#তোমাকে_ঘিরে_আমার_অনুভূতি💖 (সিজন-২)
#পর্ব_৩০
#Anika_Fahmida
কাজী অফিসে গিয়ে আদ্র অনুকে বিয়ে করে নিলো।এখন ধর্মীয় মতে আদ্রের বিবাহিত স্ত্রী অনু। কাজী অফিস থেকে বেরিয়ে আদ্র অনুর দিকে তাকিয়ে দেখতে পেল অনুর চোখ ছলছল করছে। আদ্র বিচলিত হয়ে হাত বাড়িয়ে অনুর গাল স্পর্শ করে বলল,
‘কি হয়েছে অনু? তুমি এভাবে কাঁদছো কেন?’
অনু কাঁদো কাঁদো কন্ঠে আদ্রকে বলল,
‘আমার ভীষণ ভয় লাগছে আদ্র। আমাদের বিয়ে হয়ে গেছে এটা আমাদের পরিবার জানার পর কি হবে? তারা আমাদের বিয়েটা কি মেনে নিবে?
আদ্র হেসে অনুকে বলল,
‘তারা ঠিক আমাদের বিয়েটা মেনে নিবে অনু। তুমি এই নিয়ে কোনো চিন্তা করে মন খারাপ করো না।’
অনু আদ্রের কথা শুনে একটু হাসার চেষ্টা করলো। কিন্তু মনটা অনুর আবারও খারাপ হয়ে গেল। এমন সময় অনুর ফোনে কল আসলো। মোবাইল ফোনটা হাতে নিয়ে স্ক্রিনে তাকাতেই অনু ভয়ে কাঁপতে লাগলো। আদ্র অনুকে গম্ভীর স্বরে জিজ্ঞেস করল,
‘কে ফোন দিয়েছে অনু?’
অনু কাঁপা গলায় আদ্রকে বলল,
‘আব্বু ফোন দিয়েছে। এখন আমি আব্বুকে কি বলবো আদ্র? আমার যে খুব ভয় লাগছে।’
আদ্র হাত বাড়িয়ে শান্ত স্বরে অনুকে বলল,
‘মোবাইল ফোনটা আমাকে দাও।’
অনু আর কিছু না ভেবেই আদ্রকে মোবাইল ফোনটা দিয়ে দিলো। আরমান রহমান অনবরত ফোন দিয়ে যাচ্ছে। আদ্র ফোন রিসিভ করে হেসে বলল,
‘হ্যালো বাবা, আমি আদ্র বলছি। অনু আমার সাথেই আছে। আপনি অনুকে নিয়ে কোনো চিন্তা করবেন না।’
আরমান রহমান অবাক হয়ে আদ্রকে বলল,
‘তুমি আমাকে বাবা ডাকছো কেন আদ্র? আর অনুই বা তোমার সাথে কেন?’
আদ্র মুচকি হেসে আরমান রহমানকে বলল,
‘কি যে বলেন না বাবা। অনু তো এখন আমার বিয়ে করা স্ত্রী। সেই হিসেবে আপনি এখন আমার শ্বশুর হন। আর শ্বশুরকে তো বাবা বলেই ডাকতে হয়।’
আরমান রহমান রেগে আদ্রকে বলল,
‘তুমি কি আমার সাথে মশকরা করছো আদ্র?’
আদ্র শান্ত স্বরে আরমান রহমানকে বলল,
‘একদমই না বাবা। আমি কেন আপনার সাথে মশকরা করতে যাবো? আপনার বিশ্বাস হচ্ছে নাতো? আপনি তাহলে অনুকেই জিজ্ঞেস করুন আমি অনুর স্বামী কিনা! তাহলেই তো সব ক্লিয়ার হয়ে যায়।’
আদ্র অনুর হাতে ফোন ধরিয়ে বলল,
‘অনু তোমার বাবাকে এখনই বলো আমি যে তোমার বিয়ে করা স্বামী। তাড়াতাড়ি বলো?’
অনু ভয় পাওয়া স্বরে আদ্রকে বলল,
‘কিন্তু আব্বু যদি আমাকে অনেক বকা দেয় তখন আমার কি হবে আদ্র?’
আদ্র গম্ভীর স্বরে অনুকে বলল,
‘কিছুই হবে না। তুমি বলো।’
অনু আদ্রের থেকে ফোনটা নিলো। কানে ফোন নিয়ে কাঁপা স্বরে আরমান রহমানকে অনু বলল,
‘হ্যালো আব্বু!’
আরমান রহমান রাগী স্বরে অনুকে বলল,
‘আদ্র যা বলছে তাই কি ঠিক? তুই আদ্রকে বিয়ে করেছিস অনু?’
অনু ঘাবড়ে যাওয়া কন্ঠে আরমান রহমানকে বলল,
‘হ্যা আব্বু। আমি আজকে আদ্রকে বিয়ে করেছি।’
আরমান রহমান রেগে অনুকে বলল,
‘এমন কেন করলি অনু? আমাদের না জানিয়েই তুই বিয়েটা এভাবে করে ফেললি? আমি আর তোর মা এই কথা শুনে কত কষ্ট পাবো একবারও ভাবলি না?’
