তোমাকে ঘিরে আমার অনুভূতি ২ পর্ব-১০+১১

0
771

#তোমাকে_ঘিরে_আমার_অনুভূতি💖 (সিজন-২)
#পর্ব_১০
#Anika_Fahmida

আদ্র অনুকে নিজের রুমে নিয়ে গিয়ে ছুঁড়ে নিচে ফেললো। অনু মাটিতে পড়ে গেল। হাতে পায়ে অনু
ভীষণ ব্যথাও পেল। আদ্র রুমের দরজা লাগিয়ে দিয়ে অনুর দিকে এগোতে লাগলো। অনু ভয়ে পেছাতে লাগলো। আদ্রের রুমটা বিশাল বড়। রুমের চারপাশটা সুন্দর কিন্তু অনুর কাছে ভয়ংকর মনে হচ্ছে। অনু ভয় পাওয়া স্বরে আদ্রকে বলল,

–একদম আমার কাছে আসার চেষ্টা করবে না।

আদ্র অনুর দিকে রাগী দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বলল,

–কেন? এখন কাছে আসবো না কেন? তুই সবার সামনে বলেছিস আমার চরিত্র খারাপ। তাহলে এখন তোর কাছে আসলে দোষের কি?

অনু এবার রেগে গিয়ে আদ্রকে বলল,

–ঠিকই তো বলেছি। তোমার চরিত্র খারাপ। এই যে এখন আমার সর্বনাশ করতে তুমি আমাকে এখানে নিয়ে এসেছো। তোমার মতো জঘন্য মানুষ আমি আজ পর্যন্ত দেখি নি। তুমি এতু নিচু মনের মানুষ তা আমার কল্পনার বাহিরে ছিল!

আদ্র অনুর একদম কাছে চলে এসে অনুর পাশে মাটিতে বসে পড়লো। অনু ভয় পাওয়া দৃষ্টিতে আদ্রের দিকে তাকালো। আদ্র দীর্ঘশ্বাস ফেলে অনুকে বলল,

–কি বললি তুই অনু? আমি তোর সর্বনাশ করতে চাই? আমার মতো জঘন্য মানুষ তুই আজ পর্যন্ত দেখিস নি? আমি খুব নিচু মনের তা তোর কল্পনার বাহিরে ছিল?

অনু ভয় পেয়ে আদ্রের কাছ থেকে দূরে যেতে নিলে আদ্র অনুর হাত চেপে ধরে টেনে নিজের একদম কাছে নিয়ে আসলো। আদ্র অনুর দুই গাল ডানহাত দিয়ে চেপে ধরে বলল,

–বাহ্ ভালোই তো ভেবেছিস অনু যে আমি তোর সর্বনাশ করতে এখানে এনেছি। তোর বুদ্ধির তারিফ করতে হয়।আবার আমার মতো জঘন্য মানুষ তুই আজ পর্যন্তও দেখিস নি? আমি নাকি চরিত্রহীন। আমি তো তোর সাথে এখনও কিছুই করলাম না। আগে আগেই আমাকে তুই জঘন্য, চরিত্রহীন উপাধিটা দিয়ে দিচ্ছিস? আগে জঘন্য, চরিত্রহীন মানুষরা যা যা করে ঠিক তাই তাই তোর সাথে করে নেই। তারপর নাহয় আমাকে তুই জঘন্য বলিস। সবার সামনে আমাকে অপমান করার শাস্তি এবার তুই পাবি।

আদ্রের কথায় অনুর বুকের ভিতরটা ভয়ে কেঁপে উঠল। অনু বড়বড় চোখ করে আদ্রের দিকে অবাক হয়ে তাকালো। আদ্র এতো শক্ত করে অনুর গাল চেপে ধরেছে যার কারণে অনু গালে ব্যথা পাচ্ছে। একই তো আদ্র অনুকে কিছুক্ষণ আগে চড় মেরেছে তারওপর আবার চড় দেওয়া গালেও এমন চেপে ধরে রেখেছে যে অনু ব্যথায় এবার কাঁদতে লাগলো। অনু মুখ দিয়ে কথাও বলতে পারছে না। আদ্রের হাত নিজের গাল থেকে ছাড়াতেও পারছে না। অনু কাঁদছে দেখে আদ্র অনুর গাল আর চেপে ধরলো না। আদ্র অনুর গালে আস্তে করে হাত বুলিয়ে দিয়ে বলল,

–কেন আমাকে তুই বিয়ে করতে চাইছিস না অনু? আমি কি এতোটাই খারাপ? আমাকে কেন সবার সামনে এমন অপমান করলি? কি এমন দোষ করেছি আমি?

অনু নিজের গাল থেকে আদ্রের হাত সরিয়ে নিয়ে বলল,

–আপনি কেন আমার সাথে এমন করছেন? আপনি তো আমাকে ভালোবাসেন না। ভালোবাসার মানুষকে কেউ আঘাত করে? ভালোবাসার মানুষকে এভাবে কেউ আঘাত করতে পারে না। যে আমাকে ভালোবাসে না তাকে আমি কেন বিয়ে করবো? আর এতো অল্প সময়ে কেউ কাউকে ভালোবাসতে পারে না।

কথাগুলো বলেই অনু আবারও কাঁদতে লাগলো। অনুর কথা শুনে আদ্র অনুর দিকে কিছুক্ষণ গম্ভীর দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল। অনু নিজের চোখের জল মুছছে তো আবারও গাল বেয়ে চোখে জল গড়িয়ে পড়ছে। আদ্র মনে মনে ভাবতে লাগল,

–আচ্ছা অনুকে কি আমি ভালোবাসি? অনুর এই বাচ্চামো স্বভাবটা আমার ভালো লাগে। কিন্তু আমি কি আসলেই অনুকে ভালোবাসি?

আদ্র অনেকক্ষণ ভেবেও কোনো উত্তর পেল না। নিজের মনকে কিছুতেই বুঝাতে পারছে না। আর কিছু না ভেবেই আদ্র রাগী স্বরে অনুকে বলল,

–আমি তোকে ভালোবাসি কিনা জানি না ৷কিন্তু তোকে আমাকেই বিয়ে করতে হবে।

অনু কান্না থামিয়ে আদ্রের দিকে তাকাল। অনু আসলেই বুঝতে পারছে না এই আদ্র আসলে কি চাইছে? আগে আদ্র অনুকে তুমি করে বলতো। আর এখন রেগে গিয়ে তুই করে বলছে। আদ্রের এমন আচরণে অনুর ভীষণ রাগ হচ্ছে।

আদ্র নিজের পকেট থেকে এনগেজমেন্ট রিংটা বের করে অনুর হাত ধরে টেনে বেশ দ্রুত পড়িয়ে দেয়। আদ্র অনুর দিকে তাকিয়ে গম্ভীর স্বরে বলল,

–ভুলেও রিংটা হাতের আঙুল থেকে খোলার চেষ্টা করবি না। রিংটা হাত থেকে খুললে আমার থেকে খারাপ আর কেউ হবে না।

অনুর নিজের হাতের আঙুলের দিকে তাকিয়ে রইল। রিংটা হাতের আঙুলের মধ্যে জ্বলজ্বল করছে। কিছুক্ষণ আগে আদ্রের দেওয়া থাপ্পড়ের কথা অনুর মনে পড়ে গেল। মনে পড়তেই মুহুর্তেই অনুর মেজাজ গরম হয়ে গেল। অনু আংটিটা হাত থেকে খুলে টেনে নিচে ফেলে দিলো। আদ্রের রাগ সীমা অতিক্রম করে বসলো। অনুকে টেনে দাঁড় করিয়ে আবারও অনুর গালে চড় বসিয়ে দিল। অনু এবার বিছানার উপর গিয়ে হুমড়ি খেয়ে পড়ল। আদ্র রেগে চিৎকার করে অনুকে বলল,

–আমি তোকে রিংটা খুলতে মানা করা সত্বেও কেন খুলে ফেললি? বল কেন খুলে ফেললি?

অনু গালে হাত দিয়েই আদ্রের দিকে ফিরে তাকাল। আদ্রের ভয়ংকর রাগী দৃষ্টি অনুর আত্মা কাঁপিয়ে দিতে যথেষ্ট। নিঃশব্দে অনু চোখের জল ফেলে আদ্রকে বলল,

–তোমাকে আমি কোনোদিনও বিয়ে করবো না আদ্র ভাইয়া। আমি মরে গেলেও তোমাকে বিয়ে করবো না। তুমি যেভাবে আমার উপর অত্যাচার করেছো, আমাকে সবার সামনে চড় দিয়ে অপমান করেছো তা আমি ভুলে যাই কি করে বলতো?

