তোমাতেই সীমাবদ্ধ পর্ব-২৩ এবং শেষ পর্ব

0
1853

#তোমাতেই_সীমাবদ্ধ
#part:23
#Mishmi_muntaha_moon

১ বছর কেটে গেলো ভাবলেই অবাক লাগে।বছর শব্দটা শুনতে খুবই ভারী হলেও বাস্তব জীবনে ততটাও ভারী না।মুহূর্তেই কেটে যায়।
আমি এখও আমার মা বাবার বাড়িতেই আছি মানে আরিশ ভাইয়ার সাথে বিয়ে হওয়ার পরও এইটা বলতে চাইছিলাম!

আজকে আবারো মন খারাপ লাগছে এমন ঘন ঘন মন খারাপ হওয়ার কারণ টা খুজে পাই না আমি।আর এখন এই মন খারাপের কারণ খুজার মন মানসিকতা নেই।

আরিশ ভাইয়া এখন একটু বেশি বিজি থাকে উনার কাজে।
আমার সাথে কথাও বলার সময় নেই উনার।কালকে রাতের খাবার খাওয়ার আগে কল দিয়েছিলো।
তারপর আর এখন পর্যন্ত কত বাহানা।হয়তো বিয়ের পর সবার মতো উনারও ভালোবাসা ফিকে হয়ে গেছে।এইসব ভেবে কান্না পেয়ে গেলো।কেমন যেনো অনুভব হচ্ছে।
মনে একটা কথাই ঘুরছে আমি মরে গেলে কি হবে।মরে গেলেই বুঝা যাবে কে কে আমাকে কতটুকু ভালোবাসে কিন্তু মরে গেলে তো আর দেখা হবে না সবার পরিস্থিতি আমাকে হীনা।আমার তো এখনো আরিশ ভাইয়ার সাথে সংসার কাটানো হলো না দুষ্টু, মিষ্টি অভিমান করা হলো কিছুরই স্মৃতি নেই।
আরিশ ভাইয়া কি করবে?উনি তো আমাকে অনেক ভালোবাসেন উপন্যাস আর গল্পের হিরোদের মতো কি আমার জন্য পাগল হয়ে যাবে নাকি আবার অন্য কারো জন্য বিন্দু বিন্দু করে তীব্র ভালোবাসা জন্মাবে?

এই প্রশ্নগুলো আরিশ ভাইয়াকে জিজ্ঞাসাবাদ করতেও তীব্র ইচ্ছে জাগলো।
ভারী বুক নিয়ে রাস্তায় যাতায়াতকারী ব্যাক্তিদের একপলক চোখ বুলিয়ে বারান্দা থেকে রুমে গেলাম।

মোবাইল হাতে নিয়ে আরিশ ভাইয়ার নাম্বার ডায়াল করলাম।

–হ্যালো?

–হ্যালো।

–হ্যালো হ্যালো না করে আসল কথা বল।

–আসল কিছু না আমি তো এভাবেই কল করেছিলাম একটা কিছু জিজ্ঞাসা করার জন্য।

–হুম বল।

–ভাইয়া আমি যদি মরে টরে যাই।তাহলে কি,,,

আর কিছুর বলার আগেই কল কেটে যায়।

আমি অবাক চোখে মোবাইলের দিকে তাকিয়ে থেকে বাহিরে তাকাই।

মেঘে ঢাকা পরিবেশ ।কয়েকদিন ধরে টানা বর্ষণ হচ্ছে আজও যে তুফানের বেগে বৃষ্টি হতে চলেছে তা চোখে পরার মতই।

আকাশের রঙ আরও একধাপ কালো হতেই মোবাইলের রিং বেযে উঠতেই কল রিসিভ করলাম।

–তারাতারি নিচে আয়।

ভাইয়ার কথা শুনে কল কেটে বারান্দা দিয়ে উকি দিয়ে নিচে তাকাই।
আরিশ ভাইয়া আকাশি রঙের পাঞ্জাবী পরে দাঁড়িয়ে আছে।

আমি তারাতারি করে নিচে গেলাম।

–আপনি এখানে কেনো আপনার তো অফিসে থাকার কথা তাই না?

–তো সবসময় রুটিং অনুযায়ী চলতে হয় নাকি?

আরিশ ভাইয়া আমার হাত ধতে গাড়িতে বসিয়ে উনাদের বাড়িতে নিয়ে গেলো।

আন্টি আমাকে দেখে খুবই খুশি হয়ে বলে

–ইশ তোকে কতোটা দিন পর দেখলাম। আসিস না কেনো আমাদের বাসায় এটা কি তোর বাসা না?

