তুমি হাতটা শুধু ধরো পর্ব-৩৫+৩৬

0
689

#তুমি_হাতটা_শুধু_ধরো
#পর্বঃ৩৫
#Jhorna_Islam

দায়ানকে আমতা আমতা করতে দেখে সোহা জিজ্ঞেস করলো কি হলো বলছেন না কেনো বলুনতো।বলেন বলেন।

হয়েছে কি পা’গলি শুননা এসব কথা পরে হবে ঠিক আছে। এখন এসব কথা না হয় থাক।আমরা পরিবেশটা ইনজয় করি ওকে?

— না না পরে ইনজয় করবো।আগে যা জানতে চাইছি তা বলুন।
—- না বললে হয় না?
—- সোহা কপট রাগ দেখিয়ে বলে,,আপনি বলবেন? আমার কিন্তু রাগ উঠতেছে বলে দিলাম।

— দায়ান একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে,,,ঠিক আছে বলছি।

আসলে তিশা কিছুটা পা’গলাটে সাইকো টাইপের ছিলো। এই মেয়েকে কোনো ভাবে মানানো যেতো না।যে সময় যা লাগতো,,বা করতে মন চাইতো সেটা ঐসময় ই করতে হবে।কোনো কিছুর পরোয়া করতো না।কিছু বুঝতে চেষ্টা করতো না। প্রথমে এমন অবশ্য ছিলো না।খুব ভালোই ছিলো।রিলেশনে যাওয়ার পর আস্তে আস্তে কি রকম হয়ে যেতে শুরু করলো।তাও বেশি কিছু বলতাম না।

তো এমনই একদিন বা’য়না ধরলো,, ওর সাথে এ’ন’গে’জ’মে’ন্ট করে রাখতে হবে।তাও আবার আমার সকল ফ্রেন্ডদের সাথে নিয়ে।ওর পক্ষ থেকে কেউ উপস্থিত থাকবে না।পরিবার কে ও জানানো যাবে না।আমাদের বিষয় টা গো’পন রাখতে হবে।তো আমি প্রথমে রাজি হইনি।নানান বাহানা দিয়ে চলে গেছি।কারণ তখন রিলেশনের প্রথমদিকে ওর প্রতি কোনো ফিলিংস ই ছিলোনা।

প্রায় এক সপ্তাহ নিয়ে এমন পা’গলামো করতে লাগলো এ’ন’গে’জ’মে’ন্ট করে রাখার জন্য। আমিও রাজি হতে চাচ্ছিলাম না, কারণ এমনিতেই বাবা-মা কে না জানিয়ে রিলেশনে গেছি।মা অবশ্য কিছুটা আন্দাজ করতে পেরেছিলো।আমি জানি মুখে না বললেও মনে মনে খুব কষ্ট পেয়েছিলো।মায়ের কাছে কোনোদিন কিছু লুকোয়নি আমি।আর এতো বড় একটা কথা লুকিয়ে গেছি।

তিশাকে অনেক বুঝিয়েছি যে পরিবার কে বলে,,পরিবারের উপস্থিতিতে সব রিচুয়াল গুলো মেনে ওকে ঘরে তুলতে চাই। সে মানতে নারা’জ।একদিন খবর পেলাম তিশা নাকি সু’ই’সা’ইড করার চেষ্টা করেছে হাতের শি’রা কেটে।দৌড়ে ঐদিন হসপিটাল গিয়েছিলাম।তিশার জে’দের কাছে হার মেনে ঐদিন ই,,,,,,,, আমি ওকে৷ আংটি পরাই রুশ আর আমার অন্য দুইটা ফ্রেন্ডদের সামনে।

বলেই সোহার দিকে তাকায়। সোহা চুপচাপ বসে দায়ানের কথা শুনছে।
।তারপরে সব কিছু শে’ষ হয়ে যাওয়ার পর জানতে পারলাম সবই তার নাটক ছিলো।টাকা লোভী ছিলো।আমার টাকা দেখে আমার সাথে রিলেশনে গেছে। আমার থেকে মাঝে মাঝেই টাকা নিতো।সকলের আড়ালে এনগেজমেন্ট করে রাখা একটা নাটক ছিলো। আসলে ও ওর ফ্রেন্ডদের সাথে একটা ফরেন ট্যুর দিতে চেয়েছিলো।ওর বাবা সেই টাকা দিতে পারতো না।আর আমার কাছেও এতোগুলো টাকা চাইতে পারতেছিলো না।তাই এসব নাটক সাজিয়েছিলো।যেনো রিংটা বিক্রি করে টাকা পায়।আর আমায় ভালো ও বাসেনি আমার টাকা দেখে নাটক করেছিলো ভালোবাসার।

যখন দেখলো বাবা-মা কেউ নেই তখন ভেবেছে আমার আর টাকা পয়সা থাকবে না।আমি বিজনেস সামলাতে পারবো না।সো আমার কাছে কোনো টাকা ও থাকবে না।তাই ওর বাবার দোহাই দিয়ে চলে গেছে।বলেই দায়ান থামে।

সোহা এখনও চুপচাপ বসে আছে কোনো কথা বলছে না।

— দায়ান সোহার কোমড় জড়িয়ে আরেকটু মিশিয়ে নিয়ে বলে,,কি হলো চুপ হয়ে গেলে যে।সব কিছু বলে দিলাম।আর কিছুই নেই তোমার অজানা।

