#তোমাকে_ঘিরে_আমার_অনুভূতি💖 (সিজন-২)
#পর্ব_১২
#Anika_Fahmida
সুমি অবাক হয়ে আদ্রকে বলল,
–তোর কথা আমি কিছুই বুঝতে পারলাম না আদ্র৷ তুই অনুকে ভালোবাসিস না? তাহলে কেন তুই অনুকে বিয়ে করতে চাচ্ছিস?এটা কেমন কথা?
আদ্র রাগী স্বরে সুমিকে বলল,
–তোর না বুঝলেই ভালো। তুই এখন আমার রুম থেকে চলে যা। আমি তোকে সহ্য করতে পারছি না।
সুমি মন খারাপ করে আদ্রকে বলল,
–আদ্র আমি তোকে খুব ভালোবাসি। আমাকে কি একটাবার ভালোবাসা যায় না?
আদ্র রেগে গিয়ে সুমিকে বলল,
–আমি তোকে ভালোবাসি না৷ বার বার এক কথা বলবি না। আমার রুম থেকে তুই প্লিজ চলে যা সুমি।
আদ্রের রাগ দেখে সুমি ভয় পেয়ে গেল। তাই সুমি আদ্রের রুম থেকে চলে গেল। আদ্র মন খারাপ করে কপালে হাত দিয়ে সোফায় বসে পড়ল। আদ্র মোবাইল ফোনের হোম এবং লক স্ক্রিনে অনুর ছবি সেট করে রেখেছে। ফোনটা অন করলেই অনুর ছবি ভেসে উঠে। ছবিতে অনু মুচকি হাসছে। আদ্র ভাবতে লাগল অনুর এই হাসির মাঝেও কেমন যেন মন খারাপ লুকিয়ে আছে। এরই মাঝে আদ্রের ফ্রেন্ড রিনি ফোন করলো। রিনি ফোন করেছে দেখে আদ্র বিরক্ত হয়ে ফোন কেটে মোবাইলটা অফ করে টেবিলের একপাশে রেখে দেয়। এদিকে আদ্র ফোন কেটে দেওয়ায় রিনি আবারও ফোন করলো। কিন্তু এবার আদ্রের ফোন রিনি বন্ধ পেল। রিনি রেগে গিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বলতে লাগল,
–আদ্র আমার ফোনটাও রিসিভ করলো না? আমার ফোনটা কেটে দিলো! আবার মোবাইলটাও অফ করে দিলো! আমি তো আদ্র কেমন আছে জানার জন্যই ফোন করেছিলাম। এমন করে আদ্র ফোনটা রেখে দিলো? আর কখনো আদ্রকে আমি ফোন দিবো না।
আদ্র মোবাইল ফোনটার দিকে তাকিয়ে পাগলের মতো হাসতে লাগলো। আদ্র হাসতে হাসতে মনে মনে বলল,
–সবাই আমাকে ফোন দেয় আমি কেমন আছি জানার জন্য। কিন্তু যার ফোনের আসায় আমি বসে থাকি সেই তো একটাবার ফোন দেয় না। একটা ফোন দিলে কি হতো তোর অনু? আমি এখন কেমন আছি তা জানতেও তোর একটুও কি মন চায় না?
বেশ কয়েকটা দিন চলে গেল। অনু কয়েকদিন ধরে ভার্সিটিতেও যায় না। কেন যেন অনুর কিছুই ভালো লাগছে না। অনুর মনের মাঝে একটা শূন্যতা কাজ করে। গভীর রাতে মন খারাপ করে বারান্দায় গিয়ে বসে আছে অনু। কিছু ভালো লাগছে না। ঘুমও আসছে না। কিছুক্ষন আগেই অনুর ঘুম ভেঙে যায়। তারপর ঘুমানোর অনেক চেষ্টা করেছে অনু কিন্তু তবুও ঘুম আসছে না। খুব কান্না পাচ্ছে। সবাই এমন করে কেন অনুর সাথে? সবাই শুধু অনুর মনে কষ্ট দেয়। কেউ অনুর দুঃখ বুঝে না। মা, বাবা, এমনকি আদ্র ভাইয়াও অনুকে বুঝতে পারল না। সবাই শুধু অনুর উপর সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেয়। আদ্র ভাইয়ার কথা না চাইতেও অনুর ভীষণ মনে পড়ছে। অনু মনে মনে বলল,
–আমার হয়তো আদ্র ভাইয়াকে এতোটা অপমান করা ঠিক হয় নি। কেমন যেন খারাপ লাগছে। এতো খারাপ লাগছে কেন আমার? আদ্র ভাইয়াকে একটা ফোন দিবো? না ভয় লাগছে। যদি আবার বকা দেয়!
