#তোকে_ছাড়া_শূন্য_আমি
পর্বঃ২৬
#Faria_Siddique
।
।
।
।
।
।
।
।
।
।
আমি ফারার সাথে খেলছিলাম এমন মুহুর্তে ফোন বেজে উঠলো।আমি দেখি রুদ্রর মা ফোন করেছেন
আমি ভয় পেয়ে গেলাম।কোনো বিপদ হলো নাকি?
আমি— হ্যালো মা..
রুদ্রর মা— ফারিয়া জলদি বাসায় এসো রুদ্র কেমন যেনো করছে!
আমি— আমি আসছি, ও কেমন করছে মা??
রুদ্রর মা — মুড়ো মুড়ি করছে।নিশ্বাস জোড়ে জোড়ে নিছে!
আমি— আপনি ডক্টর কে ফোন করেছেন?
রুদ্রর মা — না!
আমি— আচ্ছা আমি ডক্টর কে ফোন করে বলে আসছি!
রুদ্রর মা— হুম ( কান্না স্বরে)
।
।
।
।
।
আমি অস্থির হয়ে দাদাভাই আর মেহেক ভাবি কে ডাকলাম।
আমি— রুদ্র কেমন যেনো করছে মা বললো, আমার ওখানে তাড়াতাড়ি যেতে হবে (কান্না করতে করতে)
দাদাভাই— বোন কান্না করিস না প্লিজ, হয়তো রুদ্রর জ্ঞান ফেরার আগে এমন হচ্ছে!
আমি মনে মনে ভাবলাম , হ্যা হয়তো দুই বছর পর আজ খুশির দিন আজ রুদ্রর জ্ঞান ফিরেছে।
আমি তারাতাড়ি ডক্টর কে ফোন করলাম।
।
।।
।
।।
।
।।
।
।।
।
।।
।
।।
ডক্টর ওখানে এম্বুলেন্স নিয়ে আসছেন আর আমি দাদাভাই, বাবা, রুশা,ভাইয়া সবাই ও ওখানে যাচ্ছি
মনে মনে দোয়া করছি আল্লাহ যেনো ভালো করেন যা করেন।রুদ্রর মা বাবা ও নিশ্চয়ই অনেক ভয় পেয়ে আছেন।ওনাদের তো সন্তান, সন্তানের কষ্ট কোন মা বাপ সহ্য করতে পারেন।আমার সামনে রুদ্রর মুখ ভাসছে ওর নিষ্পাপ রক্তাক্ত মুখ তখন এ্যাকসিডেন্টের সময়।আমার লাগছে এই ৩০ মিনিটের রাস্তাও যেন ৩০বছরের মত।পৌছাছি না কেন?
।
।
।
।
।
।
আমি— আর কতক্ষণ দাদাভাই তাড়াতাড়ি গাড়ি চালাও প্লিজ।
দাদাভাই— বোন আমি সবচেয়ে বেশি জোরে চালাচ্ছি রাস্তায় দেখ,আর এর থেকে বেশি জোরে চালানো বিপদ জনক। তুই প্লিজ শান্ত হ! রুদ্র ঠিক হয়ে যাবে।
।
।
।
।
।
আমিই জানি আমার কেমন লাগছে।রুদ্রর কিছু হবে ভাবতেই আমার জান বের হয়ে যায়।আচ্ছা রুদ্রর জ্ঞান ফিরলে কি ওর সব মনে থাকবে?থাকবে মনে আমার কথা? আমাকে ওর প্রোপোজ করা, আমাদের সুন্দর মুহুর্ত গুলো থাকবে ওর মনে?আমাদের সবাই কে মনে থাকবে? আমাকে আগের মতোই ভালোবাসবে?
