতে একা একাই সময় কাটছে।

বাইরে থেকে ঘুরে আসার আজ পনেরো দিন হয়ে গেছে।ঐ দিনটা সবারই অনেক ভালো কেটেছে।গল্প গু’জ’বে হাসি ঠাট্টার মাধ্যমে। নোহার সঙ্গে প্রায় অনেকসময় ধরেই কথা বলেছে রুশ। নোহার মধ্যে রুশকে নিয়ে যে জড়তা টা ছিলো তা অনেকটাই কেটে গিয়েছিলো সেদিন।নোহা বুঝতে পেরেছিলো সোহার কথাটাই সত্যি। রুশ ততটাও খারাপ নয়।অনেক মিশুক।আর সোহার মতোই তার মানুষকে হাসানোর ও মন ভালো করার ক্ষমতা রয়েছে।এর মধ্যে যদিও রুশের সাথে দেখা হয়নি।

দায়ান সোহাকে ভার্সিটিতে দিয়ে,মাত্রই অফিসে এসেছে। নিজের ক্যাবিনে গিয়ে বসতেই মনে পরলো তার মিটিং এর ফাইল সাথে আনতে ভুলে গেছে। এখন আবার বাড়িতে যেতে হবে ভাবতেই ভালো লাগছেনা।ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে মিটিং শুরুর আরো অনেক সময় বাকি। চোখ বন্ধ করে চেয়ারে কতক্ষন মাথা হেলিয়ে রাখে।

তারপর মাথায় আসে রুশ এখনো আসেনি।হয়তো রাস্তায় আছে।রুশকে বললেই তো নিয়ে আসতে পারবে।তাই দেরি না করেই ফোন লাগায় রুশ কে।

— হ্যা দোস্ত বল।

— কই আছিস তুই?

— আমিতো রাস্তায় আসতে আর বেশি টাইম লাগবে না।স’রিরে একটু লে’ট হয়ে গেছে। আসলে আজকে ঘুম থেকে উঠতে একটু লেট হয়ে গেছে।

— আরে ওসব রাখ।কোনো ব্যাপার না।তোকে একটা কাজ দিচ্ছি সেটা করে দেন অফিসে আয়।

— কি কাজ?

— আসলে মিটিংয়ের জন্য যেই ফাইলটা দরকার ঐটা বাড়িতে রেখে এসে পরেছি।তুই যেহেতু রাস্তায় আছিস আমার বাড়ি থেকে নিয়ে তারপর অফিসে আয়।মিটিং এর আরো অনেক সময় বাকি।সো আস্তে ধীরেই যা।

— কিন্তু সোহার না এক্সাম? ওতো বাড়িতে নেই।

— আরে নোহা আছে না।ওকে বললেই পাবি এবার যা।

— ঠিক আছে। যাচ্ছি।
—————-

নোহা সোফার উপর বসে বসে সুই সুতা দিয়ে একটা ব্যা’গ বানাচ্ছে। এসব খুব ভালো করেই পারে।এখন যেহেতু অ’লস সময় সোহা ও বাড়িতে নেই।তাই এই কাজ করাই ভালো।সারাক্ষণ শুয়ে বসে থাকতেও ভালো লাগে না।

প্রায় পনেরো মিনিট পরই রুশ দায়ানের বাসায় এসে পৌঁছায়। দরজার পাশে এসে কলিং বেল দেয়।

নোহা হঠাৎ করে কলিং বেল বেজে উঠায় কিছুটা ভ’য় পেয়ে যায়। হাতে গিয়ে সুই বিঁধে। ততোটা না লাগলেও একটু ব্যাথা পায়।

দরজার দিকে তাকিয়ে ভাবে এখন তো কারো আসার কথা না।কে আসলো? বোন তো মাত্র কিছুসময় আগেই বের হয়েছে।ওরাতো বলেও গেছে দরজা না খুলতে ওরা ফোন করার আগে।

