#তুমি_হাতটা_শুধু_ধরো
৩১+৩২
#পর্বঃ৩১
#Jhorna_Islam
সোহাকে চুপচাপ বসে থাকতে দেখে দায়ান সোহার হাতটা নিজের মাথায় টেনে নেয়।
মাথাটায় একটু হাত বুলিয়ে দাওতো ঐদিনের মতো।মাথাটা খুব ধরেছে।খুবই আদুরে ভঙ্গিতে বলে।
সোহা চুপচাপ মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে থাকে।
দায়ান সোহার হাতের ছোয়া পেয়ে চোখ বুঁজে নেয়।।।
আরেকটু জোরে টানো। বলেই চুপ হয়ে যায়।
সোহা প্রায় বিশ মিনিটের মতো দায়ানের মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়। তারপর দায়ানের দিকে তাকিয়ে দেখে লোকটার গভীর নিশ্বাস পরছে।ঘুমিয়ে গেছে।জাগাতে ইচ্ছে করলো না।আরো আধা ঘণ্টার মতো দায়ানের দিকে এক ধ্যানে তাকিয়ে বসে রইলো।
পরোক্ষনেই মনে হলো দায়ানের খিদে পেয়েছে অনেক বলেছিলো।কিছুই খাওয়া হয়নি এই কয়দিন। চোখ মুখ শুকিয়ে আছে।এরকম ভাবে না খেয়ে থাকলেতো অসুস্থ হয়ে পরবে।
এখনই ডাকতে হবে লোকটা কে ভেবেই সোহা আস্তে করে দায়ানকে ডাকে,,, শুনছেন? উঠুন খাবেন না? আপনার না খিদে পেয়েছে?
দায়ানের কোনো সারা শব্দ নেই সে ঘুমে ব্যস্ত। সোহা আবার ডাকে দায়ানকে তাও কোনো সারা পায় না।
এইবার দায়ানের শরীরে একটু ধা’ক্কা দিয়ে ডাক দেয়।
দায়ান নড়েচড়ে ঘুমু ঘুমু কন্ঠে বলে,,,একটু ঘুমোতে দাও না।প্রচুর ঘুম পেয়েছে।এই কয়দিন এক ফোঁটা ও ঘুমোতে পারি নি।এখানে তোমার কোলে প্রচুর শান্তি লাগছে ঘুমোতে।বলেই আবার চোখ বুজতে নেয় দায়ান।সোহা দেয়না তারাতাড়ি দায়ানকে কোল থেকে উঠিয়ে দেয়।
দায়ান এতে কিছুটা বিরক্ত হয়ে বিরক্তিকর চোখে সোহার দিকে তাকায়।
সোহা দায়ানকে পা’ত্তা না দিয়ে ব’লে উঠে,,,,, ঘুম পরে আগে খাওয়া।আপনার না খিদে পেয়েছে? উঠুন খাবেন চলুন।পরে যতো ঘুম পারেন ঘুমিয়ে নিয়েন।এখন খেয়ে নিবেন আসুন।এখন ঘুম আসলেও পরে খিদের জন্য ঠিক ঘুম ভেঙে যাবে।আরাম করে ঘুমোতে পারবেন না। সো চুপচাপ আসুন খেয়ে গিয়ে ঘুমান।নয়তো খাবার ঠান্ডা হয়ে যাবে।
দায়ান আড়মোড়া ভেঙে উঠে দাঁড়ায়,, ঠিক আছে তুমি যাও।আমি চোখে মুখে পানি দিয়ে আসি।নয়তো চোখ থেকে ঘুম সরবেনা।খেতেও পারবোনা।সোহা মাথা নাড়িয়ে চলে যায়।
খাবার টেবিলে খাবার প্লেটে নিতে নিতেই দায়ান এসে পরে।সোহা দায়ানের দিকে তাকায়। বিনিময়ে দায়ান মুচকি হাসি দেয়।
সোহা দায়ানের সামনে প্লেট দিয়ে বলে নিন খাওয়া শুরু করুন।
দায়ান একবার প্লেটের দিকে তো একবার সোহার দিকে তাকায়।
অসহায়ের মতো বলে,,,,তুমি আমার সাথে মজা করার জন্য এনেছো না।আমার হাতের অবস্থা দেখে ও তুমি আমায় নিজ হাতে খেতে বলছো? ঠিক আছে আমি খাবো না। তুমি খেয়ে নাও।আমি গেলাম।আমার খিদে নেই ঘুম পেয়েছে ঘুমোবো।
চুপচাপ বসুন এখানে দিচ্ছি খাইয়ে।একদম উঠবেন না।
দায়ান মনে মনে খুশি হলেও বাইরে প্রকাশ করলো না।দায়ান তো এটাই চায় সোহা তাকে সব সময় খাইয়ে দেক।সোহার হাতে খাবার খেয়ে দায়ান তৃ’প্তি পায়।
