তোমাতেই সীমাবদ্ধ পর্ব-১১

0
886

#তোমাতেই_সীমাবদ্ধ
#part :11
#Mishmi_muntaha_moon

দৌড়ে অবশেষে আরিশ ভাইয়াকে ধরতে পারলাম।

— আপনি ওই ভাইয়াটে বললেন আমাদের এনগেজড হয়ে গেছে?

ভাইয়া আমার কথা শুনে বিরক্ত নিয়ে বলল

–বেশি কথা না বলে তারাতারি হাট।

ভাইয়ার পাশাপাশি হেটে আরএকটু সামনে যেতেই দেখি ইতি আপু দাঁড়িয়ে আছে আমাকে আর আরিশ ভাইয়াকে একসাথে আসতে দেখে বলল

–তোমরা দুজন একসাথে ছিলে?

ইতি আপুর কথা শুনে আমি বললাম

–তোমরা তো আমাকে রেখেই চলে গিয়েছিলে।

ইতি আপু মুচকি হেসে বলল

–ওরা সবাই সামনেই আছে যাও তুমি।

ইতি আপুর কথা শুনে আমি আড়চোখে আরিশ ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে আস্তে আস্তে হাটতে লাগি।একটু সামনে গিয়ে আবারও ঘাড় ফিরিয়ে পিছে তাকিয়ে দেখি ইতি আপু আর আরিশ ভাইয়া কথা বলছে।
এভাবে পিছে তাকিয়ে তাকিয়ে হাটতে গিয়ে পা মচকে পরে গেলাম।

–আল্লাহ,,,উফ

আমাকে পরে যেতে দেখে আরিশ ভাইয়া ছুটে এসে আমাকে তুললো।
ইতি আপুও দ্রুত পায়ে হেটে এসে কিছুটা চিন্তিত স্বরে জিজ্ঞেস করল

–ঠিক আছো জিনাত?আর পরলে কি করে?

আমি চোখ মুখ কুচকে আছি।হাটু খুব জ্বলছে হয়তো ছিলে টিলে গেছে।ভাইয়ার হাত ছাড়িয়ে হাটতে নিতেই দাঁড়িয়ে পরলাম। হাটতেও পারছি না।হাটুর পাশাপাশি পায়ের আঙুলেও ব্যাথা পেয়েছি।
দাঁড়িয়ে থাকার মধ্যে হঠাৎ করে আরিশ ভাইয়া আমাকে উনার পাজকোলে নিতেই ভয়ে ভাইয়ার গলা চেপে ধরি।আরিশ ভাইয়ার দিকে কিছুক্ষন মুখ “হা” করে তাকিয়ে থেকে ব্রু কুচকে বলি

–আজব করছেন টা কি?নামান বলছি।

আমার কথা ভাইয়া উপেক্ষা করে সামমের দিকে বাড়তে বাড়তে বলে।

–মানবতার খাতিরে হেল্প করছি।লুলার মতো হাটবি আর আমরা তারাতারি হেটে চলে যাবো তারপর তুই হাড়িয়ে যাবি আর আন্টি টেনশন করবে এতোকিছু তো হতে দেওয়া যায় না তাই জন্য চুপ করে থাক।

ভাইয়ার কথা শুনে অবাক হলাম।কতো এগিয়ে ভাবনার দিক থেকে। কিছুই হলো না কিন্তু উনি ভাবনায় পুরো একটা ঘটনা তৈরি করে ফেলেছে।আমি আরিশ ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে থাকার মাঝেই ইতি আপু জোরপূর্বক হাসির রেখা টেনে আরিশ ভাইয়াকে বলল।

–জিনাত তো এখন আর ছোট নেই।একটু ব্যথা পাওয়াতে ও নিশ্চয়ই হাটতে পারবে।তোমার এতো কষ্ট করার কি দরকার আরিশ ভাই।ঠিক না জিনাত?

