তুমি হাতটা শুধু ধরো ২ পর্ব-২০+২১

0
269

#তুমি_হাতটা_শুধু_ধরো_২
#পর্বঃ২০
#Jhorna_IslamIslam

দিন দিন দায়ানের কেয়ারের পরিমাণ সোহার প্রতি বেড়েই চলেছে।

সোহা খুব উপভোগ করে বিষয় গুলো।এই যে ছোটো ছোটো যত্ন গুলো ও মন কেড়ে নেয়। মনের ভিতর শত ডানার প্রজাপতি পাখনা ঝাপটে উড়ে বেড়ায়। বাতাসে প্রেমের গন্ধ। আহ্ নিজের ভালোবাসার মানুষ টা যখন নিজ থেকে এমন করে খেয়াল রাখে কার না ভালো লাগে?

দায়ানের দৃষ্টিতে সোহা এখন অন্য কিছু দেখতে পায়। কিন্তু লোকটা মুখে প্রকাশ করে না।এই যে দায়ানের সব কাজে সোহা ভালোবাসা খুঁজে পায়।আর কাউকে ভালো না বাসলে এমন ভাবে যত্ন করা যায় বুঝি?

কিন্তু মুখ ফোটিয়ে কেনো বলে না এইটাই সোহার কষ্ট। এসবের মানে হয়? বলে দিলে কি হয় যে সোহা আমি তোমাকে ভালোবাসি।

উনি চাইছে টা কি? যে আমি গিয়ে আগে ওনাকে ভালোবাসার কথা বলি? তাহলে উনার সেই ভাবনায় গুড়ে বালি। আমি কখনো উনার আগে আমার ভালোবাসার কথা বলবো না। উনাকেই বলতে হবে।

আমিও দেখি উনি কতোদিন আমায় ভালোবাসার কথা না জানিয়ে থাকতে পারে হুহ।

————

সেই দিনের পর থেকে সোহার প্রতি বেলা টাইম টু টাইম খাবার খাওয়ার অত্যাচার বেড়ে গেছে। পারলে সোহাকে এরা সারাদিন ই খাবার টেবিলে বসিয়ে রাখে।

আর দায়ান সেও প্রতি বেলা নিয়ম করে সোহা কে ফোন করে জিজ্ঞেস করবে খেয়েছে কিনা।সোহার থেকে জেনে নিয়ে বাড়িতে আবার ফোন করে জেনে নেয় সোহা সত্যি বলছে কি না।কি এক জ্বালা।

প্রথম দিন যখন খাওয়ার কথা দায়ান জিজ্ঞেস করেছিলো খেয়েছে কি না।সোহা তখন না খেয়েই বলেছিলো খেয়েছে।ভেবেছে মিথ্যা বললে দায়ান তো আর তা জানতে পারবে না।কিন্তু তার ভাবনা কে সম্পূর্ণ ভুল প্রমাণ করে বাড়িতে কল দিয়ে সত্যি টা জেনে ফেলে।তারপর রাতে এসে দুই বারের খাবার সোহার সামনে রেখে পাশে বসে থেকে পাহাড়া দিয়ে নিজ দায়িত্বে শেষ করিয়েছে। অনেক বাহানা দিতে চেয়েছিলো।একটাও কাজে লাগেনি।মিথ্যা কেনো বললো না খেয়ে।তাই দুপুরের আর রাতের খাবার এক সাথেই খেতে হবে।ঐ দিনের পর থেকে খাবার নিয়ে দায়ানকে আর মিথ্যা কথা বলেনি।নিয়ম করে খেয়েছে।নয়তো জানেই দুই বারের খাবার এক বারে খাওয়াবে।

———————–
সোহার এডমিশন টেষ্ট যতো ঘনিয়ে আসছে পড়ালেখার চা’প ততো বাড়ছে।আর ভালো লাগে না এই পড়াশোনা।

রুশ দুই দিন হলো প্রাইভেট টিউটর রেখে দিয়েছে বাড়িতে এসে পরিয়ে দিয়ে যাওয়ার জন্য।

