তোকেই ভালোবাসি পর্ব-২৪+২৫

0
1696

#তোকেই ভালোবাসি
#লেখক – তানভীর হৃদয় নীল
#পর্ব – ২৪

– নিচে এসে দেখি বড় আন্টি, আংকেল, আব্বু, আম্মু মেঝো মামা, ছোট্ট মামি পরিবারের সবাই দাঁড়িয়ে আছে। রাকিব নিচে এসে সবাইকে দেখে বললো,কী ব্যাপার মন্ত্রীর পরিবার সহ হঠাৎ আমাদের এখানে?

আন্টি – আমারা অনেক বড় ভুল করে ফেলেছি। আমাদের ক্ষমা করে দে বাবা।

আংকেল – আসলে আমারা তোদের বাসায় নিয়ে যেতে এসেছি।

আম্মু – বড় ভাইয়ার মৃত্যুতে আমরা সবাই ভেঙ্গে পড়েছিলাম। নুসরাত, ছোট্ট ভাইয়া, এবং পুলিশ অফিসারের কথা শুনে।আমরা মনে করেছি তোরা দুজনে ভাইয়াকে মেরে ফেলেছিস।

– কিন্তু আজকে সত্যিটা জানার পর নিজেকে খুব বড় অপরাধী মনে হচ্ছে। প্লীজ বাবা তোরা আমাদের ক্ষমা করে দে।আমরা তোদের বাসায় নিয়ে যেতে এসেছি। আমাদের সাথে বাসায় ফিরে চল।

তানিশা – ভাই আমাদের ক্ষমা করে দে। সেইদিন সত্যিটা না জেনে তোদেরকে অনেক কথা বলেছিলাম।

রোহান – রাকিব আমাদের ক্ষমা করে দে ভাই।আমরা যদি সত্যিটা জানতাম। তাহলে হয়তো আজকে তোদের এই অবস্থা হতো না।

রাকিব – কথা শেষ হলে এখান থেকে চলে যা। এখন এইসব শুনতে ভালো লাগছে না।

আব্বু – কী হলো তানভীর তুই কথা বলছিস না কেন? আমাদেরকে কী ক্ষমা করবি না?

আম্মু – প্লীজ বাবা আমাকে ক্ষমা করে দে। আমি তোর মা হয়েও তোকে চিনতে পারিনি।

– সেই দিন ছোট্ট ভাইয়ের কথা বিশ্বাস করে। তোদের সাথে অনেক বড় অন্যায় করে ফেলেছি।তোরা আমাকে ক্ষমা করে দে বাবা।(কাঁদতে কাঁদতে)

তানভীর – আরে ম্যাম আপনি কাঁদছেন কেন? আপনার চোখে পানি মোটেও মানাই না।আপানাদের কারো কোনো দোষ নেই।এইসব আমাদের ভাগ্যে ছিলো।

– ভাগ্যে না থাকলে একজন মা তার সন্তানকে কখনোই অবিশ্বাস করতেন না।দশ বছর আগে কী বলেছিলেন আমাদের।সব কিছু মনে আছে আমাদের। কিছুই ভুলে যাই নি।

রাকিব – আমরা তো আপনাদের সবার কাছে মৃত। তাহলে কেন এসেছে এখানে?

তানভীর – ছোট্ট বোনটাকেও বলে দিয়েছেন আমি মারা গেছি। একজন মানুষ বেঁচে থাকার পরেও যদি সে তার পরিবারের কাছে মারা যায়। তার চেয়ে দূর ভাগ্য আর কিছু হতে পারে না। যাদের মধ্যে দুজনেও আছি।

রাকিব – কিন্তু তাতে আমাদের কোনো দুঃখ নেই। দুঃখ একটাই আজ দশ বছর হয়ে গেলো। অথচ বড় মামার খুনির এখনও কোনো বিচার হয়নি।

আন্টি – বাবা তুই আমাকে ক্ষমা করে দে।(কাঁদতে কাঁদতে)

আব্বু – জানি আমরা অনেক বড় অপরাধ করে ফেলেছি। তবুও বলছি আমাদের ক্ষমা করে দিয়ে। প্লীজ তোরা বাসায় ফিরে চল।

– আম্মু আর আন্টি দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কাঁদছে। কোনো কথা বলছে না। এমন সময় রোহান ভাইয়া বললো,দেখ আম্মু কিভাবে কান্নাকাটি করছে। এমনিতেই আম্মুর শরীর ভালো না। প্লীজ ভাই বাসায় ফিরে চল।

রাকিব – সেটা কখনোই সম্ভব না।

আম্মু – তাহলে কি তোরা আমাদের সাথে বাসায় যাবি না?

