তুমি হাতটা শুধু ধরো ২ পর্ব-১০+১১

0
249

#তুমি_হাতটা_শুধু_ধরো_২
#পর্বঃ১০
#Jhorna_Islam

সোহা আর দায়ান হাঁটতে হাঁটতে বাড়ির রাস্তা ধরে,,,এমন সময় আবার আজও তমার সাথে দেখা হয়।

সোহাদের বাড়ির আরো অনেকটাই রাস্তা বাকি।দুই জন পাশাপাশি হাঁটছে। কোথা থেকে তমা এসে হা’জির হয়। এতে দু’জন ই হাঁটা থামিয়ে দেয়।

সোহা তোর থেকে এমন ব্যবহার আমি মোটেও আশা করি নি।তুই এমন কিভাবে করলি?

সোহা ব্রু কোচকে তমার দিকে তাকিয়ে বোঝার চেষ্টা করলো যে সে আবার কি করেছে।

আমার ভাবতেও খারাপ লাগছে তুই এটা করতে পারলি।আমি না তোর বান্ধবী? না কি তুই আমায় বান্ধবী বলে মনেই করিস না কোনটা?

— মানে? আমি আবার কি করলাম তোর সাথে?

— তুই জানিস না কি করেছিস?

— জানলে নিশ্চয়ই আবার তোকে জিজ্ঞেস করতাম না।যা বলার সোজাসাপটা বল। এসব ঘুরিয়ে পেচিয়ে কথা বলা আমার একদম পছন্দ না।

দায়ান পাশেই দাঁড়িয়ে আছে।এক সাথে যখন এসেছে তখন এক সাথেই ফিরবে।তাছাড়া এখনো অনেকটা পথই বাকি আছে। সোহার পাশে দাঁড়িয়ে থাকলেও ওদের কথায় দায়ানের মন নেই।দুই বান্ধবীর কথায় কান দিয়ে লাভ নেই। ওদের ব্যাপার ওরাই না হয় বুঝে নিক।

ঘুরিয়ে তো বলিনি সোহা।সোজা ভাবেই বললাম।কাল আমায় রেখে তুই উনাকে নিয়ে ঘুরতে গেলি,,অথচ আমি তোর সাথে ঘুরার জন্য তোদের বাড়িতে গিয়ে খুঁজলাম। কেউ নাকি তোর খবরই জানে না।আশেপাশে ও কতো খুজলাম তোকে।

পরে কি দেখলাম তুই উনাকে নিয়ে একা একা ঘুরে আসলি।আর আজ ও সকাল সকাল তোর বাড়িতে গেলাম যেনো তোকে পাই।আর তুই কি করলি? আজও একই কাজ করলি। উনাকে নিয়ে একা একা ঘুরে এলি।আমার কথাটা তোর একবার ও মনে পরলো না? তমা সোহার কাছে জানতে চায়।

— নাহ। সোজাসাপটা উত্তর দেয় সোহা।

তমা সোহার সোজাসাপটা উত্তর শুনে কিছু টা হকচকিয়ে যায়। থতমত মুখে দায়ানের দিকে তাকায়। দায়ান কে অন্য দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে আবার সোহার দিকে তাকায়।

কি বললি তুই? তুই এটা বলতে পারলিরে সোহা,,,নেকি স্বরে বলে তমা।

সোহা মনে মনে বলে,,, এ আসছে ঢং করতে।তুই কেরে যে বলতে পারবো না? শ/য়তানের নানি,, পে/তনি কোথাকার। তুই আমার বান্ধবি না ছা’ই! কে তোর বান্ধবিরে? এক সাথে একটু চললে আর কথা বললেই বুঝি বান্ধবি হয়ে যায়? ঢং’গী কোথাকার! মনে মনে সোহা তমাকে ইচ্ছে মতো বকে নিলো।

তারপর মুখের মাঝে হাসি ঝুলিয়ে ব’লে উঠে,,, আহারে আমি তো ম’জা করেছি।তুই সিরিয়াসলি নিচিছস কেনো? আমি কি তোকে কখনো এমব ভাবে বলতে পারি?