সোহার সেই কোচিং এর স্যারই এসে পরিয়ে দিয়ে যায়। উনি নাকি রুশের বন্ধু।এক সাথেই পড়াশোনা করেছেন।তবে ততোটা কাছের ও না।এই যে বাড়ির কেউই চিনে না।শুধু রুশ ছাড়া।

সোহার অবশ্য ভালো হয়েছে এই স্যার পড়ায় বলে,,স্যার অনেক সুন্দর করে বোঝায়।সোহা স্যারের পড়া খুব সহজে ভালো করে বুঝতে পারে।

দায়ান দুই দিন ধরে খুব ব্যস্ত সময় পার করছে৷ হাসপাতালে । দায়ান ই বলেছিলো সোহাকে এক জন শিক্ষক বাড়িতে রেখে দিতে।যেনো সুবিধা হয়।দায়ান অবশ্য জানে না কাকে রেখেছে।

——————–
আজ দায়ান সকাল থেকেই বাড়িতে। আজ তার ছুটি।

তবুও রেডি হয়ে রুম থেকে বের হয়েছে সোহাকে কোচিং এ পৌঁছে দেওয়ার জন্য।

সোহা মাত্রই বসেছে খাবার খাওয়ার জন্য। দায়ান এসে তার কাছ ঘেঁষে ধপাস করে পাশের চেয়ারে বসে পরে।

হঠাৎ করে এমন হওয়ায় সোহা কিছুটা আৎকে উঠে। তারপর দায়ানের দিকে তাকায়।

দায়ান এক ব্রু উচিয়ে জিজ্ঞেস করে কি?

সোহা মাথা নাড়িয়ে বোঝায় কিছু না।

“ভিতুর ডিম একটা।” কথাটা যদিও দায়ান আস্তে করে বলে। তবুও কাছাকাছি বসায় সোহার কানে গিয়ে পৌঁছায়।

সোহা চোখ গরম করে দায়ানের দিকে তাকায়।ভাবটা এমন যেনো ছোটো বাচ্চাকে সে চোখ রাঙিয়ে ভ’য় দেখাচ্ছে।

দায়ানের খুব হাসি পেলো।তাও মুখ টিপে আস্তে করে হেসে খাওয়ায় মন দেয়।

তারপর দুইজনই বেরিয়ে পরে। সোহাকে কোচিং এর সামনে নামিয়ে বলে যায় ছুটির সময় আবার এসে নিয়ে যাবে।পা”ক’নামো করে একা একা যেনো যেতে না ধরে।

ওকে বলে সোহা চলে যায়।

——————-
কোচিং শেষ হওয়ার বিশ মিনিট পর দায়ান আসে। ঠিক সময়ে বের হলেও জ্যামের কারণে ঠিক সময়ে এসে পৌঁছাতে পারে নি।

গাড়ি থেকে নেমে এসে দেখে কোচিং সেন্টার পুরাই ফাঁকা। কোনো ছাত্র ছাত্রীর চিহ্ন মাত্র নেই। দায়ান গেটের দারোয়ানকে গেটের সামনে বসে থাকতে দেখে জিজ্ঞেস করে,,, চাচা সবাই চলে গেছে?

হ বাপ হগলে চইলা গেছে।

একটু দেখেন না ভিতরে কেউ আছে কিনা।না মানে একটা মেয়ে।

কেউ নাই।আমি সব দেইখাই তালা লাগাইছি।

দায়ানের কপালে ভা’জ পরে।মেয়েটা কে বলে যাওয়ার পরও চলে গেলো? একটু অপেক্ষা করতে পারলো না? চলে গেছে এটা দায়ান কে ফোন করে অন্তত জানাবে তো।এই দুপুর বেলা দৌড়ে এসে কি লাভ হলো তার?

