তোমাকে ঘিরে আমার অনুভূতি ২ পর্ব-২৮+২৯

0
925

#তোমাকে_ঘিরে_আমার_অনুভূতি💖 (সিজন-২)
#পর্ব_২৮
#Anika_Fahmida

পল্লবের উপর অনুর ভীষণ রাগ হচ্ছে৷ অনুকে ভালো করে চিনে না জানে না হুটহাট করে এসে বলছে আদ্রকে ভালো না বেসে তাকে ভালোবাসতে হবে! আরে ভালোবাসা পাওয়া কি এতোটাই সহজ নাকি? অনু আদ্রকে ভালোবাসে জানা সত্বেও পল্লবের এমন আচরণ অনুর কাছে আসলেই বিরক্ত লাগছে৷ পল্লবকে একদমই অসহ্য লাগছে। অনু রাগী স্বরে পল্লবকে বলল,

‘আমি আদ্রকে ভালোবাসি। আপনাকে বয়ফ্রেন্ড বানাতে কেন যাবো আমি? বড়ই অদ্ভুত মানুষ তো আপনি!

পল্লব অনুকে শান্ত স্বরে বলল,

‘তুমি কাকে ভালোবাসো তা জেনে আমি কি করবো? আমি তোমাকে ভালোবাসি এটাই আমার কাছে অনেক। তাই আজ থেকে আমি তোমার বয়ফ্রেন্ড।’

অনু বিরক্তি স্বরে পল্লবকে বলল,

‘আপনার সাথে আমার কথা বলাটাই বৃথা। আপনার সাথে কথা বলা আর রাস্তার একটা পাগলের সাথে কথা বলা একই কথা।’

তারপর অনু চলে যেতে নিলে পল্লব গম্ভীর স্বরে বলল,

‘তোমাকে কিন্তু আমাকেই ভালোবাসতে হবে অনু। তুমি যাই বলো না কেন আমি শুনবো না তোমার কথা।’

অনু আর পেছন ফিরে পল্লবের দিকে তাকাল না। পল্লবের কথা শুনে অনুর খুবই রাগ হচ্ছে। অনু রেগে হাঁটতে হাঁটতে মনে মনে বলল,

‘ইশ আসছে উনি আমাকে বলতে তাকে আমার ভালোবাসতে হবে। আমি আদ্রকেই এখনও বললাম না যে ভালোবাসি। আর এই পল্লব ব্যাটা এসেছে জোর করে ভালোবাসা আদায় করতে! একদমই অসহ্য।’

চুপচাপ বাসায় তাড়াতাড়ি পৌঁছানোর জন্য একটা রিক্সা ডেকে অনু উঠে পড়লো। আজকের দিনটাই খারাপ৷ অনু রিক্সায় বসে আদ্রের কথা ভাবছিল। এমন সময় রিক্সার সামনে একটি বিশাল গাড়ি এসে পথ আটকালো। গাড়ির ভিতরে কে আছে দেখার জন্য অনু তাকাতেই ভয় পেয়ে গেল। কারণ গাড়ির ড্রাইভিং সিটে আদ্র বসে আছে। আদ্রকে দেখে মনে হচ্ছে খুব রেগে আছে। অনুর দিকেই আদ্র রাগী দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। অনুর বুকটা ধুকপুক করতে লাগলো। গাড়ি থেকে নেমেই আদ্র অনুর সামনে এসে গম্ভীর স্বরে বলল,

‘রিক্সা থেকে নামো।’

অনু আদ্রের দিকে তাকিয়ে শান্ত স্বরে বলল,

‘কেন নামবো?’

আদ্র এবার রেগে ধমক দিয়ে অনুকে বলল,

‘আমি নামতে বলেছি। তাই তাড়াতাড়ি নামো।’

অনু আদ্রের ধমক শুনে ভয়ে রিক্সা থেকে নেমে অসহায় দৃষ্টিতে আদ্রের দিকে তাকাল। আদ্র রিক্সাওয়ালাকে টাকা দিয়ে বিদায় করে দিল। অনু আদ্রের দিকে তাকিয়ে দেখল আদ্র এখনও রেগে অনুর দিকেই তাকিয়ে আছে। অনু কাঁপা স্বরে আদ্রকে বলল,

‘আমাকে কিছু বলবে তুমি?’