তমা সোহার দিকে তাকিয়ে বলে,, আমিও তাই ভাবছিলাম তুই আমাকে এমন ভাবে কখনো বলতে পারিস না।

সোহা আবার মনে মনে বলে,,, পারি পারি।আমি তোকে এমন ভাবে বলতে পারি।আমি সত্যি সত্যি বলেছি।এই যে এখনো মনে মনে বলছি। লু/চি মেয়ে একটা। কোনো সুন্দর পুরুষ দেখলেই চলে। তোকে কেন নিবো রে? উনার দিকে বা’জে নজর দেওয়ার জন্য? তোর নজরে পরে লোকটা কালো হয়ে,, শুকিয়ে যাওয়ার জন্য?

আর মুখে শুধু হাসি ঝুলিয়ে মাথা নাড়ে সোহা।

দায়ান এবার সোহার দিকে একবার তাকায় তারপর বলে,,,আমাদের এবার বাড়ি যাওয়া উচিত। কাউকে বলে আসিনি হয়তো সকলেই টেনশনে পরে গেছে। আর এমনিতেই অনেক বেলা হয়ে গেছে। তোমরা না হয় হাঁটতে হাঁটতেই কথা বলো।

তমা দায়ানের গলা শুনে খুশিতে গদগদ হয়ে বলে,,হ্যা হ্যা সোহা দায়ান ঠিক কথাই বলেছে।চল চল হাঁটতে হাঁটতে কথা বলি।

দায়ান তমার মুখে নিজের নাম শুনে ব্রু কোচকে ফেলে।এই দুই আংগুলের পিচ্চি মেয়ে তার নাম ধরে ডাকছে।বিষয়টা খুবই হাস্যকর।

সোহার ও রা’গ উঠে যায় তমার মুখে দায়ানের নাম শুনে।এতো রাগের কারণ টা সোহার ও জানা নেই।

দায়ান তমার দিকে তাকাতে দেখে তমার মনে লাড্ডু ফুটছে।এই প্রথম লোকটা তার দিকে তাকাচ্ছে। ধূর আগে জানলেতো সে আরেকটু সেজে আসতো।এখন অবশ্য সাজুগুজু কারাই আছে। তাও আগে জানলে আরেকটু ব্লা’স’ও’ন করতো গালে তাহলে গাল দুটো আরেকটু গোলাপি আভা ছড়াতো!

অথচ দায়ান তমার দিকে তাকিয়ে একটা টা’স’কি খেলো। মুখে পুরো মেকাপের গোডাউন নিয়ে ঘুরছে।শুধু শুধু এমন ভাবে সেজে থাকার মানে আছে? তাও যে সে সাজ নয় মনে হচ্ছে বিয়ে বাড়িতে যাচ্ছে।

সোহার দৃষ্টি ও তমাতেই। দায়ানের দিকে তাকিয়ে দেখো কেমন লাজুক হাসছে আর শরীর দোলাচ্ছে মনে হচ্ছে কোনো নাচের রিয়েলিটি শো তে অভিনয় করে দেখাচ্ছে।

সোহা এবার দায়ানের দিকে এগিয়ে এসে বলে,,চলুন যাওয়া যাক।

তারপর তিন জনই হাঁটতে থাকে।সোহা মাঝখানে হাঁটছে দায়ান তার ডান পাশে।আর তমা বাম পাশে।তমা যে দায়ানের পাশে হাঁটার জন্য উশখুশ করছে তা সোহা ঢে’র বুঝতে পারছে। বার বার চেষ্টা ও করছে সোহাকে সরিয়ে দিয়ে দায়ানের পাশে হাঁটার। কিন্তু প্রতি বার ই তমার চেষ্টা কে বি’ফ’ল করে দিচ্ছে সোহা।তমাকে নাজেহাল করতে পেরে সোহা মনে মনে পৈ/শাচিক আনন্দ পাচ্ছে।

সোহা আস্তে আস্তে গুণ গুণ করে গান ধরে,,,,,,,,,,,

“তোমার ঘরে বাস করে কে’ডা’য় ও মন জানোনা?
তোমার ঘরে বসত করে কয়জনা মন জানোনা?”