অনু কাঁপা স্বরে আরমান রহমানকে বলল,
‘সরি আব্বু। তোমাদের না জানিয়ে আমি আদ্রকে বিয়ে করে ফেলেছি। আমাকে তোমরা ক্ষমা করে দিও।’
আরমান রহমান রেগে অনুকে বলল,
‘এই ভুলের কোনো ক্ষমা হয় না।’
আরমান রহমানের পাশেই আমেনা বেগম দাঁড়িয়ে ছিল। অনু তাদের কিছু না জানিয়ে আদ্রকে বিয়ে করেছে এটা ফোনের লাউড স্পিকারে শুনতে পেয়ে আমেনা বেগমও অনেক রেগে গেলেন। আরমান রহমানের কাছ থেকে ফোন নিয়ে আমেনা বেগম রেগে অনুকে বলল,
‘অনু কি দরকার ছিল এতো নাটকের? সারাদিন আমরা তোর জন্য চিন্তা করছিলাম। তুই ফোনটাও ধরছিলি না। সেই তো আদ্রকেই তুই বিয়ে করলি। বিয়ে যখন তুই আদ্রকেই করতি তাহলে আমাদের জানিয়েই বিয়েটা করতে পারতি। এমন ঢং করার কোনো মানে হয় না।’
অনু মন খারাপ করে আমেনা বেগমকে বলল,
‘আম্মু তুমি আর আব্বু তো আদ্রের সাথে আমার বিয়ে হতে দিতে না। তাই বাধ্য হয়েই তোমাদের না জানিয়ে আমি আদ্রকে বিয়ে করেছি। তোমরা প্লিজ আমার আর আদ্রের উপর রেগে থেকো না।’
আমেনা বেগম গম্ভীর স্বরে অনুকে বলল,
‘আদ্র তোর জন্য উপযুক্ত নয় অনু। যেই ছেলে আমাদের কাছে মিথ্যা বলে তোকে বিদেশ নিয়ে যায়। সেই ছেলে কখনো ভালো হতে পারে না।’
অনু হতাশ কন্ঠে আমেনা বেগমকে বলল,
‘আদ্র খারাপ ছেলে নয় আম্মু। তুমি ভুল বুঝছো।’
আমেনা বেগম রাগী স্বরে অনুকে বলল,
‘আমি আর তোর কোনো কথা শুনতে চাই না। যা বুঝার আমাদের বোঝা হয়ে গেছে। তুই আর কোনোদিন এই বাসায় আসবি না।’
আমেনা বেগম ফোন কেটে দিলো। অনুর চোখ দিয়ে আবারও জল গড়িয়ে পড়লো। এভাবে অনুর চোখে জল দেখে আদ্রের বুকের ভিতরটা হঠাৎ করেই পুড়তে লাগলো। অনুর পরিবারকে না জানিয়ে অনুকে বিয়ে করে কি আদ্র অনুর মনে কষ্ট দিয়ে ফেললো? এখন আদ্রের জন্য অনুর মা-বাবা অনুর উপর রেগে আছে। এদিকে আদ্রও তো তার পরিবারকে কিছু জানায় নি। আদ্র অনুর চোখের জল মুছে দিলো। অনু জল ভরা চোখে আদ্রের দিকে তাকিয়ে হতাশ হয়ে বলল,
‘আমার আম্মু আব্বু তো ভীষণ রেগে আছে আদ্র। আম্মু আব্বু কি আমাদের বিয়েটা কখনো মেনে নিবে না?’
আদ্র অনুকে জড়িয়ে ধরে বলল,
‘তোমার আম্মু আব্বু একদিন ঠিকই আমাদের বিয়েটা মেনে নিবে অনু। তুমি প্লিজ কেঁদো না।’
আদ্র অনুকে নিয়ে নিজের বাড়িতে প্রবেশ করলো। এখন অনেক রাত হয়ে গেছে। আনোয়ার হোসেন এবং রেহেনা পারভিন ড্রইংরুমেই বসে ছিল। অনুকে সাথে নিয়ে আদ্র বাসায় এসেছে দেখে তারা অনেক অবাক হলো। রেহেনা পারভিন অবাক হয়ে আদ্রকে বলল,
‘আদ্র তুই অনুকে সাথে নিয়ে এসেছিস কেন?’
আদ্র গম্ভীর স্বরে রেহেনা পারভিনকে বলল,
‘অনুকে তো আমার সাথে করেই আনতে হতো মা। আমি যে আজকে অনুকে বিয়ে করেছি। মা অনু এখন তোমার ছেলের বউ।’
রেহেনা পারভিন অবাক হয়ে আদ্রকে বলল,
‘কি বললি আদ্র? তুই অনুকে বিয়ে করেছিস?তুই আমাদের কাউকে না জানিয়ে অনুকে বিয়ে করে ফেললি?এসব আমি কি শুনছি?’
আদ্র গম্ভীর স্বরে রেহেনা পারভিনকে বলল,
‘তুমি ঠিকই শুনছো মা। আমি অনুকে আজ বিয়ে করেছি। অনু এখন আমার বিয়ে করা স্ত্রী।’
রেহেনা পারভিন রাগী স্বরে আদ্রকে বলল,
‘তুই শেষ পর্যন্ত তোর মা-বাবার কথারও কোনো গুরুত্ব দিলি না আদ্র? এতো খারাপ তুই?’