আদ্রের এমন রেগে তাকানো দেখে অনু রীতিমতো ভয়ে কাঁপছে। অনু ভাবতে লাগল এই বুঝি আদ্র কষিয়ে অনুর গালে ঠাস করে চড় বসাবে। তাই ভয়ে অনু নিজের দুই চোখ বন্ধ করে ফেললো। কিন্তু না। আদ্র তা করে নি। অনু আবারও চোখ খুলে আদ্রের দিকে তাকাল। আদ্র এবার শান্ত চাহনিতে অনুর দিকে তাকিয়ে আছে। খুব গম্ভীর স্বরে আদ্র অনুকে বলল,

‘গতকাল আমার সাথে তুমি এমন আচরণ কেন করলে?’

অনু মাথানিচু করে শান্ত স্বরে আদ্রকে বলল,

‘তুমি তো আমাকে মিথ্যা কথা বলেছিলে। তুমি আমাকে বলেছিলে তুমি নাকি আম্মু আব্বুকে জানিয়েছো আমি তোমার সাথে ছিলাম। কিন্তু তুমি তো আম্মু আব্বুকে জানাও নি। আমার জন্য আম্মু আব্বু কত চিন্তা করছিল একবার ভাবতে পারছো আদ্র? আর আমি মিথ্যা কথা একদমই সহ্য করতে পারি না৷ আমার তখন ভীষণ রাগ হয়েছিল। কিন্তু এখন আমার তোমার উপর একটুও রাগ নেই। তুমি বিশ্বাস করো!’

আদ্র দীর্ঘ শ্বাস ফেলে চুপ করে অনুর দিকে তাকিয়ে রইল। অনু আদ্রের মুখের দিকে তাকিয়ে ভাবছে আদ্রের রাগটা কমেছে কি? নাকি এখনও আদ্র রেগে আছে! আদ্র অনুকে শান্ত স্বরে এবার বলল,

‘তুমি জানো তোমার কথাগুলো শুনে গতকাল আমার কত খারাপ লেগেছিল? একমুহূর্তের জন্য আমার মনে হয়েছিল তুমি আমাকে একটুও ভালোবাসো না। সব তোমার অভিনয় ছিল। সামান্য এইটুকু কারণে কেউ এমন পাল্টে যাওয়া কথা বলে? তোমাকে গতকাল আমার খুব অচেনা লাগছিল অনু ৷কাল সারারাত আমি ঠিকমতো ঘুমাতেও পারি নি৷’

অনু ঘাবড়ে গিয়ে আদ্রকে বলল,

‘আমাকে ক্ষমা করে দিও আদ্র। তোমাকে আমি কষ্ট দিয়ে ফেলেছি। আর এমন করবো না৷ কিন্তু তুমি আমাকে ঐদিন মিথ্যা কথা কেন বলেছিলে?’

আদ্র হেসে অনুকে বলল,

‘তোমার আম্মু আব্বুকে তখন যদি আমি বলতাম যে আপনাদের মেয়েকে আমি জোর করে বিদেশে নিয়ে এসেছি। এসব কথাগুলো শুনে কি ভাবতো তারা তখন? তারা ভাবতো যে আদ্র ভীষণ খারাপ ছেলে। তোমার আম্মু আব্বু তোমার সাথে তখন আমার বিয়ে দিতেও রাজি হতো না। আমি তাই চাই নি তোমার আম্মু আব্বু এসব কিছু জানুক। তোমাকে মিথ্যা বলেছি যাতে তুমি তোমার আম্মু আব্বুর কথা ভেবে কোনো চিন্তা না করো। কিন্তু তুমি বোকার মতো আংকেল আন্টিকে সব বলে দিলে। এখন আংকেল আন্টি আমাকে বাজে ছেলে ভাবছে। আমি অন্য কিছু বলে আংকেল আন্টিকে বুঝাতে পারতাম। তুমি তা হতে দিলে না৷ উল্টো এমন আচরণ তুমি আমার সাথে করলে যে আমার মনে হচ্ছিল আমি তোমাকে চিনতে ভীষণ ভুল করেছি৷’

আদ্রের কথা শুনে এখন ভীষণ কান্না পেয়ে যাচ্ছে অনুর। এতো বোকামি করলো? অনুর নিজের উপরই নিজের খুব রাগ হচ্ছে। আদ্রকে অকারণেই ভুল বুঝলো। অনু মাথানিচু করে মন খারাপ করে আদ্রকে বলল,

‘আমি আসলেই খুব বোকা। নিজেকে নিজেই এখন আমার শাস্তি দিতে মন চাইছে। কেন এমন ভুল করলাম আমি? তুমি এই বোকা, পঁচা মেয়েটাকে কেন এতো ভালোবাসো আদ্র? বলো কেন আমাকে ভালোবাসো?’

