তোমাকে নিয়েই গল্প পর্ব-০৬

0
1010

#তোমাকে_নিয়েই_গল্প
#পর্ব:৬
#জুনাইনাহ_তাসনিম_অরহা

১০.
–অভ্র আমি না একটা মেয়েকে অনেক ভালোবাসি রে।আমি ওকে বিয়ে করতে চাই।
আকাশের মুখে এরকম কথা শুনে অভ্র যেন হার্ট অ্যার্টাক করার মতো অবস্থা।কারন আকাশ যে ধরনের ছেলে তাতে প্রেম করা তো দূরের কথা কোন মেয়েকে প্রপোজ করাটাও হবে না।অভ্র হা করে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে।অভ্রকে এইভাবে চুপচাপ খাম্বার তো দাড়িয়ে থাকতে দেখে আকাশ অভ্রর মুখের সামনে আঙুল দিয়ে চুটকি বাজায় অভ্রর হুশ ফেরে।
–কোথায় হারিয়ে গেলি??আমি তোমাকে এতো বড় একটা কথা বললাম আর তুই বোকার মতো দাড়িয়ে আছিস।

–ভাই,তুই আমার সাথে মজা করলি তাই না??হ্যা আমি একদম শিউর যে তুই মজা করেই বলেছিস।তুই আর প্রেম হতেই পারে না।

–আমি মজা করছি না অভ্র।আমি সিরিয়াস।

–তুই বললেই আমি বিশ্বাস করবো??তোরে তো আমি চিনি,তুই এমনিতে মিশুকে হলেও এসব ব্যাপারে জিরো।হাহাহহাহহাহাহহহহ,

–এই নে তোর মাথা ছুয়ে বললাম।(আকাশ অভ্রর মাথায় হাত দিয়ে বলে।অভ্র যেন আবার শক খায়।কারন আকাশ কোনদিনি অভ্রর মাথায় হাত দিয়ে মিথ্যে কথা বলবে না)

–মেয়েটা কে??(অভ্র মুখ শুকনো করে জানতে চায়)

–মেয়েটা আসলে,আসলে মেয়েটা হলো……

–এতো রাতে দুই ভাই মিলে এখানে বসে কি গল্প হচ্ছে শুনি(আকাশ কথা শেষ করতে পারে না তার আগেই অন্তু চলে আসে)

–ভাইয়া তুমিও এসে গেছো।বসো বসো আকাশ ভাই আসলে…(অভ্র কথাটা বলতে যায় কিন্তু আকাশ চোখ দিয়ে ইশারা করে দেই যেন না বলে।অভ্র ও বুঝে গিয়ে কথা ঘুরিয়ে ফেলে)আমরা আসলে অর্পার কথা বলছিলাম।

–অর্পা মানে ওই স্কুল লাইফে আকাশ যাকে পছন্দ করতো সেই অর্পা?(অন্তুও পুকুরপাড়ে অভ্র,আকাশের পাশে বসতে বসতে বল)

–হ্যা সেই অর্পা,যাকে আকাশ ভাই পছন্দ করতো।কিন্তু সাহস করে বলে ওঠার আগেই….

–সাহস করে বলে ওঠার আগেই তুই এসে ওরে প্রপোজ করে দিস।আর কি ধরিবাজ মেয়ে হ্যা ও বলে দেই।একবার ভাবেও না যে,তুই ওর থেকে বয়সে ছোট এটাও দেখলো ডাইরেক্ট হ্যা বল দিয়েছিলো।

আকাশ মুখ ভার করে বলে।আকাশের কথা শুনে অন্তু,অভ্র দুইজনই হেসে দেই।তিন ভাই অনেকক্ষন গল্প করে।গল্প করতে করতে রাত দেড়টা বেজে গেছে।অন্তু এইবার বাড়ির ভিতরে যাওয়ার কথা বলে।বড় ভাইয়ের কথা মতো দুইজন যার যার রুমে গিয় শুয়ে পড়ে।