।
|
|
|
|
|
|
বাসায় পৌঁছে আমি দৌড়ে রুদ্রর রুমে গেলাম।দেখি এখনও জোরে জোরে শ্বাস নিচ্ছে।আমি ওর কাছে গিয়ে দাড়ালাম। চোখ থেকে আপনা আপনি পানি গড়িয়ে পরলো। আমি দেখলাম ও হাত ও নাড়াচাড়া করছে।ও মনে হয় ঘুমে ছটফট করছে এমন মনে হচ্ছে ওকে দেখে।আমি ডক্টর কে আবারও ফোন করলাম উনি বললেন এসে পরেছেন কাছেই।
।
।
।
।
কিছুক্ষণের মধ্যে উনি এসে পরেন। অনেক মেডিকেলের মানুষ ও এনেছেন।ওরা গাড়িতেই আছে।
ডক্টর প্রথম রুদ্র কে একটু চেকআপ করে। তারপর এ্যাম্বুলেন্স এ তুলে রওনা হই।ভাইয়া, আমি, রুশা, আর বাবা যাচ্ছি । মেহেক ভাবি বাসায় এক বাবু কে নিয়ে তাই মেহেক ভাবি আমাদের(রুদ্র দের) বাসায় এসে পরলো মেহেক ভাবি ফারা,রুদ্রর বাবা আর বাবা বাসায়ই আছেন। রুদ্রর মা অনেক জিদ করে এসেছেন।ওনাকে মানা করতে পারিনি মা বলে কথা রুদ্রের প্রত্যেক মা-রই তো তার সন্তানের সামনে থাকতে ইচ্ছা করে সন্তান অসুস্থ হলে।আর এখানে তো রুদ্র কে হসপিটালে নেওয়া হচ্ছে।
।
।
।
।
।
।
হসপিটালে নিয়েই ওকে সব ব্যস্হা করে নেওয়া হলো অবজারভেশনের জন্য ওর কোমা থেকে বের হওয়া গতি দেখা হবে সব ইমার্জেন্সি ডক্টর ওখানে আছে।
তবুও আল্লাহই জানের মালিক ওনার কাছে দোয়া করছি আমরা বেশি বেশি করে।
।
।
।
।
হঠাৎ ডক্টরের সাথে থাকা নার্স কে বেরিয়ে আসতে দেখলাম।আমি দ্রতু তার কাছে গেলাম।উনি বয়স্ক মহিলা।
উনি বললেন রুদ্রর জ্ঞান ফিরেছে ও কথা বলছে।আমি ভিতরে যেতে চাইলে উনি বললেন এখন যাওয়া যাবে না। ডক্টর রা রুদ্রর স্মৃতি শক্তি পরীক্ষা করছে।
।
।
।
।
।
কিছুক্ষণের মধ্যে ভিতর থেকে জুনিয়র এক ডক্টর বেরিয়ে জিজ্ঞেস করলেন ফারিয়া কে?
আমি বললাম আমি।উনি আমাকে ভিতরে যেতে বললেন আর জিজ্ঞেস করলেম আমি রুদ্রর কে আমি লাইফ পাটনার বললাম।স্ত্রী এখনও হইনি কিন্তু লাইফ পাটনার ২বছর আগেই হয়ে গিয়েছি আমরা যখন।
দুইজন দুইজনকে প্রোমিজ করেছিলাম সারাজীবন দুজনের দুজনকে সঙ্গ দেওয়ার।
আমি সবার দিকে তাকালাম।বিশেষ করে রুদ্রের মার দিকে।উনি ইশারায় আমাকে ভিতরে যেতে বলল।
আমিঃতোমরা ও চলো।
রুদ্রের মাঃতুই আগে গিয়ে কথা বল আমরা সবাই পরে যাব।
আমি কিছু না বলে ভিতরে গেলাম
।
।
।
।
।
আমি ভিতরে গেলাম। দেখলাম আমাকে হাত দিয়ে ওর কাছে আসতে ইশারা করছে।আমি কাছে গিয়ে দাড়ালাম। ডক্টর রা বেরিয়ে গেল।
রুদ্রর এবার আমাকে ওর পাশে বসতে বললো।আমি কিছু বলতে গিয়ে কান্না করে দি ওকে আগের অবস্থায় দেখে।
