তুমি হাতটা শুধু ধরো পর্ব-৪৩+৪৪

0
665

#তুমি_হাতটা_শুধু_ধরো
#পর্বঃ৪৩
#Jhorna_Islam

কয়েকদিন যাবত সোহার শরীর টা ভালো যাচ্ছে না। কেমন যেনো দূর্বল লাগে।পুরো শরীর ব্যাথা ব্যাথা হয়ে আছে। খেতে ইচ্ছে করে না একদম।অবশ্য কাউকে কিছু বলেনি।ভাবছে হয়তো ঠিক হয়ে যাবে।কিন্তু আজ একটু বেশিই খারাপ লাগছে।মাথা ও কি রকম ঘুরাচেছ।

আজ ভেবেছিলো নোহার সাথে যাবে।বোনের জীবনের একটা গুরুত্বপূর্ণ দিন।তার বোন নিজে থেকে কিছু করবে।এটাতো সে অনেক আগে থেকেই চাইতো।তাইতো বোনের পাশে থাকতে চেয়েছিলো।

চুপচাপ শুয়ে আছে সোহা।উঠার মতো শক্তি পাচ্ছে না। সারাদিন শুধু ঘুমেই ধরে।বুঝে পায় না এতো ঘুম কই থেকে আসে।ঘুমের ঔষধ খেলেও মনে হয় এতো ভালো ঘুম হবে না।এসব ভাবনার মাঝে নোহার ডাক শুনতে পায়। ওকেই ডাকছে।দায়ান অফিসে চলে গেছে সকাল সকাল।

— এর মধ্যে নোহা রুমে ঢুকে। কিরে বোন শুয়ে আছিস যে? তৈরি ও দেখি হস নি।রুশ সাহেব তো নিচে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছে আমাদের জন্য। বলেছিলাম উপরে আসতে এখন নাকি আসবেন না।যা উঠ তৈরি হো তারাতাড়ি।

— আপু আমার শরীরটা ভালো লাগছে না।তুই বরং রুশ ভাইয়ার সাথে চলে যা।

— কি হয়েছে তর, শরীর খারাপ আগে বলিস নি কেনো? বলেই কপালে হাত দেয়।কই জ্বর তো নেই।

— আরে আপু ব্যস্ত হতে হবে না।এমনিতেই ভালো লাগছে না। শরীরটা জাস্ট দূর্বল লাগছে আর কিছু না।

— ঠিকমতো খাওয়া দাওয়া না করায় তোর এই অবস্থা। তাহলে আমি রুশ সাহেবকে বলে দিচ্ছি আমরা যাবো না।তুই সুস্থ হলেই যাবো।

— না না।তুই যা আমি একা থাকতে পারবো।আর আমার এতোটাও শরীর খারাপ হয় নি।

— কিন্তু,,,,,,,,

— কোনো কিন্তু না তুই যা।আর উনি আজ তারাতাড়ি ই এসে পরবে।মিটিং টা শেষ হলেই।চিন্তা করিস না আপু তুই যা।

— হুম যাচ্ছি। তুই নিজের খেয়াল রাখিস।কোনো অসুবিধা হলে আমাকে ফোন দিবি।

— ওকে যা।আর অল দা বেস্ট আপু।

থ্যাংকস সো’না।

—————————————-
নোহাকে একটি এনজিও সংস্থায় নিয়ে আসে রুশ।এইখানে নোহা কিছুদিন নানা ধরনের হস্ত শিল্প তৈরি করার জন্য ট্রেনিং নিবে।তারপর উনারাই কর্মসংস্থানের সুযোগ করে দিবে।

রুশ আর নোহা গাড়িতে বসে টুকটাক কথা বলতে বলতেই এনজিও সংস্থা তে এসে পৌছায়।

তারপর এখানকার হে’ড অফিসারের সঙ্গে আলাপ আলোচনা করে ট্রেনিং নেওয়ার জন্য ভর্তি হয়।আজ আঠাশ তারিখ তাই এক তারিখ থেকে জয়েন হতে পারবে।সকল প্রকার ফর্মালিটি পূরণ করে রুশ আর নোহা অফিস রুম থেকে বের হয়ে আসে।

মাঠে বসে বিভিন্ন বয়সের মেয়েরা কাজ করছে। এসবই ঘুরে ঘুরে দেখছে নোহা।রুশ হাটছে আর নোহার দিকে একমনে তাকিয়ে আছে। মেয়েটার মাঝে কি আছে বুঝে পায় না।এই যে সাধারণ একটা থ্রি -পিছে কি সুন্দর লাগছে। এই সবুজ কালারটা শরীরের সাথে কি সুন্দর দেখা যাচ্ছে। কোনো সাজ নাই তবুও যেনো চোখ ফেরানো দায়।

নোহা কথা বলছে রুশের সাথে রুশের কোনো পাত্তাই নেই।সে একমনে নোহাকে দেখছে। নোহা রুশের চাহনিতে কিছু টা অপ্রস্তুত হয়ে যায়। তাই রুশের মুখের সামনে তু’ড়ি বাজায়।