আদ্র অনুর কথা শুনে হেসে ফেললো। অনুর মনটা খারাপ ছিল ৷ আদ্র হাসছে দেখে মুহূর্তেই অনুর মন ভালো হয়ে গেল। আদ্র হেসে অনুকে বলল,

‘কে বলেছে তুমি পঁচা? তুমি আমার কিউট অনু। হ্যা তুমি হয়তো খুব বোকা। কিন্তু তবুও আমি আমার এই বোকা অনুটাকেই খুব বেশি ভালোবাসি।’

অনু মাথানিচু করে শান্ত স্বরে আদ্রকে বলল,

‘আজ পর্যন্ত তোমাকে আমি যত কষ্ট দিয়েছি তার জন্য আমাকে তুমি ক্ষমা করে দিও আদ্র। তুমি আমার উপর আর রাগ করে থেকো না প্লিজ।’

আদ্র অনুকে জড়িয়ে ধরে বলল,

‘আমি তোমার উপর আর একটুও রেগে নেই।’

হঠাৎ করে আদ্র রাস্তায় এভাবে অনুকে জড়িয়ে ধরাতে অনু ঘাবড়ে যায়। অনু আদ্রকে চাপা স্বরে বলল,

‘আদ্র তুমি কি করছো? লোকজন দেখলে কি ভাববে?’

আদ্র অনুকে ছেড়ে দিয়ে হেসে বলল,

‘লোকজন দেখলেও কি আর না দেখলেও কি! আমি তো আমার ভালোবাসার মানুষকে জড়িয়ে ধরেছি। এতে কে কি ভাবলো আর না ভাবলো তা নিয়ে আমার কোনো মাথাব্যথা নেই। তুমিও না অনু একটু বেশি ভয় পাও।’

অনু লজ্জা পেয়ে হেসে আদ্রকে বলল,

‘হ্যা তোমার ভীতু অনু আসলেই খুব বেশি ভয় পায়৷’

দূর থেকে আদ্র এবং অনুর কথা পল্লব সব শুনেছে। আদ্র অনুকে জড়িয়ে ধরায় পল্লবের বুকের ভিতর আগুন জ্বলছে। অনুর বাসাটা ঠিক কোথায় তা জানার জন্য পল্লব গাড়ি করে অনুর রিক্সা ফলো করছিল। মাঝখানে আদ্রের গাড়ি এসে পড়ায় পল্লব গাড়িটা একটা কোণায় সাইড করে থামিয়েছিল। কিন্তু এখন আদ্র এবং অনুর কথাগুলো শুনে আর এভাবে ওদের জড়িয়ে ধরা দেখে পল্লবের শ্বাস নিতেও কষ্ট হচ্ছে। পল্লব কপালে হাত দিয়ে হতাশ হয়ে মনে মনে বলল,

‘যাকে জীবনে আমি প্রথম ভালোবাসলাম সেই অনু কিনা অন্য একটা ছেলেকে এভাবে জড়িয়ে ধরলো! আমার যে এই দৃশ্য দেখে খুব কষ্ট হচ্ছে। আদ্র ছেলেটার সাথে আমি অনুকে কিছুতেই মেনে নিতে পারছি না।’

পল্লব আবারও দূর থেকে আদ্র এবং অনুর দিকে তাকাল। আদ্র এবং অনু দুজনেই এখনও পল্লবকে দেখে নি। কারণ পল্লব এমন জায়গায় গাড়ি দাঁড় করিয়েছে যে দেখার কথাও না। আদ্র অনুর দুই হাত নিজের হাতের মুঠোয় করে ধরে বলল,

‘অনু তোমাকে একটা কথা বলবো। তুমি আবার ভয় পেও না৷ প্রমিজ করো ভয় পাবে না?’

অনু আদ্রের দিকে তাকিয়ে শান্ত স্বরে বলল,

‘কি এমন কথা যে আমি শুনে ভয় পাবো?’

আদ্র অনুকে গম্ভীর স্বরে বলল,

‘আছে কোনো একটা কথা। বলো ভয় পাবে না?’

