তোমাকে ঘিরে আমার অনুভূতি পর্ব-১৪

0
639

#তোমাকে_ঘিরে_আমার_অনুভূতি💖
#পর্ব_১৪
#Anika_Fahmida

গভীর রাতে আদ্র এবং অনু পাশাপাশি হেঁটে চলেছে। আদ্র গম্ভীরভাবেই অনুর হাত ধরে হাঁটছে। অনু আদ্রের দিকে তাকিয়ে শুধু মুচকি হাসছে। আদ্র অনুর দিকে হঠাৎ করে তাকালে অনু মুচকি হাসি থামিয়ে দিল। অনুর হাসি থামানো দেখে আদ্র অনুকে বলল,

–তোর হাসিটা ভালোই তো লাগছিল। আবার মুখটা এমন করলি কেন?

অনু মন খারাপ করে আদ্রকে বলল,

–তুমি তো আমাকে বকা দিবে। বলবে আমি বোকার মতো কেন এতো হাসছি? পাগল হলাম কিনা!

আদ্র হেসে অনুকে বলল,

–বাহ্ অনু। তুই তো আমাকে ভালো বুঝে ফেলেছিস দেখছি। তোর এতো উন্নতি কিভাবে হলো?

–তোমাকে ভালোবাসি আর তোমাকে বুঝবো না এটা কি করে হয়? আগে অবশ্য তোমাকে বুঝতাম না। এখন বুঝতে পারি।

আদ্র গম্ভীর স্বরে অনুকে বলল,

–কিন্তু তুই আমাকে এখনও বুঝতে পারিস নি অনু।

অনু আদ্রকে অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল,

–কেন? আমি তোমাকে বুঝতে পারি নি?

–না, পারিস নি। তোর হাসি আমার কাছে কখনো বোকার মতো মনে হয় না বরং তোর হাসি আমার কাছে ভালো লাগে। একটু বেশিই ভালো লাগে।

আদ্রের কথা শুনে অনু খুশি হলো। কিন্তু কিছু বলল না।রাতের আকাশে মস্ত বড় ঝলমলে চাঁদ উঠেছে। চাঁদের চারিপাশে তারাগুলো ঝিকমিক করছে। হালকা শীতল বাতাস বয়ে যাচ্ছে। সেই বাতাসের সাথে অনুর খোলা চুলগুলো এলোমেলো হয়ে মুখের সামনে এসে পড়ছে। এতে অনু বেশ বিরক্ত হচ্ছে। রাস্তার আশপাশে কেউ নেই। সব নিরব, নিস্তব্ধতায় ছেয়ে আছে। আদ্র নিজের বাম হাতের সিলভার ঘড়িটার দিকে তাকিয়ে দেখল ২ঃ২৩ বাজে। আদ্র অনুর হাত ধরে হাঁটতে হাঁটতেই অনুর দিকে তাকিয়ে শান্ত স্বরে অনুকে ডাক দিল,

–এই অনু?

অনু আদ্রের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বলল,

–হ্যা বলো আদ্র।

–আমি তোকে আগে গান শুনালেও, তুই আমাকে কখনও গান শোনাস নি। একটা গান শোনাবি?

অনু আদ্রকে অসহায় মুখ করে বলল,

–কিন্তু আমি তো গান গাইতে পারি না আদ্র। কিভাবে তোমাকে গান গেয়ে শোনাবো?

–তোর যেই গানটা বেশি ভালো লাগে। ঐ গানটাই আমাকে গেয়ে শোনা। তুই গান গাইতে না পারলেও কি হয়েছে? একবার গান গেয়ে চেষ্টা তো করতে পারিস? অন্তত আমার জন্য।

অনু কিছুক্ষণ ভেবে ঘাবড়ে গিয়ে বলল,

–ঠিক আছে আদ্র। কিন্তু আমার গানের গলা যদি ভালো না হয় তাহলে কিন্তু তুমি হাসতে পারবে না। প্রমিস করো হাসবে না?