এতে রুশের ধ্যান আসে।অন্য দিকে চোখ ঘুরিয়ে নেয়।

নোহা রুশের দিকে তাকিয়ে বলে,, রুশ সাহেব আপনার সাথে কিছু কথা আছে।গাড়ির পাশে চলুন।

বলেই গাড়ির কাছে চলে যায়।

রুশ ও নোহা কি বলবে ভাবতে ভাবতেই গাড়ির পাশে গিয়ে হেলান দিয়ে দাড়ায় গাড়িতে।

মেয়েরা কে তাদের দিকে কোন নজরে তাকায়,তা কিন্তু খুব ভালো করেই বুঝতে পারে।

রুশ নোহার কথায় কিছু টা হকচকায়।

নোহা আবার বলতে শুরু করে,,,, ঐদিন কিন্তু আপনি আমার জন্যই পুরি-সিঙারা গুলো নিয়ে গিয়েছিলেন।কারণ আপনি জানতেন আমার অনেক পছন্দের খাবার ঐগুলো।

আর এই যে এনজিওর খোঁজ বা এই কাজের কথা আপনিই দায়ান কে বলেছেন তাই না? কারণ আমার এই স্বপ্নের কথা কেউ জানতো না।কেউ না মানে কেউ না। এমনকি সোহা ও না।

আ-আসলে নোহা হয়েছে কি,,,,,

আপনাকে বলতে হবে না। আমিই বলি।আপনি কি করে আমার পছন্দের কথা জানতে পেরেছেন।

আমার ডায়েরিটা আমাকে ফেরত দিয়ে দিলে খুব খুশি হবো রুশ সাহেব।আপনি ঐদিন আমার রুম থেকে আমার ডায়েরি টা নিয়ে এসেছিলেন তা আমি খুব ভালো করেই জানি। হাসপাতাল থেকে বাসায় এসে যখন নিজের রুমে গিয়েছিলাম,,তখন বইয়ের তা’কের উপর আমার ডায়রিটা পাইনি।

অনেক খুঁজেছি।কাউকে বলতেও পারছিলাম না। আমার রুমের জিনিস সাধারণত কেউ ধরে না।আর আমার বই পত্র গুলোতো একদম না।শুধু মাঝে মাঝে গিয়ে মা পরিষ্কার করে দেয়।

ডায়রিটা আমার বিয়ের আগের।তখন কি পছন্দ কি করতে ভালোবাসি সব লিখে রাখতাম।আমি নানা ধরনের হাতের জিনিস তৈরি করতে পারি।ভেবেছিলাম ভবিষ্যতে এসব নিয়েই কিছু করবো।আর এই ব্যাপারে কাউকে কিছুই বলিনি।ডায়েরি তে লিখে রেখেছিলাম।

বিয়ের পর আর ডায়েরি লিখা হয়ে উঠে নি।তাই ওটা ওখানে যত্ন সহকারে রেখে দিয়েছিলাম।ওটা যখন খুঁজে পাচ্ছিলাম না তখনই শুনি আপনি আমার রুমে ছিলেন।কিছুটা সন্দেহ হয়। কারণ কেউ নিবে না বাড়ির এটা আমি জানি।আপনি যে নিয়েছেন তবুও শিওর ছিলাম না।তাই চুপ ছিলাম।ঐদিন যখন আপনি খাবার গুলো নিয়ে গেলেন তখনই আমি শিওর হয়ে গিয়েছিলাম আমার ডায়েরি টা আপনার কাছে।

“আপনার চোখের ভাষা কিন্তু কিছুটা হলেও আমার বোঝার ক্ষমতা আছে রুশ সাহেব”।

রুশ নোহার কথাগুলো শুনে কিছুসময় চুপ করে থাকে হয়তো কি বলবে মনে মনে গুছাচেছ।

হ্যা আপনার ডায়েরি টা আমার কাছেই।ঐদিন যখন দেখেছিলাম সাথে করে নিয়ে এসেছি। আর আপনার ডায়েরি পরেই এতোসব করেছি। আপনার স্বপ্ন গুলো পূরণ করার চেষ্টা করছি।সব যখন জেনেই গেছেন এখন কিছু লোকানোর নেই।আমি সোজাসাপটা বলছি,,,,,,,

” আমি আপনাকে ভালোবাসি।হ্যা খুব ভালোবাসি।ঐদিন যখন আপনি হাসপাতালে সোহার সাথে কথা বলে হাসতে ছিলেন।বিশ্বাস করেন ঐসময় থেকে আমার সব উলট পালট হয়ে গেছে।আটকে গেছি আপনার হাসিতে।আর ফিরে আসা সম্ভব নয়। আর আমি চাই ও না ফিরতে।”

আপনাকে আমি অনেক ভালোবাসি নোহা।আপনার সাথে থাকতে চাই।আপনি কি আমায় বিয়ে করবেন?

নোহা রুশের কথায় স্তব্ধ হয়ে গেছে। বলেকি লোকটা একেবারে বিয়ের প্রস্তাব?

