#তোমাকে_ঘিরে_আমার_অনুভূতি💖 (সিজন-২)
#পর্ব_১৮
#Anika_Fahmida
আদ্র অনুকে বাসায় পৌঁছে দিয়ে নিজের বাসায় চলে গেল। অনু মন খারাপ করে বাসায় ঢুকে মায়ের অনেক কথার মুখোমুখি হতে হলো। আমেনা বেগম অনুকে শান্ত স্বরে বলল,
‘তোকে আদ্র কোথায় নিয়ে গিয়েছিল অনু?’
অনু মাথানিচু করে আমেনা বেগমকে বলল,
‘নদীর পাড়ে।’
‘কেন?’
‘সব কথা পড়ে বলবো।’
অনু নিজের রুমে চলে গেল। আমেনা বেগম অনুর যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইল।অনু নিজের রুমের বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছে। আজ আদ্রকে অনু যেভাবে এতো কথা বলেছে এতে হয়তো আদ্র আর অনুকে বিরক্ত করবে না। অনু একটু হাসলো। মন খারাপ করে যেমন হাসার চেষ্টা করে ঠিক তেমন হাসি। অনু মনে মনে বলল,
‘তুমি আমার সাথে হয়তো আর কোনোদিন কথা বলবে না। আমি বুঝতে পারছি আদ্র ভাইয়া। একটু হয়তো খারাপ লাগবে আমার। কিন্তু আমি মানিয়ে নিবো নিজের সাথে।’
আদ্র বাসায় পৌঁছেই নিজের রুমের সবকিছু ভাঙচুর করতে লাগলো। অনুর প্রতি এই অনুভূতির কারণ আদ্র বুঝতে চেষ্টা করল। কিন্তু কিছুতেই বুঝতে পারল না। ভালোবাসা নাকি ভালোলাগা? আদ্র মনে মনে বলল,
‘আমি যদি তোমাকে ভালোবেসে থাকি তাহলে তোমার কাছে আমি ফিরে আসবোই অনু। এই সম্রাট হোসেন আদ্র তোমার কাছে আবারও ফিরে আসবে। ওয়েট ফর ইট।’
বেশ কয়েকদিন চলে গেল। আদ্র অনুর সাথে দেখা করলো না৷ আদ্র অনুর সাথে দেখা করেই বা কি করবে? নিজের মনের অনুভূতি তো আগে জানতে হবে? অনুও আর আদ্রের জন্য অপেক্ষা করলো না। কারণ অনু জানে আদ্র অনুকে ভালোবাসে না।
বন্ধুদের সাথে হেসে আড্ডা দিচ্ছে পল্লব। আজ অনেকদিন পর নিজের ভার্সিটিতে পল্লব আসলো। ভার্সিটির সিনিয়র স্টুডেন্ট বলে কথা। পড়াশোনায় প্রচুর ফাঁকি দেয় পল্লব। সারাদিন আড্ডা নিয়ে মেতে থাকে। কিন্তু পরীক্ষার আগে সব পড়া পড়ে পল্লব ভালো রেজাল্টও করে ফেলে। সব টিচারও পল্লবকে ভীষণ আদর করে। পল্লবের বাবার ছোট ভাই এই ভার্সিটির প্রন্সিপাল। তাই সবাই পল্লবের কথা শুনে। হঠাৎ অনুকে মাঠের উপর দিয়ে হেঁটে ক্লাসরুম যেতে দেখে পল্লব অনুকে বললো,
‘এই মেয়ে দাঁড়াও।’
অনু ফিরে তাকিয়ে দেখল একটি সুদর্শন ছেলে অনুকে ডাকছে। কিছুটা গুন্ডা গুন্ডা ভাব। অনু একটু ভয় পেল। অনু মনে মনে বলল,
‘আমি আবার এ কোন নতুন ঝামেলায় পড়লাম!’
‘কথা কানে যায় না?’
পল্লবের কথা শুনে অনু এগিয়ে গেল। পল্লব অনুকে জিজ্ঞেস করল,
‘কোন ইয়ার স্টুডেন্ট তুমি?’