তারপর নিজের ফোন বের করে সোহাকে কল লাগায়।বারবার একই কথা ভেসে আসছে। ” আপনি যেই নাম্বারে এখন কল দিয়েছেন সেটি এখন বন্ধ আছে।

ফোন বন্ধ বলায় রা’গ উঠে যায় দায়ানের।গাড়িতে একটা লাথি দিয়ে। ভিতরে ঢুকতে নিবে তখনই কারো হাসির শব্দে থেমে যায়।

রাস্তার অপর পাশ থেকে আসছে হাসির শব্দে টা।দায়ানের খুব চেনা চেনা লাগলো। সে ঘার ঘুড়িয়ে তাকায়।তাকিয়ে মেজাজ টা খারাপ হয়ে যায়। সোহা ঐখানে দাড়িয়ে দাড়িয়ে ফুচকা খাচ্ছে আর কথা বলে বলে জোরে জোরে হাসছে।পাশে দাড়িয়ে আছে একটা ছেলে। দেখে মনে হচ্ছে সোহার পরিচিত কেউ। অন্য পাশে একটি মেয়েও আছে।কিন্তু সোহা দুই জনের মাঝখানে।

দায়ান রাস্তা পার হয়ে সোহার দিকে এগিয়ে যায়।

সোহা তার কোচিং এর রিপন স্যার যে তাকে বাড়িতে পরায়।আর বান্ধবী শিলার সাথে দাড়িয়ে ফুচকা খাচ্ছে আর তাদের গ্রামে থাকতে কি কি করেছে সেসব নিয়েই আলাপ করছে।

কোচিং অনেক আগেই ছুটি হয়ে গেছে। সোহা গেটের সামনে দাঁড়িয়ে দায়ানের জন্য অপেক্ষা করছিলো।সোহা কে দাড়িয়ে থাকতে দেখে শিলাও তার সাথে দাঁড়ায়। সোহা বলে ছিলো চলে যেতে কিন্তু সে যায়নি। যেহেতু শিলার বাড়ি কাছেই তাই সোহাকে এখানে একা দাড়িয়ে থাকতে দেয় নি।সেও পাশে দাড়িয়ে রয়।

রিপন স্যার ও কোচিং শেষ হয়ে বের হয়ে যাচ্ছিলো এমন সময় সোহা আর শিলা কে দেখে দাড়িয়ে যায়।তারপর তাদের থেকে জানতে চায় তারা এখনো এখানে দাঁড়িয়ে আছে কেনো। সোহা বলে,,সব শুনে সেও দাঁড়িয়ে থাকে।সোহা বারণ করলেও শুনেনা।ওরা কোচিং এর ছাত্রী ওদের খেয়াল রাখা তাদের একটা দায়িত্ব।

কিছু সময় দাড়িয়ে থাকার পর হঠাৎ করে রিপন স্যার বলে উঠে এখানে শুধু শুধু দাড়িয়ে থেকে লাভ নেই। ঐ যে ঐপাশে চলো ফুচকা খেয়ে আসি। সোহা আর শিলা অবাক হয়ে স্যারের দিকে তাকায়।

এমন অবাক হয়ে তাকানোর কিছু নেই।আমিও ফুচকা অনেক লাইক করি।চলো খেয়ে আসি।

দুই বান্ধবী আর দ্বিমত পোষণ করে নি।এখানে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করার চেয়ে ফুচকা খাওয়া ভালো।

হঠাৎ করেই কারো রুক্ষ ,কন্ঠের ডাকে সোহার কথা ও হাসি দুটোই থেমে যায়। বুঝতে আর বাকি নেই দায়ান।সোহা পিছনে তাকিয়ে বলে,,,ওও আপনি এসেছেন? আমি আপনার জন্যই অপেক্ষা করছিলাম।

কেমন অপেক্ষা যে করছিলে তা তো দেখতেই পাচ্ছি। সকলের দিকে একবার চোখ বুলিয়ে কথাটা বলে দায়ান।

হেহে আসলে ইনি হলেন আমার স্যার।রিপন স্যার কে দেখিয়ে বলে সোহা।

হ্যালো আমি রিপন মাহমুদ। এই কোচিং এরই একজন শিক্ষক বলেই দায়ানের উদ্দেশ্যে হাত বারায়।

দায়ান হাতের দিকে তাকিয়ে হাত না মিলিয়েই বলে,,হ্যালো আমি দায়ান শেখ। ডক্টর দায়ান শেখ।
বলেই কাউকে আর কিছু বলতে না দিয়ে সোহার হাতের ক’ব্জি ধরে টানতে টানতে গাড়ির কাছে নিয়ে আসে। তারপর নিজেই ঠেলে গাড়িতে বসায়। এক মিনিটের মাঝে গাড়িতে উঠে গাড়ি চালাতে শুরু করে।

এমন করে কেউ।আমার বান্ধবীর সাথে পরিচয় ই করাতে পারলাম না।

ফোন কোথায়?