~নানাবাড়িতে আমাদের আসার ৪-৫দিন কেটে গেছে।নানির শরীর খুব অদ্ভুত ভাবেই আগের থেকে একটু ভালো হয়েছে।আজ সকালে নিজে নিজে উঠেও বসেছে।নানিকে আস্তে আস্তে সুস্থ হতে দেখে মামি তো বারবার বলছে যে মেয়ে,জামাই,নাতি-নাতনিদের দেখেই নানী ভালো হয়ে উঠছে।

১১.
দুপুর বেলা খেতে বসেছি।খাওয়ার টেবিলে মামা আকাশ ভাই,আর ওই অভদ্র অভ্রকে বলে আজ বিকালে আমাদের নিয়ে গ্রামটা ঘুরে আসার কথা।আমি আগে কখনো গ্রাম ঘুরে দেখিনি,কোন গ্রামে যায়ওনি তাই আমি খুব এক্সাইটেড ফিল করলাম।বিকালবেলা আমি,আপু,সৌরভ,আকাশ ভাইয়া আর অসভ্য কাকার সাথে পাকনা ভাইপোটা ৬ জন মিলে বের হওয়ার প্লান করি লাস্ট মোমেন্টে সৌরভের পেট খারাপ করায় ও যেতে পারে না।আমি সাদা কামিজ,ধুতি সালওয়ার আর মাল্টিকালারের চুনরি ওড়না আর মেরুন হিজাব পরে রেডি হয়ে নিই।যাওয়ার আগে ঠোঁটে হালকা গোলাপি লিপস্টিক আর চোখে গাঢ়ো কাজল এঁকে নিলাম।আয়নার সামনে দাড়িয়ে নিজের মুখটা দেখছি,সিনেমার নায়িকাদের মতো স্টাইল করছি।
–ইতনি সুন্দার লাগনেকি হাক তুমহে কন দিয়া??হাহ..
–ও ম্যাডাম তোমাকে ওতোটাও সুন্দর লাগছে না যে আয়নার সামনে দাড়িয়ে এসব ফাও কাজ করবা।
(আমার কথাই কে বাগড়া দিলো তা দেখার জন্যে দরজার দিকে তাকাতেই দেখি অসভ্যটা দরজার সাথে হেলান দিয়ে দাড়িয়ে)
–আপনি এখানে??
–হ্যা আপনাকে ডাকতে এলাম ম্যাডাম।সবাই রেডি আপনিই একমাত্র ব্যক্তি যে এখনো সাজুগুজু করছেন।কিন্তু এখানে এসে দেখি আপনি ভুতের মতো সেজে আয়নার সামনে কারিনা কাপুরের অভিনয় করছেন।
–ও হ্যালো আমি ভুতের মতো সেজেছি??
–হ্যা ভুত ও তোমার থেকে ভালো দেখতে বুঝলে??
–ফালতু,অসভ্য,জঘন্য লোক কোথাকার।

আমি রাগ করে বের হয়ে যায়।উনি ও আমার পিছু পিছু আসে।সবাই মিলে গ্রাম ঘুরতে বের হলাম।গ্রামের মধ্য দিয়ে হাটছি সবাই।গ্রামের সবাই আমাদের পরিচয় জানতে চাওয়ায় আকাশ ভাইয়া আমাদের দুই বোনের পরিচয় দেয়।গ্রামের লোক সবাই আমাদের ভালোবেসে আপন করে নেই।তারপর হাটতে হাটতে আমরা এসে পৌছায় নদীর পাড়ে।সূর্য ডুবে যাওয়ার সময় হয়ে গেছে।নদীর দুই পাড়ে সবুজ গাছ,আর ঠান্ডা ঠান্ডা হাওয়া,চারিদিকে পাখির আনাগোনা।এরকম সুন্দর পরিবেশ আমি আগে কোনদিন দেখেছি বলে মনে পড়ে না।
–ওয়াও কত্তো সুন্দর জায়গাটা।(আমি গালে হাত দিয়ে বলি)
–হ্যা অনেক সুন্দর(আপুও বল ওঠে)
–এরকম সুন্দর একটা জায়গায় ছবি না তুললে হয়??
–সেটাই তো কা,যাও ছবি তোলো(আয়ান আমার কথার উত্তরে বলে ওঠে)