‘অনার্স প্রথম বর্ষ।’
পল্লব অনুকে বলল,
‘তা এমন ব্যাঙের মতো লাফিয়ে লাফিয়ে কোথায় যাচ্ছিলে পিচ্চি?’
অনু বিরক্তিকর দৃষ্টিতে পল্লবের দিকে তাকাল। পল্লবের এতে কিছু যায় আসে না। অনু শান্ত স্বরে পল্লবকে জিজ্ঞেস করলো,
‘আপনি কি আমার সাথে মজা করছেন?’
‘আহা মজা করবো কেন? যা সত্যি তাই তো বললাম। ইউ লিটল গার্ল।’
অনু বিরক্ত হয়ে চলে যেতে নিলেই পল্লব অনুর বাম হাত ধরে ফেললো। অনু হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করে রেগে গিয়ে পল্লবকে বলল,
‘এটা কি ধরনের অসভ্যতা? আমার হাত ছাড়ুন।’
‘যদি না ছাড়ি তো কি করবে?’
পল্লবের বন্ধু নয়ন পল্লবকে বলল,
‘মেয়েটাকে ছেড়ে দে পল্লব। পড়ে চিৎকার করে তোর ইমেজ নষ্ট করার চেষ্টা করবে।’
পল্লব নয়নকে বলল,
আমি কি ভয় পাই নাকি? ভুলে যাস না নয়ন এই ভার্সিটির প্রন্সিপাল আমার চাচ্চু। তাই আমি যা খুশি মন চায় তাই করতে পারি।
অনু রেগে পল্লবকে বলল,
‘আমি আপনাকে লাস্ট বারের মতো বলছি আমার হাত ছাড়বেন কিনা?’
পল্লব হেসে অনুকে বলল,
‘ছাড়বো না।’
অনু চারপাশে লক্ষ্য করলো ভার্সিটির অনেক ছেলে মেয়েরা তাকিয়ে আছে। অনেকে একে অপরের সাথে অনুর দিকে তাকিয়ে বলাবলি করছে। অনু হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করে বলল,
‘হাত ছাড়বেন না?’
‘বললাম তো ছাড়বো না।’
অনু রেগে গিয়ে পল্লবের গালে ঠাস করে চড় বসিয়ে দিল। পল্লব অনুর হাত ছেড়ে দিয়ে নিজের গালে হাত দিয়ে অনুর দিকে রাগী দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল। সবাই অবাক হয়ে তাকিয়ে রইল অনুর কান্ড দেখে।ভার্সিটির ক্রাশ বয়কে অনু চড় মেরেছে। অনু গম্ভীর স্বরে পল্লবকে বলল,
‘বলেছিলাম না আমার হাত ছেড়ে দিতে। শুনলেন না তো। এই চড়টাই আপনার প্রাপ্য ছিল।’
অনু চলে যেতে নিলে পল্লব অনুর পায়ের সামনে নিজের পা মাটিতে রাখে। এতে অনু পল্লবের পায়ের সাথে নিজের পা আটকে হোঁচট খেয়ে মাটিতে পড়ে যায়। পল্লব অনুর চারপাশে গোলগোল করে ঘুরে অনুকে শান্ত স্বরে বলল,
‘আমাকে চড় মেরেছো তুমি।এই রায়হান আহমেদ পল্লবকে তুমি চড় মেরেছো। এর শাস্তি তো তোমাকে পেতেই হবে মিস….
পল্লব অনুর নাম জানে না। ইতিমধ্যে অনুর ক্লাসমেটরাও মাঠে চলে এসে পড়েছে। পল্লব সবাইকে জিজ্ঞেস করল,
‘এই মেয়ের নাম কি? কেউ বলতে পারবে?’
