তোমাকে ঘিরে আমার অনুভূতি ২ পর্ব-১৬+১৭

0
720

#তোমাকে_ঘিরে_আমার_অনুভূতি💖 (সিজন-২)
#পর্ব_১৬
#Anika_Fahmida

বেশ অনেকক্ষণ সময় পাড় হয়ে গেছে। অনু সেই কখন থেকেই বিছানায় বসে আছে। আদ্র খাবার নিয়ে আসার নাম নেই। অনুর খুব বিরক্ত লাগছে। অবশেষে আদ্র অনুর জন্য চিকেন সুপ নিয়ে আসলো। অনু চিকেন সুপটা দেখছে৷ আচ্ছা এটা কি অনু খেতে পারবে? খাওয়ার মতো হবে তো? আদ্র হেসে অনুকে বলল,

–এই নাও অনু। এবার তোমার স্বাদের চিকেন সুপটা তুমি খেয়ে নাও। আমি অনেক কষ্ট করে তোমার জন্য বানিয়ে নিয়ে এসেছি।

অনু আদ্রের মুখের দিকে একবার তাকিয়ে বাটির মধ্যে থাকা চিকেন সুপের দিকে তাকাল। হাতে চামচটা নিয়ে অনু চিকেন সুপ খেয়ে চোখ বড়বড় করে আদ্রের দিকে তাকাল। আদ্র গম্ভীর স্বরে অনুকে বলল,

–রান্না ভালো হয় নি?

অনু অবাক হয়ে আদ্রকে বলল,

–এই চিকেন সুপটা তুমি বানিয়েছো?

আদ্র অনুকে বলল,

–হ্যা আমি বানিয়েছি।

অনু খুশি হয়ে আদ্রকে বলল,

–চিকেন সুপটা খেতে অনেক মজা হয়েছে আদ্র ভাইয়া। আমি তো ভাবতেও পারছি না এটা তোমার নিজের হাতের প্রথম রান্না! ওয়াও!

আদ্র অনুর কথায় খুশি হলো। যাক এতো কষ্ট করে অনুর জন্য রান্নাটা বৃথা যায় নি। আদ্র অনুকে বলল,

–আমি একটু খেয়ে দেখবো। দেখি চামচটা দাও।

অনু আদ্রের দিকে চামচ এগিয়ে দিল। আদ্র অনুর বাটি থেকে এক চামচ সুপ খেয়ে দেখল আসলেই অনু ঠিক বলেছে। আদ্রের জীবনের প্রথম রান্না খারাপ হয় নি। অনু সুপ খেতে খেতে বলল,

–আদ্র ভাইয়া তুমি আমার মুখের সুপটা খেলে?

আদ্র অনুকে জিজ্ঞেস করলো,

–তো কি হয়েছে?

অনু মাথা নিচু করে আদ্রকে বলল,

–কিছু হয় নি।

আদ্র অনুকে বলল,

–চুপচাপ সুপ খেয়ে নাও। তোমার ঔষধ খেতে হবে।

অনু আদ্রকে হাসিমুখে বলল,

–আদ্র ভাইয়া তোমার হাতের রান্না অনেক ভালো। মাঝে মাঝে আমার জন্য রান্না করবে তো?

আদ্র চেয়ারে বসে অনুকে বলল,

–হ্যা তুমি বললে অবশ্যই তোমার জন্য আমি রান্না করবো অনু।

অনু সুপ খাওয়া শেষ হলে আদ্র অনুকে নিজের হাতে ঔষধ খাইয়ে দেয়। অনুকে আদ্র জ্বরের ঔষধের সাথে ঘুমের ঔষধ খাইয়ে দিয়ে ঘুম পাড়িয়ে দিল। অনুর পাশে অনেকক্ষণ আদ্র বসে ছিল। অনু বিছানায় শুয়ে চোখ বন্ধ করে শুয়ে আছে। আদ্র অনুর মাথায় হাত বুলিয়ে রুম থেকে চলে যায়। আদ্র ড্রইংরুমে গেলে আমেনা বেগম নিজের রুম থেকে বেরিয়ে এসে আদ্রকে বলল,

–অনু এখন ঠিক আছে তো বাবা? আমার মেয়েটা আর পাগলামি করবে নাতো?