আমি আর আপুকে আকাশ ভাই অনেকগুলো ছবি তুলে দেই।আমি সিংগেল ছবিও তুলি।এতো সুন্দর ব্যাকগ্রাউন্ড এ ছবি তুলে মনটাই ভালো হয়ে গেলো।ইন্সটাগ্রামে আপ দিলে অনেক রিয়াক্ট পড়বে।এটা ভেবেই মনটা ভালো হয়ে গেলো।
–কি ব্যাপার কা তুমি মনে মনে এতো হাসছি কেন?(আয়ান দাঁত বের করে আমাকে জিজ্ঞেস করে)

–তুমি আবার এসে গেছো??

–কেন আমি তোমার কাছে আসতে পারি না?

–না সেটা না।কিন্তু যখনি আসো তখনি তো পাকনামো করো তাই আর কি।

–না না কা আজ আমি কোন পাকনামো করবো না।আচ্ছা কা তুমি কি খেয়াল করেছো আজকে আমার কাকুকে কতো হ্যান্ডসাম লাগছে।

–তোর কাকু আর হ্যান্ডসাম।হাহহাহহাহাহহ নাইস জোক।তোর কাকু তো বাদরের মতো দেখতে,সাদা বাদর।হাহহাহাহাহহাহাহহাহহহাহহা

–এই কা তুমি আমার কাকুকে একদম বাদর বলবে না।দেখ দেখ কতো হ্যান্ডসাম লাগছে।আরে দেখ তো একবার…

আমি মুখ বাঁকিয়ে তাকালাম অসভ্যটার দিকে।সাদা টি-শার্ট,কালো রং এর থ্রী কোয়াটার প্যাট,পায়ে সাদা ফিতা ওয়ালা সু।উস্কোখুস্কো সিল্কি চুল বাতাসে উড়ছে,আর মুখে মুখে খোঁচা খোঁচা দাড়ি যেন বাদরটাকে আরো এট্রাকটিভ করে তুলেছে।আগে কোনদিন ওনাকে এইভাবে খেয়াল করে দেখা হয়নি,উনি আসলেই দেখতে মোটামুটি ভালোই।মোটামুটি বললে মিথ্যা বলা হবে,একেবারে হিরোর মতোই দেখতে।আমি চোখ সরিয়ে ফেললাম।যেকোন মেয়েই আর বেশিক্ষন তাকিয়ে থাকলে ওনার প্রেমে পড়তে বাধ্য।তাই আমি আগেভাগেই চোখ সরিয়ে নিই।
–কা কি হলো??দেখলে কাকুকে।একদম মুভির হিরো না??
–হিরো না ছাই।বাদর তোর কাকা।সাদা বাদর।

আমি ওখান থেকে আপুর কাছে চলে আসি।কারন আর বেশিক্ষন পাকনাটার কাছে থাকা যাবে না।পিচ্চি একটা ছেলে কিন্তু কথা শুনে মনে হবে যেন সব বোঝে।আবার কি বলতে কি বলে ফেলবে।
–কিরে সূচী তোর ছবি তোলা হয়ছে??এবার বাড়ি যায় চল(আপু বলে)
–এখনি??
–হ্যা এখনি।
–ঠিকাছে।তুই যখন বলছিস চ….আপুউউউউউউউউউউউউউ(আমি বামে তাকিয়ে জোরে চিল্লিয়ে উঠি)
–কি হলো?(আপু ভয় পেয়ে যায়)
–নৌকাআআআ।আমি নৌকাই চড়বো।
–কি?পাগল নাকি??আমরা সাঁতার জানি না আরেকটু পরেই সন্ধ্যা হবে তাই এসবে উঠা যাবে না।
–না না সন্ধ্যা হওয়া মেলা দেরি তো(আকাশ ভাই বলে ওঠে)
–আমি বললাম না আরেক্টু দেরি(আপু দাতে দাত চেপে বলে)
–ওহ হ্যা।আর বেশি দেরি নেই বোন(আকাশ ভাই আমার দিকে তাকিয়ে বলে)
–না না না আমি উঠবো মানে উঠবো…

