তুমি হাতটা শুধু ধরো ২ পর্ব-৬+৭

0
259

#তুমি_হাতটা_শুধু_ধরো_২
#পর্বঃ৬
#Jhorna_Islam
সোহার বলা কবিতা শুনে সকলে হেসে উঠে। তার মধ্যে দায়ান ও বাদ যায় না।উচ্চ স্বরে হেঁসে উঠে। সকলেই হাসছে।এই মেয়েটা পারেও বটে।রুশের নাম নিয়ে কি সুন্দর কবিতা বানিয়ে দিলো।

দায়ান প্রাণ খুলে হাসছে।আশে পাশে তার খেয়াল নেই।দায়ান ও আগে রুশকে নানান ধরনের নাম বলে খে’পা’তো।
রুশ ও খে’পে যেতো।রা’গ করে বলতো ভাই তুই আমার নাম নিয়ে এমন ম’জা করতে পারলি? তোর একটুও কষ্ট হলো না? যাহ্ তোর সাথে দুই ঘন্টার জন্য আ’ড়ি।

দুই ঘন্টার জন্য আ’ড়ি মানে?

তো তুই কি চাস আরো বেশি সময়ের জন্য করি? হবে না ভাই এটাই অনেক।আর বেশি সময় তোর সাথে আ’ড়ি করে থাকা আমার কাছে সম্ভব না। তারপর আধা ঘন্টা পর ই দৌড়ে এসে দায়ান কে ঝাপটে ধরে বলতো চুলোয় যাক আমার দুই ঘন্টার আ’ড়ি।

সকলেই হাসছে।দায়ানের মা নিজের হাসি থামিয়ে দায়ানের দিকে তাকিয়ে আছে। উনার যে কি আনন্দ লাগছে। কতো মাস পরে ছেলের মুখে হাসি দেখছেন।ছেলেটাতো হাসতেই ভুলে গেছে। আর আগে হাসি মুখ থেকে সরতোই না।

ছেলের হাসি দেখে নিজের অজান্তেই চোখের কোণে পানির অস্তিত্ব টে’র পায়।ছলছল নয়নে ঘার ঘুড়িয়ে দায়ানের বাবার দিকে তাকায়। দায়ানের বাবা দায়ানের মায়ের কাঁধে হাত বুলিয়ে চোখের ইশারায় বলে দেয়,,দেখে নিও সব ঠিক হয়ে যাবে।আমাদের ছেলে আবার আগের মতো হয়ে যাবে।হাসবে সকলের সাথে মন খুলে কথা বলবে।

দায়ান তো কিছু মুহূর্তের জন্য সব কিছু ভুলে হাসছে।পাশে যে আরো দুইজন দায়ানের হাসির দিকে তাকিয়ে আছে অবাক,বিষ্ময়কর, মুগ্ধ আর লোভাতুর নয়নে সে দিকে তার খেয়াল কই?

সোহা দায়ানের হাসি দেখে পুরাই কাঁ’ত। কিছু সময় আগেই জানতে চাইছিলো দায়ান হাসলে কেমন লাগবে।আর এখন হাসি দেখে তো পুরাই ফি’দা।ক্রাশ নামক বাঁশ টা বুঝি খেয়ে ফেললো অনায়াসেই। এরকম কবিতা শুনে যদি দায়ানের হাসি দেখতে পায়। তাহলে আরো হাজার খানেক কবিতা বলতেও সোহার কোনো আপত্তি নেই। সে বলতে রাজি।

রুশ ও দায়ানকে এতোদিন পর হাসতে দেখে দায়ানের দিকে তাকায়। সোহাকে মনে মনে অসংখ্য ধন্যবাদ জানায়।তার কবিতার জন্য। হোক সেটা তার নামে তাও তো দায়ান হেসেছে।

পাশে এখনো সকলেই হাসছে।এর মধ্যে দায়ান উপলব্ধি করতে পারলো কয়েক জোড়া চোখ তার দিকেই তাকিয়ে আছে। বুঝতে পেরে হাসি থামিয়ে সকলের দিকে তাকায়। কিছুটা অস্বস্থিতে পরে যায় দায়ান। কয়েক মুহূর্তের জন্য সোহার বানানো কবিতা শুনে আসলেই সে সব ভুলে গিয়েছিলো। এখন আবার সবার তাকানো দেখে দায়ান হাসি থামিয়ে ওখান থেকে সরে যায়।