অনুর ক্লাসমেট নিতিকা পল্লবকে বলল,
‘ভাইয়া ওর নাম আনিকা ফাহমিদা অনু।’
পল্লব অনুর দিকে তাকিয়ে বলল,
‘মিস আনিকা ফাহমিদা অনু তোমাকে শাস্তি পেতে হবে। ভয়ংকর রকমের শাস্তি। তৈরি থেকো।’
অনু মাঠে বসে মন খারাপ করে পল্লবের দিকে তাকাল। পায়ে ভীষণ ব্যথা পেয়েছে অনু। উঠার চেষ্টা করেও উঠতে পারলো না অনু। তাই ওভাবেই বসে রইল। পল্লব তমালকে উদ্দেশ্য করে বলল,
‘তমাল প্রিন্সিপাল স্যারকে ডেকে নিয়ে আয়। আজ এই মেয়েকে শিক্ষা দিয়ে দিবো।’
অনু ভীষণ ভয় পেয়ে মনে মনে বলল,
‘এই ছেলেটা আবার প্রিন্সিপালকে কেন ডাকবে? টিসি দেওয়ার জন্য নয়তো?’
#চলবে…
#তোমাকে_ঘিরে_আমার_অনুভূতি💖 (সিজন-২)
#পর্ব_১৯
#Anika_Fahmida
পল্লবের বন্ধু তমাল প্রিন্সিপাল কামরুল আহমেদকে ডেকে আনলো। তিনি এসে পল্লবকে জিজ্ঞেস করল,
‘কি হয়েছে পল্লব? কোনো সমস্যা হয়েছে?’
পল্লব কামরুল আহমেদকে রাগী স্বরে বলল,
‘এই মেয়েটা আমাকে সবার সামনে চড় মেরেছে চাচ্চু। আমি ভার্সিটির সিনিয়র হয়েও এই জুনিয়র মেয়েটা আমাকে চড় মেরে সাহস দেখিয়েছে। আমাকে এই মেয়েটা সবার সামনে ভীষণ অপমান করেছে। আমি এই মেয়ের চরম শাস্তি চাই চাচ্চু।’
কামরুল আহমেদ অনুর দিকে রাগী দৃষ্টিতে তাকালেন। অনু এখনও মাটিতে বসে ভয় পাওয়া দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। কামরুল আহমেদ রেগে গিয়ে অনুকে বলল,
‘এই মেয়ে তুমি মাটিতে বসে আছো কেন? উঠো।’
প্রিন্সিপাল স্যার আদেশ করায় অনু ব্যথা পায়েই কোনোরকম উঠে দাঁড়াল। কামরুল আহমেদ অনুর দিকে তাকিয়ে গম্ভীর স্বরে বলল,
‘নাম কি তোমার?’
অনু মাথানিচু করে বলল,
‘স্যার আমার নাম অনু।’
কামরুল আহমেদ অনুকে জিজ্ঞেস করল,
‘কোন ইয়ার স্টুডেন্ট তুমি?’
অনু শান্ত স্বরে বলল,
‘অনার্স প্রথম বর্ষ।’
কামরুল আহমেদ রেগে গিয়ে অনুকে বলল,
‘ আর পল্লব ভার্সিটির ওলড স্টুডেন্ট। আরও তিন বছর আগে এই ভার্সিটি থেকে পল্লব মাস্টার্স কমপ্লিট করেছে। আর সবচেয়ে বড় কথা আমার বড় ভাইয়ের ছেলে হলো পল্লব। আমার ভাইয়ের ছেলের গালে চড় দিয়েছো তুমি। এর শাস্তি একটাই। তোমাকে টিসি দিয়ে এই ভার্সিটি থেকে বের করে দেওয়া হবে।’
অনুর এবার কান্না পেয়ে গেল। ভার্সিটির সবাই দাঁড়িয়ে তামাশা দেখছে। কেউ একটুও অনুর পক্ষে কথা বলছে না। অনু কোনোরকম নিজের কান্না আটকিয়ে কামরুল আহমেদকে শান্ত স্বরে বলল,
‘স্যার আমি উনাকে ইচ্ছে করে চড় মারতে চাই নি। উনি সবার সামনে আমার হাত ধরেছিলেন। তাই রেগে গিয়ে চড় মেরে ফেলেছি। আমাকে টিসি দিবেন না প্লিজ।’
