তোকে ঘিরে পর্ব-২০+২১

0
1215

#তোকে_ঘিরে❤
#পর্ব_২০
#ফাবিয়াহ্_মমো🍁

মানুষের জীবনে ভুলগুলো কি অদ্ভুত! কখনো এই ভুলগুলো আমাদের শিক্ষা দেয়। কখনো শিখিয়ে দেয় কিছু ভালো কথা। আমার এই একটি ভুলই যেনো ছিলো নতুন কিছুর শুরু। আমি পূর্বকে নতুন করে জানতে লাগলাম, বুঝতে শিখলাম, দেখতে অবগত হলাম। আমার জীবনটায় নেমে এলো পবিত্রময় বৃষ্টির মতো আনন্দ। পরদিন আমার ভার্সিটিতে সরকারি ছুটির দিন হিসেবে বন্ধ ছিলো। বলতে পারেন ‘অমর একুশে ফেব্রুয়ারি’। বাবা ফিরেছেন গতকাল রাতে। মা আজ সকাল থেকেই বাসাতে। রাতটুকু ঘুমাতে পারিনি শুধু ছটফট করে অনুতপ্তের বিষাদে উৎকন্ঠায় ভুগেছি। পূর্বকে আমি আসলেই বুঝতে পারিনি? রাত তিনটা বাজে যে সময়টুকু উনার কাছ থেকে ভিক্ষে চেয়েছিলাম তা কোনোভাবেই কল দিয়ে ফলাতে পারিনি। বারবার বুক ঠেলে দলা পাকিয়ে পূর্বের তীক্ষ্ম কথাটা চলে আসতো। ‘তুমি এখনো পূর্বকে বুঝতে পারলে না…আফসোস!’ কি ধারালো সূঁচের মতো কথা। আচ্ছা? আমি কি সত্যি একসেস করে ফেলছি? উনার উপর জোর জুলুম করছি? আমি তো ভালো নেই। আমি যে আপনার দূরত্বময় গুমগুলো মেনে নিতে পারিনা, রাজিবের বন্ধুময় মুখোশের আড়ালে হিংস্ররূপটা ভাবতে পারিনা, মায়ের একের পর এক উদ্ভট চাপ! আমি কি নিজেই সুস্থ আছি? এটুকু সত্য…আমি ডিপ্রেশনে ভুগছি। লং টার্মের ডিপ্রেশনে ডুবে থাকা এক অদ্ভুত ভুক্তভোগী।

সকালে নিজের টিশার্টটা পাল্টে মুখহাত ধুয়ে ড্রয়িংরুমে গিয়ে দাড়ালে নিজের অস্তিত্বের উপর অবাক লাগে! এ আমি কি দেখছি? সকাল সকাল ভুল দেখছি নাতো? ড্রয়িংরুমের লম্বা সোফায় আয়েশী স্টাইলে বসে আছেন পূর্ব। পূর্বের ডানপাশে হাসিমুখে কথা বলছেন এক ভদ্রলোক। বয়স পন্ঞ্চাশের কৌঠা পেরিয়ে গেলেও পোশাক আশাকে এখনো বেশ আধুনিকতা। বামপাশে বসে আছেন সুন্দর চেহারার একজন ভদ্রমহিলা। যার পড়নে জামদানীর নীল শাড়ি, গলায় ছোট্ট পাথরের পকেট, মাথায় খোপা, কানে ছোট ম্যাচিং দুল। আমি লক্ষ করলাম এই ভদ্রমহিলার ঠোঁটদুটো পুরো পূর্বের ঠোঁটগুলোর ফুল কপি! মানে পূর্ব উনার মায়ের মতোই ঠোঁটজোড়া পেয়েছেন। উনি সাদা শার্ট গায়ে, কালো প্যান্ট পরেছেন। শার্ট ইন করা, কোমরে বেল্ট, হাতা এখনো ফোল্ড করেননি। ফ্লোল্ড না করাই থাকুক! উনার সাদা শার্টের সাথে হাতের ছোট্ট পশমগুলো দেখলে আমি সিরিয়াসলি কঠিন অসুখে ভুগবো।বাবা কি সুন্দর আড্ডা জমিয়ে কথা বলছেন যেন কতোদিনের পরিচয়!! মা খুব গম্ভীর করে আছেন এখনো। আমাকে দেখে পূর্বের মা হেসে হেসে বললেন,

– এই পূর্ণতা? দূরে কি? এখানে আসো।

কি সহজ ডাক! উনি কি আমাকে চেনেন? পূর্ব আমার দিকে একঝলকও তাকাননি। চা খেতে ব্যস্ত উনি। আমি বোকা বোকা চাহনিতে উনার সামনে যেয়ে দাড়ালে উনি আমার হাত ধরে উনার পাশে বসতে বলেন। এদিকে পূর্বের বাবা দুদন্ড আমার দিকে তাকিয়ে বলে উঠলেন,

– যদি কিছু মনে না কিছু কোয়েশ্চান করতে পারি?
আমি জড়তা চেপে সৌজন্যমূলক হাসিতে বলে উঠলাম,
– জ্বী,
উনি পূর্বের দিকে একবার তাকিয়ে এরপর আমার দিকে দৃষ্টি স্থির রেখে বলে উঠলেন,

– এই বদমাইশের মধ্যে কি দেখেছো মা? এই বদমাইশ কি কোনোভাবে তোমাকে চাপে রেখেছে বিয়ের জন্য? কিছু হলে আমায় নিসঙ্কোচে বলো।

ইয়া আল্লাহ্…উনি সবার সামনেই অতো বড় দামড়া ছেলেকে অপমান করে কথা বললেন? পূর্ব খুবই শান্ত ভঙ্গিতে চা খাচ্ছেন যেনো কিছুই হয়নি। আমারই তো রাগ লাগছে উনার অপমান দেখে! আশ্চর্য? উনি চুপ করে আছেন কিভাবে? পাশ থেকে আমার শ্রদ্ধেয় মা জননী ফোড়ন কেটে বললেন,

– ভাইজান দেখুন, আমি নিজেও জানিনা কি থেকে কি হচ্ছে। গ্রাম থেকে ফেরার পর পরই মেয়েটা উল্টাসিধা কাজ করছে। ও কখনোই..
– এই অপদার্থটা কালোজাদু শিখলো কিনা বুঝতে পারছিনা। আপনার মেয়েকে…

আমি বিরক্ত হয়েও নিজেকে যথাসম্ভব শান্ত ভঙ্গিতে আগলে রেখে বললাম,

– আমি এডাল্ট আঙ্কেল। নাবালিকা হলে অন্য হিসাব হতো। উনি কখনোই আমাকে কোনোরূপ প্রেশার দেননি। বরং..

এবার পূর্ব গলা ঝেড়ে কেশে উঠলেন। আমার উপস্থিত বক্তব্যে উনি ফুলস্টপ লাগিয়ে পরিস্কার গলায় বলে উঠলেন,

– আব্বু ঝগড়াটা বাসার জন্য তোলা থাক? এখন মোদ্দাকথায় আসো। আমার হাতে সময় কম। যেতে হবে।

পূর্বের কথায় আঙ্কেলটার মুখ করুণ হলেও উনি নিজেকে দমিয়ে বাবার দিকে মুখ ঘুরিয়ে বললেন,
– ভাইসাব, আপনার বাড়ির সম্বলটাকে আমার বাড়ির রাজত্ব দিতে চাই। আপনি কি মন্জুর করবেন?

