#তুমি_হাতটা_শুধু_ধরো_২
#পর্বঃ২২
#Jhorna_Islam
” আমার কাছে একটু আসতে পারবেন?”প্লিজ!
কি নিঃসংকোচ সেই আবদার! এরকম ডাক বুঝি সহজে কেউ অবহেলা করতে পারে? বুকের ভিতর টা নিজের অজান্তেই মোচড় দিয়ে উঠলো দায়ানের। কন্ঠ টাতে অনেক টা আকুলতা আর অপারগতা লুকিয়ে আছে বুঝি।
মেয়েটা ঠিক আছে তো? কিছু হয়নি তো আবার?
শুধু শুধু এইভাবে ডাকার মেয়েতো সোহা না।খানিকটা ভ’য় কাজ করছে মনে।
কাঁপা কাঁপা কন্ঠে জিজ্ঞেস করলো কি হয়েছে সোহা?
তুমি ঠিক আছো তো?
প্লিজ আপনি তারাতাড়ি আসুন না।আমি একদম ঠিক নেই।আমার খুব ভ’য় করছে। আমার শরীর খারাপ লাগছে।
ওকে। আমি এখনই আসছি একদম ভ’য় পাবে না ঠিক আছে?
এখন কোথায় আছো আমাকে লোকেশন মেসেজ করো আমি এখনই আসছি। বলেই দায়ান ফোন কেটে দেয়।
মনে মনে নিজেকেই নিজে গা/লি ছুড়ে কেনো সে সোহাকে ওর কোচিং এর বান্ধবীদের সঙ্গে যেতে পার্মিশন দিলো।
তারপর দায়ান হাসপাতালের মিটিং রুমে প্রবেশ করে। ওখানে সকল ডাক্তারদের নিয়ে মিটিং বসেছে আজ।তাই দায়ান সকাল সকালই এসে পরেছে।প্রায় আধা ঘণ্টা মিটিং এর পর দশ মিনিটের জন্য ব্রেক দেওয়া হয়েছিলো। সকলেই যেনো একটু রিলেক্স করতে পারে।
এই দশ মিনিটের জন্য যে যার ক্যাবিনে চলে গিয়েছিলো।দায়ান ও তাই।ব্রেক শেষে বের হয়ে আবার মিটিং রুমে ঢুকতে নিবে দায়ানের আরেক সিনিয়র ডাক্তারের সাথে কথা বলতে বলতে তখনই দায়ানের ফোনটা পকেটে ভাইব্রেট হতে থাকে।
দায়ান ফোন টা হাতে নিয়ে দেখে সোহার কল।তাই দায়ান এ’ক্স’কি’উ’জ’মি বলে একটু দূরে সরে যায় তারপর রিসিভ করতেই সোহা কথা গুলো বলে উঠে।
দায়ান মিটিং পুনরায় শুরু হওয়ার তিন মিনিট পর মিটিং রুমে প্রবেশ করে। তখন এক সিনিয়র ডাক্তার আর দায়ানের স্যার বক্তব্য রাখছিলো।দায়ান কে ঢুকতে দেখে জিজ্ঞেস করে এনি প্রবলেম দায়ান?
