#তুমি_হৃদয়ে_লুকানো_প্রেম
#তাহিরাহ্_ইরাজ
#পর্ব_৫৬
আমি তখন সদ্য অষ্টাদশে পা দিয়েছি। স্টাডি, ফ্রেন্ড সার্কেল, ফ্যামিলি। সব মিলিয়ে দিনকাল বেশ কাটছিল। একদিন কোচিং সেন্টার থেকে বাড়ি ফিরে চমকে গেলাম। পুরো বাড়িতে খুশির কলরব। আম্মুর ঠোঁটের কোণে এক চিলতে হাসি। আমি যারপরানাই অবাক হলাম। কাঁধে থাকা ব্যাগ সোফায় ফেলে ছুটে গেলাম আম্মুর কাছে। দু হাতে আম্মুর গলা জড়িয়ে দুষ্টুমি করে জিজ্ঞেস করলাম,
” কি ব্যাপার আম্মুজি? হঠাৎ এত খুশি কেন? খুশিতে তো একেবারে ড্যান্স করার মতো অবস্থা। ”
আম্মু অতি উৎফুল্ল হয়ে বললো,
” তোর খালামণি আসছে রে বাবা। ”
খালামণি! তাহমিদা খালামণি সপরিবারে ঢাকা আসছে। একেবারের জন্য। এখন থেকে ঢাকাতেই নাকি থাকবে। আমাদের বাসার কাছাকাছি। শুনে বেশ খুশি হলাম। খালামণি আমার বেশ সুইট। দেখলেই শ্রদ্ধা, ভালোবাসা জন্মে। কেমন মা মা ঘ্রাণ পাই। আম্মুর কাছে শুনেছি আমি জন্মের পর খালামণির বেশ ন্যা*ওটা ছিলাম। আম্মু যখন কাজে ব্যস্ত থাকতো তখন খালামণি আমায় সামলাতো। আমিও দ্বিতীয় মায়ের কাছে স্বাচ্ছন্দ্যে থাকতাম। সে-ই খালামণি বিয়ের পর কেমন পর হয়ে গেল। নিজের সংসার জীবন নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়লো। চলে গেল বগুড়া। তেমন একটা আসাযাওয়া হতো না। তবে খালামণির দুই পুঁচকে মেয়ের জন্মের সময় আমরা সবাই বগুড়া গিয়েছিলাম। দেখেছিলাম দু’টো ছোট পুতুল মতো মেয়েকে। তবে জাহিনের সময় আমি যেতে পারিনি। এদিকে আঁটকে পড়েছিলাম। যাই হোক। তাহমিদা খালামণি আসছে। মানে আমার পুঁচকে দুই বোনও আসছে। জাহিন তো তখন এ পৃথিবীতে আসেইনি। তো আমি আর তৃষা বেশ এক্সাইটেড হয়ে পড়লাম। অপেক্ষা করতে লাগলাম কখন আসবে সবাই। যথারীতি সেদিনটা চলে এলো। অপেক্ষার প্রহর শেষে বাসায় প্রবেশ করলো খালামণি, খালু। আমি ধীরপায়ে গিয়ে সালাম দিলাম। তাদের সাথে কুশল বিনিময় হলো। স্বভাবতই আমি বড় ছটফটে। বড়দের মাঝে ভালো লাগছিল না। বারবার এদিক ওদিক তাকাচ্ছিলাম। খুঁজছিলাম আমার দুই বোনকে। শেষমেষ তাদের থেকে বিদায় নিয়ে বাড়ির বাহিরে এলাম। এসেই অবাক! যাদের জন্য এত অপেক্ষা তারা এখানে এসব করছে!