ও আমার দিকে রাগী দৃষ্টি তে তাকায় কান্না করছি বলে।ও আমাকে পারলে চোখ দিয়ে ধমক দেয়।কিন্তু তা না পারায় অবশেষে ও চোখ দিয়ে করুণার মতো তাকালো আর ওভাবে তাকতে না পেরে আমি হেসে দিলাম এটা দেখে ওর ও অজানায়ই ও আমাকে হাসাতে পেরে বেশ খুশি।
।
।
।
।
।
চলবে………
#তোকে_ছাড়া_আমি_শূন্য
পর্বঃ২৭
#Faria_Siddique
।
।
।
।
।
।
।
।
আমি আর রুদ্র ওইদিন বাসায় ফিরে না গিয়ে হসপিটাল এ থাকি রুদ্রর সাথে। পরের দিন আমরা বাসায় ফিরে যাই।
।
।
।
বাসায় যাওয়ার সাথে সাথে শুরু হয় জামাই আদর আর ছেলে আদর দুটোই।বাবা র রুদ্রর আর আমার বিয়ের ব্যাপারে কথা বলছে। বাবা, দাদাভাই, রুদ্রর মা বাবা বসা।ওরা মুরুব্বিরা বিয়ের ব্যপারে কথা বলছে আমি ওপর থেকে দেখছি( ডুপ্লেক্স বাসা)।আমার কানের সামনে বলে ওঠলো কেউ,”ননদিনী কি তোমার বিয়ে লাগছে কেমন লাগছে আমাদের ও বলো আমরাও জানতে চাই”(মেহেক কথাটা বলে)
পিছনে ঘুরে দেখি মেহেক ভাবি আর রুশা দাঁড়িয়ে।আমি ওদের বলি,”তোমরা তো আমার আগেই বিয়ে করেছো তাহলে তোমরা নাকি ভালো জানো আমার থেকে”
রুশা—আমাদের বিয়ে হয়েছে তো কি হয়েছে? আমরা তো নতুন বউই!আর তোর বিয়ে মানে আমাদের ও বিয়ে। তাহলে উই অলসো ডেজার্ব ব্রাইড এটেনশন!
আমি— ও তোমরা নতুন বউ?দুই বছর হলো তোমারা বিয়ে করেছো মেহেক ভাবির তো বাচ্চা ও হয়ে গেল।
তোরই বা হতে কতক্ষণ আর এখন ও নতুন বউ?যা ভাগ এখান থেকে বিয়ে আমার তোমাদের না।
মেহেক— ননদিনী এভাবে আমাদের বলতে পারলে তুমি? আমরা কি তোমার কেউ নই?আচ্ছা যাই হোক
বাদ দি রুদ্র তোমাকে ডাকছে এটাই বলতে আসলাম।আমরা যাই আমাদের ও কাজ আছে চল ছোট থুক্কু রুশা।
ওরা চলে গেল ওদের কাজই আমার পিছনে লেগে আমাকে লজ্জা পাওয়া নো। যাই হোক গিয়ে দেখি রুদ্রর কি দরকার।আবার বেশি দেরি করলে মহাশয়
ক্রোধিত হবেন।যাই হোক আমার এক্সাইটেড লাগছে
বিয়ের জন্য অবশেষে ওর থেকেও না থাকার শূন্যতা সমাপ্তি ঘটে আমরা বিয়ে নামক বন্ধনে আবদ্ধ হবো।
তবে চিন্তা ও হচ্ছে এতদিন পর আল্লাহ না করুক
খুশির মুহুর্তে কোনো দুঃখ না আমাদের জীবনে বিরাজ মান হয়।আর পারবো না দুঃখ এসব সইতে।এসব মনে মনে ভাবতে ভাবতে রুমে যাচ্ছিলাম তখন মাথায় বাড়ি খেলাম।সামনে তাকিয়ে দেখি রুদ্রর বুকে বাড়ি খেয়েছি।
আমাকে রুদ্র হাত ধরে রুমে আনে তারপর নীরবে রুমের গেট বন্ধ করে আমার পাশে বসে।তারপর আমার হাত টা ওর হাতের ওপর নিয়ে। হাত জড়িয়ে ধরে।আমি ওর দেখি অবাক নয়নে তাকাই।ও আমার হাতে জোড়ায় চুম দিয়ে বলে,” ফারিয়া তুমি এতোদিন অনেক কিছু সহ্য করেছো হ্যা না আমাকে খেয়াল রাখা মা বাবা কে সামলানো।নিজের খেয়াল রাখাই ভুলে গিয়েছিলে? তুমি তোমার বাবার বাসায়ও যাওনি।এতো ম্যাচিওর কবে হলে?”