কামরুল আহমেদ রাগী স্বরে অনুকে বলল,
‘তোমার কোনো কথা আমি শুনবো না।’
পল্লব কামরুল আহমেদকে বলল,
‘চাচ্চু অনুকে টিসি দিতে হবে না। আমি অনুকে অন্য শাস্তি দিতে চাই।’
অনু অবাক হয়ে পল্লবের দিকে তাকাল। কামরুল আহমেদ পল্লবকে জিজ্ঞেস করল,
‘তুমি এই মেয়েকে কি শাস্তি দিতে চাও? যা শাস্তি দিতে মন চায় তাই দিতে পারো। ‘
পল্লব হেসে কামরুল আহমেদকে বলল,
‘আমাকে সবার সামনে অনু চড় মেরেছে। তাই আমি চাই এই ভার্সিটির সকলের সামনে এখন অনু আমাকে গোলাপ ফুল দিয়ে ভালোবাসি বলবে।’
অনু অবাক হয়ে পল্লবকে বলল,
‘না। আমি আপনাকে ভালোবাসি বলতে পারবো না।’
কামরুল আহমেদ অনুকে বলল,
‘পল্লবের কথাই তোমাকে মানতে হবে। নাহলে তোমাকে আমি টিসি দিবো।’
অনুর নিজেকে এখন খুব অসহায় লাগছে। পল্লবের বন্ধু তমাল ইতিমধ্যে গোলাপ নিয়ে এসে পল্লবের হাতে দিয়েছে। পল্লব হেসে অনুকে গোলাপ ফুলটা এগিয়ে দিয়ে বলল,
‘মিস অনু এবার আমাকে প্রপোজটা করে ফেলো।’
অনু চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে। পল্লব অনুকে বলল,
‘তোমার কাছে আর কোনো অপশন নেই অনু।’
অনু নিরুপায় হয়ে পল্লবের হাত থেকে ফুলটা নিল ৷ অনুর গলা শুকিয়ে আসছে। কোনোদিনও কাউকে ভালোবাসি কথাটা অনু বলে নি। আজ এমন পরিস্থিতিতে বলতে হবে অনু কখনো ভাবে নি। অনু পল্লবের দিকে গোলাপ ফুলটা এগিয়ে দিয়ে বলল,
‘আমি আপনাকে ভা..ভা.. ভালোবাসি।’
পল্লব অনুর হাত থেকে ফুলটা নিয়ে বলল,
‘আমি তোমাকে ভালোবাসি কিনা তা পড়ে বলবো।’
আদ্র আজ অনুর ভার্সিটিতে অনুর সাথে দেখা করতে আসে। কারণ বেশ অনেকদিন অনুকে আদ্র দুচোখ ভরে দেখে না। ভার্সিটিতে এসেই মাঠের মধ্যে অন্য ছেলেকে অনু গোলাপ ফুল দিয়ে ভালোবাসি বলায় আদ্র ব্যথিত দৃষ্টিতে অনুর দিকে তাকিয়ে রইল। কারণ অনু যখন পল্লবকে গোলাপ ফুল দিয়ে ভালোবাসি বলে ঠিক সেই মুহুর্তেই আদ্র এসে দেখে। আদ্র মনে মনে বলল,
‘অনু আমি এই কয়েকদিন তোর সাথে দেখা করি নি। আর এরই মাঝে তুই অন্য ছেলেকে ভালোবাসি বলছিস! আমাকে এতো সহজেই তুই ভুলে গেলি!
আদ্র নিজের দুচোখ বন্ধ করে রাগ কনট্রোল করার চেষ্টা করছে। প্রিন্সিপাল কামরুল আহমেদ সেখানে দাঁড়িয়ে না থেকে চলে গেলেন। সবাই যার যার মতো ক্লাসরুমে যেতে লাগলো। পল্লব অনুকে শান্ত স্বরে বলল,
‘ইউ আর সো কিউট অনু।’
অনু চুপ করে রইল। কিছু বললো না। আদ্র আর নিজের রাগ দমিয়ে রাখতে পারলো না। এগিয়ে এসে অনুর হাত চেপে ধরলো। অনু আদ্রকে দেখে ভয় পেয়ে বলল,
‘আদ্র ভাইয়া তুমি এখানে?’
