তোমাকে নিয়েই গল্প পর্ব-০৪

0
1092

#তোমাকে_নিয়েই_গল্প
#পর্ব:৪
#জুনাইনাহ_তাসনিম_অরহা

$রাতে খাওয়াদাওয়ার পর আপুর রুমে আপু ফোনে,
–হ্যালো,এটা কি হলো??

–সেটা আমি কিভাবে বলবো আমার আদরের বোনটি?(অপর পাশ থেকে একটি ছেলে বলে ওঠে)

–মজা নিচ্ছো তাই না??ভুলে যেও না তুমিও আমার বড় ভাই লাগো।ওহ সরি মেজো ভাই লাগো আকাশ ভাইয়ায়ায়ায়ায়ায়ায়া।

–এই এই প্লিজ ভাই বলো না।তোমার মুখে ভাই ডাকটা শুনলে বুকের মধ্যে ছ্যাত করে ওঠে।

–এখন কেন হ্যা??নিজে বললে কিছু না আর আমি বল্লেই দোষ??যাই হোক সেসব কথা বাদ।আগে বলো তুমি আমায় বলোনি কেন যে তুমি আমার মামা মানে ইমতিয়াজ এহসানের ছেলে?

–তুমি কি বলছো আগে কোন দিন মায়ের নাম??মা কি বাড়ির কারোর কথায় তো কোনদিন বলোনি।

–হ্যা বলিনি।কিন্তু সেটা তো তোমার জন্যেই,তুমিয় তো বলেছিলে যে সুমনা সম্পর্ক্টা আমাদের তাই ফ্যামিলির কোন কথা উঠবে না কোনদিন।সেই কারনেই তো কেউ কোনদিন কারোর ফ্যামিলির কোন কথা বলা হইনি।

–ওহ হ্যা তাই তো।কিন্তু এবার কি হবে??ফুপি কি মানবে আমাদের কথা??দেখো আমার ফ্যামিলিকে কোনমতে বুঝাতে পারবো কিন্তু তোমার ফ্যামিলি??

–তোমার ফ্যামিলি মানবে এতোটা নিশ্চিত কিভাবে তুমি??

–সে আমার উপরে ছেড়ে দাও।আমি তো এটা ভেবেই বুঝতিছি না যে তুমি আমার ফুপির মেয়ে।আচ্ছা আমি এটা জেনে খুশি হবো নাকি কষ্ট পাবো??

–তুমি মরোগে(আপু রেগে ফোনটা কেটে দেই)

–কাকে মরার কথা বলছিস রে আপু??(আমি আপুর সাথে কথা বলতে আসছিলাম কিন্তু আপুর মুখে মরোগে শব্দটা শুনে ফেলেছি)

–সূচী তু তু তুই।কিছু বলবি??

–হ্যা বলার জন্যেই তো এলাম কিন্তু কাকে মরার কথা বলছিস তুই??

–কই?কাউকে না তো??

–না আমি দিব্বি শুনলাম তুই এক্ষুনি কাকে যেন বললি তুমি মরোগে।

–ভুল শুনেছিস।কি বলতে এসেছিস তাই বল।

–আমি যে ঠিক শুনেছি তা আমি শিউর তুই আমাকে বলতে চাস না এটাও শিউর।যায় হোক মা বলেছে আমরা কাল সকাল এগারোটার ট্রেনে যাবো নানুবাড়ি।তুই তোর ব্যাগ গুছিয়ে নে।

–কি??কালকেই??মা তো কিছু বললো না তখন।

–হ্যা কালই যাবো।এখনি ফাইনাল হলো,তাই তোকে জানাতে আসলাম।আচ্ছা তুই ব্যাগ গুছা আমি যাই আমারো অনেক প্যাকিং করা লাগবে।ড্রেস সাথে ম্যাচিং হিজাব,অর্নামেন্টস,জুতা ওমা গো কতো কিছু।আমি দৌড় দিই…..

কথাটা শেষ করে আমি আর এক সেকেন্ডও দাড়ালাম না।আপু আবার আকাশ ভাইয়াকে কল দিলো কিন্তু আপু কিছু বলার আগেই আকাশ বলে উঠলো,
–কাল গ্রাম পর্যন্ত সাবধানে এসো জানেমন তারপর তো আমি আছিই।টাটা,গুড নাইট।

৭.
–মা দরজা খোলো,দরজা খোলো…(আমি মা বাবার ঘরের দরজা ধাক্কাচ্ছি।অনেকক্ষন দরজা ধাক্কানোর পর আমার বাবা মইনুল আমিন এসে হায় তুলতে তুলতে দরজা খোলে)

–এতো রাতে দরজা ধাকাচ্ছিস?কি হয়েছে মা?

–বাবা তোমরা রেডি হবানা??ট্রেনের টাইম হয়ে যাবে তো।দেখো আমি কিন্তু লেট পছন্দ করিনা।

–হাহাহহহ,দেখো পাগলের কান্ড।মাত্র ভোর ৪টা ৫৩ বাজে মা।এখনো তো অনেক দেরি।যা ঘুমা..

