তোমাতেই খুজি আমার পূর্ণতা পর্ব-২২

0
313

#তোমাতেই_খুজি_আমার_পূর্ণতা🤗 (২২)
#Maisha_Jannat_Nura (লেখিকা)

_____”মিরা আমার ঘড়ি টা কোথায় রেখেছো! পাচ্ছি না তো খুঁজে। উফহহহ আমার কলেজের লেইট হয়ে যাচ্ছে তো। প্রতিদিন আমার এসব খুঁজতে গিয়েই যতো দে…..”

আদিত্য ওর পুরো কথা শে’ষ করার পূর্বেই মিরা ড্রেসিং টেবিলের উপর থেকে ঘড়িটা হাতে উঠিয়ে আদিত্যের সামনে ধরে। আদিত্য ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে আয়নার দিকে দৃষ্টি স্থির করে চুল ঠিক করতে করতে মিরাকে উদ্দেশ্য করে কথাগুলো বলছিলো সেই মূহূর্তে ঘড়িটা দেখে নিজের ৩২ পা’টি দাঁত বের করে হাসি দিয়ে মিরার হাত থেকে ঘড়িটা নেয়। মিরা ওর ভ্রু যুগল কুঁচকে আদিত্যের পাশে দাঁড়িয়ে আছে। আদিত্য মিরাকে মুখশ্রীতে রাগের হালকা আ’ভা দেখতে পেয়ে আমতা আমতা স্বরে বলে….

_____”রা রাগ করে না আমার মিষ্টি বউ! জানোই তো আমি এমন। চোখের সামনেই নিজের সব জিনিস রাখা থাকা স্বর্তেও তুমি আমার হাতে হাতে সেগুলো ধরিয়ে না দিলে আমার চলে না।”

মিরা কিছু না বলে আদিত্যকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে নিয়ে ওর টা’ই বে’ধে দিতে মনোনিবেশ করে। আদিত্য আবারও বলে…

_____”আমার বউ টা রেগে গেলে কেমন নাকের ড’গা লাল বর্ণ ধারণ করে আমার তো তাই আরো বেশি রাগিয়ে দিতে ইচ্ছে করে।”

মিরা দাঁতে দাঁত পি’ষে বলে…
_____”তাই না!”

বলেই মিরা আদিত্যের গলার টা’ই বেশ টা’ই’ট ভাবে চে’পে দেয়। সঙ্গে সঙ্গে আদিত্য “আহহহ লাগলো তো” বলে উঠে।
মিরা পরক্ষণেই টা’ই এর বা’ধ’ন স্বাভাবিক করে দিয়ে অ’স্থি’র কন্ঠে বলে…

_____”খুব ব্য’থা পেলে নাকি গো! দেখি দেখি গলায় দা’গ বসে যায় নি তো আবার!”

মিরাকে অ’স্থি’র হতে দেখে আদিত্য ঠোঁট প্রসারিত করে হেসে দু-হাত মিরার কমোর জড়িয়ে ধরে নিজের সাথে মিশিয়ে নেয়। মিরা আদিত্যের শা’র্ট সরিয়ে গ’লা দেখতে ব্য’স্ত। আদিত্য মিরার কপালের সাথে কপাল ঠে’কি’য়ে শীতল কন্ঠে বলে….

_____”শান্ত হও বউ, আমার কিছু হয় নি। এতোটুকুর জন্য এতো অ’স্থি’র হতে হয়!”

মিরা ওর দু’চোখ ব’ন্ধ করে নিয়ে আদিত্যকে উদ্দেশ্য করে বলে…

_____”তুমি ছাড়া এই সম্পূর্ণ পৃথিবী জুড়ে আমার কেই বা আছে বলো! তোমাকেই আমি আমার পৃথিবী মানি। নিজের অ’জা’ন্তে তোমাকে সামান্যতমও আ’ঘা’ত দিয়ে ফেললে নিজের কাছেই বেশি খা’রা’প লাগে গো। তোমাকে আমি বড্ড বেশি ভালোবাসি।”

_____”ওরে আমার পা’গ’লী বউটারে! সকাল সকাল এত্তো ভালোবাসা নিবেদন করছো যে এখন তো আমার
তোমাকে…..

আদিত্য পুরো কথা শে’ষ করার পূর্বেই মিরা ওর হাত আদিতের ঠোঁটের উপর রেখে ওকে চু’প করিয়ে দিয়ে বলে…