–না আন্টি তেমন না।

–আচ্ছা আমি একটু আগেই রসগোল্লা আনালাম।চল আমার সাথে তোকে দেই।

আন্টি আমার হাত ধরে রান্নাঘরের ভিতরে নিয়ে গেলো।


বিকেল হয়ে গেলো।আন্টির কাছ থেকে উঠে গিয়ে আরিশ ভাইয়ার রুমের দিকে হাটা দিলাম।
আরিশ ভাইয়ার সাথেই কথা বলা হলো না।

আরিশ ভাইয়ার রুমে গিয়ে দেখি খাটের উপর একমুঠ গোলাপি রঙের চুরি দেখে গম্ভীর মুখ নিয়ে বিছানার উপর থেকে নিয়ে হাতে পরে নিলাম।পার্ফেক্টলি লেগেছে হাতে।

ডান দিকে দেয়ালে তাকাতেই আমার আর আরিশ ভাইয়ার একটা ফোটো ফ্রেম চোখে পরে।খুবই স্পেশিয়াল একটা ছবি।
আমি একদম বত্রিশ টা দাত বের হরে হেসে আছি আর আরিশ ঈষৎ ব্রু কুচকে আমার দিকে তাকিয়ে আছে ঠোঁটে মৃদু হাসি।

আরিশ ভাইয়া ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে আমার সামনে এসে দাঁড়িয়ে চুড়ি পড়া হাত টেনে ধরে নারিয়ে এক ভ্রু উচিয়ে বলল

–লাইক ইট?

আমি হাতের দিকে তাকিয়ে মাথা নারলাম।

আরিশ ভাইয়া আমার হাতের পিঠে চুমু খেতেই আমি মৃদু কন্ঠে বলি

–আমি মরে গেলে কি আপনি আমার জন্য অনেক কাদবেন?

আমার কথা শুনে আরিশ ভাইয়ার মুখের রঙ বদলে গেলো উনি আমার হাত ছেড়ে আরেকটু কাছে এসে ভ্রু কুচকে আমার গালে হাত রেখে গম্ভীর মুখে বলে

–কি হয়েছে?শরীর কি ভালো না তোর হসপিটালে নিতে হবে?

আমি আরিশ ভাইয়ার কথা শুনে আমার গালে রাখা উনার হাত চেপে ধরে বললাম

–বলুন না ভাইয়া।আপনি আমার স্মৃতিচারণ করবেন নাকি অন্য কারো জন্য ভালোবাসা নাড়া দেবে?

আরিশ ভাইয়া আমার গাল থেকে হাত সড়িয়ে দাতে দাত চেপে বলে।

–শাট আপ জিনাত।আর একবার যদি এই ব্যাপারে কথা বলিস তাহলে আমার থেকে খারাপ হবে না।

আরিশ ভাইয়ার কথা শুনে খারাপ লাগলো।উনি আমার কথা শুনছে না।আমার কথাকে গুরুত্বই দিচ্ছে না।
আমি আবারো আমার কথার রেশ ধরেই জিদ ধরে বললাম।

–আরে বলুন না। আমি মরে গেলে তো আর দেখবো না।বলুন না আমার তো মনে হয় আপনি আমায় এখন আর আগের মতো ভালোবাসেনি না।

আমার কথা হতে না হতেই আরিশ ভাইয়া সাইডে থাকা জগ হাত দিয়ে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়।ভয় পেয়ে আরিশ ভাইয়ার দিকে তাকাতেই উনি রক্তলাল চোখে আমার বাহু শক্ত করে চেপে ধরে ধমক দিয়ে বলল

–একবার বললাম না এইসব কথা মুখে আনবি না।আমি কিন্তু এখন আর সহ্য করবো না একটা ঠাডিয়ে চর মারবো বলে দিলাম।মেজাজ খারাপ করবি না।

ভাইয়ার কথা শুনে চোখ টলমল করে উঠলো।বাহিরে কিছুক্ষন আগেই খুব জোরে বৃষ্টি নেমেছে।

ভাইয়া আমার বাহুজোরা ছেড়ে দিয়ে বলল

–গো এওয়ে ফ্রম মাই আইস রাইট নাও।

আরিশ ভাইয়ার কথা শুনে মনটা আরো খারাপ হয়ে গেলো।
আরিশ ভাইয়ার রুম থেকে বেড়িয়ে কাউকে কিছু না বলেই সোজা ঝুম বৃষ্টির মধ্যে বাহিরে বেরিয়ে গেলাম। সন্ধ্যার হয়ে গেছে।এরকম সময় বাহিরে বেরিয়ে সোজা হাটতে লাগলা।একদম নিঃশ্চুপ পরিবেশ। বাড়ি থেকে বের হওয়ার সাথে সাথেই পুরো ভিজে একাকার অবস্থা।

কিছুক্ষন হাটার একটা পুকুর দেখে সেখানের যাই।বৃষ্টির দাপটে আশে পাশেএ পরিবেশ বেশি বোঝা যাচ্ছে না।পুকুরের পাড়ে কিছুক্ষন দাঁড়িয়ে থেকে উল্টো পথে হাটতে নিতেই কিছু একটা তে পা লেগে উপড়ে পরে গেলাম।হাতে থাকা কাচ গুলো ভেঙে বিশ্রী অবস্থা হাত ও কেটে গেছে কিছু পরিমানে।

পুকুত পাড় থেকে হেটে আবার রাস্টার দিকে যেতেই আরিশ ভাইয়াকে নজরে পরলো
আরিশ ভাইয়ার সাথে ইতি আপুকে দেখে চোখ ঝাপসা হয়ে এলো।আমি এখানে উনার জন্য বাসা থেকে বেরিয়ে এলাম আর উনি ইতি আপুর সাথে।

ইতি কিছু বলার পর আরিশ ভাইয়াকে মুচকি হাসতে দেখে কান্না এসে পরলো।

আবার কান্নার আওয়াজ শুনে ইতি আপু আর আরিশ ভাইয়া আমার কাছে এলো।

–তুই আমাকে না বলে বাড়ি থেকে বেড়িয়েছিস কেনো?আর হাত কাটলো কিভাবে?