নোহার ভাবনার মাঝেই দায়ান এর কল আসে নোহার ফোনে।নোহা তারাতাড়ি রিসিভ করে।

হ্যালো নোহা? আসলে রুশ একটু বাড়িতে যাচ্ছে। আমার একটা ফাইল রেখে এসে পরেছি ভুলে।ঐটাই ওকে আনার জন্য পাঠিয়েছি।তুমি দরজা খুলে দিও।আর ফাইল টা আমার রুমের টেবিলের উপর রাখা,প্লিজ বোন ওকে এনে দিও।

ঠিক আছে।

হুম বলেই দায়ান ফোন কেটে দেয়।নোহা বুঝতে পারে হয়তো রুশই এসেছে।তাই দরজা খুলে দেওয়ার জন্য এগিয়ে যায়।

রুশ একের পর এক কলিং বেল বাজিয়েই যাচ্ছে। আবার বেল বাজাতে যাবে এমন সময় দেখে দরজা খুলে গেছে।

নোহা রুশের দিকে তাকায়,, রুশ মুচকি হেসে বলে,,বাপরে আরেকটু লেট হলে দরজা খোলার জন্য,,, ইতিহাসের পাতায় আমার নাম উঠে যেতো।যে এক যুবক কলিং বেল বাজাতে বাজাতে ক্লান্ত হয়ে শ’হী’দ হয়ে গেছে।

নোহা রুশের কথায় মুচকি হেসে বলে,,আসলে আমি বুঝতে পারিনি আপনি।আর দায়ান ও আমায় এইমাত্র ফোন করে বলল যে আপনি আসবেন।

তা ম্যাডাম এই অ’ধমকে কি বাইরেই দার করিয়ে রাখবেন? নাকি একটু ভিতরে ঢুকার অনুমতি পাবো?

এমা ছিঃ ছিঃ কি বলছেন এগুলো? আসুন ভিতরে আসুন বলেই নোহা দরজার মাঝখান থেকে সরে দাঁড়ায়।

রুশ ভিতরে এসে সোফায় গিয়ে ধপাস করে বসে পরে।খুব টা’য়া’র্ড লাগছে। এখানেই বসে থাকতে মন চাচ্ছে। সকালে ঘুম থেকে ওঠে দেখে লেট হয়ে গেছে।দৌড়ের উপর রে’ডি হয়েছে।

নোহা দায়ানের রুমে ঢুকে টেবিলের উপর থেকে ফাইলটা নিয়ে আসে। এনে রুশের হাতে দেয়।রুশ মুচকি হেসে ফাইলটা হাতে নিয়েই বসে থাকে।

আপনি বসুন আমি পাঁচ মিনিটে আসছি।

কোথায় যাবেন আমি এখনই চলে যাবো।

বসেন বেশি টাইম লাগবে না। রুশ মাথা নাড়িয়ে সায় দেয়।

নোহা তারাতাড়ি রান্না ঘরে ঢুকে।কিছু সময় পরই হাতে দুই কাপ কফি নিয়ে আসে।এক কাপ রুশের দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বলে,,নিন খান ভালো লাগবে।

রুশ কফিটা হাতে নিতে নিতে বলে,, আরে এসব কেনো করতে গেলেন কষ্ট করে শুধু শুধু?

এতোটাও কষ্ট হয়নি কফি বানাতে।আপনাকে দেখে টায়ার্ড মনে হচ্ছে খেলে ভালো লাগবে। আর আমার জন্য ও এনেছি।

রুশ কফির কাপে এক চুমুক দিয়ে চোখ বন্ধ করে রাখে।আহ্ কি টেস্ট! মনে হচ্ছে প্রথম বার এমন টেস্টি কফি খাচ্ছে। মেয়েটার হাতে জা’দু আছে।উমম এতো ইয়াম্মি কফি আমি আমার জীবনেও খাইনি।

নোহা বলে,,এটা একটু বেশি প্রসংসা হয়ে গেলো না?