পুরো গানটা যে তমাকে ঠে’স মেরে গেয়েছে তমার বুঝতে বাকি নেই। কারণ তমারই যারে দেখে তারেই ভালো লাগে। তমার মনে মনে বেশ রা’গ হলো সোহার উপর।

দায়ান থাকায় সোহাকে তেমন কিছু বলতেও পারছে না।

সোহার গুণ গুণ করে গান গাওয়া দায়ানের ও কানে এসেছে।তাই দায়ান বলে উঠে,,,,,,,

গুন গুন করছো কেনো? গলা ছেড়ে গাও। তোমার গান শুনতে শুনতে যাই।এই পরিবেশে গান কিন্তু মন্দ হয়না।

সোহা বলে উঠে,, আমি এই শীতের মধ্যে অসহায় প্রাণীদের কষ্ট দিতে চাই না।

— মানে? তোমার গান গাওয়ার সাথে,, প্রাণীদের কষ্ট দেওয়ার কি সম্পর্ক বুঝলাম না।

আমার গান শুনলে ঐযে রাস্তার পাশে কু/কুর গুলো দেখতে পাচ্ছেন না? ওরা পানিতে পরে যাবে।

আর আমিকি এই শীতের মধ্যে ওদের কষ্ট দিতে পারি আপনিই বলুন?

তমার সোহার কথা শুনে হাসতে থাকে। এমন ভাবে হাসছে যেনো সোহা সত্যিই খুব খারাপ গায়।

দায়ান সোহার কথা বলার ধরণ দেখে মুচকি হাসে। তারপর বলে তুমি মোটেই খারাপ গাও বলে আমার মনে হয় না,,কারণ তোমার গুণ গুণ শুনেই তা বোঝে গেছি।

তমা সোহার উপর বেশ বিরক্ত। এই সোহাটার জন্য সে দায়ানের পাশই ঘে’ষ’তে পারছে না।

তমা দায়ানের দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে লাজুক হাসছে আর হাঁটছে। মুখের অ’ঙ্গ ভ’ঙ্গি লাজুকতা এনে নে’কা সাজছে।হেলে দুলে হাঁটছে।

অথচ দায়ান তমার দিকে ফিরে ও তাকাচ্ছে না। সে একমনে প্রকৃতি উপভোগ করতে করতে হাঁটছে। তার এসব দিকে ন’জর নেই।

তমা দায়ানের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে তাকিয়ে হাঁটছে। সামনে পিছে ওর কোনো হুঁশ নেই। কে আসলো গেলো বা তার সামনে কিছু আছে কি না। তাই হঠা করেই উঁচু মাটির উপর হোঁ’চট খায়। পরতে পরতে নিজেকে সামলে নেয়।

তমা পরে যেতে নিলে সোহা আর দায়ান দাঁড়িয়ে যায়।

তমা হেসে বলে,,আরে থামলে কেনো হাঁটো। আমিতো এমনি হোঁচট খাওয়ার অভিনয় করছিলাম।দেখছিলাম তোমরা কি করো হে হে হে!

দায়ান ও এবার বেশ বিরক্ত হলো তমার উপর।তাও প্রকাশ করলো না।

তমা আবার দায়ানের দিকে তাকিয়ে হাঁটছে। এবার আর শেষ রক্ষা হলো না। ধপাস করে একটা আওয়াজ হলো।

দায়ান আর সোহা আবার দাড়িয়ে পাশে তাকায়।

তমা পরে গেছে,,,, তাও আবার যে সে পড়া পরেনি একেবারে চি’ৎপ’টাং। দুই হাত গোবর দিয়ে মাখামাখি হয়ে গেছে। আরেকটুর জন্য মুখটা বেঁচে গেছে। নয়তো মুখ টাও সুন্দর করে গোবর দিয়ে লেপ্টে যেতো। দুই হাত গিয়ে পরেছে গোবরে।

সোহা অনেক চেষ্টা করেও নিজের হাসি আটকাতে পারলো না। খিলখিল করে হেসে দেয়।

কিরে তমা এবারও বুঝি তুই অভিনয় করছিলি পরে যাওয়ার?

দায়ান ও এসব কান্ড দেখে নিঃশব্দে হাসতে থাকে।

তমা করুন চোখে দায়ানের দিকে তাকায়। সে মূলত চাইছে দায়ান তাকে উঠাক।তমার আশায় পানি ঢেলে দিয়ে দায়ান সোহাদের বাড়ির ভিতর ঢুকে যায়। হয়তো তার হাসি লোকানোর চেষ্টায়।

এই তমা আয় আয় তোর সাথে একটা সেলফি নেই।কি যে সুন্দর লাগছেরে তোকে। মনে হচ্ছে দুই হাতে গ্লা’ভ’স পরেছিস।আহা্ গোবরের গ্লা’ভ’স।