মানে ফোন আবার কোথায় হবে ব্যাগে।

বের করে হাতে নাও।

সোহা ব্যাগ থেকে ফোন হাতে নেয়।তারপর দেখে অফ হয়ে আছে। ইয়ে মানে চার্জ শেষ মনে হয়।

দায়ান কিছু না বলে,,সোহাকে বাড়িতে নামিয়ে দিয়ে আবার বেরিয়ে যায়।

—————–

এখন প্রায় সন্ধা। রিপন স্যার ড্রয়িং রুমে এতো সময় সোহা কে পরিয়েছে। টাইম শেষ হওয়ায় উঠে দাঁড়ায় চলে যাবে।এমন সময় কল আসে তাই রিসিভ করে কথা বলতে বলতেই দরজার কাছে এসেই দায়ান কে দেখতে পায়। কথা বলতে বলতে দায়ানের দিকে তাকিয়ে একটু হাসি দিয়ে চলে যায়।

দায়ান তো সেখানেই দাড়িয়ে আছে। এই ছেলে এই বাড়িতে কি করছে? সোজা বাড়িতে চলে এসেছে। দায়ানের মা কে দেখে দায়ান বলে,,,,আম্মু এই লোকটা এখানে কি করছিলো?

ওওও রিপন? ওতো সোহাকে পড়াতে এসেছে। ছেলেটা অনেক ভালো পড়ায় বুঝলি? সোহা ওর কাছেই পরে।

আর পরবে না।কাল থেকে না করে দিবে আসতে।সোহা আর এর কাছে পরবে না।

সোহা বলে উঠে মানে? পড়বো না কেনো? উনি অনেক ভালো পরায়।আমি সব বুঝি ওনার কাছে।

আমি যখন বলেছি না। তার মানে না।

আরে এখন কি বলছিস কয়দিন পর মেয়েটার পরিক্ষা। রুশের বন্ধু।তাছাড়া এখন স্যার কোথায় পাবো।কে পড়াতে রাজি হবে?

দরকার পরলে আমি পড়াবো।

হহ বুঝছি।উনি আমায় পড়াবেন।সাইন্সের ছাত্র হয়ে আমায় কমার্সের হিসাববিজ্ঞানের হিসাব মিলাবে।

রুশ তখন পিছনে থেকে সবই শুনেছে।দায়ানের কাছে এগিয়ে এসে কানের কাছে ফিসফিস করে বলে।,,,,জেলাসি টা একটু কমা ভাই আমার বন্ধু অলরেডি মেরিড।

দায়ানের মা ছেলেকে বলে যান।এই স্যারই পড়াবে সোহাকে।

রুশ ও হাসতে হাসতে চলে যায়।

দায়ান আ’হা’ম্ম’কের মতো দাড়িয়ে রয়। শেষে কিনা এই পিচ্চির জন্য জেলাস ফিল করছে।এই দিন ও বাকি ছিলো জীবনে?

সোহা ও দায়ানের দিকে তাকিয়ে মিটমিটিয়ে হাসে। তারপর দায়ানের পাশ দিয়ে যায় আর গান গায়,,,,,,,

“ভালোবাসি বলে দাও আমায়।”
বলে দাও হ্যা সব কবুল।”

#চলবে,,,,,,,,,,,

#তুমি_হাতটা_শুধু_ধরো_২
#পর্বঃ২১
#Jhorna_Islam

পরীক্ষার ঝামেলা শেষ এখন মুক্ত পাখির মতো উড়ে বেড়াচ্ছে সোহা আর পেরা নাই শুধু চি’ল আর চি’ল.।

এক্সাম মানেই মাথায় বিশালাকার একটা টেনশন। কয়েক দিনের জন্য সেই টেনশন থেকে মুক্তি পেলো সোহা।

আর এখন সব ভুলে হাসি আনন্দে সেই সময় টা কাজে লাগাচ্ছে সে। পরীক্ষা দিয়ে আসার পর যখন জিজ্ঞেস করা হলো তাকে কেমন দিয়েছে সে?