আদ্র হেসে আমেনা বেগমকে বলল,

–না আন্টি। অনু আর পাগলামি করবে না। অনুকে আমি ঔষধ খাইয়ে দিয়েছি। সাথে ঘুমের ঔষধও। অনু এখন ঘুমাচ্ছে। ঘুম থেকে উঠে অনু ঠিক হয়ে যাবে।

আমেনা বেগম আদ্রকে বলল,

–অনু তোমাকে ভীষণ কষ্ট দিয়েছে। এতো অপমান করেছে। তাও তুমি অনুর জন্য যা করলে সত্যি আমরা তোমার কাছে ঋণী হয়ে থাকবো বাবা।

আদ্র আমেনা বেগমকে বলল,

–আন্টি অনুর জন্য আমার এসব করলেই আপনাদের আমার কাছে ঋণী হয়ে থাকতে হবে এমন কোনো কথা নেই। অনু তো আমার হবু স্ত্রী। আমি আমার হবু স্ত্রীর জন্য এইটুকু করতেই পারি। এটা আমার কর্তব্য।

আমেনা বেগম আদ্রকে জিজ্ঞেস করল,

–অনু তোমার হবু স্ত্রী মানে? আদ্র বাবা অনু তো তোমাকে বিয়ে করতে চায় না।

আদ্র মুচকি হেসে আমেনা বেগমকে বলল,

–কিন্তু আমি অনুকে বিয়ে করতে চাই আন্টি। আজ হোক বা কাল আমাকেই অনুর বিয়ে করতে হবে।

আমেনা বেগম আদ্রের কথা শুনে স্তব্ধ হয়ে গেল। আদ্র আর কথা না বাড়িয়ে অনুর বাসা থেকে চলে গেল।
এখন বিকেল বেলা। অনু চোখ খুলে চারপাশটা দেখল। মাথাটা অনুর ভীষণ ব্যথা করছে। অনু আস্তে আস্তে করে শুয়া থেকে উঠে বসল। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখল ৪ঃ৩০ বাজে। বিছানা থেকে নেমে অনু বারান্দায় চলে গেল। আজ সারাদিন কি হয়েছে মনে করতেই অনু অবাক হলো। আদ্রকে অনু যা জ্বালিয়েছে তা মনে হতেই অনুর মন খারাপ হলো। অনু মনে মনে বলল,

–আমি যতটা আদ্র ভাইয়াকে খারাপ ভেবেছিলাম ততটা খারাপ কিন্তু আদ্র ভাইয়া নয়। রাগী হলেও আদ্র ভাইয়ার মনটা বেশ ভালো। আমার কত সেবা করলো! আমার জন্য রান্না করলো। আর আমি আদ্র ভাইয়াকে কি পঁচা পঁচা কথা বলে ফেলেছি। আবার আদ্র ভাইয়াকে দিয়ে জোর করে আমি আমার জন্য রান্না করিয়েছি। ছিঃ লজ্জা হওয়া উচিত আমার। এতোটা বেহায়া কিভাবে হলাম আমি!

এমন সময় অনুর ফোনে কল এলো। আদ্র ফোন করেছে। অনু ফোনটা রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে আদ্র অনুকে বলল,

–এখন কেমন আছো অনু?

অনুর ভীষণ লজ্জা লাগছে। আদ্রের সাথে অনু যা যা করেছে তাতে লজ্জা পাওয়ারই কথা। অনু শান্ত স্বরে আদ্রকে বলল,

–হুম আমি ভালো আছি আদ্র ভাইয়া।

আদ্র হেসে অনুকে বলল,

–আজ তো আমাকে তুমি খুব জ্বালিয়েছো। মনে আছে তোমার সেসব কথা?

