#তোমাকে_ঘিরে_আমার_অনুভূতি💖 (সিজন-২) #পর্ব_১৪
#Anika_Fahmida
আদ্র অনুর পাগলামো দেখে আর যেতে পারলো না। অনুর পাশেই বসে রইল। আমেনা বেগম মনে মনে ভেবে নিলো আদ্র এখন অনুর খেয়াল রাখবে। তাই আমেনা বেগম অনুর রুম থেকে বের হয়ে নিজের রুমে চলে গেল। আদ্র অনুর কাছে এসে পড়েছে এখন আর আমেনা বেগমের কোনো চিন্তা নেই। আদ্র অনুর দিকে তাকিয়ে শান্ত স্বরে জিজ্ঞেস করল,
–তুমি এখন কি চাও অনু? বলো তো আমাকে?
অনু আদ্রকে হাসতে হাসতে বলল,
–এখন আমি শুধু তোমাকে চাই।
আদ্র দুষ্টু হাসি হেসে নিজের হাত অনুর গালে হালকা স্পর্শ করে বলল,
–এখন সত্যি আমাকে চাও? চাওয়া বলতে কি বুঝায় বুঝতে পারছো কি অনু?
আদ্র হঠাৎই অনুর গাল স্পর্শ করে এভাবে জিজ্ঞেস করায় অনু লজ্জা পেয়ে মাথা নিচু করে ফেললো।
আদ্র অনুর গাল থেকে নিজের হাত সরিয়ে নিল। হতাশ হয়ে আদ্র মনে মনে বলল,
–আমি কখনো ভাবতে পারি নি অনু আমার কথা ভেবে ভেবে এমন অসুস্থ হয়ে যাবে। আমি কখনো চাই নি অনু এভাবে অসুস্থ হয়ে থাকুক। কিন্তু আমিই বা কি করতাম? অনু যেভাবে আমাকে অপমান করেছিল তার জন্য আমি নিজেই কিছুদিন মন খারাপ করে অনুর সাথে দেখা করা, কথা বলা বন্ধ করেছিলাম। ভেবেছিলাম আমার মন ভালো হলে অনুর সাথে কিছুদিন পর নিজে থেকেই আবার দেখা করে কথা বলবো। কে জানতো এরই মাঝে অনু অসুস্থ হয়ে যাবে!
অনু আদ্রের শার্ট ধরে টানতে টানতে বলল,
–এই আদ্র ভাইয়া হঠাৎ করে চুপ হয়ে গেলে কেন? আমাকে নিয়ে ঘুরতে চলো। আমি তোমার সাথে ঘুরতে যাবো। বহুদূর ঘুরতে যাবো।
আদ্র অনুকে মুচকি হেসে বলল,
–ওকে যেও। কিন্তু তুমি সুস্থ হওয়ার পর। এখন নয়।
অনু মন খারাপ করে আদ্রকে বলল,
–তুমি পঁচা। আমার কথা শুনো না।
আদ্র অনুকে হেসে বলল,
–হ্যা তোমার কাছে যদি আমি পঁচা হই তাহলে আমি পঁচা। এছাড়াও পঁচা ছাড়া তুমি আমাকে আরও অনেকগুলো নাম দিয়েছো যা আমি হজম করে নিয়েছি। এখন তোমাকে একটা কথা বলি অনু। তোমার সেটা শুনতে হবে।
অনু আদ্রকে জিজ্ঞেস করল,
–কি কথা আদ্র ভাইয়া বলো?