আদ্র অনুর কথা শুনে গম্ভীর স্বরে বলল,

–তুই আমাকে অপমান করিস নি? তুই আমাকে সবার সামনে অপমান করেছিস তাই আমি তোকে সবার সামনে চড় মেরেছি। আমাকে তুই যেমন তেমন অপমান করিস নি। একদম আমার চরিত্র নিয়ে কথা বলেছিস। এবার বুঝবি এই আদ্র কতটা চরিত্রহীন হতে পারে।

আদ্র এগিয়ে গিয়ে অনুর গলা থেকে ওড়না সরাতে নিলেই অনু নিজের ওড়না ধরে ফেলে আদ্রের দিকে তাকিয়ে কঠোর স্বরে বলল,

–আদ্র ভাইয়া তুমি যদি ভেবে থাকো আমার ক্ষতি করে তুমি বেঁচে যাবে তাহলে কিন্তু তুমি ভুল করছো। তোমার কিন্তু কঠিন শাস্তি হবে। আমি তোমাকে পুলিশে দিবো।

আদ্র অনুর কথা শুনে শব্দ করেই হাসতে লাগলো। এতো হাসতে লাগলো যে অনু অবাক হয়ে আদ্রের দিকে তাকিয়ে রইল। আদ্র অনুকে হাসতে হাসতেই বলল,

–ওহ রিয়েলি? তুই আমাকে শাস্তি দিবি? ওকে আমাকে শাস্তি দিস। এখন যা তোর সাথে হবে তা হওয়ার জন্য একমাত্র তুই দায়ী অনু। আমি দায়ী নই।

আদ্র অনুর ওড়না টান দিয়ে মাটিতে ফেলে দিলো। অনু অনেক চেষ্টা করেও নিজের ওড়না নিজের কাছে রাখতে পারলো না। অনু এবার ভয় পেয়ে গেল। নিজেকে দুই হাত দিয়ে ঢেকে রাখার চেষ্টা করল অনু। আদ্র কি তাহলে সত্যি সত্যিই অনুর কোনো বড় ক্ষতি করে ফেলবে? অনু আদ্রের দিকে তাকিয়ে বলল,

–আমার কাছে আসার চেষ্টা করবে না আদ্র ভাইয়া। আমাকে যেতে দাও। আমি বাসায় যাবো।

আদ্র মুচকি হেসে অনুকে টেনে নিজের কাছে নিয়ে আসলো। অনু নিজেকে আদ্রের কাছ থেকে ছাড়াতে গিয়েও পারলো না। কারণ আদ্রের শক্তির কাছে অনুর শক্তি কিছুই না। অনু ভয় পেয়ে আদ্রকে বলল,

–ছেড়ে দাও আমাকে।

আদ্র অনুর দুই হাত বিছানার সাথে চেপে ধরে বলল,

–আমি চরিত্রহীন। মেয়ে দেখলে আমার মাথা ঠিক থাকে না। এসব কথাগুলো তুই বলেছিলি অনু। যেখানে আমি আজ পর্যন্ত কোনো মেয়ের দিকে খারাপ নজরে তাকাই নি। কেউ বলতে পারবে না আমি চরিত্রহীন। কিন্তু তুই আমাকে চরিত্রহীন বলেছিস। এখন চরিত্রহীনরা আসলে কেমন হয় একটা ছোট্ট ট্রেলার তোকে দেখতে হবে।

আদ্র এগিয়ে গিয়ে অনুর গলায় নিজের ঠোঁট ছোঁয়ালেই অনু কেঁপে উঠে আদ্রের কাছ থেকে নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করতে থাকে। কিন্তু আদ্র এতো শক্ত করে অনুর হাত চেপে ধরে রেখেছে যে অনু সরাতে পারছে না। আদ্র অনুর গলা থেকে মুখ উঠিয়ে অনুর ঠোঁটের একদম কাছে নিজের ঠোঁট এগিয়ে নিলেই অনু এবার কাঁদতে লাগলো। আদ্র রাগী স্বরে অনুকে বলল,

–এখন কাঁদছিস কেন? আমাকে তখম চরিত্রহীন বলার সময় মনে ছিল না যে তোর জন্য খারাপ কিছু অপেক্ষা করতে পারে?