বাবা হাসিমুখ করে কিছু বলবেন মা ফট করে বলে উঠলেন,
– আপনাদের ছেলের এ্যাজটা জানা যাবে? যদি কোনো আপত্তি না থাকে?
– ছিঃ ছিঃ আপত্তি কিসের? ও উনত্রিশের কৌঠায় পা দিয়েছে।

কি বলে? উনি না বলেছিলেন টুয়েন্টিফাইভ? আমি তো উনাকে পচিঁশ-ই ভাবতাম! উনার এতো বেশি বয়স? বাবা দেখি খুশিতে গদগদ হয়ে মাকে পরোয়া না করে বিয়েতে মত দিলেন। মা ইনিয়ে বিনিয়ে পূর্বকে হেট করার মতো শত কথা বললেও উনিও খুবই চমৎকার ভাবে মা-কে ট্যাকেল দিলেন। মা বলে উঠলেন,

– এ্যাই ছেলে? তুমি কি বেকার না? আয় রোজকার করো কিছু?
উনিও ঠাস করে মুচকি হাসিতে বলে উঠলেন,
– আমার আকিকা হয়েছে আন্টি। পূর্ব — নামটা বলতে পারেন। আমি বেকার নই। আব্বুর ব্যবসাটায় লালবাতি জ্বলে উঠলে তখন রংধনুর সাতটি রং বানাতে লেগে পরি।

কি জম্পেশ উত্তর! লাজাবাব পূর্ব! টাইট হাগ দিতে ইচ্ছে করছে! মায়ের মুখটা পটকার মতো কুনো করে দিয়েছেন! উফফ!
সবকিছু পাকাপাকি করে আমাকে আংন্টি পড়িয়ে ডেট ফিক্স করলেন আগামী সপ্তাহের শুক্রবার বিকেল চার ঘটিকায়।। বিয়েটা হবে গ্রামের বাড়িতে। শুধু দুই পরিবারের মানুষের সামনে। পূর্ব একটা জিনিস দারুন ভাবে সামলেছেন তা হলো, এই শহরের আশেপাশে কেউই আমাদের বিয়ে সম্বন্ধে জানেনা। জানবে শুধু দুই পরিবার। উনাদের বিদায়ের বেলায় সবাই যখন উঠবে তখন পূর্ব হুট করে আবদার জুড়ে দিলেন, ‘আমি কিছু গুরুত্বপূর্ণ কথা সেড়ে ফেলতে চাই।’ বাবা খটমট ভঙ্গিতে আমাকে আদেশ দিলেন উনাকে রুমে নিয়ে কথা সেড়ে ফেলতে।

পূর্ণতা বাবার আদেশসূচকে পূর্বকে নিয়ে ওর রুমে ঢুকলে পূর্ব দরজার ছিটকিনি লাগিয়ে দেয়। পূর্ণতা ভেবেছিলো বারান্দায় যেয়ে নিরিবিলি আলাপ সারবে কিন্তু পেছন থেকে দরজা লাগানোর শব্দ শুনে মাথা ঘুরিয়ে দেখে পূর্ব চুপচাপ দরজায় পিঠ লাগিয়ে হেলান দিয়ে দাড়িয়ে আছে। পূর্ণতা কৌতুহলমিশ্রিত কন্ঠে বলে উঠে,

– কি ব্যাপার? দরজা লাগালেন যে?
– কাছে আসো।, পূর্বের নেশাময় ঠান্ডা কন্ঠ!

পূর্ণতা এগিয়ে যেতেই পূর্ব মাথাটা পূর্ণতার দিকে খানিক নুয়ে তপ্ত একটা নিশ্বাস ওর মুখের উপর ছেড়ে বলে উঠে,

– কালরাতে কল না করার শাস্তি দিবো?

পূর্ণতা বড় বড় স্নেহকাড়া চোখ দিয়ে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে থাকলে পূর্ব চোখবন্ধ করে পূর্ণতার নাকে নাক লাগিয়ে বলে উঠে,
– আমাকে জ্বালানির মতো জ্বালাচ্ছো পূর্ণতা। বিয়েটা এখন করে ফেললে কিছু হবে? চলো না বিয়েটা করে একটু প্রেম করি।

পূর্ণতা অবাক হচ্ছে পূর্বের এখনকার অবস্থা দেখে! কাল দুপুরে কত কি না শোনালো! এখন আবার বিয়ের জন্য পীড়াপীড়ি করছে? পূর্ণতার মাথায় পূর্বের বয়সের ছকটা চাপতেই বলে উঠলো,

– আপনি উনত্রিশ একথা বলেন নি কেন?
পূর্ব পূর্ণতার দুকানে হাত রেখে নাকে নাক ঘষে বললো,

– তুমি বলতে, ‘আপনি কি টোয়েন্টি ফাইভ?’ আমি উত্তর দিতাম, প্লাস ফ্লোর। উত্তর বুঝোনি। দোষ কার?
– আপনি আমার চেয়ে এতো বড়?
– তো? প্রবলেম? বিয়ে ভেঙ্গে দিবো?

পূর্ব ঝটপট পূর্ণতাকে ছেড়ে দিয়ে দূরে দাড় করালো। পূর্ণতা কখনোই এই পূর্ব নামক জীবটাকে বুঝতে পারবেনা! কি থেকে কি করে উপরওয়ালাই ভালো জানে! পূর্ব শার্টের হাতার বোতাম খুলে সেটাকে ভাঁজ করে কনুইয়ের কাছে গুজলো। পূর্বের উজ্জ্বল হাতের ছোট ছোট লোমগুলো লোভনীয় ঠেকছে! পূর্ণতা দুদফা ঢোক গিলে হাতের তালু শক্ত করে মুঠো করলো। পূর্ব প্যান্টের পকেট থেকে একটা ভাজঁ করা কাগজ বের করলো। অপর পকেট থেকে একটা কলম নিয়ে কলমের মাথায় টিপ দিয়ে পূর্ণতার দিকে এগিয়ে বললো,

– কাগজটার কিছু না দেখেই টুপ করে সাইন করে দেওতো! প্লিজ তাড়াতাড়ি করো!

পূর্ণতা হতভাগার মতো তাকিয়ে পূর্বের হাত থেকে কাগজ, কলম নিয়ে দেয়ালের উপর কাগজ মেলে সাইন করতে যেয়েও করলো না। পাশ থেকে পূর্ব তাগাদার সুরে বলে উঠলো,

– এ্যাই? দেরি করছো কেন? আমায় বিশ্বাস করতে পারছো না? দেখি কাগজ ফেরত দাও। সাইন করতে হবেনা।
– না না না…আমি করছি। করছি।

পূর্ণতা কাগজের শিরোনামটুকুও দেখলো না। চোখ না বুলিয়ে ফটাফট সাইনের খালি জায়গায় কলম ঘুরিয়ে সাইন করে দিলো। সাইন শেষ হতেই পূর্ব খপ করে কাগজটা টান মেরে পূর্ণতার কোমর জড়িয়ে কাছে আনলো! পূর্ণতা বিষ্ময় দৃষ্টিতে উদ্বিগ্ন হয়ে বলে উঠে,

– বাইরে সবাই!! এভাবে ধরলেন যে? ছাড়ুন ছাড়ুন!!