অনু আদ্রকে মুচকি হেসে বলল,

‘ঠিক আছে ভয় পাবো না। এবার তুমি বলো।’

আদ্র আশেপাশে তাকিয়ে দেখল রাস্তায় কিছু লোকজন কেমন করে যেন তাদের দিকে হা করে তাকিয়ে আছে। আদ্র অনুর দিকে তাকিয়ে শান্ত স্বরে বলল,

‘এখানে বলা যাবে না। চলো কোনো একটা কফি হাউজে যাই৷ সেখানেই তোমাকে বলবো।’

অনু আদ্রের কথায় সম্মতি জানিয়ে বলল,

‘হুম চলো।’

আদ্র গম্ভীর স্বরে অনুকে বলল,

‘যাও গাড়িতে গিয়ে বসো।’

অনু চুপচাপ আদ্রের কথামতো গাড়িতে গিয়ে বসলো। আদ্র গাড়িতে উঠে বসে গাড়ি স্টার্ট দিলো। গাড়িতে অনুর সাথে আদ্র একটুও কথা বললো না। এতে অনুর একটু মন খারাপ হলো। আদ্র কেমন যেন গম্ভীর হয়ে গেছে। কি এতো ভাবছে কে জানে। এদিকে আদ্র গাড়ি স্টার্ট দেওয়ায় পল্লবও গাড়ি স্টার্ট দিয়ে আদ্রের গাড়ি ফলো করতে লাগলো। আদ্র কফি হাউজের সামনে গাড়ি থামালো। পল্লবও একটু দূরে গাড়ি থামালো। আদ্র এবং অনু দুজনেই গাড়ি থেকে নেমে কফি হাউজের ভিতরের সিটে গিয়ে বসলো। আদ্র কফি অর্ডার করলো। অনু সিটে গিয়ে বসলো৷ আদ্র অনুর অপর পাশের সিটে গিয়ে বসলো। অনু চুপ করে রইল। এদিকে পল্লব মুখে মাস্ক পড়ে কফি হাউজের ভিতর প্রবেশ করে আদ্র এবং অনুর পেছনের সিটে গিয়ে বসলো। আদ্র অনুর দিকে তাকিয়ে হেসে বলল,

‘কফি অর্ডার করলাম৷ আমি তোমার কোনো না শুনবো না। কফি তোমাকে খেতেই হবে। আগেই বলে দিলাম।’

অনু বিচলিত স্বরে আদ্রকে বলল,

‘আমি কফি খাবো না আদ্র। আমার ভীষণ চিন্তা হচ্ছে। কি এমন কথা যেটা শুনে আমি ভয় পেতে পারি? তাড়াতাড়ি প্লিজ বলো আমাকে?’

অনুর টেবিলে রাখা হাতের উপর আদ্র হাত রাখলো। চমকে উঠে অনু আদ্রের দিকে তাকাল। আদ্র মুচকি হেসে অনুকে বলল,

‘তেমন কিছুই না। অযথা ভয় পেয়ো না।’

অনু আর কোনো কথা বললো না। কফি চলে এলে আদ্র অনুকে শান্ত স্বরে বলল,

‘এবার কফিটা চুপচাপ খাও।’

অনু চুপচাপ আদ্রের কথামতো কফি খেতে লাগলো। অনু কফি খাচ্ছে কিন্তু আদ্র কোনো কফি খেলো না। পল্লব পেছনের সিটে বসে অনু এবং আদ্রের সব কথাই শুনছে। পল্লব মনে মনে বলল,

‘কি এমন কথা? যেই কথা আদ্র অনুকে বলতে চাইছে?

অনু আদ্রকে জিজ্ঞেস করল,

‘তুমি কফি খাবে না?’

আদ্র গম্ভীর স্বরে অনুকে বলল,

‘আমার কফি খেতে ইচ্ছে করছে না।’

অনু আবারও আদ্রকে জিজ্ঞেস করল,

‘কেন খেতে ইচ্ছে করছে না?’

আদ্র অনুকে শান্ত স্বরে বলল,

‘জানি না।’

অনুর কফি খাওয়া শেষ হলো। এবার অনু আদ্রের দিকে স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে গম্ভীর স্বরে বলল,

‘এখন কথাটা না বললে কিন্তু আমি রেগে যাবো আদ্র। আমার কফি খাওয়াও শেষ।’

আদ্র অনুর দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল। অনু একটু ঘাবড়ে গিয়ে মাথানিচু করে বলল,

‘এভাবে আমার দিকে তাকিয়ে আছো কেন?’

আদ্র হেসে অনুকে বলল,

‘তোমার দিকে তাকিয়ে থাকতে আমার ভালো লাগে।’

অনু আদ্রের দিকে তাকিয়ে লজ্জা পাওয়া মুখে বলল,

‘এবার কি বলবে না কি কথা?’