আদ্র শান্ত স্বরে রেহেনা পারভিনকে বলল,
‘হ্যা মা তুমি ঠিকই বলেছো। আমি খুব খারাপ। আমি তোমাদের বাধ্য ছেলে হতে পারলাম না৷ আমাকে তোমরা ক্ষমা করে দিও।’
আদ্রের কথা শুনে আনোয়ার হোসেন কপালে হাত দিয়ে গম্ভীর হয়ে সোফায় বসে আছেন। আদ্রের এমন কাজে আনোয়ার হোসেন চরম বিরক্ত হয়ে আছেন। আদ্র আনোয়ার হোসেনকে শান্ত স্বরে জিজ্ঞেস করল,
‘বাবা তুমি হয়তো আমার উপর খুব রেগে আছো। তাই আমার সাথে এখন তুমি কথা বলছো না। আমি সেটা বুঝতেও পারছি। কিন্তু আমার যে কিছু করার ছিল না। আমি অনুকে ভালোবাসি। আমি মনে মনে ঠিক করে রেখেছিলাম যে বিয়ে করলে আমি অনুকেই করবো। আমি আমার মনের কথা শুনেই অনুকে বিয়ে করেছি।’
আনোয়ার হোসেন রাগী দৃষ্টিতে আদ্রের দিকে তাকালো। তারপর গম্ভীর স্বরে আদ্রকে আনোয়ার হোসেন বলল,
‘তোমার থেকে এমন আচরণ আমি আশা করি নি আদ্র। এখন সুমির মা-বাবাকে আমি কি জবাব দিবো? তারা তো আমাদের এখন অনেক কথা শুনাবেন।’
আদ্র শান্ত স্বরে আনোয়ার হোসেনকে বলল,
‘পুরো ব্যাপারটা আমি সুমির মা-বাবাকে বুঝিয়ে বলবো। ভালো করে বুঝিয়ে বললে তো সুমির মা-বাবা অবশ্যই বুঝবে। তখন আর কোনো সমস্যাই থাকবে না।’
আনোয়ার হোসেন গম্ভীর স্বরে আদ্রকে বলল,
‘যা ইচ্ছে তুমি তাই করো। আমি আর কি বলবো? আমার কথা জীবনে তুমি শুনেছো? শুনো নি। আমার ছেলে তো একটা অমানুষ। এমন অমানুষ ছেলেকে আমি আর কি বলবো? কিছুই বলার নেই আমার।’
আনোয়ার হোসেন নিজের রুমে চলে গেল। আদ্র দীর্ঘ শ্বাস ফেলে এবার অনুর দিকে তাকাল। অনু এতক্ষণ সময় চুপ করে আদ্রের পাশে দাঁড়িয়ে ছিল। আসলে এখানে অনুর ঠিক কি বলা উচিত অনু তা জানে না। রেহেনা পারভিন অনুকে রাগী স্বরে বলল,
‘তুমি আমার ছেলের মাথাটা খেয়েছো অনু। তুমি দুনিয়ায় আর কোনো ছেলে পেলে না? শেষে আমার ছেলের গলাই তোমার ঝুলতে হলো? আদ্রকে তো তুমি সহ্য করতে পারতে না। তাহলে কেন এখন আমার ছেলেকে তুমি বিয়ে করেছো? আমার ছেলে এখন তোমার কাছে মধু হলো কি করে?’
রেহেনা পারভিনের কথা শুনে অনু মন খারাপ করে মাথানিচু করে দাঁড়িয়ে রইল। আর যাই হোক এখন নতুন বউ হয়ে শ্বাশুড়ির সাথে কোনো ঝগড়া করতে অনু চায় না। আদ্র গম্ভীর স্বরে রেহেনা পারভিনকে বলল,
‘মা তুমি অনুকে নিয়ে আর কোনো বাজে কথা বলবে না। এখানে অনুর কোনো দোষ নেই। আমি নিজে অনুকে জোর করে বিয়ে করেছি। যা বলার তুমি আমাকে বলো। কিন্তু অনুকে তুমি কিছু বলবে না।’
রেহেনা পারভিন আদ্রকে রাগী স্বরে বলল,
‘এখন নিজের বউ তোর কাছে আপন হলো আদ্র। আর আমি মা হয়ে এখন তোর কাছে পর হয়ে গেলাম! ভালোই তো। তোর বাবা ঠিকই বলে তুই আসলেই একটা অমানুষ। আমরা তোকে ঠিক মতো মানুষ করতে পারি নি। এজন্য তুই আমাদের কথা শুনিস না।’
রেহেনা পারভিন রেগে নিজের রুমে চলে গেল। আদ্র গম্ভীর মুখে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে আনমনে হাসলো। নিজের মা-বাবার কটু কথাও এখন আদ্রের গায়ে একটুও লাগছে না। অনু আদ্রের মুখের দিকে তাকিয়ে দেখল আদ্র মুচকি হাসছে। কিন্তু এখানে হাসির কি আছে? অনু বুঝতে পারল না। অনু অবাক হয়ে শান্ত স্বরে আদ্রকে জিজ্ঞেস করল,
‘আদ্র তোমার মা-বাবা তোমাকে এতো বকা দিলো আর তুমি সেখানে হাসছো?তোমার কষ্ট হচ্ছে না?’
আদ্র অনুর দিকে তাকিয়ে হেসে বলল,
‘না। আমার একটুও কষ্ট হচ্ছে না। কারণ তোমাকে যেখানে আমি নিজের করে পেয়েছি সেখানে আমার আর কি কষ্ট অবশিষ্ট থাকে অনু? পৃথিবীর সব কষ্ট এখন আমার কাছে তুচ্ছ। আমার কোনো কষ্ট নেই। আমার তুমি আছো। তোমাকে পেয়ে আমি ভীষণ খুশি।’
আদ্রের কথা শুনে অনুর মনটা মুহুর্তেই খুশিতে ভরে গেল। অনুর দুচোখ নিজের অজান্তেই জলে টলমল করতে লাগলো। আদ্র অবাক হয়ে অনুকে বলল,
‘অনু তুমি আবার কাঁদছো কেন?’