পূর্ব পূর্ণতাকে দেয়ালে ঠেকিয়ে পূর্ণতার কোমর বাঁহাতে জড়িয়ে ধরলো! পূর্ণতা অবাক হয়ে আছে পূর্বের কান্ডকীর্তিতে! কালই না লিমিটেশান নিয়ে একবস্তা লেকচার শোনালো? এখন কি করছে ও? পূর্ব উদ্ভান্তের মতো ডানহাতে পূর্ণতার চুলে মুঠো করে ঠোঁটে ঠোঁট ডুবিয়ে দেয়! পূর্ণতার নিশ্বাস আটকে আসলো আকষ্মিক ঘটনায়! চোখগুলো এমন বড় করলো যেন অক্ষিগোলক থেকে এক্ষুনি বেরিয়ে পরবে পূর্ণতার! পূর্ব চোখ বন্ধ করে আছে! এতোদিনের নিয়ন্ত্রণ, আবেগ, অনুভূতি, মায়া, ভালোবাসা, কাতরতা! সব একত্র করে যেনো উজাড় করছে প্রিয় মানুষটার মিষ্টিস্পর্শে! সময় কি আজও দুরপাল্লা বাসের মতো পাল্লা দিয়ে পালাবে? সময় কতো নিষ্ঠুর! এই সময় কি ধরে রাখা যায় না?তবে আনন্দে সানন্দে একটা গান যেনো ভেসে ভেসে আসছে, ‘আমার ভেতর ও বাহিরে অন্তরে অন্তরে আছো তুমি এ হৃদয় জুড়ে…’ আচ্ছা?রোমান্ঞ্চকর মূহুর্তে কি প্রকৃতিও রোমান্টিক হয়ে বাতাসে প্রিয় গান ছেড়ে দেয়? নাকি মনের ভ্রম?

পূর্ব পূর্ণতাকে ছেড়ে দেয়। নাকে নাক লাগিয়ে চোখদুটো বন্ধ করে আছে। দেয়ালে দুহাত রেখে পূর্ণতাকে মাঝখানে বন্দি করেছে। পূর্ণতা প্রথম থেকে শেষ পযর্ন্ত বিষ্ময়ের আবেশে চোখের চাহনি এখনো স্বাভাবিক করতে পারেনি। এই মানুষটার একটা স্পর্শ পাওয়ার জন্য কতো লোভী হয়ে যেতো!এই মানুষটাকে নিয়ে রীতিমতো কল্পনার জগতে বিচরন করতো! মানুষটার সঙ্গ পাওয়ার জন্য মন ব্যাকুল হয়ে আনচান করে উঠতো! পূর্ণতা স্নিগ্ধ চাহনিতে পূর্বের সুন্দর চোখ দুটো দেখছে। এই চাহনি দেখেই তো ঘায়েল হয়েছিলো পূর্ণতা! পূর্ণতা ঠান্ডা স্বরে বলে উঠে,

– কি করলে পূর্ব? বিয়ের আগেই তোমার কমিটমেন্ট ব্রেক করলে?
পূর্ব আলতো করে পূর্ণতার নাকে নাক ঘষে বলে উঠে,
– আমার ওয়াইফকে চুমু দিয়েছি। শাট আপ!
– বিয়ে যে এখনো হয়নি,

পূর্ব চোখ খুলে পূর্ণতার গালে নিজের দাড়ি ঘষে বলে উঠে,
– একটু আদর করো।
– তোমার কি মাথা খারাপ হয়ে গেছে?
– তুমি করেই ডাকো। ভালো লাগছে। দরকারি কাজে জেলার বাইরে যাবো। রাতে কল ধরতে পাবো না মেবি।

পূর্ণতা পূর্বকে ধাক্কা দেওয়ার সাহস পেলো না তার আগেই পূর্ব ওর কপালে ঠোট ছুঁয়িয়ে ওকে ছেড়ে দিয়ে দরজার ছিটকিনিতে হাত দেয়। দরজা খুলে বাইরে পা দিবে হঠাৎ মাথা ঘুরিয়ে বলে উঠে,

– বিয়ে করেই তোমাকে ছুঁয়েছি পূর্ণ। কাগজটা রেজিস্ট্রি পেপার ছিলো। আল্লাহ্ হাফেজ।

.

– শার্টটা তো অন্তত ঠিকঠাক মতো ছুড়ে মার! এগুলা কি? উফফ! তোর জ্বালায় আমি আর বাচিঁ না পূর্ব!

পূর্ব কোমরের বেল্ট খুলতে খুলতে বলে উঠে,
– আপি? টাওয়ালটা ওয়াশরুমে রেখে দেতো।
– কেন রে? আমি তোর চাকর? তোর কি দেখে যে ওই মিষ্টির মতো মেয়েটা প্রেমে ফাসলো!

পূর্ব এককান দিয়ে ঢুকিয়ে অপর কান দিয়ে বের করছে। এসব ফালতু মার্কা কথার পেছনে লজিক বসিয়ে সময় নষ্ট করতে চায়না। আজ ওকে জরুরী কাজে গাজীপুর যেতে হবে। দলের প্রধান সভাপতি খুবই স্ট্রিক্টলি নির্দেশ দিয়েছেন আজকের মধ্যে উপস্থিত হতে। বায় এনি চান্স যদি উনিশ টু বিশ হয়ে যায়, পূর্বের উপর কাজের চাপ বাড়তে পারে রীতিমতো। সামনের সপ্তাহে বিয়ের আয়োজন। কত কাজ পরে আছে! পূর্ব ওয়াশরুমে ঢুকে শাওয়ার ছেড়ে দিতেই পূর্বিকা এসে দরজা ধাক্কাতে লাগলো,

– এই বজ্জাতটা? দরজা খোল। তোর তলব থেকে কল এসেছে।

পূর্ব দরজা একটু ফাকঁ করে ভেজা হাত দিয়ে পূর্বিকার কাছ থেকে ফোন নিয়ে কল রিসিভ করে। একটা বাজখাই গলার মতো ভীষন চটচটে কন্ঠে কেউ বলে উঠলো,

– পূর্ব? শুনলাম তুমি নাকি গাজীপুরে রওনা দিবে। তা এক কাজ করো না? এখানে এসে একবার কথা বলে যাও। চা পানির আড্ডা দিলাম আরকি।

পূর্ব বিরক্ত গলায় বললো,
– কথা শেষ হয়েছে? আমি রাখবো?
– আহা! তোমার এই রাগের জন্যই তো তোমাকে আমার ভীষন ভালো লাগে। বয়স অল্প অথচ দেখো কি দারুন দক্ষতা!
– দেখুন চ্যাটার্জী মশাই, আমি আগেও বলেছি এখনো বলছি। আপনি আমার মগজধোলাই করার চেষ্টা করবেন না। একবার ভুলপথে গিয়েছি আর না। আমি আপনার দলের সাথে কাজ করতে চাই না।
– দেশের মানুষগুলো অন্নকষ্টে ভুগবে তা তুমি চাও? চাষীদের পায়ের তলায় পিষে ন্যায্য অধিকার হরণ করে যেভাবে দানবের মতো শোষকশ্রেনি ফুলে ফেঁপে উঠছে তা তুমি চাও? তুমি বিপ্লব দ্বারায় যুক্ত হচ্ছো না কেন? তোমার মতো কমরেড পেয়ে এদেশ, এদেশের মানুষ, সমাজ সবাই উপকৃত হবে। মানুষের জন্য যুদ্ধ করার মতো যোদ্ধা খুব কমই জন্মায় পূর্ব। মানুষের জন্য নিবেদিত প্রাণ সবাই হতে পারেনা। তুমি নিশ্চয়ই চাইবে না পরবর্তী প্রজন্ম ধণী-গরিবের বৈষম্যমূলক প্রতিযোগীতায় নিজেদের আকৃষ্ট করুক…