–এখন ৪টা ৫৩ বাজে??

–হ্যা রে।আমি বাবা-মায়ের রুমে গিয়ে দেয়ালঘড়ি দেখলাম

হ্যা সত্যিই ৪টা ৫৩ বাজে।আমি তো ঘুমিয়েই ছিলাম হটাত মনে হলো টাইম হয়ে গেছে তাই দৌড় দিয়ে চলে এসেছি।আমি হতাশ হয়ে নিজের ঘরে আসলাম।আর বাবা মা ওদিকে আমার এই কান্ডে হেসে কুটিকুটি।

৮.
দীর্ঘ সাড়ে চার ঘন্টা জার্নি করার পর অবশেষে আমরা আমার নানাবাড়িতে পৌছালাম।স্টেশনে অন্তু ভাইয়া আর আকাশ ভাই গেছিলো আমাদের রিসিভ করতে।স্টেশন থেকে নানার বাড়িটা ২৫ মিনিট মতো দূর হবে গাড়িতে।গাড়ি থেকে নেমেই তো আমি অবাক।আসার সময় মায়ের কাছে শুনেছি মায়ের বাবা নাকি জমিদার ছিলেন,বিশাল বড় বাড়ি।আসলেই তাই,বাড়িটা একটু পুরাতন হলেও অনেক বড় আর এথেস্টিক টাইপের।সবার প্রথমে আমার মামা আশিকুল এহসান তারপর আমার মামি রোকসানা এহসান আমাদের সাথে কথা বলতে আসেন।মা তো মামাকে জড়িয়ে ধরে প্রচুর কাঁদে কিন্তু আমাদের ৩ ভাইবোনকে স্নেহের সাথে দুজনের বুকে টেনে নেই।মামা মামি ভালোভাবে নিলেও নানিকে নিয়ে সবাই ভয় করছিলাম আমরা।প্রথমে মা গেলো নানির ঘরে,নানি বিছানায় শুয়ে আছেন।মা নানির পাশে বসে বলে,
–মা,(নানি চোখ খুলে তাকায়)কেমন আছো মা?
–……………
–আমার সাথে কথা বলবে না মা গো??ও মা মা।
–…………….
–কিছু তো বলো মা।প্রায় ২৫টা বছর পর তোমার সাথে দেখা হলো।তুমি এভাবে চুপ করে থাকবে??দেখো তোমার নাতি,নাতনিরাও এসেছে।

(মা আমাদের দিকে ইশারা করায় নানি চোখ পিট পিট করে আমাদের দিকে তাকায়।তারপর হাত ইশারা করে আমাদের ডাকে।আমরা ৩ জনও ছুটে নানির কাছে যায়)
–নাম কি তোমাদের??
–নানি আমি সৌরভ,ওটা আমার বড় আপু সুমনা আর এটা হলো বজ্জাত সূচী(সৌরভ নানিকে বলে ওঠে)
–এই তুই বললি কেন আমার নাম??আমি নিজের নাম নিজে বলতে পারিনা?আর আমাকে বজ্জাত কেন বললি তুই?(আমি সৌরভের ওপর রেগে যায়)
–হ্যা তুই তো বজ্জাত,ডাইনী সব।(সৌরভ আমাকে ক্ষেপাতে শুরু করে)
–মায়ায়ায়ায়া(আমিও আল্লাদি সুরে মাকে নালিশ করি।কিন্তু আমাদের এসব কান্ড দেখে নানি হেসে ওঠে)
–দাদি তুমি হাসছো??কতোদিন পর তোমাকে এভাবে হাসতে দেখছি(অন্তু ভাইয়া বলে)
–না হেসে উপায় আছে??এই বাড়িতে আমাকে হাসানোর মতো ছিলেন তোমার দাদা।উনি মারা যাওয়ার পর আমার ছোট কর্তায় একটু রসিক আর তোমরা তো তেতো সব।ছোট কর্তার পর আমার ছোট নাতনীও মজার পেলাম।
–আর আমি??(সৌরভ মুখ ফুলিয়ে বলে)
–হ্যা তুমিও তো।