অনু খুশিতে হেসে আদ্রকে বলল,
‘আমার দুচোখের জল যে বেদনার নয় আদ্র। আমার এই দুচোখের জল যে আনন্দের। আদ্র তোমাকে স্বামী হিসেবে পেয়ে এখন আমার নিজেকে পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি সুখী মানুষ মনে হচ্ছে। কেন যে আমি আগে তোমার মনটা বুঝলাম না। তোমার মনটা আগে বুঝতে পারলে হয়তো আজ আর আমাদের বিয়েতে কেউ অখুশি হতো না। এখন আমার ভীষণ আফসোস হচ্ছে কেন যে আগে আমি তোমার মনটা আগে বুঝলাম না।’
আদ্র অনুকে জড়িয়ে ধরে বলল,
‘তোমাকে আর কোনো আফসোস করতে হবে না অনু। এখন তো অলরেডি আমি তোমার হয়েই গেছি। আগে হোক বা পড়ে তুমি যে আমাকে বুঝতে পেরেছো এটাই আমার কাছে অনেক। আমাদের পরিবারও ঠিক একদিন আমাদের বিয়েটা মেনে নিবে।’
আদ্রের কথা শুনে অনু লাজুক হাসি হাসলো। আদ্র অনুকে হঠাৎ করেই কোলে তুলে সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠতে লাগল। অনু অবাক হয়ে আদ্রকে জিজ্ঞেস করল,
‘আমাকে কোলে নিলে কেন আদ্র?’
আদ্র হেসে অনুকে বলল,
‘তোমাকে কোলে তুলে রুমে নিয়ে যাওয়ার ইচ্ছেটা দমাতে পারলাম না অনু। এই ইচ্ছেটা অনেক আগেই আমার মনে ছিল। নিজের মনে কথা তো শুনতে হয়।’
অনু আর কিছু বললো না। লজ্জা পেয়ে আদ্রের বুকে মুখ লুকালো। আদ্র নিজের রুমে তালা ঝুলিয়ে রেখেছিল। রুমে তালা ঝুলানো দেখে অনু একটু অবাক হলো। কিন্তু যখন আদ্র তালা খুলে নিজের রুমের দরজার খুললো তখন অনু হা হয়ে রুমের চারদিকটা দেখতে লাগলো। পুরো রুম ফুলে সাজানো। এমনকি বিছানাটাও শত শত গোলাপ দিয়ে সাজিয়ে রাখা হয়েছে। আদ্র অনুকে নিয়ে রুমে প্রবেশ করলো। অনু আদ্রের দিকে তাকিয়ে অবাক হয়ে বলল,
‘আদ্র তোমার রুম কে সাজিয়েছে?’
আদ্র অনুকে কোল থেকে নামালো। তারপর রুমের দরজাটা লাগিয়ে দিলো। অনু অবাক হয়ে এখনও আদ্রের দিকে তাকিয়ে আছে। অনুর দিকে তাকিয়ে আদ্র হেসে বলল,
‘শুধু আমার রুম তুমি কেন বলছো অনু? এই রুমটা এখন তোমারও। আর কে রুম সাজিয়েছে জানতে চাও তো? এই পুরো রুম, বিছানা আজ বিকেল বেলায় আমি নিজের হাতে তোমার জন্য ফুল দিয়ে সাজিয়েছি। তোমার পছন্দ হয়েছে অনু?’
অনু চারদিকটা দেখে লজ্জা পেয়ে আদ্রকে বলল,
‘হ্যা আমার খুব পছন্দ হয়েছে।’
আদ্র হাসিমুখে অনুকে বলল,
‘যাক তোমার পছন্দ হয়েছে। আমার এতো কষ্ট করে পুরো রুম সাজানোটা সার্থক হলো।’
অনু আদ্রকে অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল,
‘আদ্র তুমি নিশ্চিত ছিলে কি করে যে আজ আমি তোমাকে বিয়ে করবো?’
আদ্র অনুর দিকে এগোতে এগোতে বললো,
‘আমি তোমাকে ভালোবাসি আর সেই আমি তোমার মন পড়তে পারবো না তা কি করে হয় অনু?’
