তোমাকে নিয়েই গল্প পর্ব-৪০ এবং শেষ পর্ব

0
2147

#তোমাকে_নিয়েই_গল্প
#পর্ব:৪০(অন্তিম পর্ব)
#জুনাইনাহ_তাসনিম

আশহাদের কাকাকে দেখে অনু সালাম দেয়।আশহাদের কাকা উত্তর দিলো।তারপর উনি অনুকে বসতে বলে।
–বসো মা।আচ্ছা তোমার নাম কি?
–আমার নাম অনামিকা চৌধুরি তবে সবাই অনু বলে ডাকে।
–অনামিকা।বাহ সুন্দর নাম তো!তুমি আয়ানের স্টুডেন্ট?
–আয়ান?!(অনু একটু কনফিউজড হয়)
–মানে আশহাদ এহসান।ওর ডাক নাম আয়ান তো।তুমি জানো না?
–স্যারের পদবী এহসান?
–হ্যা।
–ও মাই গড।আর ইউ মিষ্টার ইশরাক এহসান?(অনু আন্দাজেই ঢিল ছুড়ে মারে)
–হ্যা।কিন্তু তুমি কিভাবে জানলে?
–ও মাই গুডনেস!

অনু আনন্দে লাফিয়ে ওঠে।তার বিশ্বাসই হচ্ছে না যে অভ্র তার সামনে দাড়িয়ে।এই সেই অভ্র যার কথা সূচীর ডায়েরিতে পড়েছে।কিন্তু ওইখানকার অভ্র ছিলো ২৫-২৬ বছর বয়সী এক যুবক আর এখানে অর্ধবয়স্ক একজন ভদ্র লোক।কিন্তু বয়স হলেও দেখতে মাহশাআল্লাহ আগের মতোই আছে।খুবই সুন্দর।অনু যতোটা না কল্পনা করেছিলো তার থেকেও অনেক বেশি সুন্দর।অনুর ভাবনার মাঝেই অভ্র আবার বলে,
–কি হলো মিস অনু বললে না তো কিভাবে চেনো।
–আমি আসলে…

অনু কথা শেষ করবে তার আগেই অয়ান এসে অনুর হাত ধরে ফেলে।
–স্যার।
–কি চায় তোমার?কেন এসেছো তুমি?বের হয়ে যাও এখান থেকে..

আয়ান অনুর হাত ধরে বের করে দিতে যাচ্ছিলো।অভ্র আয়ানকে থামতে বলার পরও সে থামছে না।অনুও আয়ানকে হাত ছাড়তে বলছে।আয়ান প্রায় গেটের কাছে চলে আসে তখনি অনু বেশ জোরে বলে ওঠে,
–অভ্র সূচীর লাভ স্টোরি ফুল না জেনে আমি কোথথাও যাবো না।

অনুর কথা শুনে আয়ান বেশ অবাক হয়।হাত ছেড়ে দেয় তার এদিকে অভ্রও তো অনেক অবাক হয়ছে।অনু অভ্রর কাছে গিয়ে ডায়েরির কথাটা বলে।
–ওহ তোমার কাছে আছে ওটা?ডায়েরিটা আমি ভুল করে ট্রেনে ফেলে এসেছিলাম।পরে গেছিলাম ট্রেন টা আর পাইনি।
–জি আংকেল।আংকেল প্লিজ জানান সেদিন কি হয়েছিলো।হলুদ শেষ হওয়ার পর আর কিছুই লেখা নেয়।
–জানতে চাও তাহলে?
–জি।
–আচ্ছা বলছি।তার আগে আয়ান যা তো দুটো কফি নিয়ে আয় আমাদের জন্যে(অভ্র বলে)
–আমি কেন যাবো?আজব!
–আমি যেতে বলেছি তোমাকে তাই যাবে বাবা
–বাট..
–আয়ান যাও।নিজে হাতে বানিয়ে আনবা কিন্তু….