তারপর আবার যে যার কাজে চলে যেতে থাকে। রুশকে সোহার মামাতো ভাই বোনেরা আবার ধরে।তাই রুশ ওদের নিয়ে দোকানে যায় চকলেট কিনে দেওয়ার জন্য। নয়তো এই বাচ্চা পার্টি তাকে ছাড়বে না।

সকলে চলে যাওয়ার পর দায়ানের মা সোহার কাছে এগিয়ে আসে। মুখটা এগিয়ে এনে কপালে চুমু খায়।

তুমি জানো না আম্মু তুমি কি করেছো।তোমার কাছে ঋনী হয়ে গেলাম যে মা।তোমার কাছে সারাজীবন কৃতজ্ঞ থাকবো।আমার ছেলের মুখে আজ কতো মাস পর আমি হাসি দেখলাম।তুমি আমার ছেলের মুখে হাসি ফুটিয়েছো।তোমায় যে কি করে ধন্যবাদ জানাবো!

— এসব কি বলছেন আন্টি? প্লিজ এমন ভাবে বলবেন না।

— ঠিকই বলছি মা।দোয়া করি অনেক সুখে থাকো ভালো থাকো তুমি। বলেই বাড়ির ভিতর চলে যান তিনি।

দায়ানের বাবা ও এতোসময় দায়ানের মায়ের পিছনে ছিলো।

সোহা চোখ তুলে দায়ানের বাবার দিকে তাকায়। দায়ানের বাবা আলতো হাতে সোহার মাথায় হাত বুলিয়ে মুচকি হেসে চলে যায়।

সোহা ওদের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রয়। তার কানে এখনো বাজছে দায়ানের সেই হাসির মিষ্টি ধ্বনি। কানটা যেনো এইবার স্বার্থক।

এই ডাক্তার হেসে আমার দূর্বল হার্টকে আরো দূর্বল করে দিলো।

——————————-

সকলেই চলে যেতে চেয়েছিলো।তবে সোহার মামা মামি জোর করে রেখে দিয়েছে। উনাদের জোরের সাথে কেউই পেরে উঠেন নি। কাউকে উনারা না খাইয়ে ছাড়বেন না।

তাই আর কি করা? রাতের খাবার খেয়ে তারপর সকলে সোহাদের বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দিবেন।

রাতের খাবার টেবিলে সাজিয়ে সকল কেই ডাকা হয় খাওয়ার জন্য। একে একে সকলেই এসে খাবার টেবিলে উপস্থিত হয়।

দায়ান এখন এতো মানুষের মাঝে ইচ্ছে করলেও খাওয়ার কথা না করতে পারবে না।কতো কষ্ট করে রান্না করছে। তার উপর অনেক অনুরোধ করে তারপরই সকলকে রাতের খাবার টা খেয়ে যেতে বলেছে।এখন যদি না খায় তাহলে হয়তো উনারা মুখে কিছু না বললেও মনে মনে কষ্ট পাবে।

আর দায়ান কাউকে কষ্ট দিতে চায় না নিজে যতোই কষ্টে থাকুক।তার উপর বিকালের হাসির ঘটনা টা নিয়ে কিছুটা অস্বস্থিতে ভুগছে বেচা’রা। তখন কেন যে ঐভাবে হাসতে গেলো।সকলে তাকিয়ে ছিলো তার দিকে।

নানান ভাবনা ভেবে একটা চেয়ার টেনে নিয়ে পরে।সোহার মা আর মামি সকলেকে খাবার বেড়ে দিচ্ছে।

সোহা আর তমা এখনো আসেনি।ডেকে এসেছে তার মা।বাচ্চাদেরকে দিয়েও খবর পাঠিয়েছে খেয়ে যাওয়ার জন্য।
সোহার মা বলে উঠে এই মেয়েটা কে নিয়ে আর পারি না।সেই কখন খেতে ডাকছি আসার কোনো নাম গন্ধ ও নেই।

বাড়িতে যাবো না বাকি।কথা পেলে আর আড্ডা পেলে সব খেয়ে ভুলে থাকে।হুশ থাকে না।এতো বাঁচাল হয়েছে এই মেয়ে টা।আমায় না জ্বালালে তার পেটের ভাত হজম হয় না।

সোহা! বলেই সোহার মা চিল্লিয়ে ডাক দেয়।

এই ডাকে কাজ হয়।হুড়মুড়িয়ে দৌড়ে খাবার ঘরে উপস্থিত হয় সোহা আর তমা।

সোহার মা চোখ রাঙিয়ে রান্না ঘরের দিকে চলে যায়। খাবার আনতে।

সোহা খাবার টেবিলের দিকে তাকিয়ে দেখে দুইটা চেয়ার খালি আছে। তার মধ্যে একটা দায়ানের পাশে আরেক টা রুশের মায়ের পাশে।