এ’কচু’য়া’লি স্যার,,, আই হেভ টু গো নাউ।ইট’স এন ইমার্জেন্সি।
স্যার কিছু একটা ভেবে তারপর বলে,,,ওকে যাও।মিটিং টা তো ভিডিও করে রাখা হচ্ছে তুমি পরে দেখে নিও।
ঠিক আছে স্যার।ধন্যবাদ বলেই দায়ান হাসপাতালের বাইরে হাঁটা দেয়। হাঁটতে হাঁটতেই হাতের ফোনের মেসেজ টিউন টা বেজে উঠে। সোহা লোকেশন সেন্ড করেছে।
তারপর দায়ান তারাতাড়ি গাড়িতে উঠে গাড়ি দিয়ে সোহার পাঠানো ঠিকানা তে যেতে থাকে।
বার বার একটা কথাই মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে দায়ানের কেন যে কাল যখন সোহা তার কোচিং এর বান্ধবীদের সঙ্গে যখন দেখা করার জন্য অনুমতি চেয়েছিলো সকলের কাছে তখন দায়ান কেনো না করলো না? না জানি মেয়েটার কি হয়েছে।
দায়ান গাড়ির স্পিড আরো বাড়িয়ে দেয়।যতো দ্রুত পৌছানো যায়। ত্রিশ মিনিটের রাস্তা দায়ান দশ মিনিটে শেষ করে একটা শপিংমলের সামনে এসে থামে।তারপর গাড়িটা তাড়াতাড়ি পার্কিং করে দৌড়ে মলের ভিতর ঢুকে। এদিক ওদিক তাকিয়ে সোহাকে খোঁজার চেষ্টা করে। না খোঁজে পেয়ে ফোন হাতে নিয়ে কল লাগায়।
সোহা কল রিসিভ করে কিছু বলবে তার আগেই দায়ান বলে কোথায় আছো আমি পৌঁছে গেছি।
পশ্চিমের দিকে আসুন একটু।
দায়ান সোহার কথা মতো গিয়ে দেখে দুইটা মেয়ে দাড়িয়ে আছে। আরেকটা মেয়ে মাথা নিচু করে বসে আছে। দায়ানের আর বুঝতে বাকি নেই ঐটাই সোহা।। প্রায় দৌড়ে ঐখানে যায়।৷
কি ব্যাপার সোহা কি হয়েছে তোমার?..
সোহা মাথা তুলে মলিন মুখ করে দায়ানের দিকে তাকায়। মুখটা কেমন শুকিয়ে গেছে। চোখের কোণে অশ্রু জমে হালকা ফুলে লাল হয়ে আছে।
দায়ান কে দেখে কান্নারা যেমন বি’দ্রো’হ করে বাইরে বের হয়ে আসতে চাইছে। মুখ দিয়ে এবার যেনো একটা কথা ও বের হচ্ছে না। সব গলায় আটকে আছে।
সোহাকে চুপ করে থাকতে দেখে পাশের দাঁড়ানো একটা মেয়ে বলে উঠে। আসলে ভাইয়া হয়েছে কি আমরা একটু ঘুরাঘুরি করে শপিং করে দেন খেয়ে বাড়িতে ফিরে যাওয়ার প্লে’ন করেছিলাম।
তো সেই উদ্দেশ্য নিয়েই এখানে আসতেছিলাম।শপিং মলের সামনেই কয়েক জন লোক কিছু একটা নিয়ে কথা কাটাকাটি করছিলো।তো এক পর্যায়ে একটা লোকের মাথায় লাঠি দিয়ে বাড়ি দেয় তারপর ধাক্কা মারে।যার ফলে লোকটা ছিটকে এসে সোহার পায়ের কাছে এসে পরে।লোকটার মাথা দিয়ে প্রচন্ড ব্লিডিং হচ্ছিল। সোহার পায়ের সামনে পরেই কা’ত’রা’তে থাকে।
তারপর থেকেই সোহা কেমন যেনো করছে। আমরা ওকে ধরে এনে এখানে বসিয়েছি। তারপর কিছু টা ঠিক হয়েই আপনাকে কল দিয়েছে।
দায়ান সব শুনে সোহার দিকে এগিয়ে আসে।হাঁটু গেঁ’ড়ে সোহার সামনে বসে। সামনের ছোট্ট চুল গুলো এলোমেলো হয়ে আছে। যত্ন করে নিজের হাতে ঠিক করে দেয়।
সোহা দায়ানের দিকে তাকিয়ে রয়।
ঠিক আছো না এখন?