আদ্র গম্ভীর স্বরে অনুকে বলল,

‘আমার বাবা সুমির সাথে আমার বিয়ে ঠিক করে ফেলেছে অনু। আগামী মাসে সুমির সাথে আমার বিয়ে।’

অনু চমকে আদ্রের দিকে তাকাল। অনুর হাত পা ভয়ে ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে। অনুর গলা শুকিয়ে আসলো। আদ্র অনুর মুখের দিকে তাকিয়ে দেখল অনুর চোখ মুখ মুহুর্তেই কেমন শুকিয়ে গেছে। ভয়ে অনুর শরীর কাঁপছে। পল্লব আদ্রের কথা শুনে খুশি হলো। তাহলে তো পল্লব অনুকে পেয়ে যাবে। আদ্র অনুর পাশের সিটে গিয়ে বসলো। অনু মন খারাপ করে মাথানিচু করে বসে আছে। অনুর মাথায় হাত বুলিয়ে আদ্র শান্ত স্বরে বলল,

‘ভয় পেয়ো না অনু। আমি আগেই তোমাকে বলেছি ভয় না পেতে। কারণ আমার ধারণা ছিল কথাটা শুনে তুমি হয়তো ভীষণ ভয় পাবে। কিন্তু তোমাকে না বললেও যে নয়। তাই তোমাকে কথাটা বলতে হলো।’

অনু আদ্রের দিকে গম্ভীর দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল,

‘তুমি কি সুমি আপুকে বিয়ে করে ফেলবে আদ্র?

আদ্র অনুকে রাগী স্বরে বলল,

‘অনু পাগল হয়ে গেছো তুমি? আমি কেন সুমিয়ে বিয়ে করতে যাবো? আমি তোমাকে ভালোবাসি। যদি আমাকে বিয়ে করতেই হয় তাহলে আমি তোমাকে বিয়ে করবো। তুমি একটুও ভয় পেয়ো নাতো।’

আদ্রের কথা শুনে পল্লব রাগে ঘন নিশ্বাস ফেলতে লাগলো। আদ্রের উপর পল্লবের ভীষণ রাগ হচ্ছে।
অনু শুকনো গলায় কোনোরকমে আদ্রকে বলল,

‘যদি আংকেল তোমাকে অনেক জোর করে সুমি আপুকে বিয়ে করার জন্য। তখন তুমি কি করবে?’

আদ্র শক্ত গলায় অনুকে বলল,

‘বাবার কথা আমি শুনবো না। যতই আমাকে বাবা জোর করুক। আমি সুমিকে বিয়ে করবো না এটা সিউর।’

অনু এবার চিন্তা মুক্ত হলো। অনুর মনের ভয়টাও আস্তে আস্তে কেটে গেল। অনু হেসে আদ্রকে বলল,

‘তাহলে তো আর কোনো ভয়ই রইল না।’

আদ্র গম্ভীর স্বরে অনুকে বলল,

‘এতো খুশি হওয়ারও কোনো কারণ নেই। বাবাকে তুমি চিনো না অনু৷ কিন্তু আমি বাবাকে চিনি। বাবা অনেক কৌশলে আমাকে সুমিকে বিয়ে করার জন্য জোর করবে। হয়তো আমাকে বাবা বিয়ে করতে বাধ্য করার চেষ্টাও করতে পারে।’

অনু ভয় পাওয়া স্বরে আদ্রকে বলল,

‘এখন তাহলে কি হবে?’

আদ্র হেসে অনুকে শান্ত স্বরে বলল,

‘কি আর হবে? আজ তোমার আর আমার বিয়ে হবে।’

#চলবে…

#তোমাকে_ঘিরে_আমার_অনুভূতি💖 (সিজন-২)
#পর্ব_২৯
#Anika_Fahmida

আদ্রের কথা শুনে পল্লবের বুকের ভিতরের আগুন যেন দাউ দাউ করে জ্বলতে লাগলো। পল্লব টেবিলের পাশ থেকে পানির বোতল হাতে নিয়ে পানি খেয়ে নিজেকে স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করল। পল্লবের শ্বাস নিতেও কষ্ট হচ্ছে। ঘন ঘন নিশ্বাস ফেলছে পল্লব। মুহূর্তের মাঝেই পল্লবের চোখ মুখ লাল হয়ে গেছে। আদ্র আজকে অনুকে বিয়ে করবে এটা শুনে পল্লব যেন কিছুতেই নিজেকে ঠিক রাখতে পারছে না৷ আচ্ছা অনু কি আদ্রের কথায় রাজি হয়ে যাবে? এটা তো কিছুতেই হতে দেওয়া যাবে না। পল্লব ফোনে কাউকে কতগুলা মেসেজ দিল। তারপর পল্লব মুচকি হেসে মনে মনে বলল,