আদ্র গম্ভীর স্বরে অনুকে বলল,
‘ডানা তোর ভালোই গজিয়েছে অনু। সমস্যা নেই। ডানা কি করে ভাঙতে হয় তা আমি জানি।’
অনু শুকনো ঢুক গিলে আদ্রকে বলল,
‘তুমি কি সব শুনে ফেলেছো?’
আদ্র অনুকে গম্ভীর স্বরে বলল,
‘সব দেখেছি। সব শুনেছি। এবার চল।’
আদ্রকে অনুর হাত চেপে ধরে এমন কথা বলা দেখে পল্লব অবাক হলো। পল্লব আদ্রকে জিজ্ঞেস করল,
‘কে আপনি?’
আদ্র পল্লবের দিকে তাকিয়ে বলল,
‘একটু আগে অনু তোমাকে গোলাপ ফুল দিয়ে ভালোবাসি বলেছে তাই না?’
পল্লব আদ্রকে বলল,
‘হ্যা। কিন্তু আপনি কে?’
আদ্র অনুর দিকে তাকিয়ে পল্লবকে বলল,
‘আমি অনুর বিশেষ কেউ।’
পল্লব অবাক হয়ে তাকিয়ে রইল অনুর দিকে। অনু পল্লবের এমন তাকানোর মানে বুঝলো না। আদ্র অনুর হাত ধরে টানতে টানতে বলল,
‘চল তোর সাথে বোঝাপড়া আমার বাকি আছে।’
অনু আদ্রের হাত থেকে নিজের হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করে বলল,
‘আদ্র ভাইয়া আমার হাত ছাড়ো। ব্যথা পাচ্ছি।’
আদ্র অনুকে ধমক দিয়ে বলল,
‘চুপ৷ একদম চুপ। ব্যথা আমিও পেয়েছি। এই মনে আমি ভীষণ ব্যথা পেয়েছি। সেই ব্যথার কি হবে?’
অনু বুঝতে পারলো না আদ্র কি বললো। তাই অনু আদ্রকে বলল,
‘কি বলছো তুমি আদ্র ভাইয়া? কিছুই তো বুঝলাম না।’
আদ্র রাগী স্বরে অনুকে বলল,
‘সব কথা তোর না বুঝলেও চলবে।’
আদ্র অনুকে গাড়িতে ধাক্কা দিয়ে ফেললো। তারপর নিজে ড্রাইভিং সিটে বসে ফুল স্পিডে গাড়ি চালাতে লাগলো। অনু ভয়ে কাঁপছে। গাড়ি এতো ফুল স্পিডে কেন চালাচ্ছে আদ্র? ভয়ে অনু কিছু বলতেও পারছে না। চুপ করে আছে। আদ্রের চোখ মুখ রাগে লাল হয়ে আছে। কেমন যেন আদ্রকে পাগল পাগল লাগছে। অনু মনে মনে বলল,
‘তারমানে আমি যে ঐ পল্লবকে গোলাপ ফুল দিয়ে ভালোবাসি বলেছি সেটা আদ্র ভাইয়া দেখে ফেলেছে। কিন্তু আমিই বা কি করতাম? নাহলে যে আমাকে প্রিন্সিপাল টিসি দিয়ে ভার্সিটি থেকে বের করে দিতো।’
আদ্র অনুর বাসার সামনে গাড়ি থামালো। অনুর হাত আদ্র আবারও চেপে ধরে গাড়ি থেকে নামালো। আদ্র অনুর মুচড়ে রাগী স্বরে বলল,
‘তুই আর ভার্সিটি যেতে পারবি না।’
আদ্র এভাবে হাত মুচড়ে ধরায় অনু হাতে ব্যথা পাচ্ছিল কিন্তু আদ্রের কথা শুনে অনু অবাক হয়ে আদ্রকে বলল,
‘কেন আদ্র ভাইয়া?’