সোহা মাথা কা’ত করে যে সে ঠিক আছে।
দায়ান সোহার হাতের দিকে তাকিয়েই বোঝে গেলো মেয়েটা এখনো ভ’য় পাচ্ছে হাতগুলো মৃদু কাঁপছে।
দায়ান সোহার দুই হাত নিজের হাত দিয়ে শক্ত করে ধরে। রিলেক্স একদম ভ’য় পেয়ো না।ঐসব ভুলে যাও।ভাবো কিছুই হয়নি তুমি ঐসব দেখোনি ঠিক আছে?
আমি আছি না? আর একটুও ভ’য় পেওনা।
এখন উঠতে পারবে?
সোহা নিজেকে একটু ধা’ত’স্ত করে উঠে দাঁড়ায়। তখন ও দায়ান তার হাত ছাড়েনি।
সোহার মন থেকে এখনই ভ’য় টা দূর করতে হবে। নয়তো এটার বে’ড এফে’ক্ট পরবে পরবর্তীতে সোহার উপর। তাই দায়ান সোহার হাত ধরে নিজেই সোহাকে নিয়ে এগিয়ে যেতে যেতে তার বান্ধবীদের বলে,, তোমরা ও আসো আমার সাথে। প্রায় অনেক সময় তো হলো বাড়ি থেকে বের হয়েছো নিশ্চয়ই খুব খিদে পেয়েছে। এখানকার সেকেন্ড ফ্লোরে একটা ভালো রেস্টুরেন্ট আছে।খুব ভালো খাবার পাওয়া যায়। আজ আমার তরফ থেকে তোমাদের জন্য ট্রিট।
তারপর সকলেই রেস্টুরেন্টে গিয়ে বসে।দায়ান সকলের পছন্দ জেনে তারপর খাবার অর্ডার দেয়। সোহা এখনো চুপচাপ বসে আছে। দায়ান সোহার হাত টায় হালকা একটু চা’প দিয়ে আস্তে করে বলে,,,একটু ফ্রি হও সোহা।দেখো তোমার জন্য ওদের মধ্যে কেমন জড়তা কাজ করছে।
সোহা ওদের দিকে তাকিয়ে দেখে আসলেই ওরা কেমন জড়তা নিয়ে বসে আছে। তারপর সোহা একটু ঠিক ঠাক হয়ে বসে।
দায়ান ওদের কে সহজ হওয়ার জন্য পরিচয় জানতে চায়। সকলেই ওদের পরিচয় জানায়।দায়ান ও নিজের পরিচয় দেয়। খাবার টেবিলে আসলে সবাই কে সহজ হয়ে খেতে বলে। দায়ানের ব্যবহারে সকলেই এবার জড়তা কাটিয়ে আস্তে আস্তে খেতে থাকে। সোহা শুধু খাবার নাড়াচাড়া করছে।
সোহা ভালো করে খাও।তুমিতো কিছুই খাচ্ছ না।
আমি আর খাবো না।
কিন্তু,,,,,,,,
প্লিজ,, সোহা অসহায় দৃষ্টিতে বলে।তাই দায়ান আর জোর করে না।সকলেই খাওয়া দাওয়া শেষ করে উঠে দাঁড়ায়। ওরা দুজন বেরিয়ে যেতে চাইলে দায়ান বাঁধা দেয়। জানায় সে নিজে দিয়ে আসবে।এমন ভর দুপুরে গাড়ি পাওয়া মুশকিল হয়ে যাবে ওদের জন্য। সোহা ও বলে গাড়িতে উঠে বসতে।তারপর দায়ান দুইজন কে গাড়ি দিয়ে ওদের বাড়ির সামনে নামিয়ে দিয়ে আসে।
সোহা গাড়ির সিটে মাথা হেলিয়ে বাইরের দিকে তাকিয়ে আছে।
দায়ান বুঝতে পেরেছে সোহার মনে ঐ ঘটনা টা ব্যাপক প্রভাব ফেলেছে। তাই সে গাড়ি ঘুরিয়ে শহরের থেকে একটু দূরে নদীর পাড়ের দিকে যাওয়ার সিধান্ত নিয়ে গাড়ি চালায়।খোলা মেলা পরিবেশে গেলে হয়তো মনটা ভালো হবে।