— আপনি ওর হাতে আংটি পরিয়েছেন? বলেই ছলছল চোখে তাকায় দায়ানের দিকে।

— দায়ান অসহায়ের মতো বলে,,,রা’গ করে না জান।সবই পরিস্থিতি আর তিশা করতে বাধ্য করিয়েছে।

— সোহা দায়ানের কোল থেকে উঠে দাঁড়ায়। তারপর দায়ানের দিকে আঙ্গুল তাক করে বলে,,,আপনার সাহস তো কমনা।একেইতো বিয়ের আগে এসব হা’রা’ম সম্পর্ক করেছেন।তার উপর আংটি ও পরিয়েছেন।

তারপর দায়ানের হাত দেখিয়ে বলে,,, এই হাত দিয়ে তিশাকে ছুঁয়ে আংটি পরিয়েছিলেন না।এই হাত দিয়ে আমাকে ছুবেন না বলে দিলাম। একদম ছুবেন না।ছুতে আসলে আপনার হাত কেটে দিবো।

কি বলো এগুলা।আমিতো পরিস্থিতির স্বীকার ছিলাম জা’ন।

হুহ ঢং করতে আসছে এখন। নিজের বউকে এখনো পর্যন্ত একটা আংটি কি শুতোও পরালো না।প্রেমিকা কে ঠিকই পরিয়েছে।

রাগ করে না বউ।আসো বলেই ধরতে যায়।সোহা রাগ দেখানোর ভা’ন করে বলে উঠে,, এইই হাত সরান।নয়তো আপনার হাত কেটে দিবো।

বলেই সোহা বাড়ির দিকে চলে যেতে থাকে।
দায়ান ও সোহার পিছু পিছু যেতে যেতে বলে,,এই জান ঠিক আছে,কাছে আসো আর হাত দিয়ে ছুবো না।

হাটা থামিয়ে সোহা দায়ানের দিকে তাকায়।

দায়ান মুচকি হেসে বলে,,, হাত দিয়ে ছুবোনা।তবে ঠোঁট দিয়ে ছুয়ে দিবো। বলেই ঠোঁট চোখা করে চুমু দেখায়।

সোহা চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে বলে,,”অ’স’ভ্য”
হুম তবে শুধু আমার এই পা’গলির জন্য।।।

————————————————-

নোহা ঠিক করে রেখেছে ওমিকে আজ রাতের মাঝেই সব জানাবে।

আচ্ছা ওমি যখন জানবে ও বাবা হতে চলেছে।তখন ওর রিয়েকশন কেমন হবে?
খুশি হবে না রে’গে যাবে।পরোক্ষনে ভাবে ওমি এই বাচ্চা টা চাইবে তো? নাকি শ্বাশুড়ি মায়ের মতো ওমিও খুশি হবে না।

সে যাই হোক ওমি খুশি না হলে নাই।এতেতো নোহার কোনো দোষ নেই।নিজের বাচ্চার কোনো ক্ষতি হতে সে দিবে না। একজন আদর্শ মা হবে।সব সময় আগলে রাখবে।কোনো কষ্ট পেতে দিবেনা।কথা গুলো নিজের পেটে হাত রেখে বিছানায় বসে মনে মনে বলতে ছিলো নোহা।

তখনই দরজায় কেউ ন’ক করে।তাকিয়ে দেখে শ্বাশুড়ি।

বউমা আসবো?
এমন ডাকে নোহা কিছুটা অবাক হয়।তাও নিজেকে সামলে বলে,,জ্বি মা আসুন।

শ্বাশুড়ি মুচকি হেসে ভিতরে এসে নোহার পাশে বসে।

নোহার মাথায় হাত রেখে বলে,,বউমা শোনো, তুমিতো ওমি কে মনে হয় আজই সুখবর টা দিতে চাও তাইনা?

নোহা মাথা নাড়ায়।

আমি বলছিলাম কি বউমা।আজ কিছু বলো না।

নোহা কপালে ভাজ ফেলে শ্বাশুড়ির দিকে তাকায়।

না মানে বলছিলাম কি।আর মাত্র তিন মাস রয়েছে তোমার শ্বশুরের ইলেকশনের। দেখো ওরা এখন কতো ব্যস্ত। এখনই এতো ব্যস্ত কতোদিন পর আরো হবে।তুমি মা হতে যাবে জানলে আমার ওমি তো কাজে মন দিতে পারবেনা।ধরো ইলেশনে তোমার শ্বশুর হেরে গেলো তার জন্য তখন? তখন কিন্তু সবাই এই বাচ্চাটাকেই দোষবে।তুমি কি চাও সবাই ওকে অ–লক্ষী বলুক?