অনুর হঠাৎ করেই দু চোখ ভর্তি জল চলে আসলো। জলে চোখ দুটো টলমল করতে লাগলো। আর নিজের কান্নাকে আটকাতে পারলো না। শব্দ করেই অনু কাঁদতে লাগলো। আদ্রকে ফোন দিয়ে কেমন আছে জানার জন্য অনু ফোন দিবে মনে মনে ভেবে নিলো। চোখ মুছে অনু আদ্রকে ফোন দিল কিন্তু আদ্রের ফোন বন্ধ করা। আবারও অনু ফোন দিলো কিন্তু ফোন বন্ধ বলছে। অনু কাঁদতে লাগলো। নিজেকে এতো দোষী মনে হচ্ছে কেন? অনু কি আদ্র ভাইয়াকে নিজের স্বার্থের জন্য বেশি কষ্ট দিয়ে ফেললো? আদ্র ভাইয়াকে কি অনু খুব বেশি ভুল বুঝলো? অনুর মাঝে হাজারো চিন্তা ঘুরপাক খেতে লাগলো। বার বার অনু আদ্রের ফোনে কল দেয় কিন্তু আদ্রের ফোনটা অনু বন্ধ পায়। একসময় হতাশ হয়ে অনু ফোনটা জানালার কাছে রেখে দিল। কাঁদতে কাঁদতে অনু আনমনে গান গাইতে লাগল,
কি করে বলবো তোমায়
আসলে মন কি যে চায়
কেন সে পালিয়ে বেড়ায়
তোমার থেকেই
কি করে বলবো তোমায়
কেন এই মন হাত বাড়ায়
আবারো হাড়িয়ে সে যে যায়
তোমার থেকেই
তুমি জানতে পার নি
কত গল্প পুড়ে যায়
তুমি চিনতে পার নি
আমাকে হায়
কি করে বলবো তোমায়
আসলে মন কি যে চায়
কেন সে পালিয়ে বেড়ায়
তোমার থেকেই
গান গাইতে গাইতে একসময় অনু বারান্দার চেয়ারে বসেই ঘুমিয়ে পড়ে। মনের ভিতরে আদ্র ঘুরছে কিন্তু অজানা ভয়ে আদ্রের কাছ থেকে অনু দূরে সরতে চাইছে। অনুর মন যে কি চায় অনু বুঝতে পারছে না।
আমেনা বেগম অনুর উপর রাগ করে থাকলেও সকালে অনুর রুমে এসে অনু কি করছে দেখতে এলো। কিন্তু আমেনা বেগম অনুকে কোথাও খুঁজে পেল না। মেয়েকে খুঁজে না পেয়ে আমেনা বেগমের মনের মধ্যে ভয় কাজ করতে লাগলো। অনু গেলো কোথায়? আমেনা বেগম চিৎকার করে এদিক ওদিক অনুকে খুঁজতে খুঁজতে ডাকতে লাগলো,
–অনু কই গেলি তুই? আমার মা অনু কোথায় তুই?
আমেনা বেগম ভাবলো বারান্দাটা তো দেখা হলো না। বারান্দায় গিয়ে তিনি দেখতে পেলেন অনু চেয়ারে বসেই দেয়ালে মাথা ঠেকিয়ে ঘুমিয়ে আছে। আমেনা বেগম অনুর কাছে দ্রুত এগিয়ে গিয়ে অনুকে বুকে জড়িয়ে নিয়ে আর্তনাদ করে বলতে লাগলো,
–অনু তোর কি হলো? এই অনু?
আমেনা বেগম অনুর কপালে হাত দিয়ে দেখলো অনুর গায়ে ভীষণ জ্বর এসেছে। আমেনা বেগম অনুকে অনবরত ডাকতে লাগলো। অনু অল্প চোখ খুলে আমেনা বেগমকে শান্ত স্বরে বলল,
–আম্মু আমার শরীরটা ভালো লাগছে না। একটু পানি খাবো। আমাকে একটু পানি দিবে?