দায়ানের পাশের চেয়ারটার দিকে সোহা তাকায়।চেয়ারটা যেনো সোহাকে বলছে আয় বসে আমাকে ধন্য কর।সোহা মনে মনে খুশি হয়ে যায়। উফফ ক্রাশের পাশে বসতে পারবে।

আরো নানান ধরনের কথা ভাবতে ভাবতেই পুলকিত মনে এগিয়ে যায় দায়ানের পাশের চেয়ারটা তে বসার জন্য। যেই না সোহা চেয়ার টা টান দিয়ে বসতে যাবে।ওমনি কেউ একজন সোহার আগেই চেয়ার টেনে বসে পরে।

সোহার মেজাজ টাই খারাপ হয়ে যায়। চেয়ার টেনে বসা ব্যক্তিটা কে দেখে তো মাথায় র/ক্ত উঠে যায়।

চেয়ারটায় তমা বসে পরেছে।তমা সোহার দিকে তাকিয়ে চোখের ইশারায় কিছু একটা বুঝায় যা সোহা বুঝতে পারে না। সোহার মেজাজ টা পুরাই খারাপ হয়ে যায় তমার কাজে।ইচ্ছে করছে চুলের মুঠি ধরে এখান থেকে উঠাতে।

মনে মনে তমাকে মেরে ভর্তা বানিয়ে ফেলছে আর রা’গে ফুঁসছে।

এর মধ্যে সোহার মা প্লেট হাতে নিয়ে আসতে আসতে বলল,,কিরে এমন আহাম্মকের মতো দাড়িয়ে আছিস কেন? পিঠে দুইটা দিতে হবে? দাড়িয়ে আছিস কেন? গিয়ে কয়টা গিলে আমাকে উদ্ধার কর।

সোহার ও রা’গ উঠে যায়। খাবো না বলে হনহনিয়ে চলে যেতে ধরে।

এখন না খেয়ে যদি কেউ যায়।আমার থেকে খারাপ কেউ হবে না।মোট কথা মাইর একটাও মাটিতে পরবে না।তো এখন কে না খেয়ে যেতে চায়? সে যেতে পারে।

সোহার মায়ের কথায় কাজ হয়।চুপচাপ গিয়ে খাবার টেবিলে বসে পরে।খাবার মুখে দিয়ে চিবিয়েছি যাচ্ছে। খাবারতো চিবাচ্ছে না মনে হয় তমার মাথা চিবাচ্ছে।

খাওয়া দাওয়া রাত আটটায় সেরে সকলেই আর বেশি দেরি করে নি।একটু রেস্ট নিয়ে বাড়ির উদ্দেশ্য বেরিয়ে পরে।

বাড়িতে এসে যে যার রুমে ঘুমানোর জন্য চলে যায়।অনেক ক্লান্ত সকলেই।

তমা রাস্তা থেকেই নিজের বাড়িতে চলে গেছে।
————————————

রাত তখন আড়াইটা হঠাৎ করেই সোহার ঘুম ভেঙে যায়। গলা শুকিয়ে আছে পানি পান করতে হবে।টেবিলের দিকে তাকিয়ে বিরক্তিকর নিশ্বাস ছাড়ে। ধূর ঐ বাসা থেকে ক্লান্ত হয়ে এসে ঘুমিয়ে গেছে, পানি আনার ও সময় পায় নি।এখন পুরো জগ ফাঁকা। নিচে গিয়ে পানি আনতে হবে পানি না খেলেই নয়।

যেই ভাবা সেই কাজ।ঘুমো ঘুমো চোখে পানির জগ হাতে নিয়ে বেরিয়ে পরে পানি আনার জন্য। সিরি দিয়ে নামার সময় ডান দিকের প্রথম ঘরটায় চোখ যায়।এখনো আলো জ্বলছে। এটায় তো দায়ান থাকে।উনি কি এখনো ঘুমোন নি,? কৌতূহল জমিয়ে রাখতে না পেরে রুমের দিকে এগিয়ে যায়। দরজার এক পার্ট খোলাই আছে।

সোহা গিয়ে চুপি দেয়। ভিতরের দৃশ্য দেখে কিছুটা ভরকে যায়।একি উনি এমন করছে কেনো?