সোহার বু’কে আস্তে আস্তে যে প্রচন্ড ব্যাথা শুরু হচ্ছে তা সে বুঝতে পারছে। নিজেকে কিছুতেই শান্ত করতে পারছে না। চোখ বন্ধ করে ঘুমানোর চেষ্টা করে। হয়তো এতে ব্যাথাটা একটু কমবে।কিন্তু না বেড়েই চলেছে এই অসহ্য যন্ত্রনা।আর সহ্য করতে পারছে না।সাথে শ্বাস ও নিতে পারছে না। অনেক কষ্ট হচ্ছে।
কয়েক বার জোরে নিশ্বাস নিয়ে নিজেকে কিছু টা ধা’তস্ত করে দায়ানের হাত খা’ম’চে ধরে।
দায়ান হঠাৎ করে এমন হওয়ায় গাড়ি চালাতে চালাতে সোহার দিকে তাকায়। সোহা কিছু বলতে চাচ্ছে।
দায়ান দ্রুত গাড়ির ব্রেক করে।সোহার কাছে এগিয়ে বলে,,,, কি হয়েছে সোহা খারাপ লাগছে? কষ্ট হচ্ছে বলো আমায়?
কাঁপা কাঁপা গলায় বলে,,, আমার বুকে খুব ব্যাথা করছে সহ্য করতে পারছি না আমি। নিশ্বাস নিতে পারছিনা।গলায় যেমন কেউ টিপে ধরে রেখেছে যেনো শ্বাস নিতে না পারি। শ্বাস কষ্ট হচ্ছে আমার।
দায়ানের খুব অসহায় লাগছে এখন নিজেকে।ডাক্তার হয়েও মাথা কাজ করছে না তার।সোহা জোরে জোরে নিশ্বাস নিচ্ছে। অনেকটাই দূরে এসে পরেছে দায়ান গাড়ি নিয়ে। কি করবে ভেবে পাচ্ছে না। কেন যে এখানে আসতে গেলো।নিজের চুল এবার নিজেই টেনে ধরে দায়ান।
সোহা দায়ানের হাত এমন ভাবে খা’মচে ধরেছে ছিলে র/ক্ত বের হয়ে গেছে। সোহা আস্তে আস্তে নেতিয়ে পরছে।
দায়ান চোখ বন্ধ করে কিছু সময় নিয়ে কিছু একটা ভাবে।তারপর সোহার দিকে তাকায়।
সোহা অসহায় চোখে দায়ানের দিকেই তাকিয়ে আছে।
দায়ান তার শুকনো গলা ঢুক গিলে ভিজিয়ে নেয়।তারপর সোহার দিকে তাকিয়ে বলে উঠে,,,,,,,,,, আ’ম স’রি! সো স’রি জান।
সোহা দায়ানের দিকে প্র’শ্না’ত্ত’ক দৃষ্টিতে তাকায়।
দায়ান আবার বলে,,,, আমাকে ভুল বুঝো না প্লিজ। এটা ছাড়া এখন আর আমি কোনো উপায় দেখছি না। আমি চাইনি আমাদের কাছে আসা।প্রথম স্পর্শ এমন ভাবে হোক। বাট আ’ম হেল্পলেস।বলেই সোহাকে দুই হাত দিয়ে টেনে নিজের কোলে বসিয়ে নিজের সাথে মিশিয়ে নেয়। তারপর,,,,,,,,,
#চলবে,,,,,,,
#তুমি_হাতটা_শুধু_ধরো_২
#পর্বঃ২৩
#Jhorna_Islam
দায়ানের বুকে মাথা রেখে চুপচাপ বসে আছে সোহা।এখনো শ্বাস স্বাভাবিক হয় নি ভালো করে।
প্রায় আধা ঘণ্টা যাবত একই ভাবে বসে আছে। সোহা দায়ানের বুকে চুপটি করে। দায়ান ও কিছু ব’লে নি।নিজের সাথে সোহাকে সে ও আঁকড়ে ধরে আছে।