অনু মন খারাপ আদ্রকে বলল,

–হুম মনে আছে। সেজন্য আই এম সরি।

আদ্র ধমক দিয়ে অনুকে বলল,

–এই মেয়ে তোমাকে আমি সরি বলতে বলেছি? তাহলে আমাকে সরি বলছো কেন? তুমি জানো তোমার জ্বরের ঘোরে সেই পাগলামো আমার কত ভালো লেগেছে?

অনু লজ্জা পেয়ে আদ্রকে বলল,

–চুপ থাকো তো আদ্র ভাইয়া। আমার মনে আছে। আর তোমাকে বলতে হবে না।

আদ্র অনুকে শান্ত স্বরে বলল,

–আমি তোমাকে পরশুদিন একটা জায়গায় নিয়ে যাবো। না করতে পারবে না কিন্তু তুমি।

অনু অবাক হয়ে আদ্রকে বলল,

–তোমার সাথে আমি কোথায় যাবো?

আদ্র শান্ত স্বরে অনুকে বলল,

–তোমাকে নিয়ে গেলেই বুঝতে পারবে।

অনু ভয় পেল। আদ্র ভাইয়া যদি ভালো মনের মানুষ না হয় তখন? যদি অনুকে একা পেয়ে ক্ষতি করতে চায়? অনুর কি হবে তখন? অনু আদ্রকে বলল,

–আমি তোমার সাথে কোথাও যাবো না।

আদ্র অনুকে গম্ভীর স্বরে বলল,

–অনু না করো না প্লিজ। আমি তোমাকে সেখানে নিয়ে গিয়ে কিছু বলতে চাই৷ তোমার সেটা শুনতে হবে।

অনু আদ্রকে বিরক্ত স্বরে বলল,

–আমি কিছু শুনতে চাই না।

আদ্র অনুকে জিজ্ঞেস করল,

–অনু তুমি কি আমাকে ভয় পাচ্ছো? এজন্যই কি তুমি আমার সাথে যেতে চাচ্ছো না?

অনু আদ্রের কথা শুনে চুপ করে রইল। কোনো কথা বললো না। অনুর এমন আচরণে আদ্র মনে মনে কষ্ট পেলো। এখনও অনু আদ্রকে বিশ্বাস করতে পারছে না।
আদ্র হাসার চেষ্টা করল কিন্তু পারল না। শান্ত স্বরে আদ্র অনুকে বলল,

–নো প্রবলেম তোমার নিরবতায় আমি অনেক কিছু বুঝে গেছি অনু। কিন্তু তোমার কথা আমি শুনবো না।

আদ্র ফোনটা রেখে দিল৷ অনু বুঝল না আদ্র কি করতে চাইছে? অনুর কথা শুনবে না মানে? অনু আদ্রকে আবার ফোন দিল কিন্তু আদ্র অনুর ফোনটা কেটে দিল। এতে অনুর ভীষণ রাগ হলো৷ অনু মনে মনে বলল,

–আমি আবার কি করলাম? আমি কোনোদিন কারও সাথে কোথাও যায় নি। আর এই আদ্র ভাইয়া কিনা আমাকে নাকি কোন জায়গায় নিয়ে যাবে। আমি আদ্র ভাইয়ার সাথে কোথাও যাবো না। এই পৃথিবীতে কাউকে সহজে বিশ্বাস করতে নেই।

আরমান রহমান বাসায় এলে আমেনা বেগম আরমান রহমানকে আজকের সব ঘটনা খুলে বলেন। আরমান রহমান অবাক হয়ে আমেনা বেগমকে বলল,