আদ্র অনুকে বলল,
— তুমি অসুস্থ। এখনও ঔষধ খাও নি। তাই আমি তোমার জন্য খাবার এবং ঔষধ নিয়ে আসি অনু। আর জেদ করো না। তুমি একটু শুয়ে থাকো। আমি একটু পরেই আবার চলে আসবো।
অনু রেগে গিয়ে আদ্রকে বলল,
–না। তুমি কোথাও যাবে না। তুমি এখানেই আমার কাছে থাকবে।
আদ্র চোখ বন্ধ করে রাগ কনট্রোল করার চেষ্টা করে অনুকে শান্ত স্বরে বলল,
–অনু জেদ করো না। আমি চলে আসবো বললাম তো।
অনু চিৎকার করে আদ্রকে বলল,
–না। তুমি কোথাও যাবে না।
অনুর এমন জেদ করাতে আদ্রের মেজাজ এবার গরম হয়ে গেল। এতো বার বলার পরেও অনু শুনছে না। আদ্র রেগে গিয়ে অনুর ডান হাত শক্ত করে চেপে ধরলো। অনু নিজের হাতের দিকে তাকিয়ে তারপর আদ্রের দিকে তাকিয়ে ভয় পাওয়া স্বরে বলল,
–আমার হাত চেপে ধরছো কেন? আমি ব্যথা পাচ্ছি।
আদ্র অনুর আরও কাছে এগিয়ে এসে রাগী স্বরে বলল,
–তুমিই আমাকে রাগিয়ে দিয়েছো। আমি কি বলেছি কথা কানে যায় না তোমার? চুপচাপ শুয়ে থাকো। নাহলে এখনই তোমার জ্বরের শরীরেই তোমার গালে কষিয়ে চড় মারবো।
অনু আদ্রের কথা শুনে ভয় পেয়ে শুয়ে পড়ল। আদ্র হেসে অনুকে বলল,
–এই তো গুড গার্ল।
অনু মন খারাপ করে আদ্রকে বলল,
–তুমি খুব খারাপ৷ তুমি বেড বয়৷ আই হেট ইউ।
আদ্র অনুর কথা শুনে হাসতে হাসতে বলল,
–ইউ হেট মি? ওকে ফাইন। বাট আই লা…
আদ্র অনুকে বলতে গিয়েও থেমে গেল। আদ্রের নিজের উপর নিজেরই রাগ হলো। আদ্র মনে মনে বলল,
–এসব কি বলতে যাচ্ছিলাম আমি? ইম্পসিবল! আমি কোনোদিন কাউকে ভালোবাসি নি৷ ভালোবাসবোও না।
অনু শুয়া থেকে উঠে বসে আদ্রের মুখের দিকে তাকিয়ে রইল। অনু আদ্রকে জিজ্ঞেস করল,
–তুমি আমাকে কি বলতে চাইছিলে আদ্র ভাইয়া?
আদ্র অনুর মুখের দিকে শান্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল,
–কিছু না।
আদ্র অনুর রুম থেকে বের হয়ে চলে গেল। অনু মন খারাপ করে বলল,
–আদ্র ভাইয়া চলে গেল? আবার ফিরে আসবে তো?
আদ্র বাইরে বের হয়ে অনুর জন্য ঔষধ এবং খাবার কিনে নিয়ে আবারও অনুর বাসায় এসে পড়ে। অনুর রুমে ঢুকে আদ্র দেখল অনু ঘুমিয়ে পড়েছে। ঘুমন্ত অনুকে দেখে আদ্রের মনে হলে একটা বাচ্চা মেয়ে ঘুমিয়ে আছে। অনু ঘুমিয়ে থাকলে বুঝি অনুকে এতোটাই বাচ্চা লাগে? আদ্র টেবিলে খাবার এবং ঔষধগুলো রেখে অনুর মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে। অনুর কপালে আদ্র নিজের অজান্তেই এগিয়ে গিয়ে গভীর চুমু দিল৷ অনু সাথে সাথেই চোখ খুলে আদ্রকে চোখের সামনে দেখল। অনু শুয়া থেকে উঠে বসল। নিজের কপালে হাত দিয়ে অনু অবাক হয়ে আদ্রকে জিজ্ঞেস করল,
–তুমি আমার কপালে কি করেছো আদ্র ভাইয়া? নরম কিছু আমার কপালে অনুভব করলাম?