অনুও পেছাতে পেছাতে আদ্রকে বলল,
‘তুমি খুব অদ্ভুত আদ্র। তোমাকে আজও আমি পুরোপুরি বুঝতে পারলাম না।’
আদ্র অনুর কোমড় জড়িয়ে ধরে নিজের একদম কাছে নিয়ে আসলো। আদ্রের স্পর্শে অনু কেঁপে উঠে চোখ বন্ধ করে ফেলল। আদ্র নেশা ভরা কন্ঠে অনুকে বলল,
‘আমাকে পুরোপুরি জেনে কি হবে অনু? যতটুকু জানো ততটুকুতেই নাহয় সীমাবদ্ধ থাকুক।’
অনু চোখ খুলে আদ্রের দিকে তাকাতেই অনুর চোখ আদ্রের চোখের দিকে আঁটকে গেল। অনু চোখ ফেরাতে পারলো না৷ আদ্রের চোখের দৃষ্টি অনুকে পাগল করে দিচ্ছে। আদ্রের এই দু চোখে চোখ রাখলে অনু কোথায় যেন হারিয়ে যায়। নিজেকে তখন অনুর খুঁজে পাওয়া খুব মুশকিল হয়ে যায়। আদ্র হঠাৎ করেই অনুকে ছেড়ে দিয়ে শান্ত স্বরে বলল,
‘অনু যাও ফ্রেশ হয়ে এসো। তারপর বিছানায় রাখা বেনারসি শাড়িটা পড়ো।’
অনু আদ্রকে মন খারাপ করে বলল,
‘আদ্র এখন আবার আমাকে বেনারসি শাড়ি পড়তে হবে?কিন্তু আমি যে শাড়ি পড়তে পারি না।’
আদ্র হেসে অনুকে শান্ত স্বরে বলল,
‘যদি আমি তোমাকে শাড়ি পড়িয়ে দেই তাহলে তো হয়।’
অনু ঘাবড়ে গিয়ে কাঁপা স্বরে আদ্রকে বলল,
‘তুমি আমাকে শাড়ি পড়াবে আদ্র? না দরকার নেই।’
আদ্র অনুর একদম কাছে এসে বলল,
‘ আমিই এখন তোমাকে শাড়ি পড়িয়ে দিবো অনু। তুমি আমাকে আর বাঁধা দিয়ো না।’
#চলবে…
#তোমাকে_ঘিরে_আমার_অনুভূতি💖 (সিজন-২)
#পর্ব_৩১
#Anika_Fahmida
আদ্র শাড়ি পড়িয়ে দিবে কথাটা শুনেই অনু লজ্জা পেয়ে আদ্রের থেকে দৃষ্টি সরিয়ে নিলো। আদ্র বিছানা থেকে শাড়িটি হাতে নিয়ে অনুর সামনে দাঁড়ালে অনু ভয়ে কাঁপতে থাকে। অনু কাঁপা স্বরে আদ্রকে বলল,
‘আমাকে তোমার শাড়ি পড়িয়ে দিতে হবে না আদ্র। আমি নিজেই শাড়ি পড়ে নিতে পারবো।’
আদ্র হেসে অনুকে বলল,
‘আমি তোমাকে শাড়ি পড়িয়ে দিলে কি এমন হবে অনু?’
অনু মাথা নেড়ে আদ্রকে বলল,
‘প্লিজ না আদ্র। আমার লজ্জা লাগছে।’
আদ্র এগিয়ে এসে নেশাভরা কন্ঠে অনুকে বলল,
‘আমি তোমার সব লজ্জা ভেঙে দিবো। নো প্রবলেম।’
অনু এবার রেগে আদ্রকে বলল,
‘আমি কি বলেছি তুমি শুনতে পাও নি? আমি নিজে থেকে শাড়ি পড়বো আদ্র। বিরক্ত করো না আমাকে।’
আদ্র মন খারাপ করে গম্ভীর স্বরে অনুকে বলল,
‘আচ্ছা ঠিক আছে যাও। ফ্রেশ হয়ে শাড়িটা পড়ে নাও। যদি তুমি শাড়িটা পড়তে না পারো অনু তাহলে তোমাকে আমি কিন্তু জোর করে শাড়ি পড়িয়ে দিবো। তখন আমি তোমার কোনো নিষেধ শুনবো না।’
অনু আদ্রের মুখের দিকে তাকিয়ে বলল,
‘ঠিক আছে।’
অনু এখনও দাঁড়িয়ে আছে দেখে আদ্রের রাগ হলো। রাগী স্বরে আদ্র অনুকে বলল,
‘কি হলো? যাও।’
অনু চোখ বড়বড় করে আদ্রকে বলল,
‘আমি ওয়াশরুমে শাড়ি পড়তে পারবো না আদ্র৷ তোমাকে রুম থেকে বের হতে হবে।’
আদ্র ভ্রু কুঁচকে অনুর দিকে তাকিয়ে শান্ত স্বরে বলল,
‘অনু আমি রুমের বাইরে যেতে পারবো না। তুমি আমার সামনেই শাড়ি পড়ো। আর এখন তো আমি তোমার স্বামী। তোমার সবকিছু দেখার অধিকার আমার আছে।’
আদ্রের কথা শুনে অনুর গাল লজ্জায় লাল হয়ে গেছে। কিসব বলছে আদ্র?আচ্ছা অনু যে এভাবে আদ্রের কথা শুনে লজ্জা পাচ্ছে সেটা কি আদ্র বুঝতে পারছে না! তবুও অনু মাথানিচু করে শান্ত স্বরে আদ্রকে বলল,
‘ আমি তোমার সামনে শাড়ি পড়তে পারবো না।’
আদ্র মুখ গম্ভীর করে অনুকে বলল,
‘তুমি একটু বিছানায় বসো। আমি ফ্রেশ হয়ে বারান্দায় যাচ্ছি। তারপর নাহয় তুমি ফ্রেশ হয়ে শাড়ি পড়ে নিও।’
অনু মাথানিচু করে শান্ত স্বরে আদ্রকে বলল,
‘আচ্ছা ঠিক আছে।’