ভোটের দিন জানাবা দুই সু সংবাদ এক সাথে পেলে ভাবো কতোটা খুশি হবে।
নোহা অনেক ভেবে বলল ঠিক আছে মা।আপনি যা চাইছেন তাই হবে।আমি এখন ওনাকে কিছু বলবো না।

মহিলা খুশি হয়ে নোহার মাথায় হাত বুলিয়ে চলে যায়।

নোহা গভীর ভাবনায় ডুব দেয় যার কোনো কূল কিনারা নাই।

—————————————
অপেক্ষার প্রহর গুনতে গুনতে দিন চলে যায়। ঐদিনের পর নোহাকে নিয়ে নানি শ্বাশুড়ি ডাক্তারের কাছে গিয়েছিল। ডাক্তার পরীক্ষা করে জানায় বেবির বয়স দুই মাস চলছে।

দেখতে দেখতেই আরো দুই মাস কেটে গেলো। এখন নোহার বেবির চার মাস। এখনো ওমিকে বলা হয় নি। যদিও নোহার পেট দেখে বোঝা যায় না ভালোভাবে খেয়াল না করলে।আর ওমির ঐদিকে এতো খেয়াল কই বোঝার।

রাতে কি রান্না করবে তা জানার জন্য শ্বাশুড়ি মায়ের রুমের দিকে যাচ্ছিলো নোহা।দরজার পাশে থেকে শ্বাশুড়ি মা ও তমার কথা শুনে স্ত’ব্ধ হয়ে দাড়িয়ে যায় নোহা।হাত পা গুলো মৃদু কাপছে।
— ফুপু ওমি ভাইরে কবে আমার করে পাবো বলোতো? আমার যে আর তর সইছে না।
— ধৈর্য ধরে থাক কিছুদিন ঠিক সময়ে পেয়ে যাবি।

—- আর পারছি না ফুপু।কিভাবে পারবো বলো? নিজের ভালোবাসার মানুষকে কি অন্যের পাশে সহ্য করা যায়? তার উপর আবার এই মেয়েটা মা হবে।তুমি ভাবতে পারছো ফুপু আমার কষ্ট টা?

— চিন্তা করিস না মা।তুই ই আমার ছেলের বউ হবি। ঐ মেয়ের এমন ব্যবস্থা করবো না।যে ওমি নিজ থেকে বাড়ি থেকে বের করে দিবে।সব ওমির বাবার জন্য হয়েছে। লোকটা নিজের রা’জনীতি ছাড়া কিছুই বুঝে না।নিজের নাম বাড়ানোর জন্য যেনো আরো সম্মান পায়।এজন্য ঐ মেয়েরে ছেলের গলায় ঝুলিয়ে দিয়েছে।এই মেয়ের বাবাকে গ্রামের মানুষ অনেক সম্মান করে।আর তাই নিজের লাভের জন্য লোকটা এমন করলো।আমার কতো শখ ছিলো আমার তমাটারে আমার ছেলের বউ করবো।সে শখ আমি কিছুতেই অপূর্ণ রাখবো না দেখিস।একটু ধৈর্য ধরে থাক মা।

নোহা এসব কথা শুনে নিজেকে আর ধরে রাখতে পারে না।দরজা ঠেলে ভিতরে ঢুকে যায়। চোখ দিয়ে পানির স্রোত ধারা বয়ে চলেছে ।

এইজন্য আমাকে আপনার এতো অপছন্দ তাই না মা? আর আমি এতোদিন ধরে কারণ খুঁজে মরছি কেনো আপনার আমাকে এতো অপছন্দ। আজ এখানে না আসলেতো জানতেই পারতাম না।আমাকে আগেই বলে দিতেন আপনি। তাহলে আমি বিনা বাক্যে চলে যেতাম।এমন নোংরা খেলা না খেললে ও পারতেন।

নিজে একটা মেয়ে হয়ে অন্য মেয়ের সংসার ভাংতে কি সুন্দর পরিকল্পনা সাজাতে ছিলেন। বাহ আপনার প্রশংসা না করে পারলাম না।
নোহার শাশুড়ী তেতে উঠে বলে,,মুখ সামলে কথা বলবা।এতোদিন অনেক সহ্য করেছি তোমার চ্যা”টাং চ্যা”টাং কথা।আর সহ্য করবো না।।

আমিও তো অনেক সহ্য করেছি আর না।

ঠিক তখনই নোহার শাশুড়ীর চোখ যায়,, নোহার পিছনে ড্রয়িং রুমে,,,, উনার দরজা বরাবরই ড্রয়িং রুম।ঐখান দিয়ে ওমি ঢুকে এই দিকেই এগিয়ে আসছে।মুখের অবস্থা দেখে বোঝা যায় খুবই রে’গে আছে।

আসলেই ওমি রে’গে আছে। ইলেকশনের ঝামেলা নিয়ে মাথা খারাপ হয়ে যাচ্ছে। আজও বি’রোধী দলের সঙ্গে এক চো’ট ঝামেলা,মারামারি হয়েছে।এখন জরুরি কিছু কাগজ নিতে এসেছে বাড়িতে।কাগজ গুলো বাবার রুমে আলমারিতে রাখা আছে। তাই নিতে যাচ্ছে।

ওমির মা ওমিকে রুমে আসতে দেখে,,তমাকে চোখের ইশারায় কিছু বোঝায়।তমাও ইশারা বুঝে শ’য়তানি হাসি দেয়।

ওমি রুমের কাছে এগিয়ে আসতেই ওমির মা নোহার দুই হাত নিজের মাথায় নিয়ে চুল গুলো এলোমেলো করে৷ ফেলে। হঠাৎ এমন কাজে নোহা হকচকায়।তমাও নোহার হাত ধরে দুইজন এমন ভাব ধরে যেনো নোহা উনার চুল টেনে ধরেছে।আর বলতে থাকে,,,,,

বউমা কি করছো ছেড়ে দাও আমায়।আমার ভুল হয়ে গেছে মা আর এমন হবে না।বয়স হয়েছে তো তাই সব কাজ ঠিক মতো করে উঠা হয়না।ছেড়ে দাও মা।আমার চুলে অনেক ব্যাথা পাচ্ছি। আর টেনো না।

তমা ও ন্যাকা’মী করে বলে,,ভাবি ছেড়ে দেন ফুপি কে।ফুপির কাজ আমি করে দিচ্ছি। তাও ফুপিকে ছাড়ুন।উনি ব্যাথা পাচ্ছে। বলেই কাদার অভিনয় করতে লাগলো।

দুইজনের মাঝে নোহা না কিছু বুঝে উঠতে পারতেছিলো।আর না কিছু বলতে পারতেছিলো।

এতোসময় দরজার পাশে দাঁড়িয়ে এসব শুনে মাথায় র/ক্ত উঠে যায়।তার মায়ের গায়ে হাত তুলেছে? এতো বড় সাহস!!