ইতি আপুর কথা শুনে মৃদু কন্ঠে বললাম

–হুম।

ভাইয়া স্বাভাবিক ভাবেই আমাকে নিয়ে দ্রুত পায়ে হাটতে লাগলো ইতি আপুকে পিছনে রেখেই।আমি ফ্যালফ্যাল করে আরিশ ভাইয়ার দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে মাথাটা আরিশ ভাইয়ার বুকের সাথে আরেকটু লাগিয়ে কাধের সাথে মুখ লাগিয়ে পিছনে তাকাই ইতি আপুকে দেখার জন্য।হঠাৎ আরিশ ভাইয়া থেমে যাওয়ায় উনার দিকে তাকাই।আরিশ ভাইয়া চোখ এদিক সেদিক করে কিছুটা ধমকের স্বরে বলল

–এমন করছিস কেনো একেবারে আমার বুকের ভিতর ঢুকে যাচ্ছিস মনে হচ্ছে ঠিক হয়ে থাক।নাহলে ফেলে দিবো।

ভাইয়ার কথায় কিছুটা অপমানিত বোধ করে মাথাটা আলগা করে রাখলাম আর বিরবির করে বললাম।

–আহ,,,যেই ভাব দেখাচ্ছে যেনো আমি বায়না করেছিলাম আমায় কোলে তুলো।হুহ,,


অনেক ক্ষন যাবৎ বসে থাকায় মাজা ব্যাথা করছে তাই উঠে রুম থেকে বেরোলাম।আলো ঘনিয়ে আস্তে আস্তে অন্ধকারছন্ন হচ্ছে চারপাশ। আম্মুর কাছে যেতেই শুনতে পেলাম সবাই ছাদে গিয়ে গল্প করছে।
আমি কিছুক্ষন থম মেরে বসে রইলাম আমাকে একবারও ডাক দিলো কতো খারাপ সবাই।তারপর উঠে আস্তে আস্তে করে ছাদে গেলাম।দরজার সামনে দারাতেই শুনতে পেলাম নাহিদ ভাইয়ার কন্ঠ।

–আরিশ তুমি কেনো বিয়ে করছোনা বলতো।শুনলাম তোমার নাকি খুব সুন্দরী একটা গার্লফ্রেন্ড আছে।

নাহিদ ভাইয়ার কথা শুনে সেখানেই থেমে পরলাম।তার একটু পরেই আরিশ ভাইয়ার হাসির আওয়াজ এলো।উনি হাসতে হাসতে বলতে লাগলেন

–কেনো আমার গার্লফ্রেন্ড যদি সুন্দর না হয় তাহলে কি বিয়ে করতে পারবো না?

আরিশ ভাইয়ার কথার উত্তরে মিথিলা আপু বলল।

–হ্যা ঠিকি তো সুন্দর না হলে কি বিয়ে করবে না।আমি সুন্দর নাহলে তুমি আমায় বিয়ে করতে না বুঝি?

আপুর কথায় নাহিদ ভাইয়া অসহায় ভাবে বলল।

–আরে তুমি নিজের উপর নিচ্ছো কেনো আমিতো আরিশের ক্ষেত্রে বলেছি।

আমি আর দাঁড়িয়ে না থেকে দরজা পেরিয়ে ভিতরে গিয়ে উনাদের সামনে দারালাম। আমাকে দেখে ইতি আপু বলল

–জিনাত তুমি?আসো বসো।

ইতি আপুর কথায় পুরো সমারোহে চোখ বুলাই।আরিশ ভাইয়ার পাশে ইতি আপু বসেছে।কোথাও জায়গা নেই শুধু ইহান ভাইয়া আর নাহিদ ভাইয়ার মাঝে একটা জায়গা আছে।আমাকে দারিয়ে থাকতে দেখে ইহান ভাইয়া বলল