মোটেও না সত্যি বলছি জাস্ট অসাধারণ। আপনার ঐদিনের রান্না করা খাবারের স্বাদ এখনো আমার জি’বে লেগে আছে।

— আবার সময় করে আসবেন। রান্না করে খাওয়াবো।

— তাতো অবশ্যই। আমি আবার কেউ দাওয়াত দিলে না করিনা।

— আপনি খুবই পে’টু’ক মনে হচ্ছে। বাট দেখে কিন্তু বোঝা যায় না।

— হ্যা তা আর বলতে। প্রথম যখন সোহার হাতে রান্না খেতে এসেছিলাম তখন কি হয়েছে জানেন? তারপর রুশ ভর্তা খেয়ে কি হা’ল হয়েছিলো সব নোহা কে বলে।

রুশের ঝাল খাওয়ার কাহিনী শুনে নোহা আর নিজেকে আঁটকে রাখতে পারে না।জোরে খিলখিলিয়ে হাসতে থাকে।

নোহার হাসিতে রুশের চোখ আঁটকে যায়।মুগ্ধ নয়নে নোহার হাসির দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রয়।

নোহা হাসতে হাসতে নিজের চোখের কোনায় পানি জমে গেছে।নিজেকে কিছুটা স্বাভাবিক করে রুশের দিকে তাকায়। রুশকে নিজের দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে কিছুটা ইতস্তত বোধ হতে লাগে। তারপর গলাটা একটু খেঁকারি দেয়,

রুশ নিজের মুগ্ধতা থেকে বেরিয়ে আসে। প্রসঙ্গ ঘুরানোর জন্য বলে,,থেংকস ফর কফি।এটার সত্যি প্রয়োজন ছিলো।সকালে তারাহুরো তে আর খাওয়া হয় নি।এখন না খেলে আর হয়তো খাওয়া ও হতো না।সারাদিন মাথা ধরে থাকতো।

নোহা কিছু বলে না।

রুশ কাপটা রেখে ফাইল হাতে নিয়ে উঠে দাঁড়ায়। দরজার পাশে যেতে যেতে বলে,, দরজাটা লাগিয়ে নিন।

নোহা ও উঠে রুশের পিছন পিছনে যায় দরজা আটকানোর জন্য ।

রুশ দরজার বাইরে গিয়েও আবার নোহার দিকে তাকিয়ে বলে,,, প্রাণ খুলে হাসতে শিখুন।
মন খুলে বাঁচতে শিখুন। আপনাকে হাসলে কিন্তু অনেক সুন্দর লাগে।তাই সব সময় হাসি খুশি থাকবেন।

বলেই রুশ বড় বড় পা ফেলে চলে যায়।

নোহা রুশের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে দরজা বন্ধ করে দেয়।

————————————

রাতে সোহা বসে বসে পড়ছে,আর দায়ান বসে লেপটপে অফিসের কাজ করছে। প্রায় এক ঘন্টা পরার পর আর মন বসছে না পড়াতে।উফফ পড়াশোনা করতে করতে জীবন টা তে’না তে’না হয়ে গেলো।

কিছু সময় বসে বসে এটা ওটা ভাবতে লাগলো। তারপর মাথায় হাত দিয়ে দেখে চুলের অবস্থা বারোটা বেজে আছে।না আচরালেই নয়।আর সোহার এখন মোটেই চুলের ঝামেলা নিজে থেকে করতে মন চাইছে না।

তাই টেবিল থেকে উঠে দাঁড়ায়,, ড্রেসিং টেবিলের সামনে থেকে চিরুনি নিয়ে ঘুরে দাঁড়ায়,,, নোহার কাছে যাবে বলে।

ঠিক তখনই দায়ান তার লেপটপ অফ করে সোহার দিকে তাকিয়ে বলে কই যাওয়া হচ্ছে?
আসলে দেখেন না মাথার চুলের কি অবস্থায়। না আচড়ালেই নয়।বাবুই পাখির বাসা হয়ে আছে। তাই আপুর কাছে যাচ্ছিলাম।আমি এসব ঝামেলা একদমই পারবো না।

কোথাও যেতে হবে না। এদিকে এসে আমার পাশে বসো।

কি বলছেন? দেখেন আমার চুলের কি অবস্থা। আজকে না ঠিক করলে পা’গলের মতো লাগবে।

আমিতো বলছি আমার কাছে এসে বসো।আমি ঠিক করে দিচ্ছি।

আপনি পারবেন?