আদ্র মুচকি হেসে অনুকে বলল,

–হ্যা প্রমিস করলাম। হাসবো না। এবার গান গেয়ে শোনা। আমি অপেক্ষা করে আছি তো।

অনু আদ্রের হাত আরও শক্ত করে ধরে আদ্রের দিকে তাকিয়ে গান গাইতে লাগল,

Tuu aata hai seene mein
Jab jab saansein bharti hoon
Tere dil ki galiyon se
Main har roz guzarti hoon
Hawaa ke jaise chalta hai tu
Main ret jaisi udti hoon
Kaun tujhe yun pyar karega
Jaise main karti hoon
Ho ho ho ho….

আদ্র এতক্ষণ অনুর সাথে হাঁটলেও এবার থেমে গেল। আদ্র হঠাৎ দাঁড়িয়ে পড়ায় অনু আদ্রের দিকে তাকিয়ে মন খারাপ করে বলল,

–গান ভালো হয় নি? তাই না? আমি জানতাম।

আদ্র মুগ্ধ হয়ে অনুকে বলল,

–তুই জানিস অনু তুই কত ভালো গেয়েছিস?

–না, জানি নাতো। অবশ্য তোমার জন্য গান গেয়েছি তাই হয়তো ভালো হয়েছে।

আদ্র খুশিমনে অনুকে বলল,

–মন থেকে গান গাইলে গান গাওয়া কখনো খারাপ হতে পারে না অনু। চাইলেও খারাপ হতে পারে না।

অনু লাজুক হেসে আদ্রকে বলল,

–গানের প্রতিটা লাইন কিন্তু আমি তোমার জন্য গেয়েছি আদ্র। শুধু তোমার জন্য।

–হ্যা আমার জন্যই তো গাইবি। আর কার জন্য গাইবি? নাকি পাশের বাসার আন্টির জন্য গাইবি? হুম?

অনু রাগী দৃষ্টিতে আদ্রের দিকে তাকিয়ে আদ্রকে বলল,

–তুমি এভাবে আমাকে বলতে পারলে আদ্র?

আদ্রের হাসি পেলেও হাসি চেপে রেখে অনুকে বলল,

–তোকে কি বলতে পারলাম?

অনু মন খারাপ করে বলল,

–এই যে তোমার জন্য না গেয়ে পাশের বাসার আন্টির জন্য গান গেয়েছি কিনা!

আদ্র অনুর কথা শুনে এবার শব্দ করে হেসেই বলল,

–মজা করছিলাম অনু। মন খারাপ করিস না। অবশ্য আমার অনু মন খারাপ করে মুখ ফুলিয়ে রাখলে চেহারাটা দেখতে একদম গোল আলুর মতো লাগে।

অনু চোখ বড়বড় করে আদ্রের দিকে তাকিয়ে বলল,

–কি আমি গোল আলু?

–হ্যা তা নয়তো কি?

অনু আদ্রের পিঠে জোরে কিল দিল৷ আদ্র ব্যথা পেয়ে পিঠে হাত দিয়ে বাচ্চার মতো মুখ করে অনুর দিকে তাকিয়ে বলল,

–অনু তুই আমাকে এভাবে মারলি? জানিস কত ব্যথা পেয়েছি।

অনু হাসতে হাসতে আদ্রকে বলল,

–বেশ করেছি।

অনু খুশিতে লাফাতে লাফাতে হাঁটতে লাগল৷ কিন্তু অনুর পায়ে হাই হিল পড়ে থাকায় অনু হোচট খেয়ে পড়ে যেতে লাগলে আদ্র অনুকে সাথে সাথেই শক্ত করে চেপে ধরল। আদ্র অনুকে ধমক দিয়ে রাগী স্বরে বলল,

–এতো লাফাচ্ছিলি কেন অনু? আরেকটু হলেই তো পড়ে গিয়ে ব্যথা পেতি।

অনু আদ্রের দিকে তাকিয়ে শান্ত স্বরে বলল,

–আমি পড়ে যেতে নিলেও তুমি আমাকে ধরে ফেলবে এই আশায় তো কোনো দ্বিধা ছাড়াই লাফাচ্ছিলাম৷

–আমি যদি তোকে না ধরতাম তাহলে কি হতো?