–কি বলছো তুমি আমেনা? আদ্র অনুর জন্য নিজের হাতে রান্না করেছে? অনুর অসুস্থতায় সারাদিন অনুর পাশে বসে ছিল? অনুও আদ্রের সাথে ভালো করে কথা বলেছে? আমি তো বিশ্বাস করতে পারছি না।

আমেনা আরমান রহমানকে বলল,

–হ্যা গো আমি সব ঠিকই বলছি। আদ্র আমাদের মেয়েটাকে ভীষণ ভালোবাসে। অনুর শরীরে আজ জ্বর ছিল বলে অনু আদ্রকে জ্বরের ঘোরে খুঁজছিল। আদ্র অনুকে দেখতে চলে আসলো। আদ্রকে তো তোমার মেয়ে যেতেও দিচ্ছিল না। আচ্ছা আমার কি মনে হয় জানো অনুও আদ্রকে ভালোবেসে ফেলেছে। আদ্রকে ভয় পায় তাই অনু স্বীকার করতে চায় না।

আরমান রহমান হতাশ গলায় বলল,

–জানি না আমেনা। অনু কেন যে আদ্রকে মানতে পারে না৷ আদ্র তো রূপে গুণে লাখে একটা। টাকা পয়সারও আদ্রের অভাব নেই। কি নেই আদ্রের? আদ্রের সব কিছু আছে। কত মেয়ে আদ্রের জন্য পাগল। তাও অনু এরকম বোকামি করছে। আদ্রের সাথে বিয়েটাও ভেঙে দিল। আনোয়ার তার ছেলের জন্য এখনও আমার উপর রাগ করে আছে। কি আর করার৷ অনু যা বলবে তাই হবে। যাকে অনু পছন্দ করবে আমরা তার সাথেই অনুর নাহয় বিয়ে দিবো।

আমেনা বেগম আরমান রহমানকে বলল,

–আদ্র যদি আমার মেয়ের জামাই হতো কত ভালো হতো। কি সুন্দর করে কথা বলে আদ্র। আমার তো আদ্রকে অনুর জন্য ভীষণ পছন্দ হয়েছে। তোমার মেয়েটাই বেশি ঢং করে। ভালো লাগে না।

আরমান রহমান আমেনা বেগমকে বলল,

–আমারও আদ্রকে অনুর জন্য ভীষণ পছন্দ হয়েছে। প্রথমে ছেলেটাকে একটু রাগী স্বভাবের ভাবলেও পড়ে বুঝতে পারি অনুকে আদ্র অনেক ভালোবাসে।

একদিন চলে গেল। অনু একটু ভয়ে আছে। আজ সেইদিন যেইদিনে আদ্র অনুকে সাথে নিয়ে কোথাও যেতে বলেছিল অনেক করে। কিন্তু অনু আদ্রের মুখের উপর না করে দেয়। নিজের রুমেই বসে বসে অনু আদ্রের কথা ভাবছিল। এখন দুপুরবেলা। এমন সময় কলিংবেল বেজে উঠল। আমেনা বেগম অনুকে বলল,

–অনু দরজাটা খুলে দেখ কে এসেছে।

অনু ড্রইংরুমে গিয়ে দরজা খুলে আদ্রকে দেখে থমকে যায়। অনু অবাক হয়ে আদ্রের দিকে তাকিয়ে থাকে। আদ্র হেসে অনুর দিকে গভীর দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল,

–কি বলেছিলাম না তোমায়? আমি তোমার কথা শুনবো না। এখন তো তোমাকে আমার সাথে যেতেই হবে অনু।

অনু ভয় পেয়ে পিছিয়ে আদ্রকে বলল,

–না। আমি কোথাও যাবো না।

আদ্র অনুর দিকে এগিয়ে এসে অনুকে কোলে তুলে নিল। অনু আদ্রের এমন কাজে অবাক হলো। অনুর দিকে তাকিয়ে আদ্র শান্ত স্বরে বলল,