আরিশ ভাইয়ার কথা শুনে ইতি আপুর দিকে একনজর তাকিয়ে উল্টো পথে হাটা দিলাম।আরিশ ভাইয়া আর ইতি আপু ছাতা নিয়ে এসেছে।আরিশ ভাইয়া ছাতা উনার মাথার উপর ধরেই আমার পিছে হাটা দিলো।আমার হাত ধরে উনার দিকে ফিরাতেই আমি বলি।

–ইতি আপু কেনো এসেছে উনাকে যেতে বলুন।

আমার কথা শুনে আরিশ ভাইয়ার ভ্রু জোড়া কুচকে গেলো।উনি অবাক হয়ে বলল

–ইতি কে নিয়ে কথা হচ্ছে না।তুই আগে আমার প্রশ্নের উত্তর দে।

–না আমি কিছু বলবো না।ইতি আপুকে যেতে বলুন আগে।

আমার সাথে না পেরে আরিশ ভাইয়া ইতি আপুকে যেতে বলল।ইতি আপু একনজর আমার দিকে আরেক নজর আরিশ ভাইয়াকে দেখে চলে গেলো।

ইতি আপু যেতেই আমি বললাম

–এই ইতি আপু কোথা থেকে এলো।আপনার কি উনাকে ছাড়া কিছুতেই মন বসে না নাকি?

আরিশ ভাইয়া আমার কথা শুনে ছাতাটা বন্ধ করে গাড়ির ভিতরে রেখে আমার কাছে এসে দাঁড়িয়ে আমাকে জরিয়ে ধরে বলল

–এভাবে ঝুম বৃষ্টির মধ্যে বেরিয়ে পরলি কেনো।

–আপনি তো বললেন চলে যেতে।

–আমি বলেছিলাম আমার রুম থেকে যেতে আর কি রুম নেই।

আমি কিছু বললাম না।আরিশ ভাইয়াও ইতোমধ্যে ভিজে এককাকার হয়ে গেছে।আমাকে ছেড়ে বাকা হেসে বলল।

–তুই কি ইতির সাথে জেলাস ফিল করিস নাকি।

আমি সাথে সাথেই বললাম

–অবশ্যই।

আমার কথা শুনে আরিশ ভাইয়া বলল।

–সরি মাই ওয়াইফি।আমার ওভাবে রুড বিহেভ করা উচিত হয় নি।

আরিশ ভাইয়ার কথা শুনে মুখ গোমড়া করে ফেললাম।উনি আমার গাল টেনে দিয়ে বলল

–আচ্ছা চল আজ আমরা রাতের বৃষ্টিবিলাস করবো

আরিশ ভাইয়া আমায় কোলে তুলে নিয়ে সামনের দিকে বাড়তে লাগলো।চারপাশে অন্ধকারাচ্ছন্ন। আরিশ ভাইয়ার গলা জড়িয়ে ধরে আরিশ ভাইয়ার মুখের দিকে তাকিয়ে থেকেই উনার ঠোটে ঠোট ছোয়ালাম।সাথে সাথে আরিশ ভাইয়া থেমে গেলেন।
আমার দিকে অবাক নিয়ে তাকাতেই আমি মুচকি হেসে বললাম

–প্রিয় মানুষের প্রতি অভিমান কি টিকিয়ে রাখা গিয়েছে কখনো?ভালোবাসি ভাইয়া।

আরিশ ভাইয়া মুচকি হাসলেন।আমাকে নিচে নামিয়ে দিয়ে বলল

–আর কখনো আজকের বলা কথা গুলো মুখে আনবি না।কি করে ভাবতে পারিস তোকে ছাড়া অন্য কারো জন্য ভালোবাসা জন্মাবে আমার।আমি তো তোমাতেই সীমাবদ্ধ। তোর সীমানার বাহিরে কখনো যেতে পারবো নাকি?ভালোবাসি যে।

আরিশ ভাইয়া আমার কোমড়ে হাত রেখে ঠোট জোড়া আকড়ে ধরলো।
কিচ্ছুক্ষন পর ছেড়ে দিয়ে বলল

–আর আজকের পর থেকে ভাইয়া বললে তখন কিন্তু ঠিকই অন্য কাউকে বিয়ে করে ফেলবো।তখন ভাইয়া বলে বলে মুখে ফেনা তুলিস।

ভাইয়ার কথা শুনে হেসে ফেলে উনার বুকে হাল্কা চড় দিয়ে বললাম।

–ভাইয়া,,,,,আপনি আমার একান্তই আমার ভালোবাসাময় ভাইয়া♥♥♥

♥♥♥সমাপ্ত,,,,♥♥♥