তোমাকে নিয়েই গল্প পর্ব-০৯

0
971

#তোমাকে_নিয়েই_গল্প
#পর্ব:৯
#জুনাইনাহ_তাসনিম_অরহা

–আকাশ তুমি কি সূমনাকে ভালোবাসো??
–বাবা আসলে…(মামা থামিয়ে দেয়)
–আমি এতো কথা শুনতে চাই না।হ্যা আর না তে উত্তর।তুমি কি ভালোবাসো?
–হ্যা বাবা।
–সুমনা তোমায় ভালোবাসে??
–সেটা তো সুমনাই ভালো বলতে পারবে।
(মামা আপুর দিকে তাকাই।কিন্তু কিছু বলার আগেই মা মামার হাত ধরে নেয়)
–আমাকে ক্ষমা করে দাও ভাইজান।ওরা যেটা করেছে সেটা অন্যায়।আমি আর এ বাড়িতে থেকে দুই পরিবারের মান সম্মান নষ্ট করতে চাই না।এতোদিন পর যে সম্পর্কটা ঠিক হয়েছে সেটাও নষ্ট করতে চাই না।আমি এক্ষুনি চলে যাবো আমার পরিবার নিয়ে…

অন্তু ভাই,স্নিগ্ধা ভাবি,মামি সবাই মা কে আটকানোর চেষ্টা করে কিন্তু লাভ হয় না।আমরা চলে আসার আগে আকাশ ভাই তো ঘরের দরজা দিয়ে বসে ছিলো।হয়তো সবার থেকে নিজের চোখের পানি আড়াল করার জন্যেই দরজা দিয়েছে।কারন এই সমাজে ছেলেদের তো কাঁদতে মানা।

১৫.
বাসায় এসেছি ৪ দিন হলো কিন্তু ভার্সিটিতে ক্লাস মিস দিয়েছি প্রায় ১২দিন।হুট করেই নানা বাড়িতে গেছিলাম।যদিও এখন ইমপরট্যান্ট কোন ক্লাস ছিলো না।রিভাইজ হচ্ছে সব তাই ওতো টেনশন নেই।
সকাল সকাল উঠে ভার্সিটির জন্যে রেডি হলাম।ভার্সিটিতে গিয়ে বন্ধুবান্ধবদের সাথে দেখা হলো।মামাবাড়িতে কেমন মজা হলো শুনছিলো।মারিয়া সবটা জানতো তাই ওই সবাইকে নানারকম মনগড়া কাহিনি শুনালো যে আমি খুব মজা করেছি।আমিও সায় দিলাম কারন সবাইকে তো আর আপুর ব্যাপারটা বলা যাবে না।ক্লাস শেষ করে আমি আর মারিয়া ক্যান্টিনের দিকে যাচ্ছিলাম।হটাত একটা আননোন নাম্বার থেকে কল আসে।বেশ কিছুক্ষন ধরে নাম্বারটা চেনার চেষ্টা করলাম কিন্তু চিনতে পারলাম না।কল রিসিভ করতে যাবো তার আগেই কেটে গেলো।আমি আর মাথা ঘামালাম না।

দেখতে দেখতেই কেটে গেছে দু মাস,এই দুমাসে মামা বাড়ির কারোর সাথে আমার কোন যোগাযোগ হয়নি।আর দেড় মাস পরেই আমার আর আপুর ফাইনাল পরীক্ষা।আমি আর মারিয়া তো এখন সারাদিন বই নিয়ে পড়ে থাকি।সারা বছর ফাকি মেরেছি এখন তো প্যারা নিতে হবেই।দুজনেই বই নিয়ে সারাদিন বসে থাকি কিন্তু পড়া আর ওতো হয় না।প্রবলেমস সলভ কম গল্প বেশি হয়ে যায়।গ্রুপ স্ট্যাডির এই এক খারাপ দিক ভালোর জন্যে করতে গিয়ে বাশ খেয়ে যায় আরো।তবে আমি আর মারিয়া হলাম ওই কাকলি ফার্নিচারের মতো।কাকলি ফার্নিচার যেমন দামে কম মানে ভালো আর আমরা হলাম তেমন পড়ি কম রেজাল্ট চালানোর মতো।খুব ভালো বললে সবাই বুঝে যাবে যে ঢপ দিয়েছি।হাহাহাহাহাহহহহহ…
কিন্তু এর মাঝে একটা ব্যাপার নিয়ে আমি খুবই আপসেট আর তা হলো আপু।আমার বোনটা বরাবরই চাপা স্বভাবের।।সবার সামনে নরমাল থাকলেও মনে মনে খুবই কষ্ট পায়।আমি জানি না প্রিয় মানুষের থেকে দূরে গেলে কেমন লাগে তাই হয়তো আপু কতোটা কষ্টে আছে সেটাও বুঝতে পারিনা।কিন্তু ও যে ভালো নেই সেটা আমি বুঝি।মা সেদিন যেভাবে ওরে ইমোশোনাল ব্লাকমেইল করেছিলো তারপর আর,,,,,,,,,,,,