আদ্র অনুকে গম্ভীর স্বরে বলল,
–কিছু না৷ এটা তোমার মনের ভুল ছিল অনু৷
অনু আদ্রের মুখের দিকে গভীর দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল,
–তুমি আমার কপালে একটু আগে চুমু দিয়েছো তাই না? আমি ঠিক বলছি তো?
আদ্র অনুর দিকে তাকিয়ে বলল,
–হ্যা আমিই তোমার কপালে চুমু দিয়েছি। কি করবে?
অনু কয়েক সেকেন্ড আদ্রের দিকে হা করে তাকিয়ে রইল। অনু শুকনো ঢুক গিলে ভয় পাওয়া স্বরে বলল,
–আমি তো ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। তাই তেমন বুঝতে পারি নি যে আমার সাথে তুমি কি করেছো। আচ্ছা আদ্র ভাইয়া তুমি আমার সাথে আর কিছু করো নিতো?
আদ্র রাগী স্বরে অনুকে বলল,
–মানে? তোমার সাথে আর কি করবো?
অনু আদ্রের একদম কাছে এগিয়ে এসে বলল,
–তুমি আর কোথায় কোথায় আমাকে চুমু দিয়েছো বলো তো আদ্র ভাইয়া? একদম সত্যি কথা বলবে। একটুও মিথ্যা কথা কিন্তু বলবে না।
অনুর কথা শুনে আদ্র অনুকে গম্ভীর স্বরে বলল,
–তোমাকে আরও অনেক জায়গায় চুমু দিয়েছি। এবার শুনে তোমার শান্তি হয়েছে?
আদ্রের কথা শুনে অনুর এবার ভীষণ কান্না পেল। অনু কান্না করে ভয় পাওয়া স্বরে আদ্রকে বলল,
–তুমি আমাকে আরও অনেক জায়গায় চুমু দিয়েছো! তারমানে আমার ইজ্জত তুমি নষ্ট করে দিয়েছো? তুমি এতোটা খারাপ আদ্র ভাইয়া?
আদ্র এবার রেগে গিয়ে অনুর দুই হাত শক্ত করে চেপে ধরে অনুকে টেনে নিজের কাছে নিয়ে এসে বলল,
–আমি শুধুই তোর কপালে চুমু দিয়েছি। তাও কেন উল্টা পাল্টা বলছিস অনু ? আমাকে তোর এতোটাই খারাপ বলে মনে হয়? কতদিন ধরে চিনিস আমাকে?
অনু আদ্রের চোখে রাগ দেখে ভয়ে চুপ হয়ে রইলো। কিছু বলতে পারলো না। আদ্র এতো শক্ত করে অনুর দুই হাত চেপে ধরেছে অনুর হাত মনে হয় ভেঙেই যাবে। অনু কাঁদতে কাঁদতে বলল,
–আমি বুঝতে পারি নি। আমার হাতে ব্যথা লাগছে। ছাড়ো আমাকে। তুমি শুধু আমাকে কষ্ট দাও।
অনুর কথা শুনে আদ্র অনুকে ছেড়ে দিল। অনু আদ্রকে ভয় পেয়ে আদ্রের থেকে দূরে গিয়ে বসলো। আদ্র বুঝতে পেরে মনে মনে বলল,
–এটা আমি কি করছিলাম? অনুর জ্বরের শরীরে এভাবে অনুকে আঘাত দেওয়া আমার ঠিক হয় নি। কেন যে এতো আমি রেগে যাই! কেন আমি রাগকে কনট্রোল করতে পারি না?
আদ্রের নিজেকে খুব অপরাধী লাগছে। অসহায় দৃষ্টিতে আদ্র অনুর দিকে তাকাল।
#চলবে…
#তোমাকে_ঘিরে_আমার_অনুভূতি💖 (সিজন-২)
#পর্ব_১৫
#Anika_Fahmida
আদ্র বসা থেকে উঠে টেবিল থেকে খাবার প্লেটে নিয়ে অনুর দিকে এগিয়ে গেলো। অনু অন্যদিকে মুখ ঘুরে বসে আছে। আদ্র অনুকে শান্ত স্বরে বলল,
–অনু খাবার খেয়ে নাও।
অনু খাবারের দিকে তাকিয়ে দেখল প্লেটে খিচুড়ি। আদ্রের দিকে তাকিয়ে অনু গম্ভীর স্বরে বলল,
–আমি খিচুড়ি খাবো না।
আদ্র অনুকে জিজ্ঞেস করল,
–তাহলে তুমি কি খাবে?