তৃষার ছোট সাইকেলে বসে পুঁচকে মেয়েটা। বয়স সাত আটের মতো হবে। বেশ গুলুমুলু দেখতে। একটা হলদে ডিজাইনিং ফ্রক পড়ে ছিল। ছোট ছোট হাত-পা দিয়ে সাইকেল চালানোর সর্বোচ্চ চেষ্টা করছিল। তবে পারছিল না। ব্যর্থ হয়ে কি কিউট একটা ফেস করছিল! বড় মায়াবী লাগছিল ওকে। ফুলো ফুলো গাল দু’টো রৌদ্রে লাল হয়ে গেছে। তবুও থেমে নেই মেয়েটা। তৃষা আর পাশে থাকা বড় মেয়েটা মানে তানজি ওকে ধরে ধরে সাবধানে সাইকেল চালাচ্ছে। হঠাৎ আমি গমগমে স্বরে বললাম,
” তোরা রৌদ্রের মধ্যে এখানে কি করছিস? ”
আকস্মিক সাইকেল থেমে গেল। বড় বড় চোখ করে কিউট মেয়েটা আমার দিকে তাকালো। ওর চাহনিতে ধক করে উঠলো আমার ভেতরটা। অজানা তৃষ্ণায় কাতর হলো গলা। তৃষা হাসিমুখে দৌড়ে এলো আমার কাছে। হাতের ইশারায় ওদের দেখিয়ে খুশিমনে বলতে লাগলো,
” ভাইয়া। ভাইয়া! ওই যে। তানুপু। দুয়া। ”
কিশোরী তানজি আমার কাছে এলো। কুশল বিনিময় হলো। তবে ছোট্ট মেয়েটা তেমন কিছু বললো না। শুধু আস্তে করে সালাম দিলো। সালাম দেয়ার সময় ওকে বড্ড কিউট লাগছিল। মন চাইছিল ফুলো গালটা টিপে দেই। তবে তা করলাম না। নিজেকে সংবরণ করলাম। তো… আমাদের প্রতিবেশী হয়ে গেল খালামণি এবং তার পরিবার। ঘন ঘন আমাদের দুই বাড়িতে যাতায়াত শুরু হলো। যাকে বলে অবাধ বিচরণ। আমিও খুশিমনে যেতাম। ছোট দুই বোন এসেছে। আমার সঙ্গী বেড়েছে। সামনেই এইচএসসি পরীক্ষা। স্টাডি কমপ্লিট করে সুযোগ পেলেই ও বাড়ি যেতাম। তবে লক্ষ্য করলাম দুয়া পুঁচকেটা আমায় কেমন এড়িয়ে চলে। দেখলেই কাঁচুমাচু করে। ও কি আমায় ভয় পায়? সেই শিশুকালে দেখেছে আমাকে। স্বাভাবিক ভাবেই মনে নেই। তাই বলে ভয় পাবে! আমি কি বাঘ না ভাল্লুক? ওকে খেয়ে নেবো? ওর এই ভীত ভাব আমার পছন্দ হলো না। মেয়েটা কেমন ইন্ট্রোভার্ট টাইপের। সবার সাথে মিশতে পারে না। সময় লাগে। একদিন আমি সন্ধ্যাবেলা ও বাসায় গেলাম। আম্মুকে ডাকতে। আম্মু সে-ই দুপুরে গিয়েছে। এখনো ফেরার নাম গন্ধ নেই। গিয়ে দেখলাম দুই বোন সোফায় বসে আড্ডা দিচ্ছে। পুরনো স্মৃতিচারণ করে সেন্টি খাচ্ছে। আমি আম্মুকে ফেরার তাগাদা দিয়ে তৃষার খোঁজে এ রুম ও রুম খুঁজতে লাগলাম। হঠাৎ এক রুমে গিয়ে লক্ষ্য করলাম বোন আমার বিছানায় উপুড় হয়ে শুয়ে কারুকার্য করছে। আই মিন ড্রয়িং করছে। কৌতুহলী হয়ে আমি এগিয়ে গেলাম। হালকা ঝুঁকে তৃষার ফটো দেখে ঝটকা খেলাম বেশ। বোন আমার পৃথিবীর সবচেয়ে বিদঘুটে বিড়ালের ছবি আঁকছে। ইয়াক! এমন বিশ্রী বিড়াল পৃথিবীর কোনো কুকুর ই তাড়া করবে না। ইশ্! তৃষার ফটো দেখে কিছু বলবো হঠাৎ চোখ গেল দুয়া’র দিকে। সে-ও উপুড় হয়ে শুয়ে আঁকিবুঁকি করছে। একটা সাদা গোলাপি মিশ্রনের ফ্রক পড়া। আমি দুষ্টু হেসে বলে উঠলাম,