আদ্র আলমারি থেকে কাপড় নিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেল। অনু চুপচাপ দাঁড়িয়েই রইল। কিছুক্ষণ পর আদ্র কালো শার্ট এবং ব্লু জিন্স পড়ে বের হলো। মুখ ধোয়ার ফলে আদ্রের মুখটা খুব স্নিগ্ধ লাগছে। অনু আদ্রের মুখের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে মাথানিচু করে দাঁড়িয়ে রইল। আদ্র বারান্দায় চলে গেল। অনু মনে মনে বলল,
‘আদ্র হয়তো আমার উপর রাগ করেছে। কিন্তু আমিই বা কি করতাম? আমাকে আদ্র শাড়ি পড়িয়ে দিবে? ভাবতেই তো আমার যে ভীষণ লজ্জা লাগছে।’
অনু ওয়াশরুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে রুমে আসলো। তারপর ব্লাউজ পেটিকোট পড়ে নিয়ে শাড়ি পরার অনেক চেষ্টা করলো। কিন্তু শাড়ি অনু পড়তে পারছে না।
কোনোরকম শাড়ি শরীরে পেঁচিয়ে নিয়ে অনু বিছানায় মুখ গম্ভীর করে বসে রইল। আদ্র অনেকক্ষণ বারান্দায় দাঁড়িয়ে রাতের আঁধারের আকাশের তারাগুলো দেখছিল। তারাগুলো কত জ্বলমল করছে। অনু এখন আদ্রের স্ত্রী এটা ভাবতেই আদ্রের মনে একটা অন্যরকম ভালোলাগা কাজ করছে। অবশেষে আদ্র নিজের ভালোবাসার মানুষকে নিজের করে পেল। অনেকক্ষণ বারান্দায় দাঁড়িয়ে থাকার পর আদ্র মনে মনে বলল,
‘অনু কি শাড়িটা পড়তে পেরেছে? একবার রুমে গিয়ে কি আমি দেখবো? আবার যদি অনু মন খারাপ করে! থাক অনু মন খারাপ করলেও আমি অনুকে সামলাতে পারবো। একবার গিয়ে নাহয় দেখে আসি।’
আদ্র রুমে গিয়ে দেখল অনু শাড়ি কোনোরকমে শরীরে পেঁচিয়ে মন খারাপ করে বসে আছে। আদ্র এগিয়ে গিয়ে অনুর সামনে দাঁড়ালো। অনু আদ্রের দিকে শুকনো মুখে তাকালো। অনুকে এভাবে শাড়ি পড়তে দেখে আদ্র শব্দ করেই হাসত লাগলো। অনু হতাশ স্বরে আদ্রকে বলল,
‘আদ্র তুমি হাসছো? আর এদিকে আমার কান্না পাচ্ছে। দেখো আমার কি অবস্থা! আমি একটুও শাড়ি পড়তে পারলাম না। ভালো করে হাঁটতেও পারছি না।’
আদ্র হাসতে হাসতে অনুকে বলল,
‘তোমার শাড়ি পড়ার স্টাইল দেখে আমি না হেসে পারলাম না অনু। তুমি মন খারাপ করো না। আমি তোমাকে শাড়িটা পড়িয়ে দিচ্ছি। এবার কিন্তু আমি তোমার কোনো নিষেধ শুনবো না আগেই বলেছিলাম।’
অনু কাঁপা স্বরে আদ্রকে বলল,
‘না। আমাকে শাড়ি পড়িয়ে দিতে হবে না।’
আদ্র ধমক দিয়ে অনুকে বলল,
‘অনু আমাকে তুমি আরেকবার নিষেধ করলে আমি কিন্তু তোমার সাথে আরও ভয়ংকর কিছু করে ফেলবো। তাই আমাকে রাগিয়ে দিও না।’
অনু চোখ বন্ধ করে শান্ত স্বরে আদ্রকে বলল,
‘আচ্ছা ঠিক আছে পড়িয়ে দাও।’
আদ্র মুচকি হেসে অনুকে বলল,
‘এইতো গুড গার্ল।’
অনু চোখ খুলে অবাক হয়ে আদ্রকে বলল,
‘আচ্ছা আদ্র আমাকে একটা কথা বলোতো!’
আদ্র শান্ত স্বরে অনুকে বলল,
‘হ্যা বলো অনু। কি কথা?’
অনু চোখ পাকিয়ে আদ্রকে বলল,
‘তুমি শাড়ি পড়ানো শিখলে কি করে?’
আদ্র অনুর দিকে কিছুক্ষণ একদৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে নিঃশব্দে হাসলো। অনু আদ্রের দিকে গম্ভীর দৃষ্টিতে তাকিয়ে রাগী স্বরে জিজ্ঞেস করল,
‘এভাবে হাসছো কেন? বলো কিভাবে শিখেছো?’
আদ্র অনুর হাত চেপে ধরে টেনে দাঁড় করালো। হঠাৎ করে আদ্র অনুকে টেনে দাঁড় করানোর ফলে অনুর পা শাড়িতে প্যাচ লেগে যায়। ফলে অনু আদ্রের বুকের উপর পড়লো। আদ্র অনুর কোমড় জড়িয়ে ধরলে অনু চোখ বড়বড় করে আদ্রের দিকে তাকাল। অনুর কানের কাছে মুখ নিয়ে আদ্র শান্ত স্বরে ফিসফিস করে বলল,
‘আমি কারও কাছ থেকেই শাড়ি পড়ানো শিখি নি অনু। আমার অনেক আগে থেকেই নিজের বউকে শাড়ি পড়ানোর তীব্র ইচ্ছে ছিল। তাই আমি শাড়ি পড়িয়ে দিতে পারি কিনা আজ আমার বউকে দিয়েই প্রথম ট্রাই করে দেখবো। আর ইউ রেডি অনু?’