নোহা বলেই চিল্লিয়ে উঠে,,, নোহা ভয় পেয়ে পিছনে তাকায়।
ততক্ষণে ওমি নোহার চুলের মুঠি শক্ত করে ধরে ফেলেছে। তোর এতো বড় সাহস তুই আমার মার গায়ে হাত দিস?গায়ে হাত তোলা কাকে বলে তোকে আমি আজ ভালো করে বোঝাবো।বলেই ধাক্কা দিয়ে নোহাকে নিচে ফেলে দেয়।

কোমড় থেকে বেল্ট খুলে নিয়ে এলোপাতাড়ি মারতে থাকে নোহার পিঠে।

নোহা চিল্লিয়ে কাঁদছে আর বলছে ওমি আমার কথাটা একবার শুনুন।আহ্ লাগছে আমার ওমি।কে শোনে কার কথা।আজ সব রা’গ নোহার উপর মেটাতে ব্যস্ত ওমি।কোনো কথাই কানে ঢুকছে না।

এক পর্যায়ে মারতে মারতে ক্লান্ত হয়ে ওমি থেমে যায়।

শেষ পর্যায়ে গিয়ে নোহার তল পেটে জোড়ে লা’থি মেরে দেয়।

নোহা আল্লাহ গোওও।বলে পেটে ধরে চিল্লিয়ে উঠে। কোমড়ের নিচ অংশ অবশ বানিয়ে ফেলেছে।র/ক্তে মেঝেতে থাকা সাদা টাইলস লাল বর্ণ ধারণ করেছে।ওমি এখনো নিচের দিকে তাকায় না।তাকালে দেখতে পেতো।

নোহা আর নিজের চোখ খুলে রাখতে পারছেনা।আস্তে আস্তে চোখ বন্ধ করে ফেলে।

ওমির দাদি এতো চিৎকার চেচামেচি শুনে নিজে অর্ধেক নামাজ শেষ করে দেখতে এসেছিলো কি হয়েছে। এসে নোহাকে এই অবস্থা দেখে। তারপর ওমিকে পাশে দাঁড়িয়ে অন্য দিকে তাকিয়ে রা’গে ফুসতে দেখে ওনার আর বুঝতে বাকি নেই কি হয়েছে।

আল্লাহ মেয়েটারে মে’রে ফেল্লি সবাই মিলে? ওমি তুই কি মানুষ? জা/নো/য়ারের বা’চ্চা নিজের সন্তান জন্ম নেওয়ার আগেই শেষ করে দিলি?

ওমি অবাক হয়ে নানির দিকে তাকায়।ওও প্রে’গ’ন্যান্ট ছিলো?

ওমির নানি ততক্ষণে নোহার পাশে বসে নোহাকে ডাকতে লাগে।

ওমি নিচের দিকে তাকিয়ে আঁতকে উঠে। ফ্লোর র’ক্তে মাখামাখি।নিজের বাচ্চা কথাটা বারবার কানে বারি খাচ্ছে। নোহার পাশে বসে নোহাকে ধরতে যায়।

কিন্ত নানি দেয় না।খবরদার ওরে তুই ছুবি না।খু/নি তুই।

বলেই ওমির নানি কাদতে কাদতে নোহার বাবা মাকে কল লাগায়।ঐদিন নোহা নাম্বার দিয়েছিলো।কাঁদতে কাঁদতে সব খুলে বলে।উনারা খুব শিঘ্রই আসছে জানিয়েছে।উনি নোহার মাথাটা কোলে নিয়ে বিলাপ করতে লাগলো।

ওমি পাশে হাটু গেরে বসে এক ধ্যানে নোহার মুখের দিকে তাকিয়ে রয়।মুখটা কেমন ফ্যাকাশে হয়ে গেছে।

ওমির মা আর তমা এতোসময় নিরব দর্শকের ভূমিকা পালন করেছে।এখন একে অপরের দিকে তাকায়,,, এমনটা চায় নি তারা।তারাতো চেয়েছিলো যেনো ওমি নোহাকে তাড়িয়ে দেয়। এখন কি হবে? ম’রে ট’রে গেলো নাতো মেয়েটা।

—————————————-

সোহা উল্টো শুয়ে বই মেলে,গুনগুন করে গান গাইতেছিলো। আজ ভার্সিটিতে যায় নি।
দায়ান সকালের খাবার খেয়ে অফিসে চলে গেছে আরো অনেক আগেই।

বার বার ফোনের দিকে তাকাচ্ছে এখনো ফোন কেনো দিচ্ছে না লোকটা? একটু পরপর কথা না বললে ভালোই লাগে না।এসব ভাবনার মাঝেই দায়ান রুমে ঢুকে আসে।