আদ্র অনুর দিকে তাকিয়ে গম্ভীর স্বরে বলল,
‘আমি বলেছি তাই।’
অনু আদ্রকে কড়া গলায় বলল,
‘আমি তোমার কথা শুনবো না।’
আদ্র শান্ত স্বরে অনুকে বলল,
‘তোকে আমার কথাই শুনতে হবে। নাহলে তোর কপালে শনি আছে অনু।’
আদ্র টানতে টানতে অনুকে বাসার ভিতরে নিয়ে গেল। তারপর চিৎকার করে আদ্র আমেনা বেগমকে ডাকতে লাগল। আমেনা বেগম আদ্রের চিৎকার শুনে নিজের রুম থেকে বের হয়ে জিজ্ঞেস করল,
‘কি হয়েছে আদ্র বাবা? চিৎকার করছো কেন?’
আমেনা বেগম দেখলো আদ্র অনুর হাত চেপে ধরে রেখেছে। আর অনু ভয়ে মুখ শুকনো করে রেখেছে। আদ্র আমেনা বেগমকে গম্ভীর স্বরে বলল,
‘আন্টি অনুকে আপনি আর ভার্সিটিতে যেতে দিবেন না।’
আমেনা বেগম অবাক হয়ে আদ্রকে বলল,
‘কিন্তু কেন?’
আদ্র আমেনা বেগমকে বলল,
‘কারণ অনু পড়াশোনার নাম করে ভার্সিটিতে গিয়ে সব ছেলেদেরকে গোলাপ ফুল দিয়ে ভালোবাসি বলে বেড়ায়। আপনিই বলুন আন্টি কোনো ভালো মেয়ে এমন করতে পারে? অনুর স্বভাব নষ্ট হয়ে যাচ্ছো।’
আদ্রের কথা শুনে আমেনা বেগম রেগে অনুকে বলল,
‘তুই আর ভার্সিটিতে যাবি না।’
অনু আমেনা বেগমকে ব্যথিত স্বরে বলল,
‘আম্মু আমার কথাটা তো শুনো?’
আমেনা বেগম রাগী স্বরে অনুকে বলল,
‘আমি তোর কোনো কথা শুনবো না।’
আদ্র অনুর হাত ছেড়ে দিয়ে অনুকে শান্ত স্বরে বলল,
‘রুমে যাও অনু।’
অনু আদ্রের দিকে তাকাল। একটু আগেই তো রেগে তুই করে বলছিল। আবার ঢং করে তুমি বলছে। অনুর মেজাজ গরম হয়ে গেল। মন খারাপ করে অনু নিজের রুমে চলে গেল। আদ্র মন খারাপ করে অনুর বাসা থেকে চলে গেল। আজ অনু এমন করবে তা আদ্র কল্পনাও করে নি। আমেনা বেগম অনুর উপর ভীষণ রেগে আছে। অনুর রুমে গিয়েই অনুর গালে আমেনা বেগম কষিয়ে চড় মেরে রাগী স্বরে বলল,
‘পড়াশোনার নাম করে ছেলেদের সাথে ঢলাঢলি করিস? এই শিক্ষা আমি তোকে দিয়েছিলাম?’
অনু কান্নারত দৃষ্টিতে আমেনা বেগমকে বলল,
‘আম্মু তুমি আমাকে ভুল বুঝছো।’
আমেনা বেগম রাগী স্বরে অনুকে বলল,
‘একদম আমাকে ঠিক ভুল বুঝাতে আসবি না। আজকে তোর খাবার খাওয়া বন্ধ। সারাদিন পানি খেয়ে থাকবি তুই। এমন মেয়ের জন্য আমি রান্না করবো না।’
আমেনা বেগম অনুর রুম থেকে রেগে চলে গেল। অনু নিঃশব্দে চোখের জল ফেলছে। সবাই অনুকে এতো ভুল বুঝে কেন? অনু কি এতোটাই খারাপ? পৃথিবীর সবকিছু অনুর কাছে আজ বড়ই অদ্ভুত মনে হচ্ছে। অনু মনে মনে কাঁদতে কাঁদতে বলল,
‘আদ্র ভাইয়া তুমি কেন সবটা না জেনে আম্মুর কাছে আমাকে খারাপ বানালে। আমার যে সামনে অনার্স ফাইনাল ইয়ার পরীক্ষা। আমাকে ভার্সিটিতে যেতেই হবে। কেন আমার ভার্সিটি যাওয়া তুমি আটকালে? তুমি কেন আবারও আমার জীবনে আসলে? কেন?’
#চলবে..