আমরা সবাই হেসে দিই।বাবা,মা দুজনেই নানির কাছে ক্ষমা চায়।নানি ক্ষমা করে দেই।বাবা মা নানির ঘরে থাকে কিছুক্ষন আর আমরা চলে আসি নিজেদের রুমে।আমাকে আর আপুকে এক রুমে থাকতে দেয়া হয়েছে।আর সৌরভ থাকবে আকাশ ভাইয়ের রুমে।রুমে এসে আমি ড্রেস চেঞ্জ করে নিচে চলে আসি।আপু রুমেই থাকে।আপু রুমের দরজা দিতে যাবে তখনি,,
–আরে আরে কি করছো আকাশ ঘরে ঢুকছো কেন?কেউ দেখে ফেলবে তো।
–এখন এদিকে কেউ আসবে না,সবাই নাস্তা নিয়ে বসেছে(আকাশ ভাই রুমের দরজা দিতে দিতে বলে)
–যদি কেউ তাও চলে আসে??
–আসবে না মেরি জান।(আকাশ ভাই আপুকে জড়িয়ে ধরতে ধরতে কথাটা বলে)
–আরে আরে কি করছো??কেউ দেখে ফেলবে তো।
–ধুর,দরজা দেয়া তো কে দেখবে?(বিরক্ত হয়ে)
–আচ্ছা আচ্ছা রাগ করোনা।আকাআশ…
–হুম।
–ভাবছিলাম কি এবার চলো বিয়েটা করেই ফেলি।
–বি বি বিয়ে…(আকাশ ভাই আপুকে ছেড়ে দিয়ে বলে)
আচ–হ্যা বিয়ে।তোতলাচ্ছো কেন?তুমি আমাকে বিয়ে করতে চাও না।দেখো এখন যদি এরকম কথা বলো তোমাকে কিন্তু ছাড়বো না আমি।তোমার জন্যেই আমি আবরারকে নিজের ঘাড় থেকে তাড়িয়ে সুচীর ঘাড়ে চাপিয়েছিলাম।কিন্তু ওটা একটা শয়তান ছিলো আগে জানলে ওরে বাড়ি থেকে তাড়াতাম ঝাটা পিটা করে।(আপু রাগে ফুসতে ফুসতে বলে)
–হ্যা করবো তো।কিন্তু বাবা,ফুপি..
–মামাকে নাকি তুমি ম্যানেজ করবা তাহলে এখন ভয় পাচ্ছো কেন?
–না মানে…ইয়ে মানে
–মানে মানে করছো কেন??আমি অনার্স থার্ড ইয়ারে পড়ছি তুমি জব পায়ছো,আগামী মাসে আল্লাহ ভালো করলে জয়েন্ট করবা আর এখনো মানে মানে করছো কেন??
–আচ্ছা ঠিকাছে বলবো বাবাকে
–কবে??
–২-৩ দিনের মধ্যেই
–ঠিক আছে।

আকাশ ভাই আপুর রুম থেকে বের হয়ে যায়।তারপর টেনশন নিয়েয় নিজের মোবাইলে অভ্র নামে সেভ করা নিজের ছোট ভাইকে কল দেয়।
–হ্যালো অভ্র।
–হুম কি হয়েছে?
–ভাবী,তুই তোরা ফিরবি কবে??
–ভাবীর শরীরটা তো এখন আগের থেকে বেটার দুয়েকদিনের মধ্যে চলে আসবো।তা ফুপি,ফুপা তোর ভাইবোনেরা এসেছে?
–হ্যা ফুপি ফুপা,ভাই বোন এসেছে সবাই।
–ভাই বোন??কিন্তু আমি তো জানি ফুপির দুই মেয়ে সো বোনেরা হবে না??
–না বোন হবে বোন।বোনেরা আবার কি রে??
–মানে??
–কিছু না ছোট ছোটর মতো থাক।রাখি…
–এই আমি তোর মাত্র দুই বছর আট মাসের ছোট।ওতোটাও না,হ্যালো হ্যালো…যাহ কেটে দিলো।পারেও বটে(অভ্র বলে)

আকাশ ভাই ফোন কেটে দেয়ার পর মুখ শুকনা করে বলে,
–আল্লাহ আমার সাথেই এটা করার দরকার ছিলো??কপাল চাপড়াতে দেয়ার জন্যে আমি একাই ছিলাম??কেন??
–কি ভাবছিস আকাশ??আর সবাই নিচে তুই এখানে দাড়িয়ে কেন??কিছু হয়ছে?
–না ভাইয়া কিছু হয়নি।তুমি যাও আমিও আসছি।
–আচ্ছা তাড়াতাড়ি আয়।
অন্তু ভাই চলে আসে,আকাশ ভাইও পিছু পিছু আসে।

রাতে মামির হাতের গরম ভাত,ইলিশ মাছের ঝোল,হাসের মাংস কষা আর মিষ্টি দই তৃপ্তি করে খায় সবাই।মায়ের হাতের রান্নার পর এই প্রথম কারো রান্না এতো মজা লেগেছে আমার।খাওয়া দাওয়া শেষে সবাই যার যার রুমে চলে আসি।জার্নি করে এসে আজ সবাই খুব ক্লান্ত।রুমে এসে দেখি আপু আগেই শুয়ে পড়েছে,আমিও ওর পাশে শুয়ে পড়ি আর ঘুমিয়ে যায়।কিন্তু ঘুম ভাঙে কারোর স্পর্শে,আমি আস্তে আস্তে চোখ খুলি তারপর,
-আআআআআআআআআ………(আমি স্বজোরে চিল্লিয়ে উঠি)
–হাহহাহাহহাহাহা,,,(আমার সামনে এক পিচ্চি মুখ থেকে ভূতের মুখোশ খুলে হাসতে থাকে)

চলবে…..
(ধন্যবাদ আমার গল্পটা পড়ার জন্যে।আমার ভুলত্রুটি গুলো ক্ষমা করবেন।আর গল্পটি ভালো লাগলে অবশ্যয় জানাবেন।ধন্যবাদ আবারো)