সোহা দায়ানকে দেখে ভূ’ত দেখার মতো চমকে উঠে।আরে আপনি? এসে পরলেন যে? আমাকে ছাড়া ভালো লাগছিলো না তাই না? বলেই মুচকি হাসে।

দায়ান বিছানায় বসে,,সোহাকে শক্ত করে নিজের বুকের সাথে জড়িয়ে ধরে। সোহা ও চোখ বন্ধ হয় উপভোগ করে।সোহাকে জড়িয়ে রাখা অবস্থাতেই এক হাতে ড্রয়ার টা খুলে সোহার ইনহেলার টা নিজের পকেটে ঢুকায়।

তারপর সোহার মাথায় হাত বুলিয়ে বলে,,,জা’ন চলো তুমি না বাড়ি যেতে চেয়েছিলে? আজ যাবো।

এখন! পা’গল হয়ে গেছেন নাকি?

“পরোক্ষনেই বলে উঠে এইই আমার বাড়িতে সবাই ঠিক আছে তো?”

#চলবে,,,,,,

#তুমি_হাতটা_শুধু_ধরো
#পর্বঃ৩৬
#Jhorna_Islam

এইই চুপ করে আছেন কেনো? আমার বাড়িতে সবাই ঠিক আছে তো?
দায়ান কি করে সোহাকে বলবে বুঝে পায়না।এখন কিছুতেই বলা যাবে না।বললে মেয়েটা পাগলামো করা শুরু করবে।ঐখানে গিয়ে তারপর না হয় কিছু একটা বলা যাবে।এখন বললে৷ সামলানো মুশকিল হয়ে যাবে।

দায়ান তাই সোহার মুখটা দুই হাতের মধ্যে নিয়ে বলে,,,বাড়িতে সবাই ঠিক আছে। কারো কিছু হয়নি। এতো হাই’পার হতে হবে না ওকে?
আজ অফিসে কোনো কাজ নাই।তাই আমি আর রুশ ভাবলাম একটু ঘুরে আসি। মাইন্ড টা ফ্রেশ হবে। ভাবলাম তোমাকেও নিয়ে যাই। যাও রে’ডি হও।

সোহা যেনো এইবার একটু শান্ত হলো।ঠিক আছে।আমি দশ মিনিটে রেডি হয়ে আসছি।

ওকে।

দায়ান সোহার দিকে তাকিয়ে বলে,, “স’রি জান।”

আজ সকালে যখন দায়ান অফিসে কাজে ব্যস্ত তখনই দায়ানের ফোনটা বেজে উঠে।দায়ান ভেবে ছিলো সোহার কল।পরে ফোনটা হাতে নিয়ে দেখে সোহার বাবার।ঐদিনের পর আর কল করা হয়নি। ভুলেই গিয়েছিল। ধ্যাত কল করা দরকার ছিলো।ভাবতে ভাবতেই কল টা রিসিভ করে।

সোহার বাবা পরে সবকিছু খুলে বলে নোহার ব্যাপারে।কাল ভোর রাতে জেলা হাসপাতালে ভর্তি করেছেন উনারা নোহাকে।পরিস্থিতি ভালো না।যে কোন সময় যে কিছু হয়ে যেতে পারে।সোহা কে নিয়ে যেনো দায়ান যায়।এসব ভাবনার মাঝেই সোহা জামা পাল্টে বেরিয়ে আসে। আয়নার সামনে গিয়ে একটু সাজতে নিবে তখনই দায়ান সোহাকে নিজের কাছে টেনে নিয়ে এসে আটকে দেয়।

— কি হলো ছাড়েন। রেডি হবো না? লেট হয়ে যাবেতো না হলে।
—- রেডি হয়েছো।এতোটুকুতেই চলবে।এখন আর হতে হবে না।

— আরে কি বলেন এগুলো? এভাবে কেউ যায়।একটুতো সাজতে দিন।

— উহুু তুমি সাজলে আমি নিজেকে কনট্রোল করতে পারি না।তোমার ভাই কিন্তু সাথে যাবে।তুমি কি চাও তোমার ভাইয়ের সামনে রোমান্স শুরু করি? আমার কিন্তু কোনো সমস্যা নেই।

— “অ’স’ভ্য”

— চলো বলেই সোহার হাত ধরে হাঁটা দেয়।

— আরে জামা তো নিতে দেন।

কিছু লাগবে না চলো।বলেই বেরিয়ে পরে।

গাড়িতে পিছনে সোহা আর দায়ান বসে আছে।সামনের সিটে ড্রাইভারের পাশে বসেছে রুশ।তিন ঘন্টার মতো সময় লাগবে পৌঁছাতে।
সোহা রুশের সাথে নানান কথা বলে হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খাচ্ছে।
দায়ান খুব টেনশনে আছে।না জানি ঐদিকের পরিস্থিতি কি রকম।মনে মনে আশংকায় আছে।
দীর্ঘ তিন ঘন্টা জার্নি করার পর ওরা গ্রামের কাছাকাছি চলে আসে। আর বেশি রাস্তা বাকি নেই।