আয়ান আর কোন কথা না বলেই চলে যায়।অভ্র অনুর দিকে তাকিয়ে বলে,,
–সেদিন…

সেদিন:-

–হ্যালো পাখি..
–অভ্র ভাই,আপনি?
–নিচে আসো না
–নিচে?এখন?
–হ্যা।আমি তোমার বাসার নিচে দাড়িয়ে।প্লিজ প্লিজ আসো…
–মানে টা কি?কাল তো বিয়ে আমাদের আই মিন আজ।১২টা তো বেজেই গেছে।আজকেও এভাবে লুকিয়ে দেখা করা কি খুব জরুরি?
–হ্যা জরুরি।আসো না প্লিজ..
–আচ্ছা আসছি।

সুচী মাথায় ভালো করে ওড়না পেচিয়ে বাসার বাইরে চলে যায়।নিচে গিয়ে দেখে অভ্র গাড়ি নিয়ে দাড়িয়ে।সূচীকে দেখেই তাড়তাড়ি গাড়িতে উঠতে বলে অভ্র।সূচী গাড়িতে উঠে বসে।গাড়িতে ওঠার পর পিছু ঘুরতেই দেখে আয়ান বসে।
–হ্যালো কা..
–আয়ান তুমি এখানে?
–হ্যা আমি।কেন আমাকে দেখে তুমি খুশি হওনি?
–না না খুশি হবো না কেন?আমি তো অনেক খুশি বাবা।কিন্তু এতো রাতে চাচা-ভাইপো মিলে এখানে কেন?
–সেটা তো সারপ্রাইজ কা…
–সারপ্রাইজ?
–ইয়েস ম্যাডাম।এখন চুপচাপ বসেন..

অভ্র কথাটা শেষ করেই গাড়ি স্টার্ট দেয়।সূচী অভ্রকে জিজ্ঞেস করে,
–কোথায় যাচ্ছি আমরা?
–আমার ভাইপো বললো না সারপ্রাইজ আছে।চুপচাপ বসে থাকো।
–কিন্তু..
–চুউউউপ(অভ্র গম্ভীর ভাবে বলে।সূচী আর একটা কথাও বলে না।)

বেশ খানিকক্ষন পর অভ্র গাড়ি থামায়।তারপর সূচীর দিকে তাকিয়ে বলে,
–নামো।
সূচী নেমে যায়।অভ্র নেমে এসে আয়ানকেও নামায়।তারপর আয়ানকে গাড়ির সামনের দিকে ওপরে বসিয়ে দেয় অভ্র।সূচীর জায়গাটা বেশ চেনা।অভ্র সূচীর হাতটা ধরে বলে,
–মনে আছে তোমার এইখানে ঠিক এইখানেই আমাদের প্রথম দেখা হয়েছিলো।
অভ্রর কথায় সূচীর খেয়াল হয় যে আসলেই তো।এইখানেই তো তাদের প্রথম দেখা হয়।সূচী সেউ সুন্দর অতীতে ডুব দেয়।সূচীর অতীত থেকে অভ্র আবার বাস্তবে ফিরিয়ে আনে।
–জানো পাখি,তোমাকে এখানে আনার প্লানটা আমার ছিলো না।
–তো কার ছিলো?(সূচী অবাক হয়ে জিজ্ঞাসা করে)
–কা আমার প্লান ছিলো(আয়ান বলে ওঠে)
–তাই নাকি?(সূচী অভ্রর হাত ছেড়ে আয়ানের কাছে যায়)
–হ্যা।আমি তো আজকে কাকুর সাথে ঘুমাতে চেয়েছিলাম।রাতে শুয়েই ছিলাম তখন মনে হলো তোমাকে সারপ্রাইজ দেবো তাই কাকুকে বললাম তোমাকে নিয়ে এখানে আসতে।তোমার ভালো লেগেছে কা?
–আমার অনেক ভালো লেগেছে বাবু।আমি অনেএএএএক হ্যাপি হয়েছি(সূচী আয়ানের চোয়ালে চুমু দিয়ে বলে)
–তাহলে কাকুকে বলো আমাকে আইস্ক্রিম কিনে দিতে?
–কি এতো রাতে আইস্ক্রিম?একদম না(অভ্র হালকা ধমক দিয়ে বলে)
–না না না না।আমি আইস্ক্রিম খাবোই।কা বলো না(আয়ান জিদ করতে থাকে)
–আচ্ছা কিনে দিন না ওকে আইস্ক্রিম।
–সূচী তুমিও?
–প্লিজ প্লিজ।আর আমিও খাবো..
–তোমাদের নিয়ে আর পারা যাবে না।বসো এখানে।আনছি…

অভ্র আইস্ক্রিম কিনে আনে।তিনজন মিলে আইস্ক্রিম খাচ্ছিলো।তখনই আয়ান বলে,
–কাকু হিসু পেয়েছে,নামিয়ে দাও….
সূচী আয়ানকে ওইভাবে দেখে হেসে ফেলে।আয়ান লজ্জা পেয়ে যায় কিছুটা।অভ্র তাড়াতাড়ি আয়ানকে নামিয়ে দেয়।
–বেশি দূরে যাস না বাবা(অভ্র বলে)
–ওকে কাকু…