আমেনা বেগম মন খারাপ করে অনুকে বলল,
–হ্যা মা পানি দিচ্ছি। তুই রুমে চল। তুই বারান্দায় সারারাত ঘুমিয়েছিলি কেন? তোর তো জ্বর এসে গেছে।
অনু উত্তরে কিছু বলতে পারলো না। চোখ বন্ধ করে রাখলো অনু। আমেনা বেগম অনুকে বসা থেকে উঠতে সাহায্য করে। অনু ধীরে ধীরে আমেনা বেগমের কাঁধে মাথা রেখে রুমে আসলো। আমেনা বেগম অনুকে বিছানায় শুইয়ে দিয়ে পানির জগের দিকে তাকিয়ে দেখল জগে পানি নেই। তাই আমেনা বেগম অনুর জন্য পানি আনতে রুম থেকে বেরিয়ে গেল। অনু আবারও চোখ বন্ধ করতেই আদ্রের মুখটাই বারবার ভেসে আসছিল। অনু কাঁপা গলায় শান্ত স্বরে বলল,
–আদ্র ভাইয়া কেমন আছো তুমি? আমি তোমাকে ভীষণ কষ্ট দিয়েছি। আমার ভালো লাগছে না কিছু।
অনুর বাবা আরমান রহমান অনেক আগেই অফিস চলে গেছেন। বাসায় শুধু অনু এবং আমেনা বেগম আছে। অনুর জন্য গ্লাসে করে পানি নিয়ে এসে আমেনা বেগম শান্ত স্বরে অনুকে ডাকতে লাগলো,
–অনু মা উঠে বস। একটু পানিটা খেয়ে নে।
আমেনা বেগম অনুকে আস্তে করে টেনে তুলে পানি খাইয়ে দিল। অনু আমেনা বেগমকে কাঁপা গলায় বলল,
–আম্মু আদ্র ভাইয়া আমার ফোন ধরছে না। আমার কিছু ভালো লাগছে না। তুমি আদ্র ভাইয়াকে আমার কাছে এনে দাও।
অনুর কথায় আমেনা বেগম অবাক হলো। আমেনা বেগম অবাক হয়ে অনুকে জিজ্ঞেস করল,
–এসব তুই কি বলছিস অনু? তুই না আদ্রকে সহ্য করতে পারিস না? তাহলে আদ্রকে এনে দিতে বলছিস কেন? জ্বরে কি তুই পাগল হয়ে গেলি?
অনু আসলেই বুঝতে পারছে না অনু কি বলছে। কিন্তু এখন শুধু অনু আদ্রকে দু চোখ ভরে দেখতে চায়। তাই অনু আমেনা বেগমকে বলল,
–হ্যা আম্মু আমি পাগল হয়ে গেছি। তুমি আদ্র ভাইয়াকে আমার কাছে একটু এনে দাও। আমি কতদিন আদ্র ভাইয়াকে দেখি না। আদ্র ভাইয়াকে আমার খুব দেখতে ইচ্ছে করছে।
আমেনা বেগম স্তব্ধ হয়ে অনুর মুখের দিকে তাকিয়ে রইল। অনুকে কি বলবে আমেনা বেগম ভেবে পেল না।
আদ্র আজকাল অফিসেও যায় না। আনোয়ার হোসেনকে অফিসের সব কিছু সামলাতে হচ্ছে। আদ্র রুম থেকেও বের হয় না। ফোনটা অনেকদিন আগেই টেবিলের ড্রয়ারে রেখে দিয়েছে। আদ্র কারও সাথে কথা বলে না। ঠিকমতো খাবার খায়। ঠিকমতো ঘুমায় না। কোনো কিছুই আদ্রের ভালো লাগে না।
আদ্র অনেকদিন পরে আজ ফোনটা অন করে দেখলো অনুর নাম্বার থেকে অনেকগুলো কল এসেছে। আদ্র খুব অবাক হলে। আদ্রের মনটা মুহুর্তেই খুশি হয়ে গেল। আদ্র হেসে মনে মনে বলল,
–অনু ফোন দিয়েছে! তারমানে আমার কথা নিশ্চয়ই অনুর খুব মনে পড়ছে। আমি তোমার কাছে আসছি অনু। তুমি একটু অপেক্ষা করো আমি আসছি।