সোহাদের গ্রামে আর জেলা হাসপাতালে যাওয়ার পাশাপাশি দুইটা রাস্তা। ওদের গ্রামের রাস্তায় গাড়ি টা না ঢুকিয়েে ঐ রাস্তায় ঢুকায়।সোহা তা দেখে চিল্লিয়ে বলে,,,আরে আরে কি করছেন? ভুল রাস্তায় চলে যাচ্ছে তো।ঐ রাস্তা দিয়ে গ্রামে ঢুকে।
দায়ান সোহার হাত গুলো মুঠোর ভিতর নিয়ে বলে,,,গেলেই দেখতে পাবে।এখন চুপচাপ আমার কাঁধে মাথা রেখে রেস্ট নাও দেখি।

সোহার ভিতর ভয় ঢুকে যায়। কাঁপা কাঁপা গলায় বলে উঠে,, আ-আপনারা হাসপাতালে যাচ্ছেন তাই না? কার কি হয়েছে বলেন আমায়।চিললিয়ে বলে কেনো বলছেন না কার কি হয়েছে। দায়ানের শার্ট ধরে ঝাঁকাতে ঝাঁকাতে বলে,,কি হলো বলুন। বলেই কাঁদতে থাকে। দায়ান কতো কিছু বলে সোহাকে বোঝাতে চায়,,কিন্তু সে শুনতে নারাজ।

রুশ ও বোঝাতে চায় কিন্তু সোহা কারো কথা শুনছে না।এক পর্যায়ে সোহা উত্তেজিত হওয়ায় সোহার শ্বাস কষ্ট শুরু হয়ে যায়। জোরে জোরে নিশ্বাস নিচ্ছে। আর কাদতেছে।

দায়ান সোহাকে আগলে ধরে,,,,, মনে মনে বলে,যে ভ’য় টা পাচ্ছিলাম তাই হলো।

এতো উত্তেজিত কেনো হচ্ছো জা’ন? গেলেই তো দেখতে পাবা।

আমায় এখনইইই বলে,,,, কথা জড়িয়ে যাচ্ছে। আর বলতে পারে না।শ্বাস বে’গতিক হারে বেড়ে চলেছে। হাত পা কেমন নিস্তেজ হয়ে আসছে।

দায়ান তারাতাড়ি ইনহেলার টা বের করে।সোহার মুখের কাছে নিয়ে ধরে।সোহা হাত দিয়ে দূরে সরিয়ে দেয়।সে নিবে না।য-যতক্ষন নননা বলছেন কার কি হয়েছে আমি নিবো না।

এরকম পাগলামি করে না। তারাতাড়ি নাও।কষ্ট হচ্ছে তো।

হোক। মরে গেলেও নিবো না।আপনারা না বলা পর্যন্ত।

সোহার কথা শুনে দায়ান সোহাকে ছেড়ে দেয়।সোহার থেকে দূরে সরে আসে।

রুশ তখন বলে বোন তুই নে। তারপর আমি তোকে বলছি সব।

সত্যি তো?
হুম।

দায়ান দূরে সরার সময় ইনহেলার টা সিটের উপর৷ রেখে দিয়েছিলো।সোহা কাঁপা কাঁপা হাতে সেটা নিয়ে।শ্বাস নেয়।শ্বাস স্বাভাবিক হয়ে আসলেও শরীরটা দূর্বল হয়ে গেছে। আস্তে করে দায়ানের কাছে যায়।দায়ানের কাঁধে মাথা রাখে।দায়ান ঝটকা মেরে নিজের কাছ থেকে সোহাকে সরিয়ে দেয়।

রা’গে দাত পিষে বলে,,,এই একদম আমার কাছে আসার চেষ্টা করবিনা।দূরে থাক। আমার সাথে কথাও বলবি না।একদম কাছে আসবি না আমার।

রুশ বলে উঠে,, কি হচ্ছে টা কি দায়ান মেয়েটা দূর্বল হয়ে পরেছে।

দায়ান বলে,,দূর্বল মাই ফুট।কি করে বলল আমি এতো বলার পরও মরে গেলেও নিবে না।না জানা পর্যন্ত।

সোহা কাদু কাদু মুখ করে বলে ভুল হয়ে গেছে আর বলবো না।স’রি।
দায়ান কিছু বলবে,,,তখনই গাড়ি এসে জেলা হাসপাতালের সামনে এসে থামে।সোহা কিছু বলতে নিবে।তার আগেই সবাই গাড়ি থেকে বের হয়ে যায়। দায়ান সোহার দিকে তাকিয়ে কিছু না বলে,সোহাকে রেখেই ভিতরে চলে যায়। সোহা বুঝতে পারছে রে’গে আছে লোকটা অনেক।

রুশ সোহাকে নিয়ে ভিতরে ঢুকে।

————————————————–

দায়ান এসেই দেখে সোহার বাবা আর মা ক্যাবিনের সামনে বসে আছে। সোহার বাবা নিচের দিকে মাথা দিয়ে চুপ করে আছে।সোহার মা আঁচলে মুখ ঢেকে কাঁদছে।

দায়ান সোহার বাবার পাশে গিয়ে বসে,,, কাঁধে হাত রাখে।উনি মুখ তুলে তাকায়।দায়ান কে দেখতে পেয়ে ধরা গলায়,,বলে ছো-ছোট আব্বা আমার বড় আম্মা টা আর কিছু বলতেই পারে না।এদিক ওদিক তাকিয়ে চোখের পানি লুকানোর চেষ্টা করে।
দায়ান সোহার বাবার কাধে হাত রেখে বলে,, চিন্তা করবেন না আমি দেখছি।কিছু হবে না।