–তুমি দারিয়ে আছো কেনো। বসো এখানে জায়গা আছে।

আমি একনজর আরিশ ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে ইহান ভাইয়ার পাশে বসলাম।ইহান ভাইয়ার পাশে বসতেই উনি আমার সাথে কথা বলতে লাগলো। কিছুক্ষন কথা বলে বুঝতে পারলাম উনি খুব মজার মানুষ।এক সময় উনার সাথে কথা বলা জমে গেলো।
কথা বলার মাঝেই আরিশ ভাইয়া উঠে চলে গেলো।তার কিছুক্ষন পর আবারও আরিশ ভাইয়া এলো।এসে আমার উদ্দেশ্যে বলল

–জিনাত তোকে আন্টি ডাকছে।

আরিশ ভাইয়ার কথা ভ্রু কুচকে আরিশ ভাইয়ার দিকে তাকালাম।তারপর ইহান ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে উঠে বললাম

–আমি আসছি।

বলে চলে গেলাম সোজা আম্মুর রুমে।আম্মু আর আন্টি একসাথে বসে ছিলো।আমি আম্মুর সামনে দাঁড়িয়ে বললাম।

–আম্মু তুমি আমায় ডেকেছিলে?

আম্মু আমার কথা শুনে ব্যস্ত হয়ে বলল

–নাহ তো আমি তোকে কেনো ডাক দিবো!

বলে আবারও আন্টির সাথে কথা বলতে লাগলো।আম্মু যেহেতু আমাকে ডাকে নি তাহলে আরিশ ভাইয়া মিথ্যা কেনো বলল।আমি আম্মুর রুম থেকে বেরিয়ে আবারও ছাদের দিকে পা বাড়াতেই কেউ টান দিয়ে সিড়ি ঘরের ভিতর নিয়ে যায়।ভয়ে কিছু করতে নিবো তার আগেই সামনে তাকিয়ে দেখি আরিশ ভাইয়া।উনি আমার এক হাত দেয়ালের সাথে চেপে আছে আরেক হাত উনার হাতের মুঠোয়। দুই হাতেই সমপরিমানে ব্যাথা পাচ্ছি।

–আ,,ভাইয়া হাতে ব্যাথা পাচ্ছি ছারুন।

আরিশ ভাইয়া আমার হাত দুটো আরও চেপে ধরে অগ্নিদৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল।

–চুপচাপ নিজের রুমে যা আর ইহানের থেকে কমসেকম ৫ হাত দূরে থাকবি অলওয়েস।

আমি কপাট রাগ দেখিয়ে বললাম

–কেনো?আপনার কি আমি ইহান ভাইয়ার সাথে কথা বললে?

আরিশ ভাইয়া হাত গুলো ছেড়ে গাল দুটো চেপে ধরে বলল

–আমার অধিকারের উপর অন্যজন চোখ দিলে আমাকেই দেখতে হবে বুঝলি।

আমি ফ্যালফ্যাল করে আরিশ ভাইয়া চোখে তাকিয়ে তাকিয়ে রইলাম।আরিশ ভাইয়া আমার গাল ছেড়ে চলে গেলো।আমিও আর ছাদে গেলাম না রুমে চলে গেলাম।তারপর খাটে আধশোয়া হয়ে জানালার দিকে দৃষ্টি রেখে বিরবির করে বললাম।

“এখন তো উনি আমার উপর অধিকারত্ব করছে।এখন উনি সব প্রকাশ্য করতে চাচ্ছে নাকি?


আমার আন্টি আর আম্মুরা খুব মজার মানুষ উনারা আমাদের থেকেও বেশি ইনজয় করার ব্যবস্থা জানে তাই তো রাতের ডিনারকে আরও ইস্পেশিয়াল করতে ছাদে ডিনার করার ব্যাবস্থা করেছে।আর আমার কথা অনুযায়ী রাতের খাবার মেনু হচ্ছে আলুর পরোটা আমার ফেভারিট।কিছুক্ষন রুমে বসে থেকে আম্মুর কথা মতো উনাদের সাহায্য করতে লাগলাম।ইতি আপু আর ইহান ভাইয়া চলে যেতে চাইছিলো কিন্তু আন্টির রিকুয়েষ্টে ডিনার করে যাবে বলে সিদ্ধান্ত নিলো।