দায়ান রুমে পায়চারী করছেন। চুল টানছেন,জোরে জোরে নিশ্বাস নিচ্ছেন।কেমন যেনো পা/গল পা/গল লাগছে লোকটাকে দেখে।দেখে মনে হচ্ছে লোকটার কষ্টে দ’ম বন্ধ হয়ে আসছে।আ’র্ত’নাদ করতে পারছেনা। সোহা তো সবই শুনেছে দায়ান আর তিশার রিলেশন এর ব্যাপারে।দায়ান তিশাকে অনেক ভালোবাসতো। তিশা আপুর জন্য লোকটা কতো কষ্ট পাচ্ছে। ইশশ কতোজন এমন ভাবে ভালোবাসতে পারে।এমন ভালোবাসা যদি আমি পেতাম!মনে মনে আওড়ায় সোহা।

তারপর ভাবে লোকটার হয়তো চার দেয়ালের ভিতর অস্থির লাগছে। পানির জগ টা দরজার পাশে এক সাইড করে নিচে রাখে। তারপর পার্মিশন ছাড়াই রুমের ভিতর ঢুকে যায়।

দায়ানকে কিছু না বলে,যতো দ্রুত রুমে ঢুকেছে ততো দ্রুত দায়ানের হাত ধরে টেনে রুম থেকে বের হয়ে সোজা যেতে শুরু করে। দায়ান কিছু বুঝতেই পারে নি কি হচ্ছে তার সাথে।

— আরে ক-কই নিয়ে যা,,,যাচ্ছো আমায়? দায়ানের কথা জড়িয়ে যাচ্ছে।

— হুশশশ কিছু বলবেন না।আমার সাথে চুপচাপ আসতে থাকুন,গেলেই বুঝতে পারবেন।

সোহা দায়ান কে টানতে টানতে তাদের বাড়ির ছাঁদে নিয়ে আসে।

— এসবের মানে কি? এভাবে টেনে এখানে নিয়ে এসেছো কেনো?

আপনার খুব দম বন্ধ লাগে তাইনা? ম’রে যেতে ইচ্ছে করে? কাঁদতে ও ইচ্ছে করে চিললিয়ে বাট পারেন না!

দায়ান অবাক হয়ে সোহার দিকে তাকায়। এই মেয়েটা তার ভিতরকার কষ্ট কি করে বুঝলো?

আজতো রাত নয়তো আপনাকে এক জায়গায় নিয়ে যেতাম। যেখানে চিৎকার করে কেঁদে মনটা হালকা করতে পারতেন।কেউ অবাক হয়ে তাকাতোও না শান্তনা ও দিতে আসতো না।নিজেই নিজেকে সামলে নিতে পারতেন।রাতে গেলে মানুষ বা/জে ভাববে। তবে কাল আপনাকে সেখানে নিয়ে যাবো। এখন আপাতত এইখানে চোখ বন্ধ করে জোরে জোরে কয়েকবার শ্বাস নিন।তারপর আকাশের দিকে তাকিয়ে তারা গুলো গুণুন তো, দেখি কয়টা গুণতে পারেন।

দায়ানের সত্যিই দ/ম বন্ধ হয়ে আসছিলো তাই সে চোখ বন্ধ করে কয়েকবার জোরে জোরে নিশ্বাস নেয়। তারপর আকাশের দিকে তাকায়। হাজার তারা মিটমিট করে জ্বলছে। কিছু সময় এক ধ্যানে তাকিয়ে রয় আকাশের দিকে। রাতের হিমেল হাওয়া এসে শরীরে লাগছে।প্রায় আধাঘন্টা থাকার পর দায়ান উপলব্ধি করতে পারলো তার আগের মতো খারাপ লাগছে না। মনটা যেনো হিমেল হাওয়া য় ভালো হয়ে গেছে।

কি জনাব, এখন কেমন লাগছে? আশা করি একটু হলেও ভালো লাগছে!

এখন আপনি চাইলে আরো কিছু সময় এখানে থাকতে পারেন।অথবা এখনই নিচে যেতে পারেন। গিয়ে চোখ বন্ধ করে শুয়ে পরবেন দেখবেন ঘুম পরিরা আপনার চোখে এসে কখন ভর করবে বুঝতেই পারবেন না।খুব ভালো একটা ঘুম হবে। বলেই সোহা মুচকি হেসে পা বাড়ায় নিচে যাওয়ার জন্য।