সোহার বাবা যেনো ভরসা পায়।এবার নিজেকে স্বাভাবিক করে বলে,, ওরা আমার মেয়েটাকে ক্যাবিনে নিয়ে একটা স্যালাইন দিয়ে শুইয়ে রাখছে শুধু শুধু অপারেশন করা লাগবে।কিছুই করছে না বাবা।এতোক্ষন রেখে দিলেতো আমার মেয়েটা বাঁচবেনা।

দায়ান শুনে বলে আমি এখনই দেখছি,,বলেই ডাক্তারের ক্যাবিনে যায়। ডাক্তার কে বলে,,,যত টাকা লাগুক অপারেশন শুরু করতে।নোহার যেনো কিছু না হয়।কিছু হলে একজনকে ও ছাড়বেনা।ডাক্তার বুঝতে পারলো দায়ান খুবই পাওয়ারফুল লোক,, আর এনারা সব কিছুই করতে পারে যদি ক্যারিয়ারটাই শেষ করে দেয়। তাই তারাতাড়ি সব ঠিক করতে লাগলো।

দায়ান মনেমনে তাচ্ছিল্যর হাসি দেয়। পৃথিবীটা টাকার গো/লাম।মানুষ ঠিকই বলে টাকা দিয়ে বাঘের চোখ ও কেনা যায়।অসুস্থ মেয়েটাকে সকাল থেকে ফেলে রাখছে।এখন কি সুন্দর টাকার কথা শুনে সব করছে।

ডাক্তারের ক্যাবিন থেকে দায়ান বেরিয়ে দেখে সোহা তার বাবার বুকে মাথা রেখে কাদছে।উনি যত্ন সহকারে মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে থাকে। রুশ পাশেই দেয়ালে হে’লান দিয়ে দাড়িয়ে আছে।
দায়ান সোহার বাবার পাশে গিয়ে বলে,,,আংকেল টেনশন নিবেন না অপারেশন শুরু হচ্ছে কিছু সময়ের মধ্যেই।

আধা ঘণ্টার মধ্যেই অপারেশন শুরু করা হয়।সোহা এখনও বাবার বুকে মুখ লুকিয়ে ফুপিয়ে যাচেছ।আর বিরবির করছে,,আমার আপুর কিছু হলে আমি কাউকে ছাড়বো না কাউকে না।সব কটাকে আমি নিজের হাতে খু/ ন করবো।

রুশ আর দায়ান এক পাশে দাঁড়িয়ে আছে। ঠিক কিছু সময় পরই একটা নার্স বেরিয়ে আসে। পেশেন্টের জন্য বি পজেটিভ র/ক্তের ব্যবস্থা করুন তিন ব্যাগ র/ক্ত লাগবে।অনেক র/ক্ত গেছে।ইমার্জেন্সি লাগবে এখন এক ব্যাগ।আর হ্যা বাচ্চাটা মি’স’ক্যা/রে’জ হয়ে গেছে। একটা মানুষ কি করে এরকম পা/ষ ন্ডর মতো মারতে পারে বুঝিনা।

সোহা কথাটা শুনে চোখটা বন্ধ করে ফেলে।ঐদিনের কথাগুলো কানে ভাসছে।কতোটা খুশি ছিলো আপু বেবিটা নিয়ে।আর আজ,,,,,।অনেক কষ্টে নিজেকে সামলায় সোহা।

তারপর বলে উঠে আমার আর আপুর গ্রুপ এক।আমার থেকে নিন।দায়ান সোহার দিকে তাকায়।

সোহার বাবা বলে উঠে না ছোটো আম্মা আপনি অসুস্থ। আপনাকে দিতে হবে না।আমি দিবো বলেই উঠে দাঁড়ায়। নার্স সোহার বাবাকে নিয়ে চলে যায়।

দায়ান রুশকে সোহা আর ওর মার পাশে থাকার জন্য বলে,,,র/ক্ত যোগার করতে বেরিয়ে যায়। রুশ ও দায়ানের সাথে যেতে চেয়েছিল। দায়ান নেয়নি এখানে দুজন একা।ওদের পাশে কারো থাকা দরকার।আর রুশকে ও পাঠাতে পারছেনা কারণ রুশ এই দিকের কিছুই চিনে না।তাই রুশ কে ওদের পাশে রেখে দায়ানই যায়। শুন তোর বোনের দিকে ন’জর রাখিস। যাওয়ার আগে সোহার দিকে তাকায় মেয়েটা বসে বসে একটা কথাই বলছে,,আমি ওদের কাউকে ছাড়বোনা।

———————————————

আধাঘন্টার মাঝেই দায়ান র/ক্ত নিয়ে ফিরে আসে। এতো ঝামেলা পোহাতে হয়নি।তারাতাড়িই পেয়ে গেছে।

এসে দেখে রুশ পায়চারি করছে।সোহার মা একই ভাবে আঁচলে মুখ ঢেকে কাঁদছে। সোহাকে কোথাও না দেখতে পেয়ে ব্রু কোচকায়।নার্স কে ডেকে র/ক্ত বুঝিয়ে দিয়ে আসে।রুশ কে জিজ্ঞেস করে সোহা কই।

— ওয়াশরুমে গেছে।

— কতোক্ষন আগে?

— তুই যাওয়ার কিছুসময় পরই।

— এতোসময় ধরে ও এখানে নাই আর তুই এখানে দাঁড়িয়ে আছিস?