ফোনের ওপাশ থেকে টুট টুট করে শব্দ হতে থাকে। রামচন্দ্র চ্যাটার্জী স্ক্রিনে তাকিয়ে জানালা দিয়ে বিরক্তমুখে একদলা থুথু ফেললেন। পূর্বকে আজও এইপথে ঘুরানো গেলো না। ‘সোজা আঙ্গুলে ঘি না উঠলে আঙ্গুল বাঁকাতে হয়’ – এদিকে চ্যাটার্জী মশাই প্রবাদবাক্যটা উল্টো ঘুরিয়ে ভেবে নিলেন, ‘সোজা আঙ্গুলে ঘি না উঠলে আঙ্গুল পুরোপুরি ভেঙ্গে দিতে হয়’ ! চ্যাটার্জী মশাই ইজিচেয়ারে হেলান দিয়ে খুবই বিশ্রী ভাবে হাসতে থাকেন। এই বিদঘুটে হাসি কি কোনো অমঙ্গল কালের সংবাদ নিয়ে আসবে? কে জানে? পূর্বের জীবনে এখনো কি কি আসা বাকি আছে…

পূর্ব গোসল সেরে আয়নার সামনে সাদা পান্জাবী গায়ে দিচ্ছে। পান্জাবীর বুকের বোতামগুলো এখনো খোলা। চুল থেকে টপটপ পানি পরছে। এলোথেলো হয়ে কপালের উপর এবড়ে থেবড়ে ছেয়ে আছে। পান্জাবীর হাতা চটপট গুটিয়ে এক হাতে চুল পেছনে ঠেলে ড্রেসিং টেবিলের উপর থেকে চামড়ার কালো ঘড়িটা হাতে পরলো। পারফিউশন নিয়ে হালকা একটু ঝাঁকিয়ে প্রোফেশনালদের মতো স্প্রে করলো শরীরে।গ্যাবার্ডিন প্যান্টটা ঠিক করে পকেটে মোবাইল ঢুকিয়ে নিলো। ভেজা চুলগুলোকে ব্রাশ করে পান্জাবীর বোতাম লাগাতেই মনে করলো, ইশশ! পূর্ণতা যদি নরম হাত দিয়ে বোতামগুলো লাগিয়ে দিতো! এই সুযোগে পূর্ণতাকে আদর করতে পারতো। পূর্ব আয়নায় তাকিয়ে ঠোঁট চেপে মুচকি হাসলো। নিজের প্রতিচ্ছবিতে তাকিয়ে বললো,

– তোমাকে খুব দ্রুত আনছি পূর্ণ। তোমার লজ্জামাখা মুখটা দেখার জন্য আ’ম ডেসপারেটলি ওয়েটিং..

.

পূর্ণতা খুবই অস্থির হয়ে উঠছে! পূর্ব আজ জেলা ছেড়ে দূরে যাবে? কেনো যাবে? আবার রাতেও বলছে ফোন করতে পারবেনা? পূর্ণতা কিছুই ভাবতে পারছেনা।রুমের মধ্যে ছটফট করে পায়চারি করছে। বাবার কাছ থেকে পূর্বের বাসার ঠিকানা নিয়ে একবার দেখা করবে? প্রচুর দেখা করতে ইচ্ছে করছে। পূর্ণতা আগেপিছে না ভেবে দ্রুত বাবার রুমে ঢুকে বলে উঠলো,

– বাবা? একটা ফরমাশ ছিলো পূরণ করবে?

পূর্ণতার বাবা বিছানায় বসে ল্যাপটপ কোলে চশমা চোখে বলে উঠলেন,

– বল মা, কিছু দরকার? টাকা নিবি?
– না না টাকা দিও না। আমাকে একটা চিরকুটে পূর্বের বাসার ঠিকানাটা লিখে দাও না? খুব দরকার ছিলো।
– ও তোকে ফোন নাম্বার দেয়নি? কালই তোর মায়ের সাথে হাসপাতালে গিয়ে দেখা করছে বুঝলি? ছেলেটা খুব চুপচাপ কিন্তু চটপটে। আমার হেব্বি লেগেছে। নে এইযে ঠিকানা লিখে দিয়েছি।
– আচ্ছা বাবা আমি আসি। মাকে দেখে নিও।

পূর্ণতা গলায় ওড়না পেচিয়ে বাসার সাদামাটা সালোয়ার কামিজে বেরিয়ে পরে। বাবার গাড়িটা থাকা সত্ত্বেও ও সিএনজি করে পূর্বের বাসার ফটকের সামনে দাড়ায়। সুউচ্চ বড় গেট, চারতলা নকশাকার ভবন, ভেতরে বেশ খালি জায়গা আছে, একপাশে বাগানের মেলা, অপরদিকে কয়েকটা গাড়ি পার্ক করা। দারোয়ান পূর্ণতাকে উকিঝুকি করতে দেখে তেজালো গলায় বলে উঠলো,

– এই মাইয়া! এইখানে কি! যা বলছি! যা!

পূর্ণতা শান্তকন্ঠে বলে উঠে,
– আঙ্কেল একটু গেটটা খুলে দিন না? আমি এ বাড়ির বড় ছেলের সাথে দেখা করতে বনানী থেকে এসেছি। খুব দরকার..
– পূর্ব বাবার কথা কন? হেয় নাই। গেছে গা।
– মিথ্যা বলছেন কেন? ওইতো উনার গাড়ি পার্ক করা! ফাজলামো করছেন? আমাকে ভেতরে আসতে দিন।
– শরম লজ্জা নাই দেখি, ওই মাইয়া?বাপ মা এডি শিখায় তোরে? বড়লোকের পোলা দেখলে শরীর কামড়ায়?

লোকটার অশ্রাব্য ভাষা শুনে পূর্ণতার শরীর রাগে গজগজ করছিলো! শক্ত হয়ে দাড়িয়ে থাকতে দেখে দারোয়ানটা আবার চেচিয়ে বলে,

– ছিহ্..কি বেশশরম মাইয়া!অহনো দাড়ায়া আছে দি! ওই? যাইতে কইছি না? বাপ- মা কেন যে এডিরে জন্ম দেয়…জন্মানোর সাথেসাথেই বালিশ চাপা দেওন উচিত।

পূর্ণতা অটল হয়ে দাড়িয়ে থাকলেও চোখের ভেতর কান্নার সমুদ্র টলটল করছিলো। পূর্ণতাকে চিনে না বলে এভাবে তিরস্কারপূর্ণ কথাবার্তা বলবে? মা-বাবা তুলে এই শ্রুতিকটু কথা শোনাবে? পূর্ণতা দাঁতে দাতঁ চেপে কান্না আটকানোর চেষ্টা করেও আটকাতে পারছেনা।

পূর্বের ভেজা টাওয়েল নেড়ে দেওয়ার জন্য পূর্বিকা বারান্দায় কর্মরত। বাসায় এতোগুলো চাকর থাকা সত্ত্বেও পূর্বিকার করতে হচ্ছে। পূর্বের কঠোর নির্দেশ! মা এবং আপি ব্যতিত অন্যকেউ ওর জিনিসে হাত দিবেনা। পূর্বিকা টাওয়েল মেলে কি মনে করে বারান্দা দিয়ে নিচে তাকালো ওমনেই কপাল ভয়ংকর কুচকে দৌড়ে নিচে নামলো!পূর্ব তখন ডাইনিং টেবিলে খাচ্ছিলো পূর্বিকাকে উন্মাদের মতো সিড়ি ভেঙ্গে নামতে দেখে বলে উঠলো,

– আপি? কুত্তার মতো নামছিস কেন?