দায়ান সোহার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রয়।

#চলবে,,,,,,,,,

#তুমি_হাতটা_শুধু_ধরো_২
#পর্বঃ৭
#Jhorna_Islam
সোহার কথা মতো দায়ান বেশি সময় ছাদে থাকে নি।সোহা নেমে যাওয়ার পরপরই নিজেও নিচে যাওয়ার জন্য এগিয়ে যায়। এখন বাতাসটা তীব্র গতিতে হচ্ছে। ঠান্ডা হীম বাতাস শরীরে কাঁপন সৃষ্টি করছে। এতোসময় বাতাস উপভোগ করলেও এখন রীতিমতো শরীরে কাটা দিচ্ছে। দায়ানের শরীরে একটা টি-শার্ট আর টাউজার।তাই আর বেশি সময় ছাদে থাকা সম্ভব না। শরীরটা এবার বেশ ক্লান্ত লাগছে ঘুম ও পাচ্ছে। এখন হয়তো একটু আরামে ঘুমানো যাবে।

রুমে এসে দায়ান পাতলা একটা কাঁথা মুড়ি দিয়ে লাইট অফ করে শুয়ে পরে। ঘুমে চোখ বন্ধ হয়ে আসছে।সারারাত এই ঘুমের জন্য কতো অপেক্ষা, এখন যখন এসেছে আর কিছু ভাবার আর সময় নেই।তাই চুপচাপ ঘুমিয়ে যায়।

————————————

সকালে নোহা ছাদে এসে তাদের ছাদে লাগানো বিভিন্ন ফল,ও ফুলের গাছে পানি দিচ্ছে। দুই বোনের শখের বাগান এটা।খুব যত্নের। নোহার থেকে বেশি প্রিয় সোহার।

আগে নিচেই বাগান করেছিলো,,ঐখানে হয় প্রতিবেশীদের ছাগল খেয়ে ফেলে নয়তো দুষ্টু পোলাপানেরা ফুল ফোটার সাথে সাথেই চুপিচুপি ফুল ছিড়ে নিয়ে যায়।তাই ঐসবের অ’ত্যা’চারে অ’তি’ষ্ট হয়ে ছাদে বাগান করেছে।

সোহা এখনো পরে পরে ঘুমাচ্ছে। কখন উঠে কে জানে।নোহা অবশ্য ডেকে এসেছে ঘুমের ভাব দেখেই বুঝে গেছে আজ মহারানী দশটার আগে অ’ন্তত উঠবে না।তাই নিজেই পাইপ দিয়ে পানি দিচ্ছে বাগানে।

হঠাৎ ই পিছন থেকে নোহার মাথায় কেউ টোকা মারে।নোহা ভয় পেয়ে কয়েকদম পিছিয়ে লাফ দিয়ে উঠে। ততক্ষণে হাতে থাকা পাইপ ও নিচে পরে যায়।

এখনো নোহা খেয়াল করেনি, তাকায় ও নি কে এসেছে সেতো তার ভাবনায় বিভোর ছিলো।

হঠাৎ করেই কারো হাসির শব্দ শুনে পিছনে ফিরে তাকায়।

পিছনে রুশ দাড়িয়ে আছে। নোহা কে এমন করে ভ’য় পেতে দেখে হেসে দেয়।

উফফ তুমি? এভাবে কেউ ভ’য় দেখায় হঠাৎ করে? আমি কিন্তু সত্যি ভ’য় পেয়ে গেছি।

— আমি জানতাম তুমি খুব সাহসী। এখন তো দেখছি তুমি সোহার চেয়েও বেশি ভি’তু।

— এমন ভাবে হঠাৎ করে এসে মাথায় টোকা দিলে কে ভ’য় না পাবে?

আমি তোমায় লুকিয়ে লুকিয়ে সারা বাড়ি খুঁজে চলেছি।আর তুমি এখানে মনের সুখে এসে গাছে পানি দিচ্ছো।

আমায় কেনো খুঁজছিলে তাও আবার লুকিয়ে লুকিয়ে?

তো কি করবো! ঢাক ঢুল পিটিয়ে খুঁজবো নাকি! এই যে শুনুন শুনুন গ্রাম বাসী আমার বউকে আমার খুব দেখতে ইচ্ছে করছে আপনারা কি জানেন সে কোথায়? জানলে আমায় বলেন যে বলতে পারবেন তার জন্য একটা হাতি উপহার সরুপ।

রুশের কথা শুনে নোহা খিলখিলিয়ে হেসে উঠে। হাসতে হাসতে রীতিমতো চোখের কোণে পানি জমে গেছে।

তুমি পারোও বটে।সোহার মতো মজা না করলে হয়না? এখন আমার কি মনে হয় জানো? সোহা এই স্বভাবটা তোমার কাছ থেকেই পেয়েছে। মুহূর্তের মধ্যে অন্য কে হাসানোর। তুমি আর সোহা একই ক্যাটাগরির বুঝলে?