আপনার মাথা কি ঠিক আছে রুশ সাহেব? আপনি জানেন কি বলছেন? এসব কোনোদিন ও সম্ভব না।আমি আর আমার লাইফে কাউকে জড়াতে চাই না। আমার সংসার করার শখ মিটে গেছে। আর আপনি এটা কি করে বলতে পারেন? আমার সব কথা জেনেও।

আমার আপনার অতীত নিয়ে কোনো অভিযোগ নেই।আমি সব জেনেই আপনাকে ভালোবেসেছি নোহা।আর ওমির মতো সবাই যে খারাপ হবে তা কিন্তু নয়।হাতের পাঁচ আঙুল কিন্তু সমান না।সবারই উচিত লাইফকে দ্বিতীয় বার একটা সুযোগ দেওয়া।

আমার মতো ডিভোর্সি মেয়ের পিছনে কেনো পরে আছেন রুশ সাহেব? এটা আপনার আবেগ ভালোবাসা না।আর আপনার বাবা মা ও এ সম্পর্ক কোনোদিন মেনে নিবেন না।

আমি এখন কিশোর বয়সের ছেলে না নোহা যে আমার ভালোবাসা কে আবেগ বলে চালিয়ে দিবেন।আর আমার বাবা মা কে নিয়ে আপনাকে ভাবতে হবে না।।সেটা আমি সা’মলে নিবো।আপনি জাস্ট রাজি হয়ে যান।

নাহ্ কখনো না।আপনি আমার পিছনে পরে সময় নষ্ট করবেন না।অন্য কোথাও ভালো মেয়ে দেখে বিয়ে করে সুখে থাকুন।

বিয়ে করলেতো আপনাকেই করবো নোহা।যতদিন পর্যন্ত আপনি রাজি না হবেন ততোদিনে পিছু ছাড়ছিনা আপনার।দেখি আমার থেকে কতোদিন মুখ ফিরিয়ে থাকেন।

শুধু শুধু সময় নষ্ট হবে আপনার।বলেই নোহা গাড়িতে উঠে গিয়ে বসে।

রুশ বলে সে দেখা যাবে।আর আমরা এখন বাড়ি যাচ্ছি এমন। দুপুরের লাঞ্চটা একসাথে করবো।

আরে,,,,,,,

আপনার কোনো কথা শুনছিনা।
——————————–
দায়ান মিটিং শেষ করেই অফিস থেকে বের হয়ে গেছে।দরজার সামনে এসে কলিং বেল বাজায়।নোহা যাওয়ার আগে বলে গিয়েছে যে সোহা যায়নি।ওর নাকি ভালো লাগছে না তাই।

সোহা মাত্রই ব’মি করে ক্লান্ত হয়ে বিছানায় শুয়েছে।এমন সময় কলিং বেল বেজে উঠে। তাই অনেক কষ্টে উঠে যায়।উফফ এতো দূর্বল লাগছে কেন ভেবে পায় না।দরজাটা খোলার শক্তি ও যেনো পাচ্ছে না। কাঁপা কাঁপা হাতে দরজা খুলে দেয়।
দায়ানকে দরজার ঐ পাশে দেখে দূর্বল শরীরে মুচকি হাসে।

দায়ান সোহার দিকে তাকায়,, মুখটা কেমন ফ্যাকাশে হয়ে গেছে। এই তোমায় এমন দেখা যাচ্ছে কেনো।সকালেও তো এমন দেখা যায়নি।দুই হাতে মাথায় হাত বুলিয়ে বলে,,জা’ন তুমি ঠিক আছো?

হু চিন্তা করবেন না।গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নিন।দায়ান সম্মতি জানিয়ে সোহাকে নিয়ে রুমে চলে যায়। সোহাকে বিছানায় বসিয়ে তারাতাড়ি ফ্রেশ হয়ে আসে।

আপনি বসেন আমি এখানেই আপনার খাবার নিয়ে আসছি।

একদম না তুমি চুপচাপ বসে থাকো আমি খাবার আনছি।আজ আমি নিজের হাতে তোমায় খাইয়ে দিবো।এতোদিন কাজের চাপে তোমার দিকে খেয়াল দিতে পারিনি।এজন্য শরীরের কি অবস্থা করেছো।কাল তোমায় নিয়ে ডাক্তারের কাছে যাবো।তারপর দায়ান খাবার আনতে চলে যায়।

কিছু সময়ের মাঝেই খাবার নিয়ে রুমে আসে।সোহার পাশে বসে সোহার মুখে খাবার ধরে।

আমি খাবো না এখন আপনি খান।দায়ান চোখ রাঙিয়ে সোহার দিকে তাকায়। সোহা কোনো উপায় না পেয়ে মুখে নেয়।দুই লোকমা খেয়েই ভিতর থেকে সব উল্টে আসছে।দৌড়ে বাথরুমে ঢুকে,, বে’সিনের সামনে গিয়ে ব’মি করে দেয়।
দায়ান তারাতাড়ি গিয়ে সোহাকে আগলে ধরে। কি হয়েছে বলোতো?