সোহা চুপচাপ দায়ানের পাশের চেয়ারটা টেনে বসে পরে। খাবার প্লেট টা নিজের কাছে এনে ভাত মাখাতে থাকে।মনে মনে ভাবে ভালো হয়েছে আজ খালা ভাত করেছে। লোকটার এতোদিন ধরে ভালো মতো খাওয়া নেই।ভাত না খেলে শরীরে ব’ল পাবে না।সোহা ভাত মাখাতে ব্যস্ত।
দায়ান সোহাকে দেখতে ব্যস্ত।
সোহার ভাত মাখানো হলে দায়ানের মুখের কাছে এক লোকমা নিয়ে ধরে।
সোহা যে মুখের সামনে খাবার ধরে আছে,,দায়ান এখনো বুঝতেই পারেনি। সে সোহাকে দেখে চলেছে।ধ্যা’ন ভাঙে সোহার কথায়।
কি হলো কই হারিয়েছেন গেলেন? কখন থেকে মুখের সামনে খাবার ধরে আছি।নিন খান তারাতাড়ি।
দায়ান কিছুটা হকচকিয়ে যায়।পরোক্ষনে নিজেকে সামলে,,হাসি মুখে হা করে।সোহা খাবার মুখে তুলে দেয়।
দুই লোকমা খাবার পরই দায়ান দুষ্টুমি করে সোহার হাতে কা’মড় বসায়।সোহা উহ্ বলে উঠে ।
ছিঃ বউ এগুলা কি ধরনের আওয়াজ? লোকে শুনলেতো খারাপ ভাববে।মজার ছলে বলে দায়ান।
সোহা মনে মনে বলে বে’টা খ/বি’শ। আমার সাথে মজা নেয়।
মুখে বলে,,, একদম বা’জে কথা বলবেন না বলে দিলাম। হাতে কাম’ড় দিয়েছেন কেনো? রা/ক্ষস হয়েছেন।বলেই চোখ রাঙায়।
দায়ান কিছুটা ভ’য় পাবার ভা’ন করে বলে,,,ওকে বাবা স’রি।আর দুষ্টুমি করবো না।
সোহা মুখ ভেংচি কেটে আবার দায়ানের মুখে খাবার তুলে দেয়।
দায়ান মুখে খাবার নিতে নিতে বলে,,,তুমি খাবানা? খেয়ে নাও এখান থেকেই। এক সাথে খাই দুজনে।পরে একা খেতে ম’জা পাবানা।
আমি পরে খেয়ে নিবো।এখন খিদে নেই। আপনাকে এতো আমার কথা ভাবতে হবে না।নিজের খাবার চুপচাপ খেয়ে গিয়ে ঘুমান।
ঠিক আছে আমিও আর খাবোনা।তুমি না খেলে।বলেই উঠে দাঁড়ায়।
সোহা আবার দায়ানের হাত টেনে বসিয়ে দেয়।উফফ কি শুরু করলেন বলুনতো।খাচ্ছি আমিও।এবার খুশি? এখন খান।
হ্যা এখন খুশি।তারপর দুজনেই এক সাথে এক প্লেট থেকে খাবার খেয়ে নেয়।
খাওয়া শেষ হলে দায়ান উঠে দাঁড়ায়। সোহার উড়না টান দিয়ে নিজের মুখ নিজেই মুছে। রুমের দিকে হাঁটা দিলেন।
সোহা সব কিছু গুছিয়ে রাখতে রাখতে দায়ানের দিকে তাকিয়ে মনে মনে হাসে।
সব কিছু গুছিয়ে সোহা নিজের রুমে চলে যায়। নিজের ও ঘুমের প্রয়োজন। এতোদিন তার ও ঘুম হয়নি।বিছানায় গিয়ে শুতে নিবে,,,,এমন সময় দায়ান এসে হা’জির হয়।
একি আপনি এখানে? না ঘুমিয়ে এখানে কি চাই?
দায়ান মাথা চুলকিয়ে বলে,,,না মানে আসলে।
কোনো আসলে নকলে নাই গিয়ে ঘুমান।আপনার ঘুম প্রয়োজন। আমিও ঘুমাবো হাই তুলতে তুলতে।
ঠিক আছে তুমি ঘুমাও।তুমি ঘুমালেই আমি চলে যাবো।
না এখনই যান।
দায়ান চুপচাপ সোহার পাশে এসে দাড়ায়।সোহাকে নিজে বিছানায় শুইয়ে দেয়।।
আরে কি করছে,,,,,,
হুসসস।কোনো কথা না।
সোহার শরীরে কাথাটা টেনে দেয়। মাথায় হাত বুলিয়ে সোহার দিকে একটু ঝুঁকে কপালে গাড়ো একটা চুমু খায়। মুচকি হেসে বলে,,,একদম ভ’য় পাবা না ওকে? আমি পাশের রুমেই আছি।কোনো দরকার হলেই আমাকে ডাকবা।
আবার মিনমিনিয়ে বলে,,, তুমি চাইলে আমি এখানেই থাকতে পারি।
সোহা শুনে বলে কি বললেন আপনি?