তমা সোহার কথায় রে’গে অনেক কষ্টে উঠে দাঁড়ায়। বেশ ব্যাথাও পেয়েছে। ইচ্ছে করছে যে গরুর গোবর সেই গরুকে কালা’ভূ’না করে খেয়ে নিতে।তারপর তমাও নিজের বাড়ির দিকে চলে যায়।

সোহা ও হাসতে হাসতে নিজের বাড়তি ঢুকে।

———————————

সোহা বাড়িতে ঢুকতেই সামনে এসে রুশ দারায়। রুশ কে হঠাৎ করে সামনে আসতে দেখে সোহা ও তার হাঁটা থামিয়ে রুশের ও তাকায়।

রুশ সোহার চারপাশে ঘুরতে থাকে।

সোহা এবার বলে উঠে,,,, কি ব্যাপার হুঁশ ভাইয়া? তুমিকি নতুন পুলিশের চাকরি তে জয়েন হয়েছো নাকি?

মানে?

মানে তোমার মাথা।এমন ভাবে আমার দিকে সন্দেহর দৃষ্টিতে তে তাকিয়ে ঘুরছো কেনো?

মনে হচ্ছে তুমি পুলিশ আর আমি চো’র!

— তুই চো’র না তো চু’ন্নি তুই।

— এইই কি বললা তুমি? আমি চু’ন্নি ? তুমি চু’ন্নি । তোমার বউ চু’ন্নি! আরে ধুর তোমার বউতো আমার বোন।তুমিই চু’ন্নি। না না চু’ন্নি তো মেয়েদের বলে।চু’ন্নির মে’ল ভার্সন কি হবে? জানি না তো।সে যাক গে তুমি একটা চু’ন্না।

— তর মাথার তার যে ছিরা সেইটার প্রমান তুই আবার দিলি।সে যাক সকাল সকাল কোথায় গিয়েছিলি?

— ঘোড়ার ঘাস কাটতে।তোমার কি?

— আমার কি মানে? আমারইতো সব।তুই আমার বোন+ শা’লিকা! আমার কতো দায়িত্ব আছে তোর উপর তুই জানিস?

— এএএ আসছে আমার দায়িত্বরে।

— তো কি? আর কই দেখি কি ঘাস কাটলি ঘোড়ার জন্য। আমার মামা শ্বশুর যে ঘোড়া পালে জানতাম না তো।

— আমার বাবা তোমার মামা শ্বশুর?

— হুম। মামা হয় না আমার? তারপর আবার শ্বশুর এই হলো মামা শ্বশুর!

— বাহ কি যু’ক্তি! বুদ্ধি ও আছে দেখছি অনেক। এই জন্যই ঘোড়ার জন্য ঘাস এনেছি যেনো আরো বুদ্ধি বাড়ে।

— তোমার মামা শ্বশুর ঘোড়া পালে জানতে না? এই যে আমার সামনে দাঁড়িয়ে আছে ঘোড়া।

— রুশ শুনেই বলে কি বললি সোহা তুই? তবেরে দাড়া তুই,,, বলেই সোহাকে দৌড়ানি দেয়।

— সোহা রুশ কে ঘোড়া বলেই দৌড়।

—————————-

দুপুরে খাওয়ার সময় রুশের পাশে আজ সোহা বসেছে।

অনেক সময় ধরে রুশকে এটা ওটা বলে খোঁচাচেছ। রুশ ও কম যায় না।

রুশ আর সোহার কাজে সকলেই হাসে।দুইটায় পারে ও বটে।একটার থেকে একটা কম যায় না।

রুশ তার পাশে রাখা জুসের গ্লাস টা নিয়ে তাকিয়ে বলে,,, বাহ্ জুসের কালারটা তো সেই। নতুন কিছু দিয়ে তৈরি নাকি?

রুশের মা বলে হুম।আজ জুস সোহা তৈরি করেছে সকলের জন্য। একেক জনের জন্য একেকটা বানিয়েছে।আমরা তো সবাই খুশি নিজে গিয়ে বানিয়েছে।নয়তো বলেও তো এই মেয়েকে রান্না ঘরের দিকে নেওয়া যায় না।

রুশ বলে ভালোতো রান্না বান্না শিখে নে সোহা।নয়তো শ্বশুর বাড়িতে গিয়ে করবি কিভাবে? নোহার পরেই কিন্তু তোর পালা।