অনু বসা থেকে শুয়ে পড়ে কাঁথা জড়িয়ে নিল। অনুর এমন কাজে আদ্র অনুর দিকে গম্ভীর হয়ে তাকিয়ে রইল। অনু মন খারাপ করে আদ্রকে বলল,
–তুমি আমাকে বকা দিয়েছো। আমার হাতেও তুমি ব্যথা দিয়েছো। তাই আমি কিছু খাবো না।
আদ্র খাবার হাতে নিয়েই অনুর পাশে বসে বলল,
–অনু জেদ করো না। আমি তোমার উপর একটু বেশি রাগ দেখিয়ে ফেলেছি। তাই না? আই এম রিয়েলি সরি অনু। আর এমন করবো না। এবার তো খাবার খেয়ে নাও। তোমার ঔষধ খেতে হবে।
অনু আদ্রের দিকে তাকিয়ে শান্ত স্বরে বলল,
–আমি খাবারও খাবো না। ঔষধও খাবো না।
আদ্র অনুর দিকে রাগী দৃষ্টিতে তাকাল। আদ্রের এমন রাগী দৃষ্টি দেখে অনু মুখে কাঁথা দিয়ে নিল। অনু কাঁথার নিচেই মনে মনে বলল,
–আমাকে আবার আদ্র ভাইয়া মারবে নাতো?
আদ্র খাবারটা বিছানার একপাশে রেখেই অনুর গায়ের থেকে কাঁথাটা একটান দিয়ে সরিয়ে দিল। অনু শুয়া থেকে উঠে বসে মন খারাপ করে আদ্রকে বলল,
–আমি বললাম তো আদ্র ভাইয়া এই খাবার আমি খাবো না। আমার কিছু ভালো লাগছে না।
আদ্র কাঁথাটা হাতের মুঠোয় নিয়েই অনুর দিকে রাগী দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল,
–খাবার খাবে নাকি আমার হাতে মার খাবে? কোনটা চাও? দুইটার মধ্যে যেকোনো একটা চুজ করতে হবে তোমাকে। তোমার জন্য টাইম ১০ সেকেন্ড।
অনু ভয় পেয়ে তাড়াতাড়ি করে আদ্রকে বলল,
–আচ্ছা ঠিক আছে আমি খাবো।
অনুর উত্তর শুনে আদ্র মুচকি হাসলো। কিন্তু অনু হাসিমুখে আদ্রের দিকে তাকিয়ে বলল,
–আমি খাবার খাবো। কিন্তু এই খিচুড়ি আমি খাবো না।
আদ্র কপাল কুঁচকে অনুকে বলল,
–তাহলে তুমি কি খাবে অনু?