নানা কিছু না। তুমি ঘুমাও ওকে? আমি গেলাম।বলেই দায়ান বেরিয়ে যায়।
সোহা দায়ানের দিকে তাকিয়ে নিজের কপালে চুমু দেওয়া জায়গায় হাত বুলায়। মুচকি হেসে বলে,,, আমার পাগল।বলেই লজ্জা পেয়ে দুই হাতে নিজের মুখ ঢেকে ফেলে।
চারিপাশ নিরব শুনশান। সারাদিনের ক্লান্তি দূর করতে মানুষ এখন,,,ঘুমে বিভোর।
ঘড়ির কাটা যখন দুইটার ঘরে,, তখনই সোহার ঘুমের মাঝেই অনুভব করলো,,অন্ধকারে তলিয়ে যাচ্ছে সে।কেউ যেনো গলা টিপে ধরেছে।কাশি হচ্ছে। শ্বাস নিতে পারতেছেনা ঠিক মতো।ছটফট করতে লাগলো।
একসময় এক প্রকার চিল্লিয়ে মা বলে ডেকে বসে পরে।রীতিমতো ঘাম ছুটে গেছে হাঁপাচ্ছে। জোরে জোরে নিশ্বাস নিচ্ছে।
সোহার চিৎকার শুনে দায়ানের ঘুম ভেঙে যায়। যেহেতু পাশাপাশি রুম তাই সোহার চিৎকার টা ভালো ভাবেই শুনতে পায়।
তরিঘরি করে বিছানা থেকে নেমে দৌড়ে সোহার রুমে আসে।
এই কি হয়েছে তোমার সোহা? তুমি ঠিক আছো।
সোহা এখনো হাঁপিয়ে চলেছে।
দায়ান সোহার পাশে বসে সোহাকে দুই হাতে একেবারে নিজের কাছে নিয়ে আসে।
কি হয়েছে? ভ’য় পেয়েছো? এভাবে ঘেমেছো কেনো এই শীতের মাঝেও।হাঁপাচ্ছো ও।
দায়ানের কথাতে সোহার হুঁশ আসে।সোহা দায়ানকে শক্ত করে আঁকড়ে ধরে। সোহার শরীরের কম্পন দায়ান বেশ ভালো ভাবে উপলব্ধি করতে পারছে।
সোহা কাঁপা কাঁপা গলায় বলে,,, আমি ঘুমিয়ে ছিলাম।মনে হলো কে যেনো আমার গলা চেপে ধরে আছে।আমাকে কোথায় যেনো টেনে নিয়ে যাচ্ছিলো।আমি কিছু করতে পারতেছিলাম না।নিশ্বাস বন্ধ হয়ে আসতেছিলো।বলেই হাঁপাতে থাকে।
দায়ান সোহার মুখের চুল গুলো সরিয়ে দিয়ে বলে,,,কিছু হয়নি,,সোনা।স্বপ্ন দেখেছো।কেউ নেই।শান্ত হও।
সোহা এবার কেঁদে দেয়।কাঁদতে কাঁদতে বলে,,আমি খুব ভ’য় পেয়ে,,,,, আর বলতে পারে না কাশি শুরু হয়ে যায়। অনবরত কাশতে থাকে।
দায়ান সোহার অবস্থা দেখে, পিঠে মাথায় হাত বুলাতে থাকে।আর কাদেনা।রিলেক্স হও।
কাশতে কাশতে সোহার শ্বাস বেড়ে যায়। জোরে জোরে শ্বাস নিতে থাকে।একেকটা শ্বাস নেওয়ার সময় দায়ানের পিঠে রাখা হাত খামচে ধরে। দায়ান বুঝতে পারে সোহার শ্বাস কষ্ট উঠে গেছে।ঐদিনের মতো হলে মেয়েটা বেশি দূর্বল হয়ে যাবে। তাই তারাতাড়ি কিছু করার জন্য চোখ এদিক ওদিক ঘুরায়। সোহাকে জড়িয়ে ধরে আগলে নিয়েই এক হাতে,বিছানার পাশে রাখা ছোটো টেবিলের ড্রয়ার টা খুলে।কাংখিতো বস্তুুটি পেয়ে যেনো স্বস্তির নিশ্বাস ছাড়ে।
তারাতাড়ি করে ই’নহে’লার টা নিয়ে সোহার মুখের সামনে ধরে বলে।শ্বাস নাও সোনা।
সোহা দায়ানের কথা মতো আস্তে আস্তে শ্বাস নিয়ে নিজেকে স্বাভাবিক করে কিছুটা।
দায়ান ই’নহে’লারটা ঠিক জায়গায় রেখে দেয়। দুই হাতে সোহার মুখ আগলে ধরে।চোখ মুখ লাল হয়ে গেছে। চোখের পানিতে ভিজে আছে মুখটা।দায়ান যত্ন সহকারে হাত দিয়েই মুখটা মুছে দেয়।
সোহা চোখ বন্ধ করে আছে।
দায়ান সোহার মুখটা আরো কাছে নিয়ে আসে। চুমুতে চুমুতে ভরিয়ে দিতে থাকে সারা মুখে।
সোহা চোখ বন্ধ অবস্থাতেই কেপে উঠে দায়ানের ঠোঁটের স্পর্শে।আরো জোরে দায়ানকে আকড়ে ধরে রাখে।
দায়ান প্রায় অনেক সময় নিয়ে সোহার সারা মুখে চুমু খেয়ে তারপর সোহার কপালের সাথে নিজের কপাল ঠেকায়। কিছু হয়নি জান।কেউ নেই। একদম ভ’য় পাবানা।আমি আছি না।ঠান্ডা লাগায় তোমার এমন মনে হয়েছে।
তারপর সোহাকে বালিশে আস্তে করে শুইয়ে দিয়ে বলে তুমি ঘুমোও।
সোহা ভ’য়ার্ত দৃষ্টিতে দায়ানের দিকে তাকায়।
দায়ান সোহার তাকানো দেখে বুঝে যায় মেয়েটা ভ’য় পাচ্ছে। আ’শ্ব’স্ত করে বলে,,,,ভ’য় পেতে হবে না পাগলি।তুমি নিশ্চিন্তে ঘুমাও।এই যে আমি পাশে আছি।কোথাও যাবো না। ঘুমাও বলেই সোহার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে থাকে দায়ান।
সোহা তাও যেনো কিছুতেই নিজের ভ’য় টা শান্ত করতে পারছিলোনা।তাই দায়ানের টি-শার্টের নিচের অংশ হাতের মুঠোয় শ’ক্ত করে ধরে রাখে।দায়ান সেই দিকে তাকিয়ে মনে মনে হাসে।
দায়ানের হাত বুলিয়ে দেওয়ার একপর্যায়ে সোহা ঘুমিয়ে যায়। দায়ান এক দৃষ্টিতে সোহার দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে কখন যে বসে নিজেও ঘুমিয়ে যায় বুঝতেই পারে না।
————————————–
সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠেই নোহা থালা বাসন ধুয়ে। ঘর দুয়ার ঝাড়ু দেওয়ার জন্য ড্রয়িং রুমে আসতেই দেখতে পায়।
ওমি আর তমা বাড়ি থেকে বের হচ্ছে। এতো সকালে ওমি কখনো ঘুম থেকে উঠে না।বিয়ের পর নোহা অন্ততো দেখেনি।আজই প্রথম এতো সকালে উঠতে দেখলো।বেশ অবাক হয়েছে নোহা।
তারপর তমার সাথে বাইরে যেতে দেখে কপালে ভা’জ পরে।এ তো সকালে এরা কোথায় যাচ্ছে? এমন তো নয় যে এরা জগিং করে।
নোহা কৌতুহল হয়ে নিজেকে দ’মাতে পারে নি।জিজ্ঞেস করেই বসে,,এতো সকাল সকাল কোথাও যাচ্ছেন আপনারা?