সূচী মনের মতো দাড়িয়ে আইস্ক্রিম খাচ্ছিলো তখনই অভ্র সূচীকে হেচকা টান দিয়ে নিজের বুকের সাথে মিশিয়ে দেয়।অভ্রর এক হাতে আইস্ক্রিম আর অন্য হাতে সূচীর কোমর।
–আরে আরে কি হচ্ছে এটা?মানুষ জনের সামনে এইভাবে…ছাড়ুন তো.
–মানুষ জন?(অভ্র এদিক ওদিক তাকিয়ে বলে)কোথায়?আমি তো দেখতে পাচ্ছি না।
(মেলা রাত হয়েছে তাই মানুষজন নেই তেমন।রাস্তা ফাকায় আছে।মাঝে মধ্যে দু একটা গাড়ি চলাচল করছে)
–উম নেই তবে এসে যায় যদি?
–আসলে আসুক।আমার কি?আমি আমার বউ এর সাথেই তো রোমান্স করছি।এতে মানুষের কোন সমস্যা থাকার তো কথা না।তাই না?
–এই যে স্যার আমি এখনো আপনার বউ হয়নি।ওকে?
–কয়েক ঘন্টা পরই তো হবা।প্রথমে বউ হবা তারপর তোমাকে আমাদের বাসায় নিয়ে যাবো।তারপর দুজন বাসর ঘরে ঢুকবো তারপর আমি(অভ্র কথাগুলো বলছিলো আর নিজের ঠোঁট সূচীর ঠোটের কাছে নিয়ে যাচ্ছিলো।)
–আ আমার আইস্ক্রিম।গলে যাচ্ছে(সূচী তাড়াতাড়ি নিজেরর মুখ সরিয়ে নিয়ে বলে)
–ধুর তোর আইস্ক্রিম।এখন কোন বাহানাতেই কাজ হবে না পাখি।

অভ্র নিজের হাতের আইস্ক্রিম অনেক আগেই ফেকে দিয়েছে এখন সূচীরটাও ফেলে দিলো।তারপর সূচীর কোমর আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরে সূচীকে কিস করতে যায়।সূচীও আর এবার বাধা দেয় না।সূচী চোখ বন্ধ করে ফেলে।কিস প্রায় করবেই এই মুহুর্তে সূচীর হটাত চোখ খুলে যায়।আর সে সাইডে তাকাতেই দেখে আয়ান মেইন রোডের ঠিক মাঝেই দাড়িয়ে আর বাম পাশ দিয়ে একটা লরি বেশ দ্রুত ছুটে আসে।আয়ানকে ওইভাবে দেখে সূচী আর কোন কিছু না ভেবেই অভ্রকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিয়ে আয়ান বলে চিতকার দিয়ে দৌড় দেয়।আয়ানকে ধাক্কা মেরে ফেলে দেয় সূচী।আর এ দিকে অভ্র,
–সূউউউউচীইইইইইইইইই…

লরির ধাক্কাই সূচীর দেহটা রাস্তাই খুব বাজে ভাবে পড়ে।সাথে সাথেই রক্তে চারিপাশ লাল হয়ে যায়।