–যেতে তো তোমাকে হবেই অনু। ভয় নেই৷ আমি তোমার কোনো ক্ষতি করবো না। আমার উপর তুমি এইটুকু বিশ্বাস রাখতে পারো।

অনু চোখ বন্ধ করে আদ্রের বুকে মাথা রেখে আছে। আদ্রের শার্টের একপাশ অনু খামচে ধরে আছে। ভয়ে অনুর হৃদপিণ্ড কেঁপে উঠছে। আদ্র অনুকে কোলে নিয়েই আমেনা বেগমকে একটু উঁচু স্বরে বলল,

–আন্টি আমি অনুকে নিয়ে বেরিয়ে গেলাম। অনুর জন্য কোনো চিন্তা করবেন না। রাতে অনুকে আমি বাসায় পৌঁছে দিবো।

আদ্র অনুকে কোলে নিয়েই বাসা থেকে বের হয়ে গেল। আমেনা বেগম নিজের রুম থেকে বেরিয়ে ড্রইংরুমে এসে দেখল অনু কোথাও নেই। আদ্রের কন্ঠ শুনে আমেনা বেগম বুঝতে পারে একটু আগে আদ্র এসেছিল। আর অনুকে আদ্রই নিয়ে গেছে। আমেনা বেগম চিন্তিত মনে বলল,

–আদ্র অনুকে নিয়ে গেল কোথায়?

#চলবে…

#তোমাকে_ঘিরে_আমার_অনুভূতি💖 (সিজন-২)
#পর্ব_১৭
#Anika_Fahmida

আদ্র অনুকে কোল থেকে নামিয়ে গাড়ির সিটে বসিয়ে দিল। অনু আদ্রের দিকে অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। আদ্র অনুর পাশের সিটে বসে গাড়ি স্টার্ট দিল। অনুর বুকটা কেঁপে উঠছে। অনু মনে মনে বলল,

‘আমাকে আদ্র ভাইয়া কোথায় নিয়ে যাচ্ছে?’

আদ্র গাড়ি চালানো অবস্থাতেই অনুকে বলল,

‘কি অনু তোমার ভয় লাগছে?’

অনু মন খারাপ করে আদ্রকে বলল,

‘একটু ভয় লাগছে। আমাকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছো?’

আদ্র হেসে অনুকে বলল,

‘তোমাকে একটু নিরিবিলি জায়গায় নিয়ে যাচ্ছি।’

অনু চোখ বড়বড় করে আদ্রকে বলল,

‘মানে? নিরিবিলি জায়গায় কেন নিয়ে যাবে? আমি তোমার সাথে কোথাও যাবো না। গাড়ি থামাও বলছি।’

আদ্র অনুর কথামতো গাড়িটা থামিয়ে দিল। অনু গাড়ির দরজার খুলতে গিয়েও খুলতে পারলো না। মন খারাপ করে অনু আদ্রকে বলল,

‘গাড়ির দরজা খুলে দাও আদ্র ভাইয়া।’

আদ্র গম্ভীর স্বরে অনুকে বলল,

‘তুমি যদি গাড়ির দরজা খুলে যেতে পারো আমি তোমাকে বাঁধা দিবো না। কিন্তু আমি খুলতে পারবো না।’

অনু রাগ করে চুপ করে বসে রইল। আদ্র অনুর কান্ড দেখে মুচকি হেসে আবারও গাড়ি স্টার্ট দিল। অনু বাইরে তাকিয়ে আছে। মনটা ভীষণ খারাপ। আদ্র অনুর দিকে তাকিয়েই দেখল অনু মন খারাপ করে বসে আছে। আদ্র মনে মনে বলতে লাগলো,

‘এই মেয়েটা সবসময় এতো মন খারাপ করে বসে থাকে কেন? একটু হাসিখুশিও তো থাকতে পারে।’