তামিম – প্লীজ। আমাদের ক্ষমা করে দিয়ে। বাসায় ফিরে চল ভাই।

তানভীর – কারো প্রতি আমাদের কোনো অভিযোগ নেই। সেই জায়গা থেকে কাউকে ক্ষমা করার কোনো প্রশ্নই আসে না।এখান থেকে চলে গেলে খুশি হবো।

রোহান – আমাদেরকে তাড়িয়ে দিচ্ছিস?

রাকিব – বুঝতেই তো পাচ্ছিস। তাহলে এখনও এখানে দাঁড়িয়ে আছিস কেন?

– আর কিছু না বলে দুজনে উপরে রুমে চলে গেলাম। কিছুক্ষণ পর নুসরাত রুমে গিয়ে বললো, আজকে তোদের ফুপ্পিদের সাথে বাসায় চলে যাওয়া উচিত ছিলো।

তানভীর – তোকে এই বিষয়ে কিছু জিগ্গেস করেছি?(রেগে গিয়ে)

নুসরাত – বড় ফুপ্পির শরীর এমনিতেই বেশি ভালো না। ডাক্তার বলেছে ফুপ্পিকে সব সময় হাসিখুশি রাখার জন্য।এর আগে এক বার একবার হার্ট স্ট্রোক করে ছিলো।

– এখন যে অবস্থা এতে তো ফুপ্পির মানসিক চাপ আরো বেড়ে যাবে। ফুপ্পির যদি কিছু হয়ে যায়। তখন কী হবে?

তানভীর – তো আমি কী করবো? আমাকে এইসব বলছিস কেন?

নুসরাত – তুই কি করবি মানে? ফুপ্পি যদি মারা যায় তাতে ও তো কিছু হবে না?(কিছুটা রেগে)

তানভীর – না। কেউ মারা গেলেও আমার কিছু আসে যায় না।যে আমার কথা ভাবে না।আমি কেন তাদের কথা ভাববো?(রেগে গিয়ে)

নুসরাত – ঠাসস ঠাসসসস। কি বললি তুই?ফুপ্পি মারা গেলেও তোর কিছু আসে যায় না?(প্রচন্ডভাবে রেগে গিয়ে)

তানভীর – তুই আমার গাঁয়ে হাত তুললি?

নুসরাত – হে তুললাম। তুই শুধু তোর নিজের দিকটাই দেখলি। একবার নিজেকে ফুপ্পিদের জায়গায় দাঁড় করিয়ে দেখ। তাহলে বুঝতে পারবি কতোটা স্বার্থ পর তুই।

– এমন কোন দিন নেই যে বড় ফুপ্পি কিংবা ছোট্ট ফুপ্পি তোদের জন্য চোখের পানি ফেলে নি।সেটা আর কেউ না দেখলেও আমি নিজের চোখে দেখেছি। বড় ফুপ্পির আজকে এই অবস্থা কেন জানিস? শুধু মাত্র দুজনের কথা চিন্তা করে।

– ওনারা তখন ও সত্যিটা জানতেন না।যদি জানতে পারতো তাহলে কি করতো ভেবে দেখ?আর তুই কিনা বলছিস তারা তোদের কথা ভাবেনি?তোরা বড় আব্বুকে খুন করিস নি।সেটা তো কেউ তখন জানতো না।

– ছোট্ট চাচ্চু ওকিল দিয়ে মিথ্যা নাটক সাজিয়ে।আমাকে বিভিন্ন ভাবে ভয় দেখিয়ে। তোদের বিরুদ্ধে মিথ্যা কথা বলতে বাধ্য করছে। ছোট্ট চাচ্চু মিথ্যা নাটক সাজিয়ে আদালতে ও তোদেরকে অপরাধী হিসেবে প্রমাণ করেছে।

– চোখের সামনে যা দেখেছে যা শুনেছে পরিস্থিতির স্বীকার হয়ে। সেটা সবার সামনে বিশ্বাস করলেও।সবার আড়ালে লুকিয়ে ঠিকই।তোদের জন্য চোখের পানি ফেলেছে।

– শুধু মাত্র তোদের কথা চিন্তা করে। আজকে বড় ফুপ্পির এই অবস্থা। তোদের কথা যদি না চিন্তা করতো। তাহলে আজকে ফুপ্পির এই অবস্থা হতো না। আর তুই কী সহজ ভাবে কথাটা বলে ফেললি।

– ভুল তো মানুষেই করে। তাই বলে কী তাকে ক্ষমা করা হয় না?যদি ফুপ্পির কিছু হয়। নিজেকে তখন ক্ষমা করতে পারবি কী না ভেবে দেখেছিস?