–তোমার কিচ্ছু হবে না সূচী।তুমি একদম সুস্থ হয়ে যাবে।
এম্বুলেন্সের মধ্যে অভ্র কাঁদতে কাঁদতে বলে,পাশে আয়ানও খুব কাঁদছে।সূচীর এদিকে সেন্স নেই তেমন।অক্সিজেন মাস্ক পরানো।কিন্তু সূচী কেন জানি না অক্সিজেন মাস্ক খুলে ফেললো।
–কি করছো তুমি এটা?প্লিজ খুলো না(অভ্র তাড়াতাড়ি আবার সূচীকে অক্সিজেন মাস্ক পরিয়ে দিতে গেলো)
–প্লিজ অভ্র।আমি কিছু কথা বলতে চাই(এই প্রথম সূচী অভ্রকে নাম ধরে ডাকলো।কিন্তু সেই আনন্দে অভ্রর মন ভালো হচ্ছে না।তার সূচী যে মৃত্যুর সাথে লড়াই করছে।)
–এখন কোন কথা না।আমি তোমার সব কথা শুনব পরে।কিন্তু এখন প্লিজ তুমি এটা পরো।।
–প্লিজ অভ্র আমার কথা গুলো শোন।প্লিজ।তুমি সবসময় চাইতে না আমি তোমাকে ভালোবাসার কথাটা যেব বলি?আজ আমি তোমাকে বলতে চাই।জানি না আর কোনদিন সুযোগ হবে কিনা।
–প্লিজ তুমি এভাবে বলো না।তুমি আমাকে ছেড়ে কোথাও যেতে পারো না(অভ্র কাঁদতে কাঁদতে বলে)
–ভালোবাসি তোমাকে অভ্র।নিজের থেকেও বেশি ভালোবাসি।জানো অভ্র আমি সবসময় ভাবি আমাদের দুজনের একটা সংসার হবে।আমি তুমি আর আমাদের মেয়ে নিহারিকা।আমাদের সংসারটাতে কোন কষ্ট থাকবে না।থাকবে শুধুই ভালোবাসা।তুমি এই ডাক্তারিটারি ছেড়ে এরকম একটা কাজ করবে যেখানে ব্যস্ততা বলে কোন নেয়।
ইচ্ছা হলেই কাজকে ছুটি দেয়া যায়।আমি নিহারিকাকে স্কুলের জন্যে রেডি করবো আর তুমি বাইকে চেপে ওকে স্কুলে রেখে আসবে।আমাদের একটা লাল নীল সংসার হবে।জানি না আদেও হবে কিনা এখন!
–সব হবে পাখি সব হবে।তোমার কিচ্ছু হবে না দেখো।আমি তো আছি।
–অভ্র আমি..হা…

সূচী আর কোন কথা না বলেই নিজের পুরো শরীরটা উপরের দিকে তুলেই ধপ করে পড়ে যায় বেডটার ওপর।অভ্র সূচীর দিকে তাকিয়ে বলে
–সূচী,এই সূচী (অভ্র সূচীর গাল নাড়িয়ে,হাত ঝাকিয়ে বলে)সূচীইইইই(চিতকার দিয়ে ওঠে অভ্র)

অনুকে এইটুকু বলেই অভ্র কেঁপে ওঠে।অভ্রর চোখে পানি।অভ্রকে কাঁদতে দেখে অনুও নিজেকে সামলাতে পারে না।খুব কষ্টে নিজের ইমোশোন লুকিয়ে বলে,
–আই এম সরি।আমি ভাবতেও পারছি না উনি আপনাকে এভাবে ছেড়ে চলে যাবেন।আমি…
–সূচী মারা যায়নি সেদিন।
–মানে?
–মানে ওর এক্সিডেন্ট হয়েছিলো ঠিকই অনেক ব্লিডিংও হয়েছিলো।কিন্তু ও জীবিত ছিলো।

সেদিন:-
সূচীকে জড়িয়ে ধরে অভ্র পাগলের মতো কাঁদতে থাকে।তখনই সূচী আবার নড়ে ওঠে।অভ্র তাড়াতাড়ি সূচীকে ছেড়ে দিয়ে সূচীর পালস চেক করে।অভ্রর দেহে যেন প্রান এলো।সূচীকে তাড়াতাড়ি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।এতোক্ষনে দুই ফ্যামিলির সবাই পৌছে গেছে।অঅপারেশন হয় সূচীর ও প্রানেও বাঁচে।কিন্তু…