এই কয়েকদিন আদ্র নিজেকে ইচ্ছে করেই ঘরবন্দী করে রেখেছিল। অনু আদ্রকে একদম সহ্য করতে পারে না এটা ভেবেই আদ্র মন খারাপ করে অনুকে কোনো ফোন দিতো না। নিজের মনে মনে ভীষণ কষ্ট পেতো আদ্র। বারবার অনুকে ফোন দিতে গিয়েও আদ্র ফোন দিতো না। আর আজ মোবাইল ফোনটা অন করে অনুর এতোগুলা কল দেখে আদ্র সত্যি ভীষণ অবাকের সাথে খুশি হয়েছে। তাই কোনোকিছু না ভেবেই আদ্র অনুর বাসায় ছুটে গেল।
#চলবে…
#তোমাকে_ঘিরে_আমার_অনুভূতি💖 (সিজন ২)
#পর্ব_১৩
#Anika_Fahmida
আদ্র নিজের গাড়িতে ড্রাইভ করে অনুর বাসার সামনে পৌঁছে গেল। গাড়ি থেকে নেমে আদ্র মনে মনে বলল,
–আজকে অনেকদিন পরে অনুর বাসায় এসেছি। আচ্ছা অনু কেমন আছে? হয়তো ভালোই আছে। আমি না জ্বালালেই তো অনু ভালো থাকে।
আদ্র দীর্ঘশ্বাস ফেলে অনুর বাসার দরজার সামনে দাড়িঁয়ে কলিংবেল চাপতে লাগলো। অনুর মা আমেনা বেগম দরজা খুলে আদ্রকে দেখে অবাক হয়। অবাক হয়ে আমেনা বেগম আদ্রকে বলল,
–আদ্র বাবা তুমি?
আদ্র শান্ত স্বরে আমেনা বেগমকে বলল,
— অনুকে খুব দেখতে ইচ্ছে করলো তাই চলে আসলাম আন্টি। আপনি অনুকে একটু এদিকে আসতে বলুন। আমি অনুকে একবার দেখেই চলে যাবো।
আমেনা বেগম মন খারাপ করে আদ্রকে বলল,
–কিন্তু অনু তো অসুস্থ।
আদ্র অবাক হয়ে আমেনা বেগমকে বলল,
–অনুর কি হয়েছে আন্টি?
আমেনা বেগম গম্ভীর স্বরে বলল,
–অনুর জ্বর। নিজের রুমেই অনু শুয়ে আছে। তুমি অনুর রুমে গিয়ে দেখো আসো বাবা। ড্রইংরমে অনু আসতে পারবে না। কারণ ওর শরীরটা ভীষণ খারাপ। আর সবচেয়ে অবাক করার বিষয় হলো…
আদ্র আমেনা বেগমকে জিজ্ঞেস করল,
–সবচেয়ে অবাক করার কি বিষয়? বলুন আন্টি?
আমেনা বেগম আদ্রকে বলল,
–অনু জ্বরের ঘোরে তোমাকে ডাকছে।
আদ্র এই কথা শুনে আর কিছু না বলেই অনুর রুমের দিকে চলে গেল। অনুর রুমে প্রবেশ করেই আদ্র দেখলো অনু চোখ বন্ধ করে শুয়ে আছে। আদ্র অনুর কাছে এগিয়ে গিয়ে অনুর কপালে হাত দিয়ে একটু ঘাবড়ে গেল। কারণ অনুর গায়ে খুব বেশি জ্বর। কপালে কারও স্পর্শ পেয়ে অনু চোখ খুলে আদ্রকে দেখে ভয় পেয়ে গেল। অনু মনে মনে ভাবলো আদ্রের ভূত অনুর রুমে এসেছে। তাই অনু ভয় পেয়ে চোখ বন্ধ করে চিৎকার করে আমেনা বেগমকে ডাকতে ডাকতে বলল,
–আম্মু তুমি কোথায়? আদ্র ভাইয়ার ভূত আমার কাছে এসেছে। ভূত এসেছে আম্মু।
আদ্র গম্ভীর স্বরে অনুকে বলল,
–এসব তুমি কি বলছো অনু? আমার কোনো ভূত তোমার কাছে আসে নি। আমি স্বয়ং নিজেই এখন তোমার কাছে দাঁড়িয়ে আছি।
অনু চোখ খুলে আদ্রের দিকে তাকিয়ে রইল। তারপর শুয়া থেকে উঠে বসে অনু শান্ত স্বরে আদ্রকে বলল,
–তুমি সত্যিই এসেছো আদ্র ভাইয়া?