হুু আসো।

সোহা গিয়ে দায়ানের পাশে বসে। দায়ান সোহার হাত থেকে চিরুনি নিয়ে আস্তে করে চুল আচরে দিতে থাকে।

জানেন এজন্যই আমার বড় চুলের ঝামেলা ভালো লাগে না।অ’স’হ্য লাগে। উফফ কতো যত্ন নেওয়া লাগে।শুকাইতে সময় লাগে।ছেড়েও রাখা যায় না।কতো বলেছি আমি এই বড় চুল রাখবো না।মা শুনেনি মা ই যত্ন সহকারে সব করতো।আমি চুলে বেশি হাত ও লাগাতাম না।এখন এসব ঝামেলা ভালো লাগছেনা।মা ও নেই ভাবতেছি কেটে ফেলবো।

দায়ান এতোসময় চুল আঁচড়ে দিতে ছিলো একমনে।সোহার চুল কেটে ফেলার কথা শুনে, চিরুনি রেখে সোহার চুল মুঠো করে ধরে।সোহা আহ্ কি করছেন? লাগছে তো বলেই মাথা উল্টিয়ে দায়ানের দিকে তাকায়।

দায়ান হাতের বাঁধন আলগা করে,, ঝুঁকে সোহার কপালে চুমু খায়।।।

যা বলেছো বলেছো,নেক্সট টাইম আর বলবা না ওকে?

সোহা ফ্যাল ফ্যাল করে দায়ানের দিকে তাকিয়ে রয়।

তুমি জানো তোমার চুলের প্রতি আমার কতো দূর্বলতা? তোমাকে কিছু করতে হবে না।এতোদিন মা তোমার চুলের যত্ন নিয়েছে এখন থেকে আমি নিবো।তাও চুল কাটার কথা একদম বলবেনা ঠিক আছে?

সোহা মাথা নাড়ায় যে সে বলবে না।

দায়ান মুচকি হেসে আবার সোহার চুল আঁচড়িয়ে সুন্দর করে বে’নি করে দেয়।

সোহাতো বে’নি দেখে অবাক।ওয়াও কতো সুন্দর করে বে’নি করতে পারেন আপনি।এমন ভাবে তো আমিও পারি না।

আগে মাকে করে দিতাম।আর আমি নিজেই শিখে ছিলাম।মাকে আর নিজের বউকে করে দেওয়ার জন্য।

সোহা বসা থেকে উঠে ঘুরে দাঁড়ায়।কোমড়ে হাত রেখে বলে,,সত্যি করে বলেন তো আপনি শুধু মাকেই বে’নি করে দিয়েছিলেন? নাকি ঐই তিশা,ফিশা কেও করে দিয়েছিলেন? নেকি কান্না শুরু করে।

দায়ান কপাল কুঁচকে সোহার দিকে তাকিয়ে বলে সাট আপ,, আমি আমার মা আর বউয়ের জন্য শিখেছি।আর তিশা আমার বউ ছিলো না ইডিয়ট। ওর সাথে এমন গ’ভীর সম্পর্ক ও ছিলো না।ওর কথা আরেকদিন তুলবা তো তোমার খবর আছে। মেয়ে মানুষের কাজই হচ্ছে দুই লাইন বেশি বোঝা। বলেই চিরুনিটা হাত থেকে রেখে বারান্দায় চলে যায়।

সোহা নিজের মাথায় নিজেই থা’প্পড় মেরে বলে,এই রে দিলিতো রা’গিয়ে।বলেই নিজেও বারান্দায় চলে যায়।

দায়ান আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে।সোহা পিছন থেকে গিয়ে দায়ানকে ঝা’পটে ধরে।পিঠে মাথা ঠেকিয়ে বলে,,রাগ করেছেন? আমি অনেক গুলা স’রি। আমিতো সিরিয়াস ভাবে বলি নাই মজা করছি।

দায়ান সোহাকে পিছন থেকে সামনে এনে জড়িয়ে ধরে। মাথায় চুমু খেয়ে বলে এমন ম’জা আর করবানা ঠিক আছে? আমি অতীত ভাবতে চাই না।তুমিই আমার সব।ভালোবাসি অনেক আমার পা’গলিটাকে।