_____”প্রফেসর আদিত্য চৌধুরী এখন মোটেও রো’মা’ন্স করার সময় না। আপনার কলেজে যাওয়ার সময় হয়ে গিয়েছে, তাই এখন আপনাকে যেতে হবে। আমাকে ছাড়ুন এখন নয়তো আপনার খা’রু’স প্রিন্সিপাল আপনাকে লেইটে কলেজে পৌঁছার জন্য ক’ড়া কথা শুনিয়ে দিবেন।”

মিরার কথা শুনে আদিত্যের চোখে-মুখে হালকা বি’ষ’ন্ন’তা’র ছাপ ফুটে উঠে। আদিত্যকে মু’ড অফ করতে দেখে মিরা আদিত্যের ঠোঁটের উপর থেকে হাত সরিয়ে চোখের পলকেই সেখানে ভালোবাসার হালকা পরশ একে দেয়। সঙ্গে সঙ্গেই আদিত্যের চোখে-মুখে খুশির হাওয়া দোলা দিয়ে যায় যেনো। মিরার কপালে শব্দ করে একটা চু’মু একে দিয়ে মিরাকে ছে’ড়ে দেয় আদিত্য। তারপর বিছানার উপর থেকে ব্যগটা উঠিয়ে বাম কাঁধে নিয়ে বলে…

_____”নিজের খেয়াল রেখো বউ, কলেজ শে’ষ করে আমি খুব দ্রুতই ফিরে আসবো।”

মিরাও স্মিত হাসি দিয়ে আদিত্যকে বি’দা’য় জানায়।

————————-

রে’স্ট্রি’ক’টে’ড এরিয়ার মাঝে আ’ব’ছা অ’ন্ধ’কা’রা’চ্ছ’ন্ন রুমে সেলিং এর সাথে দুই পা বে’ধে সে’ন্স লে’স কামাল হাসানকে ঝু’লে রেখেছে তীব্রের আয়ত্ত্বে কর্মরত কালো পোশাকধারী লোকেরা। কিয়ৎক্ষণ পূর্বে শফিক তীব্রকে ফোন করে সেই খবর ই জানিয়েছে।

মূল দরজা খুলে যাওয়ায় অ’ন্ধ’কা’রা’চ্ছ’ন্ন রুমটি সূর্যের আলোয় আলোকিত হয়ে যায় মূহূর্তেই। দুই পকেটে দু-হাত গুঁ’জে দিয়ে শি’শ বাজাতে বাজাতে সামনের দিক অগ্রসর হচ্ছে তীব্র। আজ তীব্রের মন ভিষণ আনন্দিত হয়ে আছে। কামালকে ঝু’লি’য়ে রাখা জায়গাটি থেকে এক হাত দুরত্ব বজায় রেখে দাঁড়িয়ে পরে তীব্র।

শি’শ বাজানো থামিয়ে মাথা উঠিয়ে উপরের দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করে তীব্র ঠোঁট বা’কি’য়ে হাসি দেয়। পরক্ষণেই হাত দিয়ে ইশারা করে একজন কালো পোশাকধারী গার্ডকে নিজের কাছে ডেকে নেয়। গার্ডটি আসতেই তীব্র ওর ঠোঁটের কোনে বাঁকা হাসির রেখা বজায় রেখেই বলে…

_____”আমার বড় ভাইয়ের সে’ন্স ফিরানোর ব্যবস্থা করো। অনেক আদর-যত্ন করা বা’কি রয়ে গিয়েছে। এভাবে সে’ন্স লে’স হয়ে থাকলে কি করে চলবে!”

তীব্রের কথানুযায়ী কালো পোশাকধারী লোকটি রুমটির ক’র্ণা’রে গিয়ে একটা বড় আকারের পা’ই’প টেনে নিয়ে আসে। তীব্র হালকা উচ্চস্বরে বলে…

_____”এ শফিক আমাকে একটা চেয়ার দে রে।”

শফিক দ্রুত একটা চেয়ার নিয়ে তীব্রের সন্নিকটে এসে দাঁড়িয়ে পরে। তীব্র শফিকের দিকে একপলক দেখে ওর হাত থেকে চেয়ারটি নিয়ে পায়ের উপর পা তুলে বসে পরে। তীব্রকে বসতে দেখে কালো পোশাকধারী লোকটি আরেকজন গার্ডকে সু’ই’চ অন করতে ইশারা করে, ঐ লোকটি সু’ই’চ অন করতেই পাইপের মুখ দিয়ে দ্রুত গতিতে পানি বেরোতে শুরু করে।