অনু দাঁত বের করে হেসে আদ্রকে বলল,
–কি আর খাবো? আমি তোমার হাতের বানানো চিকেন সুপ খাবো। আমার তোমার হাতের বানানো চিকেন সুপ খেতে ভীষণ ইচ্ছে করছে। তাড়াতাড়ি বানিয়ে নিয়ে আসো মাই ডেয়ার সুইট আদ্র ভাইয়া।
আদ্র অনুর কথা শুনে হেসে বলল,
–কিন্তু আমি যে রান্না করতে পারি না অনু। তাই তোমার জন্য আমি চিকেন সুপও বানাতে পারবো না। বায়না না করে খিচুড়িটা খেয়ে নাও।
অনু রাগী স্বরে আদ্রকে বলল,
–তাহলে আমি কিছুই খাবো না। তোমার খিচুড়ি আর ঔষধ দূরে নিয়ে রাখো।
আদ্র অনুকে শান্ত স্বরে বলল,
–আমি তাহলে আন্টিকে বলি তোমার জন্য চিকেন সুপ বানিয়ে নিয়ে আসতে। তাহলেই তো হলো।
অনু আদ্রকে গম্ভীর স্বরে বলল,
–আমি আম্মুর বানানো চিকেন সুপ খাবো না না না। তোমাকেই আমার জন্য চিকেন সুপ বানাতে হবে।
আদ্র ভীষণ চিন্তায় পড়ে গেল। জীবনেও আদ্র রান্নাঘরের ধারের কাছে যায় নি। আর এখন অনুর জন্য শেষে কিনা রান্নাঘরে গিয়ে খাবার বানাতে হবে? আদ্র অনুর দিকে তাকিয়ে অসহায় স্বরে বলল,
–আমি রান্না করতে পারি না অনু। কিভাবে আমি রান্না করবো? তুমিই বলো?
অনু হেসে আদ্রকে বলল,
–কিভাবে আবার? ইউটিউব থেকে দেখে শিখে নিয়ে আমার জন্য চিকেন সুপ বানিয়ে নিয়ে আসো।
আদ্র অনুকে শান্ত স্বরে বলল,
–আমি বাইরে থেকে তোমার জন্য চিকেন সুপ নিয়ে আসি? তাহলে হবে না?
অনু রাগী স্বরে আদ্রকে বলল,
–একদমই হবে না। তোমাকে নিজের হাতেই আমার জন্য চিকেন সুপ বানাতে হবে। যাও যাও তাড়াতাড়ি ইউটিউবে রান্না দেখে আমার জন্য চিকেন সুপ বানিয়ে নিয়ে আসো। ভীষণ খিদে পেয়েছে আমার।
আদ্র অনুর দিকে রাগী দৃষ্টিতে তাকিয়েই অনুর রুম থেকে বের হয়ে রান্নাঘরে চলে গেল। অনু আদ্রকে এভাবে হেনস্তা করতে পেরে ভীষণ হাসতে লাগলো। অনু মনে মনে বলল,
–এখন আমার জন্য খেটেখুটে রান্না করো আদ্র ভাইয়া। অনেক জ্বালিয়েছো আমাকে। এবার বুঝো মজা।
আদ্র রান্নাঘরে গিয়েই পাতিল আর খুন্তি হাতে নিয়ে রাগে ঘন ঘন নিশ্বাস ফেলতে লাগলো। আদ্র কপাল কুঁচকে মনে মনে বলল,
–এইটুকু পিচ্চি মেয়ে আমাকে দিয়ে কিনা রান্না করাচ্ছে। যেই আমি কোনোদিন নিজে থেকে একটা কফি পর্যন্ত বানিয়ে খাই নি!
আদ্রকে রান্নাঘরের দিকে যেতে দেখে অনুর মা আমেনা বেগম রান্নাঘরে গিয়ে আদ্রকে জিজ্ঞেস করল,
–আদ্র বাবা তুমি রান্নাঘরে কি করছো? অনু তোমাকে সামনে না পেলে যদি আবার রাগারাগি করে তখন কি হবে? আমার মেয়েটা তো অসুস্থ। এই সময় অনু তোমাকে সামনে না পেলে আরও অসুস্থ হবে।
আদ্র হতাশ স্বরে আমেনা বেগমকে বলল,
–আন্টি আপনার মেয়ে আমার বারোটা বাজিয়ে ছেড়েছে। এখন আমার আপনার মেয়ের জন্য রান্না করতে হবে। অনুর এখন আমাকে দরকার নেই। অনুর এখন দরকার হলো আমার বানানো চিকেন সুপ।
আমেনা বেগম অবাক হয়ে আদ্রকে বলল,
–কি বলছো তুমি আদ্র? তোমার রান্না করতে হবে না। আমি অনুর জন্য চিকেন সুপ বানিয়ে নিচ্ছি।
আদ্র আমেনা বেগমকে শান্ত স্বরে বলল,
–না আন্টি। তা হবে না। অনু আমার হাতের রান্নাই খেতে চেয়েছে। আমাকেই চিকেন সুপ রান্না করতে হবে।
আমেনা বেগম চিন্তিত স্বরে আদ্রকে বলল,
–কিন্তু তুমি কি করে রান্না করবে বাবা? তুমি কি রান্না করতে পারো?