সোহাও দায়ানের বুকে থুতনি রেখে দায়ানের দিকে তাকিয়ে বলে,, আমিও ভালোবাসি আমার এই বরটাকে।

————————————–
সময়ের চাকা ঘুরতে ঘুরতে ছয় মাস পার হয়ে গেলো আরো।দায়ান সোহার ভালোবাসাময় জীবন অতিবাহিত হচ্ছে। রা’গ অভিমান,খুনসুটি সব মিলে খুব ভালো সময় কাটছে।

রুশ আর নোহার জীবন ও ভালো না হলেও খুব খারাপ যাচ্ছে না। এর মধ্যে আরো কয়েকবার দেখা হয়েছিলো ওদের।এখন সম্পর্কটা বন্ধুত্বপূর্ণই ওদের বলা চলে।

এখন বিকেল সময়।নোহা ঘুমুচেছ। তাই সোহা নোহাকে না ডেকে বাগানে এসে পড়ে। দায়ানের ও আজ অফিস ছুটি তাই সে বাড়িতে।

সোহাকে বাগানে যেতে দেখে দায়ান ও যায়।অনেকদিন বাগানে যাওয়া হয় না।

সোহা গাছে পানি দিচ্ছে আর গুন গুন করে গান গাইছে। দায়ান পিছন থেকে সোহার গালে চুমু দিয়ে দোলনায় গিয়ে বসে পরে। হাতে মোবাইল নিয়ে দেখতে থাকে।এমন একটা ভাব যেমন কিছুই হয়নি।

সোহা দুই মিনিটের জন্য স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে।তারপর দায়ানের দিকে কটমট করে তাকায়।

এইই আপনার সমস্যা কোথায়? ঘর বাহির তো কিছুই দেখা যায় মানেন না আশ্চর্য।যদি কেউ দেখে ফেলতো।

দেখলে দেখতো।দায়ানের এমন খাপ’ছাড়া কথা শুনে সোহা কি বলবে আর খুজেই পায় না। তাই চুপচাপ পানি দিতে থাকে।

ঠিক সেই সময় দায়ানের ফোনে রুশের কল আসে।

— হ্যা রুশ বল,,,,,

— আমি সব ব্যবস্থা করে রাখছি।কাল গিয়ে কিছু ফর্মালিটি পূরণ করলেই হবে।

— দেখে শুনে নিয়েছিস তো? পরে যেনো কোনো ঝামেলা না হয়।

— হ্যা সব দেখে শুনে নিয়েছি।কোনো ঝামেলা হবে না। তুই নোহাকে বলেছিলি এবিষয়ে?

— হ্যা বলেছি।কাল তাহলে তুই নোহাকে নিয়ে যাস।আর সাথে সোহা ও যাবে।ওদেরকে নিয়ে যাইস।

— ওকে তুই নোহাকে ফোনটা দে আমি সব বুঝিয়ে বলে দেই।ওরতো মনে হয় অনেক ধারণা আছে এ বিষয়ে। কোনো ঝামেলা হবে না।আর অনেক কিছু নিজে তৈরি ও করতে পারে।এখানে কিছুদিন ট্রেনিং নিলে সব কিছু পারবে।নিজেই স্বাবলম্বী হতে পারবে।

— হুম।আমি মানা করেছিলাম।দেখনা জেদ ধরে বসে আছে। নিজে কিছু করবে।অন্যর উপর নির্ভরশীল হবে না।আমিও ভেবে দেখলাম,,ওর নিজের স্বাবলম্বী হওয়ার দরকার।
আর শোন কাল আমি মিটিং সামলে নিবো তুই ওদের নিয়ে যাস। নোহা এখন ঘুমুচেছ। পরে কথা বলে নিস।

— ওকে সমস্যা নাই। সোহা কি করে?

দায়ান চোখ তুলে সোহার দিকে একবার তাকায়। সোহা গাছের যত্ন নিতে বিজি।

” আমার ফুল তার ফুল গাছের যত্ন নিচেছ।”

#চলবে,,,,,,,,,,,