এক উত্তরে বলে দিয়েছে জানে না।

সকলেই তখন জিজ্ঞেস করলো এটা আবার কেমন কথা?

তখন যুক্তি দিলো,,,দেখো আমি যদি বলি ভালো হয়নি।পরে যদি রেজাল্ট ভালো আসে।তোমরা কি বলবে যে আমি মিথ্যা বলেছি।আসলেই তো সেটা মিথ্যা বলাই হবে।।

আবার ধরো বললাম ভালো হয়েছে কিন্তু রেজাল্ট খারাপ আসলো।তখন সকলে বলবে যে আমি খারাপ করেও ভাব নিতে বলেছি ভালো হয়েছে। এতেও আমি মিথ্যাবাদি প্রমানিত হবো।

সো কেউ আমায় এখন রেজাল্টের কথা জিজ্ঞেস করে লজ্জা দিবা না।বের হলে জানতেই পারবা।

সোহার যুক্তি শুনে সকলেই বোকা বনে গেলো।কি আর করার কেউ আর কিছু জিগ্যেস করেনি।

সোহার বাবা মা বলেছে খুব শি’ঘ্রই আসছে তারা।সোহাতো জানে না কি উদ্দেশ্যে আসছে।

————————————

“ জীবনের মুক্ততার পর একটু বন্ধন আমরা সবাই মেনে নেই। একজন ইংরেজ কবি লিখেছেন যে বিয়ের বাক্যটি আকাঙ্ক্ষার সমুদ্রের মধ্যে একটি দ্বীপের মত। দ্বীপে দ্বীপে ঢেউয়ের ধাক্কা লাগে, শরীর কেঁপে ওঠে অন্ধকারে ভাসমান নৌকার মত। একটি নতুন সময়ের লীলায় জীবনে পরিবর্তন আসে। ”

বিয়ে কথাটা হালকা ভাবে সহজে বলা গেলেও এর অর্থ প্রচন্ড ভা’রি। এইযে তিন অক্ষরের শব্দ উচ্চারণ করে আমরা নিজেকে অন্যর সাথে সারাজীবনের জন্য জড়িয়ে নেই।এক সুতোয় বেঁধে ফেলি একে অপরকে।এই বন্ধনে অপর পাশের মানুষটার সাথে সারাজীবনের জন্য আঁটকে যাই।সু্খ দুঃখের সাথী হয়ে যাই।একটা মানুষ সারাজীবনের জন্য নিজের নামে আবদ্ধ হয়ে যায়।

এই যে এখন সোহা আহাম্মকের মতো তাকিয়ে আছে দায়ানের দিকে। ভালোবাসার কথা হলো না।প্রকাশ করা হলো না।কিছুই হলো না।এসব কিছু না হওয়ার আগেই কিনা এতো কিছু হয়ে গেলো।কতো স্বপ্ন দেখে রেখেছে ভালোবাসার মানুষ টা তাকে ফিল্মি স্টাইলে প্রপোজ করবে।

সব আশায় শেষে কিনা তার পরিবার আর দায়ানের পরিবার জল ঢেলে দিলো।এখন যে তার কান্না পাচ্ছে। প্রচুর কান্না।

দুই কারণ মিলিয়ে এখন তার গড়াগড়ি খেয়ে কান্না করতে ইচ্ছে করছে।

এক ভালোবাসার মানুষ টা কে সারাজীবনের জন্য নিজের নামে করে নেওয়ার এক ধাপ এগিয়ে গেছে। কিছু সময় আগেই পরিবারের সকলের উপস্থিতিতে “দায়ান ও সোহার আ’ক’দ সম্পন্ন হয়।

