তোমাতেই সীমাবদ্ধ পর্ব-০১

0
2045

#তোমাতেই_সীমাবদ্ধ
#part :1
#Mishmi_muntaha_moon

আমার বড় আপু মিথিলা আর নাহিদ ভাইয়ার বিয়ের কথাবার্তা শুনে আমার মাথায় আকাশ ভেঙে পরল।
আজ আমাদের বাসায় আন্টি, মামা মামি চাচা চাচি সকলে এসেছে। আর আমি মাত্র রুম থেকে বের হয়ে সবার সাথে কথায় যোগ হতে যাচ্ছিলাম কিন্তু রুম থেকে এক পা বারাতেই এই ঘটনা শুনতে পেলাম।
আমি জিনাত। নাহিদ ভাইয়া হলো মিথিলা আপুর ফ্রেন্ড।অনেক আগে থেকেই উনাকে চিনি আমরা সবাই প্রায় আমাদের বাসায় আসে।
কাল আমাদের বাড়িতে আসায় আমি বেশ অবাক হয়েছিলাম হঠাৎ কেনো এলো। কিন্তু এখন বুঝতে পারছি আসল ঘটনা।
হঠাৎ নাহিদ ভাইয়ার ব্যাগের উপর মাত্র রেখে আসা চিঠির কথা মনে পরতেই বামের একেবারে শেষের রুমের দিকে ছূটতেই আরিশ ভাইয়ার সাথে ধাক্কা খেয়ে ঠাস করে নিচে পরে গিয়ে জোরে চিৎকার দিয়ে উঠলাম

–আহ,,,,উফ।

আমার চিৎকার শুনে সোফায় বসে থাকা সকলে আমাদের দিকে তাকালো। আমি নিচে পরেই সামনে আরিশ ভাইয়ার দিকে তাকালাম উনি বিরক্ত হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।আমি ব্যথায় কুকরিয়ে হাত বাড়িয়ে দিয়ে ভাইয়াকে বললাম।

–ভাইয়া একটু উঠতে হেল্প করুন।

আমার কথা শুনে আরিশ ভাইয়া পকেটে হাত দিয়ে ভাব নিয়ে সাইড কেটে চলে গেলো। আমার চোখ বেড়িয়ে যাওয়ার উপক্রম একে তো ফেলে দিলো তার উপর না উঠিয়ে ভাব নিয়ে চলে গেলো। মেজাজ টাই খারাপ হয়ে গেলো।
আমি মাজায় হাত দিয়ে বসে আছি।আম্মু ছুটে আমার কাছে এসে দারালো।

–পরলি কিভাবে?আজব তো এভাবে ধুপধাপ করে হাটলে তো পরবি নাকি।

আমি মাজা ঢলতে ঢলতে বিস্ময় নিয়ে মার দিকে তাকালাম।আমি এখানে উনার ভাইয়ের ছেলের জন্য পরে কুপোকাত হয়ে আছি আর আমার মা দাঁড়িয়ে আমায় বকছে।আমি আস্তে করে দেয়াল ধরে উঠে রেগে মা কে বললাম

–উফ আমি পরে গেছি আমাকে না উঠিয়ে বকছো। বুঝলাম না কিছু!

–আচ্ছা চল এখন আমাদের সাথে।

–কিন্তু মা,,,

মা আমার কথা না শুনেই টেনে নিয়ে আপুর সাথে বসিয়ে দিলো। আমি ঘার ফিরিয়ে আপু আর নাহিদ ভাইয়ার হাস্যজ্জল মুখের দিকে তাকিয়ে কাদোকাদো মুখ নিয়ে সবার দিকে তাকালাম। সবাই বিয়ের পরের চিন্তা ভাবনা পর্যন্ত করে ফেলছে কি ফাস্ট রে বাবা!
নাহিদ ভাইয়া আর উনার বাবা মা উঠে দারালো। নাহিদ ভাইয়ার মা হেসে বলল

–আচ্ছা তাহলে চলি আমরা অতি শীগ্রই আবার দেখা হবে আশা করি।

নাহিদ ভাইয়ার মার কথা শুনে আমার আম্মু উঠে উনাকে জড়িয়ে ধরে বলল

–অবশ্যই।দেখা তো হবেই সম্পর্ক যেহেতু জুরবে

উনাদের হাসিমাখা কথা শেষ হতেই নাহিদ ভাইয়া বলল

–আমি আমার ব্যাগ টা নিয়ে আসছি।

নাহিদ ভাইয়া গেস্ট রুমের দিকে যাচ্ছে।নাহিদ ভাইয়াকে গেস্ট রুমের দিকে যেতে দেখে আমি লাফ দিয়ে উঠে যেতে নিবো তখনই আপু হাত টেনে ধরে বলল