সোহা ব’মি করে ক্লান্ত হয়ে দায়ানের উপর সব ভর ছেড়ে দেয়।দায়ান সোহার মুখটা মুছিয়ে দেয়। কি হয়েছে কলিজা তোমার শরীরতো অনেক খারাপ।তোমার শরীরেতো এক বিন্দুও শক্তি নেই। খুব খারাপ লাগছে জা’ন? সোহা দূর্বল শরীরে দায়ানের দিকে তাকিয়ে উপর নিচ মাথা নাড়ায় যে তার খারাপ লাগছে।দায়ান সোহার কপালে চুমু খেয়ে বলে চলো এখনই ডাক্তারের কাছে যাবো।

রুমে এসে সোহাকে বসিয়ে দিয়ে বলে,,তুমি একটু বসো।আমি খাবারের প্লেটটা রেখে এসেই তৈরি হয়ে নিচ্ছি।

দায়ান বেরিয়ে যেতেই সোহা উঠে দাঁড়ায় তৈরি হওয়ার জন্য। কিন্তু দুই কদম এগোতেই মাথা ঘুরে পরে যায়। ওখানেই জ্ঞান হারায়।

দায়ান রুমে এসে সোহাকে নিচে পরে থাকতে দেখে দৌড়ে সোহার কাছে যায়। হাঁটু গেড়ে বসে সোহার মাথাটা কোলে তুলে নেয়। জা’ন এই জা’ন কি হয়েছে? চোখ খুলো কলিজা।এইই এখানে পরলা কিভাবে।সোহার এই অবস্থা দেখে দায়ান কি করবে ভেবে পায় না।নোহা ও বাড়িতে নেই।

এই পা’গলি চোখ খোলো দেখো আমি ডাকছিতো।আর এক মুহূর্ত ও দেরি করে না দায়ান।তারাতাড়ি সোহাকে কোলে নিয়ে গাড়িতে করে হাসপাতালে ছোটে।সোহাকে ক্যাবিনে নেওয়া হয় চে’ক আপ করানোর জন্য। দায়ান বাইরে পাইচারি করছে।পরনে টাওজার আর টি-শার্ট। বাড়ির পোশাক পরেই এসে পরেছে।এসবের দিকে তার খেয়াল কই? এই দিকে তার জা’ন অসুস্থ হয়ে পরে আছে।

প্রায় অনেকসময় পর ডাক্তার ক্যাবিন থেকে বেরিয়ে আসে। দায়ান ছুটে ডাক্তারের কাছে যায়।ডক্টর আ-আমার ওয়াইফ? ওও ঠিক আছে তো, কিছু হয়নিতো?

রিলেক্স মি. শেখ।ভয়ের কিছু নেই কংগ্রে’চুলে’শন আপনি বাবা হতে চলেছেন। আপনার ওয়াইফ প্রেগন্যান্ট। আশ্চর্য উনি এতো সি’ম’টম দেখেও বুঝতে পারলেন না? সে যাই হোক মিষ্টি খাওয়াতে ভুলবেন না যেনো।আর আপনার ওয়াইফের ভালো করে খেয়াল রাখবেন।উনার শরীর অনেক উইক।বেশি বেশি খাওয়াবেন আর যত্ন নিবেন।বলেই ডাক্তার দায়ানের কাধে হাত চাপড়ে চলে যায়।

দায়ান আস্তে আস্তে করে ক্যাবিনের ভিতর ঢুকে।সোহা শুয়ে আছে।দায়ান গিয়ে দৌড়ে সোহাকে ঝাপটে ধরে। সোহা চোখ তুলে তাকায়। দায়ান সোহার সারা মুখে চুমুতে ভরিয়ে দিতে থাকে।তারপর গলায় মুখ গুঁজে জোরে জোরে নিশ্বাস নেয়। সোহা দায়ানের মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়। কি হয়েছে? আমি ঠিক আছি তো।

আমি ঠিক নেই জা’ন আমি ঠিক নেই।আমি একদম ঠিক নেই।আমি এতো খুশি কই রাখবো জা’ন? আমারতো খুশিতে পা’গল পা’গল লাগছে নিজেকে।বলেই সোহার পেটের কাছে গিয়ে,,পেটে চুমু খেতে থাকে।

উফফ আমিতো ভাবতেই পারতেছিনা জা’ন আমি-আমি বাবা হবো।আমার পরিবারে কেউ আসতে চলেছে।

সোহা দায়ানের দিকে অবাক হয়ে তাকায়।

দায়ান চোখের ইশারায় বোঝায় যে সত্যি। সোহার চোখেও পানি চলে আসে।

দায়ান সোহার কপালের সাথে কপাল ঠেকিয়ে বলে,,,,এতো সুখ সুখ লাগছে কেনোরে জা’ন সব কিছু?