ওমি কিছু বলতে নিবে,তার আগেই তমা ওমিকে থামিয়ে দিয়ে বলে,,,, কেনো নোহা তোমার কাছে বলে যেতে হবে? আমরা যেখানে ইচ্ছে যাই নিজের কাজে মন দাও।
নোহার ও তমার প্রশ্নে মাথায় রা’গ উঠে যায়। সে চি’বিয়ে চি’বিয়ে বলে অবশ্যই বলে যেতে হবে। আমার স্বামী কে নিয়ে যাচ্ছো।তো আমায় বলে যাবা না। আর তুমি আমার নাম ধরে ডাকছো কেনো? সম্পর্কে আর বয়সে দুটোতেই আমি তোমার থেকে বড়।সো সম্মান দিয়ে ভাবি ডেকে কথা বলবা।
তোমাকে আমি ভাবি ডাকবো? কখনো না।
ওমি এবার বলে,,,আহ তমা তুমি বড্ড বেশি কথা বলো।বলে দিলেইতো হতো কোথায় যাচ্ছিলাম এতো কথা বাড়াও কেনো।তাছাড়া মা তো পরে আমাদের খুজতো।তাই না?
কিন্তু,,,,,,,,,,
এর মধ্যেই ওমির নানির গলা ভেসে আসে।তে’জি কন্ঠে তমা কে ডাকছে।তমা ঢুক গিলে বলে জ্বি দাদি।
কই যাচ্ছিস তুই রুমে আয়।আমার পা ব্যাথা করতেছে টিপে দে এসে।তোকে এখানে টইটই করে ঘুরার জন্য আমার সাথে পাঠায়নি তর মা।আমার খেয়াল রাখার জন্য পাঠিয়েছে।চুপচাপ রুমে আয়।নয়তো আমার হাত কিন্তু উঠবে তর গালে।বলেই নিজের রুমে চলে যান।
তমা নোহার দিকে তাকিয়ে হনহনিয়ে চলে যায়।
এতোসময় নোহা ওমির দিকেই তাকিয়ে ছিলো।নোহার চাহনিতে কেমন অ’স্ব’স্থিতে পরে যায় ওমি।তাই তারাতাড়ি নোহার থেকে চোখ সরিয়ে নিজের রুমের দিকে হাঁটা দেয়।
নোহা ওমির যাওয়ার দিকে তাকিয়ে নিজের মনে মনে আওড়ায়,, কা/পুরুষ।
—————————————–
পাখির কিচিরমিচির ও বাইরে গাড়ির হ’র্ণে’র শব্দে ঘুম ভেঙে যায় সোহার।আড়মোড়া ভেঙে উঠে বসে।
হাই তুলতে তুলতে ঘড়ির সময় তাকিয়ে চক্ষু চ’ড়’কগাছ। আয় হায় এতো বেলা হয়ে গেছে। আর আমি এখনো ঘুম।ভাবা যায় এগুলা?
এসব ভাবনার মাঝেই দরজায় আওয়াজ হয়।সোহা চোখ তুলে দরজার দিকে তাকায়। সকালে ঘুম থেকে উঠে নিজের প্রিয় মানুষটার মুখ দেখে মনটা প্রশান্তিতে ভরে যায়।
গুড মনিং পাগলি।
সোহা নিজেকে সামলে বলে হুু।
ঘুম হয়েছে ভালো মতো?
হুু।
যাও উঠে ফ্রেশ হয়ে আসো?
সোহা মাথা নাড়িয়ে উঠে যায়। ১০ মিনিট পর বেরিয়ে আসে।
আজ ঘুম থেকে উঠতে লে’ট হয়ে গেছে। আপনি বসুন আমি এক্ষনি আপনার কফি করে নিয়ে আসছি।
তোমাকে এতো ব্যস্ত হতে হবে না।নিজের পাশে দেখিয়ে বলে,,,এখানে বসো।
সোহা চুপচাপ গিয়ে দায়ানের পাশে বসে।
এতোদিন তো তোমার হাতের কফিই খেয়েছি। আজ ভাবলাম বউটা যখন ঘুমুচেছ আমিই নাহয় আজ কফি বানিয়ে ফেলি।
একটা কাপ সোহার দিকে এগিয়ে দিয়ে বলে,,,টেস্ট করে দেখোতো কেমন হয়েছে।
যদিও সোহা কফি তেমন খায় না।তাও দায়ান এতো কষ্ট করে বানিয়ে এনেছে।তাই হাতে নিয়ে চুমুক বসায়।উমম অনেক টেস্টি হয়েছে।
দায়ান সোহার কথায় হাসে।
সোহা অর্ধেক কফি খেয়ে কাপটা রেখে দেয়।
দায়ানকে বলে,,একি আপনি খাচ্ছেন না কেনো? ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে তো আপনার টা।
দায়ান সোহার কথাতে সোহার খাওয়া কফিটাই উঠিয়ে খেতে থাকে।
সোহা অবাক হয়ে বলে আপনি আমার এঁটো খাচ্ছেন কেনো? আপনার টা না খেয়ে?