অনু আদ্রের কথা শুনে শুকনো ঢুক গিললো। তারমানে আদ্র শাড়ি পড়িয়ে দিতে পারে না। অনু অসহায় দৃষ্টিতে একবার আদ্রের চোখের দিকে তাকাল। আদ্রের কাছ থেকে নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করে অনু বলল,
‘আমাকে তোমার শাড়ি পড়িয়ে দিতে হবে না। আমি সেলোয়ার-কামিজ পড়ে নিচ্ছি।’
আদ্র অনুকে আরও শক্ত করে চেপে ধরে কঠিন গলায় রাগী স্বরে বলল,
‘তুমি বললেও কোনো লাভ নেই অনু। তোমাকে আমি নিজ থেকে শাড়ি পড়ার জন্য একটা চান্স দিয়েছিলাম। কিন্তু তুমি তো নিজ থেকে শাড়ি পড়তে পারলে না। এখন আমি তোমার কোনো কথা শুনবো না।’
অনু বাচ্চাদের মতো লাফাতে লাফাতে বলল,
‘না। আমি তোমার কাছে শাড়ি পড়বো না।’
আদ্র গম্ভীর স্বরে অনুকে বলল,
‘লাফালাফি করলে আরও কঠিন শাস্তি তোমাকে আমি দিবো। তাই একদম স্থির হয়ে দাঁড়াও অনু।’
অনু ঘাবড়ে গিয়ে শান্ত স্বরে আদ্রকে বলল,
‘আচ্ছা আমাকে তুমি শাড়ি পড়িয়ে দাও। তোমাকে আমি আর বাঁধা দিবো না। কিন্তু আমার একটা অনুরোধ তুমি রাখবে আদ্র? প্লিজ!’
আদ্র অনুকে শান্ত স্বরে জিজ্ঞেস করল,
‘আগে বলো। তারপর ভেবে দেখবো রাখবো কিনা।’
অনু মন খারাপ করে আদ্রকে বলল,
‘এমন করছো কেন? বলো আমার অনুরোধ রাখবে?’
আদ্র দীর্ঘ শ্বাস ফেলে শান্ত স্বরে অনুকে বলল,
‘আচ্ছা বলো কি অনুরোধ?’
অনু কাঁপা স্বরে আদ্রকে বলল,
‘তুমি রুমের লাইট অফ করে আমাকে শাড়ি পড়িয়ে দাও। নাহলে আমার খুব লজ্জা করবে।’
আদ্র অনুর দিকে গভীর দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল। অনু মাথানিচু করে দাঁড়িয়ে আছে। আসলেই অনুর ভীষণ লজ্জা লাগছে। আদ্র গিয়ে রুমের লাইট অফ করে দিলো। মুহুর্তেই রুমটা অন্ধকার হয়ে গেল। বাইরের চাঁদের আলোয় তবুও রুমটা হালকা আলোয় আলোকিত হয়ে আছে। অনুর বুকের ভিতর ভয়ে ধুকপুক করছে। আদ্র অনুর কাছে এগিয়ে এসে অনুর পুরো শাড়িটা একটানে খুলে ফেলে আবারও পড়িয়ে দিতে লাগলো। অনু চোখ বন্ধ করে কাঠের পুতুলের মতো দাঁড়িয়ে আছে। শাড়ি পড়ানোর সময় আদ্রের হাতের স্পর্শ অনুর শরীরে লাগলে অনু কেঁপে উঠে। কিন্তু মুখে কিছু বলতে পারে না। আদ্র পুরো শাড়িটা ঠিকমতো পড়িয়ে আঁচলটা অনুর শরীরে জড়িয়ে দিলো। এরপর আদ্র রুমের লাইট অন করে দিলে অনু নিজেকে দেখে নিজেই অবাক হয়ে যায়। আদ্র অন্ধকারেও এতো পারফেক্ট শাড়ি পড়িয়ে দিতে পারবে তা অনুর ধারণার বাইরে ছিল। আদ্র হেসে অনুকে বলল,
‘কি অনু? শাড়ি ঠিকমতো পড়িয়ে দিতে পারলাম তো?’
অনু লজ্জা পেয়ে মাথা নেড়ে হ্যা বললো। আদ্র মুচকি হেসে অনুকে বলল,
‘আমার বউকে লাল শাড়িতে ভীষণ সুন্দর লাগছে।’
অনু আদ্রের দিকে একবার অবাক হয়ে তাকিয়ে লজ্জা পেয়ে চোখ সরিয়ে মাথানিচু করে ফেললো। আদ্রের দিকে তাকাতেও অনুর ভীষণ লজ্জা লাগছে। অনু ঘাবড়ে গিয়ে মনে মনে বলল,
‘আজ আমার এতো লজ্জা লাগছে কেন? সবকিছুতেই যেন আমাকে লজ্জায় ঘিরে ফেলছে।’
আদ্র আবারও লাইট অফ করে দিলে অনু চমকে উঠলো। অনু ভয় পেয়ে কাঁপা স্বরে আদ্রকে বলল,
‘আদ্র তুমি আবারও লাইট অফ করলে কেন?’