–কি আর হতো? পড়ে গিয়ে ব্যথা পেতাম। কিন্তু আমার বিশ্বাস ছিল তুমি আমাকে ধরে ফেলবে।

আদ্র অনুর কথা শুনে অনুর দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল। আর অনু আদ্রের দিকে তাকিয়ে হাসতে লাগল। আদ্র অনুকে সোজা করে দাঁড় করিয়ে দিল।এমন সময় আদ্রের ফোন বেজে উঠল।আদ্র ফোনটা পকেট থেকে বের করে দেখল আদ্রের বাবা ফোন করেছে। অনু আদ্রকে জিজ্ঞেস করল,

–কে ফোন করেছে আদ্র?

আদ্র গম্ভীর স্বরে অনুকে বলল,

–বাবা ফোন করেছে।

–আংকেল ফোন করেছে তাহলে ফোনটা ধরো।

–ধরতে ইচ্ছে করছে না।

–আদ্র আংকেল নিশ্চয়ই তোমাকে নিয়ে চিন্তা করছে। ফোন ধরে দেখো তিনি কি বলেন।

আদ্র অনিচ্ছা নিয়েই ফোনটা রিসিভ করে বলল,

–হ্যালো বাবা, কি বলবে বলো।

আদ্রের বাবা আনোয়ার হোসেন গম্ভীর স্বরে বলল,

–তুমি দেশে ফিরে এসেছো আদ্র?

–হ্যা বাবা আমি দেশে ফিরে এসেছি।

আনোয়ার হোসেন অবাক হয়ে আদ্রকে বলল,

–কই আমাকে তো একবার জানালে না। আর তোমার তো আরও তিন বছর পর দেশে আসার কথা। এতো তাড়াতাড়ি চলে এলে কেন? তোমার পড়াশোনার যে কি পরিমাণ ক্ষতি হবে তা তোমার কোনো ধারণা আছে?

আদ্র তার বাবার কথা গুরুত্ব না দিয়েই বলল,

–ধারণা থাকলেও আমার কিছু যায় আসে না বাবা। আমার লন্ডনে ভালো লাগছিল না। তাই আমি চলে এসেছি। এখানে এতো কথা বলার কি আছে আমি বুঝতে পারছি না।

আনোয়ার হোসেন এবার কঠোর স্বরে আদ্রকে বলল,

–তুমি দেশে এসেছো ভালো কথা। কিন্তু তুমি অনুকে তুলে নিয়ে গিয়ে কোথায় গেছো? অনুর মা-বাবা কত চিন্তা করতে পারে তুমি জানো না? অনুর মা-বাবার কাছে আমি লজ্জায় কিছু বলতেও পারছি না। আমার ছেলে কিনা তার কাজিনকে বিকেল বেলা কাউকে না বলে তুলে নিয়ে গেল!

আদ্র অনুর দিকে তাকিয়ে তারপর আনোয়ার হোসেনকে শান্ত স্বরে বলল,

–অনু ভালো আছে বাবা। অনুর জন্য তোমরা চিন্তা করো না। আমি কাল সকালে অনুকে ওর বাসায় পৌঁছে দিবো।

আনোয়ার হোসেন অবাক হয়ে আদ্রকে বলল,

–কাল সকালে মানে? আদ্র তুমি এসব কি বলছো? অনু তোমার কাজিন হয়। একটা অবিবাহিত মেয়েকে তুমি তুলে নিয়ে চলে গেলে৷ লোকজন শুনলে কি বলবে?

–লোকজনের কথা আমি পাত্তা দেই না বাবা। এখন ফোনটা রাখি।

আনোয়ার হোসেন আদ্রকে জোর গলায় বলল,

–আদ্র আমার কথা শুনো?

আদ্র ফোনটা কেটে দিল। অনু আদ্রকে জিজ্ঞেস করল,

–আংকেল কি বললো আদ্র?

আদ্র মুখটা গম্ভীর করেই অনুকে বলল,

–কিছু না৷ চল ফিরে যাই।

–কোথায় যাবো? আমাকে বাসায় দিয়ে আসবে?