বউয়ের এটো খেলে স্বাস্থ্য ভালো থাকে বুঝলা।আর একটাইতো কফি।
একটাই মানে ঐটাতে কি তাহলে?
ঐটাতো খালি?
খালি কেনো? কফি কই?
আনিনি এই এক কাপ ই এনেছি।ঐটা এমনিই এনেছি।আর আমি জানতাম তুমি পুরো কফিটা খাবে না।
সোহা অবাক হয়ে বলে,,,এই আপনি ঠিক আছেন? কি রকম আ’জব বিহেভ করছেন? পে’ত্নিয়ে ধরেছে নাকি আপনাকে?
হ্যা। ধরেছেতো তবে পে”ত্নি না প’রিতে ধরেছে।
“আমার বউ প’রি”
#চলবে,,,,,
#তুমি_হাতটা_শুধু_ধরো
#পর্বঃ৩২
#Jhorna_Islam
সোহা ও দায়ানের দিনগুলো মান অভিমান ও খুনশুটি তে ভালোই কাটতেছে। দায়ান এখন সোহার প্রচুর খেয়াল রাখে।যতোক্ষন বাড়িতে থাকে সোহার আশে পাশে ঘুরঘুর করে।অফিসে গেলে কিছু সময় পর পর নানান বাহানা দিয়ে সোহাকে কল দিতে থাকে । সোহা দায়ানের এসব কাজে,মুখে মুখে বিরক্ত বোধ দেখালেও ভিতরে ভিতরে কি যে খুশি হয়। সোহা এখন প্রতিদিন ভার্সিটিতে যায়।যদিও যেতে চায় না।দায়ান নানা বা’হানা দিয়ে নিয়ে যায় প্রতিদিন অফিসে যাওয়ার সময় নিজের সাথে।
দায়ানের হাত এখনো পুরোপুরি শুকায় নি।সোহাই খাইয়ে দেয়। দায়ান অবশ্য মনে মনে বলে,, যেনো হাত কখনো না শুকায়,আর সোহা তাকে খাইয়ে দেয়। সোহা বলে দিয়েছে দায়ান কে প্রতিদিন যেনো দায়ানের দুপুরের খাবার আগে ড্রাইভার কে তার ভার্সিটির সামনে পাঠিয়ে দেয়।সে অফিসে এসে দায়ান কে খাইয়ে দিয়ে যাবে।নয়তো দায়ান যে না খেয়ে থাকবে সে ভালো করেই যানে।পরে বুক ব্যাথায় কষ্ট পাবে লোকটা।আর সোহা এটা কখনই হতে দিবে না।
দায়ান প্রথমে সোহার কথায় দ্বিমত করে ছিলো।সোহা তাকে রে’গে গিয়ে বলে ঠিক আছে তাহলে আমিও ভার্সিটিতে যাবো না।আপনিই যান আবার পড়াশোনা করেন।
কিন্তু তোমার ক্লাশ?
এক ক্লাশ না করলে কিছু হবে না।বেশি টাইম লাগবেনা।আপনাকে খাইয়ে দিয়েই চলে আসবো।
দায়ান অবশেষে সোহার কথায় হার মেনে রাজি হয়।না হয়ে কি উপায় আছে? নয়তো ভার্সিটিতেই যাবে না এই মেয়ে।
——————————————
ইদানিং নোহার জীবনটা আরো বি’ষি’য়ে গেছে।ওমি আর তমার মেলা মেশাটা বেড়ে চলেছে।এমন ভাবে এরা চলাচল করছে যে কারো চোখেই প্রথম দেখায় মনে হবে এদের ভিতর গভীর সম্পর্ক রয়েছে। নানি শ্বাশুড়ি অবশ্য শ্বাশুড়ির হাত থেকে নানান ভাবে নোহা কে বাচিয়ে নেয়।তাতে কি স্বামী ভালো না হলে কিছুই না।শ্বাশুড়ি ও যেনো ওমিকে তমার সাথে মেশার সুযোগ করে দেন।তমা কে ওমির পিছনে ভালো করে ঝুকিয়ে দেন
ওমির আর তমার এমন মেলামেশা সহ্য করতে না পেরে নোহা ওমিকে বলেছিলো।তোমরা এমন ভাবে কেন দু’জন চলাফেরা করছো।মানুষ মন্দ ভাবছে।তোমাদের নিয়ে নানা কথা বলছে। ওমি তখন রে’গে গিয়ে নোহার চুলের মুঠি শক্ত করে ধরে বলেছিলো,,,তর কি যেভাবে ইচ্ছে সে ভাবে চলবো।যে যা বলার বলুক তাতে আমার কি? তর কেনো এতো জ্বলে? চুপচাপ নিজের মতো করে থাকতে পারলে থাক নয়তো চলে যা।আমরা এমন ভাবেই মেলামেশা করবো।তোরে আমার বিয়ে করাটাই ভু’ল হয়েছে।নোহা ঐদিন প্রতিবাদ করতে পারেনি।কেনো জানি একটা কথা ও মুখ থেকে বের হয় নি।
এমনিতেই নোহার শরীরটা ভালো নেই।কাজে মনোযোগ দিতে পারে না।শরীরটা দিন দিন বেশ দূর্বল হয়ে গেছে। খেতে পারে না কিছু।এমনকি মাছের গন্ধ টা ও শুকতে পারে না।গা গুলায় ব’মি পায়। সারাদিন ঘুমোতে মন চায় । এসব লক্ষন দেখে নোহার সন্দেহ হয়।তাই কোনো ভ’নিতা ছাড়াই নানি শ্বাশুড়ির সামনেই শ্বাশুড়ি মাকে জানায়।