#চলবে,,,,,,,,

#তুমি_হাতটা_শুধু_ধরো
#পর্বঃ৪৪
#Jhorna_Islam

দায়ান বাবা হবে শুনে তার সেকি আনন্দ। হাসপাতাল থেকে সোহাকে বাসায় নিয়ে আসে ঐদিনই।

বাড়িতে এসে দেখে নোহা এসে পরেছে।তারপর নোহাকে সব খুলে বলে।নোহা তো বোনের জন্য কি খুশি।বোনকে নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পরেছে।কি খাবে না খাবে কি করতে হবে।সব বলে বলে দিচ্ছে।

দায়ান রুশকে সোহার বাবা মাকে ফোন করে জানিয়ে দিয়েছে।পরের দিন সকাল বেলাই মিষ্টির ভান্ডার এনে বাড়িতে হা’জির করে।অর্ধেক পুরো পাড়া প্রতিবেশীদের দেয়।আর অর্ধেক সোহার গ্রামে ও দায়ানের চাচার বাড়িতে পাঠায়। ড্রাইভারকে সাথে করে পাঠায় যেনো সোহার বাবা মাকে সাথে করে নিয়ে আসতে পারে।

দায়ানের সেকি পা’গ’লামি সোহা কে নিয়ে,এখন থেকেই অফিসে যাওয়া কমিয়ে দিয়েছে।নিজের হাতে সোহাকে খাইয়ে দিবে।গোসল করিয়ে দিবে।নোহা তো সোহাকে রান্না ঘরের ধারে কাছে ও ঘেষতে দেয় না।সোহা শুধু নিজের বোনের আর স্বামীর পাগ’লামো দেখে বসে বসে।নিচে বাগানেও যেতে দেয়না দায়ান এখন।সোহার কান্না পায় এভাবে ঘরে বসে থাকতে থাকতে।মুক্ত পাখি হঠাৎ খাঁচায় বন্দী হলে যেমন ছটফট করে,তেমনি ছটফট করে সোহা ভিতরে ভিতরে।সোহার মা-বাবা এসেও দেখে গেছে সোহাকে।বাচ্চাকে ঘিরে সবার কি আনন্দ। তাই সোহা এূের অতিরিক্ত কেয়ারে কিছু বলতেও পারে না।যদি মনে কষ্ট পায়।

এর মধ্যে দেখতে দেখতে আরো আট মাস চলে গেছে। সোহার এখন নয় মাস চলে।ডাক্তার বলেছে আর বেশিদিন নেই।সোহার চেহারার এখন অনেক পরিবর্তন এসেছে।আগের থেকে মোটা হয়েছে।এখন গুলোমুলো লাগে।দায়ানের কেয়ার গুলো দিনকে দিন বেড়েই চলেছে।এখন সপ্তাহে একদিন অফিসে যায়।সব কাজ বাড়িতে বসেই করে।সারাক্ষণ সোহার পাশে বসে থাকে।সোহা যখন যা বলে,,খেতে চায় সব মুখ বুঁজে করে।মাঝে মাঝে সোহা দায়ান কে ইচ্ছে করেই অনেক জ্বালায়। এসব ও হাসি মুখে মেনে নেয়।

————————————-
এরই মধ্যে একদিন হাসপাতালে তিশার মায়ের সাথে দেখা হয়ে যায়। দায়ান পাশ কাটিয়ে চলে যেতে চাইলে তিশার মা বলে একটু শুনো বাবা।সোহা ও সায় জানায় কথা শোনার জন্য।

শুনো বাবা আমি আমার মেয়ের তোমার প্রতি অন্যায়ের সব কথাই শুনেছি।আমি এই ব্যাপারে খুবই লজ্জিত। ওর হয়ে আমি মাফ চাইছি তোমার কাছে।তোমার প্রতি যা অন্যায় করেছিলো আজ তা ও নিজেই ফিরে পাচ্ছে। কথায় আছেনা কাউকে কষ্ট দিয়ে কেউ ভালো থাকতে পারে না।আজ তিশা ও ভালো নেই।
যার জন্য তোমাকে ছেড়েছে,আজ সেই অন্য কারো জন্য তিশাকে ছেড়েছে।নিজের দুই বছরের মেয়েটার কথাও ভাবেনি।
নিজের সংসার ভেঙে যাওয়ায় আজ ডিপ্রেশনে ভুগছে দুই দুই বার সুই’সা’ইড করতে চেয়েছিলো।সবই পাপের ফল তুমি পারলে ক্ষমা করে দিও।

দায়ান সব কথা শুনে চুপ ছিলো কিছু বলে নি।

————————————-
গত আট মাস ধরে নোহা রুশকে বুঝিয়ে চলেছে। কিন্তু রুশ কি বোঝার পাত্র একদম না।রুশ কে বোঝাতে বোঝাতে নোহা এখন হা’লই ছেড়ে দিয়েছে।যে বুঝতে চায় না তাকে কি করে বোঝাবে?