আমি বাহানা করতে থাকি।না পেরে আপু রাজি হয় কিন্তু ও যাবে না বলে।আকাশ ভাই ও যায় না।আমি,আয়ান আর অভ্র নৌকাই ঘুরতে বের হয় আর আপুরা বাড়ির দিকে রওনা করে।নীল আকাশ,দূরে সবুজে ঘেরা বন,পাখির ডাক আর ঠান্ডা হাওয়ায় মনটা খুবই ভালো লাগছে।আমি আপন মনে পরিবেশটা ইঞ্জয় করছিলাম তখনি একটা গান কানে ভেসে আসে।

Dua bhi lage na mujhe,
dawa bhi lage na mujhe,
jabse dilko mere tu laga hein…

Nind raato ki meri,
cahat bato ki meri,
chaino ko bhi mere tune yuu thaga hein..

Jab sasee karu mein band,
aakhee karu mein,,
nazar tu yaaa aayaaaa…

Dil ko karar aayaa,tujhpe hein pyar aayaa,
pehli pehli bar aayaa oo yaraa,
dil ko karar aayaa,tujhpe hein pyae aayaa,
pehli pehli bar aayaa oo yaraa….
Ooooooooooo…….

–কি হলো থেমে গেলেন কেন??ভালোই তো গান গাচ্ছিলেন।
(আমি অভ্রকে হটাত করেই বলে উঠি।আমার কথা শুনে অভ্র চোখ খুলে তাকায়)
–আপনি এতো ভালো গান জানা ছিল না তো।সত্যিই অনেক সুন্দর। কিন্তু থেমে গেলেন কেন??(আমি মুখ শুকনো করে)
–আমি কি এখানে তোমাকে গান গেয়ে শুনানোর জন্যে এসেছি।পাড়ে পৌছে গেছি বাড়ি চলো।আর আজ এতো ভালো করে কথা বলছো যে।নতুন কোন বদ মতলোব নাকি।
–মানে??
–মানে তুমি যে মেয়ে মুখে এক মনে আরেক।
(অসভ্যটা আবার আমার সাথে রুড বিহেভ শুরু করেছে।এর সাথে আসলে ভালো করে কথায় বলা যায় না।)
–হ্যা আমি মুখে এক আর মনে আরেক।কিন্তু আপনার মতো অসভ্য বাদর না।

কথাটা বলেই আমি নৌকা থেকে নেমে পড়ি।কিন্তু জায়গাটা এতোটাই কর্দমাক্ত আর পিছলা যা আমি পা রাখার সাথে সাথেই কাদার মধ্যে পড়ে যাই।আমাকে কাদাই মাখামাখি দেখে কাকা ভাইপো হোহহহহহোহহহ করে হাসতে থাকে।আমি রাগি দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকি।অভ্র কোলে করে আয়ানকে নামায়।আয়ানকে রেখে এসে অভ্র আমাকে তুলতে আসে।কারন আমি এখনো কাদার মধ্যেই বসে আছি।অভ্র নিজের হাত বাড়িয়ে দেয় আমার দিকে,
–উঠে এসো।
–……………..
–কি হলো ওভাবে তাকিয়ে আছো কেন?এসো।

আমি হাত বাড়িয়ে দিই……….