–কিরে কোথায় যাচ্ছিস বস আমার পাশে।আর তুই এতো দেরি করে আসলি কেনো।

আপুর কথার জবাব না দিয়ে গেস্ট রুমের দিকে তাকিয়ে দেখি নাহিদ ভাইয়া ব্যাগ কাধে নিয়ে আরিশ ভাইয়ার সাথে কথা বলতে বলতে বের হচ্ছে।আমি তারাতারি আপুর থেকে হাত ছাড়িয়ে ছুটে গিয়ে নাহিদ ভাইয়ার সামনে গিয়ে দারালাম।আমি কিছু বলতে নিবো তার আগেই নাহিদ ভাইয়া হাসি দিয়ে বলল

–এতোক্ষণে দেখা মিললো তোমার।

ভাইয়ার কথার ধরন দেখে মনে হচ্ছে না আমার লিখা চিঠি দেখেছে।আমি দীর্ঘশ্বাস ফেলে মুচকি হেসে বললাম

–আপনারা চলে যাচ্ছেন?

–হুম। বাট নো টেনশন কয়েকদিন পর আবার দেখা হবে শালিকা।

নাহিদ ভাইয়ার কথা শুনে মন খারাপ চেপে রেখে মুচকি হাসলাম।নাহিদ ভাইয়া আবার কিছু বলতে নিবে তার আগেই আরিশ ভাইয়া তাড়া দিয়ে বলল

–ওরা সবাই ওয়েট করছে তারাতারি চলুন।

–হ্যা।ঠিক আছে চলি তাহলে জিনাত।

আরিশ ভাইয়া আর নাহিদ ভাইয়া বাহিরের দিকে হাটা দিলো আমি দাড়িয়ে তাদের‍্ যাওয়ার পানে তাকিয়ে আছি হঠাৎ চোখটা আরিশ ভাইয়ার জিন্সের পকেটে গিয়ে থামলো। নীল রঙের কাগজের মতো দেখা যাচ্ছে একটু কোণা বের হয়ে আছে।

–ওইটা কি! আমার চিরকুট এর মতো লাগছে।কিন্তু উনার কাছে কি করে আসবে উনি তো জানেও না এইসবের ব্যাপারে কিছু।

রুমে গিয়ে দেখি মিথিলা আপু মোবাইলের দিকে তাকিয়ে মুচকি মুচকি হাসছে। আমি কাছে গিয়ে বসতেই উঠে বারান্দায় চলে গেলো। আজব!আমার থেকে কি লুকাচ্ছে হুহ,,,
আমি মন খারাপ করে বিছানা থেকে নেমে চুল ঝুটি করে ছাদে গেলাম। ছাদে গিয়ে কিছুক্ষন দাঁড়িয়ে থেকে হঠাৎ বাম সাইডের রেলিঙের দিকে তাকিয়ে আরিশ ভাইয়া কে দেখে চমকে যাই।উনি রেলিঙে হেলান দিয়ে একদৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আমি একপলক দেখে চোখ সরিয়ে নিলাম কেমন অসস্তি লাগছে।আর এতবছর পর৷ দেখলাম এখন কথা বলতেও কেমন কেমন লাগছে।
তারাতারি করে আকাশের দিকে তাকালাম। উনার রুমে থাকা সেই ডায়েরির আমার পড়া কিছু অংশ চোখে ভেসে উঠলো

“কতো বছর পর সেই ছোট্ট মেয়েটাকে আবারও দেখতে পেলাম।কিছুটা বড় হয়েছে আর কি গভীর চাহনি তার ইচ্ছে করে সেই চাহনি তেই আসক্ত থাকি আজীবন
আমিতো তোমাতেই সীমাবদ্ধ”

কার না কার প্রেমে আসক্ত উনি আল্লাহ তায়ালা জানেন।
সিড়ি দিয়ে নামার পায়ের আওয়াজে ভাবনা থেকে বেড়িয়ে গেলাম তারপর বামে তাকাতেই দেখি আরিশ ভাইয়া নেই।চলে গেছে।নিচ থেকে আওয়াজ আসতেই তারাহুরো করে নিচে গেলাম আন্টিরা চলে যাচ্ছে।আমার দিকে তাকাতেই আমি বললাম

–আন্টি এখনই চলে যাচ্ছো কেনো আজ থেকে যাও।

–না রে তোর আংকেল যাবার জন্য পাগল হয়ে গেছে।

–আমি আংকেল কে বললে উনি নিশ্চয়ই মানবে।

–এক কাজ কর তুই চল আমাদের সাথে একদিন থাকিস।

আন্টির অফারটা বেশ ভালোই লাগল।আন্টিকে ঠোঁট উল্টে বললাম

–কিন্তু আব্বু যেতে দিবে না হয়তো।

আন্টি খুশি মনে বলল

–ওই চিন্তা তোর কর‍তে হবে না তুই যা রেডি হয়ে নে।

আংকেলও অনেক জোর করায় আর কিছু বললাম না তারাতারি করে রুমে গিয়ে রেডি হতেই আপু ভ্রু কুচকে বলল

–কি রে কোথায় যাচ্ছিস?