– বলেই নুসরাত রাগ দেখিয়ে রুম থেকে চলে গেলো। কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে নুসরাতের বলা কথাগুলো ভাবতে লাগলাম। সন্ধ্যা সময় সাদে দাঁড়িয়ে আছি। এমন সময় একটা ফোন আসলো। ফোনটা রিসিভ করতেই ছোট্ট মামা বললো…………।

#চলবে

#তোকেই ভালোবাসি
#লেখক – তানভীর হৃদয় নীল
#পর্ব – ২৫

ছোট্ট মামা – তোর মা বাবা আর রাকিব দের বাঁচাতে চাইলে।এখুনি রায়হানের ফ্যাক্টরিতে চলে আয়। সাথে কোনো লোকজন নিয়ে আসবি না। তুই একা চলে আসবি।

তানভীর – মানে?(অনেকটা অবাক হয়ে)

ছোট্ট মামা – মানে খুব সোজা।তোর আব্বু আম্মুকে তুলে নিয়ে এসেছি‌। ওদের যদি জীবিত দেখতে চাস। তাহলে রায়হানের ফ্যাক্টরিতে চলে আয়।

– তোর বাসায় বাহিরে আমার লোক গাড়ি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। ওদের সাথে গাড়িতে উঠে চলে আয়। ভুলেও চালাকি করার চেষ্টা করিস না।

– আমি কিছু বলার আগেই বলেই ফোনটা কেটে দিলো। দৌড়ে সাদ থেকে নিচে এসে দেখি।ভাবি আর মামুন ভাই বসে গল্প করছে।আমাকে দেখেই ভাবি বললো,কী হয়েছে তোমার? এইভাবে দৌড়ে কোথায় থেকে চলে আসলে?

মামুন – কী হয়েছে ছোট্ট ভাই?

তানভীর – নুসরাত,রিয়া,রাকিব ওরা কোথায়?

নিশি – ওরা তো বিকালে ঘুরতে বের হয়েছে।বলেছে সন্ধ্যার আগে বাসায় চলে আসবে। কিন্তু এখনও বাসায় আসে নি।

তানভীর – কার কাছে বলে ওরা বাসা থেকে বের হয়েছে?(রেগে গিয়ে)

নিশি – তুমি এইভাবে রাগ করছো কেন?ওরা খুব তাড়াতাড়ি চলে আসবে।

তানভীর – কীভাবে চলে আসবে? ছোট্ট মামা আম্মু আব্বুকে সহ ওদের তুলে নিয়ে গেছে। বাহিরে লোক পাঠিয়েছে আমাকে নিয়ে যাওয়ার জন্য।না গেলে আব্বু আম্মুকে মেরে ফেলার হুমকি দিয়েছে। এখন কী করবো আমি?(প্রচন্ডভাবে রেগে গিয়ে)

নিশি – এইসব কি বলছো তুমি?(অবাক হয়ে)

মামুন – কোথায় যাওয়ার জন্য বলেছে?

তানভীর – রায়হানের কোনো এক ফ্যাক্টরিতে।আমি ঠিক চিনতে পারলাম না। বাহিরে চারজন লোক দাঁড়িয়ে আছে। ওদের সাথে যাওয়ার জন্য বলেছে।

মামুন – ঠিক আছে।তুমি কোনো চিন্তা করো না।তুমি ওদের সাথে যাও। আমি আমাদের লোকজন নিয়ে তোমাকে ফলো করছি।

– আর কোনো কথা না বলে বাহিরে চলে আসলাম। বাহিরে এসে দেখি গাড়ি নিয়ে চারজন লোক দাঁড়িয়ে আছে।আমি ওদের কাছে যাওয়ার পর।

– একজন এসে আমার হাত দুটো বেঁধে দিলো। আরেক জন এসে কালো কাপড় দিয়ে চোখ বেঁধে দিলো। কিছু বলার আগেই দু’জনে মিলে টেনে আমাকে গাড়ি তুললো।

– জানি এখন কিছু বলেও লাভ হবে না।তার চেয়ে চুপ থাকাটাই অনেক ভালো। কিছুক্ষন পর একটা জায়গায় নিয়ে গাড়ি থামলো।গাড়ি থামানোর পর ওরা আমাকে গাড়ি থেকে নামিয়ে। রুমে নিয়ে চোখের বাঁধন খুলে দিলো।

– চোখ খুলতেই সামনে তাকিয়ে হিয়াকে দেখে কিছুটা অবাক হয়ে গেলাম।হিয়াকে তো আমি লোকজন দিয়ে। ওর মামার বাসায় পৌঁছে দিয়েছিলাম। কিন্তু হিয়া এখানে আসলো কীভাবে?