নানি শ্বাশুড়ি নোহাকে ভালো ভাবে দেখে হাসি মুখে বলে যে নোহা হয়তো মা হতে চলেছে। ওনার এতো বছরের অভিজ্ঞতা তাই বলছে।পুরোপুরি শিউর হওয়ার জন্য যেনো কি’ট এনে টেস্ট করে নেয়।নোহার মাথায় হাত বুলিয়ে উনি অনেক দোয়া দুরুদ পরে দেয়।
নোহার শাশুড়ীর মুখের দিকে তাকিয়ে কেনো যেনো মনে হলো,,ভদ্র মহিলা খুশি হননি।চিন্তায় পরে গেছেন। রা’গে মনে হয় ফুসছেন।
নোহার মনেও অনেক চিন্তা থাকলেও পাত্তা দিলো না।চোখের কোণে পানি জমেছে ছলছল চোখে নিজের ডান হাতটা পেটে রাখে।মনে মনে আওড়ায় আমার বাচ্চা। একটা প্রাণ আমার মধ্যে বেড়ে উঠছে।ভাবতেই নোহার কি যে আনন্দ লাগে।
পরে নোহা একটা প্রেগ’ন্যা’ন্সি’ কি’ট এনে পরীক্ষা করে দেখে রেজাল্ট পজেটিভ আসছে।নোহা ঐইদিন আনন্দে অনেক কাঁদে।
মনে মনে আশা করে এবার হয়তো সুখের দিন ফিরবে।স্বামীটা আর শ্বাশুড়ি টা ভালো হবে এই বাচ্চার উছিলায়।
ভাবতেই মনের মাঝে প্রশান্তি ছেয়ে যায় নোহার।
——————————————-
প্রতিদিনের মতো আজ ও সোহার পাখির কিচিরমিচির শব্দ পেয়ে ঘুম ভেঙে যায় আড়মোড়া ভেঙে উঠে দাঁড়ায়। ফ্রেশ হয়ে রান্না ঘরের দিকে যায়।কফি বানিয়ে দায়ানের রুমের দরজায় ধা’ক্কা দেয়। এখন আর টোকা বা অনুমতি ও নেয়না সোহা রুমে ঢুকতে।ধাক্কা দিয়ে সোহা অবাক হয়।দায়ানের রুম ভিতর থেকে ল’ক করা।এতোদিন ল’ক করতো না।শুধু ভিড়িয়ে রাখতো। সোহা দায়ানকে ডাকে।শুনছেন? আপনার ঘুম ভাঙেনি? কফি নিয়ে আসছি দরজা খোলেন।
ভিতর থেকে কোনো সারা শব্দ পায়না।আরো বার দুয়েক ডাকে।তাও সব নিরব।সোহা তেমন ভাবে আর মাথা ঘামায় না।হয়তে ঘুমুচেছ। তাই চলে যায়।
বাগানে গিয়ে গাছে পানি দিয়ে আসে।এসে রান্না বসায়।জমেলা খালা গ্রাম থেকে এসে অসুস্থ হয়ে গেছে। তাই সোহাই বলেছে কয়দিন রেস্ট নেওয়ার জন্য। রান্না শেষ করে দায়ানের রুমে উঁকি দেয় সোহা।
কি ব্যাপার,এখনো কি লোকটার ঘুম ভাঙলো না? ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে অফিসে যাওয়ার সময় তো হয়ে গেছে। আবার ডাকার জন্য যেতে নিলেই কলিং বেল বাজাবে উঠে।
এমন সময় আবার কে এলো? ভাবতে ভাবতেই সোহা দরজার কাছে এগিয়ে যায়। দরজা খুলতেই দরজার ওপারে দেখতে পেলো রুশ দাড়িয়ে আছে।
— ওমা রুশ ভাইয়া তুমি?
— হুম বোন কেমন আছিস? মলিন হাসি দিয়ে বলে রুশ।
— এইতো ভালো।তুমি কেমন আছো?
— আমিও ভালো।
— ধূররর তুমি যে কি করো না।আসবে যে বলে আসবে না আমায়। কাজে এসেছো নাকি?
— রুশ ভিতরে ঢুকে সোফায় বসতে বসতে বলে। হুম খুবই জরুরি কাজে এসেছি।
— কিন্ত জনাব তো এখনো ঘুমে।সেই সকাল থেকে ডাকছি। উঠার কোনো নাম নেই।দরজা ও খুলছেনা। খাবেই বা কখন অফিসেই বা যাবে কখন?
— বোন আমি দায়ানের কাছে না তর কাছে এসেছি।আর দায়ান অফিসে আজ যাবে না।দরজা আজ খুলবে কিনা সন্দেহ।
— রুশের কথায় সোহার কপালে ভা’জ পরে।মানে? কি বলছো রুশ ভাইয়া? অফিসে যাবেনা বুঝলাম। দরজা কেনো খুলবে না?
রুশ সোহার কথার উত্তর না দিয়ে ব’লে,,, তর কি দায়ানের অতীত সম্পর্কে জানতে ইচ্ছে হয়না? দায়ানের মা বাবার কি হয়েছিলো।দায়ান কেনো তোকে মেনে নেয়নি?