আমি কাধে ব্যাগ নিয়ে বাহিরে যেতে যেতে বললাম

–আন্টিদের বাসায় যাচ্ছি।

আমি তারাতারি করে বাড়ি থেকে বেড়িয়ে দেখি আরিশ ভাইয়া পকেটে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে আমি উনাকে পাশ কাটিয়ে যেতে নিতেই ভ্রু কুচকে বলল

–এই তুই কোথায় যাচ্ছিস?

আরিশ ভাইয়ার কথায় কিছুক্ষন চুপ থেকে ব্রু উচিয়ে বললাম

–আমার আন্টিদের বাড়ি।

আমার কথা শুনে আরিশ ভাইয়া এমন রিয়েক্ট করলো যেনো আমি কোনো অস্বাভাবিক কিছু বললাম।আমি যাওয়ার আগেয় উনি আন্টির কাছে গিয়ে কপাট রাগ দেখিয়ে ধীরে ধীরে কিছু বলতে লাগল আন্টিও একপলক আমার দিকে তাকিয়ে আরিশ ভাইয়াকে কিছু বুঝানোর পর আরিশ ভাইয়া দীর্ঘশ্বাস নিয়ে গাড়িতে বসে পরল।
আন্টি আমার হাত ধরে নিয়ে উনার সাথে বসালো।


সকাল হতেই উঠে বসলাম।মোবাইলের স্ক্রিন খুলতেই 10 টা বাজে দেখে অবাক হয়ে গেলাম এতো বেলা হয়ে গেলো। তারাতারি উঠে ব্রাশ করে বাহিরে যেতে দেখি আন্টি আর আংকেল বসে গল্প করছে আহ কি সুন্দর দৃশ্য। আমি ওরনা ঠিক করে আংকেলের পাশে বসলাম। আংকেল আমাকে দেখে টেবিলের থেকে চায়ের কাপ তুলে আমার হাতে দিয়ে বলল

–ঘুম হলো

আমি চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে মুচকি হেসে বললাম

–জ্বি আংকেল ভালোই ঘুম হয়েছে।

আমার কথা শুনে আংকেল হাসলো। তারপর উঠে বাহিরে যেতে যেতে আন্টির উদ্দেশ্যে বলল

–আচ্ছা আমি একটু বাহির থেকে আসছি।

আংকেল যেতেই আন্টি রান্নাঘরে গেলো। আমিও খেয়ে আমাকে যেই রুমে থাকতে দিয়েছে সেই রুমে গিয়ে বারান্দায় দারালাম।বাম পাশে তাকাতেই দেখি আরিশ ভাইয়ার রুমের বারান্দায় চোখ গেলো। দুইটা বারান্দার মধ্যে কিছুটা ফাকা লাফ দিয়ে অনায়াসে আমার থাকার রুমে আসা যাবে।খুটে খুটে দেখতেই এক কর্নারে চোখ গেলো আবারও নীল চিরকুট।

–এখানে চিরকুট কিসের। গিয়ে দেখে আসি তাহলেই কনফার্ম হয়ে যাবে কিসের কোন প্রেমিকা চিঠি দিয়েছে।

আমি রুম থেকে বেরিয়ে পাশের রুমের দরজার কাছে দারিয়ে হাল্কা ধাক্কা দিতেই দরজাটা খুলে গেলো। উঁকি দিয়ে দেখি কেউই নেই।রুমে ঢুকতেই ঘুরে ঘুরে দেখতে লাগলাম।

–ওয়াও রুমটা তো বেশ সাজানো গুছানো।

কিছুক্ষণ দেখে তারাতারি বারান্দায় গেলাম নাহলে আবার কেউ এসে পরলে সর্বনাশ। বারান্দায় গিয়ে চিরকুট তুলতে নিবো তখনই পিছে কেউ দাঁড়িয়ে আছে এমন মনে হওয়ায় ঢোক গিলে পিছে ঘুরে তাকালাম।ওহ নো আরিশ ভাইয়া শিট!
আরিশ ভাইয়া দরজার পাশের দেয়ালে হাত ভাজ করে রক্তলাল চোখে তাকিয়ে আছে আমার দিকে।আমি আস্তে করে হেটে ভাইয়াকে পাশ কাটিয়ে রুমে গিয়ে উনার দিকে তাকিয়ে বোকা হাসি দিয়ে বললাম

–আচ্ছা ভাইয়া আমি চলি।

বলার পর আর একমুহূর্ত না দাঁড়িয়ে ছুটে আমার রুমে চলে গেলাম।

চলবে,,,