পূর্বিকা দৌড়ে এসে পূর্বের কাছে হাফাতে হাফাতে বলে উঠলো,

– বাইরে বাইরে
– বাইরে — এরপর কি?
– বাইরে তোর পূর্ণতাকে দেখেছি।

পূর্ব পূর্ণতার নাম শুনতেই খাবারের প্লেটে হাত ধুয়ে টেবিল থেকে টিস্যু নিয়ে হাত মুছতে মুছতে ধুপধাপ দৌড়ে বাইরে যায়। এদিকে সায়মা রান্নাঘর থেকে পূর্বের দৌড় দেখে রান্নাঘর থেকেই বলে উঠে,

– পূর্বি আপু? পূর্ব ওভাবে খাওয়া ছেড়ে দৌড়ালো কেন?

পূর্বিকা বিরক্ত হয়ে বলে উঠলো,
– তুই লেমনেড বানাতে গিয়েছিস ওখানেই বিজি থাক! ওর দিকে তদারকি কেন?

পূর্ব বাইরে এসে দেখে পূর্ণতা গেটের বাইরে দাড়িয়ে আছে! চোখ থেকে যেকোনো মূহুর্তে কান্না জলের বন্যা বইবে! পূর্ব দারোয়ানকে তোয়াক্কা না করে নিজেই গেট খুলতে নিলে দারোয়ান তোষামোদ কন্ঠে বলে উঠে,

– পূর্ব বাবা, ছি ছি কি করতাছেন? আমি খুলি। আপনে যান।

পূর্ব রক্তিম চোখে তাকায়! দারোয়ান হাসিমুখ পাল্টে কাচুমাচু করতে করতে পিছিয়ে যায়। পূর্ব গেট খুলে পূর্ণতার পিছনে এদিক ওদিক দেখে জিজ্ঞাসু কন্ঠে বলে উঠে,

– তুমি একা এসেছো কেন? পাগল তুমি?

পূর্ণতার হাত ধরে ভেতরে নিয়ে যায় পূর্ব। যেতেই তীক্ষ্ণ গলায় দারোয়ানের দিকে বলে উঠে,
– মামা? আজকে তোমায় ছাড়ছি না…
দারোয়ান পারেনা এক্ষুনি পূর্ণতার পা পরে।।

বাসার সবাই দুপুরের খাবার খেয়ে যে যার যার রুমে ব্যস্ত। পূর্বিকা সায়মাকে রান্নাঘরে ব্যস্ত রেখেছে। এই মেয়ে পূর্ণতাকে শুরু থেকেই দেখতে পারেনা। এক নাম্বার ছেচ্চর!পূর্ব পূর্ণতাকে নিজের রুমে এনে দরজা লাগিয়ে বিছানায় বসতে বলে। পূর্ব কাঁচের ট্রান্সপারেন্ট জগ থেকে পানি ঢেলে পূর্ণতার সামনে গ্লাস নিয়ে দাড়ালে পূর্ণতা জাপটে ধরে কেদেঁ দেয়। গ্লাস কেপে পানি ছিটকে পূর্বের হাত ভিজে কিছু পানি ফ্লোরে পরে। পূর্ব একহাতে গ্লাসটা ধরে অপর হাতে পূর্ণতার মাথায় হাত রেখে বলে উঠে,

– পাকনামো না করলে ভালো লাগেনা? একা আসতে গিয়েছো কেন? যদি কিছু হতো?

পূর্ণতা ওর পিঠের পান্জাবী আকড়ে কান্নাসুরে বলে উঠে,
– আমি তোমাকে দেখতে এসে বেশশরম হয়ে গেছি?
– ছি! কি যা তা বলছো? এই দেখি কি হয়েছে। ছাড়ো দেখি।

পূর্ব হাত এগিয়ে টেবিলের উপর গ্লাস রেখে পূর্ণতাকে নিজের থেকে ছাড়িয়ে বলে উঠে,

– শরীরে তো কিছুই নাই। কান্না করার এনার্জী আসে কোত্থেকে? কে তোমাকে বেশশরম বললো?
– দারোয়ান।
– বেটাকে… দেখি কেঁদো না। চুপ করো। আমি দশমিনিটের মধ্যেই বেরুবো। ইশ আবার কাঁদে কেন!!

পূর্ব ভালো করে ওর চোখ মুছিয়ে বিছানায় বসে পূর্ণতাকে কোলে বসায়। পূর্বের মাথায় চট করে একটা বুদ্ধি চাপতেই পান্জাবীর বোতামগুলো সব খুলে বলে উঠে,

– এই বোতামগুলো লাগিয়ে দাও তো। পাশাপাশি একটু আদর করে দাও। নতুন বউ হয়েছো। স্বামীর যত্ন আত্তি করা তোমার জন্য ফরজ! হু স্টার্ট করো।

পূর্ণতা চুপচাপ শান্তশিষ্ট মেয়ের মতো পান্জাবীর বোতামে হাত রাখলে হঠাৎ পূর্ব ওর হাত চেপে ধরে। পান্জাবী টেনে ফর্সা বুকের বাঁ পাশটায় খানিকটা উন্মুক্ত করে পূর্ব স্নিগ্ধ কোমল কন্ঠে অনুনয়ের সুরে বলে উঠে,

– এদিকটায় পুড়ছে। একটু কাছে এসে ছুঁয়ে দাও না!!

– ‘ চলবে ‘

#তোকে_ঘিরে❤
#পর্ব_২১
#ফাবিয়াহ্_মমো🍁

পান্জাবী টেনে ফর্সা বুকের বাঁ পাশে খানিকটা উন্মুক্ত করে পূর্ব স্নিগ্ধ কোমল কন্ঠে অনুনয়ের সুরে বলে উঠে,

– এদিকটায় পুড়ছে। একটু কাছে এসে ছুঁয়ে দাও না!!

পূর্ণতা পিটপিট করে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে পূর্বের বুকে চুমু দিয়ে দেয়। পূর্ব আবেশে চোখ বন্ধ করে পূর্ণতাকে জাপটে ধরে। মাথায় হাত বুলিয়ে বলে উঠে,

– পূর্ণ..
– হু,
– আমার একটা শেষ ইচ্ছা আছে, পূরন করবে?
ঝট করে বুক থেকে মাথা তুলে পূর্বের দিকে তাকায় পূর্ণতা।শেষ ইচ্ছা মানে? পূর্ণতা অস্থির হয়ে উঠে পূর্বের আজগুবি কথায়! পূর্বের দুগালে হাত রেখে প্রচণ্ড ছটফট ভঙ্গিতে বলে উঠে,

– কি বলছো? এগুলো বলো না!! ইয়া খোদা!! প্লিজ পূর্ব! আমি মরে যাবো!