থাক বাদ দেও। সোহার কথা আর বলো না।এতোদিন তাও ফুপাতো ভাই বলে র’ক্ষা ছিলো বেশি মজা নিতে পারে নাই।আর এখন তো বড় বোনের জামাই হতে চলেছি মানে ওর দুলাভাই।

কাম সারছে! এখন ওই জানে কি কি করবে আমার সাথে। আমারতো রীতিমতো এখনই ভ’য় করছে।

নোহাও ম’জা করে বলে ঠিকই বলেছো।সাবধানে থেকো বুঝলে। সোহা তোমাকে নিয়ে কি কা’ন্ড ঘটায় সেই শুধু বলতে পারবে। বলেই নোহা ছাদ থেকে কেটে পরে।

রুশ আসলেই ভাবনার মাঝে পরে যায়। সোহাকে হাতে আনতে হবে।ঘু’ষ দিয়ে মন গলাতে হবে।নয়তো সকলের কাছে হাসির পাত্র বানিয়ে দিবে।

————————–
সকালে ঘুম থেকে উঠতে একটু লে’ট হয়ে গেছে দায়ানের।রাতে দেরি করে ঘুমানোর জন্য।

ঘুম থেকে উঠে দেখে সকাল দশটা বাজে। দায়ানের মা তাকে না ডাকায় কিছু টা অবাক হয়। পরে ভাবে হয়তো ঘুম ভাঙাতে চায় নি।

দায়ান উঠে ফ্রেশ হয়ে নিচে নেমে আসে। এখন এক কাপ কফি না খেলেই নয়।

এসে দেখে দায়ানের মা,কাকি আর সোহার মা গল্প করছে।তার বাবা আর রুশকে কোথাও দেখতে পেলো না।৷ ওরা গল্প করছে দেখে দায়ান দু’টানায় পরে গেলো কফির কথা বলবে কি না। তারপর কি যেনো ভেবে উপরে উঠে যেতে নেয়।

সোহার মা দায়ান কে দেখে বলে উঠে,,, দায়ান বাবা ঘুম থেকে উঠে পরেছো? বসো এসে এখানে। তুমি নাকি ঘুম থেকে উঠেই কফি খাও। আমি এখনই কফি নিয়ে আসছি। তারপর না হয় খাবার খেও।

বলেই দায়ান কে কিছু না বলতে দিয়ে সোহার মা রান্না ঘরের দিকে ছুটে।

দায়ানের মা দায়ান কে দেখে বলে,,আব্বা আমার পাশে এসে বস।

দায়ান ল’ক্ষী ছেলের মতো মায়ের পাশে গিয়ে বসে।

দায়ানের মা দায়ানের মুখের দিকে তাকিয়ে দেখে মুখের মধ্যে পানি চিকচিক করছে। হয়তো ফ্রেশ হয়ে মুখটা ও ভালো করে মুছেনি। তারপর তিনি নিজের শাড়ির আঁচল টা নিয়ে যত্ন সহকারে দায়ানের মুখ টা মুছিয়ে দেয়।

ঘুম ভালো ভাবে হয়েছে তো আব্বা?

হুম মা। আর সবাই কই? কাউকে দেখছি না তো!

সোহার মা কফি নিয়ে আসতে আসতে বলে উঠে,,, তোমার বাবা আর রুশকে নিয়ে নোহার বাবা বাইরের দিকে গেছে একটু।তুমি ঘুমাচ্ছিলে বলে ডাক দেয় নি। আর নোহা ওর বান্ধবীদের বাড়িতে গেছে। আর আমাদের ছোটো নবা’ব’জা’দী এখনো ঘুম।

দায়ানের হাতে কফির মগ টা বাড়িয়ে দেয়। দায়ান মুচকি হেসে নিয়ে নেয়।

সোহার মা এবার দায়ানের মা আর রুশের মায়ের কাছে সোহার নামে তার সুনামের লিস্ট খুলে বসে।

আপা বলেনতো এই ছোটো মেয়েটাকে নিয়ে কোথায় যাই আমি? আমার একটা কথা ও শুনেনা।বড় মেয়ে টা যতোটা শান্ত। ছোটো টা তার চেয়ে বেশি অ’শান্ত। কোনো কাজের ও না।খাওয়ার দিক দিয়ে ও নাই। ওর মতো মেয়ে এতো বেলা পর্যন্ত ঘুমায় আপনারাই বলুন। নোহা আর ওর বাবা আমাকে শাসন ও করতে দেয় না। বলে ছোটো মানুষ বড় হলে ঠিক হশে যাবে।আর কবে ঠিক হবে?