সোহার বুক ব্যাথা হালকা একটু কমেছে এখন।নিজের ভালোবাসার মানুষটার বুকে মাথা রাখার সৌভাগ্য বোধয় সবার হয় না। কি যে শান্তি লাগছে।সোহার ইচ্ছে করছে সারাজীবন দায়ানের বুকে মাথা রেখেই কাটিয়ে দিতে।
সোহার দায়ানের কিছু সময় আগে করা কাজটা মাথায় আসতেই এক রাশ লজ্জা এসে হানা দেয়। লজ্জায় আরো কোকড়ে যায় মেয়েটা।দায়ানের বুকে আরো ঢুকে যাওয়ার প্রচেষ্টা চালায়।
দায়ান সোহার মাথাটা ধরে নিজের বুকের থেকে উঠায়।সোহা চোখ বন্ধ করে রাখে।লোকটার মুখের দিকে কিছুতেই তাকানো যাবে না।
দায়ান সোহার মুখের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রয়। সোহা যে কিছু সময় আগের ঘটনা টা নিয়ে লজ্জা পাচ্ছে বেশ বুঝতে পারছে সে।তাই কিছু না বলে সযত্নে সোহার মুখের অগোছালো চুল গুলো সরিয়ে দেয়। সোহার মুখ টা নিজের কাছে নিয়ে কপালে দীর্ঘ সময় নিয়ে চুমু খায়। সোহা দায়ানের ঠোঁটের ছোঁয়া নিজের কপালে পেয়ে চোখ মুখ আরো খি”চে ফেলে। দায়ানের পিছনের শার্ট খামচে ধরে।
“অনেক বুক ব্যাথা করছে তাই না? ”
সোহা দায়ানের কথাতে চোখ পিটপিট করে তাকায়। এতো সময় দায়ানের করা কাজে মাথা থেকে ব্যাথার কথা বেরিয়েই গিয়েছে।
ঐ সময় একটু বেশি ছিলো। অসহনীয় এখন একটু কমেছে এটা সহ্য করার মতো। মিনমিনিয়ে বলে উঠে সোহা।
আমি ঐদিন ভেবেছিলাম তোমার এটা হয়তো না খাওয়ার জন্য গ্যা’স’টি’ক হয়ে গেছে। বাট এটাতো অন্য কিছু।
সোহা তার দৃষ্টি এবার দায়ানের দিক থেকে সরিয়ে এদিক ওদিক তাকায়।
“কবে থেকে এই রকম হচ্ছে? ”
না মানে,,,,,,,,
এ টু জেট জানতে চাইছি আমি।কোনো বাহানা বা মিথ্যা কথা শুনতে চাই না।
আসলে হয়েছে কি ক্লাস সি'”ক্স এ থাকতে এরকম হচ্ছে। কোনো রকম কা”টা ছে”ড়া র/ক্ত এগুলো আমি দেখতে পারি না। অনেক সমস্যা হয়।বুক ব্যাথা শুরু হয়।শ্বাস কষ্ট হয়।
সব শুনে ডাক্তার এক বস্তা ঔষধ দিয়েছিলো। আর আমি ঔষধ খেতে একদম ই পছন্দ করি না। তাই যখনই বুক ব্যাথা করতো চুপচাপ শুয়ে থাকতাম গিয়ে। কাউকে বলতাম না এ কথা। এমন কি আপু কে ও না। কিন্তু এই ব্যাথা দিন দিন বেড়ে চলেছে। আগে সহ্য করা যেতো।এখন আর পারি না।
সোহার কথা গুলো শুনে দায়ানের প্রচন্ড রা’গ হচ্ছে। ইচ্ছে করছে ঠা”টিয়ে গালে একটা লাগিয়ে দিতে। ঔষধ খাওয়া ভয়ে অসুস্থতা নিয়ে মানুষ এসব করে?