অনু নিজের দুই চোখ বন্ধ করেই কাঁদতে কাঁদতে আদ্রকে শান্ত স্বরে বলল,

–আই এম সরি আদ্র ভাইয়া। আমাকে তুমি মাফ করে দিও। আমাকে ছেড়ে দাও। আমার ক্ষতি করো না। আমি মরে যাবো।

আদ্র অনুর মুখের দিকে অনেকক্ষণ তাকিয়ে থেকেই অনুকে ছেড়ে দিল। মাটি থেকে অনুর ওড়নাটা তুলে আদ্র বিছানায় রাখলো। তারপর বিছানার একপাশে নিজের কপালে হাত দিয়ে আদ্র বসে রইল। অনু চোখ খুলে দেখল আদ্র অনুর মুখের সামনে নেই। অনুর হাতের মধ্যেেও আদ্রের হাত নেই। তাহলে আদ্র গেল কোথায়? অনু পাশ ফিরে আদ্রকে বসে থাকতে দেখে শুয়া থেকে উঠে বসলো। আদ্র নিজের কপালে হাত দিয়ে চোখ বন্ধ থাকা অবস্থায় অনুকে গম্ভীর স্বরে বলল,

–ওড়নাটা গায়ে দিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে যা অনু।

অনু আদ্রের কথামতো ওড়নাটা নিজের গায়ে জড়িয়েই রুম থেকে দৌড়ে চলে গেল।

#চলবে…

#তোমাকে_ঘিরে_আমার_অনুভূতি💖 (সিজন-২)
#পর্ব_১১
#Anika_Fahmida

যখন অনু দরজা খুলে সিঁড়ি বেয়ে নিচে নেমে ড্রইংরুমে আসে তখন সবাই অদ্ভুত দৃষ্টিতে অনুর দিকে তাকিয়ে থাকে। অনু ঘাবড়ে যায়। আদ্রের বাবা আনোয়ার হোসেন অনুকে গম্ভীর স্বরে বলল,

–আমরা অনেক বুঝিয়েছিলাম আদ্রকে যাতে তোমার কথা মাথায় না আনে। আমরা আরও ভালো মেয়ে দেখে আদ্রের বিয়ে দিতে চেয়েছিলাম৷ কিন্তু আদ্র শুধু তোমাকে বিয়ে করতে চায় বলে বাসায় পাগলামি শুরু করেছিল। আদ্র বাসার সবকিছু ভেঙে ফেলছিল। এমনকি খাবার খাওয়া অফ করে নিজের রুমে বসে ছিল। রুম থেকেও বের হতো না। কারও সাথে কথাও বলতো না। শুধু তোমাকে চাইতো। আর তুমি কিনা এভাবে সবার সামনে আদ্রকে অপমান করলে?

অনু মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে। আদ্রের বাবাকে কি বলবে কিছু বুঝতে পারছে না। আদ্রের মা রেহেনা পারভিন অনুকে রাগী স্বরে বলল,

–এই মেয়ে তোমার সাহস হয় কি করে আমার ছেলেকে চরিত্রহীন বলার? নিজের চেহারা কখনো আয়নায় দেখেছো? আমার ছেলের পেছনে হাজার হাজার সুন্দরী, হাই ক্লাস ফ্যামিলির মেয়ে পড়ে থাকে। কিন্তু আমার আদ্র বাবা কারও দিকে ফিরেও তাকায় না। আদ্র তোমার মতো একটা মেয়েকে পছন্দ করে বিয়ে করতে চেয়েছিল এটা তো তোমার একশো জন্মেরও ভাগ্যের ব্যাপার ছিল। আর তুমি আমার ছেলেকে এভাবে অপমান করে কষ্ট দিতে পারলে!

অনুর বাবা আরমান রহমান এগিয়ে এসে আনোয়ার হোসেন এবং রেহেনা পারভিনকে অসহায় স্বরে বলল,

–অনুকে আপনারা ক্ষমা করে দিবেন। অনু যে এমন কাজ করবে আমি বুঝতে পারি নি।

আনোয়ার হোসেন আরমান রহমানের দিকে তাকিয়ে গম্ভীর স্বরে বলল,

–তুমি আমার মান সম্মান কিছু রাখলে না আরমান। বন্ধু হয়ে বন্ধুর এতো বড় ক্ষতি করতে পারলে?