সোহা হাসে আর মনে মনে বলে,,,খাওনা খাও পরে ম’জা বুঝবা।তোমার জন্য স্পেশাল জুস তৈরি করতে কতো যে কষ্ট হয়েছে আমার।কতো কিছু দিয়ে জুসের আসল ঘ্রাণ ঢাকতে পেরেছি।আমি জানি না কি কি দিয়ে আসল ঘ্রাণ দূর করেছি।

রুশ জুসের মধ্যে মুখ ঠেকিয়ে এক চুমুক দিয়েই থম মেরে থেকে দৌড়ে বেসিনের উপর গিয়ে ওয়াক ওয়াক করতে থাকে। কয়েকবার মুখ ধুয়ে সোহার দিকে তাকিয়ে বলে,,সোহা বোন আমার তুই এটা কিসের জুস বানিয়েছিস? বল আমায় তারাতাড়ি আমার ভিতরের সব উল্টে বেরিয়ে আসতে চাইছে।

সোহা একটু ভাব নিয়ে বলে,,তেমন কিছুনা,,, মূলা,,করলা আর কি যেনো দিয়েছি আমি নিজেও জানিনা!

#চলবে,,,,,,,,

#তুমি_হাতটা_শুধু_ধরো_২
#পর্বঃ১১
#Jhorna_Islam

দেখতে দেখতে আরো কয়েকটা দিন কেটে গেলো।গ্রামের বাড়িতে দায়ান ও রুশদের দিন গুলো খুব ভালো ভাবে ম’জা, হাসি আনন্দে কেটে গেছে।

সোহা আর রুশ সারাক্ষণ নানান ধরনের খু’ন’সু’টিতে মেতে ছিলো।প্রতিদিন কিছু না কিছু নিয়ে দুইটায় দুইটার পিছনে লাগতো।আর বাড়ির সকলে রুশ আর সোহার কান্ড দেখে হেসে লুটোপুটি খেতো।

সোহা প্রায়ই দায়ান কে নিয়ে গ্রামে হাঁটতে বের হতো।এই কয়দিনে গ্রামের প্রকৃতি উপভোগ করতে পেরেছে দায়ান ভালোভাবে । এখন দায়ান প্রায় স্বাভাবিক হয়ে গেছে । আগের মতো হাসি খুশি থাকে সব সময়। তবে মনের মাঝে তিশার জন্য চাপা একটা কষ্ট অনুভব করে।নিজেই আবার নিজেকে সামলেও নেয়।

সোহা একদিন দায়ান কে বলে উঠে,,,,, আচ্ছা আমরা কি ফ্রেন্ড হতে পারি?

দায়ান সোহার মুখের দিকে তাকিয়ে দেখে উৎসাহিত নয়নে দায়ানের দিকে তাকিয়ে হাত বাড়িয়ে অপেক্ষা করছে ফ্রেন্ড হওয়ার জন্য।

— তুমি কিসে যে নো পরো?

— কেন জানেন না? এইবার এইচএসসি দিয়েছি।

— আর আমি কি করি?

— ডাক্তার!

— তোমার আর আমার বয়সের পার্থক্য জানো? পিচ্চি একটা মেয়ে সে নাকি আমার সাথে বন্ধুত্ব করতে আসে।

— একদম আমায় পিচ্চি বলবেন না।আর বন্ধু হতে সমানে সমান বয়স লাগে নাকি? জানতাম না তো।

— পিচ্চি মেয়ে তো তাই জানো না।

ধ্যা’ত হবেন না এটা বললেই হয়।এতো বাহানা দেওয়ার তো কিছু দেখছিনা।বলেই সোহা মুখ ঝা’ম’টা মেরে ধুপাধুপ পা ফেলে চলে যায়।

দায়ান পিছন থেকে ডাকে,,,আরে সোহা শুনতো,,,,মজা করছিলাম আমি।আসো বন্ধু হবো আমরা। একটা পিচ্চি বন্ধু জীবনে থাকা খুব দরকার। আমিতো তোমায় বন্ধু হিসেবে পেয়ে আমাকে অনেক লা’কি মনে করবো।তুমিতো আমায় ঘুড়ে দাড়াতে সাহায্য করেছো।চিরদিন কৃ’ত’জ্ঞ থাকবো তোমার উপর।

কে শুনে কার কথা।সোহা কি দায়ানের কথা আর শোনার মতো মেয়ে? দায়ান তাকে এভাবে বলায় সে রে’গে চলে যায়।