ডাক্তার ঐ সময় কোনো টেস্ট করায় নি?
না শুধু চেক আপ করে ঔষধ গুলো দিয়ে খেতে বলেছিলো।না সারলে বলে ছিলো পরের বার করাবে।আর উনি বলে ছিল আমার হা”র্ট দূ”র্বল।
দায়ান কিছু সময় চুপ থেকে বলে,,,, এখান থেকে ডিরেক্ট আমরা হাসপাতালে যাচ্ছি। সব টেস্ট করাবো। এতো দিন তুমি আমার ডাক্তার ছিলে না? এখন আমি তোমার! দেখি ম্যাডাম এবার ঔষধ না খেয়ে কই যায়।
সোহা দায়ানের দিকে তাকিয়ে মনে মনে ভাবে এই যে তার ডাক্তার বর এবার ডাক্তার গি”রি শুরু করবে।
“বলছিলাম যে অন্য একদিন যাবো।আজ না হয় থাক।এখন ব্যাথা একদম নেই সেরে গেছে। চলুন বাড়ি চলে যাই।
দায়ান সোহার দিকে তাকিয়ে চোখ রাঙায়।
সোহা এবার দ”মে যায়। ঠিক আছে এমন ভাবে তাকাতে হবে না। আপনি যা বলবেন তাই হবে।
বলেই সোহা দায়ানের কোল থেকে নেমে যেতে নেয়।যদিও একটু ও ইচ্ছে করছে না তার।ইশশশশ দায়ানের বুকে কি রকম শান্তি। সব দুঃখ কষ্ট কমে যায়।
দায়ান সোহাকে কোল থেকে সরতে দেয় না। আরো নিবিড় ভাবে নিজের সাথে মিশিয়ে নেয়।
” তুমি চুপচাপ এখানে শুয়ে থাকো।একদম নড়াচড়া করবে না। আমাদের পৌঁছাতে অনেকটাই সময় লাগবে। সো তুমি আরাম করো।”
সোহা দায়ানের কথা শুনে অনেক খুশি হয় যায়।সে তো মনে এতো সময় এটাই চেয়েছিল। মনের আশাটা যখন পূরণ হয়েই গেছে তাহলে আর তার সাথে কে? দায়ান কে আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরে রাখে।
দায়ান সোহার দিকে তাকিয়ে গাড়ি চালানো শুরু করে।
বলছি যে আপনার সমস্যা হচ্ছে না? আমাকে এভাবে নিয়ে গাড়ি চালাতে? দায়ান কে সোহা কথাটা জিজ্ঞেস করলেও মনে মনে এটাই চাইছিল দায়ান যেনো তাকে আবার সিটে না পাঠিয়ে দেয়।
চুপচাপ রিলেক্স করো। আই উইল ম্যা’নেজ।
সোহা আর কথা বাড়ায় নি।দায়ানের বুকে মাথা ঠেকিয়ে দায়ানের শরীরের মিষ্টি সুবাস উপভোগ করতে থাকে। এক সময় ঘুমিয়ে ও যায়।