আমি— যেদিন তুমি আমার কথা চিন্তা না করে দীর্ঘ
২বছরের নিদ্রায় নিদ্রীত হলে।আমার জানো তোমার একাকিত্ব বোধ কতোটা কষ্ট দিয়েছে।
রুদ্রআমার দিকে তাকিয়ে আছে আর বললো,”কোমায় থাকলেও আমার ও কিন্তু শূন্যতা টা অনুভব করেছি।তুমি সজ্ঞানে আমি অজ্ঞানে।
আমরা আমাদের কথা বলে এতোদিনের সব না বলা কথা গুলো বলছি।মনের ফাঁকে যতো কথা জমা হয়েছিল সে সব কথা।হয়তো আসল ভালোবাসা এমনই হয়। যতোদিনই বিচ্ছিন্ন থাকো না কেন মিলনের দিন
নতুন করে ভালোবাসার নতুম অধ্যায় শুরু করাটাতেও থাকে মিষ্টি অনুভূতি।
——————-
ভাবনা ভার্সিটি তে আজ ক্লাস শেষ করে। বেরিয়ে যাচ্ছিল তখন ওর চোখ চেপে ধরে কে যেন নিয়ে যায়।
ও ছুটার চেষ্টা করে। তবে পারে না। ওর চোখ খুললে ও দেখতে পায়।সুন্দর করে সাজানো পার্ক।ভ্যালেন্টাইন
ডের মতো একবারে। ঘুড়ে দেখে বিশাল ওর সামনে মাটি তে হাটু গেরে বসে আছে।ও অবাক হয়ে গিয়েছে একদম।
বিশাল— আমি জানি ইউ আর সাপ্রাইজড বাট নাও ইউ ইউলবি মোর সাপরাইজ হয়েন ইউ হিয়ার মোর সামথিং। আর সেই কথা হলো- এতোদিন ভার্সিটি তে তোমার চঞ্চলতা আমাদের খুনশুঁটি কখন আমার মনে ভালোবাসায় পরিণত হয়েছে। তুমি আমাকে মেনে
নাও নয়তো আমি…তোমাকে আবারও পানি তে চুবানি দিব 😁😁😁 নাও say are you accept me?(এখন বলো তুমি আমাকে মানবে?)
ভাবনাও এতোদিনে বিশালের প্রতি একটা কেমন টান অনুভব করতো আজ ওরও মনে হচ্ছে ভালবাসার টানই হয়তো!
ভাবনা— আমিও….
বলে বিশালের হাতে ফুল নিয়ে নিল।
ভাবনা— ফুলটা কি প্লাস্টিকের না আসল? আমার কিন্তু আসল ফুলই পছন্দ!
বিশাল হেসে দেয়।ভাবনার কথা শুনে। আসলে ভাবনা সব সময় এমনই থাকবে।
বেঁচে থাকুক ওদের খুনশুঁটি র ভালোবাসা।
।
।
।
।
।
।
।
।
ফারিয়া বিশাল কে ফোন করে আর জেনে নেয় যে প্রোপোজ করার প্ল্যান সাকসেসফুলি হয়েছে নাকি?
ফারিয়া— কিরে প্রোপোজাল সাকসেসফুল? ট্রিট পাচ্ছি?
বিশাল— না রে (ঢং করছে)
ফারিয়া— মানে ভাবনা হ্যা করেনি? (মন খারাপ করে).
বিশাল— না ও হ্যা বলেছে!!!! কিন্তু ট্রিট পাবিনা।আচ্ছা রাখি
ভাবনা আছে আমার সাথে।
ফারিয়া—হু হু এখন তো বন্ধু কে ভুলেই যাবেন কাজ শেষ দেখে😐
বিশাল— আচ্ছা আগামীকাল তোদের সবাই কে ট্রিট
ফারিয়া— পুরা ভার্সিটি কে?
বিশাল— না না পুরা ভার্সিটিকে ট্রিট দিতে গেলে আমি ফকির হয়ে যাবো।
ফারিয়া — আমি তো মজা করছিলাম। আচ্ছা রাখি তোরা টাইমস্পেন্ড কর।
বিশাল— ওয়েট থ্যাংক ইউ! তোর মতো বন্ধু পেয়ে আমি ধন্য তোর কথায় আমি সামিয়াকে ভুলে ওর মৃত্যু ওর ধোঁকাবাজি ভুলে নতুন লাইফ শুরু করতে পারলান।তোর কথা শুনেই বুঝলাম আমি ভাবনাকে ভালোবাসি।থ্যাংক ইউ সো মাচ ইয়ার।
ফারিয়া-এত সেন্টি না খাইয়া ভালা কইরা প্রেম কর আর আমারেও প্রেম করতে দে।।।
এই বলেই আমি কল কেটে দিয়ে মুচকি হাসলাম।
।
।
।
।
।
।চলবে