আদ্র অনুর একদম কাছে এগিয়ে এসে শান্ত স্বরে বলল,
‘আজকে তো আমাদের বাসর রাত। তুমি কি ভুলে গেলে অনু? যদি তুমি ভুলে যাও তাহলে নো প্রবলেম। আমি তোমাকে আবার মনে করিয়ে দিচ্ছি।’
আদ্রের কথা শুনে অনু লজ্জায় শেষ হয়ে গেল। আদ্রকে কি বলবে অনুর জানা নেই। আদ্র অনুর কোমড় জড়িয়ে ধরে অনুকে নিজের একদম কাছে নিয়ে এসে অনুর ঠোঁটে ঠোঁট ডুবিয়ে দিলো।
পল্লব নিজের রুমের মাটিতে মন খারাপ করে বসে আছে। রাতের খাবারও পল্লব খায় নি। পল্লবের মা-বাবা এবং পল্লবের বোন রিনিও খুব চিন্তায় পড়ে গেল। হঠাৎ পল্লবের এমন পরিবর্তন মানতে পারছে না কেউ। রিনি হাতে খাবার নিয়ে পল্লবের রুমে এসে দেখল পল্লব চোখ বন্ধ করে মাটিতে একইভাবে বসে আছে। খাবারটা রিনি টেবিলে রেখে শান্ত স্বরে পল্লবকে বলল,
‘ভাইয়া তুই না খেয়ে এভাবে মাটিতে বসে আছিস কেন? তোর জন্য খাবার নিয়ে এসেছি। খেয়ে নে। তুই খাবার না খেলে মা-বাবা, আমি, কেউ কিন্তু কিছু খাবো না।’
পল্লব নিজের দু’চোখ খুলে গম্ভীর স্বরে রিনিকে বলল,
‘আমার খিদে নেই রিনি। আমার জন্য মা-বাবা, তুই কেন না খেয়ে থাকবি? না খেয়ে থাকিস না। সবাই খাবার খেয়ে নে। আমাকে কেউ বিরক্ত করিস না।’
রিনি হতাশ হয়ে পল্লবকে বলল,
‘ভাইয়া তোর কি হয়েছে আমাকে বলবি?তোর মন খারাপ কেন? আর তুই কি কেঁদেছিস?তোর চোখমুখ এমন ফোলা ফোলা লাগছে কেন?’
পল্লব নিজের চোখ মুছে শান্ত স্বরে রিনিকে বলল,
‘কি যে বলিস না তুই রিনি! আমি কাঁদবো কেন? তোর ভাইকে তুই কোনোদিন কাঁদতে দেখেছিস?’
রিনি মুখ গম্ভীর করে পল্লবকে বলল,
‘তোকে আমি কোনোদিন কাঁদতে দেখিনি এটা ঠিক। কিন্তু আজ কেন যেন আমার মনে হচ্ছে তুই কেঁদেছিস।’
পল্লব জোর করে হেসে রিনিকে বলল,
‘বোন তুই একটু বেশিই ভাবিস। আমার কথা এতো না ভেবে তুই গিয়ে পড়াশোনা কর। নিজের বুদ্ধিটা উন্নত কর। নাহলে নিজের রুমে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়।’
পল্লবের কথা শুনে রিনি হেসে দিলো। কিন্তু ভাইয়া এমন কেঁদে মন খারাপ কেন করে রেখেছে রিনি বুঝতে পারছে না। রিনি মনে মনে বলল,
‘ভাইয়ারও কি আমার মতো মনের মানুষকে না পাওয়ার কষ্ট রয়েছে? ভাইয়াকে একবার জিজ্ঞেস করে দেখবো?’
পল্লব রিনিকে গম্ভীর স্বরে বলল,
‘কিরে রিনি আমি তোকে কি বললাম কথা কানে যায় নি তোর? নিজের রুমে যা।’
রিনি শান্ত স্বরে পল্লবকে জিজ্ঞেস করল,
‘ভাইয়া তুই কি কাউকে ভালোবাসিস?’
পল্লব নিজের দুই চোখ বন্ধ করে রেগে রিনিকে বলল,
‘আমি তোকে এই উত্তর দিতে বাধ্য নই। বেশি কথা না করে রুম থেকে বেরিয়ে যা।’
পল্লবের ধমক শুনে রিনি ভয় পেয়ে কেঁপে উঠল। ভাইয়া কখনো রিনিকে এভাবে রেগে ধমক দেয় নি। আজ এভাবে রেগে রুম থেকে বেরিয়ে যেতে বলায় রিনি কষ্ট পেলো। রিনির চোখে জল চলে আসলো। খাবারগুলো টেবিলে রেখেই রিনি রুম থেকে চলে গেলো। পল্লব উঠে নিজের রুমের দরজা লাগিয়ে দিলো। তারপর আবারও দরজায় পিঠ ঠেকে মাটিতে বসে পড়ে নিঃশব্দে কাঁদতে লাগলো। পল্লব কাঁদতে কাঁদতেই মনে মনে বলল,
‘আমাকে তুই ক্ষমা করে দিস বোন। আমি তোকে বলতে পারবো না যে আমি কাউকে ভালোবাসি কিনা! কি করে তোকে বলবো বল? আমি যাকে মন থেকে ভালোবাসতাম সে তো আমাকে ভালোবাসে না৷ আজ আমার ভালোবাসার অনু তার আদ্রকে বিয়ে করে ফেলেছে। এখন অনু অন্য কারও স্ত্রী। আমার ভালোবাসা যে এখন অন্য কারও স্ত্রী সেটা আমি তোকে কি করে বলি বল? আমি যে তোকে বলতে পারবো না। সবার কপালে ভালোবাসা থাকে না। আমার কপালেও হয়তো ছিল না। আমার এই কষ্টের কথা আমি কাউকে বলতে পারবো না।’
#চলবে..