আদ্র গাড়ি চালাতে চালাতেই হঠাৎ গান গাইতে লাগল। আদ্রের কন্ঠ চমৎকার। তাই অনু না চাইতেও আদ্রের দিকে তাকিয়ে রইল। আদ্র ইংরেজি গান গাইছে,

There are three words
That I’ve been dying to say
To you burns in my heart
Like a fire that ain’t going out
There are three words
And I want you to know
They are true
I need to let you know
I wanna say I love you
I wanna hold you tight
I want your arms around me
And I want your lips on mine
I wanna say I love you
But babe I’m terrified
My hands are shaking
My heart is racing
Cause It’s something I can’t hide
It’s something I can’t deny
So here I do
Baby I love you

অনু আদ্রকে জিজ্ঞেস করল,

‘তুমি কাকে ভালোবাসো আদ্র ভাইয়া?’

আদ্র গান গাওয়া থামিয়ে অনুকে বলল,

‘কাউকেই না।’

অনু আদ্রকে জিজ্ঞেস করল,

‘তাহলে গান গেয়ে যে বললে কাউকে ভালোবাসো?’

আদ্র শান্ত স্বরে অনুকে বলল,

‘গানের মধ্যেই লাইনটা ছিল।’

অনু দীর্ঘশ্বাস ফেলে জানালার বাইরে তাকিয়ে রইল। এই আদ্র ভাইয়াটা বড়ই অদ্ভুত। অনু বুঝতেই পারলো না কি আছে এই আদ্রের মনে। দুই ঘন্টা পর আদ্র গাড়ি থামিয়ে দিল। অনু দেখল এইটা তো যমুনা নদীর পাড়।
অনু আদ্রকে জিজ্ঞেস করল,

‘তুমি আমাকে এখানে কেন নিয়ে এসেছো আদ্র ভাইয়া?’

আদ্র অনুকে শান্ত স্বরে বলল,

‘মন চাইলো তাই।’

আদ্র গাড়ি থেকে নেমে অনুর পাশের গাড়ির দরজাটা খুলে দিল। অনু নেমে চারপাশটা দেখতে লাগলো। চারিপাশটা কতটা নিরিবিলি শান্ত। মানুষ নেই বললেই চলে। এখন বিকেল হয়ে গেছে। অনুর কেমন ভয় লাগলো। চুপ করে আছে অনু। কোনো কথা বলছে না। বার বার অনু আদ্রের দিকে তাকাচ্ছে। আদ্র নদীর পানির দিকে তাকিয়ে আছে। আদ্র এবার ফিরে অনুর দিকে তাকালো। অনু মাথা নিচু করে মাটির দিকে তাকিয়ে রইল। আদ্র হেসে অনুকে জিজ্ঞেস করল,

‘আমাকে তোমার খুব ভয় লাগে তাই না অনু?’

অনু আদ্রের দিকে তাকালো। শান্ত স্বরে অনু বলল,

‘ না। তোমাকে আমার ভয় লাগে না।’

আদ্র শান্ত স্বরে অনুকে জিজ্ঞেস করল,

‘তাহলে আমার সাথে আসতে চাইছিলে না কেন?’

অনু কাঁপা গলায় আদ্রকে বলল,

‘এমনি।’

‘এমনি এমনিই আসতে চাইছিলে না?’

‘হুম।’

আদ্র গম্ভীর স্বরে অনুকে বলল,

‘আমি তোমাকে খেয়ে ফেলবো না অনু। চিন্তা করো না। নারীর দেহের প্রতি যদি আমার এতোই লোভ থাকতো তাহলে কবেই আমি জোর করে তোমার সব কিছু কেড়ে নিতে পারতাম। কিন্তু আমি এমনটা করি নি। তাই আমাকে এতোটাও খারাপ ভেবো না।’