তারপর দুয়েক দিন দায়ানের ধারে কাছে ও যায়নি।ভালো করে কথা বলাতো দূরে থাক। দায়ান কতো ভাবে বুঝিয়ে স’রি বলে তারপর আবার স্বাভাবিকের করেছে সোহাকে।

————————————–

আজ নোহা আর রুশের গায়ে হলুদ।বাড়িতে সোহাদের প্রায় অনেক আত্নীয় স্বজন উপস্থিত। দায়ানদের পক্ষ থেকেও অনেকে এসেছে।বাকি গুলো কাল আসবে।

বাড়িতে মানুষ দিয়ে ভর্তি।গায়ে হলুদের আয়োজন চলছে পুরো দমে। রুশ আর নোহার জন্য এক স্টেজেই পর্দা লাগিয়ে দুই জনের আলাদা আলাদা হলুদ লাগানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে।

হলুদ অনুষ্ঠানে বিভিন্ন ধরনের পুরাতন আধুনিক হলুদের গান বেজে চলেছে। গায়ে হলুদের একটা আলাদা আমেজ ই আছে। বিয়ে বাড়িতে অন্যদের জন্য মূল আনন্দ ও আকর্ষনই হলো গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান। এখানে ছোট বড় সকলেই আনন্দে মেতে উঠে।

দায়ানের বাবা,মা আর রুশের বাবা মা সোহার বাবা মাকে বিভিন্ন কাজে সাহায্য করছে।যেহেতু সোহার বাবা একাই তার কোনো ভাই বোন নেই। সোহার মামা রা ও আবার একজন কাজের জন্য এখনো আসতে পারেন নি।আরেকজন আছে। বিয়ে বাড়িতে হাজার কাজ,,,একটার পর একটা লেগেই থাকে।

বিকেল বেলা গিয়ে বাড়ির মহিলা রা আর মেয়েরা গিয়ে মেহেদী তুলে এনেছে গাছ থেকে। টি’উ’ব মেহেদী ব্যবহার করলেও গাছের টা ও ব্যবহার করে গ্রামের সকলে।

মেহেদী এনে দেওয়ার সাথে সাথে পাড়ার মহিলারা মেহেদী,,হলুদ বাটা শুরু করে দেয়।আর বিভিন্ন ধরনের গীত(গান) গাইতে থাকে।

সকলেই নিজেদের সাজগোজ নিয়ে বি’জি। সোহা নোহাকে হলুদের সাজে সাজিয়ে দেয়।তারপর নিজেও গিয়ে হলুদের জন্য হলুদ একটা শাড়ি পরে সাথে হলুদের গহনা।

তমা সবার আগে সেজে উপস্থিত। মুখে মনে হয় পুরো ময়দার দোকান দিয়েছে।নিজের আসল চেহারাটাই ঢেকে দিয়েছে।

নানান লোক অবাক হয়ে তমার দিকে তাকাচ্ছে। আর ফিসফিস করে কিছু বলছে।তমাতো মহা খুশি সে ভাবছে তার বুঝি প্রশংসা করছে সকলে।করাটাই স্বাভাবিক যেই সাজ দিয়েছে।সকলের থেকে সুন্দর লাগবে বেশি।আরো ভেবে রেখেছে কাল আরো গর্জিয়াস করে সাজবে।সবাইকে তা’ক লাগিয়ে দিবে।বিয়ের কনেকে রেখে সকলে তখন তার দিকেই তাকিয়ে থাকবে।সাথে দায়ান ও তার দিকে মুগ্ধ চোখে তাকিয়ে থাকবে।

দায়ান আজ কালো পাঞ্জাবি পরেছে।এখন চুল গুলো একটু ছোট করেছে।মুখে চা’প দা’ড়ি।

তমাতো দায়ানকে দেখে কয়েকবার টা’স’কি খেয়ে নিয়েছে।দায়ানের পিছু পিছু অনেক সময় ধরে ঘুর ঘুর করেছে।কিন্তু দায়ান পাত্তা দিবে দূরে থাক ঘুরেও তাকায় নি।

সেই দুঃখে সোহার পাশে গিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে।আর মনে মনে কিছু একটা প্লেন করতে থাকে।

সোহা বোনের গায়ে গিয়ে হলুদ ছুঁইয়ে দেয়।নোহা মুচকি হেসে নিজেও কিছু টা হলুদ নিয়ে সোহার গালে লাগিয়ে দেয় আর বলে পরের বার তোর পালা।

হুহ বললেই হলো নাকি? আমি এতো সহজে এ বাড়ি থেকে যাচ্ছি না।তুমি তারাতাড়ি যাও তারপর সব আমার।আমি এই বাড়িতে একাই রাজত্ব করবো।

হ্যা করিস।দেখবোনে বা/দরামি করলে আব্বু যখন বাড়িতে থাকবে না। তখন কে তোকে বাঁচায়।

তখন আম্মু আমায় কিছুই করবে না কেন জানো?