২ মাস আগে(মামা বাড়ি থেকে ফেরার পর),,
ঠাসসসসসসসসসস!
চড়ের শব্দে সমস্ত বাড়ি যেন কেঁপে উঠলো।আপু মাটিতে পড়ে আছে।আমি তাড়াতাড়ি গিয়ে আপুকে তুলি।বাবাও আপুর কাছে এগিয়ে এসেছে।মায়ের এই ভাবে আপুকে চড় মারাটা আমরা কেউই আশা করিনি।সৌরভ তো ভয় পেয়ে গেছে,ওর মুখ দেখেয় আন্দাজ করা যাচ্ছিলো যে বেচারা প্রচুর ভয় পায়ছে।মা আবার আপুকে মারতে গেলো কিন্তু তার আগেই আমি হাত ধরে ফেলেছি।
–মা কি করছো কি এটা??যা মারার তা তো মেরেছো তাও আবার মারতে আসছো কেন??আর ওর দোষটাই বা কি??কাউকে ভালোবাসা কি অন্যায়??
–হ্যা হ্যা অন্যায়।নিজের মায়ের ভাইপোকে ভালোবাসাটা অন্যায়।
–মা প্লিজ এক কথা কতোবার বলবা??এই যে ভাইপো ভাইপো করতেছো এটা কি আগে জানতো?ও যখন আকাশ ভাইকে ভালোবেসেছে তখন তো ওরা জানতো না যে ওদের বাবা মা ভাইবোন।এখন যদি এরকম কিছু জানতে পারে ওদের দোষ টা কোথায়??এতো সিলি একটা টপিক নিয়ে তোমরা যে কেন এরকম করছো বুঝিনা।আর তাছাড়া ওরা তো একে অপরকে ভালোবাসে।দুজন ভালোবাসার মানুষকে এইভাবে আলাদা করোনা।প্লিজ মা আই বেগ ইউ।
–হ্যা তোমাদের জেনেরেশনের কাছে তো এসব সিলি মনে হবেই।আর ভালোবাসার তুই কি বুঝিস রে??
–বুঝি না আমি তবে এটুকু জানি যে অনেক স্পেশাল ফিলিংস এটা।মধুর একটা সম্পর্কও ঠিক তোমার আর বাবার মতো।তাই মা ওদের আলাদা করার আগে ভাবো যে তোমাদের আলাদা করা হলে কেমন লাগবে।
–সূচী।তোর এতো বড় সাহস হয়ে গেছে,মায়ের মুখের অপর যা নয় তাই বলছিস।তোকে তো আমি…
(আমার আমার গায়ে হাত তুলতে যায় কিন্তু তার আগেই আপু এসে হাত ধরে ফেলে।)
–ওকে মেরো না মা,ও ছোট মানুষ।জানোই তো একটু ইমম্যাচিয়ুর।ওর কথায় প্লিজ তুমি কিছু মনে করো না।আর তোমার আর এসব ভাবা লাগবে না মা।আমি আর এসবের মধ্যে থাকবো না,মামাদের সাথে তোমার সম্পর্কও নষ্ট হতে দেবো না।
–আপু কি বলছিস এসব?তুই কেন নিজের ভালোবাসাকে স্যাক্রিফাইস করবি আজব?
–সূচী ছোট ছোটর মতো থাক।আমি তো মায়ের সাথে কথা বলছি না কি??
(আপুর এই বিহেভিয়ারে আমার খুব রাগ হয়।অন্যের জন্যে নিজের ভালোবাসাকে শেষ করতে যাচ্ছে।আমি আর এক সেকেন্ড ও দাড়ালাম না।নিজের ঘরে চলে গেলাম)
–মা তুমি চিন্তা করো না।আমি কোনদিন কথার খেলাপ করিনা।এই বিশ্বাসটুকু রেখো।