–আমি কি একবারও এই কথা তোকে বলেছি?

–তাহলে কোথায় যাবো?

–পুরনো রাজবাড়ী। তোর মতে সেই ভুতের বাড়ি।

আদ্রের কথা শুনে অনু ভয়ে শুকনো ঢুক গিলে বলল,

–আমার ঐ বাড়িটা ভয় লাগে। অন্য কোনো বাসায় চলো না আদ্র? কোনো নরমাল বাড়ি?

আদ্র অনুর কানের কাছে এসে ফিসফিস করে বলল,

–একদমই না। ভুতুড়ে বাড়িরটায় তোর সাথে থাকতে আমার ভালো লাগছে। যেই ভালো লাগা অন্য বাড়িতে পাওয়া যাবে না।অসম্ভব।

আদ্রের কথা শুনে অনুর শরীর কাঁপতে লাগল। অনুর শরীর কাঁপছে দেখে আদ্র বুঝতে পারল অনু আর হাঁটতে পারবে না। তাই আদ্র অনুকে কোলে তুলে নিল৷ অনু অবাক হয়ে আদ্রের দিকে তাকিয়ে চোখ বন্ধ করে নিল। আদ্র অনুকে নিয়ে আবারও সেই রাজবাড়ীতে চলে গেল। অনুকে আগের রুমের বিছানায় বসিয়ে দিয়ে আদ্র অনুর পাশে বসে সিগারেটে আগুন ধরিয়ে সিগারেট খেতে লাগল। অনু কাশতে লাগল। কাশতে কাশতেই অনু বড়বড় চোখ করে আদ্রের দিকে তাকিয়ে অবাক হয়ে বলল,

–আদ্র তুমি তো আগে কোনোদিন সিগারেট খেতে না। তাহলে এখন সিগারেট খাচ্ছো কেন?

আদ্র অনুর দিকে কিছুক্ষণ একদৃষ্টিতে তাকাল। তারপর সিগারেট খেতে খেতেই অনুকে শান্ত স্বরে বলল,

–তোর থেকে দূরে থাকার পর এই সিগারেটটাই আমার একমাত্র সঙ্গী। এখন আমি সিগারেট ছেড়ে কি করে থাকি বল তো অনু? আমার অভ্যাস হয়ে গেছে।

আদ্রের কথা শুনে অনুর ভীষণ কান্না পাচ্ছে। এদিকে আদ্র সিগারেট খাচ্ছে এটা অনু নিজ চোখে দেখে অনুর সহ্য হচ্ছে না। অনু আদ্রের হাত থেকে খপ করে সিগারেট কেড়ে নিয়ে মাটিতে ফেলে দিল। আদ্র গম্ভীর স্বরে অনুকে জিজ্ঞেস করল,

–সিগারেটটা ফেলে দিলি কেন অনু?

অনু রেগে গিয়ে আদ্রকে বলল,

–তুমি আর কোনোদিনও সিগারেট খাবে না আদ্র। কোনোদিনও না। তখন তোমার কাছে আমি ছিলাম না। তাই তুমি সিগারেটকে নিজের সঙ্গী বানিয়েছিলে। কিন্তু এখন আমি তোমার কাছে আছি। তাই তোমাকে আমি সিগারেট খেতে কিছুতেই দিব না।

–কিন্তু এতোদিনের অভ্যাস কি করে ছাড়বো?

–সিগারেট তোমার দুই বছরের অভ্যাস কিন্তু আমি তোমার কত বছরের অভ্যাস আদ্র? আমার জন্য সিগারেট খাওয়া ছাড়তে পারবে না?

আদ্র অনুর দিকে তাকিয়েই বলল,

–তুই আমার ছোটবেলার অভ্যাস অনু। বছরের পর বছরের অভ্যাস। যেই অভ্যাসকে আমি চাইলেও ছাড়াতে পারবো না। সিগারেট ছাড়তে পারবো কিন্তু তোকে কখনো ছাড়তে পারবো না।

#চলবে…