দায়ান গাড়ি চালাতে চালাতে সোহাকে ধরে রাখা হাতটা সরিয়ে এনেছিলো।সোহা ঘুমিয়ে যাওয়ায় দায়ান কে শক্ত করে আঁকড়ে ধরে রাখা হাতগুলো আস্তে আস্তে আলগা হয়ে যায়।
দায়ান বুঝতে পারে নি সোহা যে ঘুমিয়ে গেছে। তাই রাস্তার মোড় ঘুরানোর সময় সোহা পরে যেতে নেয়। দায়ান গাড়ি থামিয়ে তারাতাড়ি সোহাকে আগলে ধরে। মাথাটাও পরে যাচ্ছিল।তাই মাথাটা নিজের বুকের মাঝে সযত্নে রাখে। মেয়েটা ঘুমিয়ে গেছে। ঘুমানোরই কথা এতো কিছুর পর শরীরটা অনেকটাই দূর্বল হয়ে গেছে। এবার আর দায়ান জোরে গাড়ি চালালো না আস্তে আস্তে ড্রাইভ করছে।সোহার ঘুমে যেনো ব্যা”ঘাত না ঘটে।
——————-
হাসপাতালের সামনে এসে দায়ান গাড়ি টা দার করায়।তারপর সোহার দিকে তাকায়। তাকিয়ে দেখে কি নিশ্চিন্তে ঘুমাচ্ছে মেয়েটা।জাগাতে ইচ্ছে করছে না। মন বলছে আরেকটু থাকুক না।ঘুমাক মেয়েটা।
দায়ান কে আর বেশি সময় সোহার ঘুম ভাঙার অপেক্ষা করতে হয় নি। গাড়ি থামানোর দশ মিনিটের মাথায় সোহা নিজেই উঠে পরে। ঘুমের ঘোরে দায়ানের বুকে নাক ঘষতে থাকে।সে এখন ভুলেই বসেছে কোথায় আছে।
সোহার কান্ডে দায়ানের শরীর অব’শ হয়ে যাওয়ার অবস্থা। অনেক কষ্টে নিজেকে সামলে সোহাকে বলে,,,,,,
সোহা তোমার ঘুম ভাঙলো তাহলে। এবার আসো আমরা হাসপাতালে এসে পরেছি।
দায়ানের কথা শুনে সোহা ত”রি’ঘ’রি করে উঠে সিটে চলে যায়। সে ভুলেই গিয়েছিল এখনো সে দায়ানের কোলেই ছিলো। কখন যে ঘুমিয়ে পরেছে তা নিজেও জানে না।
দায়ান বুঝতে পেরে বিষয় টা নিয়ে বেশি ঘাটায় না। বলে সোহা কে ঠিকঠাক হয়ে নিতে।
সোহা দায়ানের কথা মতো চুল গুলো ভালো করে বেঁধে নেয়।তারপর ওড়না টা ভালো করে শরীরে জড়ায়।
দায়ান গাড়ির দরজা খুলে বের হয়ে যায়। তারপর ঘুরে এসে সোহার পাশের টা খুলে চোখের ইশারায় বেরিয়ে আসতে বলে।
সোহা কিছু বলার জন্য উশখুশ করছে।
দায়ান বুঝতে পেরে জিজ্ঞেস করে,,, কিছু বলবে?