আরমান রহমান আনোয়ার হোসেনকে বলল,

–আমি জানতাম না অনু এমন কিছু করবে। অনু আমাকে বলেছিল আদ্রকে বিয়ে করতে রাজি আছে। কিন্তু সবার সামনে যে অনু আদ্রকে এভাবে অপমান করবে আমি বুঝতে পারি নি।

আমেনা বেগম আনোয়ার হোসেনকে বলল,

–ভাই আমার স্বামীকে দোষ দিবেন না। যা করেছে তাতো অনু করেছে। এমন মেয়ে আমি পেটে ধরেছি ভাবতেই আমার ঘৃণা লাগছে। অনু এমন হবে জানলে জন্মের সময় মুখে নুন দিয়ে মেরে ফেলতাম। এমন মেয়ে আমার দরকার নেই।

সবার কথায় এমনিতেও অনুর কান্না চলে আসছিল। অনুর মায়ের কথা শুনে অনু আর দাঁড়িয়ে থাকতে পারলো না। কান্না করতে করতে অনু দৌড়ে বাসা থেকে বেরিয়ে যায়। বাসায় ফিরে অনু খুব কান্না করল। চিৎকার করে অনু কান্না করলো। সবাই কেন অনুকে এতো ভুল বুঝছে? অনু যে আদ্র ভাইয়াকে ভীষণ ভয় পায় এটা কি সবাই বুঝে না? অনু মনে মনে কাঁদতে কাঁদতে বলল,

–আমার দোষ কি? আদ্র ভাইয়া ভীষণ রাগী। আমাকে বিয়ে করার পর মেরে ফেলবে। আজকে কেমন আমার সাথে দরজা বন্ধ করে অসভ্যতা করার চেষ্টা করেছিল। আর আমি কিনা ঐ আদ্র ভাইয়াকে বিয়ে করবো? কখনো বিয়ে করবো না। আদ্র ভাইয়া মানুষটাই কেমন পাগল পাগল। আমাকে পাগল বানিয়ে ছেড়ে দিবে। আব্বু এবং আম্মু জোর করলেও আমি আদ্র ভাইয়াকে কখনো বিয়প করবে না। আমার পড়াশোনা আছে। কই পড়াশোনা করে দেশ বিদেশ ঘুরে বেড়াবো। তা না করে ঐ রাগী, বেয়াদব আদ্র ভাইয়াকে বিয়ে করে অত্যাচারিত হতে আমি পারবো না।

আদ্র এখনও সেই একইভাবে বিছানায় বসে আছে। মাটির এক কোণায় এনগেজমেন্ট রিংটা জ্বলজ্বল করছে। আদ্র রিংটা মাটিতে পড়ে থাকতে দেখে বসা থেকে উঠে রিংটা তুলে নিয়ে টেবিলের উপর রাখলো। আদ্র মাঝে মাঝে সিগারেট খেলেও মদ তেমন খায় না। রুমের এক কোণায় মদের অনেক বোতল রাখা। কারণ আনোয়ার হোসেন এবং রেহেনা পারভিন যখন অনুকে আদ্রের বউ করতে মেনে নিচ্ছিল না তখন আদ্র সারাক্ষণ মদ খেয়ে বাসায় ভাঙচুর করতো। অনুর কাছ থেকে এতো অপমান, এতো অবহেলা আদ্র মেনে নিতে পারছে না। আদ্র কখনো ভাবে নি অনু এভাবে সবার সামনে আদ্রকে অপমান করবে। তাই মদের বোতল হাতে নিয়ে আদ্র মদ খেতে লাগলো। এমন সময় রেহেনা পারভিন আদ্রের রুমে এসে আদ্রকে মদ খেতে দেখে চিৎকার করে এগিয়ে এসে বলল,

–আদ্র বাবা মদ খাস না। মদ খেলে তোর শরীরের ক্ষতি হবে। মদটা ফেলে দে আদ্র।

আদ্র রেহেনা পারভিনের দিকে তাকিয়ে হেসে বলল,

–মা এখন এই মদটাই আমার একমাত্র সঙ্গী। তুমি আমাকে বিরক্ত করো নাতো। যাও নিজের রুমে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়ো।

রেহেনা পারভিন আদ্রকে বিরক্তি স্বরে বলল,

–অনু তোর যোগ্য না বাবা। আর এই কয়দিনেই তুই ঐ মেয়ের মধ্যে কি এমন পেয়েছিস?