কালো পোশাকধারী লোকটি হাত উঁচু করে পাইপের মুখ দু’আঙুল দ্বারা চে’পে ধরে কামালের মুখের উপর সেই দ্রুত গা’মী পানির ধারা দেয়। পানির ধারার গতি অনেক বেশি হওয়ায় কামাল হ’ক’চ’কি’য়ে উঠে। মূহূর্তেই নাক-মুখ-কান দিয়ে পানি প্রবেশ করে একাকার অবস্থা হয়ে দাড়ায় কামালের। কামালের সে’ন্স ফিরেছে দেখে কালো পোশাকধারী লোকটি পানির ধারা অন্যত্র স’রি’য়ে ফেলে।

জোরে জোরে নিঃশ্বাস নিয়ে কামাল নিজেকে স্বাভাবিক করার চেষ্টা করছে। পরক্ষণেই একটু স্বাভাবিক হতেই নিজের অবস্থান বুঝতে চন্ঞ্চল দৃষ্টিতে চারপাশ দেখতে থাকে। নিজেকে উ’ল্টো অবস্থায় ঝু’লে থাকতে দেখে কামালের চ’ক্ষু কপালে উঠার উপক্রম হয়। সেইমূহূর্তেই তীব্র আবারও শি’শ বাজাতে শুরু করে। শি’শ এর শব্দ কর্ণপাত হতেই কামাল নিজের দৃষ্টি নিচের দিকে নিক্ষেপ করতেই তীব্রকে দেখতে পায়।

তীব্রকে দেখার পর কামালের আর বুঝতে বা’কি নেই ওদের সব চা’ল তীব্রের সামনে খো’লা’শা হয়ে গিয়েছে। কামাল ওর দু’চোখ ব’ন্ধ করে বেশ কয়েকবার শুকনো ঢো’ক গি’লে নেয়। কিয়ৎক্ষণ পূর্বে দ্রুতগামী পানির ধারা থেকে অনেক পানি মুখ দিয়ে শরীরের অন্তস্তলে পৌঁছে গিয়েও কামালের মনে হচ্ছে ওর কলিজার পানি সম্পূর্ণ শুকিয়ে এসেছে।

স্বয়ং আ’জ’রা’ই’ল যেনো কামালের সামনে বসে আছে আর তাই মৃ’ত্যু ভ’য় যেনো পুরোপুরি ভাবে গ্রা’স করে নিচ্ছে। শিশ বাজানো থামিয়ে তীব্র চেয়ারের সাথে পিঠ ঠেকিয়ে মাথার পিছনে দু’হাত রেখে আবারও উপরের দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করে। কামাল আর তীব্রের চো’খা-চো’খি হয়ে যায়, কামালের চোখ-মুখ শুকিয়ে ছোট হয়ে গিয়েছে একমূহূর্তে। তীব্র ঠোঁট প্রসারিত করে হাসি দিয়ে কামালকে উদ্দেশ্য করে বলে….

_____”আরে আমার বড় ভাই এ তোমার কি অবস্থা! সেলিং এর সাথে উ’ল্টো অবস্থায় ঝু’লে আছো! চু’চ্চু’হ চু চু চু’হ! আসলে কি বলোতো সব পা’পে’র ফল। পা’প করতে করতে মানুষ রূপী ….জা’নো’…. গুলো এটা ভু’লে যায় যে তাদের ও একদিন মৃ’ত্যু হবে। আর সেই মৃ’ত্যু’টা এতোটাই ভ’য়া’ন’ক মৃ’ত্যু হবে যে, কোনো নরমাল হৃদয়ের ব্যক্তি যদি সেই মৃ’ত্যু’র দৃশ্য নিজের চোখে দেখতো তো সে সেখানেই হা’র্ট অ্যা’টা’ক করে পটল তুলতো।

বলেই তীব্র অ’ট্ট’হা’সি’তে মেতে উঠে। এতো উচ্চস্বরে তীব্রকে হাসতে দেখে কামালের অবস্থা আগের তুলনায় আরো বেশি শো’চ’নী’য় হয়ে দাঁড়ায়। পরমুহূর্তে তীব্র হাসি থামিয়ে কালো পোশাকধারী একজনকে ইশারা করে বলে কামালকে ওভাবে রেখেই কিছুটা নিচে নামাতে। লোকটি মাটি থেকে সাড়ে ৩ফু’ট উচ্চতা রেখে কামালকে নিচে নামায়। কামালকে নিচে নামানো হলে তীব্র বলে…

_____”ওর মুখের বা’ধ’ন খুলে দে রে। কতো জনকে তো নিঃশ্বাস আ’ট’কি’য়ে মে’রে ফেলে নিজের স্বা’র্থ সি’দ্ধি করেছে। অন্তত নিজের মৃ’ত্যু’র আগে তো বুকভরে নিঃশ্বাস নিয়ে নিক বে’চা’রা।”

কালো পোশাকধারী লোকটি কামালের সন্নিকটে গিয়ে ওর মুখের বা’ধ’ণ খুলে দেয়। মুখের বাঁ’ধ’ন মু’ক্ত হতেই কামাল সেভাবে নিঃশ্বাস না নিয়ে অনুনয়ের স্বরে তীব্রকে উদ্দেশ্য করে বলে….