আদ্রের এই কথা শুনে অনুর বুকের ভিতর মোচড় দিয়ে উঠলো। আদ্র মন খারাপ করে আবারও নদীর পানির দিকে তাকিয়ে রইল। পানিটা কতই না সহজ সরল। পানির মধ্যে কোনো জটিলতা নেই। অনু কাঁপা স্বরে আদ্রকে বলল,

‘আদ্র ভাইয়া তুমি কষ্ট পেয়ো না। আমি তোমাকে অতটাও খারাপ ভাবি নি।’

আদ্র অনুর দিকে তাকিয়ে হাসার চেষ্টা করে বলল,

‘মিথ্যে বলছো তুমি অনু।’

অনু শুকনো ঢুক গিললো। আসলেই তো অনু আদ্রকে খুব খারাপ মানুষ ভাবতো। এমনকি এখনও না চাইতেও অনু আদ্রের সম্পর্কে ভুল ধারণা পোষণ করে। কেন এমনটা করে ফেলে অনুর জানা নেই। হয়তো নিজের অজান্তেই আদ্রকে ভুল বুঝে। অনু আদ্রকে বলল,

‘আমি এখন তোমাকে খারাপ ভাবছি না।’

আদ্র অনুর কথা শুনে দীর্ঘশ্বাস ফেললো। আদ্র অনুর থেকে এতক্ষণে দূরত্ব বজায় রেখে দাঁড়িয়ে ছিল। এবার আদ্র অনুর কাছে এসে দাঁড়াল। খুব কাছে এসেই দাঁড়াল। অনুর একটু ভয় লাগছে। আদ্র এতো কাছে আসছে কেন? আদ্র অনুর দুই কাঁধে হাত রেখে টেনে নিজের আরও কাছে আনলো। অনু ভয় পাওয়া দৃষ্টিতে আদ্রের দিকে তাকাল। আদ্র চোখে রাগ ভেসে উঠছে। কঠোর স্বরে আদ্র অনুকে জিজ্ঞেস করল,

‘আমাকে বিয়ে করতে তোমার প্রবলেম কি অনু? কেন সবার সামনে তুমি আমাকে অপমান করলে?’

অনু আদ্রের কথা শুনে কেঁপে উঠল। আদ্রের চোখের দিকে অনু একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। নিজের দুই চোখ আদ্র বন্ধ করলো। তারপর আবারও চোখ মেলে আদ্র অনুর দিকে তাকাল। আদ্র অনুকে ধমকে বলল,

‘কি হলো বলো?’

অনু ঘাবড়ে গিয়ে এদিক ওদিক তাকাতে লাগলো। আদ্রের ফর্সা মুখ রাগে লাল হয়ে গেছে। আদ্র অনুর দিকে তাকিয়ে মনে মনে বলল,

‘আজ আমাকে জানতেই হবে কেন অনু আমাকে বিয়ে করতে চায় না! ওর কিসের এতো ভয় আমাকে জানতেই হবে। তাইতো আজ আমি অনুকে এখানে নিয়ে এসেছি। জানতেই হবে আমাকে কেন অনু এমন করো।’

অনু আদ্রের দিকে তাকিয়ে ভয় পাওয়া স্বরে বলল,

‘তুমি ভীষণ রাগী। আমাকে অনেক মারবে। তাই তোমাকে আমি বিয়ে করতে চাই না আদ্র ভাইয়া। এছাড়াও আমি এতো তাড়াতাড়ি কাউকেই বিয়ে করতে চাই না। আমার পড়াশোনাও আছে। আমি পড়াশোনা করতে চাই।’

আদ্র অনুকে শান্ত স্বরে বলল,

‘পড়াশোনা করতে আমি তোমাকে বাঁধা দিবো না। বিয়ের পড়েও তুমি পড়াশোনা করতে পারবে। কিন্তু আমি রাগী তাই বলে তুমি আমাকে এতো ইগনোর করো অনু? শুধুমাত্র আমি রাগী বলে? আমি তোমাকে কেন মারবো? নিজের বিয়ে করা বউকে কেউ কি মারে?’