আদ্র রেহেনা পারভিনকে হাসতে হাসতে বলল,

–অনুর মধ্যে আমি অনেক কিছু পেয়েছি মা। অনেক কিছু পেয়েছি। সবার মধ্যে তা নেই।

রেহেনা পারভিন আদ্রকে বলল,

–বাবা মদটা খাস না। ঐটা টেবিলে রেখে দে।

আদ্র এবার বিরক্তি স্বরে রেহেনা পারভিনকে বলল,

–মা বিরক্ত করবে নাতো। আমার কিছু ভালো লাগছে না। তুমি চলে যাও। আমাকে একটু একা থাকতে দাও। আমার কিছু ভালো লাগছে না মা। প্লিজ তুমি নিজের রুমে চলে যাও।

নিজের ছেলের এমন অবস্থা রেহেনা পারভিন কিছুতেই মেনে নিতে পারছে না। রেহেনা পারভিনের সব রাগ অনুর উপর গিয়ে পড়ল। তিনি নিজের চোখের জল মুছে আদ্রের রুম থেকে চলে গেলেন।

আদ্র মদ খেতে খেতে আনমনেই বলতে লাগলো,

–এতো কষ্ট করে মা-বাবাকে রাজি করিয়ে ছিলাম তোকে বিয়ে করবো বলে। কিন্তু সেই তুই আমাকে বিয়ে করতে রাজি হলি না অনু। উল্টো আমাকে তুই অপমান করলি। এতো রাগ হচ্ছিল যে চেয়েছিলাম আজ তোর সাথে ভয়ংকর কিছু খারাপ কাজ করতে। কিন্তু আমি পারলাম না। কি করে পারবো? তোকে কষ্ট দিতে কেন যেন আমার মন চাইলো না৷ আমি তোকে অন্যভাবে কষ্ট দিবো। তুই রেডি থাকিস অনু।

অনুর মা-বাবা আদ্রের বাসা থেকে চলে গেল৷ নিজের বাসায় এসে অনুর সাথে একবারও কথাও বললেন না অনুর বাবা আরমান রহমান এবং অনুর মা আমেনা বেগম। এমনকি রাতে কেউ খাবারও খেলো না। অনুও না খেয়েই ঘুমিয়ে পড়লো।

আদ্র বারান্দায় দাঁড়িয়ে ছিল। আনোয়ার হোসেন আদ্রের রুমে এসে আদ্রকে এদিকে ওদিক না পেয়ে বারান্দায় গিয়ে দেখল আদ্র দাঁড়িয়ে আছে। আনোয়ার হোসেন আদ্রকে শান্ত স্বরে বলল,

–যা হয়েছে সব ভুলে যাও আদ্র। অনুকে তুমি ভুলে যাও। আমরা তোমার সাথে অনুর থেকেও হাজার গুণ ভালো এবং সুন্দরী মেয়ে বিয়ে দিবো। চলো আমাদের সাথে খেতে আসো। তোমার মা ডাইনিং রুমে খাবার টেবিলে খাবার নিয়ে বসে আছে।

আদ্র চুপ করে কথাগুলো শুনে নিয়ে আনোয়ার হোসেনের দিকে তাকিয়ে শান্ত স্বরে বলল,

–আমার হাজার সুন্দরী ভালো মেয়ে চাই না বাবা। আমার শুধু অনুকেই চাই। আমি কিছু খাবো না। তুমি এবং মা খেয়ে নিয়ে শুয়ে পড়ো।

আনোয়ার হোসেন এবার বিরক্তি স্বরে আদ্রকে বলল,

–আরমানের মেয়ে তো আহামরি সুন্দরী না। তাহলে ঐ মেয়ের মধ্যে কি এমন পেলে তুমি?

আদ্র সিগারেটে আগুন ধরিয়ে সিগারেট খেতে খেতে আনোয়ার হোসেনকে বলল,

–কি পেয়েছি জানি না৷ কিন্তু আমার অনুকেই চাই বাবা।

আনোয়ার হোসেনের এখন নিজের উপর রাগ হচ্ছে। কেন যে বন্ধু আরমান রহমান ও তার পরিবারকে আদ্রের জন্মদিনে নিমন্ত্রণ করেছিল কে জানে। নিমন্ত্রণ না করলে আদ্রের সাথে অনুর দেখাও হতো না। আর আদ্র এমন পাগলামো করতো না। আনোয়ার হোসেন আদ্রের রুম থেকে চলে গেল। আদ্র বারান্দায় দাঁড়িয়ে ঘন কালো আকাশের দিকে তাকিয়ে দীর্ঘ শ্বাস ফেললো। আকাশে কোনো চাঁদ বা তারাও নেই। আকাশে শুধু কালো মেঘ। আদ্র সিগারেট খাওয়া শেষ করে সিগারেটের অবশিষ্ট অংশটা বাইরে ছুঁড়ে ফেললো। তারপর অনুর কথা ভেবে গান গাইতে লাগল,