‘আমার অনুকে বিয়ে করা এতো সহজ নয় আদ্র।একবার যখন অনুকে আমি ভালোবেসেছি তখন অনু শুধু আমারই হবে। আমার অনুকে তুমি বিয়ে করবে আর আমি দেবদাস হয়ে ঘুরে বেড়াবো তা কি করে হয়? আমি তোমাকে আমার অনুকে পেতে দিবো না।’

আদ্রের কথা শুনে অনু অবাক হয়ে কতক্ষণ ধরে আদ্রের দিকে তাকিয়ে রইল৷ আদ্র আজ তাকে বিয়ে করতে চায় অনু যেন নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারছে না। আদ্র গম্ভীর স্বরে অনুকে বলল,

‘কি হলো অনু? আজকে তোমার এবং আমার বিয়ে হবে। তুমি এই কথা শুনে খুশি হও নি?’

অনু আদ্রকে অবাক হয়ে বলল,

‘এসব তুমি কি বলছো আদ্র? আজকেই তোমার সাথে আমার বিয়ে হবে মানে? এটা কি করে সম্ভব?’

আদ্র হতাশ হয়ে অনুকে বলল,

‘কেন সম্ভব নয় অনু? তুমি কি আমাকে বিয়ে করতে চাও না?’

অনু মাথানিচু করে শান্ত স্বরে আদ্রকে বলল,

‘হ্যা চাই৷ কিন্তু আম্মু আব্বুকে না জানিয়ে আমি তোমাকে বিয়ে কি করে করি? তুমিই বলো আদ্র?’

আদ্র ধীর গলায় অনুকে বলল,

‘এছাড়া আর কোনো উপায় নেই অনু৷ এখন তোমার আম্মু আব্বু এবং আমার মা-বাবা কেউই আমাদের বিয়ে হতে দিবে না৷ তোমার আম্মু আব্বু আমার উপর রেগে আছে তোমাকে তুলে নিয়ে যাওয়ার জন্য। আবার আমার বাবা-মা সুমিকে বিয়ে করার জন্য আমাকে অনবরত জোর করছে৷ এখন তোমার সাথে যদি আমার বিয়ে হয়ে যায় তাহলে বাবা-মা আর আমাকে সুমিকে বিয়ে করার জন্য বিরক্ত করতে পারবে না। তোমার আম্মু আব্বুও কিছুদিন পর আমাদের বিয়েটা মেনে নিবে। আমাদের মাঝে আর কোনো বাঁধাও থাকবে না। আমার কথাগুলো একটু বুঝার চেষ্টা করো অনু। চলো আজই আমরা দুজন বিয়ে করে ফেলি।’

আদ্রের কথা শুনে অনু ভাবছে আসলে ঠিক কি করা যায়? আজকে কি হঠাৎ করে আদ্রকে বিয়ে করা ঠিক হবে? নতুন কোনো বিপদ আসবে নাতো? অনু আদ্রের মুখের দিকে তাকালো৷ আদ্র অসহায় দৃষ্টিতে অনুর দিকে তাকিয়ে আছে। আদ্রের দুই চোখ যেন অনুকে এটাই বলছে প্লিজ অনু তুমি না করো না। অনুর মাঝে লজ্জা কাজ করলো। কেন যেন আদ্রের মুখের দিকে অনু বেশিক্ষণ তাকিয়ে থাকতে পারলো না। মাথানিচু করে অনু বসে রইল। আদ্র শান্ত স্বরে অনুকে বলল,

‘কি হলো অনু? কিছু বলছো না কেন?’

অনু শান্ত স্বরে আদ্রকে বলল,

‘আমি আবার কি বলবো?’

আদ্র রাগী স্বরে অনুকে বলল,

‘ কি বলবে তুমি জানো না? ওকে আমিই তাহলে বলছি। আমাকে বিয়ে করতে তোমার কোনো আপত্তি নেই তো?’

অনু আদ্রের দিকে ভয় পাওয়া দৃষ্টিতে তাকাল। এভাবে চুপ করে থাকাতে আদ্র হয়তো এবার রেগে গেছে। অনু মাথা নেড়ে আদ্রকে শান্ত স্বরে বলল,

‘না নেই।’

অনুর কথা শুনে আদ্রের ঠোঁটে মুহূর্তের মাঝেই হাসি ফুটে উঠল।আদ্র বসা থেকে উঠে অনুর হাত ধরে বলল,

‘তাহলে চলো যাই।’

অনু অবাক হয়ে আদ্রের দিকে তাকিয়ে বলল,

‘কোথায় যাবো?’