কেন?

কারন তখন তুমি থাকবা দূরে। বাড়িতে শুধু আমি।আমাকে আদর করেই কূল পাবে না। আবার বকা বা মারবে কোন সময়?

তুমি ভালো করেই জানো সো’না এসব কিছুই হবে না।তোমার পিঠ বাঁকা করতে আম্মু একটুও পিছ পা হবেন না।

উফফ আপু এসব বাদ দেও।আমি তোমায় খুববববব মিসসসস করবো ঠোঁট উল্টে বলে সোহা।

নোহা সোহাকে বুকে জড়িয়ে বলে,,,আমিও তোকে খুব মিস করবো বোন।

দুই বোনের চোখের পানিই ছলছল করছে।দূর থেকে সোহার মা দুই বোনকে দেখে শাড়ির আঁচলে চোখের কোণ মুছে সরে যায়। এখন ওদের পাশে গেলে নিজেকে ঠিক রাখতে পারবে না।

তারপর সোহার পা’রা’প’র’শি এক কাকি পরিবেশ স্বাভাবিক করার জন্য বলে উঠে,, কিরে তোরা দুই বোনই হলুদ দেওয়া দেওয়ি করবি নাকি? আমাদের ও একটা সুযোগ দে। আর সোহা তুই গিয়ে তোর দুলাভাই কে হলুদ ছোয়া।

যাচ্ছি কাকি।বলেই সোহা রুশের পাশে চলে যায়। তমা ও সোহার পিছনে উঠে যায়।

সোহা রুশের পাশে গিয়ে বসে আবার ম’জা করতে শুরু করে দিয়েছে। ফল মিষ্টি নিয়ে রুশের মুখের সামনে নিয়ে যায় রুশ হা করলেই সেটা সোহা নিজের মুখে পুরে নেয় রুশ কে না দিয়ে।

তারপর দুই হাত ভর্তি হলুদ নিয়ে রুশের পুরো মুখ ভর্তি করে ফেলেছে। চোখ মুখ কিছু বাদ রাখেনি।

রুশ বলে,,,,শা’লিকা আমার মুখের ভিতর বাদ রাখলি কেনো? আমি হা করতেছি মুখের ভিতর ও দে কাঁচা হলুদের টেস্টি নেই। আর কানের ভিতর ও দে।

রুশের কথা শুনে সোহা সহ আশে পাশে বসে থাকা সকলে খিলখিলিয়ে হেসে উঠে।

এরমধ্যে তমা সোহার বা রুশের এসব খুনসুটির মধ্যে নেই।সে আছে তার ধা’ন’দা’তে। তমা সোহার পাশে দাড়িয়ে থাকলেও তার দুই চোখ খুঁজে চলেছে সেই সু’দ’র্শ’ন যুবক টা কে। কিন্তু কোথাও দেখতে পাচ্ছে না।

হঠাৎ করেই বাম দিকে চোখ যেতেই দেখতে পেলো কিছু টা দূরে একটা চেয়ারে দায়ান বসে আছে। ঐদিক টায় তেমন একটা মানুষ নেই। দায়ান বসে বসে মোবাইল টিপছে।

দায়ানকে দেখেই তমার মুখে হাসি ফোটে উঠে। স্টেজে রাখা হলুদের বাটির দিকে তাকায়। তারপর নিজের হাত বাড়িয়ে হাতে হলুদ নিয়ে ওড়নার আড়ালে হাত লোকায়।আশে পাশে আর সোহার দিকে তাকিয়ে আবার দেখে নেয় কেউ দেখেছে কি না।

তারপর ধীর পায় এগিয়ে যায় দায়ানের দিকে।

দায়ান ফোন টিপার মাঝেই হঠাৎ করে তার গালে ঠান্ডা কিছুর স্পর্শ পেয়ে চোখ মুখ কোচকে ফেলে। তারপর সামনের দিকে তাকিয়ে আবারো ব্রু কোচকে আসে দায়ানের ,,,,,,

#চলবে,,,,,,