— সোহা রুশের দিকে তাকিয়ে বলে,,, রুশ ভাইয়া এসব পরে জানা যাবে।আগে বলো উনি দরজা কেনো খুলবেনা? আমার ডাকেও সারা দেয়নি।আমার কিন্তু টেনশন হচ্ছে।
রুশ নিজের গলাটা পরিষ্কার করে বলে,,,,আজ দায়ানের বাবা মায়ের মৃত্যু বার্ষিকী।প্রতি বছর এই দিনে ছেলেটা নিজেকে ঘরে বন্দি করে রাখে।
সোহা রুশের দিকে তাকিয়ে বলে,, আমাকে সব খুলে বলো রুশ ভাইয়া। আমি সব জানতে চাই উনার সম্পর্কে।
আমি আর দায়ান স্কুল লাইফ থেকেই এক সাথে পড়তাম।আমরা দুইজন দুইজনের বেস্ট ফ্রেন্ড ছিলাম।কাউকে আমাদের মাঝে আসতে দেই নি।অন্যান্য সাধারণ ফ্রেন্ড থাকলেও তাদের সাথে সম্পর্ক টা এতো গভীর ছিলো না।
ভার্সিটি লাইফে আমাদের মাঝে আরেকজন আসে ফ্রেন্ড হয়ে।তার নাম তিশা।
প্রথমে আমরা তাকে আমাদের সাথে নিতাম না।মিশতাম না বেশি। তারপর সে অনেক অনুরোধ করে আমাদের ফ্রেন্ড হয়।
কয়েক মাস ভালোই চলছিলো।তারপর তিশার পা’গ’লামি শুরু হয় দায়ানের জন্য। নানা ভাবে দায়ান কে ইমপ্রেস করতে চায়।প্রতিদিন দায়ানকে কয়েকবার প্রপোজ করে। দায়ান আর আমি ওকে অনেক বুঝাই।কিন্ত সে মানতে না’রাজ।বলেই রুশ একটু থামে।
সোহার কলিজায় মোচর দিয়ে উঠে। যতো যাই হোক ভালোবাসার মানুষ এর পাশে অন্য মেয়ের নাম কেউই সহ্য করতে পারে না।তাও চুপ রয়। আজ তাকে সব সত্যি জানতেই হবে।
রুশ আবার বলতে শুরু করে,,, অনেক বুঝানোর পর ও কিছুই লাভ হয় না। সে হু’মকি দেয়,দায়ান তার সাথে রি’লেশনে না গেলে সু’ই’সা’ইড করবে। দায়ান তাও রিলেশন করবে না।তার এক কথা।আমি অনেক ঘা’বড়ে গিয়েছিলাম।
দায়ানকে আমি বুঝাই।দেখ কোনো এক সময় তো বিয়ে করতেই হবে। সেটা তিশা হলে সমস্যা কি? মেয়েটা তোকে সত্যি অনেক ভালোবাসে। আর ও যদি কিছু করে ফেলে তোকে না পেলে? তখন নিজেকে ক্ষমা করতে পারবি?
কিন্ত আমারতো ওর প্রতি কোনো ফিলিংস নেই।
এখন নেই পরে হয়তো হবে।
অনেক ভেবে চিন্তে তারপর দায়ান রা’জি হয়। তাদের সম্পর্কটা ভালোই চলছিলো।আর চার-পাঁচটা সম্পর্কের মতো। মাঝখান দিয়ে একটা কারণ নিয়ে।তিশা সু’ই’সাই’ড ও করে।সেই কারণ টা আমি তোকে বলবো না দায়ানকে জিজ্ঞেস করে নিস।
তিশা পুরাই যেমন সা’ইকো।যা বলে তাই করতে হবে।কোনো কথার নরচড় করা যাবে না।মন মতো কিছু না হলেই অদ্ভুত আচরণ করতো।দায়ান ও মেনে নিতো।আস্তে আস্তে দূর্বল হয়ে পরেছিলো তিশার প্রতি।
তারপর একদিন বা’য়না ধরে, দায়ানের বাবা-মায়ের সঙ্গে দেখা করিয়ে দিতে হবে। দায়ান অনেক বোঝায় কিছুদিন যাক।তাদের কে তিশার কথা বলুক।তারপর মি’ট করাবে।কোনোভাবেই দায়ান তিশাকে মানাতে পারেনি। ও যা বলেছে তাই করতে হবে। মি’ট করাতে হবে মানে ঐদিনই মি’ট করাতে হবে কোনো কথা শুনতে বা বুঝতে নারা’জ।
সোহা দাঁতে দাঁত চেপে বসে সব শুনছে।বার বার ওড়নার অংশ খামচে ধরে নিজের রা’গ কমানোর বৃথা চেষ্টা করছে।
আংকেল আন্টি খুবই ফ্রি মাইন্ডের ছিলো।দায়ানের বন্ধুর মতো ছিলো তারা।আমি খুব কম মানুষই দেখেছি বাবা মায়ের সাথে তাদের এমন সম্পর্ক। মাঝে মাঝে দায়ানের প্রতি খুব হিংসে হতো। এটা ভেবে যে ও কতো লাকি এরকম বাবা মা পেয়ে। দায়ানের কোনো সখ আল্লাদ তারা অপূর্ণ রাখেনি যখন যা চাইতো তা পেয়ে যেতো।একটা ছেলে কিনা।ভালোবাসার কোনো কমতি রাখেনি।আমি খুব কম পরিবারই দেখেছি।এতোটা হাসি খুশি।দায়ানের বাবা মায়ের বন্ডিং টাও অনেক ভালো ছিলো যে কেউ দেখলেই বলতে পারতো এরা পার্ফেকট কাপল।
তিশার সাথে না পেরে।দায়ান ডাইনিং টেবিলে খেতে বসে,, বাবা মা কে জানায় তাদের জন্য একটা সারপ্রাইজ আছে।দায়ানের সাথে এক জায়গায় যেতে হবে ঐখানেই তাদের সারপ্রাইজ। দায়ানের মা তখন বলে ছিলো আমি মনে হয় বুঝতে পারছি কিছুটা।তাও চুপ থাকলাম দেখি কি সারপ্রাইজ দেয় আমার আব্বু। দায়ান তখন মুচকি হেসে ছিলো।
তারপর আংকেল আন্টি কে নিয়ে গাড়ি করে রওনা দেয়।তিশার ঠিক করা জায়গায় মি’ট করানোর জন্য। দায়ান অবশ্য তিশাকে বলেছিলো বাড়িতে মি’ট করতে।তিশা শুনেনি সে বাইরেই করবে।
হাসি মুখে তিনজন গল্প করতে করতে যেতে থাকে।আংকেল আর দায়ান সামনে বসেছিলো।আংকেল ড্রাইভ করতেছিলো।আন্টি পিছনে বসে ছিলো।মাঝ রাস্তায় যাওয়ার পর আমি কল করেছিলাম দায়ান কে।আমরা দুজন কথা বলতে ছিলাম।
হঠাৎ করেই দায়ান বলপ,,আব্বু গাড়ি এভাবে চালাচ্ছো কেনো? সাবধানে চালাও এক্সিডেন্ট হবে নয়তো।
তখন আংকেল এর গলা শুনতে পাই,,তিনি বলছেন দায়ান বাবা গাড়ির ব্রেক কাজ করছে না।
— কি বলো আব্বু। ভালো?