Dil ka dariya beh hi gaya
Ishq ibadat ban hi gaya
Khud ko mujhe tu sonp de
Meri zaroorat tu ban gaya
Baat dil ki nazron ne ki
Sach keh raha teri kasam
Tere bin ab na lenge ik bhi dam
Tujhe kitna chahne lage hum
Tere bin ab na lenge ik bhi dam
Tujhe kitna chahne lage hum
Tere saath ho jayenge khatam
Tujhe kitna chahne lage hum
Baat dil ki nazron ne ki
Sach kehe raha teri kasam
Tere bin ab na lenge ik bhi dam
Tujhe kitna chahne lage hum

আদ্রের কিছু ভালো লাগছে না৷ রুমে গিয়ে সোফায় বসে পড়ল আদ্র। অনুকে ফোন দিতে মন চাইছে তবুও আদ্র অনুকে ফোন দিল না। আদ্রের রুমে সুমি প্রবেশ করে জোর গলায় বলল,

–এসব নেশা না করে আমাকে ভালোবাসলে কি হয় আদ্র? আমাকে একটু ভালোবেসে দেখ। আমি তোর সব কষ্ট ভুলিয়ে দিবো। আমি তোকে প্রমিজ করছি।

আদ্র পেছন ফিরে সুমিকে দেখে অবাক হলো। এখন রাত হলেও গভীর রাত নয়। কিন্তু সুমির কথা শুনে আদ্রের মেজাজ খারাপ হয়ে গেল৷ আদ্র রেগে গিয়ে বসা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে সুমিকে বলল,

–তুই এতো রাতে আমার রুমে কেন এসেছিস?

সুমি আদ্রের দিকে তাকিয়ে শান্ত স্বরে বলল,

–তোর কষ্ট দেখে আমি আর থাকতে পারলাম না আদ্র। আমাকে একটু ভালোবেসে দেখ তোর সব কষ্ট আমি ভুলিয়ে দিবো।

আদ্র রাগী স্বরে সুমিকে বলল,

–তুই শুধুমাত্র আমার জাস্ট ফ্রেন্ড তা কি তুই ভুলে যাচ্ছিস সুমি? যদি ভুলে থাকিস তুই যে জাস্ট আমার ফ্রেন্ড তাহলে আবারও তোর মাথায় ভালো করে সেটা ঢুকিয়ে নে। আর আমি তোকে কখনো ভালোবাসবো না।

সুমি বিচলিত হয়ে আদ্রকে বলল,

–কেন আদ্র? আমাকে কেন ভালোবাসতে পারবি না? আমি তো তোকে খুব ভালোবাসি।

আদ্র হাসতে হাসতে সুমিকে বলল,

–ভালোবাসা বলাটা সহজ রে সুমি। ভালোবাসা শব্দটা ছোট হলেও এর মানেটা বিশাল বড়। ভালোবাসা খুব জটিল। যেখানে আমি নিজেই বুঝতে পারছি না ভালোবাসা কেমন হয়? সেখানে তুই ভালোবাসার আসল মানে কিছুই তো বুঝবি না।

সুমি আদ্রের হাত ধরে বলল,

–আদ্র আমার দিকে একবার তাকিয়ে তো দেখ আমি অনুর থেকেও হাজার গুণ সুন্দরী। তুই আমাকে ভালো না বেসে ঐ অনুকে কেন ভালোবাসিস?

আদ্র নিজের হাত সুমির থেকে ছাড়িয়ে বলল,

–তুই অনুর থেকে বেশি সুন্দরী কিনা তা জেনে আমি কি করবো? আর সবচেয়ে বড় কথা আমি কাউকেই ভালোবাসি না।

সুমি অবাক হয়ে আদ্রকে জিজ্ঞেস করল,

–তুই অনুকে ভালোবাসিস না?

আদ্র সুমিকে গম্ভীর স্বরে বলল,

–না, আমি অনুকে ভালোবাসি না। তবে আমার অনুকে চাই৷ আমি কাউকে চাই না। আমার শুধু অনুকেই চাই।

#চলবে…