–কিন্তু।কিন্তু কি?(অনু জিজ্ঞেস করে)
–সূচীর পা দুটো সারাজীবনের জন্যে প্যারালাইজড হয়ে যায়।লরিটা সূচীর পায়ে আঘাত করে বেশ সেই কারনেই পায়ে বেশি ক্ষতি হয়।ওর এক্সিডেন্ট এর মাস খানিক পর আমরা বিয়ে করি।বিয়ের পর অনেক বড় বড় ডাক্তার দেখিয়েছি ওর পায়ের জন্যে কিন্তু কাজ হয়নি।সেদিনের পর থেকে ও হুইলচেয়ারে থেকে গেলো।
–আর তার কারন টা আমি।আমাকে বাঁচানোর জন্যেই কা নিজের পায়ে আর দাড়াতে পারলো না।(আয়ান কফির ট্রেটা টেবিলে রাখার সময় বলে)
–না না বাবা।তুই প্লিজ এসব কথা বলিস না।তোর কা যদি জানতে পারে ও তো কষ্ট পাবে।
— কাকু কাকু আমি জানি কা কোনদিনি আমাকে ব্লেম করেনি।কিন্তু আমি নিজে তো নিজেকে ক্ষমা করতে পারি না।ওই দিনের ঘটনা মনে পড়লে নিজের প্রতি আমার রাগ হয়।আর আর যখন আমি কার সামনে দাড়াই,কা কে হুইল চেয়ারে দেখি নিজের ওপর ঘৃণা জন্মে আমার।আমিই তো দায়ী কার ওই অবস্থার জন্যে।(আয়ান কেঁদে ফেলে)
–বাবা তুই শান্ত হ।সেদিন তোর কোন দোষ ছিলো না(অভ্র আয়ানকে জড়িয়ে ধরে)।সেদিন যদি তোর কিছু হয়ে যেত তাহলে আমি বা সূচী কেউই কোনদিন নিজেদের ক্ষমা করতে পারতাম না।আর সেটা হতো বেশি কষ্টের।আর তুই একদম কাঁদবি না।তুই জানি না তোর কান্না সূচী বা আমি সহ্য করতে পারি না।সূচীর এক্সিডেন্ট এর পর ডাক্তার জানালো ও নাকি কোনদিন কনসিভ করতে পারবে না,করলেও অনেক রিস্ক।দেশ বিদেশের নামিদামি ডক্টর দেখালাম।ট্রিটমেন্ট নিয়ে সব ঠিকও হলো তারপরও সে বাচ্চা নিতে রাজি হয়নি।কারন ওর এক্সিডেন্ট এর পর তুই অনেক ভেঙে পড়েছিলি।তুই গিলটি ফিল যেন না করিস তার জন্যে সে তার পুরোটা সময় তোকে দিয়েছে।এটা বুঝাতে চেয়েছে যে তুই তার কাছে কতোটা ইমপরটান্ট।আর এটা বুঝাতে যেয়েই তুই হয়ে গেলি ওর নয়নের মনি,তোকে ছাড়া সে আর কিছু ভাবতেও পারে না।তেমন আমিও তো সূচীর অন্তত একটা ইচ্ছা পুরনের জন্যে ডাক্তারি ছেড়ে কফিশপ দিয়েছিলাম।জানো অনামিকা সূচী প্রথমে রাজি হয়নি যে আমি ডাক্তারি ছেড়ে দিই।আমি অনেকটা জোর করেই ছেড়েছিলাম।আমি ওকে আমার পুরোটা সময় দিতে চেয়েছিলাম যেটা ডাক্তারি পেশাতে থাকলে হতো না।এই দেখোই না এখন আমি ইচ্ছা হলেই ওর কাছে চলে যায়।তবে হ্যা আয়ানকে ডাক্তার বানানোর ইচ্ছাটা কিন্তু সূচীরই।তবে আমাদের ছেলেটা পাকনা থেকে কেমন যেন গম্ভীর হয়ে গেলো।আমাদের সেই ছোট্ট ছেলেটাই ভালো ছিল।এখনো ভালো,এই যে দেখো সপ্তাহে ৩ দিন সে আমার ক্যাফেতে ফ্রি পয়সায় পার্ট টাইম জব করে।হাহহাহাহহহ…

অনু সেদিন অভ্র-সূচীর প্রেম কাহিনির সম্পূর্ন টা জেনেছিলো আর রাগী স্যারটার আলাদা একটা সাইড দেখেছিলো।তবে অনু পিচ্চি আয়ানটাকেই বেশি পছন্দ করেছিলো।

১ বছর পর,,
–কয় দেখি দেখি আমার বউমার মুখ দেখি।

হুইলচেয়ারে বসে থাকা একজন মহিলা নতুন বউমার সামনে এসে থামলো।তারপর নতুন বউয়ের দিকে তাকিয়ে বললো,
–এই যে মেয়ে আমি তোমার চাচি শাশুড়ি হলেও,তোমার নিজের শাশুড়ির থেকে বেশি ইমপরটান্ট কিন্তু।
–হ্যা তা কিন্তু ঠিক।সূচীই আর অভ্রই হলো আয়ানের মোস্ট ইমপরটান্ট গার্জিয়ান(স্নিগ্ধা বলে)
–আই নো সূচী।(কথাটা বলেই নতুন বউ জিহবায় কামড় দেয়।সে ভুল করে সূচীকে নাম ধরে ডেকে ফেলেছে)
–এই মেয়ে..তোমার সাহস তো কম না।আমাকে নাম ধরে ডাকো(সূচী কিছুটা রেগে যাওয়ার অভিনয় করে)
–সরি কা।আ আ আমি আসলে..
–অভ্র তোমার বউমা দেখছি আমার মতো।ভয় পেলেই তোতলায়।হাহহাহাহহহহ…(সূচী হোহহোহহহ করে হাসতে থাকে)