পূর্ব মৃদ্যূ হেসে অস্থির পূর্ণতার মাথায় হাত রাখে। অপর হাতে পূর্ণতার গলা জড়িয়ে শান্ত কন্ঠে বলে উঠে,

– তুমি যার প্রেমে পরেছো সে-তো অনিশ্চিত, অনিয়ম, অনিমেষের মধ্য দিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে পূর্ণ। আমি নিজেও জানিনা আমার প্রতিপক্ষ দল আজকের জার্নিতে কোনো ট্রেপ রেখেছে কিনা। যদি রাস্তাতে এক্সিডেন্ট করে মরে যাই? তোমার কাছে যদি কোনো কারনে ফিরে না আসি তুমি ঠিক থাকবে? কিন্তু তোমার যে ঠিক থাকতে হবে। তুমি হচ্ছো পূর্ণতা। আমার পূর্ণতা। সে সবসময় তার পূর্বের চিন্তায় বিভোর থাকবে তবে পূর্বের জন্য ঠিক থাকবেনা তা তো হয়না। ইট উইল বি ইনজাস্টিস পূর্ণ! ট্রায় টু আন্ডারস্টেন্ড প্রোপার্লি। আমি যখনি তোমার কাছ থেকে দূরে থাকি ভেবে নিও এটাই আমাদের শেষ দেখা। এতে দুটো প্রফিট আছে। এক. প্রতিটা দিন, প্রতিটা মূহুর্ত, প্রতিটা সেকেন্ড আমরা ‘শেষবার’ স্মরন করে ভালোবাসবো। দুই. তুমি নিজেকে শক্ত এবং হার্সনেস বানাতে প্রিপেয়ার হবে পূর্ণ। আমি চাইনা তুমি অন্য দশটা মেয়ের মতো স্বামীর শোকে শোকে মরিয়া হয়ে যাও। তুমি থাকবে বোল্ড, স্পষ্টভাষী, দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। তোমায় দেখে মানুষ সিমপ্যাথী দেওয়ার সাহস পাবেনা তুমি আমার জন্য এমন হবে পূর্ণ! আবেগ দুনিয়ার সব মানুষের জন্য না — এই আবেগটা হবে জাস্ট আমার জন্য! আমি এতে ঘেটে ঘেটে অধিকার খাটাবো! সম্পূর্ণ কর্তৃত্ব আমার থাকবে! অন্য কেউ তোমার আবেগ, বিহ্বল, কান্না, অসহায়ত্ব দেখবেনা। তুমি দেখাবেও না। আমি চাই না তুমি স্বামীকাতর হও। সমরেশ মজুমদারের বিখ্যাত ‘সাতকাহন’ উপন্যাসের একচ্ছত্র ‘দীপাবলি’ হও যে অন্যায়, অবিচার এবং অশোচনীয়তা পছন্দ করেনা। যে নারীর নারীত্বে বলীয়ান। বলো তুমি হতে পারবেনা?

পূর্বের কথাগুলো আগুনের স্ফুলিঙ্গের মতো পূর্ণতার বিবেকের দরজায় ধামধাম করে কড়া নাড়ছে। মেয়েরা মোমের মতো জ্বলন্তকারিণী আবার মোমের মতো কঠিনচিত্ত! পূর্ণতার কোনরূপটা ধারন করা উচিত পূর্বের জন্য? সে কি ধুকে ধুকে কষ্ট নিপীড়নে জ্বলবে? নাকি কঠিনচিত্তে সব সমস্যা মোকাবিলা করে নিজেকে তৈরী করবে? পূর্ণতা চুপ করে তাকিয়ে আছে। পূর্বের গাল থেকে কখন অজান্তে হাত নামিয়ে ফেলেছে জানা নেই। পূর্ব একটু থেমে আবার শুরু করলো নিজের কথা,

– সবসময় মেয়েদের ত্যাগস্বীকার করে চলতে হয় পূর্ণতা। তুমি আমার জন্য নিজের সমস্তকিছু ত্যাগ করবে আমি তা কখনো মানতে পারবো না। আমি চাই তুমি শক্ত হও। পরিস্থিতি বুঝো। নিজেকে জানো। আমাকে ভালোবাসো। কিন্তু সবকিছুর যেমন লিমিট থাকে আমার ক্ষেত্রেও লিমিটেড ব্যাপারটা আনো। আমার জন্য তুমি সাফার করছো ব্যাপারটা আমায় খানখান করে দিচ্ছে পূর্ণ। প্লিজ এই গাট্স থেকে আমায় মুক্তি দাও। আমি এই ব্যাপারটার জন্যই তোমার সামনে এতোদিন আসিনি। ভেবেছি তুমি আমাকে ভুলে যাবে। তুমি ভুলতে পারোনি উল্টো মনের মধ্যে কল্পনার অসুখ বাধিয়ে ফেলেছো। আজ যেহেতু তোমার কাছে আছি অন্ততপক্ষে আমায় আশ্বস্ত করো তোমার কাছে ফিরে এসে আমি কোনো ভুল করিনি।

পূর্ণতা এদফায়ও চুপ করে তাকিয়ে আছে পূর্বের দিকে। সকালের পূর্ব আর এই পূর্বের মধ্যে যেন বিশাল তফাত! আচ্ছা? মেয়েদের বলা হয় পানির মতো। যে পাত্রে রাখবে সে পাত্রের আকার ধারন করবে। তবে ছেলেদের ক্ষেত্রে কি পেয়াঁজের উদাহরণ টানা যায় না? একটা পর একটা খোসা ছাড়িয়ে শেষপর্যন্ত দেখবে কিছুই নেই। পূর্বের এই বহুরূপীর মতো ব্যাপারগুলো মুগ্ধ নয়নে দেখছে।এই মানুষটা সতরন্ঞ্চের মতো রূপ বদলায়। সকালে ছিলো রোমান্টিক এখন হয়ে গেছে উজ্জীবিত নেতা। পূর্ণতা কিছুকালব্যাপী চুপ থেকে পূর্বের গালে পুনরায় হাত রেখে কিছুটা কাছে এসে বলে উঠে,

– আপনি ভুল করেন নি।

অস্ফুটিত কন্ঠে বলে উঠতেই পূর্বের কপালে আলতো স্পর্শ এঁকে দেয় পূর্ণতা। পান্জাবীর বোতাম লাগিয়ে নিঃশব্দে কোল থেকে উঠে দাড়ায়। যাওয়ার পূর্বমূহুর্তে পূর্বের চুলে আঙ্গুল ডুবিয়ে বলে উঠে,

– সময় হয়ে যাচ্ছে, আমি আসি…

পূর্ণতা ম্লান চেহারায় হাসি উপহার দিয়ে দরজা খুলে চলে যায়। পূর্ব মাথা নুয়িয়ে ফ্লোরে তাকিয়ে আছে। বুকে চাপা ব্যথা অনুভূত হচ্ছে। ওর মতো ছেলেকে কোনো আঙ্গিকেই ডিজার্ভ করেনা পূর্ণতা। মেয়েটা দুঃখ পাচ্ছে ওকে ভেবে। পূর্ব হাত এনে বুকের আমি তোমায় শেষ ইচ্ছাটাও বলতে পারলাম না পূর্ণতা। আমায় ক্ষমা করো দিও।

.