” কি রে পুতলা? কি আঁকছিস? ”
হঠাৎ আমার কণ্ঠ শুনে দুজনেই ভয় পেল। তাড়াহুড়ো করে উঠে বসলো। দুয়া কেমন অদ্ভুদ চাহনিতে তাকিয়ে আছে। আমি পুনরায় জিজ্ঞেস করলাম,
” কি রে পুতলা? সাইলেন্ট মোডে চলে গেলি নাকি? ”
মেয়েটা নাকমুখ কুঁচকে বললো,
” আমি পুতুল না। ”
ওর অভিব্যক্তি দেখে সেদিন হো হো করে হেসেছিলাম। গুলুমুলু মেয়েটাকে যে-ই দেখে সে-ই নাকি আদর করে গাল টেনে দেয়। পুতুল বলে। এতে সে মহা বিরক্ত। আমিও পেয়ে গেলাম সুযোগ। ওকে ক্ষ্যা;পানোর জন্য যখন তখন পুতুল, পুতলা বলে ডাকা শুরু করলাম। এতে বেশ কাজে দিলো। ইন্ট্রোভার্ট মেয়েটা ক্ষে পে যেতো। রাগে মুখমণ্ডল লাল হয়ে যেতো। প্রতিবাদ করে উঠতো সে পুতুল না। আমি তা শুনলে তো। ইচ্ছাকৃত ভাবে আরো ক্ষে,পিয়ে দিতাম। রাগে ক্ষো’ভে চিৎকার করে উঠতো মেয়েটা। কখনো কখনো কাঁদতো। আম্মু সে কি বকা দিতো আমাকে। আমি শুধু হাসতাম আর এনজয় করতাম। এভাবেই সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আমাদের সম্পর্কের সমীকরণ বদল হতে লাগলো। আমি হুটহাট ক্ষে’পিয়ে দিতাম আর সে রণমূর্তি ধারণ করতো। আবার ওর কোনো আবদার অপূর্ণ থাকলে আমি তা যথাসাধ্য মেটানোর চেষ্টা করতাম। এভাবেই আমাদের মধ্যে এক নামহীন টম এন্ড জেরি সম্পর্কের সূচনা হলো। আমরা একে অপরের পেছনে লাগি। আবার অন্যজনের সামান্য কিছুতে আতঙ্কিত, বিচলিত হয়েও পড়ি। এভাবেই বড় হতে লাগলাম আমরা। কোনো এক অজানা কারণে ওকে কখনো কোথাও আমার বোন হিসেবে পরিচয় করানো হয়নি। ওর একটাই পরিচয় ছিল। ও জাহিরাহ্ দুয়া। আমার ছোট্ট কিউট জেরি। টমের জেরী।
আমি নিজের স্টাডি লাইফের বাহিরে যতটা সময় পেতাম ওকে আগলে রাখার চেষ্টা করতাম। গাইড করতাম। মেয়েটা আমার কথায় ত্যা;ড়ামো করলেও শেষে কিন্তু মান্য করতো। আমাদের মধ্যে চমৎকার বোঝাপড়া ছিল। একে অপরকে খুব করে বুঝতে পারতাম। তবে তা প্রকাশ করতাম না। মেয়েটা তখন এসএসসি ক্যান্ডিডেট। নিউ টেন এ উঠেছে। পড়াশোনার বেশ চাপ। আমি তো চ্যালেঞ্জ করে বসলাম ও টেনেটুনে এ গ্রেড পাবে। এর বেশি নয়। মেয়েটা আমার কথায় ভ্রুক্ষেপ করলো না। নিজের মনমতো পড়তো। একদিন আমি বিকেলবেলা বাড়ি ফিরছিলাম। একা ছিলাম। হঠাৎ রাস্তার ওপাড়ে চোখ গেল। দুয়া দাঁড়িয়ে ফুচকা খাচ্ছে। ও একা নয়। সাথে তৃষাও আছে। আর একটা ছেলে। তন্ময় নাম ছিল বোধহয়। দুয়া’র ক্লাসমেট। দু’জনে খুব হা হা হি হি করছিল। ছেলেটা রসিয়ে রসিয়ে আলাপ করছিল। ওকে নিজ হাতে ফুচকা খাইয়ে দিচ্ছিল। অজানা ঈর্ষায় আমার ভেতরটা জ্বলে উঠলো। শিরায় উপশিরায় দাউদাউ করে আগুন লেগে গেল। দুয়া অন্য কোনো ছেলের হাত থেকে ফুচকা খাচ্ছে! কেন? ও কি নিজ হাতে খেতে পারে না? খেতে অক্ষম? নাকি ওকে কখনো ফুচকা খাওয়াইনি? ওই ছেলেটার হাত থেকে কেন ফুচকা খাবে? দাঁত কেলিয়ে হাসবে? সহ্য করতে পারলাম না আমি। সেদিন প্রথমবারের মতো নিজের ভেতরে ভিন্ন এক অনুভূতি টের পেলাম। ঈর্ষান্বিত হলো অন্তঃপুর। সে-ই আরম্ভ।
এরপর… দিন যায় রাত আসে। নিজের মধ্যে ব্যাপক পরিবর্তন অনুভব করতে লাগলাম আমি। দুয়া! হাঁ দুয়া। যার খুশিতে আমার খুশি লুকিয়ে। যার যন্ত্রণায় ছটফটানি আমার ভেতরে। আমার প্রতিটি মোনাজাতে যার নামে দোয়া পাঠ হয়। সে দুয়া। আমার হৃদয়ে লুকানো অনুভূতি। জাহিরাহ্ দুয়া।
__
” আরে বাহ্ ভাইয়া বাহ্। আই অ্যাম তো পুলকিত! ”
আকস্মিক মিহাদের কণ্ঠে ধ্যান ভঙ্গ হলো তূর্ণ’র। ভাবনার দুনিয়া ত্যাগ করে বাস্তবে পদার্পণ করলো। বন্ধু ও কাজিন মহল আশপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে বসে। মিহাদ হঠাৎই পাল্টি খেয়ে নাকমুখ কুঁচকে বললো,
” ছিঃ! শেষমেষ এই ছিল তোমার মনে? আমরা ভাবতাম বোনের লাগি কাঁদে ভাইয়ের মন। এখন দেখি খালাতো বোন যখন বউ। ও মা গো! এ তো ইতিহাস কাঁপানো টুরু লাভ! ”
সিনথিয়া ভাইয়ের পিঠে দুম করে লাগিয়ে দিলো এক ঘা। অসন্তুষ্ট কণ্ঠে বলে উঠলো,
” শ* পোলা। নিজে আজ পর্যন্ত এক পিস জোটাতে পারিসনি। তুই আবার বড় ভাইয়ের লাভ স্টোরি নিয়ে মক করছিস? ”
পরিস্থিতি বিবেচনা করে বোকা হাসলো মিহাদ।
” আই অ্যাম জোকিং। ”
” শ* একপিস! ” বিড়বিড় করে গা’লমন্দ করে চলেছে সিনথিয়া।
একদিকে বন্ধুরা এবং কাজিনমহল তাদের বহু আকাঙ্ক্ষিত প্রেম কাহিনী শুনতে পেরে উৎফুল্ল। আর দুয়া? মেয়েটা টলমলে নয়নে তাকিয়ে স্বামীর পানে। বিস্ময়ে অভিভূত অন্তঃস্থল। প্রায় পাঁচ-ছয় বছরের লুকায়িত অনুভূতি আজ প্রকাশ্যে এলো! এভাবে? এমনটি হবে জানা ছিল না। তারা দু’জনে তো বসে ছিল জলধারা সংলগ্ন। দুয়া বলতে চাইছিল কিছু। কিন্তু তাদের ব্যক্তিগত মুহূর্তে হুট করেই হানা দিলো এরা। কথায় কথায় জোরপূর্বক প্রকাশ্যে এনে ফেললো তূর্ণ’র হৃদয়ে লুকানো প্রেম কথন। দুয়া তো অজ্ঞাত ছিল এসব সম্পর্কে। কতবার জানতে চেয়েছে। কিন্তু মানুষটি বলেনি। চেপে গেছে। বলেছে যথাসময়ে বলবে। আজ বললো অবশেষে। তার যে এখন খুব করে কাঁদতে ইচ্ছে করছে। মানুষটির বুকে মুখ গুঁজে নিজস্ব অনুভূতি ব্যক্ত করবার আকাঙ্ক্ষা জাগছে। সকলের ভিড়ে তা পূরণ করবে কি করে?