—ওয়াশ রুমে গেছে ভাই।এতো টেনশন নেওয়ার কিছু নেই।

ওহ তাই নাকি যা গিয়ে দেখে আয়তো ওয়াশরুমে আছে কি না।

কিন্ত,,,?

যা আমি বলছি যা।

রুশ দায়ানের দিকে তাকিয়ে চেক করতে যায়।

কিছু সময়ের মাঝেই ফিরে এসে দায়ানের দিকে তাকিয়ে মাথা নাড়ায় যে পায় নি।

দায়ান বলে পাবি ও না।তোর বোন হাসপাতালে থাকলে তো পাবি। আমি যা ভেবে ভ’য় পাচ্ছিলাম তাই করেছে তোর বোন।এজন্যই তোকে বলে ছিলাম ন’জর রাখতে।

সোহার মা মুখ খুলে এবার।বাবা আমার ছোটো মেয়েটা।

দায়ান নিজেকে স্বাভাবিক করে বলে আন্টি আপনি চিন্তা করবেন না।আমি দেখছি।আংকেলের খেয়াল রাইখেন।সোহার মা মাথা নাড়ায়।

দায়ান রুশকে নিয়ে বেরিয়ে যায়।
রুশ শোন তুই পুলিশ স্টেশনে চলে যা।আমি একটা ঠিকানা মেসেজ করছি তোকে ঐখানে নিয়ে আয়।

আর আমি গেলাম,,তর দ’/জ্জা’ল বোন মনে হয় এতোক্ষনে অ্যা’কশন শুরু করে দিয়েছে।বলেই দায়ান চলে যায়।

রুশ মনে মনে বলে শা/লা সব সময় আমাকেই পুলিশের চ’ক্করে ফালায়।

——————————————

যে বাড়িতে সারাদিন একটার পর একটা ঝা’মেলা চিল্লা চিল্লি লেগেই থাকে।সে বাসাটা আজ কেমন পিন-প’তন নিরবতা। সব যেমন থেমে আছে।

নোহাকে যখন ওর বাবা মা নিয়ে যেতে এসেছিলো,,তখন ওমি ও সাথে যেতে চেয়েছিল। কিন্তু ওনারা নেয় নি।বলে দিয়েছে বলাতো যায় না,,আবার না যতটুকু প্রান আছে ততটুকু ও শেষ করে দেয়।৷ ওমির নানি ও দেয় নি।

তমা আর ওমির মা শুধুই সবটা চেয়ে চেয়ে দেখেছে।কিছুই বলেনি।
নোহাকে নিয়ে যাওয়ার পর সেই যে ওমি ঘরে ঢুকেছে আর বের হয়নি।

ওমির বাবা বাড়িতে নেই।এসবের কিছুই জানে না।আরো দুই দিন উনি বাড়িতে আসবে না।

ওমির নানি নোহাকে নিয়ে যাওয়ার পর সেই যে জায়নামাজ এ বসেছে আর উঠেনি।এক মনে মেয়েটার জন্য প্রার্থনা করে চলেছে। যেনো বেঁচে যায়।

ওমির মা আর তমা দুইজন বসে আছে সোফায় এক সাথেই।

— ফুপি কি হবে বলো তো? আমার কিন্তু ভ’য় করছে।

—- আমারও করছে।

— যদি মেয়েটার কিছু হয়ে যায়? তখন তো ওমি ভাইকে ওরা পুলিশে দিবে।মরে গেলে তো ফাঁ/সি তে ঝুলাবে।

— চুপ কর।বাজে কথা একদম বলবিনা।দোয়া কর যেনো বেঁচে যায়।

— কে বলেছিলো ফুপি তোমাকে এখনই এসব করতে।পরে না হয় অন্য কোনো পরিকল্পনা করতে।

—- এখন তুই আমাকে দোষ দিচ্ছিস? কার জন্য এসব করেছি আমি? আমার জন্য?

— রাগ করোনা ফুপি।আমি ঐভাবে বলতে চাইনি।

— আমাদেরও তো কোনো দোষ নেই। আমরা এমনটা চেয়েছি নাকি? আমরা শুধু ওরে বাড়ি থেকে তাড়াতে চেয়েছি। আমার ছেলের ও কোনো দোষ নেই।ইচ্ছে করে দিয়েছে নাকি? ঐ মেয়ের ভাগ্যতে যা ছিলো তাই হয়েছে।

তার মধ্যেই কলিং বেল বেজে উঠে। ফুপু ভাইজি দুইজনই কেঁপে ওঠে।

তমা বুকে থুতু দিয়ে বলে,,,ফুপু কে এলো।পু-পুলিশ নয়তো।

চুপ থাক তমা এসব কথা বলবিনা।হয়তো অন্য কেউ এসেছে। যা দরজা খুলে দেখ।

আমার ভয় করছে ফুপি।তুমি যাও।

ওমির মা বলে চুপচাপ গিয়ে দরজা খুল।আর মুখ স্বাভাবিক করে যা।তর জন্য না সঠিক টা সামনে এসে পরে যা।

তমা নিজেকে স্বাভাবিক করে কাঁপা কাঁপা হাতে দরজা খুলে।দরজার সামনে দাড়িয়ে থাকা লোকটার দিকে তাকিয়ে শুকনো ঢুক গিলে। ভিতরে কাঁপন সৃষ্টি শুরু হয়ে গেছে।

#চলবে,,,,,,,