পূর্বদিকে উদয় হওয়া তেজস্বী সূর্যটা দারুন দাপট দেখাচ্ছে আজ। তৃষ্ণার্ত পথিকের মতো ছাতি ফেটে যাচ্ছে সবার। পূর্ণতা চলে যাওয়ার ঠিক দশমিনিটের মধ্যে বেরিয়ে পরে পূর্ব। এমনেতেই দেরি হয়ে গেছে পূর্ণতার সঙ্গ পেয়ে। গাড়িতে বসেই ড্রাইভারকে নির্দেশ দিলো জোরে গাড়ি চালাতে। যতদ্রুত সম্ভব তাড়াতাড়ি ওর গুপ্ত আস্তানার জরুরী মিটিংয়ে পৌছতে হবে। দলের কিছু লিডার যারা দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে ছিটিয়ে কাজ করছে তারা সবাই একত্র হবে গাজীপুর মিটিংয়ে। পূর্ব যাচ্ছে ঢাকার আন্ডার থেকে। বামপন্থী দল ছাড়ার পর এই নিয়ে ষষ্ঠবারের মতো যোগদান করছে পূর্ব। সবাই ওকে বেশ সম্মানের চোখে দেখে। কেউ কেউ এতোটা ভালোবাসে যে অন্যরা রীতিমতো হিংসায় জ্বলে। গাড়ি হাইওয়ের সড়ক ধরে চার ঘন্টায় পৌছলো গাজীপুরের চৌরাস্তা। ওখানে আগে থেকেই একটা সাদা প্রাইভেট কার থেমে ছিলো। পূর্ব নিজের গাড়ি ছেড়ে সেই প্রাইভেট কারে উঠতেই গাড়ি চললো ‘কোনাবাড়ি’ জায়গার দিকে। একটা মেটো সড়ক ধরে গাড়িটা ঠিক পনের মিনিট যেয়ে একটা ক্ষেতের কাছে থামতেই ড্রাইভার বললো,

– ক্ষেতের আইল দিয়া সোজা দশ মিনিট হাটলেই তিনটা বাড়ি দেখবেন। তিনটা বাড়ির পরে যেই বাঙলো বাড়িটা দেখবেন লগেলগে ঢুইকা পরবেন। নো এদিক ওদিক। যান এহন।

পূর্ব পান্জাবীর হাতাটা কনুইয়ে ভাজ করতেই ঘড়িতে সময় দেখে নিলো। এরপর হাটাঁ শুরু করলো ক্ষেতের আইল রাস্তা ধরে। চোখের সামনে তিনটা বাড়ি যখন দেখলো তখন ওর খুব আজব লাগলো। একটা মানুষও নেই এইসময়। কি আজব না?? ধু ধু মরুভূমির মতো সুনশান চারপাশ। কেমন নিস্তব্ধ নিরবতা! একটা পাখিও ডাকছেনা। এমন ভীতিকর পরিস্থিতিতে দূর থেকে শুধু কুকুর কান্নার শব্দ ভেসে আসছে। কুকুর বা বিড়াল কান্নার শব্দ অমঙ্গলজনক। তবে কি এটাই আগাম বার্তা দিচ্ছে কিছু অমঙ্গলের দিকে? কুসংস্কারে একচুল বিশ্বাসী না পূর্ব। পুরোদ্যমে এগিয়ে যাচ্ছে সে গন্তব্যের দিকে।

.

– পূর্ণতা, বিয়েতে কোন্ কালার শাড়ি পরবি? আমি ভেবেছি তুই এবার লেহেঙ্গা পর। সবাই তো লালবধুর মত শাড়ি পরে। এ্যাই পূর্ণতা? কিরে তোর ধ্যান কই?

শ্রেয়ার কথায় ধ্যান ভাঙতেই পাশ থেকে আয়মান ব্যস্ততার সুরে বলে উঠে,

– কানের নিচে হাউমাউ করিস নাতো। টিকিট জায়গা মতো রাখছিস? দেখিস কইলাম..যদি টিকিট হারায়! আমি তোরে লাত্থি দিয়া ট্রেন থিকা ফালামু!
– উফফ! বললাম না টিকিট আন্টির কাছে দিয়েছি। একই কথা কয়বার জিজ্ঞেস করবি?
পূর্ণতা ওদের ঝগড়ার রেশে ছুড়ি চালিয়ে বলে উঠে,
– তোরা যদি এভাবে ঝগড়া করিস! আমি সত্যি সত্যি তোদের ট্রেন থেকে ধাক্কা মেরে ফেলবো! বোঝা গেছে?
– পূর্ণতা তোর কি হয়েছে? একটু আগে কি ভাবছিলি?

– ওয় ওর জামাইর কথা ভাবতাছে তোর সমস্যা কি? এতো চুলকানি কেন ওর ব্যাপারে ঘাটাঘাটি করার? বেলজ্জা ছেড়ি!
– ইবলিশ!
– তোর বাপ ইবলিশ!

– থাম ! হইছে তো ভাই! এইভাবে গায়ে গা লাগিয়ে ঝগড়া করছিস কেন? চুপচাপ বস! রাগ তুলিস না বলছি!
আয়মান লজ্জামিশ্রিত লাজুক হাসি দিয়ে বলে উঠে,
– বইন কি যে কস না শরম করে তো। এই খাচ্চুনির সাথে গায়ে গা লাগাইলে…ছ্যা ছ্যা..ওই দূরে যা। কেমনে তাকায়া আছে দেখ তো! বেলজ্জা!

শ্রেয়া আয়মানের দিকে গাঢ় দৃষ্টিতে কটমট করে কিছু বলবে মায়ের ডাক পেয়ে ওকে যেতে হলো। এদিকে আমি বিয়ের জিনিসপত্র কেনার লিস্ট করছি। আয়মান ছোটখাট ডেকোরেশন করার জন্য অনলাইনে ঢু মারছে। হঠাৎ ও সোফায় বসে আইপ্যাড হাতে বলে উঠলো,

– বইন একটা কথা বলি?
আমি খাতায় দ্রুত কলম চালাতে ব্যস্ত তবুও বলে উঠলাম, ‘হু.. বল’
– দুইদিনের মধ্যে তোর সাথে কথা হইছে?