এই আট মাস রুশ নোহা কে অতিষ্ঠ করে তুলেছে।হুটহাট বাড়িতে চলে আসে। এরপর নানান বায়না।এটা রান্না করে খাওয়াও ওটা রান্না করে খাওয়াও। নোহা পরেছে মা’ই’নকা চি’পায় কিছু বলতে পারে না।চুপচাপ সব সহ্য করে নিতে হয়।কারণ তার বোন তো ভাই অন্ত প্রান। যদিও বা ইনিয়ে বিনিয়ে নোহা না করে যে সে রান্না করে খাওয়াতে পারবেনা।তখন তার বোন বা’য়না ধরে ঐ খাবার গুলো খাওয়ার।

দুই মাস ট্রেনিং নেওয়ার পর নোহা ঐ এনজিও সংস্থা তেই কাজ করার সুযোগ পেয়েছে। তাই এখন ওখানেই কাজ করে।

প্রতিদিন এনজিও তে যাওয়ার সময় রুশ এসে হা’জির হয়। আবার বাড়িতে ফেরার সময় ও লোকটা হা’জির। গাড়ি তে উঠার জন্য বললে নোহা সহজে উঠতে চায় না।তখন আবার নতুন নাটক শুরু করে। হয় রাস্তাতেই ধমকাবে।নয়তো রিকশা চালকদের টাকা দিয়ে নোহাকে নিতে মানা করবে।লোকগুলোও টাকা পেয়ে সুন্দর নোহাকে আর নেয় না।

তখন অগত্যা রুশের গাড়িতেই উঠতে হয়।তাছাড়া উপায় কি? এতো পথতো আর হেটে যাওয়া যায় না। গাড়িতে উঠলে আরেক কান্ড করে বসে রুশ।গাড়ি সোজা নিয়ে যায় রেস্টুরেন্টে।

রুশ কতো চেষ্টা করে নোহার মন জয় করার।আর নোহা সব এড়িয়ে যায়। তবুও হা’ল ছাড়েনা।বিশ্বাস নোহা একদিন ওর ভালোবাসা বুঝবে।শুধু সময়ের অপেক্ষা।

সবকিছু সামলাতে রুশের কি যে নাজেহাল অবস্থা। অফিস,বাড়ি আবার নোহা।মাঝে মাঝে তো রুশের বসে বসে কাঁদতে ইচ্ছে করে। এই দায়ানটা বাবা হবে শোনার পর থেকেই অফিসে যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছে।পনেরো দিনে দু-একবার যায়। আর সব রুশকেই সামলাতে হয়। নয়তো নোহাকে আরেকটু বিরক্ত করতে পারতো।তাহলে হয়তো মেয়েটা রুশের প্রতি আরেকটু সদয় হতো।

———————————-

এরই মধ্যে একদিন সকালে নোহা জমেলা খালার সাথে মিলে রান্না বান্না শেষ করে। খেয়ে এনজিও তে চলে যায়। এনজিওতে জরুরি একটা মিটিং আছে এজন্য।

দায়ান সোহাকে হাত মুখ ধুইয়ে ফ্রেশ করিয়ে দেয়। তারপর হাত ধরে আস্তে আস্তে করে ড্রয়িং রুমের সোফায় নিয়ে বসায়।

— তুমি বসো। আমি তোমার খাবার নিয়ে আসছি।

— সোহা মাথা নাড়িয়ে, টিভি ছেড়ে কার্টুন দেখায় মন দেয়।

দায়ান খাবার নিয়ে এসে সোহার পাশে বসে। তারপর সোহাকে খাইয়ে দিতে থাকে। সোহা খাচ্ছে আর টিভি দেখছে।

এরই মধ্যে হন্ত দন্ত হয়ে রুশ প্রবেশ করে। হয়তো নোহা ডোরটা লাগিয়ে যেতে ভুলে গেছে। তাই রুশের ঢুকে পরতে প্রবলেম হয় নি। এসেই ধপাস করে সোফায় বসে।দায়ান কপাল কুঁচকে রুশের দিকে তাকায়। সোহাও টিভি দেখা বাদ দিয়ে রুশের দিকে তাকিয়ে রয়।

রুশের সেকি অবস্থা,, মনে হয় মাত্র ঘুম থেকে উঠে দৌড়ে এখানে এসে পড়েছে। ফ্রেশ ও হয়নি।পরনে কোঁচকানো টি-শার্ট আর টাউজার।দেখে পা’গল মনে হচ্ছে।

দায়ান এবার জিজ্ঞেস করে,, কিরে কি হয়েছে তোর? তুই এই অবস্থায় এখানে।সব ঠিক আছে?

— না দোস্ত না কিছু ঠিক নেই।তুই আর বোন কিছু একটা কর।নয়তো আমি শেষ। প্লিজ ইয়ার কিছু কর নয়তো আমি সু’ই’সাইড করবো বলেই ছলছল চোখে তাকায়।

— কি হয়েছে বলবিতো।

— বাড়িতে মেয়ে দেখেছে বিয়ে করার জন্য। আংটি পড়ার জন্য তারিখ ও দিয়ে দিয়েছে নাকি।আমাকে না জানিয়ে।

— তো এটাতো ভালো খবরই বিয়েটা এবার করে নে অনেকতো হলো।

— তুই পা’গল হয়ে গেছিস? আমি অন্য কোথাও বিয়ে করবোনা।তরাতো অন্তত আমায় বোঝ ইয়ার।আমি নোহাকে ভালোবাসি। ওকেই আমার লাইফে চাই।তরা কিছু কর ভাই।

দায়ান রুশের কথা শুনে মিটমিটিয়ে হাসে। রুশ এতোদিন কিছু না বললেও রুশ যে নোহাকে ভালোবাসে এসবই সে জানে।

সোহাতো রুশের কথা শুনে হা করে রুশের দিকে তাকিয়ে রয়।তারপর চোখ জোরা খুশিতে চকচক করে উঠে।তার রুশ ভাইয়া আপুকে ভালোবাসে বিয়ে করতে চায় শুনে।

আমি সত্যি শুনছিতো রুশ ভাইয়া? তুমি আপুকে ভালোবাসো?