দায়ানের মা বলে,,,ওরে নিয়ে টেনশন নিয়েন না।ঠিকই বলেছে সময়ের সাথে সাথে সব ঠিক হয়ে যাবে।

এর মধ্যেই সোহা এসে বলে,,আম্মু আমার গুণগান শেষ হয়েছে? হয়ে থাকলে খাবার দাও খিদা লাগছে।পরে আবার আমার গুনগান কইরো।

দেখছেন আপা কি রকম ব’জ্জা’ত মেয়ে! যা আমি খাবার দিচ্ছি। দায়ান বাবা তুমিও বসে পরো।অনেক বেলা হয়ে গেছে।

দায়ানের ততক্ষণে কফি খাওয়া শেষ। সে ও মাথা নাড়িয়ে খাবার টেবিলে এগিয়ে যায়। প্রচুর খু’দা লাগছে।

সোহা ও তার মা কে ভেঙচি কেটে চলে যায় খাবার খেতে। রুশের মা আর দায়ানের মা সোহার মুখ ভেঙচি দেওয়া দেখে হেসে উঠে।

——————————

আজ খাবার টেবিলে সোহা আর দায়ান ছাড়া কেউ নেই। সোহা আজ দায়ানের মুখোমুখি বসেছে।

সোহার মা সব খাবার এনে ওদের সামনে রাখে।তারপর বলে,,তোমাদের যা যা লাগবে নিয়ে খাও। আমি গেলাম।
দায়ান বাবা একদম লজ্জা পাবে না।খাও তোমরা বলেই চলে যায়।

দায়ান কথা বাড়ায় না চুপচাপ নিজের প্লেটের দিকে তাকিয়ে খেতে থাকে। এমন ভাব ধরছে যেনো সে ছাড়া আর কেউ নেই।

সোহা মুখে খাবার দিচ্ছে আর দায়ানের দিকে তাকাচ্ছে। লোকটাকে দেখো একবার ও তার দিকে তাকাচ্ছে না।তাই নিজেই গলা খে’কা’ড়ি দিয়ে মাথাটা একটু এগিয়ে এনে বলে শুনুন,,,,

দায়ান চোখ তুলে সোহার দিকে তাকায়।

সোহা মুচকি হেসে বলে,, আমি বলছিলাম না একটা জায়গায় নিয়ে যাবো আপনাকে? সকালে তো নিতে পারলাম না।ঘুম থেকে উঠতে দেরি হয়ে গেছে। বিকালে নিয়ে যাবো ঠিক আছে?

প্রতি উত্তরে দায়ান কিছু বলে না।

সোহা ও আর কথা বাড়ায় না।

————————-
দায়ানের মন টা বিকেলের দিকে আবার খারাপ হয়ে যায়। চিৎকার করে কাঁদতে ইচ্ছে করছে। কিছুই ভালো লাগছে না। ইচ্ছে করতেছে ছোটে কোথাও হাড়িয়ে যেতে।

অশান্ত মন নিয়ে বাড়ির ভিতর থাকা দায়।কি করবে ভেবে না পেয়ে বাড়ির বাইরে সোজা হাটা দেয়। প্রায় দশ মিনিটের পথ চলে আসে।

এতোসময় দ্রুত হাটলেও এবার হাটার গতি কমিয়ে আনে দায়ান। আস্তে করে হাঁটছে।

এরই মাঝে পাশে কেউ একজন এসে দাঁড়ায়। দায়ান তাকিয়ে দেখে সোহা।

সোহা কোমড়ে হাত রেখে কতোক্ষন হাঁপিয়ে নেয়।
উফফ আপনি কানে শুনেন না? কোনসময় থেকে ডাকছি।আর এতো দ্রুত কেউ হাঁটে। আমি দৌড়ে হাপিয়ে গেছি।মনে হচ্ছিল দৌরের প্রতিযোগীতায় নেমে ছিলাম।

ঐদিকে একা একা কই যাচ্ছেন এবার এই রাস্তা দিয়ে যেতে হবে। বলেই বাম সাইডের একটা রাস্তা দেখায়। তারপর দায়ানকে বলে,,এখন কিছু বলবেন না। আমি জানি আপনার মন এখন ভালো নেই। তাই চুপচাপ আমার সাথে আসুন।আপনার মন কিছু টা হলেও ভালো হবে আমি শিউর।