অনু সহজ সরল দৃষ্টিতে আদ্রের দিকে তাকিয়ে রইল। আদ্রের কথা শুনেও অনু অবাক হলো। কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে অনু আদ্রকে জিজ্ঞেস করল,

‘তুমি কি আমাকে ভালোবাসো আদ্র ভাইয়া?’

আদ্র চুপ করে রইল। অনু আবারও জিজ্ঞেস করল,

‘কি হলো আদ্র ভাইয়া বলছো না কেন? তুমি কি আমাকে ভালোবাসো?

আদ্র গম্ভীর স্বরে অনুকে বলল,

‘আমি তোমাকে ভালোবাসি না।’

অনু হাসতে লাগলো। আদ্র গম্ভীর হয়ে অনুর দিকে তাকিয়ে আছে। অনু হেসে আদ্রকে বলল,

‘আমাকে তুমি ভালোবাসো না অথচ আমাকে তুমি বিয়ে করতে চাও ব্যাপারটা হাস্যকর নয় কি আদ্র ভাইয়া?’

আদ্র অনুকে শান্ত স্বরে বলল,

তোমাকে আমি ভালোবাসি না কিন্তু তোমাকে ঘিরে আমার অনুভূতিটা অনেক বেশি অনু।

অনু আদ্রকে জিজ্ঞেস করল,

‘কেমন অনুভূতি?’

আদ্র অনুকে গম্ভীর স্বরে বলল,

‘আমার জানা নেই। ভীষণ অদ্ভুত অনুভূতি। আমি তোমাকে আর এই বিষয়ে কিছু বলতে চাইছি না।’

অনু হতাশ হয়ে আদ্রকে বলল,

‘তুমি নিজেই মানুষটা খুব অদ্ভুত আদ্র ভাইয়া। তোমাকে আমি বুঝতে পারি না। তোমার অনুভূতিটাও অদ্ভুত।’

আদ্র হঠাৎ করেই অনুর কাঁধ থেকে হাত সরিয়ে একটু দূরে গিয়ে দাঁড়াল। অনু মন খারাপ করে নদীর সরল পানির দিকে তাকিয়ে আদ্রকে বলল,

‘আমি এমন কাউকে কখনো বিয়ে করবো না যে আমাকে ভালোবাসে না।’

আদ্র অনুকে অসহায় স্বরে বলল,

‘কিন্তু আমি তোমাকে পছন্দ করি অনু। কাউকে আমি কখনো ভালোবাসি নি। তাই আমি জানি না ভালোবাসা কেমন হয়। এটাই কি আমার দোষ?’

অনু আদ্রকে শান্ত স্বরে বলল,

‘আমি নিজেও কখনো কাউকে ভালোবাসি নি। আর জোর করে ভালোবাসাও আসে না আদ্র ভাইয়া। যখন তুমি মন থেকে উপলব্ধি করতে পারবে যে তুমি একটি মানুষকে ভীষণ ভালোবাসো তখনই তুমি বুঝতে পারবে ভালোবাসা আসলে কেমন হয়।’

আদ্র কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে অনুর দিকে তাকিয়ে গম্ভীর স্বরে বলল,

‘গাড়িতে উঠো অনু। তোমাকে বাসায় পৌঁছে দেই।’

অনু গাড়িতে উঠে বসল। পাশেই আদ্র বসে মন খারাপ করে গাড়ি ড্রাইভ করতে লাগলো। আদ্র মনে মনে বলল,

‘অনু তো ঠিকই বলেছে। আমি তো অনুকে ভালোবাসি না। তাহলে কেন আমি অনুকে বিয়ে করতে চাইছি? অজানা অনুভূতির জন্য? এতোটা পাগলামি করা আমার উচিত হয় নি। আসলেই উচিত হয় নি।’

#চলবে…