•
দিবাকরের আলোয় উজ্জ্বল বসুন্ধরা। বিছানায় ডান কাত হয়ে শুয়ে সুঠামদেহী মানব। অনাবৃত দেহের উপরিভাগ। কটির নিকটে অবহেলায় পড়ে পাতলা কাঁথা। ধীরপায়ে বিছানার ধারে এগিয়ে এলো মানবী। বসলো ঘুমন্ত মানবের শিয়রে। ঘুমের রাজ্যে পাড়ি জমানো স্বামীর নিষ্পাপ মুখশ্রী অবলোকন করে মেয়েটির অধরকোণ প্রসারিত হলো। মনে পড়ে গেল পূর্ব রাত্রির প্রেমাসক্ত স্বীকারোক্তি। মানুষটি যখন তার হৃদয়ে লুকানো অনুভূতি সকলের সম্মুখে ব্যক্ত করছিল তখন তার চোখেমুখে প্রকাশ পাচ্ছিল আলাদা ঝলকানি। এক তৃপ্তিময় আভা। স্বর্ণালী অতীতে হারিয়ে যাওয়ার উচ্ছ্বাস। অতীতের স্মৃতি রোমন্থন করে সে অগণ্য সময় তাকিয়ে ছিল অর্ধাঙ্গীর বিহনে। সকলের হাসিঠাট্টা, খুনসুটি অগ্রাহ্য করে সে মগ্ন হয়েছিল মাইরা’তে! তার হালাল প্রিয়তমাতে। নয়নে মিলিত হয়েছিল নয়ন। ভুলে গিয়েছিল দু’জনে জাগতিক সকল ভাবনা। অবশেষে পুষ্পি এবং দিবা’র ধাক্কায় বাস্তবে ফিরে এসেছিল। বিগত রাতের কথা স্মরণ করে লজ্জালু আভা ছড়িয়ে পড়লো মেয়েটির মায়াবী বদনে। স্বামীর ঘুমন্ত মুখপানে চেয়ে দুয়া। মিহি স্বরে একাকী বলতে লাগলো,
” এত ভালোবাসো আমায়? কি করে? এতগুলো বছর ধরে হৃদয়ে লালন করে গেলে। কখনো প্রকাশ করলে না। জানো তো। তোমার আচরণে কোনোদিন বিন্দুমাত্র আঁচ পাইনি। টেরও পাইনি আমি যে কে তোমার। বুঝতে পারিনি… তোমার হৃদয়ের কতখানি স্থানে একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তার করে চলেছি আমি। হাঁ। শুধু আমি। তোমার মাইরা। আমার তূর্ণ’র হৃদয়ে লুকানো অনুভূতি। যে অনুভূতি সময়ের সঙ্গে গাঢ় হয়েছে। ভালোবাসার বটবৃক্ষ বপন করেছে আমার মনের বাগিচায়। মহান রবের নিকট অসীম শুকরিয়া আদায় করছি! তিনি তোমাকে আমার করে পাঠিয়েছেন। দুয়া’র জন্য সঙ্গী রূপে শুধু একজন ই। তার তূর্ণ! ইহকাল শেষে পরকালেও তোমাকে সঙ্গী হিসেবে চাইছি প্রিয়। হবে কি আমার চিরসঙ্গী? ”
ঘুমন্ত মানবের নিকট হতে জবাব এলো না। নিভৃতে আরেকটু ঘনিষ্ট হলো তূর্ণ। বাঁ হাতে আলিঙ্গন করলো মেদহীন কটি। লাজুক হাসলো মেয়েটি। স্বল্প ঝুঁকে এলো। অর্ধাঙ্গের ললাট কার্নিশে বসালো ওষ্ঠ চাপ। দীর্ঘস্থায়ী হলো সে প্রেমময় পরশ।
.
রিসোর্টের এক বৃক্ষতলে দাঁড়িয়ে নিশাদ। কথা বলছে দিবা, মনিকা, পুষ্পি, বিন্দুর সঙ্গে। অধরে লেপ্টে তার মিথ্যে হাসির রেখা। সে মুহূর্তে ওদের থেকে খানিক দূরে উপস্থিত হলো তৃষা। অপ্রত্যাশিত ভাবে নিশাদকে লক্ষ্য করে তার সবটুকু হতাশা উড়ে গেল। সে কি টের পেল তা? মেয়েটি খুশি খুশি ছুটে গেল এদিকে। বড় বড় কদম ফেলে এসে পৌঁছালো নিশাদের বাঁ পার্শ্বে। নিশাদের দিকে আড়চোখে তাকিয়ে বন্ধুদের উদ্দেশ্যে বললো,
” তোরা এখানে? আমি আরো কোথায় কোথায় খুঁজছি।”
নিশাদ এতক্ষণ যা-ও মিথ্যা হেসে যাচ্ছিল। কিন্তু নি ষ্ঠুর রমণীর আগমনে তা-ও পলায়ন করলো। জোরপূর্বক হেসে পকেট হতে মোবাইল বের করলো সে। ওদের উদ্দেশ্যে বললো,
” এক্সকিউজ মি। আমাকে একটা ইম্পর্ট্যান্ট কল অ্যাটেন্ড করতে হবে। ইউ গাইজ ক্যারি অন। ”
কাউকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে নি’ষ্ঠুর রমণীর পানে বিনা তাকিয়ে সেথা হতে প্রস্থান করলো নিশাদ। মেয়েটির চেহারায় ফুটে উঠলো ঘোর অমাবস্যা। যন্ত্রণা অনুভূত হলো বুকের মাঝে। তা অন্য কেউ লক্ষ্য করেনি বটে। তবে মনিকার দৃষ্টিগোচর হলো। সে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে রইল তৃষার পানে।
চলবে.