হুম।

তারপর রুশের দিকে তাকিয়ে বলে,, রুশ ভাইয়া তুমি চিন্তা করো না।আপুকে রাজি করানোর দায়িত্ব আমার।তুমি নিশ্চিন্তে থাকো।এখন বাড়ি যাও গিয়ে আংকেল আন্টি কে নিয়ে আসো।আমি বাবা মাকে আসতে বলছি।রুশ সোহার কথা শুনে স্বস্তির নিশ্বাস নেয়।

বিকেলের দিকে নোহা বাড়িতে আসলে সোহা নোহার পিছনে লাগে।আপু তোকে আমার এই কথা রাখতেই হবে।নোহা মানা করে।কিন্তু সোহা কোনোভাবেই শুনতে নারাজ।যে করেই হোক বোনকে রাজি করাতে হবে।বোনের লাইফটা গুছিয়ে দিতে হবে । এর মধ্যে সোহার বাবা মা ও এসে পরে।ওনারা সব শুনে তেমন কিছু বলেনি।সব নোহার উপর ছেড়ে দিয়েছেন। কারণ একবার জোর করে মেয়েটার জীবন উলট পালট করে দিয়েছিল।তাই তারা বলে দিয়েছে নোহা যা বলে তাই হবে।

দায়ান ও কিছু বলছেনা।সোহার বাবা মা আর দায়ান চুপচাপ সোফায় বসে আছে। আর সোহা বোনকে বুঝাচেছ।আপু তুই আমার কথাটা রাখবিনা।আরেকটাবার সুযোগ দে লাইফটাকে।অনেক বলেও যখন রাজি করাতে পারছিলনা তখন সোহা বলে,,,, ভেবে নে এটা আমার লাস্ট আ’বদার আপু।যদি বাবু হওয়ার সময় আমার কিছু হয়ে যায়? তখন কিন্তু কাদলেও লাভ হবে না।যে বোনের শেষ চাওয়াটা পূরণ করতে পারিস নি।আমার শেষ চাওয়াটা কি তুই পূরণ করবিনা? ঠিক তখনই কাচ ভাঙার শব্দ শুনে সবাই আঁতকে উঠে। পাশে তাকিয়ে দেখে দায়ান গ্লাস ছুড়ে মেরেছে দেয়ালে।সোহার দিকে রা’গী চোখে তাকিয়ে আছে। সোহা দায়ানের দিকে করুণ চোখে তাকায় ও তো বোনকে রাজি করানোর জন্য বলতেছিলো।লোকটা সিরিয়াসলি নিয়ে নিলো।

এরই মধ্যে রুশ তার বাবা মা কে নিয়ে হা’জির হয়। সকলেই কথা বার্তা বলছে।রুশের বাবা মা নোহাকে দেখে সে কি পছন্দ।

নোহা সবার দিকে একবার তাকিয়ে বলে,,,আমি রুশ সাহেবের সাথে একা একটু কথা বলতে চাই।সবাই মত জানায় কথা বলার জন্য। কিন্তু রুশতো ভিতরে ভিতরে চিন্তায় শেষ।কি না কি বলে নোহা।সে কি সত্যি বিয়ে করবে না তাকে?

———————-
তারপর দু’জন কেই আলাদা কথা বলার সুযোগ দেওয়া হয়।

লাস্ট বারের মতো নোহা রুশকে বোঝানোর ট্রাই করে।কিন্তু রুশের সেই এক কথা।

নোহা একটা দীর্ঘ শ্বাস ছাড়ে।তারপর বলে,,আমি আপনাকে বিয়ে করবো বাট,,,,,

বাট?

আমার উপর কোনো অধিকার ফলাতে পারবেন না আমার ইচ্ছার বিরুদ্ধে। আপনাকে মন থেকে মেনে নেওয়ার জন্য সময় দিতে হবে। ততোদিন আপনি আমায় কোনো জোর করতে পারবেন না। সময় দিতে হবে পরে আমিই আপনাকে কাছে টেনে নিবো।তার আগে না।

রুশ নোহার কথা শুনে কি যে খুশি হয়েছে।বিয়ে করতে রাজি হয়েছে এই অনেক।এক সাথে থাকতে থাকতে ভালোবাসা এমনিতেই হয়ে যাবে।লাফালাফি শুরু করে দিয়েছে আনন্দে রুশ।নোহা রুশের দিকেই তাকিয়ে আছে। রুশ খুশি মনেই বলে আমি তোমার সব শর্তে রাজি।তারপর তারা আবার ড্রয়িং রুমে ফিরে যায়।