_____”ভাই আ আমাকে মা মা’রি’স না। ক্ষ’মা করে দে ভাই। আমার ভু’ল হয়ে গিয়েছে। আমি যা অ’ন্যা’য়, পা’প করেছি সব বাবার কথায় করেছি। উনিই আমার ব্রে’ই’ন ওয়াশ করে লো’ভে’র বিস্তার করিয়েছিলেন। আমি তো তোর আপন চাচাতো ভাই, তোর বউ ভাইয়ের মতো।”

তীব্র ওর হাত উঠিয়ে কামালকে থামিয়ে দেয়। তারপর ধা’ত’স্ত কন্ঠে বলে….

_____”৫বছর আগে আমার সাথে যখন তোমরা ঐ নোং’ড়া খেলাটা খেলেছিলে, আমার ভালোবাসাকে আমার থেকে কে’ড়ে নিয়েছিলেন, আমার চোখে ভু’ল ধারনার বি’স্তা’র ঘ’টি’য়ে’ছি’লে, নৃ’শং’স ভাবে আমাকে খু’ন করার চেষ্টা করেছিলে তখন তোমার মনে এই চি’ন্তা আসে নি যে আমি তোমার আপন চাচাতো ভাই, তোমার ছোট ভাইয়ের মতো! ভালো হয়ে যেতে চেয়েছিলাম, সব পা’প কাজকে ত্যা’গ করে নিজের ভালোবাসার মানুষটির সাথে একটা সুস্থ সুন্দর স্বাভাবিক জীবন কাটাতে চেয়েছিলাম কিন্তু তোমরা তা হতে দিলে না। আবারও আমার জীবনকে ন’র’কে’র মাঝে এনে ফে’ল’তে বা’ধ্য করালে। তোমাদের মতো ন’র কী’ট’দের আর বাঁচিয়ে রাখা যাবে না। কারণ তোমরা যতোদিন বে’চে থাকবে ততোদিন তোমাদের এসব পা’প কার্য দ্বারা আরো হাজার হাজার সাম্রাজ্য তোমরা তৈরি করে ফেলবে। তাই তোমাদের ধ্বং’স করা অতীব জরুরী হয়ে দাড়িয়েছে। আর যেনো আমার মতো তীব্র নামক মা’ফি’য়া কিং তৈরি হতে না পারে সেই কার্য়ই সুসম্পন্ন করবো।

——————————

নিজরুমে পায়চারী করছি আমি। কিছু বিষয় এখনও আমার সামনে পুরোপুরি ক্লিয়ার হয় নি তাই কপালে চি’ন্তা’র ভা’জ স্পষ্ট হয়ে আছে। আশ্রমের বাচ্চাগুলোকে পা’চা’র করার কাজে শুধু কি আশ্রমের ঐ একজন কতৃপক্ষেরই হাত থাকতে পারে! একজন মানুষ সকলের চোখে ধু’লো দিয়ে আশ্রম থেকে বাচ্চা পা’চা’র করার মতো এতো রি’স্কি কাজ করবে না। নিশ্চয়ই আরো অনেকেই জ’ড়ি’ত আছে এই কাজে।

যারা নিজেদের মুখে ভালো মানুষের মু’খো’শ পড়ে আশ্রমের ভিতরেই ঘু’রে বে’ড়া’চ্ছে। তীব্র কি বাচ্চাগুলোর নিরাপত্তার আ’দে’ও কোনো ব্যবস্থা নিয়েছেন! গুরুত্বপূর্ণ কাজ প’রে গিয়েছে বলে হু’ট করেই চলে গেলেন। এখন এতো এতো টে’ন’শন নিয়ে আমি চু’প চা’প ঘরে বসে থাকি কি করে। আবার বলে গেলেন বাসার বাহিরে যেনো ভু’লে’ও পা না রাখি। আমাকে আমার নিকট আমানত রেখে গেলেন, ভালো কথা বলতে শিখে গিয়েছেন। উফহহ কি যে করি আমি!

#চলবে…………….