নতুন বউমাও হেসে দেয়।এরই মাঝে আয়ানন চলে আসে।আয়ানকে দেখে সূচী বলে,
–বাবা তোর বউ যে তোতলা..
সূচির কথা শুনে আয়ান আড়চোখে বউ এর দিকে তাকায়।তারপর বলে,
–এই যে মিস অনামিকা যাও পড়তে বসো।ভুলে যেও আগামী মাসেই তোমার মেডিকেলের ফাইনাল।
–এই দুষ্টু ছেলে।
–কি হলো কা?
–বউকে এখনো মিস বলছিস কেন?মিসেস বল।
–উফ কা।ছাড়ো তো।তুমি তো জানো আমার ওতো ন্যাকামি ভালো লাগে না।
–ন্যাকামি কি রে?বউকে ভালোবাসা ন্যাকামি বুঝি?তুই না বড্ড বেরসিক ঠিক তোর কাকুর মতো।
–যাব্বাবা আমি আবার বেরসিক হলাম কবে?(অভ্র বলে ওঠে)
–হয়ছ হয়ছ।চলো তো এবার ঘরে চলো।আমি ঘুমাবো।

অভ্র সূচীকে নিয়ে তাদের রুমে যায় আর আয়ান-অনামিকা যায় তাদের রুমে।

অনামিকা বিছানার ওপর বসে।আয়ান সিগারেট ধরাতে ধরাতে বলে,
–হিস্ট্রি রিপিট হয়েই গেলো।

*রাত ১টা মতো বাজে।সূচী ড্রেসিং টেবিলের সামনে চুল বেনী করছিলো।অভ্র এসে কোমর একটু নিচু করে ঝুকে দাড়ায়।
–পাখি..
অভ্রর পাখি ডাকে সূচী খেয়াল করে যে অভ্র এসে দাড়িয়েছে তার পিছনে।
–বাব্বাহ!আজ হটাত পাখি ডাক?কি ব্যাপার?
–কেন?ডাকতে পারি না বুঝি?
–অনেক দিন ডাকো না তো তাই।
–হুম ডাকি না।তুমিও তো আমাকে এখন আর সাদা বাদর বলে ডাকো না?
–জনাব ইশরাক এহসান আপনি না বুড়ো হচ্ছেন।এখন আর ওসব মানায় না আপনাকে।
–কে বলেছে আমি বুড়ো হচ্ছি?তুমি জানো এখনো প্রতিদিন প্রায় ২-৪টা মেয়ে ক্যাফেতে আমাকে দেখে ক্রাশ খায়।(অভ্র সূচীকে বিছানায় উঠতে সাহায্য করার সময় বলে।)
–ফাপরবাজ।
–এই না সত্যি
–থাক থাক সব জানা আছে আমার।

সূচী অভ্রর বুকে মাথা রেখে শোয়।অভ্র সূচীর চুলে বিলি করতে থাকে,
–সরি পাখি।
–সরি ফর হোয়াট?
–আমাদের সন্তান..(অভ্রর কথা শেষ করতে দেয় না সূচী)
–থাক না।এতে তোমার তো কোন দোষ নেয়।আমিই তো বাচ্চা নিতে চাইনি পরে।আর কিছু কিছু ইচ্ছা অসম্পূর্ন থাকাই ভালো।সব ইচ্ছা পূরন হয়ে গেলে মানুষ আল্লাহকে ভুলে যাবে।আর তাছাড়া আমার সব থেকে বড় ইচ্ছাটা তো পূরন হয়েছে।
–কি ইচ্ছা?
–এই যে তুমি।তাই দুয়েকটা না হলেও ঈটা ওকে।বুঝলে মিষ্টার?
–বড় হয়ে গেছো সূচী।আগে তো কিছুই বুঝতে না।
–হাহাহহাহহা।।তুমি হয়তো ভুলে গেছো আমার বয়স ৪২+।পিচ্চি নেই আর..
–হুম আমার পাখিটা পিচ্চি থেকে বুড়ি এখন
–হাহহাহহাহাহহ..
–হাহাহহহহ…

দুজনই হাসতে থাকে।হাসির মাঝেই সূচীর কপালে চুমু এঁকে দেয় অভ্র।এভাবেই শেষ হয় সূচীর তোমাকে(অভ্র) নিয়েই গল্প <৩ ~~সমাপ্ত~~