হ্যা আসলে খুব খিদে পেয়েছে আমার। চোখ বন্ধ করে বলে সোহা।
দায়ান বিনিময়ে মুচকি হেসে সোহাকে হাতে ধরে নিজে বের করে গাড়ির দরজাটা লাগাতে লাগাতে বলে,,,আমি জানি ম্যাডামের যে খিদে পাবে। হাসপাতালের ক্যা’ন’টিন এ চলো আমার সাথে। খাইয়ে তারপর সব করাবো। এখানে ভালো টেস্টি খাবার পাওয়া যায় চিন্তা করো না।
তারপর সোহা কে নিয়ে ভিতরে ঢুকে যায়।
সোহাকে নিজে পাশে বসিয়ে খাওয়ায় দায়ান।সোহা অবশ্য বলেছে দায়ান কে ও খাওয়ার জন্য। কিন্তু সে মানা করে দেয়।ঐসময় দায়ান খেয়েছে ভালো করে। এখন পেট ফুল আর খাবে না।সে যেনো ভালো করে খায়।
ভালো করে খাওয়ার কথা বললেও সোহার একটু ইতস্তত লাগছিলো। তাও কিছু করার নেই।
খাওয়া শেষ করে সোহা পানি খেতে খেতে দায়ানের হাতের দিকে ন’জর যায়। হাতটা দেখে সোহার ভিতর টা মোচড় দিয়ে উঠে। কি অবস্থা হয়ে আছে। ছি’লে গেছে অনেক টা র/ক্ত জমে শুকিয়ে আছে।বুঝতে একটুও অসুবিধা হয় না যে এগুলো ওরই কাজ।
পানির গ্লাস টা রেখে দায়ানের হাত টা ধরে নিজের কাছে নিয়ে আসে। দায়ান এতো সময় এক হাত টেবিলের উপর রেখে আরেক হাত দিয়ে মোবাইল টি’প’ছি’লো।
সোহা দায়ানের হাত নিয়ে ক্ষ’ততে হাত বোলাতে বোলাতে বলে,,আমি কি করেছি এগুলো? আপনার খুব কষ্ট হয়েছে না? মলম লাগাতে হবে নয়তো সমস্যা হবে পরে। বলেই দায়ানের দিকে তাকিয়ে বাচ্চাদের মতো ঠোঁট উল্টায়।
দায়ান সোহার দিকে তাকিয়ে উঠতে উঠতে বলে,,,,বাড়ি গিয়ে না হয় আমার ডাক্তার মেম আমার চিকিৎসা করবে।সে যখন জ’খ’ম করেছে তাহলে এটা তারই দায়িত্ব জ’খ’ম ঠিক করার।
এবার আসো ফাস্ট । বলেই সোহাকে টেস্ট করার জন্য নিয়ে যায়।
সোহা মিনমিনিয়ে বলে,, আমার ভ’য় লাগে।
ভ’য় পেয়ো না। আমি আছি না? আমি তোমার সাথেই থাকবো।
তারপর সোহার কি কি টেস্ট করতে হবে সব দায়ান পাশে দাড়িয়ে থেকে নিজে বলে দিয়ে করিয়েছে। সব টেস্ট করিয়ে দুই জন ই বেরিয়ে আসে। রিপোর্ট আসতে আরো দুয়েক ঘন্টা সময় লাগবে।তাই দায়ান সিদ্ধান্ত নিয়েছে একেবারে রিপোর্ট দেখে তারপর বাড়ি যাবে।তাই আপাতত সোহাকে নিয়ে নিজের ক্যাবিনে গিয়ে বসার জন্য নিয়ে যেতে থাকে।
সোহার একটা হাত দায়ানের হাতের মুঠোয়। দায়ান সোজা দিকে তাকিয়ে হাটলেও।সোহা এদিকে ওদিকে তাকিয়ে হাঁটছে।
হঠাৎ করেই দায়ান দাড়িয়ে যায়। সামনের দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রয়।
দায়ান থেমে যাওয়াতে সোহা ও থেমে যায়। দায়ানের দিকে তাকিয়ে দেখে দায়ান সামনের দিকে তাকিয়ে আছে। সোহা ও দায়ানের দৃষ্টি অনুসরণ করে তাকায়।
সোহা সামনে তাকিয়ে একটা ঝ”টকা খায়।ততক্ষণে দায়ানের হাত সোহার ধরে রাখা হাত ছেড়ে দিয়েছে। সোহা একবার সামনের দিকে তাকিয়ে আবার দায়ানের দিকে তাকায়। তো আবার নিজের হাতের দিকে যা এতোসময় দায়ান ধরে রাখলেও এখন আর ধরে নেই।
তিতিশা! তিশা! এই তিশা বলে,,
দায়ান ততক্ষণে দৌড়ে বেরিয়ে গেছে।
সোহা শুধু নীরবে দাড়িয়ে দায়ানের চলে যাওয়া দেখছে।তার চোখ দিয়ে জলের ধারা বয়ে চলেছে।
#চলবে,,,,,,,,,,,