বর্তমান,
সেদিনের কথা ভাবতে ভাবতে হটাত একটা নাম্বার থেকে কল এলো।সেভ করা নেই কিন্তু নাম্বারটা চেনা চেনা লাগছে।আমি রিসিভ করলাম।
–আসসালামু আলাইকুম।কে??
–ওলাইকুম আসসালাম।সূচী আমি আকাশ।
(মনে মনে আমি–আকাশ ভাই??হ্যা এই জন্যেই নাম্বারটা চেনা চেনা লাগছে।কিন্তু উনি এতোদিন পর আমাকে কল দিলো কেন??আর আমাকেই বা কেন কল দিলো।আমার জানা মতে আপুর সাথে ওনার এই দু মাসে কথা হয়নি।আপুর সাথে কথা বলার জন্যেই কি কল দিলো?কিন্তু আপুর সাথে কথা বলার হলে আমাকে কেন কল দেবে?আপুর নাম্বারেই তো দিতে পারতো।আমি নিজে নিজেই এসব ভাবছিলাম তাই আকাশ ভাই যে ওদিকে হ্যালো হ্যালো করছে খেয়ালি করলাম না)
–হ্যালো,হ্যালো
–জ্বী আকাশ ভাই।হটাত আমাকে কল দিলেন?
–সূচী আমাকে একটা সাহায্য করবে প্লিজ।তুমি ছাড়া আর কেউ নেই গো বোন আমাকে সাহায্য করার মতো।
–সাহায্য??কিসের সাহায্য?
–সুমনার সাথে একটাবার আমার কথা বলাই দাও।আমি অনেকবার ওর সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেছি কিন্তু পারিনি।ও তো ওর নাম্বার চেঞ্জ করে ফেলেছে।আমি তোমাদের ভার্সিটিতেও গেছিলাম লাভ হয়নি।এখন একমাত্র তুমিই আছো আমাকে সাহায্য করার মতো।প্লিজ সূচী।
(আমি অনেকবার না না করলাম কিন্তু আকাশ ভাই এতোবার করে বললো যে আর না করতে পারলাম না)
–ঠিক আছে আমি হেল্প করবো।কোথায় কখন দেখা করাতে হবে বলেন।
–এখনি।আমি তোমাদের এলাকাতেই আছি।তোমাদের বাড়ি থেকে কিছুদূর এসে যে দোকান টা ওখানেই আছি আমি।তুমি সুমনাকে নিয়ে কি এখন একটু আসতে পারবে??
–কি?এখন??
–হ্যা।এখন তো মাত্র ৭টা বাজে,সন্ধ্যা মাত্র।প্লিজ না বলো না।প্লিজ।

আমি আকাশ ভাইয়ের কথা ফেলতে পারলাম না।আপুকে কি বলে বাইরে নিয়ে যাবো তাই ভাবছি কারন আকাশ ভাই এসেছে জানলে আপু কোনদিনি যাবে না।
–আপু আসবো??
(আপু আলমারি গুছাচ্ছিলো।আমি ডাকাতে হাসি মুখে তাকায়)
–আরে আয়।তুই আবার কবে থেকে আমার ঘরে পারমিশন নিয়ে আসা শুরু করলি বোন??
–না মানে ওই আর কি(ওর ঘরে ঢুকতে ঢুকতে)
–কিছু বলবি কি?
–না কি বলবো??কিছু না বললে আসা যাবে না?
–না না তা হবে কেন??
–তাহলে এসব বলছো কেন??
–আচ্ছা বাবা ভুল হয়ছে।আমি আমার কথা উইথড্র করছি।হয়ছে??
–না হয় নাই।আপু তুই আমাকে আর আগের মতো ভালোবাসিস না।
–মানে??আমি তোরে আগের মতো ভালোবাসবো না কেন হ্যা?(আপু হেসে হেসে)
–বাসিস নায় তো।আমার সাথে গল্প করিস না,আমার যত্ন করিস না।আমার মন খারাপ থাকলেও কাছে যাস না,পড়ার জন্যে বকা দিস না,একসাথে ঘুরতে যাস না।এর মানেই তো ভালোবাসিস না।
–এসব না করলেই বুঝি ভালোবাসি না??
–আমি আর ওতো কথা বলতে চাই না।আগে আমরা সন্ধ্যার পর অলি ভাইয়ের দোকানে মালাই চা খেতে যেতাম প্রায় প্রায়।৩ মাস হয়ে গেছে আমরা সেটাও করিনি।থাক এসব বলে আর কি হবে আমি যাচ্ছি আমার ঘরে।
(আপুকে ইমোশোনালি কথা গুলো বলে ব্যাক ঘুরে হাটতে লাগলাম।মনে মহে ভাবছি আপু ডাক আমাকে,ডাক।আপুর ঘরের দরজা পার হবো তখনি আপু ডেকে ওঠে)
–সূচী
(আপুর ডাক শুনে আমার মনে লাড্ডু ফুটে ওঠে।কিন্তু আমি প্রকাশ করিনা।শুকনো মুখেই তাকাই)
–কি হয়েছে বলো।
–চা খেতে যাবি।অনেক দিন অলি ভাইয়ের মালাই চা খায় না।যাবি??
(আপুর কথা শুনে বুঝা যাচ্ছে যে আমার ইমোশোনাল ব্লাকমেইলটা কাজে লেগেছে।আমি আপুর কথাই একটু আমতা আমতা করলাম ঠিকি কিন্তু পরে গেলাম)