আদ্র মুচকি হেসে অনুকে বলল,
–হ্যা আমি সত্যিই এসেছি।
অনু বিছানা থেকে নেমে আদ্রকে হঠাৎ করেই ঝাপটে জড়িয়ে ধরলো। অনুর এমন কাজে আদ্র ভীষণ অবাক হলো। আদ্র কখনো ভাবে নি অনু এভাবে আদ্রকে জড়িয়ে ধরবে। অনুর পুরো শরীর আগুন হয়ে আছে। অনু আদ্রকে জড়িয়ে ধরার কারণে আদ্র অনুর শরীরের তীব্র জ্বরের তাপ নিজের শরীরের মধ্যে অনুভব করতে পারছে। অনু আদ্রের বুকে মুখ লুকিয়েই বলল,
–তুমি আমাকে একটাবার ফোন দিলে কি হতো? তুমি জানো আমার তোমার জন্য কত চিন্তা হচ্ছিল? আমি তোমাকে কতবার ফোন দিয়েছি। তুমি আমার ফোন একবারও ধরো নি। আমার খুব কষ্ট হয়েছে জানো আদ্র ভাইয়া। তুমি খুব পঁচা। আমার কষ্টটা তুমি একটুও বুঝো না। এমন করলে কেন তুমি?
আদ্র অনুর মাথায় হাত বুলিয়ে মনে মনে ভাবতে লাগল,
–অনুর কি হলো? আমাকে ভয় পাচ্ছে না। উল্টো আমার এতো কাছে এসে আমাকে জড়িয়ে ধরছে। জ্বরের কারণে অনুর ভয় কি সব চলে গেল?
অনু আদ্রকে আরও শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলল,
–এই আদ্র ভাইয়া শুধু আমিই তো তোমাকে জড়িয়ে ধরে রেখেছি। তুমিও আমাকে একটু জড়িয়ে ধরো না? আমার খুব কষ্ট হচ্ছে তো।
অনুর কথা শুনে আদ্র অনুকে জড়িয়ে ধরতেই অনু কাঁদতে লাগলো। অনু কাঁদছে বুঝতে পেরে আদ্র অনুকে নিজের কাছ থেকে ছাড়িয়ে অবাক হয়ে বলল,
–কাঁদছো কেন তুমি?
অনু অন্যদিকে তাকিয়েই চোখের জল ফেলে বলল,
–তোমাকে জড়িয়ে ধরে কেন জানি না আমার খুব ভালো লাগছে। তোমাকে জড়িয়ে ধরলে আমার মনে এতো শান্তি লাগে কেন বলোতো আদ্র ভাইয়া?
আদ্র অনুর কথায় ভীষণ অবাক হলো। একদৃষ্টিতে অনুর মুখের দিকে আদ্র তাকিয়ে রইল। অনু আদ্রের দিকে তাকাতেই দেখতে পেল আদ্র অনুর দিকে গভীর চাহনিতে তাকিয়ে আছে। অনু রেগে গিয়ে বলল,
–এভাবে আমার দিকে তাকিয়ে আছো কেন আদ্র ভাইয়া? আমার বুঝি লজ্জা করে না?