সবাই ছাদে বসে আছে আর আমি পানি নিতে নিচে এসেছিলাম।পানির জগ নিয়ে উপরে উঠতেই দেখি আরিশ ভাইয়া ছাদের দিকে যাচ্ছে আমি উনার পিছে যেতে নিতেই দেখি ইতি আপু কোথা থেকে দৌড়ে এসে আরিশ ভাইয়ার পাশে হাটতে লাগলো।আমিও উনাদের পিছে নিঃশব্দে হাটতে লাগলাম।
ছাদ পর্যন্ত যেতেই হঠাৎ ইতি আপু পা মচকে সিরি থেকে পরে যায়। হঠাৎ করে কি হলো কিছুই বুঝলাম না

ইতি আপু পরে যাওয়ায় সকলে ছুটে আসে।আরিশ ভাইয়া দ্রুত পায়ে এসে ইতি আপুকে তুলে।আপু গুরুতর আঘাত পেয়েছে।আরিশ ভাইয়া ইতি আপুকে কোলে তুলে রুমে নিয়ে যায় তারপর ডক্টরকে কল দেয়।একটু পরেই ডক্টর এসে ইতি আপুকে দেখে যায় আর বেড রেস্টে থাকতে বলে।ইতি আপুর চিন্তায় রাতে আর কেউ তেমন খায় না।আমি সোফার রুমে গম্ভীর হয়ে বসে আছি তখনই আরিশ ভাইয়া এসে দিলো এক ধমক।

–না খেয়ে বসে আছিস কেনো? তুই কি না খেয়ে থাকলে ইতি ঠিক হয়ে যাবে।

ভাইয়ার কথায় ভ্রু কুচকে চুপ করে রইলাম।আরিশ ভাইয়া গিয়ে আন্টিকে পাঠালো।আন্টি খাবার দিতেই আমি থমথমে মুখে একটু একটু করে খেতে লাগলাম।এমন নিঃস্থব্দ মহলে খাবার গলা থেকে ঢুকে নাকি?আন্টিও আমার পাশে বসে ছিলো। কিছুক্ষন চুপ থেকে ধীর কন্ঠে বলল

–আরিশ ইতির কতো খেয়াল রাখে তাই না।

–হুম।

আন্টি আরও কিছু বলতে নিবে তখনই ডাক পরে আর আন্টি চলে যায়।আমি খাওয়ার মাঝেই আরিশ ভাইয়া এসে আমার পাশে বসে
আমি কোনো শব্দ না করে খাচ্ছি। ভাইয়ার কথায় উনার দিকে তাকাই।

–আমাকে খাইয়ে দে তো।ক্ষিদে পেয়েছে।

ভাইয়াকে দেখে ক্লান্ত মনে হচ্ছে।আমি কথা না বাড়িয়ে সুন্দর ভাবে খাইয়ে দিতে লাগলাম।ঘামে আরিশ ভাইয়ার চুল গুলো কপালে লেপ্টে আছে।
ভাইয়া খেয়ে সোফায় গা এলিয়ে দিলো।চোখ অফ দেখায় আমি উঠে চলে যেতে নিতেও থেমে গিয়ে আরিশ ভাইয়ার চুল গুলো ছুয়ে দিলাম।
যেতে নিবো তখনই আরিশ ভাইয়া হাত ধরে টান দিলো ফলে একেবারে আরিশ ভাইয়ার উপর গিয়ে পরি।ভাইয়া বাকা হেসে ফিসফিসিয়ে বলে

–আমার চুলের প্রতি খুব আসক্ত মনে হচ্ছে।

আরিশ ভাইয়ার কথা লজ্জা পেয়ে মাথা নিচু করে ফেলি।আরিশ ভাইয়া হাত ছেড়ে দেওয়াতে ছুটে রান্নাঘরে চলে যাই।

চলবে,,,