ওরা দু’জন যেতে সবাই উৎসাহ নিয়ে ওদের মতামত জানতে ওদের দিকেই তাকিয়ে আছে।

নোহা ঢুক গিলে বলে,, আমি এই বিয়েতে রাজি।

তারপর সবাই তারিখ ঠিক করতে চায়।রুশ তাতে বাঁধা দেয়।সে এখনই নোহাকে বিয়ে করবে জানায়।অনেক কষ্টে রাজি করিয়েছে আবার যদি মত বদলে ফেলে? না বাবা সেই রিক্স রুশ কিছুতেই নিবে না।সে এখনই নোহাকে বিয়ে করবে।কোনো অনুষ্ঠানের দরকার নেই।

তারপর আর কারো কি করা থাকে? অগত্যা সবার রুশের কথায় সায় জানাতে হয়। কাজি ডেকে দুই পরিবারের উপস্থিতিতে ঘরোয়া ভাবেই নোহার আর রুশের চার হাত এক করে দেয়।

এই বিয়েতে সব চাইতে বেশি খুশি হয়েছে সোহা আর রুশ দুইজন খুশিতে কেঁদেই দিয়েছে।শালি-দুলাভাইয়ের কান্না দেখে নোহা আর দায়ান ড্যাপ ড্যাপ করে তাকিয়ে রয়।রুশ যে এভাবে নোহাকে বিয়ে করতে পেরেছে বলে,খুশিতে কান্না করে দিবে কারো ভাবনাতেই ছিলো না।সবাই বুঝতে পেরেছে রুশ নোহাকে কতোটা চায়।

——————————-
রুশ আর তার পরিবার রাতের খাবার খেয়েই চলে গেছে। নোহাকে আগামীকাল নিয়ে যাবে।রাতে সবাই খাবার খেয়ে যে যার রুমে চলে যায়।

দায়ান সোহাকে বিছানায় শুয়ায়।।তারপর নিজেও পাশে শুয়ে পরে। সোহার মাথাটা আলগোছে নিজের বুকে নেয়।সোহা মাথা কাত করে দায়ানের দিকে তাকায়। দায়ান সোহার কপালে চুমু খায়।

তুমি ঘুমাও আমি মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছি। সোহা দায়ানকে বলে,,,,, আজ না আপনাকে মন ভরে দেখতে ইচ্ছে করতেছে। আপনাকে আমি আজ না ঘুৃমিয়ে দেখি?

আমাকে কি নতুন দেখছো পা’গলি? চুপচাপ ঘুমাও নয়তো শরীর খারাপ করবেতো।এখন তোমায় ঠিকঠাক মতো ঘুমাতে হবে।

দেখি না একটু এমন করেন কেন? যদি আর দেখার সুযোগ না পাই।বলেই ঠোঁট উল্টায়।

সোহার কথা শুনে দায়ানের বুকটা ধ’ক করে উঠে।নিজের সাথে আরেটু মিশিয়ে নিয়ে বলে,,আরেকবার যদি এসব কথা বলেছো না তাহলে খবর আছে। তোমার কিছু হলে আমার কি হবে পা’গলি? এসব কথা মাথায় ও আনবানা।আরো কিছু সময় দুজনেই নানান কথা বলতে বলতে ঘুমিয়ে যায়।

মাঝ রাতে গোঙানির শব্দে দায়ানের ঘুম ভেঙে যায়। তারাতাড়ি উঠে বসে দেখে সোহা পেট ধরে বসে কাঁদছে।

এইই কি হয়েছে তোমার সোহা?

ব্যা-ব্যাথা করছে।সহ্য করার মতো না।আমি আর পারছি না।প্লিজ কিছু একটা করুন।বলেই জোরে কেঁদে দেয়।

দায়ানের ঘাম ছুটে গেছে সোহার অবস্থা দেখে। বুঝতে আর বাকি নেই লি”ভা’র পেইন উঠে গেছে।সবাইকে তারাতাড়ি ডেকে আনে।ভাজ্ঞিস সবাই ছিলো দায়ান নয়তো একা কি করতো? তারপর দায়ান সোহাকে কোলে নিয়ে গাড়িতে বসায়।নোহা আর নোহার মা পিছনে সোহার সাথে,আর সোহার বাবা দায়ানের সাথে সামনে বসেছে।
দায়ান খুব দ্রুত ড্রাইভ করতে থাকে।মাঝে মাঝে সোহার দিকেও তাকাচ্ছে। সোহার প্রতিটা বেদনা দা’য়ক চিৎকার দায়ানকে ভিতর থেকে দূর্বল করে দিচ্ছে। গলা শুকিয়ে আসছে। কানে সোহার বলা কথাগুলো বারি খাচ্ছে,,,

“আপনাকে মন ভরে দেখতে ইচ্ছে করতেছে। আমি আজ না ঘুমিয়ে আপনাকে দেখি?” যদি আর দেখার সুযোগ না পাই।

দায়ান মনে মনে আল্লাহ কে ডেকে চলেছে,সোহা আর বেবিটার যেনো কিছু না হয়।

#চলবে,,,,,,