আদ্র মন খারাপ করে আমেনা বেগমকে বলল,
–আমি রান্না করতে পারি না আন্টি। এখন ইউটিউব থেকে দেখে চিকেন সুপ বানাবো।
আমেনা বেগম আদ্রকে বলল,
–তাহলে আমি তোমাকে চিকেন সুপ বানাতে হেল্প করি।
আদ্র হেসে আমেনা বেগমকে বলল,
–না আন্টি। আমার জন্য আপনাকে কষ্ট করে রান্নায় হেল্প করতে হবে না। আমি একাই অনুর জন্য চিকেন সুপ বানাতে পারবো।
আমেনা বেগম আদ্রকে শান্ত স্বরে বলল,
–তাহলে তুমি অনুর জন্য চিকেন সুপ বানাও আদ্র। আমি অনুর রুমে গেলাম।
আমেনা বেগম রান্নাঘর থেকে চলে গেল। আদ্র ফ্রিজ থেকে মুরগির লেগ পিছ কেটে কুচি কুচি করে নিল। তারপর ইউটিউব থেকে আদ্র দেখতে লাগলো কিভাবে চিকেন সুপ বানাতে হয়। আমেনা বেগম অনুর রুমে গিয়ে অনুকে জিজ্ঞেস করল,
–কিরে তুই আদ্রকে রান্না করতে বলেছিস কেন?
অনু আমেনা বেগমকে হেসে বলল,
–আম্মু আমার আদ্র ভাইয়ার হাতের রান্না খেতে মন চেয়েছে। তাই আমি বলেছি আদ্র ভাইয়াকে আমার জন্য চিকেন সুপ বানাতে।
আমেনা বেগম মন খারাপ করে অনুকে বলল,
–কিন্তু ছেলেটা তো কোনোদিন রান্না করে নি। তোর জন্য আদ্রের কত কষ্ট হচ্ছে!
অনু গম্ভীর স্বরে আমেনা বেগমকে বলল,
–আম্মু তুমি শুধু আদ্র ভাইয়ার কষ্ট দেখতে পাও। আমার কষ্ট দেখতে পাও না?
আমেনা বেগম অনুকে রাগী স্বরে বলল,
–তোর সাথে আমার কথা বলেই লাভ নেই।
আমেনা বেগম অনুর রুম থেকে বের হয়ে নিজের রুমে চলে গেল। অনু যে কেন আদ্রকে এভাবে কষ্ট দিচ্ছে আমেনা বেগম বুঝতে পারছে না।
রান্না করতে গিয়ে আগুনের তাপে আদ্র ভীষণ ঘেমে যাচ্ছে। রুমাল দিয়ে বার বার মুখ থেকে ঘাম মুছে আদ্র খুন্তি দিয়ে রান্না করতে লাগলো। আদ্র চিকেন সুপ বানাচ্ছে আর মনে মনে বলল,
–আহা এ জীবনে আমার আর কি কি করতে হবে জানি না। অনু এই কয়েকদিনেই আমার অবস্থা বারোটা বাজিয়ে দিয়েছে। কি জানি রান্নাটা ভালো হবে কিনা! জীবনেও তো আমি রান্না করি নি। অনু তোমার জন্য চিকেন সুপ বানাচ্ছি। আমার রান্না ভালো হলেও তোমাকে খেতে হবে আর যদি রান্না ভালো নাও হয় তবুও তোমাকে এই চিকেন সুপ খেতেই হবে। আমার বানানো চিকেন সুপ বলে কথা! খেতে তো তোমাকে হবেই অনু।
#চলবে…