তারপর দায়ানকে নিয়ে হাটতে থাকে।প্রায় ২৫ মিনিট হাঁটার পর এক জায়গায় এসে থামে।এই দিকে শুধু জঙ্গল আর জঙ্গল। জ’ন’মা’নব’হীন জায়গা। কোনো মানুষের চিহ্ন ও দেখা যাচ্ছে না। দায়ানকে এখানে দার করিয়ে সোহা বলে উঠে,,,,,,,

এখানে আপনি চিৎকার করে যতো খুশি কেঁদে নিন।নিজের ভিতরের সব দুঃখ কষ্ট গুলো ভিতরে জমিয়ে না রেখে বের করে দিন।নিজেকে হালকা করুন।আমি জানি আপনি তিশা আপুকে খুব ভালোবাসেন।আপু তো এখন নেই।আপনাকে বাঁচতে হবে।এভাবে বাঁচা যায় না।আপনি এমন ভাবে বাঁচতে পারবেন না। আপুর জন্য ভালোবাসাটা না হয় নিজের মনের ঘরে তালা বন্দি করে সযতনে রেখে দিন।

নিজে একটু ভালো মতো বাঁচুন। আপুকে ভুলতে হবে না।এমন ভাবে আর থাইকেন না।নিজের বাবা মায়ের কথাটা ভাবুন।উনাদের কেমন লাগে আপনাকে দেখলে।

মন খুলে চিৎকার করে কাঁদুন। তবে আজই যেনো হয় আপনার এভাবে মনমরা হয়ে থাকার শেষ দিন।প্রান খুলে হাসবেন। বাঁচার মতো বাঁচবেন। আপনি ভালো ভাবে,হাসি খুশি থাকলে আপু যেখানেই থাকুক খুশি হবে।

আমি থাকলেও আপনার অ’স্ব’স্থি হবে।তাই আমি পুকুর পাড়ে বসলাম।যতো সময় লাগে নিন।তবে যেনো ঠিক হয়ে আমার কাছে যাবেন। সেই আশায় ঐখানে গিয়ে বসলাম।বলেই সোহা চলে যায়।

দায়ান সোহার কথা গুলো সব মন দিয়ে ভাবে।তারপর সত্যিই হাঁটু গেড়ে বসে চিৎকার করে কাঁদতে থাকে। নিজে নিজেকে বোঝাতে লাগে।বাবা মায়ের কথা ভাবতে থাকে।

কতো সময় দায়ান কান্না করেছে জানে না।নিজেকে বুঝিয়েছে।সোহার কথা গুলো মন দিয়ে ফিল করেছে। ভেবে নিয়েছে এখন ওকে হাসি খুশি থাকতে হবে। বাবা মায়ের জন্য। হয়তো তিশা ও খুশি হবে এটা দেখে যে দায়ান ভালো আছে। তারপর উঠে চোখের পানি মুছে নেয়।নিজেকে এখন অনেকটাই হালকা লাগছে।

সোহা এখনো দায়ানের অপেক্ষাতে পুকুর পাড়ে বসে আছে। দেড় ঘন্টা হতে চলল দায়ানকে ওখানে রেখে এসেছে। প্রথপ্রথমে কয়েকবার দায়ানের চিৎকার শুনতে পেয়েছিলো।সোহা মন থেকে চায় দায়ান যেনো হাসি খুশি থাকে।

হঠাৎ করেই পাশে কারো বসার উপস্থিতি টের পায়। চেয়ে দেখে দায়ান। মুখে তার মুচকি হাসি।

কি পিচ্চি বাড়ি যাবা না সন্ধা হতে চলল।

এই আপনি হাসছেন?

হুম।

ওয়াও তার মানে আপনাকে আমার এখানে নিয়ে আসা স্বা’র্থ’ক!

হয়তো।

আমার কি যে ভালো লাগছে।এই ডাক্তার।

— বলো।

— আপনি একটা জিনিস লক্ষ৷ করেছেন?

— কি?

— এই যে, আপনি অন্যকে চিকিৎসা করেন।ওদের ডাক্তার আপনি। আর আমিতো এক প্রকার আপনার চিকিৎসাই করলাম।

“তার মানে বুঝতে পারছেন? তার মানে হলো আমি আপনার ডাক্তার। ডাক্তারের ডাক্তার। ”

#চলবে,,,,,,,,,,,,

বিঃদ্রঃ রি’চেক করা হয়নি।ভুল ত্রু’টি ক্ষ’মা করবেন।