আদ্র অনুর দুই বাহু ধরে জোর করে অনুকে বিছানায় শুইয়ে দিলো। অনুর পাশে বসে গম্ভীর স্বরে আদ্র বলল,
–তুমি অসুস্থ অনু। তুমি কি করছো হয়তো তুমি নিজেই জানো না। এখন একটু রেস্ট নাও। একটু পর দেখবে তুমি একদম ঠিক হয়ে গেছো।
অনু রাগী স্বরে আদ্রকে বলল,
–অদ্ভুত তো। আমি কেন জানবো না যে আমি কি করছি? আমার বিছানায় শুয়ে থাকতে একদমই ভালো লাগছে না। আমাকে উঠতে দাও। আমি তোমার বুকে মাথা রেখে ঘুমাবো।
আদ্র অনুর দিকে তাকিয়ে শান্ত স্বরে বলল,
–অনু জেদ করো না। তুমি হয়তো সারারাত ভালো করে ঘুমাও নি৷ তোমার শরীরেও ভীষণ জ্বর। তাই তোমার কিছু ভালো লাগছে না।
অনু বিরক্তি স্বরে আদ্রকে বলল,
–তুমি এমন করছো কেন আদ্র ভাইয়া? কতদিন পর তোমাকে আমার কাছে পেলাম। কই তোমাকে আমি একটু জড়িয়ে ধরে তোমার বুকে ঘুমাবো। তুমি আমাকে তা করতেই দিচ্ছো না। এটা কোনো কথা?
অনু আদ্রের দিকে মন খারাপ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। আদ্র অনুর দিকে তাকিয়ে মনে মনে বলল,
–তুমি এখন আমাকে নিজের কাছে চাইলেও সুস্থ হলে হয়তো তুমি আমাকে ভুলে যাবে অনু। আমাকে এতোদিন পর দেখে হয়তো তুমি এমন করছো। আমি বুঝতে পারলেও তুমি হয়তো বুঝতে পারছো না।
অনুর পাশ থেকে আদ্র উঠে চলে যেতে নিলেই অনু আদ্রের হাত চেপে ধরলো। আদ্র অনুর দিকে ফিরে তাকালেই অনু অসহায় স্বরে বলল,
–যেওনা আদ্র ভাইয়া। তুমি চলে গেলে আমি আবারও কষ্ট পাবো। যেওনা প্লিজ।
আদ্র অনুকে শান্ত স্বরে বলল,
–আমি আবারও ফিরে আসবো অনু। হাতটা ছাড়ো।
অনু ভয় পাওয়া স্বরে আদ্রকে বলল,
–না তুমি মিথ্যা বলছো। আমি হাত ছেড়ে দিলেই তুমি আমার কাছ থেকে চলে যাবে। আর হয়তো আমার কাছে তুমি ফিরে আসবে না। তুমি চলে গেলে আমি আরও অসুস্থ হয়ে যাবো।
আমেনা বেগম অনুর রুমে এসে দেখতে পেল অনু আদ্রের হাত চেপে ধরে রেখেছে। আমেনা বেগম অবাক হলো। অনুকে রাগী স্বরে আমেনা বেগম বলল,
–অনু আদ্রের হাত ছাড়ো।
অনু শান্ত স্বরে আমেনা বেগমকে বলল,
–না। আমি ছাড়বো না। আম্মু তুমি তুমি বলো আদ্র ভাইয়াকে আমার কাছে থাকতে। নাহলে আমার কাছ থেকে আদ্র ভাইয়া চলে যাবে।
আমেনা বেগম ধমক দিয়ে অনুকে বলল,
–এসব কি ধরনের পাগলামি অনু? আদ্রের হাত ছাড়ো।
অনু রেগে গিয়ে আমেনা বেগমকে বলল,
–আমি আদ্র ভাইয়ার হাত ছাড়বো না।
আমেনা বেগম অনুর পাগলামো দেখে হতাশ হয়ে আদ্রকে বলল,
–আমার মেয়েটা সারাদিন তোমার চিন্তা করে হয়তো পাগল হয়ে গেছে আদ্র। তুমি অনুর পাগলামো দেখে কিছু মনে করো না।
আদ্র শান্ত স্বরে আমেনা বেগমকে বলল,
–আমি কিছু মনে করি নি আন্টি। অনু অসুস্থ তাই এমন করছে আমি সেটা বুঝতে পারছি।
অনু শুয়া থেকে আবারও উঠে বসলো। আদ্রের হাত আরও শক্ত করে চেপে ধরে রাগী স্বরে অনু বলল,
–তুমি আমার কাছে থাকবে। তুমি আমার কাছ থেকে চলে গেলে আমি সব কিছু ভেঙে ফেলবো আদ্র ভাইয়া।
#চলবে…