আদ্র রাগী স্বরে অনুকে বলল,

‘তোমার না জানলেও চলবে।’

কফির বিল পে করে আদ্র অনুর হাত ধরে টেনে কফি হাউজের বাইরে নিয়ে গেল। পল্লব রেগে বসা থেকে উঠে দাঁড়াল। পল্লব রেগে মনে মনে বলল,

‘তোদের বিয়ে আমি কখনও হতে দিবো না। অনু তুই শুধু আমার। আর কারও না।’

তারপর আদ্র এবং অনু কোথায় যাচ্ছে তা দেখার জন্য পল্লবও কফি হাউজ থেকে বের হয়ে গেল।

গাড়ির কাছে এসে আদ্র অনুর হাত ছেড়ে দিলো। আদ্র গম্ভীর স্বরে অনুকে বলল,

‘গাড়িতে উঠো।’

অনু আদ্রের দিকে তাকিয়ে হেসে বলল,

‘উঠবো না। কি করবে?’

আদ্র মুচকি হেসে অনুকে বলল,

‘মজা করছো তুমি আমার সাথে অনু?’

অনু হেসে আদ্রকে বলল,

‘তুমি যা ভাবো তাই৷’

এদিকে পল্লব গাড়িতে উঠে বসে দূর থেকে আদ্র এবং অনুর কথা শুনছে আর রাগে জ্বলছে। এখন বিকেল হয়ে গেছে। একটু পর রাত হয়ে যাবে। আকাশের মাঝে আলো থেকে ধীরে ধীরে অন্ধকার নেমে আসছে। আদ্র হঠাৎই মন খারাপ করে অনুর দিকে তাকিয়ে বলল,

‘অনু একটা কথা বলি?’

অনু মুচকি হেসে আদ্রকে বলল,

‘হুম বলো আদ্র।’

আদ্র হতাশ হয়ে অনুকে বলল,

‘তুমি কি কখনো আমাকে ভালোবাসি বলবে না?’

অনুর হাসি হঠাৎ করেই ঠোঁট থেকে মিলিয়ে গেল৷ অনু আদ্রের দিকে একদৃষ্টিতে চুপ করে তাকিয়ে রইল। আদ্র আবারও অনুকে জিজ্ঞেস করল,

‘কি হলো অনু? আমাকে কি তুমি কখনই ভালোবাসি বলবে না? আমি যে তোমার মুখ থেকে ভালোবাসি শোনার জন্য সেই কবে থেকে অপেক্ষা করছি।’

অনু আদ্রের ডান হাতটা নিজের হাতের মুঠোয় নিল। কিছুটা অবাক হয়ে আদ্র অনুর দিকে তাকাল। এই প্রথম নিজে থেকে অনু আদ্রের হাত ধরেছে। অনু আদ্রের হাতের দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে মুচকি হাসলো। তারপর আদ্রের হাতের তালুতে অনু গভীর চুমু দিল। অনু এভাবে হাতে চুমু দেওয়ায় আদ্রের মনের ভিতর কেমন যেন অনুভূতি হলো। অনু আদ্রের হাতে চুমু দিবে তা আদ্র কখনও কল্পনাও করে নি। কারণ আদ্র সবসময় অনুকে রাগী, গম্ভীর হয়েই দেখে এসেছে। অনু এবার আদ্রের চোখের দিকে তাকিয়ে বলল,

‘আমি তোমাকে অনেক আগে থেকেই ভালোবাসি আদ্র।হ্যা আমি তোমাকে খুব ভালোবাসি। কিন্তু কোনোদিন তোমাকে আমি বলতে পারি নি। আমার ভয় হতো। যদি তোমাকে ভালোবাসি বললে তুমি আমাকে নির্লজ্জ মেয়ে মনে করো তখন আমার কি হবে? আমি তো তাহলে লজ্জায় শেষ হয়ে যাবো। তাই তোমাকে আমি কোনোদিন বলতে পারি নি। আমি ভালোবাসার অনুভূতি ঠিক মতো প্রকাশ করতে পারি না আদ্র। আমার মনের ভাষা আমি সহজে বুঝতেও পারি না। তোমাকে ঘিরে আমার অনুভূতি বহুদিন ধরে আমাকে জ্বালাতন করতো। আমি আমার মনের অনুভূতি এড়িয়ে যেতাম। তুমি আমাকে অনেক জ্বালাতন করতে। আমি তোমাকে গুরুত্ব দিতাম না। কারণ তোমাকে ভালোবাসি বলতে আমার ভীষণ ভয় হতো আদ্র। যদি তুমি পাল্টে যাও তখন আমার কি হবে? আমি তো মরেই যাবো আদ্র।