এসবের কোনো মানে হয়? একেবারে উঠ ছে’রি তোর বিয়া।
আজকে সোহা সারাদিন শুধু অবাকের উপর অবাক হয়ে চলেছে।

এই যে সকালে ঘুম থেকে উঠে জানতে পারলো আজ তার বাবা মা আসছে।কি যে খুশি লাগতেছিলো কতোদিন পরে দেখবে বলে। তারপর আবার কিছু টা মন খারাপ হয়ে গেছে এটা ভেবে সোহাকে তো উনারা নিতেই আসবে।দায়ান কে ছেড়ে থাকতে হবে।

এগারোটা না’গাদ সোহার বাবা মা এখানে এসে পৌছায়। তখনো সোহা জানতোনা তাদের বাবা মায়ের এখানে আসার আসল উদ্দেশ্য।

দুই পরিবারের সকলে মিলে যে তার জীবনের মোর ঘুরিয়ে দিবে।

হঠাৎ করেই সন্ধায় নোহা এসে সোহাকে নিয়ে সোহার রুমে চলে যায়। তারপর সোহার বিছানার পাশে রাখা একটা শপিং ব্যাগ হাতে তুলে নেয়।মনে হয় সোহাকে আনার আগে রেখে গেছে।

সোহা চুপচাপ বোনের কাজ দেখছে।কি করতে চাচ্ছে তাকে?

নোহা ব্যাগ থেকে সুন্দর একটা নীল রং এর শাড়ি বের করে। আর সাথে শাড়ির সাথে পড়ার সকল জিনিস। সোহা হা করে শাড়ির দিকে তাকিয়ে আছে।

ওয়াও আপু এটা কি সুন্দর।

— হুম পছন্দের মানুষ এনেছে তো তাই একটু বেশিই সুন্দর।

— রুশ ভাইয়া এনেছে তোমার জন্য? তারপর খাটের উপর গিয়ে পা তুলে আরাম করে বসে।

দেখেছো রুশ ভাইয়া তোমার জন্য কি সুন্দর শাড়ি এনেছে। আর আমি যে তার একটা শা/লি আছি সে ভুলেই গেছে। আমার জন্য কিছুই আনলো না।

তুমি কি কোথাও যাবা এটা পরে? আসো তোমায় সাজিয়ে দেই। আমাকেও এক দিন শাড়িটা দিও। পরে ছবি তুলবো।তারপর এফবিতে পিক আপলোড দিবো।কতোদিন হয়ে গেলো প্রোফাইল বদলানো হয় নি।সেই যে তোমার বিয়ের মধ্যে আপলোড দিয়েছিলাম।

হ্যা দিবি তো।আর কতো সিংগেল পিক দিবি? এইবার ফেভারিট পার্সোনের সাথেই যেনো দিতে পারিস সেই ব্যবস্থা করছি।

মানে?

এতো মানে এর উত্তর দিতে পারবো না।তারপর সোহার হাতে শাড়ি পরার জন্য ব্লা’উ’জ, আর পে’টি’কো’ট হাতে ধরিয়ে দিয়ে বাথরুমের ভিতর ঠেলে পাঠিয়ে বলে,,,দশ মিনিটের বেশি টাইম লাগাবিনা।তারাতাড়ি চেঞ্জ করে আয়।

কিন্তু আমি,,,,,,?

তারাতাড়ি কর বলেই নোহা দরজা লাগিয়ে দেয়।

সোহা বাথরুম থেকে গুটি গুটি পায়ে বেরিয়ে আসে। তারপর নোহার সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। আপু বলবিতো আমাকে কেনো এসব পড়তে দিয়েছিস?

নোহা শাড়ি পরাতে পরাতে বলে,,,একটু পরই জানতে পারবি।

আমরা কি কোথাও যাবো আপু?

হুম নিচে।

আর একটা কথা ও সোহাকে বলতে দেয় নি।কিছু জিগ্যেস করলেও নোহা চুপ ছিলো।তারপর সুন্দর করে সোহাকে সাজিয়ে দেয়।

ওয়াও আমার বোনকে একদম নীল পরির মতো লাগছে।আজ তো একজন পুরোপুরি ঘা/য়েল হয়ে যাবে।

কে ঘা/য়েল হবে?