— হ্যা। কি করবো বুঝতেছিনা।
আমি তখন কলেই ছিলাম।ওদের সব কথাই শুনতে ছিলাম।
আন্টি কান্না করতে করতে বলেছিলো,,দেখো না ভালো করে।কি হবে এখন আল্লাহ।
— দেখেছি কোনো ভাবেই কাজ করতেছেনা।আস্তে আস্তে যেনো গাড়ির স্পিড বেড়ে চলেছে।
হাঠাৎই কিছুটা দূরে ওরা বড় একটা ট্রাক দেখতে পায়।আংকেল আন্টি একে অপরের দিকে তাকিয়ে চোখের ইশারায় কিছু একটা ভেবে নেয়।দায়ান তখন তাদের দিকেই তাকিয়ে ছিলো।ওদের ইশারার দায়ানের সন্দেহ হয়। কিছু বলতে নিবে তার আগেই আংকেল দায়ানের সিট বেল্ট খুলে ফেলে।দায়ান কে গাড়ির ডোর খুলে এক ধাক্কা দেয়। ধাক্কা দিতে দিতে দুজন একসাথেই বলে,,,আব্বু ভালো থেকো।নিজের খেয়াল রেখো। আমরা তোমার সাথেই আছি সবসময়।
তারপর দায়ান ছিটকে রাস্তার এক সাইডে গিয়ে পরে।মাথায় একটু ব্যাথা পায়।নিজেকে ঠিক করে গাড়ির দিকে তাকাতেই দেখতে পায়,, বি’কট শব্দে গাড়িটা ট্রাকের সাথে ধাক্কা খেয়ে কয়েকবার উল্টে ভেঙে চুরমার হয়ে তারপর গিয়ে শান্ত হয়ে যায়।
দায়ান আব্বু আম্মু বলে জোরে একবার ডাক দিয়ে চুপ হয়ে যায়।
ঝড় যেমন তার তা’ন্ড’ব চালানোর পর পরিবেশ একেবারে শান্ত হয়ে যায়। তেমনই এক্সিডেন্ট হওয়ার পরও পরিবেশটা তেমন কিছু মূহুর্তের জন্য শান্ত হয়ে যায়।
আমি ও ততক্ষণে বেরিয়ে পরেছিলাম।ঐখানে পৌঁছে দেখি লোকজনের ভি’ড় জমে যাচ্ছে। ঠেলে যাই দেখার জন্য গিয়ে শুধু ভাঙাচোরা গাড়িটাই দেখতে পাই।লোকজন বলাবলি করছে হাসপাতালে নাকি নিয়ে যাওয়া হয়েছে তাদের। আমিও হাসপাতালের উদ্দেশ্যে রওনা দেওয়ার জন্য তারাতাড়ি করে গাড়িতে উঠতে নিবো,,এমন সময় রাস্তার অপর পাশে চোখ যায় আমার।
তাকিয়ে দেখি দায়ান চুপচাপ মাটিতে বসে আছে। দৌড়ে দায়ানের কাছে ছোটে যাই আমি।পাশে গিয়ে দায়ানের অবস্থা দেখে আমার চোখ দিয়ে আপনা আপনি পানি পরতে থাকে।দায়ানকে আমি এমন অবস্থাতে আর কোনোো দিন দেখিনি।কপালের এক সাইডে র/ক্ত জমে আছে। কি যে বি’দ্ধ’স্ত অবস্থা ছিলো।দায়ান যেমন পাথরে পরিণত হয়েছে। কোনো দিকে তার খেয়াল নেই।প্রথম কয়েকবার ডাক দিলে সে সারা দেয় না।
তারপর ঝাঁকি দিতেই যেনো হুঁশ ফিরে। আমাকে দেখে বলে ভাই আম্মু আব্বু,,,,,, আর কিছু বলতে পারে না।
হাসপাতালে চল ভাই।আংকেল আন্টি কে হাসপাতালে নিয়ে গেছে চল।তারপর আমি ধরে ধরে দায়ান কে নিয়ে হাসপাতালে যাই।
ওখানে গিয়ে ডাক্তার দের কথাতে স্ত’ব্ধ হয়ে যাই। আংকেল আন্টি আর নেই।অনেক চেষ্টা করেছিলো ওরা।কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি।
দায়ানের দিকে তাকিয়ে দেখি সে একটা কথাই বিরবির করে বলছে।সব আমার দোষ। আমার জন্য হয়েছে সব।আমি দায়ী।
রুশ ঘটনা বলতে বলতে নিজেও কেঁদে দেয়।চোখ মুছে সোহার দিকে তাকিয়ে দেখে সোহা ওড়না দিয়ে মুখ চাপা দিয়ে নিঃশব্দে কাঁদছে।
#চলবে,,,,,