আদ্র অনুকে বুকে জড়িয়ে ধরে রাগী স্বরে বলল,

‘এই অনু একদম নিজের মরার কথা বলবে না। আমি কোনোদিনও পাল্টে যাবো না। সবসময় আমি তোমাকে একইভাবে ভালোবেসে যাবো। আর আমি তোমাকে কেন নির্লজ্জ মেয়ে মনে করবো অনু? এটা তোমার ভুল ধারণা ছিল। ভালোবাসি বললে কোনো মানুষই নির্লজ্জ হয়ে যায় না। তুমি আমাকে ভালোবাসি বলাতে আমার মনে যে কত প্রশান্তির অনুভূতি হচ্ছে তা আমি তোমাকে বলে বুঝাতে পারবো না অনু। তোমার মনের অনুভূতি তুমি আমার কাছ থেকে লুকিয়ে রাখলেও আমি কিন্তু ঠিকই বুঝতে পারতাম।’

আদ্রের কথা শুনে অনু নিঃশব্দে কাঁদতে লাগলো।
অনু কাঁদছে আদ্র বুঝতে পারল। তাই আদ্র অনুকে জড়িয়ে ধরা অবস্থায় শান্ত স্বরে বলল,

‘অনু তুমি এভাবে কাঁদছো কেন?’

অনু কান্না জড়িত কন্ঠে আদ্রকে বলল,

‘আমি জানি না। কেন যে আমার এতো কান্না পাচ্ছে আমি বুঝতে পারছি না আদ্র।’

আদ্র অনুর চোখের জল মুছে দিয়ে বলল,

‘অনু তোমাকে কাঁদতে দেখতে আমার একটুও ভালো লাগে না। আমাকে প্রমিজ করো এভাবে তুমি আর কোনোদিনও কাঁদবে না?’

অনু মাথা নাড়িয়ে আদ্রের দিকে তাকিয়ে বলল,

‘হুম প্রমিজ।’

পল্লব আদ্র এবং অনুর গভীর ভালোবাসা দেখে স্তব্ধ হয়ে গেল। পল্লবের চোখের কোণে জল চলে আসলো। নিজের চোখের জল মুছে পল্লব যাদের মেসেজ দিয়েছিল তাদের ফোন করে বলল,

‘তোদের আর আসতে হবে না।’

পল্লব ফোনটা কেটে দিয়ে দীর্ঘ শ্বাস ফেললো। পল্লব জোর করে হেসে মনে মনে বলল,

‘আসলেই আমি একটা বড় ভুল করতে যাচ্ছিলাম। অনু তো আমাকে ভালোবাসে না। অনু আদ্রকে ভালোবাসে। আর আদ্রও অনুকে খুব ভালোবাসে। আমি কেন ওদের গভীর ভালোবাসায় বাঁধা হয়ে দাঁড়াবো? আমার তো কোনো অধিকার নেই। তোমার ভালোবাসার মানুষের সাথে তুমি ভালো থেকো অনু।’

আদ্র অনুকে কোলে করে গাড়িতে বসিয়ে দিলো। অনু মন খারাপ করে আদ্রকে বলল,

‘আরেকটু গল্প করলে কি হতো?’

আদ্র গাড়িতে উঠে অনুর পাশের সিটে বসল। অনুর দিকে তাকিয়ে আদ্র হেসে বলল,

‘গল্প করার জন্য আমাদের সারাজীবন পড়ে আছে। তাই এতো ব্যস্ত হয়ে পড়ার কিছু নেই অনু।’

অনু শান্ত স্বরে আদ্রকে বলল,

‘এখন তাহলে আমাকে তুমি কোথায় নিয়ে যাচ্ছো?’

আদ্র হেসে অনুর একগাল টেনে দিয়ে বলল,

‘আমার অনুকে সারাজীবন নিজের কাছে রাখতে হবে তো। তাই বিয়ে করার জন্য কাজী অফিসে নিয়ে যাচ্ছি।’

অনু লজ্জা পেয়ে মুচকি হাসলো। আদ্র গাড়ি স্টার্ট দিয়ে অনুকে নিয়ে চলে গেল। পল্লব দূর থেকে তাদের চলে যাওয়া দেখে হতাশ মনে নিজেও গাড়ি স্টার্ট দিয়ে বাসায় যাওয়ার উদ্দেশ্যে চলে গেল।

#চলবে…