নোহা কিছু বলতে নিবে তখনই ওর ফোনে মেসেজ টো’ন বেজে উঠে। রুশ মেসেজ পাঠিয়েছে।

” এদিকে সব রেডি।যাদের আসার কথা তারা ও এসে পরেছে।ওরা আসলেই আ’ক’দ শুরু। সোহাকে নিয়ে আসো।”

নিচে গিয়ে বলছি চল।বলেই সোহাকে নিয়ে নিচে আসে।পরিবারের সকলেই উপস্থিত। সাথে আরো কয়েকজন যাদের সোহা চিনে না।

চুপচাপ মায়ের পাশে গিয়ে বসে। কি হচ্ছে বলোতো মা? আমরা কি কোথাও যাচ্ছি? বলতে বলতেই উপরের দিকে চোখ আটকায়।

দায়ান নীল পাঞ্জাবি পরেছে।উফফ কি যে লাগছে।সোহা এক দৃষ্টিতে দায়ানের দিকে তাকিয়ে রয়। হায় এই লোকটা দিন দিন আর কতো ভাবে সোহাকে মুগ্ধ করবে।এই যে দিন দিন লোকটার জন্য সোহা পা/গল হয়ে যাচ্ছে। একে বারে পা/গল হয়ে গেলে তার দা’য় ভা’র কি দায়ান নিবে?”

সোহার এমন দৃষ্টিতে দায়ানের দিকে তাকিয়ে থাকা দেখে সকলেই মুখ টিপে হাসে।নোহা কানের কাছে গিয়ে বলে,,আরেকটু স’বুর কর।তারপর লাইসেন্স পেয়ে যাবি দেখার।

দায়ান সোফায় এসে বসতেই নোহা সোহাকে টেনে নিয়ে দায়ানের পাশে বসিয়ে দেয়।

দায়ানের বাবা শুরু করতে বলে,,,সোহার আর বাকি নেই বুঝতে কি হতে চলেছে। সেও দায়ানকে চেয়েছে তাই বলে এভাবে হুট করে? দায়ান কি রাজি? এখনোতো মুখ ফোটে সোহাকে ভালোবাসার কথা ও বলেনি।

তারপর দেখলো দায়ানকে যা যা করতে বলল বিনা সংকোচে সব নিমিষেই করে দিলো।সোহা শুধু তাকিয়ে আছে।

তারপর যখন সোহার পালা আসলো সে নির্বিকার।কারো কোনো কথাই তার মাথায় ঢুকছে না।সে তো কতো কিছু ভাবতেছে।

দায়ান সোহার দিকে তাকিয়ে সোহার চুপ করে থাকার মানে বের করার চেষ্টা করছে। তাহলে কি সোহা রাজি না? তার মা যে বলল সোহা রাজি! দায়ান সোহার হাতের উপর আলগোছে নিজের হাতটা রাখে।

সোহা দায়ানের হাতের ছোঁয়াতে নিজের ভাবনা চিন্তা থেকে বেরিয়ে আসে।

দায়ানের চোখের দিকে তাকিয়ে বলে দেয়।নিজেকে দায়ানের নামে করে দেয়।

সকলেই এখন হাসিখুশিতে মেতে আছে মিষ্টি খাওয়া খাওয়ি করছে। সোহা কিছু সময় রোবট সেজে বসে ছিলো।তারপর ভাবলো যা হওয়ার ভালোই হয়েছে । ভালোবাসার কথাটা তো দায়ানের মুখ থেকে সে বলিয়েই ছাড়বে। সব চিন্তা দূর হয়ে মনের কোণে আনন্দের হাওয়া বইছে।

ইশশশ সকলে দেখো কিরকম মিষ্টি খাচ্ছে। অথচ যাদের জন্য খাচ্ছে তাদেরই খবর নেই।আমাকে মিষ্টি কেনো দিচ্ছে না। আমিও খাবো।

এর মধ্যেই রুশ মিষ্টি এনে দায়ানের মুখের সামনে ধরে।

আমি মিষ্টি খাইনা।তুই জানিস না সেটা?