*অলি ভাইয়ের দোকানে বসে চা খাচ্ছি আমি আর আপু।আপু তো ভালোভাবেই আছে কিন্তু আমার টেনশন হচ্ছে।আমি এদিক ওদিক আকাশ ভাইকে খুজছি।উনি তো এখানেই ছিলো কিন্তু দেখতে পারছি না তো।আমাকে এই ভাবে এদিক ওদিক তাকাতে দেখে আপু বলে উঠলো,
–কাউকে কি খুজছিস সূচী??
–কই না তো।কাকে খুজবো আমি?
–না যেভাবে তাকাচ্ছিস তাতে মনে হলো।আচ্ছা তোর খাওয়া হলে এবার বাসায় চল।বেশি দেরি হলে মা বকা দেবে।

দোকানে টাকা পরিশোধ করে আমি আর আপু বাসার দিকে রওনা দিলাম।কিন্তু আমি এখনো আকাশ ভাইকে খুজছি আমাকে আপুকে নিয়ে আসতে বলে কোথায় হাওয়া হয়ে গেল??হটাত সামনে দেখি আকাশ ভাই।আপু তো আকাশ ভাইকে দেখে শকড।আকাশ ভাইকে দেখে আরো জোরে হাটা শুরু করলো কিন্তু পারলো না এতোক্ষনে আকাশ ভাই আপুর সামনে এসে দাড়িয়েছে।
–কেমন আছো সুমনা?
–ভালো আছি।
–আমি তোমার সাথে অনেকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করেছি কিন্তু তুমি তো..
–বাসায় যেতে হবে আমাই।
আপু আকাশ ভাইয়ার কথা মাঝ পথে থামিয়েই আমার হাত ধরে টেনে নিয়ে চলে আসে।আমরা কিছু পথ আসার পর পিছন থেকে আকাশ ভাইয়ের আওয়াজ আসে।
–আমি আজ জীবনের প্রথম স্যালারি পেয়েছি।তোমার জন্যে একটা শাড়িও কিনেছি।
আকাশ ভাইয়ের কথা শুনে আপু দাড়িয়ে পড়ে।কয়েক সেকেন্ড পর আবার হাটা শুরু করে।বাসার মধ্যে এসে আপু আমার হাতটা ছেড়ে নিজের রুমে চলে যায়।আমিও আমার রুমে চলে আসি।

১৬.
পরেরদিন সন্ধ্যা।আমি মাগরিবের নামাজ শেষ করে ড্রয়িং রুমে বসে ইন্সটা স্ক্রোল করছি।আপু আর সৌরভ নিজেদের রুমে।বাবা এখনো অফিস থেকে ফেরেনি।।আর মা রান্না ঘরে সন্ধ্যার নাস্তা বানাচ্ছে মিলা আপার সাথে মানে আমাদের বাড়িতে যিনি মাকে কাজে সাহায্য করে।আমি বসে বসে ফোন চালাই সেই সময় কলিং বেল বেজে উঠলো।আমি মাকে আওয়াজ দিলাম কিন্তু মা উলটো আমায় বকা দিলো যে আমি তো বসেই আছি নিজেই তো খুলে দিতে পারি দরজাটা।বাধ্য হয়ে আমি দরজা খুলতে গেলাম।দরজা খুলেই বেশ শকড খেলাম,
–তুমি???

আধা ঘন্টা পর আমি,মা,আপু,সৌরভ সবাই ড্রয়িং রুমে খুব সিরিয়াস হয়ে বসে আছি।সেই সময় আবার কলিং বেল বাজলো।সৌরভ গিয়ে দরজা খুললো।বাবা এসেছে।বাবা ভিতরে এসে জুতা খুলতে খুলতে বললো,
–কে এসেছে বাসায়??বাইরে গাড়ি দেখতে পারছি।

চলবে………..