– সাথেই রাকিব,রিয়া,আর নুসরাতকে চেয়ারের সাথে বেঁধে রেখেছে। ডান দিকে তাকিয়ে দেখি আব্বু,আম্মু,আংকেল, আন্টি,বড় মামি, তামিম ভাইয়া, তানিশা আপু আর রোহান ভাইয়াকে চেয়ারের সাথে বেঁধে রেখেছে।ওরা সবাই অবাক দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। মুখ বাধা থাকায় কারণে কেউ কথা বলতে পারছে না ঋ

– হঠাৎ ছোট্ট মামা বললো, তোর সাহস আর বুদ্ধি দেখে আমি অবাক হয়ে গেছি। তুই আর রাকিব রায়হাদেকে মেরে দোষ চাপিয়ে দিলি আমার উপর?

– এই একমাসে তোরা দুজনে আমার যে ক্ষতি করেছিস। সেটা দশ বছরে কেউ করতে পারে নি।যদি বুঝতে পারতাম জেল থেকে ফিরে এসে আমার পেছনে লেগে থাকবি। তাহলে দুইটাকে জেল থেকে বের হওয়ার সাথে সাথেই শেষ করে দিতাম। তাহলে হয়তো আজকে আমার এই দিন টা দেখতে হতো না।

– ভাইজানকে আমি নিজে হাতে খুন করেছিলাম।এই বুদ্ধিটা অবশ্যই রায়হান দিয়েছিলো। সাথে ওকিল ও আমাকে এই বিষয়ে অনেক সাহায্য করেছে।যেই বডিগার্ডকে দিয়ে নুসরাতকে ভয় দেখিয়ে মিথ্যা বলতে বাধ্য করে ছিলাম। তাকেও শেষ করে দিয়েছি গাড়ি চাপা দিয়ে।আর সেটাকে এক্সিডেন্ট বলে চালিয়ে দিয়েছিলাম।

– এই যে দেখতে পাচ্ছিস সাংবাদিকদের মেয়ে।যাকে তুই লোকজন দিয়ে সিলেটে পাঠিয়েছিলি। ওকেও এখানে নিয়ে এসেছি। শুধুমাত্র বোঝানোর জন্য আমার পিছনে লাগতে আসার ফল কতোটা ভয়ংকর।

– ওকে আজকে এখানেই শেষ করে দিবো।আর দোষ হবে তোদের দুজনের।শুধু ওকেই না সাথে তোর মা,বাবা,ভাই আর বোন কেও মেরে ফেলবো। অপরাধ করবো আমি।আর শান্তি পাবি তোরা।এবার ফাঁসির হাত থেকে কেউ বাঁচাতে পারবে না।(হাসতে হাসতে)

হিয়া – সেটা আর দ্বিতীয় বার পারবেন না।আমাকে এখানে তুলে এনে। বড্ড বেশী ভুল করে ফেলেছেন আসাদ চৌধুরী। আপনি নিজের কথাই নিজেই ফেঁসে গেলেন।

ছোট্ট মামা – তোর সাহস কি করে হয় আমাকে নাম ধরে ডাকার?(ধমক দিয়ে)

হিয়া – পেছনে টিভিটা অন করেন। তাহলেই বুঝতে পারবেন।(হাসতে হাসতে)

– হিয়ার কথা শুনে কিছুটা অবাক হয়ে গেলাম। সবচেয়ে বেশি অবাক হলেন ছোট্ট মামা। একজনকে বলার পর গিয়ে টিভিটা অন করলো।

– টিভি অন করতেই সবাই পুরো অবাক হয়ে গেলো। ছোট্ট মামা ভয় পেয়ে গেলেন। কেন না এতোক্ষণ ছোট্ট মামা যা যা বলছে টিভিতে পুরোটা দেখাচ্ছে।দেখে মনে হচ্ছে এখানে কোথাও গোপন ক্যামেরা আছে।

– হিয়া চেয়ারের মধ্যে বসে বসে হাসছে। হিয়ার হাসি আর কথা শুনে বোঝা যাচ্ছে এটা হিয়ার কাজ। হঠাৎ ছোট্ট মামা রেগে বললো, তোদের কাউকে ছাড়বো না আমি। সব কটাকে এখানেই শেষ করে দেবো। বলেই রিভাল বার হাতে নিলেন।

#চলবে