একবার খেলে কি এমন হবে ভাই? খেয়েনে,,ভুলে যাসনা আমি তোর ভা’য়’রা ভাই । সম্পর্কে বড় আছি।আমার কথা শুনতে হবে।

থা’প্প’ড় না খেতে চাইলে সর।

আহা দে’বা’র’জি এই করলারে মিষ্টি না সেধে ভাবিকে খাওয়ান।ভাবিকে খাওয়ালে ভাবি দোয়া দিবে।বড় ভাবি বলে কথা।

হ্যা ভাবি বলেই রুশ সোহার মুখের ভিতরে পুরো মিষ্টি ঢুকিয়ে দেয়।

দায়ান সোহার দিকে সরু চোখে তাকায়।

সোহা দায়ানের দিকে তাকিয়ে হাসার চেষ্টা করে। দায়ানের পাশ থেকে উঠে যায়।

নিচ থেকে গুটি গুটি পায়ে এগিয়ে যায় সোহা তার নিজের রুমে। অবশ্য সকলকে ফাঁকি দিয়ে যাওয়ার একটা কারণ আছে।রুমে গিয়ে সেই টা পূরণ করবে।

—————————————
নিজের রুমে এসে দরজাটা ভালো করে লাগিয়ে দেয় সোহা।

তারপর এগিয়ে গিয়ে সাউন্ড বক্সে নিজের পছন্দ মতো একটা গান চালু করে। তারপর শাড়ির আঁচল টা কোমড়ে গুজে দেয়।

গানের তালে তালে উড়াধুরা পা/গলা ডান্স করতে থাকে। যেমন ভাবে পারছে তেমন ভাবেই হাত পা নাড়িয়ে নেচে চলেছে। আর মনে মনে শুধু একটা কথাই বলছে ফাইনালি উনি আমার।

প্রায় আধা ঘণ্টা ধরে এক তালে নেচে চলেছে। ক্লান্ত হয়ে গেলেও পাত্তা দিচ্ছে না। সে আজ অনেক খুশি।

অন্যদিকে যে বাইরে থেকে ক্রমাগত কেউ দরজা ধাক্কাচ্ছে আর তাকে ডাকছে সে দিকে তার হুঁশ নেই। ফোনটা ও বিছানার উপরে রাখা। যা অনবরত বেজে চলেছে। গানের আওয়াজে তা কানে আসছে না সোহার।

নাচতে নাচতে যখন দরজার কাছে আসে। তখন দরজায় সোহার পিঠটা একটু ঠেকে। আর বুঝতে পারে কেউ দরজায় ধাক্কা দিচ্ছে। তার মানে তাকে ডাকছে। তারাতাড়ি করে সোহা গান বন্ধ করে।

তারপর নিজেকে ঠিক ঠাক না করেই দৌড়ে গিয়ে দরজা খুলে দেয়। দরজার অপর পাশে দায়ান দাঁড়িয়ে।

সোহাকে উপর থেকে নিচ পর্যন্ত দেখে নিয়ে তারপর বলে,,যুদ্ধ হয়ে গেলে নিচে আসো।খেতে ডাকছে সকলে।

আরেকটু এগিয়ে এসে সোহার পাশে দাঁড়ায়। মুখ টা সোহার কানের কাছে এগিয়ে এনে বলে,,,,,,,,,

এমন ভাবে আমার সামনে আর এসো না পুরো পুরি আমার কাছে আসার আগে।কোনো ভু’ল টু’ল হয়ে যেতে পারে ডাক্তারের ডাক্তার মেম।তারপর সোহার কানে একটা ফু দেয়। কোমড়ে গুজে রাখা শাড়ির আঁচল টা সোহার শরীরে স্পর্শ ছাড়াই কোমড় থেকে ছাড়িয়ে দেয়।

সোহার আবেশে চোখ বন্ধ হয়ে যায়। দায়ান সোহার মুখের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে চলে যায়।

#চলবে,,,,,,,,