আমার কলম ঘুরানো থমকে গেলো। দাতঁ চেপে শক্ত হয়ে আছি আমি এখন কাদঁবো না। আয়মান আরেকদফায় বলে উঠলো,

– পূর্বের বাসায় গেছিলাম দোস্ত। ও দুইদিন ধরে বাসায় আসে না।
আমি ঢোক গিলে নিজেকে শান্ত করে পুনরায় কলম চালিয়ে বলে উঠলাম,

– উনি ব্যস্ত আয়মান। কাজের জন্যই বাইরে।
– তোরে তো একটা কল করতে পারতো! করছে?
– করেনি তবে করবেন।
– কবে? বিয়ের ডেটের পর?
– করবে দোস্ত। আমার বিশ্বাস আছে উনার উপর। উনি হয়তো একটু বেশি ব্যস্ত তাই..
– আল্লাহ্ যেন তোর কথাই সত্য করুক। উনার ব্যাপারে একটা তথ্য পাইছি শুনবি? তোর তো শোনা উচিত।
– বলে ফেল।
– দুলাভাই বামপন্থীর দলে কাজ করতো দোস্ত। দলের সাথে প্রচুর ভাব ছিলো। কিন্তু পরে কি জানি হইছে পূর্ব ভাই আর ওই দলে কাজ করেনাই।
– আমাকে এসব গোজামিল কথাবার্তা বলিস না। আমি পলিটিক্স বুঝিনা। এই বামপন্থী কি সেটাও জানিনা।
– বুঝিয়ে বলি শোন…সাম্রাজ্যবাদী এবং সাম্যবাদী এই দুইটি ধারা পৃথিবীতে প্রচলিত। সাম্যবাদীরা মূলত ধনী গরিবের বৈষম্য মিটিয়ে সবাইকে একসমান করতে চায়। মানুষে মানুষে কোনো ভেদাভেদ ওরা চায়না। পৃথিবীতে সবচেয়ে বড় সামাজিক প্রভাব বিস্তারকারী লোক ছিলো কার্ল মার্কস। জন্ম জার্মানীতে। সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থায় কার্ল মার্কসের নীতি আর্দশে কমিউনিস্টের মূলনীতি চলে। ওরা বিভিন্ন ভাবে ছাত্র সমাজকে বুঝায় এদেশের শাষনব্যবস্থা ভালো না, মানুষের জন্য যুগোপযোগী না, ব্রেনওয়াশ করে ওরা রাজনীতিতে ছাত্রদের ফুসলায়। পূর্ব ভাই ওদের কথায় বেঁকে গেছিলো। ভাই প্রচুর পরিশ্রমী। উনারে যখন যেইখানে যাইতে বলছে উনিও গাধার মতো ওখানে খাটছে। কিন্তু ফলাফল শূন্য! এখন যেই দলে কাজ করতাছে ওই দল ভালো। কিন্তু ওই সাবেক দলের লোকেরা ভালো না বইন। এখনো ঢোল পিটায়া ভাইয়ের ব্যাপারে মিথ্যা বানোয়াট কথা রটায়। রাজিব্বা শালায় ভুল কিছু বলেনাই যা শুনছিলো ওইটাই তোরে হুবহু বলছে। ফ্যাক্ট হইলো শালা একটা ধান্দাবাজ ছিলো। তোরে যে পছন্দের ঠেলায় ওই পদক্ষেপ নিবো ভাবতেও পারিনাই। বইন? দুলাভাইয়ের বাসায় সবাই গ্রামে যাওয়ার প্রস্তুতিপর্ব সারতাছে। ভাইরে নিয়া মাথাব্যথা নাই। আমারে কি বলছে জানোস? পূর্ব ভাই আগে বলে বাসাই ফিরতো না, বাইরে বাইরে দলের কাজে কামলা দিতো। আমার প্রচুর ভয় করতাছে বইন। ভাইয়ের কথা কইতে গেলেই শরীরের লোম দাড়ায়া যায়। দেখ…এখনো দাড়ায়া গেছে।

আর সহ্য করতে পারলাম না মাথা নুয়ে ওয়াশরুমে চলে গেলাম। দেয়ালে হাত রেখে মাথা নুয়িয়ে আছি আমার শরীর কাপছে। চোখ থেকে পানি পরছে। পূর্বের সাথে কথা হয়নি গত দুদিন। উনি ঠিক আছে কিনা, তাও জানার সৌভাগ্য আমার হয়নি। হাতে কামড় বসিয়ে হু হু করে কেদেঁ যাচ্ছি। কান্নার আওয়াজ যেনো কোনোভাবে বাইরে না যায়। যত চেষ্টাই করছি আমি কাঁদবো না, আমি কাদঁবো না ততোই আমার কান্নার প্রসারতা বাড়ছে। হঠাৎ দরজায় ধাক্কা মেরে মা বলে উঠলো,

– পূর্ণতা বের হ তো একটু…গহনাগুলো দেখে দে। আংটির মাপটা লাগবে সোনারু বসে আছে।

ঢোক গিলে চোখ মুছে বহুকষ্টে স্বাভাবিক গলায় বলে উঠলাম,

– বিছানায় রেখে যাও আসছি…

ট্রেনের টিকিট কাল সন্ধ্যার ব্রহ্মাপুত্র এক্সপ্রেস ট্রেনের। বগি নাম্বার ‘ঙ’ এবং চেয়ার কোচ সিটের টানা ২৫-৩৬ নাম্বার পযর্ন্ত সিট বুক্ড। দশটা টিকিটের সদস্য হিসেবে আমি,বাবা,মা,শ্রেয়া,শ্রেয়ার মা, শ্রেয়ার ছোট ভাই, আয়মান, আয়মানের মা,নূরানী, ওয়াকিল ভাইও উঠেছেন আমাদের সাথে। ব্যাগ-লাগেজ-বস্তা সহ টোটাল আঠারোটা মালপত্র বোঝাই করে আমরা ট্রেনে উঠেছি। আজ মঙ্গলবার, শুক্রবার বিয়ের দিনতারিখ ধার্য করা হয়েছে। গ্রামে ইতিমধ্যে হৈহৈ মিছিলে বিয়ের পসরায় লেগে পড়েছে মামা ও খালামনিরা। শুনেছি আনিশা আপুও হানিমুন কাটিয়ে সুইজারল্যান্ড থেকে দেশে ফিরছেন রাতে। পূর্বের পরিবার নিজেদের তিন চারটা গাড়ি করে চলেছে গিয়েছে গত সোমবার। আমার চেয়ে নানাভাই খুশিতে পাগল…গ্রামের পরিচিত বন্ধুসুলভ মানুষের নাতীর সাথে বিয়ে হচ্ছে উনি পারেননা আটগ্রাম সুদ্ধো দাওয়াত করে ফেলেন।

ট্রেন গফরগাঁও স্টেশন ছেড়েছে কয়েকমিনিট পূর্বে। জানালার কাছে সিটে হেলে ট্রেনের ঝনঝন শব্দের সাথে রাতের প্রকৃতি এবং চন্দ্রপ্রভা উপভোগ করছি। আকাশে খুব সুন্দর একটা চাদঁ উঠেছে। পাশে মাথা হেলিয়ে ঘুমিয়ে পড়েছে শ্রেয়া। আমার হাতে ‘সাতকাহন’ উপন্যাস… দীপাবলিকে একটু পরপর বই খুলে পড়ছি। রোমান্ঞ্চকর পরিবেশ! ট্রেনের ভেতরে লাইটটা কোনো কারনে অফ। শুধু চাঁদের আলোয় আবছা দেখা যাচ্ছে ট্রেনের ভেতর।পূর্ব হলে কি করতেন? উনার কথা ভাবলে চলবে না উনি দুষ্টু একটা মানুষ। এই সুযোগটা কিভাবে ব্যবহার করতেন উনি ভালো জানেনা। হঠাৎ আমার সাইলেন্ট ফোনটা ভাইব্রেটে বাজতে থাকলে আমি ব্যাগ থেকে ফোন নিয়ে রিসিভ করি।

– হ্যালো, কে বলছেন?

– আপনি কে বলছেন? কোথা থেকে বলছেন? কি পরিচয় আপনার? চটপট উগলে দিন তো!

– ‘ চলবে ‘

#FABIYAH_MOMO🍁